#তোর আসক্ত❤
#পর্ব – ১২
#writer_শিফা_আফরিন_মিম
🍁
আয়ানের ধমক শুনে রুপসা কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। তারাতারি করে আয়ানের জন্য একটা চেয়ার টেনে নিজে অপর একটা চেয়ারে বসে যায়। বাধ্য মেয়ের মতো খেয়ে নেয়।
আয়ান – ঔষধ খেয়েছিলে?
রুপসা – হ্যা।
আয়ান – ওকে রাতের টা খেয়ে নিও। জ্বর আর আসেনি তো?
রুপসা – না।
আয়ান – আচ্ছা রুমে চলো।
রুপসা আয়ানের সাথে রুমে এসে আড়চোখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। আয়ান বিষয় টা খেয়াল করে।
আয়ান – কী খুজছো?
রুপসা – না কিছুনা। (অসভ্য লোক বেশি কিছু তো চেয়েছিলাম না শুধু চকলেট আর আইসক্রিম। দুইটা না পারলেও আইসক্রিম টা তো আনতে পারতো অন্তত। এতো কিপ্টুস হুহহহহ!)
আয়ান খেয়াল করছো রুপসা কিছুটা রেগে আছে আর মনে মনে কিছু বলছে। আয়ান ভালো মতোই আন্দাজ করতে পারছে বিষয় টা।
আয়ান – তুমি ঔষধ গুলো খেয়ে শুয়ে থাকো। আমি আসছি।
রুপসা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ১০ টার কাছাকাছি প্রায়। এতো রাতে আবার কোথায় যাবে। তাও বেচারির আইসক্রিম আর চকলেটের শোকে এতো টা গুরুত্ব দেয়নি। শুধু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।
আয়ান বেরিয়ে পরে। রুপসা ঔষধ গুলো খেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। কিন্তু ঘুম আর আসছে না। বার বার মনে হচ্ছে এতো রাতে আয়ান কোথায় গেলো?
রুপসা শোয়া থেকে উঠে বসে থাকে। কিছুক্ষণ পরই আয়ান চলে আসে। রুপসা আয়ানকে আসতে দেখে যতোটা না খুশি হয়েছে তার চেয়ে বেশি খুশি হয়েছে আয়ানের হাতে চকলেট আর আইসক্রিম গুলো দেখে।
এক লাফে বিছানা ছেড়ে উঠে আয়ানের কাছে যায়।
রুপসা – আপনি মনে রেখেছেন! আমিও ভাবলাম আপনি হয়তো ভুলেই গেলেন জানেন আমার কতো কষ্ট হচ্ছিলো (ঢং করে)
আয়ান – হোয়াট! আইসক্রিম আর চকলেটের জন্য তোমার কষ্ট হচ্ছিলো!
রুপসা – হ্যা তো!
আয়ান – তুমি পারো ও বটে! বাই দ্যা ওয়ে… অফিসে অনেক কাজের চাপ ছিলো তাই বাড়ি ফেরার সময় মনে ছিলো না। তখন তুমি রুমে এসে খুজা খুজি করছিলে দেখে মনে পড়লো তুমি হয়তো তোমার চকলেট আইসক্রিম খুজে যাচ্ছো। ভেবেছিলাম কাল আনবো। কিন্তু তুমি মনে মনে যে গালি দিলে!!
রুপসা আয়ানের কথা শুনে হা হয়ে আয়ানের দিকে তাকায়!
রুপসা – আচ্ছা আপনি কি মনোবিজ্ঞানী?
আয়ান – মানে!
রুপসা – না আসলে আমি যে আপনাকে বকা দিচ্ছিলাম আপনি বুঝলেন কী করে?
আয়ান – তার মানে তুমি সত্যি সত্যি আমাকে বকছিলে?
রুপসা – না না… বেশি বকা তো দিই নি। শুধু কিপ্টুস বলেছিলাম।
আয়ান – হোয়াটটট! কিপ্টুস?
রুপসা – ঐযে…কিপ্টে!
