তোলপাড়
ইসরাত জাহান তানজিলা
পর্ব-৯
___________________
সকালের মৃদুমন্দ বাতাসে জানালায় টাঙানো পর্দা’টা হালকা ভাবে উড়ছে। পর্দার ফাঁক দিয়ে সকালের নিস্তেজ কয়েক খণ্ড রোদ অরূণীর চোখে-মুখে লেপ্টে আছে।অরূণী উপুড় হয়ে বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে আছে। পা দুটো দ আকৃতির করে এক পা দিয়ে অন্য পায়ে মৃদু আঘাত করছে। গুগল ঘাঁটাঘাঁটি করছে। গুগলে সার্চ করল ছেলে পটানোর উপায়। অরূণী গভীর মনোযোগে উপায় গুলো পড়ল। মনের মত কোনো উপায় পেলো না।কি সব হাবিজাবি আসে।এসবে ছেলে পটবে না। তারপর আবার সার্চ করল দুই দিনের মধ্যে প্রেম করার উপায়। কোনো ফয়দা হলো না,ভালো কিছুই খুঁজে পেলো না। গুগল যেন অরূণীর কথা বুঝতে পারছে না।অরূণী বিরক্ত’তে ঠোঁট উল্টিয়ে ফোন’টা রেখে দেয়।
বিকাল বেলা ছাদে বসে ঘুড়ি উড়াচ্ছিলো অরূণী। ঘুড়ির সুতো কেটে গিয়ে পড়ে পাশের বাড়ির ছাদে।অরূণী দ্রুত সেখানে যায়। ছাদে গিয়ে দেখা হয় সেই বাসার মালিকের ছেলের বউয়ের সাথে।বউয়ের নাম মলি। অরূণীর বয়সী হবে মেয়েটা। কিন্তু প্রেম করে এক ছেলের সাথে ভেগে যেতে গিয়ে ধরা পড়ে। ফলস্বরুপ ক্লাস টেনে বসেই বিয়ে হয়ে যায়।মলির হাজবেন্ডের বয়স মলির থেকে উনিশ বছর বেশি। বাড়িওয়ালার এত প্রতিপত্ত দেখে কোনো ভেদ-বিচার না মলির বাবা-মা বিয়ে দিয়ে দিলো মলি’কে।অরূণী’কে দেখে আফসোস করে মলি বলল, “বুঝলে অরূণী ভুলেও বয়স্ক পুরুষ বিয়ে করবে না।যতই টাকা থাকুক।বয়সের সাথে সাথে এঁদের আবেগ শুঁটকি দিয়ে যায়।বউয়ের সাথে রোমাঞ্চ করতে লজ্জা পায়।জাত নিরামিষ।”
অরূণীও মলির সাথে সুর মিলিয়ে বলল, “জি ভাবী বিয়া করবো করবো কচি কচি পোলা। সারাক্ষণ বাবু, সোনা, ময়না ডেকে পৃথিবীতে মহা ভূমিকম্প বয়িয়ে দিবে।”
মলি তাঁর দুঃখের ঝুলি খুলে দিয়ে বলল, “উনি কেমন মানুষ বলো আমার জন্মদিন কবে তা মনে থাকে না?বলে বুড়ো বয়সে কিসের জন্মদিন। তাঁর নাকি আমাকে হ্যাপি বার্থডে বলতে লজ্জা করে।”
অরূণীর সাথে দেখা হলেই এসব কথা জুড়ে দিবে মলি।নিত্য এক কথা শুনতে শুনতে অরূণী খানিক বিরক্ত।মলির এসব দুঃখের কাহিনি অরূণীর মুখস্থ হয়ে গেছে। আরূণী তাড়া দেখিয়ে বলল, “ভাবী আরেকদিন শুনবো,আমি এখন যাচ্ছি। ভাইয়া’কে বেশি বেশি আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়াবেন। নিরামিষ থেকে অতি আমিষ হয়ে যাবে। তখন আপনাদের সংসার হবে আমিষময়।”
– “অরূণী তুমি তো দেখছি ঠাট্টা করছো।”
মলি জোর গলায় আবার বলল, “আরে একটু বসো।”
অরূণী সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে বলল, “না, না ভাবী।”
