তোর আসক্ত পর্ব -১১

#তোর আসক্ত❤
#পর্ব – ১১
#writer_শিফা_আফরিন_মিম

🍁
আয়ান – বাকি টা শেষ করো কুইক…

রুপসা আয়ানের কথায় অনিচ্ছা স্বত্তেও বাকি দুধ টুকুও খেয়ে নেয়।
আয়ান আজ অফিসে যাওয়ার কথা থাকলেও যায় নি। সারা দিন রুপসার সাথে সাথেই থেকেছে। এক মূহুর্তের জন্যও বাহিরে যায় নি।

রাতে…

রুপসাকে সকালের মতোই আয়ান ঘরে খাবার এনে খাইয়ে দেয়। রুপসাও বাধ্য মেয়ের মতো খেয়ে নেয়।

এখন এতো টা খারাপ না লাগলেও এই অবস্থায় দাঁড়াতে কষ্ট হচ্ছে রুপসার। তাও কি আর করার! তাকে তো তার জায়গায় যেতেই হবে।
রুপসা ধীরে ধীরে চাদর টা আর বালিশ টা হাতে নেয়।
আয়ান ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে রুপসা বেলকনির দিকে যাচ্ছে।

আয়ান – কোথায় যাচ্ছো?

রুপসা – ঘুম পাচ্ছে তাই।

আয়ান – হ্যা তো?

রুপসা আয়ানের দিকে তাকায়।

আয়ান – এই অবস্থায় তোমাকে বেলকনিতে থাকতে দিবো এতো টাও অমানুষ আমি না।

রুপসা – (ওহহ শুধু মনুষত্ববোধ দেখানোর জন্যই এতো কিছু! ভালোবাসা নেই… মনে মনে)

রুপসা – থাক। আপনার দয়া না করলেও চলবে। আমি বেলকনিতেই থাকতে পারবো কোনো সমস্যা হবে না।

আয়ান – জাস্ট সাট আপ রুপ! আর একটা কথা বললে তোমার অবস্থা আমি কি করি দেখতে পারবে। চুপচাপ বিছানায় এসে শুয়ে পড়ো।

রুপসা আয়ানের ডাকে চমকে যায়! এই প্রথম তাকে কেউ আদুরে ডাক দিলো! আচমকাই রুপসার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে…

রুপসা – রুপ…!

আয়ান – স সরি। আই মিন রুপসা। (অন্য দিকে তাকিয়ে)

রুপসা মুখে কিছু না বললেও আর আয়ান কিছু স্বীকার না করলেও আয়ানের মনে যে রুপসার প্রতি ভালোবাসা আছে তা বুঝতে বাকি নেই রুপসার।

রুপসা মুচকি হেসে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরে।

আয়ান একটা বালিশ নিয়ে সোফায় চলে যায়। রুপসা মাথা তুলে দেখে আয়ান সোফায় শোয়ার ব্যাবস্থা করছে।

রুপসা – আপনি ওখানে কী করছেন?

আয়ান – দেখতে পারছো না?

রুপসা – আমি কি এতোই মোটি যে পুরো বিছানা একা দখল করে ঘুমাবো! আপনি তো আমার পাশেই ঘুমাতে পারেন তাই না। আমি বরং একেবারে ঐ পাশটাতে শুয়ে থাকবো। (অসহায় মুখ করে)

আয়ান কিছু বলতে গিয়ে বলে না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বালিশ টা নিয়ে বিছানায় ফেলে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ে।
রুপসা ও মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে চোখ বন্ধ করে।

আয়ানের চোখে এখনো ঘুম নেই। রুপসাকে প্রথম প্রথম বিরক্ত লাগলেও এখন সহ্য করতে পারছে। তাছাড়া আজ দু’জন একসাথে! কখনো ভাবতে পারে নি রুপসার এতো কাছাকাছি আসবে! কিভাবে রুপসাকে দূরে ঠেলে দেয়া যায় সে তো সর্বদা এই ভাবনায় থাকতো।
হটাৎ হাতে গরম কিছুর স্পর্শ পেয়ে আয়ানের ধ্যান ফিরে। পাশে তাকাতেই দেখে রুপসা আয়ানের হাত ধরে আছে

রুপসা – আমি কি আপনার হাত টা জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে পারি? (করুন ভাবে)

আয়ান – তুমি ঘুমাউ নি?

