তোলপাড় পর্ব ৩৩

তোলপাড়
ইসরাত জাহান তানজিলা
পর্ব-৩৩
________________
এক প্রকার হুট করেই সূর্যের এ্যাংগেজমেন্টের হয়ে গেল।বিয়ের সময় ধুমধাম করে অনুষ্ঠান করা হবে। এরকম হুট করে এ্যাংগেজমেন্টের কারণ হলো মিলার বাসা থেকে অন্য আরেক জায়গায় বিয়ে প্রায় পাকাপাকি করে ফেলেছিলো।অরূণী সূর্যর কাছে অবদার করে বসলো, “দাদা এই উপলক্ষ্যে বাসায় একটা পার্টির আয়োজন করে ফেলো।”
সূর্যও হ্যাঁ বলে দিলো। সূর্যের বন্ধু মহলের সবাইকে দাওয়াত করলো।অরূণীও ওঁর বান্ধবীদের দাওয়াত করলো।অরূণী সেলিনা আহমেদ’কে বলল, “আম্মা রুদ্র ভাইয়া’কেও দাওয়াত করো পার্টিতে।”
– “তুই দাওয়াত করতে পারিস না?সবাই কে তো তোরা দাওয়াত করলি আর রুদ্র’কে আমার দাওয়াত করতে হবে কেন?”
– “উনি কি আমার ফ্রেন্ড প্রজাতির কেউ যে আমার দাওয়াতে চলে আসবে?”
সেলিনা আহমেদই দাওয়াত করলো রুদ্র’কে। দাওয়াত পেয়ে রুদ্র বলল, “পার্টি টার্টি আমার ভালো লাগে না। কোলাহল পছন্দ না।”
অরূণী সোজাসাপ্টা ভাবে বলে, “পার্টির আয়োজনই তো করছি আপনার জন্য।আপনায় দাওয়াত করবো আপনি যাবেন।অনেক সময় দুইজন একটা জায়গায় থাকবো। মাঝেমাঝে চোখাচোখি হবে।ব্যাপার’টা রোমান্টিক না?”
রুদ্র হেসে বলল, “রোমান্টিকতার তুমি কী বুঝো?”
অরূণী চট করে এক ঝলক হেসে উত্তর দেয়, “না আমি কিছু বুঝি না। কিন্তু আপনিও তো আমায় শিখাচ্ছেন না।খালার হাজবেন্ডের মত আচরণ করছেন।”
কথাটা বলেই কিঞ্চিৎ লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেলল অরূণী। রুদ্র নিঃশব্দে হাসলো, “আপাতত না হয় খালার হাজবেন্ড হয়েই থাকি।তোমার লেখাপড়া কমপ্লিট হোক তারপর তোমার হাজবেন্ড হবো।”
অরূণীর মুখ’টা লাজরঞ্জিত বর্ণ ধারণ করলো। ইস্! রুদ্রর প্রতিটি কথায় শিড়দাঁড়া বেয়ে শীতল রক্তস্রোত বয়ে যায়।অরূণী কিছুক্ষণ পর রুদ্রর দিকে তাকিয়ে বলল, “যাবেন না আপনি পার্টিতে?”
রুদ্র বেশ কিছুক্ষণ ভেবে বলল, “যেতেই হবে?”
অরূণী বিরক্ততে মুখ বিশ্রী রকম বিকৃত করে ফেলে। রুদ্র অরূণীর দিকে তাকিয়ে ফের বলল, “আচ্চা যাবো যাবো।তবুও পেঁচামুখো হয়ে থেকো না।”
অরূণী হাসলো। কলেজের সময় হয়ে আসলে বলে, “এখন যাচ্ছি তাহলে।”
অরূণী দ্রুত কলেজের দিকে হাঁটতে থাকলো। চারদিকে তাকিয়ে রিকশা,ট্যাক্সি কিছু ই পেলো না।‌ অগত্যা হেঁটে যেতে হলো। টিফিন টাইমে ক্যান্টিনে আড্ডা দেওয়ার সময় তাইতি জিজ্ঞেস করলো, “রুদ্র ভাই যাবে না পার্টিতে?”
– “যাবে তো।”
অরূণী আক্ষেপ করে আবার বলল, “উনি আমায় একবার আই লাভ ইউ বললো না। কতটা কাঠখোট্টা ভাবতে পারিস?”
– “থ্রেট দিতে পারিস না?”
অরূণী ভ্রুযুগল কুঁচকে বলল, “থ্রেট?থ্রেট দিয়ে আই লাভ ইউ বলাবো?”
