তোর শহরে প্রেম পর্ব -০৮

#তোর_শহরে_প্রেম

#নুসাইবা_ইভানা

পর্ব-৮

তন্ময় অনুকে পৌঁছে দিয়ে গেলো, যাওয়ার সময় বললো,অনুর হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে বলে, ভুলে যাবেনা। তুমি তন্ময় হাসানের হবু বউ।

বারান্দায় দাঁড়িয়ে অনুকে আসতে দেখেই ছুটে গেটের সামনে চলে আসলো মাহি।তন্ময় অনুর হাত ছেড়ে দিয়ে গাড়ি থেকে অনুর ঔষধ আর কিছু ফল বের করে মাহির হাতে দিয়ে বলল,আমার বউটার যত্ন নিও,এখনি এতো দূর্বল হলে চলবে!কিছুদিন পর বিয়ে তাড়াতাড়ি ফিট করো।

মাহি কিছু বললো না অনুকে নিয়ে চলে আসলো।
তন্ময় গাড়ী ড্রাইভ করছে আর ভাবছে, আমাকে আরো,সতর্ক হতে হবে,আজকে দাভাই সব শুনতে পারলে আর রক্ষে ছিলো না।ভাগ্যিস শুধু শেষের কথটা শুনেছে । তাতে লাভ আমারি হলো, এখন দাভাই সবাইকে রাজি করাবে। মনের সুখে মিউজিক অন করতেই বেজে উঠলো… তেরা ফিতুর জবছে চারহ গ্যায়ারে। সাথে সাথে গান অফ করে দিলো।

তানিম বাসায় এসে ফ্রেশ হলো খাবার না খেয়ে শুয়ে পরলো, তার কানে কথাটা বাজাচ্ছে তোমাকে আমার বউ হতেই হবে। নিজের প্রতি নিজে বিরক্ত হচ্ছে এতো মেয়ে থাকতে ওই মেয়েকেই কেনো পছন্দ হতে হবে!
না এটা অন্যায় আমার মাথা থেকে এসব বের করতেই হবে।

ইরা বেগম ফোন করে অনুর খোঁজ নিলো মিফতার থেকে। সাথে এও বলে দিলো মেয়েটা সুস্থ হয়ে যেনো তাদের বাসায় আসে, আনহা আর আয়ান কে পড়াতে।

সায়লা বেগম একটু সাহস জুগিয়ে আদিল সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললো, বলছিলাম কি মেয়েটা সাধারণ ঘরের হলেও কিন্তু ভদ্র, লক্ষী দেখতেও মিষ্টি তাহলে আমাদের তন্ময়ের সাথে বিয়েতে তোমার আপত্তি কেনো?

– তোমার ছেলে বিয়ে করতে চাইলেই তো হবেনা। মেয়েটার নিজেরো মত থাকতে হবে! আমার মনে হয় মেয়েটা তোমার ছেলেকে পছন্দ করেনা।

– তুমি কি করে বুঝলে পছন্দ করে না।
– আদিল সাহেব ভিডিওটা বের করে আবার চালু করলেন শুরু থেকে দেখালেন। তারপর বললেন এবার বলো তুমি কি বলতে চাও!

– আমার বিশ্বাস হচ্ছে না আমার ছেলে এসব করেছে।

– তোমার বিশ্বাস হোক বা না হোক এটাই সত্য। তাই এই বিয়ের কথা ভুলে যাও।

– ভুলে তো যাবো তার আগে ছেলেটাকেও তো বোঝাতে হবে! একটা মেয়েকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কেনো স্পর্শ করলো সেই কৈফিয়ত তো তাকে দিতে হবে!তুমি শুয়ে পরো আমি আসছি।

তন্ময় কিছুক্ষণ পূর্বেই বাসায় ফিরেছে। গুনগুন করতে করতে নিজের রুমে ঠুকলো। ঠুকেই সামনে তাকিয়ে বলে আম্মু তুমি!