অরূণী বাসায় ঢুকতেই সূর্য ডাকলো। অরূণীর বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ওঠল। সারাদিন কত উল্টাপাল্টা কাণ্ড করে। কে কোথা থেকে আবার বিচার দিলো?অরূণী ভয়ে ভয়ে গেল সূর্যের কাছে। অরূণীর অবচেতন মন বলছে রুদ্রের বিষয় জেনে গেছে সূর্য। অরূণীর মনে মহা ত্রাসন। সূর্য অরূণীর দিকে তাকিয়ে বলল, “কোচিং-এ সবার ভিতর বসে পড়া তো ভালো হয় না।আমি একজনকে সাথে কথা বলেছি।কাল থেকে তোকে বাসায় এসে পড়াবে।”
অরূণী যেসব আশঙ্কায় ভীতি হয়েছিল সেসব কিছুই না হওয়ায় মনে মনে স্বস্তি পেলো। কিন্তু হোম টিউটরের কথা শুনতেই মনের ভিতর সূক্ষ্ম ব্যথা অনুভূত হলো।হোম টিউটরের কাছে পড়া কোনো এক অজ্ঞাত কারণে অরূণীর খুব বেশি বিরক্ত লাগে।বাসায় টিচার এসে পড়ালে সাহেদ আহমেদ বসে বসে জ্ঞান দিবে, সেলিনা আহমেদ খবরদারি করবে।সব মিলিয়ে এক প্রকার শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় অরূণীর মনে। অরূণী বলল, “দাদা কোচিং-এ ই তো পড়া ভালো হয়।”
সূর্য চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই অরূণী দমে গেল।আর কথা বাড়ালো না। সূর্য বলল, “যা এখন।”
অরূণী কয়েক পা গেলে সূর্য আবার বলল, “বুঝলি অরূণী আমার গার্লফ্রেন্ড এখন চুল কালো করে ফেলেছে।”
অরূণী সূর্যের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ওঠলো। কিন্তু হোম টিউটরের ব্যাপার’টা অরূণীর মেজাজ ক্রমশ খারাপ করে দিচ্ছে। রুমে এসে অরূণী বসে বসে ভাবছে রুদ্র চিঠি পেয়ে কত অবাক হয়েছে? রুদ্র কি ভাবছে অরূণী’কে নিয়ে? রুদ্রের সাথে দেখা হলে কেমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে?এসব ভাবতে ভাবতে অরূণীর গা ছমছম করে ওঠে। রুদ্রের কি গার্লফ্রেন্ড আছে?এই প্রশ্নটা অরূণীর মন’টা বিষণ্ণ করে দেয়।এই প্রশ্নের উত্তর অরূণী আপাতত খুঁজছে না। খুঁজলে হয়ত দেখবে রুদ্রের গার্লফ্রেন্ড আছে।তখন অরূণীর হৃদয় উপকূলে মহাপ্রলয় বয়ে যাবে। রুদ্র’কে নিয়ে অরূণীর রোমাঞ্চকর ভাবনা গুলো চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাবে। তাই না জানাই থাক।অরূণী চায় মিরাকল হয়ে যাক ব্যাপার’টা। যেন রুদ্রের ভালোবাসার মানুষ না থাকে। কিন্তু এই আকাঙ্ক্ষা’টার জোর একদম ক্ষীণ। গার্লফ্রেন্ড না থেকে পারেই না।
_____________
দুই-তিন ধরে অরূণী কোনো ম্যাসেজ দিচ্ছে না। রুদ্র যে ম্যাসেজের আশা করে এমনটাও নয়। রুদ্র ধারণা করে হয়ত বরাবরের মত অরূণী ম্যাসেজ দিবে কিন্তু রুদ্রের ধারণা দুই-তিন দিন ধরে মিছে হচ্ছে। রুদ্র সকালের দিকে দারোয়ানের কাছে গিয়ে বলল, “কাকা যে মেয়ে ওইদিন চিঠি দিয়ে গিয়েছে সে মেয়ে’কি আর এসেছিলো?”