– “হ্যাঁ থ্রেট দিবি।”
– “আমায় শুধু অরূণী অরুণী ডাকে।জান, কলিজা,পাখি কিছু ডাকে না।কী পরিমাণ নিরামিষ!”
তাইতি পূর্বের ন্যায় আবার বলল, “থ্রেট দে।এটার জন্যও থ্রেট দে। বয়ফ্রেন্ড যদি জান, কলিজা,বাবু বাবু বলে মাথায় নিয়ে না নাচে,সে আবার কীসের বয়ফ্রেন্ড?”
______________
পার্টির দিন বিকাল বেলায় রুদ্র ফোন করে বলল, “অরূণী শাড়ি পরো আজ।গায়ে হলুদে শাড়ি পরেছো না চমৎকার লেগেছে।”
অরূণী বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেল। মন-প্রাণ আনন্দে পুলকিত হচ্ছে। উৎফুল্ল চিত্তে বলল, “কই সেদিন তো বললেন না ভালো লেগেছে?”
– “সবকিছু বলতে হবে কেন?তুমি বুঝে নিও।”
অরূণী আবেগঘন কণ্ঠে বলল, “বুঝে নিবো।”
অনুষ্ঠান সন্ধ্যার পর।তাইতি,রাকা ওঁরা সবাই এসে গেছে। সূর্যের বন্ধু-বান্ধবও সবাই এসে গেছে। কিছুক্ষণ পর রুদ্রও আসলো।অরূণী সবুজ রঙের একটা শাড়ি পড়েছে। রুদ্র সূর্যের বন্ধুদের সাথে বসে আছে। রুদ্র বার বার অরূণীর দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে।অরূণীও সবার দৃষ্টি অগোচরে তাকাচ্ছে।রাকা অরূণীর দিকে তাকিয়ে বলল, “একটু কথা বলার ব্যবস্থা করে দিবো?”
অরূণী অস্থির চোখে তাকিয়ে বলল, “কীভাবে?”
তাইতি বলল, “অরূ একটা কাজ করতে পারিস।”
– “কী কাজ করবো?”
– “রুদ্র ভাইকে একটা চুমু দে।”
অরূণী বেশ বিরক্ত গলায় বলল, “ছিঃ আমার চরিত্র কী এত খারাপ।”
– “এটা চরিত্র খারাপের ব্যাপার না,এটা সাহসিকতার ব্যাপার।”
– “না,না আমায় থাপ্পড় দিবে।”
অরূণীর মাথায়ও হঠাৎ কুবুদ্ধি চাপলো।তাইতির কথায় সায় দিয়ে বলল, “কই দিবো বল?”
রাকা হাসতে হাসতে বলল, “গালে দিস নয়ত কপালে।”
তাইতি বলল, “রুদ্র ভাই’কে আড়ালে ডেকে আনছি।তুই একটা চুমু দিয়ে দৌড় দিবি।”
অরূণীর বুক ধড়ফড় করছে।তাইতি আর নীড়া গিয়ে রুদ্র’কে ডেকে আনলো। অরূণী ওঁর রুমের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে। রাকা অরূণী’কে ইশারায় বলল, “আমরা দেখছি কেউ আসছে কি-না।তুই চিন্তা করিস না।”
ওঁরা রুম থেকে চলে যায়। রুদ্র ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। জিজ্ঞেস করলো, “কী ব্যাপার অরূণী?কী কু-বুদ্ধি করেছো?”
অরূণী একবার তাকালো রুদ্রর দিকে। এতক্ষণ বসে যে সাহস সঞ্চয় করছে সব উবে গেল।অরূণীর বুকের ভিতর দুরুদুরু করছে। রুদ্র বেশ কয়েকবার অরূণীর দিকে তাকিয়ে বলল, “শাড়ি দারুন লাগছে।”
অরূণী মিষ্টি হেসে বলল, “ধন্যবাদ।”
– “এখন বলো কী বুদ্ধি এঁটোছো?যে কেউ এসে যেতে পারে।মাথায় কী বুদ্ধি নেই?”