আয়ান – তোমার কি মনে হই আমি কিপ্টেমি করে আইসক্রিম আর চকলেট আনি নি? (দাঁতে দাঁত চেপে)
রুপসা – হ্যা… না মানে… না
আয়ান – কিপ্টে যখন বলেই দিলে তখন তোমার আর এই সব খেতে হবে না ডাফার!
রুপসা – স… সরি তো আর বলবো না।
আয়ান – ফ্রিজে রেখে আসো কাল খেয়ো। এখন ঘুমাউ।
রুপসা – না। আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন। আমি খেয়েই ঘুমাবো।
আয়ান – ওকে এজ ইউর উইশ। — বলেই শুয়ে পড়ে।
রুপসা – বলছিলাম যে… আমি কোথায় ঘুমাবো?
আয়ান রুপসার কথা শুনে রুপসার দিকে ফিরে তাকায়…
আয়ান – কেনো? আমার কোলে ঘুমাবে… আসো… কোলে আসো..!
রুপসা – মানে? (অবাক হয়ে)
আয়ান – মানে বিছানায় আমার পাশেই ঘুমাবে ডেমেট! (রেগে)
রুপসা – তো তখন কোলে বললেন যে?
আয়ান – রুপপপ…..চুপচাপ ঘুমাতে এসো বেশি বক বক করবা খবর আছে।
রুপসা – কয়টার খবর? (দাঁত কেলিয়ে)
আয়ান রুপসার কথা শুনে রেগে শোয়া থেকে উঠে বসতেই রুপসা এক দৌড়ে বেলকনিতে চলে যায়।
আয়ান বিরক্ত হয়ে আবার শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর রুপসা ও বিছানায় পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে।
সকালে…
চোখ মেলে তাকাতেই রুপসার চোখ দু’টো রসগোল্লার মতো হয়ে যায়। সকাল ১১ টা বাজে!
এতোখন পড়ে পড়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। পাশ ফিরে তাকিয়ে আয়ানকেও দেখতে পায় না। হয়তো অফিসে চলে গেছে। রুপসা তারাতারি করে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে।
নিচে নামতেই দেখে আয়ানের মা।
আয়ানের মা – রুপসা… এখন কেমন আছিস? জ্বর আর আসে নি তো?
রুপসা – না মা। ভালো আছি এখন। মা আমাকে উনি ডাকে নি। ঘুম থেকে উঠতে অনেকটা লেট হয়ে গেছে আজ।
আয়ানের মা – আমিই আয়ান কে বারন করেছিলাম ডাকতে। তোর এমনিতেই শরীর টা ভালো না ঘুমালে মাথা টাও হালকা হবে। এখন বস.. খেয়ে নে।
রুপসা – ব্রেকফাস্ট করে রুমে চলে যায়। ফোন টা হাতে নিতেই দেখে তার মায়ের মিসডকল। রুপসা ফোন টা ব্যাক করতেই ওপাশ থেকে রাইসা রিসিভ করে…
রাইসা – হ্যালো… আপু…
রুপসা – হ্যা রাইসা… কেমন আছিস।
রাইসা – ভালো আছি আপু। তুমি ভালো আছো তো?
রুপসা – হ্যা ভালো। পড়াশোনা করছিস তো ঠিক মতো?
রাইসা – হুম। আপু মার সাথে কথা বলো আগে। তোমার সাথে কথা বলতে সেই ভোর থেকেই অপেক্ষা করছে। আমি বুঝিয়েছি আপু হয়তো ঘুম থেকে উঠেনি।
রুপসা – এ কেমন কথা! উঠিনি কি আবার? তুই তো ফোন দিতে পারতি।
রাইসা – আচ্ছা এখন কথা বলো তো।
রাইসা ফোনটা তার মায়ের কাছে দেয়….
রুপসার মা – হ্যালো…
রুপসা – মা কেমন আছো?
রুপসার মা – ভালো আছি রে। তুই কেমন আছিস মা?
রুপসা – আমিও ভালো আছি। বাবা কেমন আছে মা?