দারোয়ান বলল, “না বাজান আয় নাই।”
রুদ্র কয়েক মুহূর্ত পর বলল, “মেয়েটা যদি আর কখনো আসে তাহলে পরিচয় জিজ্ঞেস করবেন। যেভাবে হোক মেয়েটার পরিচয় আমাকে দিবেন।আর মেয়েটা যখন আসে তখন যদি আমি বাসায় থাকি সাথে সাথে আমায় ফোন দিবেন।”
দারোয়ান হ্যাঁ সূচক ভঙ্গিতে মাথা নাড়ায়। রুদ্র রুমে যেতেই কিরণ জিজ্ঞেস করে, “দারোয়ান চাচার কাছে ওই মেয়ের খোঁজ নিতে গিয়েছিলি না?”
কিরণ একটু থেমে খোঁচা মেরে বলল, “মিস করিস না-কি?”
রুদ্র কপাল ভাঁজ করে বলল, “কিসের জন্য মিস করবো? মেয়েটা এত রকম কাণ্ড করল অথচ মেয়ে’টার কোনো হদিসই মিলাতে পারছি না। মেয়েটা যদি আমার সামনে আসতো তাহলে খুঁজতাম না কিন্তু মেয়েটা নিজেকে আড়াল করে লুকোচুরি খেলছে।”
– “তা কি সামনে পেলে চড় মারবি?”
– “ওই লোকের বাসায় গিয়ে দুইদিন যখন অপদস্থ হয়েছি তখন সামনে পেলে কি যে করতাম! কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেসব রাগ হালকা হয়ে গেছে।এখন আর চড় মারার মত রাগ হচ্ছে না।”
কিরণ প্রত্যুত্তরে খুব উৎসুক গলায় বলল, “আমার মেয়েটার ওপর একটুও রাগ হচ্ছে না। সব সময় দেখি ছেলেরা মেয়েদের জন্য পাগল থাকে।মেয়েটার ভিতর ব্যতিক্রম কিছু পেয়ে আমি ইমপ্রেসড।”
রুদ্র ধমক দিয়ে বলল, “রাখ তোর ইমপ্রেসড।আমার টাকা?”
কিরণ হেসে ওঠে। বলে, “টাকার আশা এখনো ছাড়িস নি?”
রুদ্র কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “মেয়েটার বিষয় আমি মাথা থেকে নামাতেই পারছি না।কেমন অদ্ভুত অদ্ভুত কাণ্ড করলো!”
কিরণ ফিক করে হেসে ওঠে। কিছুটা বিদ্রুপ পূর্ণ হাসি।হাসির অর্থ এই যে মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেছিস। রুদ্র কিরণের এমন হাসির বিপরীতে বলল, “দাঁত কেলাস কেন তুই?প্রেমে-ট্রেমে পড়িনি। কিন্তু মেয়েটা’কে জানার কৌতূহল বোধ হচ্ছে।”
– “প্রেমে পড়বি কেমনে তুই? লাবন্য যে জোস রকমের ছ্যাকা দিছে।”
লাবন্য নামটা শুনে রুদ্রের মুখের অভিব্যক্তি মুহূর্তেই পরিবর্তন হয়ে গেল। কিছুক্ষণ চোখ লাল করে তাকিয়ে ছিলো কিরণের দিকে। চাপা গলায় বলল, “এই নাম’টা আমার সামনে উচ্চারণ করতে নিষেধ করিনা?”
