#তোর_শহরে_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-৯
তনিম অফিসে আসার পথে দেখা হলো মেঘার সাথে মেঘার গাড়ি নষ্ট তাই ইচ্ছে না থাকলেও মেঘাকে লিফট দিতে হলো। মেঘা তনিমের পাশে বসে, বলে, তানিম তোমার নাম্বারটা দাও তো!,
– আমার নাম্বার তো আমার মুখস্থ নেই।
– তাতে কি তোমার ফোন থেকে দাও
– ইশ আজকে তো ফোনটা আনতেই মনে নেই। এখন অফিসে যেয়ে ড্রাইভারকে আবার বাসায় পাঠাতে হবে ফোন আনাতে।
-তুমি ঠিক করে মিথ্যে কথাও বলতে পারো না তানিম! তোমার কথার টোন বলে দিচ্ছে তুমি মিথ্যে বলছো!
– তানিম পকেটে থেকে টিস্যু বের করে কপালের ঘাম মুছে নিয়ে বলে প্রচন্ড গরম পরেছে তাই ঘামছি। তোমার কি মনে হয় আমি মিথ্যে বলছি!
– হুম তুমি মিথ্যে বলছো কারণ কলেজে থাকতে যখন বলেছিলাম আমি তোমার বাসায় যাবো! তখনও কিন্তু মিথ্যে বলেছিলে কথাটা বলেই তানিমের পকেট থেকে ফোন বের করে আনলো। ফোনটা তানিমের সামনে ধরে বলে, এবার লক খুলে দাও।
তানিম লক খুলে দিলো ওয়াল পেপারে তানিম তন্ময় আর সারা পিক। ছেলেটাকে তো চিনতে পারলাম মেয়েটা কে?
– আমার বোন
– তোমাদের ফ্যামিলির সবাই কি কিউটের ডিব্বা!
– তুমি নাম্বার নিয়ে ফোনটা দাও
মেঘা চুপিচুপি তন্ময়ের নাম্বার টাও নিয়ে নিলো।
মেঘা হসপিটালের সামনে নেমে তানিমকে ধন্যবাদ দিলো।
তানিমের মেজাজ এখন চারশো চল্লিশ বোল্ড হয়ে আছে। এই মেয়ে কলেজ লাইফ থেকে তার পিছু নিয়েছে। মনে মনে বলছে এবার এই মেয়ের থেকে বাঁচতে হলে কিছু একটা করতে হবে।
আজকে দিনের শুরুটাই খারাপ হলো তানিমের রাতেও ঠিক মতো ঘুম হয়নি।
______________________________________________
তন্ময় মেহরুবাকে কোলে নিয়ে বলে, তোমার মামুনির নাম মিসেস চাচ্চু।
মেহরুমা বলল,মিসে চাচ্চু কেমন নাম হলো!
অনু মেহরুবাকে বলে, না বাবু আমার নাম অনাহিতা।
-থাক, থাক তোমাদের আর নাম বলতে হবে না। তুমি আমার মামুনি এটাই তোমার নাম, মেহরুবার মামুনি।
অনু মেহরুবার গাল টেনে দিয়ে বলে, হুম আজ থেকে আমার নাম মেহরুবার মামুনি।
– চাচ্চু চকলেট কোথায়?
– চকলেট দেবো তার আগে তোমার মামুনিকে মিসেস চাচ্চু বলো।
মেহরুবা অনুর দিকে তাকিয়ে বলে,মিসে চাচ্চু, মিসে চাচ্চু। বলেছি এবার চকলেট দাও।
তন্ময় পকেট থেকে চকলেট বের করে মেহরুবাকে দিয়ে বলে, যাও তো মামুনি তোমার আম্মুকে ডেকে আনো।
মেহরুবা চলে যেতেই তন্ময় হাঁটু গেড়ে বসে কান ধরে বলে, সরি তোমার অনুমতি ছাড়া তোমাকে টাচ করার জন্য! সরি তোমার সাথে অন্যায়ের প্রতিবাদ না করার জন্য।
অনু মনে হয় স্বপ্নে দেখছে, এই ছেলে তাকে সরি বলছে,যার সারা গায়ে এটিটিউড সে কিনা হাঁটু গেড়ে বসে সরি বলছে,নিজেই নিজেকে একটা চিমটি কাটলো,তন্ময় পকেট থেকে একটা গোলাপ বের করে অনুর সামনে ধরে বলে, যদি সত্যি আমার সরি একসেপ্ট করে থাকো!তাহলে এই কাটা যুক্ত গোলাপ গ্রহণ করে তোমার আমার সম্পর্কে একটা, গোলাপ- কাটার বন্ধুত্ব তৈরী করো!
