#দখিনের_জানলা (পর্ব-৩)
লেখনীতে— ইনশিয়াহ্ ইসলাম।
৫.
কলেজ থেকে ফিরতে চমচমের আড়াইটা বেজে গেল।এসে প্রাত্যহিক রুটিন মতো গোসল, নামাজ, খাওয়া শেষ করে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। ফাতেমা বেগম ভীষণ চেঁচামেচি করলেন মেয়েকে এভাবে অসময়ে বেরিয়ে যেতে দেখে। কিন্তু কাকে কি বলবে! চমচম কি কথা শোনার মেয়ে?
বিকেল চারটা বাজে। এই সময়ে বাম্পা স্কুল থেকে ফেরে। এই রাস্তা দিয়েই প্রতিদিন আসা যাওয়া করে সে। চমচম বাম্পার জন্য অপেক্ষা করছে। এলাকার পিচ্চি পাচ্চা ছেলে মেয়ে গুলো চমচমের ভীষণ বড় ভক্ত। অবশ্য অ’ন্ধ’ভক্ত বললেও ভুল হবে না। এই এত গুলো বাচ্চার মধ্যে বাম্পা চমচমের একটু কাছের। চমচমের নিজের কোনো ভাই নেই। ফর্সা, গোলগাল এই ছেলেটিকে দেখলে তার বেশ মায়া লাগে। ছেলেটা এত সুন্দর করে আপু ডাকে! তাই সে বাম্পাকে ভাইয়ের মতো আদর করে। বাম্পার আসল নাম হলো মাহাদ ইসলাম। তার এই বাম্পা নামের পেছনে একটা বড় কাহিনি রয়েছে। বাম্পা যখন প্রায় চার বছরের তখন তার বাবা-মা তাকে নিয়ে শিশুপার্কে গিয়েছিল। ভীড়ের মাঝে বাম্পা হারিয়ে যায় হুট করেই। তার বাবা-মা, ভাই তখন তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল। আর সে গিয়ে বাম্পার কার রাইডের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। সবাইকে কার ড্রাইভ করতে দেখে তার অনেক ইচ্ছা করছিল একটু ড্রাইভ করতে। তার ভাইয়াও এটা চালিয়েছে। শুধু সে পারেনি কখনো। ছোট মানুষের বেশ ইচ্ছা ছিল একটু বাম্পার কার চালানোর। কিন্তু তাকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছিল না কেউ। সে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে কান্না করছিল। এভাবে একা একটা বাচ্চাকে কান্না করতে দেখে এক ভদ্রলোক এগিয়ে আসেন। এসে বলেন,
-‘বাবু? কান্না করছ কেন?’
বাম্পা ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতেই থাকে। লোকটি বলল,
-‘তোমার আব্বু-আম্মু কোথায়? কার সাথে এসেছ!’
বাম্পা এবারও কিছু বলল না। লোকটা বুঝল বাচ্চাটা হারিয়ে গেছে। সে বলল,
-‘আচ্ছা বাবু, তোমার নাম কী!’
এবার বাম্পা মুখ খুলল কিন্তু নাম বলার বদলে সে বলল,
-‘বাম্পাআআআআ!’
লোকটা তব্দা খেয়ে গেল। এমন নাম সে আগে শোনেনি। তখনিই মাইকিং হলো একটা বাচ্চা হারিয়ে গেছে। আর তাকে কেউ পেলে যেন কন্ট্রোল রুমে এসে দিয়ে যায়। বাচ্চাটির বয়স প্রায় চার বছর। গায়ে লাল টি-শার্ট আর কালো প্যান্ট। লোকটি দেখল বাম্পার সাথে সব মিলে গেছে। সে বাম্পাকে কোলে তুলে নিল। বলল,
-‘চলো বাম্পা। তোমাকে তোমার বাবা-মায়ের কাছে পৌঁছে দেই।’
কন্ট্রোল রুমে এসে বাম্পাকে তার বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তর করে লোকটি বলল,
-‘এই নিন আপনাদের বাম্পা।’
বাম্পার বাবা-মা, ভাই সকলেই চমকে যায় এই নাম শুনে। লোকটি তাদের অবাক হতে দেখে ব্যাপারটা খুলে বলল। কিন্তু এটা সেখানেই চাপা পড়ল না। বাম্পার বড় ভাই মায়ান সারা এলাকা করে দিল এই নাম। বাম্পাকে সেদিনের পর থেকে সে বাম্পা বাম্পা করে ডাকতে থাকল। ততদিনে সবার কাছে সে সত্যিই মাহাদ থেকে বাম্পা হয়ে উঠল। এখন এই নামে তার বাবা-মাও তাকে ডাকে।
বাম্পাকে সাইকেল চালিয়ে আসতে দেখে চমচম হাতের ইশারা করে থামতে বলল। বাম্পা হেসে বলল,
-‘কি গো চমচম আপু! কি ব্যাপার? ক্রিকেট খেলবে নাকি আজ?’