রুপসার মা – তোর বাবা ও ভালো আছে। রুপসা তোর কোনো অসুবিধে হয় না তো ঐ বাড়িতে?
রুপসা – না মা একদম না।
রুপসার মা – হ্যা মা। সবার সাথে মানিয়ে নিতে পেরেছিস এটাই অনেক।
রুপসা – হুম। উনারা সবাই অনেক ভালো মা। আমাকে অনেক ভালোবাসে।
রুপসার মা – আয়ানের সাথে রাগারাগি করিস না কখনো। ওর মনের মতো হয়ে চলতে চেস্টা করিস।
রুপসা – হ্যা মা। আর শোনো মা… এখন থেকে তোমার যখন ইচ্ছে হবে সাথে সাথে ফোন দিবা বুঝছো যতোই রাত হোক বা যতো ভোরই হোক কোনো সমস্যা নেই।
রুপসার মা – আচ্ছা মা তুই সবধানে থাকিস। শোন না… রাইসা বলছে তোর শশুড়বাড়ি যাবে কয়েক দিন থাকতে। আমি এতো করে বারন করছি শুনছে না আমার কথা। তুই একটু ওকে বুঝা না।
রুপসা – বারন করছো কেনো মা? আমার ওত একা একা থাকতে ভালো লাগে না রাইসা আসলে তো দুইজন আবার একসাথে কয়েকটা দিন কাটাতে পারবো। তুমি রাজি হয়ে যাও প্লিজ।
রুপসার মা – আরে বোকা মেয়ে। আমার রাজি হওয়ার কি আছে। আমি তো ভাবছি আয়ান তোর শশুর শাশুড়ি কি ভাববে তাই…
রুপসা – মা তুমি উনাদের চেনোই। উনারা আরও বেশি খুশি হবে রাইসা আসলে দেখো তুমি।
রুপসার মা – আচ্ছা। এই নে রাইসার সাথে কথা বল…
রাইসা – আপু… মা কে একটু বুঝা না প্লিজ। তোর সাথে কয়েকটা দিন থাকবো কোথাও ঘুরতে বের হবো! মা রাজিই হচ্ছে না।
রুপসা – আরে তুই কোনো চিন্তা করিস না। মা রাজি হবে। আমি বলেছি মাকে।
রাইসা – ওকে আপু… তোকে এত্তো গুলা থ্যাংক্স।
রুপসা – হয়েছে পাগলী মেয়ে। রাখছি এখন।
রাইসা – ওকে আপু। খোদা হাফেজ।
রুপসা – খোদা হাফেজ।
রুপসা ফোন টা রেখে তার শাশুড়ি মায়ের কাছে যায়।
রুপসা – মা..
আয়ানের মা – হ্যা… আয় ঘরে আয়।
রুপসা – মা একটা কথা বলার ছিলো…
আয়ানের মা – হ্যা বল না।
রুপসা – মা আসলে আমার ছোট বোন টা আসতে চাইছে। আমার সাথে কয়েকটা দিন থাকতে চাইছে।
আয়ানের মা – তো ওকে নিয়ে আয়। আমাকে বলতে হবে নাকি হ্যা?
রুপসা – না মা তাও আপনাকে না জানিয়ে তো আনতে পারি না।
আয়ানের মা – শুধু মুখে মুখেই মা বলে ডাকিস তাইনা। ভাবলি কি করে আমি মেয়েটাকে আসতে দিতে রাজি হবো না।
এখন বাদ দে এসব। ওকে আনতে যাবে কে? তুই তো একা একা যেতে পারবি না। তাছাড়া তোর শরীর টাও ভালো না।
এক কাজ কর আয়ান কে ফোন দে। ওকে বল গিয়ে নিয়ে আসতে।
রুপসা – ওকে মা এখনি দিচ্ছি।
রুপসা আয়ানের নাম্বারে ফোন দেয়। কয়েক বার রিং হওয়ার পর রিসিভ করে…
আয়ান – হ্যা বলো…
রুপসা – আসলে একটা কথা ছিলো।
আয়ান – তো বলো..