রুপসা – না। আপনাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে ইচ্ছে করছিলো সেটা তো পারবো না আপনি যা রাগি! তাই আপনার হাত টা জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো।

আয়ান রুপসার কিছুটা কাছে এসে কপালে হাত রাখতেই বুঝতে পারে জ্বরের মাত্রা টা বেড়েছে।

আয়ান – রাতে খাওয়ার পর তো ঔষধ গুলো খাইয়েছিলাম, তাহলে? এখনো জ্বর টা কমে নি বরং আরও বাড়ছে মনে হচ্ছে।

আয়ানের কোনো উত্তর না পেয়ে রুপসা আয়ানের হাতটা নিজের কাছে নিয়ে চোখ বন্ধ করে।

আয়ান – রুপ তোমার জ্বর টা প্রচন্ড বেড়েছে। তুমি একটু থাকো আমি এখনি যাবো আর আসবো।

রুপসা – কোথায় যাবেন আপনি?

আয়ান – জলপট্টি নিয়ে আসি তুমি থাকো। জ্বর না কমলে তো কষ্ট হবে। আর ঘুমও আসবে না।

রুপসা – তাতে আপনার কী?

আয়ান চুপ মেরে যায়। সত্যিই তো আমার কী? এতো মায়া দেখানোরই বা কী আছে৷ ও চলে গেলেই তো আমি মুক্তি।

আয়ান – তুমি থাকো। আমি আসছি এক্ষুনি।

রুপসা – না।

আয়ান – না মানে?

রুপসা – এখন কোথাও যেতে হবে না। এমনি কমে যাবে জ্বর। আপনি থাকুন।

আয়ান – ২ মিনিট লাগবে রে বাবা কেনো জেদ করছো বলো তো।

রুপসা – আমি কিচ্ছু জানিনা। এখন যেতে হবে না ব্যাস। বললাম না জ্বর এমনি তেই কমে যাবে।
আয়ান কিছু না বলে রুপসাকে টেনে নিজের কাছে এনে জড়িয়ে ধরে। জ্বরে মেয়েটার গা পুড়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে।
রুপসাও আয়ান কে জড়িয়ে ধরে। কিছুক্ষণ পর আয়ান রুপসার মুখ দেখার চেষ্টা করে। মনে হচ্ছে ঘুমিয়ে পড়েছে।

সকালে…

রুপসার ঘুম ভঙ্গলে চোখ মেলে তাকাতেই বেচারির চোখ বড় বড় হয়ে আসে।
আয়ানের বুকে ঘুমিয়ে ছিলো সে! ভাবতেই পারছে না। তার পর হটাৎ রাতের কথা মনে পড়তেই হতাশ হয়ে যায়। ধুরর কি ভেবেছিলো আর কি হয়ে গেলো। কাল রাতে তো সেই প্রথম আয়ানের হাত জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে চেয়েছিলো। আয়ান নিজে থেকে তো আসে নি।
মন খারাপ করে আস্তে আস্তে উঠে বসতেই আয়ানের ঘুম ভেঙে যায়।
রুপসাকে উঠতে থেকে আয়ান শোয়া থেকে উঠে বসে…

আয়ান – জ্বর কমেছে তোমার? (বলতে বলতেই কপালে হাত রাখে রুপসার)

রুপসা – হ্যা এখন কমেছে বোধহয়। মাথাটাও ভার লাগছে না।

আয়ান – আচ্ছা ঠিক আছে। ফ্রেশ হয়ে নিও। আমি ফ্রেশ হয়ে তোমার খাবার রেডি করছি। পরে আবার ঔষধ খেতে হবে।

রুপসা – আমি নিচে গিয়েই খেতে পারবো। সমস্যা নেই কোনো।

আয়ান – শিওর?