-‘না না আজকে খেলব না। একটা কাজ করতে হবে তোকে।’
-‘কী কাজ?’
-‘একটা জিনিস লাগবে। তোকে এনে দিতে হবে।’
-‘কী জিনিস!’
-‘বলতেছি। আগে বল চাঁদ রাতে কোন কোন বো’ম ফাটাস?’
-‘ক’ক’টে’ল, পাখি, আঠাশ, কিটক্যাট!’
-‘কোনটা সবচেয়ে বেশি শব্দ করে ফুটবে?’
-‘ক’ক’টে’ল আপু।’
-‘আমারে তাহলে সেইটা দিয়ে যাবি। সন্ধ্যার আগে আগেই। পারবি তো?’
-‘ক্যান আপু! তুমি কি করবা বো’ম দিয়ে? তাছাড়া ইদ এর তো দেরি আছে, বো’ম তো আমরা চাঁদরাতে ফাটাই।’
-‘আমার জন্য আজকে চাঁদ রাত, আজকেই ইদ। তাই আমার একটা লাগবে। বেশি কথা বলিস না। যা বলছি করবি কিন্তু। আর খ ব র দা র কেউ যেন এই ব্যাপারে কিছু না জানে। ভুলেও কাউরে কিছু বলবি না। ঠিক আছে?’
-‘আচ্ছা। মাগরীবের নামাজ শেষে এনে দিব।’
-‘ঠিক আছে। বাসায় যা। কাজটা হয়ে গেলে তোর পুরষ্কার আছে।’
পুরষ্কারের কথা শুনে বাম্পার চোখ জ্ব’ল’জ্ব’ল করে উঠল। চমচম বাসায় ফিরে রাত হওয়ার অপেক্ষা করতে লাগল। সন্ধ্যায় যথাসময়ে বাম্পা এসে ক’ক’টে’ল দিয়ে গেল। তবে চমচমকে সা’ব’ধা’ন করে দিল। এই বো’ম দ্রুত আ’গু’ন জ্বা”লিয়ে ছুঁড়ে ফেলতে হবে। তা না করলে নিজেরই বি’প’দ। চমচম যদিও একটু নার্ভাস ছিল তবুও বুকে বল রাখল।
যথারীতি সে পড়তে বসল। এবং তার মাকে চমকে দিয়ে টানা তিনঘন্টা বেশ মনোযোগের সহিত পড়া শেষ করল। আর দশটার মধ্যে খেয়ে এগারোটায় ঘুমাতে চলে গেল। মেয়ের সুবুদ্ধি হয়েছে দেখে ফাতেমা বেগম বেশ খুশি হলেন।
৬.