অনু আশ্চর্যের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যে ছেলে আগামীকাল রাতেও থ্রেট দিয়ে গেলো সে আজ সকালেই এমন ভেজা বেড়াল। এটা আবার কি নতুন নাটক!
ভয়ে ভয়ে বললো,আপনি এসব কি বলছেন, সকাল সকাল কি কিছু নে*শা টেশা করেছেন নাকি!
– আগে ফুলটা নাও তারপর বুঝিয়ে বলছি
অনু বললো, আপনাকে একদম এভাবে মানাচ্ছে না। মনে হচ্ছে আপনি অভিনয় করছেন। আপনাকে-না রাগী খারুস ওইরকম বেশি মানায় এই সুইট ফেসে একদম বেমানান আপনি।
– নিজের রাগ কে সংযত করে বলে, এবার ফুলটা নাও বাকি কথা তারপর বলছি!
মিফতা সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে আর মিটি মিটি হাসছে। এবার অনুকে উদ্দেশ্য করে বললো, আগে ফুলটাতো নে আমার দেবরটার কষ্ট হচ্ছে তো!
অনু এবার লজ্জা পেয়ে গেলো।
তন্ময় দাঁতে দাঁত চেপে বলে, আমি তোমাকে প্রপোজ করছিনা এতো লজ্জ পাওয়ার কিছু নেই যাস্ট সরি বলে বন্ধুত্বের হাত বাড়াতে চাইছি!
অনু মিফতার দিকে একবার তাকিয়ে কোন কথা না বলে হাত বাড়িয়ে ফুলটা নিতেই কাঁটা বিঁধল অনুর হাতে। তন্ময় উঠে এসে অনুর দিকে একটা টিস্যু বাড়িয়ে দিয়ে বলে, বলেছিলাম তো গোলাপ-কাঁটার সম্পর্ক একটু দেখে ধরবে তো। জানোনা বোকা মেয়ে,গোলাপের সুঘ্রাণ নিতে হলে কাঁটার আ*ঘা*তও সহ্য করতে হয়!
অনু কিছুতেই বুঝতে পারছেনা এই ছেলের মনে কি চলছে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তন্ময়ের দিকে
তন্ময় অনুর সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে,এভাবে কি দেখছো নজর লেগে যাবে তো!
অনু দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বিড়বিড় করে বলে যেইনা চেহারা নাম রেখেছে পেয়ারা।
– আমার নাম পেয়েরা না তন্ময় হাসান শেখ। ইয়াং হ্যান্ডসাম তন্ময় হাসান যার জন্য হাজার হাজার মেয়ে পাগল।
অনু হেসে বলে, তা ঠিক বলেছেন পাগলই হবে। না হলে কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ আপনাকে পছন্দ করবেনা।
– ছিহহহ নিজের সদ্য বন্ধুকে এভাবে অপমান!
– কে বন্ধু কোথাকার বন্ধু।আমি ঢাকা পড়া লেখা করতে এসেছি, বন্ধুত্ব নয়!
– আমার গোলাপ নিয়েছো মানেই তুমি আমার ফ্রেন্ড তাই এখন আর তোমার কাছে অপশন নেই মিস হিতা।
– আমার নাম অনাহিতা মিস্টার ময়!