রুপসা – হ্যা।

আয়ান – ওকে তাহলে যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।

আয়ানের মা রুপসার জন্য খাবার রেডি করে টেবিলে রাখে।

আয়ানের মা – এতো বেলা হয়ে গেলো মেয়েটাকে খাওয়ানো হয়নি এখনো। ছেলেটার কথা যে কি বলবো! কোনো দায়িত্ববোধ নেই।

কিছুক্ষণ পরই দেখে আয়ান আর রুপসা আসছে। আয়ান এক হাতে রুপসার হাত ধরে সিঁড়ি দিয়ে নামাচ্ছে।

আয়ানের মা – কিরে ওকে নিয়ে নামতে গেলি কেনো। ঘরেই ত খাওয়াতে পারতিস।

আয়ান – ও নিজেই বললো সবার সাথে ব্রেকফাস্ট করবে। তো আমি কি করবো?

আয়ানের মা – আচ্ছা ঠিক আছে। এখন কেমন আছিস রুপসা।

রুপসা – ভালো মা।

আয়ানের মা – জ্বর টা কমেছে তো?

রুপসা – হ্যা।

আয়ান রুপসাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে নিজেও আরেকটা চেয়ার টেনে বসে পড়ে।

আয়ান – মা আমান আর বাবা কোথাই?

আয়ানের মা – আসছে বোধহয়। ডেকে আসছি কিছুক্ষণ আগে।

কিছুক্ষণ পরই আয়ানের বাবা আসে…

আয়ানের বাবা – রুপসা… তোমার জ্বর টা কমেছে?

রুপসা – হ্যা বাবা।

আয়ানের বাবা – আচ্ছা ঠিক আছে। আমি ডাক্তার কে বিকেলে আরেক বার বলবো নি এসে দেখে যেতে।

আয়ান – হ্যা তাই করো। আমিও ভাবছিলাম।

খাওয়া শেষ হলে আয়ান অফিসের জন্য রেডি হয়।

রুপসা – কোথায় যাচ্ছেন?

আয়ান – অফিস যেতে হবে আজ।

রুপসা – ওহ।

আয়ান – সাবধানে থেকো আর রেস্ট নিও। নয়তো জ্বর আবার আসতে পারে।

রুপসা – ঠিক আছে। একটা কথা বলি..

আয়ান – বলো..

রুপসা – আপনি বাড়ি ফেরার সময় আমার জন্য আইসক্রিম বা চকলেট নিয়ে আসবেন প্লিজ অবশ্য দুইটা একসাথে হলেও সমস্যা নেই।

আয়ান রুপসার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। এমন বাচ্চাদের মতো বায়না করছে! জ্বরে কি পাগল টাগল হয়ে গেলো নাকি!

আয়ান – ওকে ঠিক আছে।

আয়ান চলে গেলে রুপসা কিছুক্ষণ তার শাশুড়ি মায়ের সাথে গল্প করে কাটায় তো কিছুক্ষণ টিভি দেখে!

রাতে…

আয়ানের অফিসের কাজ শেষ করতে অনেক টা লেট হয়ে গেছে। কাজের চাপে সারা দিন বাড়িতে ফোনও দিতে পারে নি।

আয়ানের মা – কিরে এতো দেরি হলো?

আয়ান – মা আজ একটু ব্যাস্ত ছিলাম বেশি তাই। তোমরা খেয়েছো তো?

আয়ান – আমি তো সেই সন্ধার পর পরই ঘুমিয়ে ছিলাম শরীর টা ভালো লাগছিলো। ওরা নিজেই বোধহয় খেয়ে নিয়েছে খাবার তো রুপসা টেবিলে রেখেই ছিলো।

আয়ান – তোমার কী হলো?