রাত ১ টা বাজতে চলল। চমচমদের বাসায় সকলেই গভীর ঘুমে। চমচম খুব সা’ব’ধা’নে পা টিপে রান্নাঘর থেকে লা’ই’টার নিয়ে আসে। তখন এটার কথা সে ভুলেই গিয়েছিল।
দখিনের জানলার কাছে এসে মৃদু শব্দে জানালাটা খুলল সে। এপাশের বাড়ি, ওপাশের বাড়ি সবই নিরব। চমচম স্বস্তির শ্বাস ছাড়ে। সে আব্রাহামের রুমের দিকে তাকায়। বারান্দার গ্লাসটা খোলা। আব্রাহাম বাসায় থাকলে সর্বক্ষণ বারান্দা খোলা রাখে। অন্যসময় যদিও অসুবিধা লাগত তবে আজ চমচমের সুবিধাই হলো। সে বেশকিছুক্ষণ খোলা বাতাসে প্রাণ ভরে শ্বাস নিয়ে ক’ক’টে’ল হাতে নিল। সে আগে আঠাশ ফাটালেও এগুলো ফাটায়নি। একটু ভ’য় হচ্ছে! তবুও সে সা’হ’স নিয়ে কাজটা করেই ফেলল। লা’ই’টার জ্বা’লি’য়ে ক’ক’টে’লটা সামনে ধরে আ’গু’ন লাগিয়ে তাড়াতাড়ি ছুঁড়ে মা’রে আব্রাহামের রুমের ভেতর। ফেলার সাথে সাথেই বি’ক’ট শব্দে ক’ক’টে’লটা ফেটে পড়ল। চমচম নিজেই এই শব্দে কেঁপে উঠল। কিন্তু একমুহূর্ত দেরি না করেই জানলা বন্ধ করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। লা’ই’টারটাও বিছানার নিচে রেখে দিল। এদিকে এই বি’স্ফো’রণের শব্দে এলাকাবাসী জেগে উঠেছে। কোলাহল মুক্ত, নিঃশব্দ রাতে এই ক’ক’টে’ল বো’মার শব্দটা ব্যাপক ছড়িয়েছে। এলাকাবাসী আ’ত’ঙ্কি’ত হয়ে উঠেছে। হয় কোনো অসাধু দল হা’ম’লা করেছে নয়তো কোথাও সি’লি’ন্ডা’র ব্লা’স্ট হয়ে আ’গু’ন ধরেছে। চারিদিকে হৈ হৈ রৈ রৈ পড়ে গেল। চমচমের বাবা-মা, চিনিও উঠে এলো। শব্দটা একেবারে চমচমের রুমের পাশ থেকে এসেছে। তারা সবাই বিচলিত হয়ে চমচমের রুমে এসে দেখল চমচম শুয়ে আছে। ফাতেমা বেগম মেয়েকে এই শব্দেও ঘুমাতে দেখে পাশে এসে ঠেলতে লাগলেন।
-‘এই চমচম! আশেপাশে কোথাও বো’ম ব্লা’স্ট হয়েছে মনে হচ্ছে। তুই শুয়ে আছিস কীভাবে! ওঠ!’
চমচম উঠল। উঠে বেশ নাটকীয়ভাবে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,
-‘কি বলছ মা! এই রাতে কে বো’ম ফাটাবে? এখন কি ইদ!’
-‘আরে সেটাই তো দেখছে সবাই। আল্লাহ জানে কোথায় এমন হয়েছে। আমি আরো ভাবলাম তোর রুমে কিছু হয়েছে হয়তো।’
চমচমের মায়ের ফোনে কল আসে। চিনি ফোন এনে বলল নিগার খানম ফোন দিয়েছে। ফাতেমা বেগম ফোন হাতে নিয়ে কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে কান্না করে নিগার খানম কি কি বলতে লাগলেন। চমচমের মা শুনে ব্যস্ত ভঙ্গিতে কল কেটে চমচমের বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-‘ও চিনির বাবা! বো’মাটা আব্রাহামের রুমে কেউ মে’রেছে। ছেলেটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে নাকি। তাড়াতাড়ি চলো। হায় হায় রে! কোন মায়ের সন্তান এই কাজ ঘটালো! ছিঃ ছিঃ এরা মানুষ!’।
চমচম মায়ের দিকে তাকিয়ে রইল। মা নিজেকেই নিজে দু’ষছেন। চমচমের বাবা-মা দুজনেই আব্রাহামদের বাসায় চলে গেলেন। ইতিমধ্যে এলাকার অনেকেই আব্রাহামদের বাসায় গেল। ব্যাপার কি দেখে আসতে। চমচম আর চিনি তাদের ড্রয়িংরুমের বারান্দা থেকে সবটা দেখতে লাগল। এই মধ্যরাতেও এলাকা বেশ গরম! চমচমের একটু চিন্তা হচ্ছিল। উহু! আব্রাহামের জন্য নয়। সে ধরা পড়বে কিনা এই নিয়েই চিন্তা। চিনি চমচমের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আব্রাহামদের বাসার দিকে তাকালো। চমচমও সেদিকেই তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ করেই চিনি বলল,
-‘কাজটা তুই করেছিস। তাই না চমচম?’