রুপসা – রাইসা বলছিলো এখানে আসবে। ও তো একা আসতে পারবে না আর আমিও গিয়ে নিয়ে আসতে পারবো না। তাই মা বলছিলো আপনি যদি একটু কষ্ট করে নিয়ে আসতেন…
আয়ান – কিছুক্ষণ আগে বললে না কেনো? একটু পরে তো মিটিং আছে। কিছুক্ষন আগে বললে ক্যান্সেল করে দিতাম। এখন তো সেটা সম্ভব না। তুমিও না সব কিছুতে লেট!
আচ্ছা শুনো… আমান তো তোমাদের বাসা চিনেই। ওকে পাঠাই?
রুপসা – হ্যা সেটাই ভালো হয়। আপনার কাজের ও সমস্যা হবে না তাছাড়া ভাই তো ফ্রিই আছে।
আয়ান – ওকে আমি বলে দিচ্ছি।
রুপসা – আচ্ছা।
আয়ানের মা – কিরে কি বললো?
রুপসা – আসলে মা উনার মিটিং আছে আজ। তাই আমান ভাইয়াকে বলছিলো।
আয়ানের মা – হ্যা তাও ভালো হয়।
আয়ান আমানকে ফোন দেয়। কয়েকবার ফোন দেয়ার পরও আমান ফোন রিসিভ করে নি। কিছুক্ষণ পর আমান নিজেই আয়ান কে ফোন দেয়।
আয়ান – হ্যালো..
আমান – ভাইয়া সরি আসলে ফোন সাইলেন্ট করা ছিলো তাই ফোন তুলতে পারি নি। এখন হাতে নিয়ে দেখলাম তোমার ফোন।
আয়ান – আচ্ছা শোন তুই কোথায় এখন?
আমান – আমি তো বাসার কাছেই। ফ্রেন্ডদের সাথেই বসে আছি। কেনো ভাইয়া?
আয়ান – একটা কাজ করতে হবে তোর। রুপসাদের বাড়ি যেতে হবে আজ একবার।
আমান – কিন্তু কেনো?
আয়ান – আরে রাইসা আসতে চাইছে রুপসার ছোট বোন। এখন তো রুপসার যাওয়া পসিবল না। আর আমিও মিটিং এ আটকে গেছি তাই তোকে বলতে হলো। বাই দ্য ওয়ে… এডড্রেস টা মনে আছে তো?
আমান – হ্যা ভাইয়া মনে আছে।
আয়ান – তাহলে তুই চলে যাস ওকে। যেতে প্রবলেম হলে গাড়ি নিয়ে চলে যাস। ড্রাইভার চাচাকে আমি বলে রাখছি।
আমান – ওকে ভাইয়া।
আয়ান – ওকে রাখছি বাই।
আয়ান ফোন কেটে দিলে সাথে সাথেই আমান বাড়ি চলে আসে।
রুপসা আমান কে দেখেই বলে..
রুপসা – ভাই উনি তোমাকে বলেছে?
আমান – উনি টা কে? (ভাব ধরে)
রুপসা – আরেহহ তোমার ভাই!
আমান – এমন ভাবে উনি উনি করছো যেনো তোমার কতো বছরের পর। হ্যা বলেছে তোমার ঐ গুন্ডি বোন কে নিয়ে আসতে।
ঐ দিন তো গিয়েছিলাম বলে কি খুটা টাই না দিলো! আজ না জানি কি বলে অপমান করে আল্লাহ মালুম!
রুপসা – আমার বোন টা মোটেও এমন না বুঝলে। ওর মন টা অনেক ভালো কিন্তু জেদ বেশি। নিশ্চয় তুমি ওকে খুচা দিয়েছো তাই রেগে গিয়েছিলো।
আমান – তা তো একটু আকটু দিতেই হবে। তোমার বোন বলে কথা। আমার বেয়ানজী! (দাঁত কেলিয়ে)
চলবে…