#দায়িত্ব
#পর্ব_১+২
শায়েরী বউ সেছে বসে আছে বাসর ঘরে…ছয় বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে দৌড়ে এসে কাচের ফ্লোওয়ার বক্সটা ছুড়ে মারলো শায়েরীর দিকে…. ফুলদানিটা এসে শায়েরীর কপালে লাগলো…কিছুটা জায়গা কেটে রক্ত বের হয়ে গেছে…মেয়েটা শায়েরীকে টেনে বেড থেকে নামাতে নামাতে বলে…
” নামো আমার পাপার বেড থেকে নামো বলছি… তুমি এই রুমে কি করছো..? ”
কথা গুলো রেগে প্লাস চিৎকার করে বললো…
শায়েরীর আর বুঝতে বাকি নেই…এই মেয়েটার মা হওয়ার দায়িত্ব নিয়েই যে সে এ বাড়িতে এসেছে…
এই টুকু একটা বাচ্চা মেয়ে কি এতো রাগ শায়েরীর প্রতি..? চিৎকার শুনে শ্রেয়ান রুমে আসলো..রুমে এসে দেখলো তার মেয়ে বিন্দু রাগে ফুসছে…আর এক কোনে কপালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শায়েরী…।
শ্রেয়ান মেয়ের রাগ থামানোর চেষ্টা করে…
“কি হয়েছে মামনি… মায়ের সাথে এতো জোরে কেউ কথা বলে..?
বিন্দু তার বাবার মুখে এতোদিন ধরে শুনে আসছে তার মা আর বেচে নেই..মারা গেছে… আজ হঠাৎ অন্য একজনকে মা সাজিয়ে নিয়ে এসেছে…রেগে বলে…,
” কিসের মা…কে মা.? তুমি তো বলেছিলে আমার মা মরে গেছে…আর তুমি যাকে নিয়ে এসেছো সে সৎ মা…
চিৎকার করেই কথা গুলো বললো বিন্দু..।
শায়েরী নিরবে চোখের পানি ফেলছে…যার জন্য এই বাড়িতে আসা সেই তো শায়েরী কে সহ্য করতে পারছে না… শায়েরী খুব ভালো করে বুঝতে পারছে ওর মা হয়ে উঠা খুব একটা সহজ নয়…।
শ্রেয়ান নিজের মেয়ের মুখে এসব কথা শুনে কিছুটা ব্রিব্রত বোধ করলেন…
“এসব তোমাকে কে বলেছে বিন্দু..এতো টুকু একটা মেয়ে..এসবের কি বুঝো তুমি হুমম? ..মা.. মা ই হয় বুঝলে…
” না হয় না… সৎ মা সৎ ই হয়… একদিনেই তুমি ওই মেয়েটার হয়ে কথা বলছো… আরো তো দিন আছেই..
শ্রেয়ান রেগে গিয়ে….
“বিন্দুওওও…
“আমাকেই বকতে পারো… সবাই তো এটাই বলছে..তাহলে সবাইকে বকো…আর ওর জন্য আমায় বকলে তো..
বলে শায়েরীর কাছে গিয়ে টেনে রুম থেকে বের করে দিতে নিল…।
শ্রেয়ান বিন্দুর এমন ব্যবহারে বেশ তুষ্ট… যদিও বিন্দুর ব্যবহার একটু রাফ..কিন্তু আজকে এরকম ব্যবহার আর এরকম কথা বলছে ভাবতে পারছে না… বয়স ই তো মাত্র ছয়.. এসব কথা কারো কাছে না শুনলে বলার কথা নয়…
শ্রেয়ান বিন্দুর হাত ধরে ওকে বুঝাতে লাগলো..কিন্তু তাতেও বিন্দু থামলো না… বড্ডো রাগি আর জেদি… কথা বলার এক পর্যায়ে বিন্দু রুমের জিনিস এদিক ওদিক ছুড়ে মারতে লাগলো…রেহানা বেগম [ শ্রেয়ানের মা ] বিকট শব্দ পেয়ে রুমে এলো… রুমে এসে তিনি এইটুকু বেশ বুঝতে পেরেছে বিন্দু কিছু একটা নিয়ে রেগে গেছে… শায়েরীকে রুমের এক কোনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে….তিনি শ্রেয়ানকে বললো….
” তুই বউ মাকে দেখ..আমি বিন্দুকে সামলাচ্ছি..।
“তুমি পারবেনা মা..ও বড্ডো জেদি…!
” তোকে যেটা বলছি সেটা কর…তোকে এখন শায়েরীর দরকার…!