কিরণের কাছ থেকে কোন উত্তরের আশা না করে রুম থেকে বের হয়ে গেল রুদ্র।সারা সন্ধা কাটলো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে,খোশ গল্প করে। আড্ডার আসর ভাঙলো রাত দশটা কি এগারোটার দিকে।আড্ডা শেষে বের হয়ে রুদ্র একটা কম্পিউটারের দোকানের সামনে রাখা গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে। রুদ্রের বন্ধু আদিল গেছে কম্পিউটারের দোকানে কি যেন কাজে। রুদ্র দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আদিলের জন্য অপেক্ষা করছে। কম্পিউটারের দোকানের পাশেই বিশাল শপিং মল।
অরূণী সেলিনা আহমেদের সাথে এসেছে শপিং করতে।গত তিন দিন ইচ্ছে করেই রুদ্র’কে ম্যাসেজ করে নি। রুদ্র’কে ম্যাসেজ না করায় রুদ্র কিছুটা হলেও অবাক হয়েছে। অরূণী চায় রুদ্র অবাক হোক। শপিং শেষে শপিং মল থেকে বের হতেই অরূণীর চোখ আটকে যায় শপিং মলের বাম দিকটায়। লাইটের অত্যুজ্জ্বল আলোতে অরূণী স্পষ্ট ভাবে দেখতে পেলো রুদ্র’কে। অরূণী অস্বাভাবিক ভাবে চমকে ওঠে। অরূণীর ইচ্ছে করছে রুদ্রের সামনে যেতে। রুদ্র’কে দেখার সাথে সাথে অরূণীর মনে তোলপাড় শুরু হয়ে গেল।কয়েক বার তাকালো রুদ্রের দিকে। সেলিনা আহমেদ অস্থির ভঙ্গিতে অপেক্ষা করছে। বিরক্ত গলায় বলল, “তোর আব্বা বলল দুই মিনিটের ভিতর গাড়ি নিয়ে আসছে।এখনো কোনো হদিস নেই।”
সেলিনা আহমেদের কথা অরূণীর কানে পৌঁছলো না বোধ হয়। অরূণী আকাশ-পাতাল ভুলে মগ্ন হয়ে আছে। তীব্র গরমে ঘেমে যাচ্ছে সেলিনা আহমেদ। হাতে থাকা টিস্যু পেপার দিয়ে বার বার কপাল মুছছে আর এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। চরম বিরক্তি নিয়ে সেলিনা আহমেদ আবার বলল, “দেখলি তোর বাপের কাণ্ড?গরমে সিদ্ধ হয়ে যাচ্ছি।”
এর ভিতর সাহেদ আহমেদ চলে আসে। কিছুটা দূরে গাড়ি থামিয়ে বলল, “এই আসো তোমরা।”
সেলিনা আহমেদ অরূণীর দিকে তাকিয়ে বলল, “আয় আয়।”
রুদ্র যেখানে দাঁড়িয়ে আছে তার পাশ দিয়েই হেঁটে যেতে হবে।অরূণী বিকাল বেলা কতগুলো তাজা কৃষ্ণচূড়া ফুল রেখেছিলো ব্যাগে। রুদ্রের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় খুব সাবধানে রুদ্র যে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে গাড়ির ওপর কৃষ্ণচূড়া ফুল গুলো রেখে দ্রুত পায়ে হেঁটে যায়। অরূণী গাড়ি’তে উঠেই রুদ্রের ফোনে ম্যাসেজ করে, “গাড়ির উপর কৃষ্ণচূড়া ফুল।”