চমচম চোখ বড় বড় করে বোনের দিকে তাকালো। সে বুঝল কীভাবে! চিনি বেশ স্বাভাবিক ভাবেই বলল,
-‘তোর খাটের নিচে থাকা লা’ই’টারটা যত দ্রুত পারিস রান্নাঘরে রেখে আয়। এখনই। বাবা-মা এসে গেলে পরে আর পারবিনা।’
চমচম চিনির দিকে এক পলক তাকিয়ে দৌঁড়ে গিয়ে লা’ই’টারটা নিয়ে এসে রান্নাঘরে আগের জায়গায় রেখে দিল। চিনি বারান্দা থেকে এসে বলল,
-‘হাতটা ধুঁয়ে নে। বা’রু’দের গন্ধ লেগে আছে হাতে।’
চমচম বেসিনে গিয়ে ভালো করে হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধুঁয়ে নিল। চিনি বলল,
-‘যা করেছিস একদমই ঠিক করিস নি। আমি অন্যসময় হলে সত্যিই তোকে বাঁ’চা’তাম না। কিন্তু আজ যদি তুই ধরা পড়িস তবে গোটা এলাকায় বাবার নাক কান কাটা যাবে। নিগার আন্টিদের সাথে সম্পর্ক খা’রা’প হবে। আজ ভুলটা করেছিস মাফ পেয়েছিস। আগামীতে আর কখনো এমন করবি না। মনে থাকে যেন!’
চিনি নিজের রুমে গিয়ে দরজা দিল। চমচম বারান্দায় বসে রইল। কিছুক্ষণ পর তার বাবা-মা এলো। তাদের থেকে চমচম জানতে পারল আব্রাহাম শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সবেমাত্র বিছানায় শুয়ে চোখটা বন্ধ করেছিল। হঠাৎ করেই এই বি’ক’ট আওয়াজ করে বো’ম ফাটল। ভাগ্যিস সে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল না। নইলে অনেক বড় ব্রেইন ড্যামেজও হতে পারত। তবে আকস্মিক এই শব্দে সে কেঁপে ওঠে। আর মাথার মধ্যে অস’হ্য য’ন্ত্র’ণা হতে থাকে। আল্লাহ্ সহায় ছিলেন বলে কানের পর্দা একটুর জন্য ফাটেনি। একেবারে তার বিছানার কাছে একটা ক’ক’টে’ল ফুটেছে, সবাই গিয়ে দেখে বেগুণী রঙের একটা ছেড়া কাগজ সেখানেই পড়ে ছিল। তার সাথে কিছুটা ছাইয়ের মতোও ছিল। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কেউ নিচ থেকে ছুড়ে মেরেছে। ইচ্ছাকৃত এই কাজটা করেছে। আব্রাহামের বাবা নাকি পুলিশের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলেছেন। তারা ব্যাপারটা দেখবে। সব শুনে চমচমের প্রাণ যায় যায় অবস্থা! এত বড় ভেজাল যে হবে সে কি জানত! বাম্পাকে ধরতে হবে। বদমায়েশটা আগে বলবে না যে এটা এমন বি’ক’ট আওয়াজ করবে যে গোটা এলাকা জেনে যাবে! সে তো কেবল আব্রাহমকেই ভ’য় দেখাতে চেয়েছিল। কেন যেন আব্রাহামের অসুস্থতার খবর শুনে চমচমের মায়া হলো। মনে হুট করেই প্রশ্ন এলো কাজটা কি ঠিক হয়েছে? আবার মন থেকেই অন্য কেউ বলে উঠল যা হয়েছে বেশ হয়েছে। আব্রাহামের এটাই প্রাপ্য।
সারারাত চমচমের ঘুম হলো না। ভোর হবে হবে এই সময়ে তার চোখ লেগে আসে। সকালে যেহেতু কলেজ নেই তাই সে বেলা করে উঠল। মাও ডাকেনি তাকে। উঠে ফ্রেশ হয়ে সে খাবার খেতে গেল। দেখল ডাইনিং এ তার মা আর চিনি বসে কথা বলছে। সে যেতেই ফাতেমা বেগম বললেন,
-‘চমচম! তোর নিগার আন্টির বাসায় যাস খাওয়া শেষ করে। আব্রাহামকে দেখে আসিস। মানুষটা চিন্তা করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তুই গিয়ে কথা বলিস। একটু ভালো লাগবে কথা বললে।’
চমচম ভেবে দেখল যাওয়া দরকার। না গেলে আব্রাহাম তাকে স’ন্দে’হ করতে পারে। চিনির মতো বেকুব তাকে ধরে ফেলেছে আর আব্রাহামের মতো চতুর তাকে ধরতে পারবে না? না না। রি’স্ক নেওয়া চলবেনা। একটু ঘুরে আসা দরকার।
৭.