অরূণী অপ্রস্তত ভাবে তাকালো রুদ্রর দিকে তাকালো।অরূণী হঠাৎ বলে ওঠল, “ওই যে ওদিকে তাকান।”
রুদ্র পাশে ফিরতেই অরূণী হঠাৎ আক্রমণের মত রুদ্রর গালে ঠোঁট জোড়া ছুঁইয়ে তড়িৎ গতিতে রুম থেকে ছুটে পালিয়ে যায়। রুদ্র গালে হাত দিয়ে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।কী হলো এটা? কিছুক্ষণ পর রুদ্র বুঝতে পারলো অরূণীর ঠোঁটের স্পর্শে ও শিউরে ওঠেছে।এই বিস্ময় ভাব কাটতে রুদ্রর বেশ কিছুক্ষণ লাগলো।এমন একটা অদ্ভুত অরূণী সব প্রেমিকের থাকা দরকার। রুদ্র আপনাআপনি হেসে ওঠলো।
অরূণী ওঁদের কাছে গিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো, “উফ্! কি দুঃসাহসিক কাজ।আমি আজ আর উনার সামনে পড়বো না।”
রুদ্র রুম থেকে বের হয়ে আশেপাশে অরূণী’কে খোঁজতে খোঁজতে সামনের দিকে পা ফেলতে লাগলো।অরূণীর দেখা মিলছে না। রুদ্র তাইতি’কে ডেকে চুপিসারে বলল, “অরূণী কোথায়?ও’কে একটু ডেকে নিয়ে আসো তো।”
সূর্য,সাহেদ আহমেদ সবাই অরূণী’কে ডাকছে।অরূণী অস্বস্তিপূর্ণ গলায় বলল, “আমি যাবো না ওখানে।”
সূর্যের চেঁচামেচির জন্য অরূণীর যেতেই হলো।অরূণী’কে দেখেই রুদ্র হাসলো।অরূণী একবার রুদ্রর দিকে তাকিয়ে আর তাকালো না।রুদ্র মনে মনে অরূণীর সাথে কথা বলার সুযোগ খোঁজছে।এক পর্যায়ে সুযোগ পেয়েও গেল। রুদ্র চাপা গলায় বলল, “অরূণী তুমি কী জানো?”
অরূণী হৃৎযন্ত্র’টা অস্বাভাবিক ভাবে লাফাচ্ছে। আর একটু হলেই যেন বিকল হয়ে যাবে।কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, “কী?”
– “তুমি একটা পাগলী।তোমায় পাবনা রেখে আসা উচিত।”
অরূণী যথারীতি হতাশ হলো। ভেবেছিলো কোনো রোমান্টিক কথা বলবে।অরূণী নিজেকে সংযত করে অতি দ্রুত,বেশি খুশি হওয়া যাবে না জ্বর আসবে।রুদ্র আর কোনো কথা না বলে শক্ত করে অরূণীর হাত ধরে রাখে।অরূণীও কিছু বললো না। শুধু বুঝতে পারলো তীব্র এক অনুভূতিতে ওঁর বুকের ভিতর’টা অবশ হয়ে যাচ্ছে। শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুততর হচ্ছে।
অনুষ্ঠান শেষে রুদ্র বাসায় যাওয়ার আগে অরূণীর সাথে কথা বলার সুযোগ পেলো না।অরূণী শাড়ি চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।চোখ দুটো বুঁজে ভাবছে রুদ্রর কথা।অরূণীর শরীরের প্রতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিহরণ জাগছে। পুলকিত হচ্ছে মুহূর্তে মুহূর্তে।অরূণী নিজের কপালে হাত দিয়ে দেখলো।জ্বর আসলো না তো আবার?এর ভিতর রুদ্র ফোন দেয়।অরূণী ফোন তুললেই বলল, “ঘুম পেয়েছে?”
অরূণী চোখ দুটো বন্ধ রেখেই গাঢ় প্রশান্তি নিয়ে জবাব দেয়, “উঁহু।”
– “যাও বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াও।দেখো এক ফালি চাঁদ,তোমার চঞ্চলতার মত ঝকমকে।”
অরূণী বারান্দায় যায়।না,জ্বর এবার এসেই যাবে। রুদ্র ফের বলল, “অরূণী ঘুম আসছে না আমার।সারা রাত কথা বলবো কেমন?”
অরূণীর চোখে মুখে বিস্ময় দীপ্তি ছড়াচ্ছে। বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে গেল।কি মোহময় লাগে রুদ্রর কথা!অরূণীর মাথার ভিতর ঝিমঝিম করছে।
(চলবে)
ব্যস্ততার কারণে পর্ব’টা ছোট হয়েছে।ব্যস্ততা সবার ই থাকে। আজকাল পাঠকরা আবার এই নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে যায়।🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here