– তোমার রুমে আসা যাবে না

– যাবেনা কেনো একশবার যাবে। কিন্তু এতো রাতে তুমি কি করছে! কিছু বলবে?

– বলার মতো কোন মুখ রেখেছ তুমি?
– আম্মু কি হয়েছে সেটা তো বলো?

– তুমি ভার্সিটিতে মেয়েটার সাথে কি করেছো আমি সবটা দেখেছি। তাই কোন রকম বাহানা চলবে না। আমি তো এমন আদর্শ দেইনি তোমাকে তাহলে কি? আমার আদর্শেই ভুল ছিলো!

– তন্ময় সায়লা বেগমের পা জড়িয়ে ধরে বলে, তুমি এভাবে কেনো বলছো আম্মু, তুমি তো জানো রাগ উঠলে আমার হিতাহিতজ্ঞান থাকেনা। তবে আমি যে ভুল করেছি তার শাস্তি হিসেবে অনুকে বিয়ে করতে চাই!

– তুমি যে মেয়েকে অসম্মান করেছো সে তোমাকে বিয়ে কেনো করবে?

– প্লিজ আম্মু তুমি কিছু করো আমার অনুকে চাই!

– চাইলেই সবকিছু পাওয়া যায় না। অর্জন করে নিতে হয়। যদি তুমি অর্জন করে নিতে পারো তবেই এই বিয়ে হবে নয়তো কখনোই সম্ভব না।একটা কথা মনে রেখে তুমি আগামীকাল অনুর কাছে ক্ষমা চাইবে!

– আম্মু আমি অনুকে অর্জন করে নেবো।

– সেটা সময় বলে দেবো, তুমি ফ্রেশ হও আমি আসছি।

সায়লা বেগম চলে যেতেই ফ্লোরে লাথি মে*রে বলে তোমাকে দেখে নেবো মিস অনাহিতা। যাস্ট ওয়েট।

শার্ট খুলে রেখে ফ্রেশ না হয়ে সেভাবেই শুয়ে পরলো।

অনুর সব রকম যত্ন নিচ্ছে মাহি।অনু সব কিছু খুলে বললো মাহিকে। তানিমের কথা শুনে মাহি বলে, শোন সুযোগ বুঝে সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগেই তুই ওই ভালো ছেলেটাকে সব বলে দিবি। তারপর দেখি কি করে তোকে বিয়ে করে।

– হুম শুধু সুযোগ আসুক।

রাত শেষে হয়ে পাখির কিচিরমিচির ধ্বনি আর সূর্যের সোনালী আলো চারদিকে ছড়িয়ে পরে জানান দিচ্ছে আগমন ঘটেছে এক নতুন দিনের।

সারা আজ খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে হাঁটতে বের হয়েছে। হাঁটতে আসাটা তো বাহানা কেবল সেতো দেখতে এসেছে তার রায়হান ভাইকে।

সকাল ছয়টায় রায়হানের প্রথম টিউশন। রায়হান বাসা থেকে একটু আগেই বের হয়েছে। সারা আনমনে হেঁটে যাচ্ছে। হুট করেই চোখ পরলো অলিভ কালারের শার্ট আর কালো জিন্স, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা পরা ছেলেটির দিকে। থমকে দাঁড়িয়ে পরলো সারা। চোখের দৃষ্টি আটকে আছে রায়হানের দিকেই। রায়হান সারার খুব কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় চোখ পরলো সারার দিকে। রায়হান একপলক তাকালো তারপর ভাবলো মেয়েটা ইদানীং খুব ছন্নছাড়া মনে হয়। একদম পাশ কেটে যাওয়ার সময় বেখেয়ালি ভাবে সারা রায়হানের হাত ধরে বলে এতো তাড়া কিসের আপনার রায়হান ভাই!

সারার স্পর্শে রায়হান স্টেচু হয়ে গেলো হৃদযন্ত্র বেসামাল হয়ে পরলো। নিজেকে সামলে নিয়ে রায়হান বললো,আপনি হয়তো ভুল করছেন মিস!