কলিংবেল বাজিয়ে চমচম দাঁড়িয়ে রইল। আয়মান এসে দরজাটা খুলল। চমচমকে দেখে মৃদু হাসে। বলল,
-‘কীরে! ভাইকে দেখতে এসেছিস?’
-‘আমার তো আর কাজ নেই তাকে দেখতে আসবো। আমি আন্টিকে দেখতে এসেছি।’
-‘কিন্তু অসুস্থ তো ভাইয়া। তোর উচিত আগে রো’গীর সাথে দেখা করার।’
আয়মান একপ্রকার জোর করে টেনে নিয়ে চমচমকে আব্রাহামের রুম নিয়ে গেল। চমচম রুমে গিয়ে আব্রাহামকে দেখে তো অবাক। যতটা অসুস্থ সবার মুখে সে শুনেছে তেমন কিছুই দেখছে না। বরং আব্রাহাম বেশ আরাম করেই বিন ব্যাগে বসে দুই পা ছড়িয়ে ডাবের পানি খাচ্ছে। চমচম তাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলল। আব্রাহাম চমচমকে দেখে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। চমচম তাতে একটু নার্ভাস হয়ে পড়ল। আব্রাহাম চোখের ইশারা দিতেই আয়মান বলল,
-‘আচ্ছা তোরা থাক আমি আসছি। চমচম! এখানে বসে থাক। আমি ডাবের পানি নিয়ে আসছি। ঠান্ডা ঠান্ডা তোর খেতে ভালো লাগবে।’
চমচমকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আয়মান চলে গেল। চমচম কি করবে কি বলবে বুঝতে পারল না। সে আব্রাহামকে বলল,
-‘ভালো আছো?’
আব্রাহাম বেশ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল। সে ভালো আছে। চমচম বলল,
-‘আচ্ছা। তবে ভালোই থাকো। আমি যাই। কাজ আছে বাসায়।’
আব্রাহাম কিছুই বলল না। চমচম দরজায় এসে দেখল বন্ধ করা। কখন বন্ধ করল দরজা? সে টান দিতেই বুঝল বাহির থেকে আটকানো। আয়মান যে কাজটা করেছে বুঝতে বেগ পেতে হলো না। সে জোরে জোরে দরজা বারি দিতে লাগল। আর আয়মানকে ডাকতে লাগল। কিন্তু কারো কোনো সাড়াশব্দ নেই। আন্টির রুম নিচতলার শেষ মাথায়। তার এই আওয়াজ শোনার কথা না। অনামিকা বোধ হয় ভার্সিটিতে। চমচমের মনে হলো এখানে আসাটাই ভুল হয়েছে। সে পেছন ফিরে আব্রাহামের দিকে তাকালো। সে চমচমের দিকেই তাকিয়ে ছিল। চমচম বলল,
-‘এই হাম ভাইয়া! দরজা খুলতে বলো তোমার ভাইকে।’
-‘কেন? দরজা বন্ধ থাকলে কী সমস্যা?’