এর ভিতর গাড়ি স্টার্ট করলো।ম্যাসেজ’টা পাওয়ার সাথে সাথে রুদ্র গাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি কৃষ্ণচূড়া ফুল। রুদ্র প্রচণ্ড ভাবে চমকে ওঠে। মনে হচ্ছে ভয় পেয়েছে। উথাল পাতাল হয়ে চারদিকে চোখ বুলাচ্ছে। অরূণী গাড়ির ভিতর থেকে উঁকি দিয়ে রুদ্রের উথাল পাতাল রূপ’টা দেখলো।গাড়ি ধীরে ধীরে চলে যেতে লাগলো, রুদ্রও চলে গেল অরূণীর দৃষ্টি সীমার বাইরে। অরূণী মিটমিট করে হাসছে।খুব বেশি চমকিত হয়েছে রুদ্র। অরূণীর মনে প্রগাঢ় উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনা আর উত্তেজনা।
রুদ্র ভুত দেখার মত চমকালো।ভীষণ ভাবে চমকালো। রুদ্রের মুখে বিস্ময়ের রশ্মি বিচ্ছুরিত হচ্ছে যেন। দিশেহারা মানুষের মত চারদিক খুঁজলো। মেয়ে’টা এসে ওঁর পাশে কৃষ্ণচূড়া ফুল দিয়ে গেছে?এটা মেয়ে নাকি প্রেতাত্মা? রুদ্র যেন শিউরে ওঠছে। ফোন দেয় অরূণীর নম্বরে। ফোন সুইচ অফ। চমকানো ভাব’টা ধীরে ধীরে রাগে পরিণত হতে লাগলো। রুদ্র রাগে ঠোঁট কামড়ে রেখেছে। কপাল ভাঁজ করে তীব্র বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে আছে।ফলে রুদ্রর চোখ দুটো ক্ষুদ্র দেখাচ্ছে। বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে রাখার ফলে ক্ষুদ্র হয়ে যাওয়া চোখ দুটোতে বেজায় রাগ। এই মেয়েটা এমন কেন করছে? যথারীতি মহা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল রুদ্র। মেয়েটা এসে কৃষ্ণচূড়া ফুল রেখে গেছে কথা’টা যত বার ভাবে তত বারই রুদ্র বিমূঢ় হয়ে যায়।
এর ভিতর আদিল কম্পিউটারের দোকান থেকে বের হয়ে রুদ্র’কে দেখছে না। রুদ্র অরূণী’কে খুঁজতে খুঁজতে কিছু’টা দূরে চলে যায়। আদিল রুদ্রর কাছে ফোন দেয়। রুদ্র ফোন তুলে উন্মনা গলায় বলে, “আমি একটু সামনে আছি।আয়।”
আদিল সামনে এগিয়ে রুদ্র’কে পেয়ে বলল, “কোথায় গিয়েছিলি?”
– “এই তো এদিক টায়।”
রুদ্র অস্থির ভাবে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। আদিল বলল, “কাউকে খুঁজছিস?”
রুদ্র হাত দিয়ে নিজের ঘাড় চাপড়াতে চাপড়াতে বলল, “না,না চল।”
রুদ্র রাতে শুয়ে শুয়ে অনেকক্ষণ ভাবলো।অরূণীর ভাবনা’টা যেন রুদ্রের মাথায় চেপে বসেছে। না চাইতেও ভাবনা-চিন্তা গুলো মনে এসে ভিড় করে। সকালে ওঠে রুদ্র ভারি অবাক ভঙ্গিতে কিরণ’কে বলল, “কালকে রাতে কি একটা কাণ্ড ঘটেছে।”
– “এক্স গার্লফ্রেন্ড’কে স্বপ্ন দেখেছিস নাকি?”
রুদ্র চোখ লাল করে তাকায়।কিরণ হাসতে হাসতে বলল, “আমি তো লাবন্য নাম উচ্চারণ করিনি।”
– “ইয়ার্কি মারিস তুই আমার সাথে?সব কিছু তোর ইয়ার্কি করার বিষয়বস্তু?”
কিরণ এবার সিরিয়াস ভাব নিয়ে বলল, “বল,বল।”
রুদ্র সব’টা বলতেই কিরণ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বিস্ময় ভরা গলায় জিজ্ঞেস করল, “ফুল গুলো কোথায়?”
– “আনি নি।”
– “হোয়াট আনিস নি মানে?”
– “ওগুলো এনে আমি মাথায় লাগাবো?মেয়েটা আমায় পাগল করে ছাড়বে। সাংঘাতিক মেয়ে!”