-ওয়াও পার্ফেক্ট ম্যাচ হিতা-ময় একসাথে হিতাময়
আজ থেকে তুমি হিতা আমি ময়।
অনু কিছু বলার আগেই মিফতা বলে তোরা বাচ্চাদের মতো কি শুরু করলি হিতাময়।
অনু গাল ফুলিয়ে বলে ভাবি তুমিও!
– নামটা সুন্দর তাই বললাম আর কি!
তন্ময় বললো,এই যে মিস হিতা আজ থেকে আপনার সাথে এই ময় আঠার মতো লেগে থাকবে।তাই তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ভার্সিটি প্লাস আমার বাসায় পড়াতে এসে পরবেন!
তন্ময় মিফতাকে বললো, ভাবি আজ আসি আমার হিতাকে দেখে রেখো।
– সে-কি সবে আসলে এখনি চলে যাবে বসো আমি চা- নাস্তা কিছু দেই!
– না ভাবি আজকে হিতাকে দেখেই পেট ভরে গেছে অন্য কোনদিন আসবো। এটা তো নিজের বাসাই।
– আচ্ছা এসো।
তন্ময় চলে যেতেই মিফতা অনুকে বললো, কিরে এসব কবে থেকে চলছে! আমাকে তো কিছুই বললি না।
– ভাবি কি চলছে আর কি বলবো?
– এই যে আমার পাথরের মতো দেবরের মনে প্রেমর পদ্ম ফুটিয়ে তুললি সেটা তো বললি না। তোর শহরে তার জন্য প্রেম সেটাও তো বললি না!
– ভাবি কিসের প্রেম কিসের পদ্ম? এই ছেলের সাথে আমার সা*পে নে*উ*লে সম্পর্ক। তার জন্য নাকি আমার শহরে প্রেম!
– আমার থেকে লুকিয়ে লাভ নেই আমি চোখ দেখলেই বুঝি!
অনু বড় করে তাকিয়ে বলে তাহলে ভালো করে দেখো
এই চোখে ওই ময়ের জন্য কোন কিছু আছে?
– শোন মেয়ে নাই তাতে কি হতেও তো পারে! আমাদের তন্ময় হিরের টুকরো ছেলে।
– আর আমি কাঁচের টুকরো মেয়ে তাই হিরের সংস্পর্শে গেলে ভেঙে যাবো।
– আয়হায়রে মাইয়া কয় কি?ভেঙে তো যাবাই। তবে ওই গানের মতো তুমি ছুঁয়ে দিলে হায় আমার কি যে হয়ে যায়!
– ওই ব্যাডায় ছুঁইলে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।
– তার মানে টাচিমাচিও হয়েছে আর আমাকে বলো কিছু নেই!
– না মানে ওই
– থাক আর কিছু বলতে হবেনা। সময় হলে দেখে নেবো। এবার বলো কেন এসেছিলে কোন দরকার ছিলো!
– ভাবি বাসায় কথা বলবো তাই এসেছি।
– মিফতা সার্ভেন্টকে বললো, তার রুম থেকে মোবাইটা নিয়ে আসতে। তারপর অনুকে বলল, তোমার চোখের ব্যাথা কমেছে?
– হ্যাঁ ভাবি এখন ব্যথা নেই আবার ফোলা ভাবটাও নেই শুধু লাল হয়ে আছে দু-একদিনে ঠিক হয়ে যাবে।
– তোমার বাসায় কে কে আছে?
– বাব,মা, আর ছোট ভাই।
– সুখি ফ্যামিলি। তাদেরকে একদিন আসতে বলো! তাদের সাথেও দেখা হয়ে যাবে!আর বলেই থেমে গেলো।
– অনুর চোখ ভরে এলো,চোখের কোনে অশ্রু টলমল করছে,কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বললো….
#চলবে
আজকে একদম মনটা ভালো না।একবার লিখে শেষ করার পর ডিলিট হয়ে গিয়েছিলো!দ্বিতীয়বার লেখার ইচ্ছেটাই ছিলোনা তবুও তোমাদের কথা ভেবে লিখি ফেললাম।ছোট, ছোট বলে আর কষ্ট দিওনা 🙂