-‘কী সমস্যা মানে? তুমি বোঝো না নাকি!’
-‘বুঝিয়ে বল।’
-‘পারব না। দরজা খুলতে বলো।’
-‘বলব না।’
-‘কেন?’
-‘এমনিতেই।’
-‘তুমি একটা পাগল।’
-‘তোর থেকে কম।’
-‘কচু কম। তুমি বেশি পাগল।’
-‘আচ্ছা। ঠিক আছে।’
আব্রাহাম গ্লাসে চুমুক দিল আবারও। চমচম বেশ কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে রইল। এ চাইছে কি? নিশ্চয় বুঝে গেছে কালকের কাজটা সে করেছে। তাই এমন করছে। চমচম বলল,
-‘এটা ভালো দেখায় না কিন্তু।’
-‘কোনটা ভালো দেখায় না?’
-‘আমি বড় হয়েছি কিন্তু। এভাবে একটা ছেলের রুমে একসাথে থাকাটা ভালো দেখায় না। ভীষণ বাজে দেখায়।’
-‘তুই বড় হয়েছিস?’
-‘তা নয়তো কী!’
-‘বড় হয়েছিস তাহলে এসব কি কান্ড ঘটাচ্ছিস! সেন্স নাই তোর! ভাবতাম ছোট মানুষ। দুষ্টুমি করে। কালকেরটা কী ছিল! কোন ধরনের দুষ্টুমি ছিল?’
এত জোরে ধ’ম’কে উঠল আব্রাহাম। চমচমের পি’লে চমকে উঠল তাতে। সে বলল,
-‘কি করেছি?’
-‘কি করেছিস তুই জানিস না! নাটক করছিস এখন? শোন চমচম! ব্যাপারটা খুব সিরিয়াস। বাবা আ’ই’নী ব্যবস্থা নিতে গিয়েছিল। আমি দেইনি। একবার যদি আ’ই’নে’র আওতায় চলে যায় তাহলে বুঝতে পারছিস তোর কি হবে! তোর এইসব মজা মস্তি তুই অন্য কারো উপর এপ্লাই করবি। ভুলেও আমার উপর নয়। আজ মাফ করলাম। ভবিষ্যৎে আর কখনো যদি তুই এমন কিছু ঘটাস সত্যি বলছি। আমি তোর এমন হা’ল করব!’
চমচম কাঁদো কাঁদো মুখ করে দাঁড়িয়ে রইল। আব্রাহাম বুঝেছে কাজ হয়েছে। সে আয়মানের নাম ধরে ডাক দিল। আয়মান দরজার কাছেই ছিল। আব্রাহাম ডাকার সাথে সাথেই দরজা খুলে দিল। চমচম অবাক চোখে আয়মানকে দেখল। এতক্ষণ সে ডাকতে ডাকতে গলা ফাটি ফেলছিল কিন্তু তার কোনো খবর ছিল না। আর তার ভাই জাস্ট একবার ডাকাতেই খুলে দিল! চমচম বুঝল দুটো মিলে তাকে হে’ন’স্তা করতে চাইছিল। কিন্তু সে চমচম। এত সহজ নয় তাকে কোনো কিছুতে বশ মানানো। সে চৌকাঠ পার হয়ে পেছন ফিরে আব্রাহমকে বলল,
-‘তুই আমার কচু করবি! তোকে আমি আরো কত ভাবে জ্বা’লা’বো তুই খালি দেখিস। বেয়াদব একটা।’
আয়মান আর আব্রাহাম দুজনেই তাজ্জব হয়ে গেল এমন কথা শুনে। আব্রাহাম বসা থেকে উঠে চমচমের উদ্দেশ্যে এগিয়ে আসে। তাকে নিজের দিকে আসতে দেখে চমচম দৌঁড় লাগায়। এক দৌঁড়ে সোজায় নিজের বাসায় চলে আসে। একটুও থামেনি।
#চলবে।
(দয়া করে গঠনমূলক মন্তব্য করনেন পাঠক। আপনাদের মন্তব্যের আশায় বসে আছি।)