রুদ্র একটু থেমে থমথমে মুখে বলল, “দোস্ত ওই মেয়ে’কে খুঁজে বের করে দে। যথারীতি মানসিক চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে।আমার টাকা গুলোও দিলো না।এমন মেয়ে আমি আমার লাইফেও দেখিনি।”
কিরণের মন রুদ্রের কথার দিকে নেই।নিজের মনে বলে চলেছে, “কি রোমাঞ্চকর ব্যাপার!অত রাতে কৃষ্ণচূড়া ফুল দিয়ে গেছে। উফ্! দোস্ত আমার মনে হয় মেয়েটা শপিং করতে এসেছিল।”
রুদ্র ব্যাঙ্গ করে বলল, “হ্যাঁ খুব রোমাঞ্চকর।”
কিরণের সাথে এসব বলাই বৃথা। সবকিছু রোমাঞ্চকর লাগে কিরণের কাছে। কিন্তু রুদ্র কিরণের কাছে না বললে শান্তি পায় না যেন। রুদ্র টিউশনির টাইম হয়ে গেলে ও রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
___________________
কয়েকদিন পর তাইতির বড় ভাই-ভাবীর বিবাহ বার্ষিকী।নয় বছর প্রেম করে বিয়ে করার পর প্রথম বিবাহ বার্ষিকী। খুব ধুমধাম করে উদযাপন করবে। তাইতির কাছের বান্ধবীদের দাওয়াত করলো। অরূণী,নীড়া,রাকা ওঁরা অনুষ্ঠানের আগেই যাবে। সাজানো-গোছানোর দায়িত্ব ওঁদের। অরূণী ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে। সাজগোজ বলতে শুধু চুল গুলো সুন্দর করে বেঁধেছে। আর কোনো প্রসাধনীর ছিটেফোঁটাও নেই। সাজগোজ বিরক্ত লাগে অরুণীর। সেলিনা আহমেদ অরূণীর রুমে এসে হুংকার ছেড়ে বলল, “একটু সাজগোজ করা যায় না? সবাই কত সেজেগুজে যাবে।”
অরূণী মুখ বাঁকালো। সেলিনা আহমেদ আবার বলল, “তাইতির ভাবীর জন্য হাজার তিনেক টাকার ভিতর একটা শাড়ি নিয়ে যাস।”
সেলিনা আহমেদ অরূণীর পাশে টাকা’টা রেখে খাটে বসলো। অরূণী টাকা ব্যাগে ঢুকাতে ঢুকাতে বলল, “আম্মা যাচ্ছি।তুমি সূর্যদা কে একটু বুঝিয়ে বলো।”
অরূণী গাঢ় সবুজ রঙের একটা শাড়ি কিনে তাইতির ভাবীর জন্য। তাইতির বাসায় যাওয়ার জন্য আশেপাশে তাকিয়ে গাড়ি খুঁজতে থাকে। রুদ্র অরূণীর থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। অরূণী রুদ্র’কে না দেখলেও আচমকা’ই রুদ্র দেখে অরূণী’কে। অরূণীর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে কেউ ও’কে ফলো করছে। বামে তাকিয়ে দেখে রুদ্র দ্রুত পায়ে ওঁর দিকে আসছে।অরূণীর হাত-পা যেন হিম শীতল হয়ে গেল। এক মুহূর্ত নষ্ট না করে স্থান-কাল ভুলে দৌড় দিলো। অরূণীর নাগাল পাওয়া খুব দরকার রুদ্রের। রুদ্র ব্যাকুল হয়ে ডাকলো, “এই মেয়ে দৌড়াবে না। দাঁড়াও বলছি।”
অরূণী পিছনে ফিরে রুদ্রের দিকে একটা ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে আবার দৌড়াতে লাগলো। রুদ্র হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। রুদ্রের ইচ্ছে করছে অরূণীর পিছু নিতে। পাবলিক ভাববে এই দিনে দুপুরে মেয়ে মানুষ’কে তাড়া করছে। পাবলিকের মারের ভয়ে অরূণীর পিছু না নিয়ে আশ্চর্যজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঠাঁয়। রুদ্র অস্ফুট স্বরে বলল, “ফ্লাইং কিস দিলো!”
(চলবে)