আয়ানের মা – এমনি মাথা টা একটু ধরেছিলো। এখন ঠিক আছি।

আয়ান – রুপসা রান্না করেছে?

আয়ানের মা – হ্যা। কাজের মহিলা আজ আসে নি। ফোন ও দিতে পারিনি। আমি রুপসাকে অনেক বার বারন ও করলাম রান্না করতে হবে না আজ। বাহিরে থেকে অর্ডার করে নিবে নি। শুনলো না।

আয়ান – আচ্ছা তুমি খেয়ে নিয়ে। গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। অনেক রাত হয়ে গেলো।

আয়ানের মা – বিকেলে খেয়েছিলাম তাই আর ক্ষুদা নেই। তুই ফ্রেশ হয়ে আয় রুপসা কেও নিয়ে আসিস মেয়েটা বোধহয় খায়নি।

আয়ান – না মা তুমি ঘুমাউ গিয়ে। আমরা খেয়ে নিবো।এত রাত জাগতে হবে না যাও তুমি।

আয়ানের মা – আচ্ছা। রুপসা কেও নিয়ে আসিস কিন্তু। ও বোধহয় খায়নি।

আয়ান – আচ্ছা।

আয়ানের মা রুমে চলে গেলে আয়ান ও নিজের রুমে যায়।
গিয়ে দেখে রুপসা খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে। আয়ান কে এক পলক দেখে উঠে আসে।

রুপসা – ফ্রেশ হয়ে নিন… ডিনার করবেন।

আয়ান – তুমি খেয়েছো?

রুপসা আয়ানের মুখের দিকে তাকায়। চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে, টাই টাও ঠিক নেই। শার্টের ইন টাও কিছুটা এলোমেলো হয়ে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক ক্লান্ত।

রুপসা – হ্যা।

আয়ান – মিথ্যে বলছো না তো?

রুপসা – না।

আয়ান – মা যে বললো তুমি খাও নি।

রুপসা আয়ানের কথা শুনে আর কিছু বলেনি। কারন সে তো সত্যিই না খেয়ে আছে। কিন্তু তার শাশুরি জানলো কি ভাবে? আশ্চর্য!

রুপসা – আসলে ক্ষিদে ছিলো না তাই।

আয়ান – দেখো আমি মিথ্যে একদম সহ্য করতে পারি না। সো নেক্সট টাইম এ যেনো আর কখনো তোমার মুখে মিথ্যে না শুনি। (ধমক দিয়ে)

রুপসা – নেক্সট টাইমে তো আপনি আমাকেই আশা করেন না আবার আমার সত্যি কথা! (তাচ্ছিল্যের সুরে)

আয়ান রুপসার কথা শুনে মাথা নিচু করে আছে। এই মূহুর্তে তার নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। একটু বেশিই ভাবছে এই মেয়েটাকে নিয়ে। কেনো? কিসের জন্য? কোনো মানে নেই তো ওকে নিয়ে ভাবার। ও কথায় কথায় খুটা দিতে অলওয়েজ প্রস্তুত!

আয়ানের চুপ থাকতে দেখে রুপসা বলে…

রুপসা – যান… ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি খাবার রেডি করছি।

আয়ান কিছু না বলে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। রুপসা নিচে গিয়ে আয়ানের খাবার রেডি করে।
কিছুক্ষণ পর আয়ান এসে দেখে শুধু একটা প্লেটেই খাবার রেডি করা।

আয়ান – তোমার প্লেট?

রুপসা – ক্ষিদে নেই।

আয়ান – রুপপপ…..(ধমক দিয়ে)

রুপসা আয়ানের ধমক শুনে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। তারপর তারাতারি করে আয়ানের জন্য একটা চেয়ার টেনে অপর একটা চেয়ারে নিজেও বসে পড়ে।
বাধ্য মেয়ের মতো খেয়ে নেয়।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here