রায়হানের কথা কর্ণগোচর হতেই হাত ছেড়ে দিয়ে, সারা কাচুমাচু হয়ে বলে, সরি আমি বুঝতে পারিনি।

– ইট’স ওকে মিস, বলেই সামনে পা বাড়ালো

– সারা বললো আপনি আমাকে আপনি করে কেনো বলছেন রায়হান ভাই!

– রায়হানের পা আটকে গেলো পিছু ফিরে বললো, তাহলে কি বলবো!
– আপনি কি আমাকে চিনতে পারেননি!
– কেনো চিনবো না। আপনি আহমেদ শেখের মেয়ে আদিল শেখের ভাতিজি। তন্ময় শেখ আর তানিম শেখের বোন।

– এতো কিছুর ভিরে আপনি আমাকেই ভুলে গেলেন!

– মনে রাখার কথা ছিলো কি মিস!

– মানছি আমি ভুল করেছি। তবে আমার সেসময় বয়সাটা কম ছিলো।

– আমি সেসব মনে করতে চাইনা।

– শুধু একটা দিনের কিছু ঘন্টা কি দেয়া যায় আমায়। আমি জানি আপনার সময় মূল্যবান। তবুও যদি একটু আমাকে দেয়া যেতো!

– দেখুন গরীবের সময়ের কোন মূল্য নেই আর না আছে নিজের কোন মূল্য। তাই বলছিলাম মূল্যহীন মানুষের সাথে আপনার মতো মানুষ সময় কাটালে আপনার সমস্যা হবে!

– দয়া করে এভাবে বলবেন না। আমাকে শুধু কিছুটা সময় দিন।

– আচ্ছা কবে কখন চাই সময়!
– আজ বিকেলে লেক পার্কে

-জ্বি পৌঁছে যাবো, বলে আর দেড়ি করলো না চলে গেলো।

সারা তাকিয়ে আছে রায়হানের চলে যাওয়ার পথে। আমার দিকে তাকিয়ে আপনি কি একটুও কিছু অনুভব করতে পারেন না। এই চোখে আপনার জন্য ভালোবাসা দেখেন না। আলতো হাতে চোখের জলটুকু মুছে নিয়ে ফিরে আসলো বাসায়।

তন্ময় তখনো গভীর ঘুমে।

তানিম উঠে রেডি হয়ে অফিসের জন্য বেরিয়ে পরেছে। সারা ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে তান্ময়কে ডাকতে আসলো।

অনুর চোখ এখনো লাল হয়েছে।তাই অনু বললো,মাহি আজ তুই ভার্সিটিতে যা আমি বাসায় থাকি।
মাহি অমত করলো না। রাতের বাসি ভাত খেয়ে বের হয়ে পরলো। অনু ফ্রেশ হয়ে বই খাতা নিয়ে বসলো।
তবে কিছুতেই মন বসছে না পড়ায়। বাড়ির কথা খুব মনে পরছে। আসার সময় পাশের বাসার একজনের ফোন নাম্বার নিয়ে এসেছিলো।আজকে তাকেই ফোন দেয়ার ইচ্ছে করলো, গায়ের ওড়নাটা ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে চলে আসলো মিফতার কাছে। মিফতা তখন নাস্তা করছে। অনুকে দেখে বলে আসো বসো।

অনু সোফায় বসতেই মিফতার তিন বছরের মেয়ে মেহরুবা এসে বলে,তুমি কে? তোমাকে তো আগে দেখিনি মেয়ে?

অনু বোকার মতো তাকিয়ে আছে এতোটুকু মেয়ে কথার কি ফুলঝুরি।
মিফতা বললো, মেহরুবা ইনি হচ্ছে তোমার নতুন আন্টি। তুমি তাকে মামুনিও বলতে পারো।
মেহরুবা ঘুরে ঘুরে অনুকে দেখে বলে, মামুনি তোমার নাম কি?

অনু কিছু বলবে তার আগেই কেউ মেহরুবাকে কোলে নিতে নিতে বলে, তোমার মামুনির নাম…..

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here