বলেই তিনি বিন্দু কে জোর করে কোলে তুলে নিয়ে রুম থেকে চলে গেলো.. যদিও বিন্দু কে কোলে নিয়া উনার পক্ষে একটু কষ্টকর…।
রেহেনা বেগম চলে যেতেই…শ্রেয়ান শায়েরীর কাছে এগিয়ে গেলো… এবং দেখলো শায়েরীর কপালে রক্ত আর বেডের উপর কাচের টুকরো পরে আছে… এতোক্ষন বিন্দুকে সামলাতে ব্যস্ত ছিল বিদায় এসব খেয়াল করেনি… শ্রেয়ান ড্রয়ার থেকে ফাস্টএইড বক্স বের করে..বলে..,
” এখানে বসো..কতোটা কেটে গেছে দেখেছো..।
” একটুই কেটেছে… এতো ব্যস্ত হবার কিছু নেই…!
” আসলে কি বলবো বুঝতে পারছিনা…প্লিজ তুমি কিছু মনে করো না..আমি বিন্দুর হয়ে ক্ষমা চাচ্ছি…
“আপনার এতে কোনো দোষ নেই…এভেন বিন্দুর ও না..আমি কিচ্ছু মনে করিনি..।
“আচ্ছা তাহলে বসো… ড্রেসিং করে মলম লাগাতে হবে নাহয় ইনফেকশন হয়ে যাবে…!
এরপর আর কোনো কথা না বলে শ্রেয়ানের সামনে বসে পরে শায়েরী…
আর শ্রেয়ান পরম মমতায় শায়েরীর কপালে ব্যান্ডেজ করে দেই…।
শ্রেয়ান কাবার্ড থেকে একটা শাড়ি বের করে দিয়ে শায়েরিকে ফ্রেস হয়ে আসতে বলে… আর ততক্ষনে শ্রেয়ান কাচের টুকরো গুলো পরিস্কার করে ফেলে…!
শায়েরি বিয়ের শাড়িটা চেন্জ করে শ্রেয়ান এর দেয়া গোল্ডেন পাড়ের নেবি ব্লু কালারের শাড়ি পরে বের হতেই শ্রেয়ান আটকে যায় শায়েরীতে…. শায়েরী ফ্রেস হতে গিয়ে সব গহনা খুলে রেখেছে গলায় শুধু ছোট্ট লোকেট আর চেইন… চুল গুলো ও খুলে ফেলেছে… ওয়াস রুম থেকে বের হতেই ফ্যান এর বাতাসে শায়েরির চুল গুলো বাতাস এর তালে তালে ঢেউ খেলছে….
এক পা দু পা করে শ্রেয়ান শায়েরীর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো… আর শায়েরি পিছুতে পিছুতে দেয়াল এর সাথে লেগে গেলো… শায়েরী শ্রেয়ান কে পাশ কাটিয়ে চলে আসবে তখনই শ্রেয়ান দেয়ালে হাত রেখে শায়েরিকে আটকে দিলো…. শ্রেয়ান এতো টা কাছে চলে যাওয়াতে শায়েরীর অবস্থা নাজেহাল… হার্টবিট দুগুন ফাস্ট চলছে…. আর শ্রেয়ান তো একটা বিভর এর মাঝে….
শ্রেয়ান একটু একটু করে মুখ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে শায়েরীর মুখের দিকে… শায়েরি চোখ বন্ধ করে নিজের শাড়িতে খামচে ধরেছে….
চলবে…….???
#দায়িত্ব
#পর্ব_১
#আদরিতা_জান্নাত_জুঁই
#দায়িত্ব
#পর্ব_২
#আদরিতা_জান্নাত_জুঁই
যেই শ্রেয়ান শায়েরির ঠোঁটে নিজের ঠোঁট বসাবে ওমনিই শায়েরি ঠোঁটের উপর দু হাত রেখে চেপে ধরেছে… আর বেচারা শ্রেয়ান এর ঠোঁঠ গিয়ে শায়েরীর হাতের উপর পরলো… শ্রেয়ান তো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে শায়েরীর দিকে থাকিয়ে আছে… কি থেকে কি হলো সেটাই বুঝার চেষ্টা করছে শ্রেয়ান.. ভাগ্যিস শায়েরি নিজে সরে যাইনি না হলে এতোক্ষনে শ্রেয়ান এর ঠোঠ থাকতো দেয়ালে….।
শ্রেয়ান এর এমন বোকা বোকা ফেস দেখে যদিও শায়েরির খুব হাসি পেয়েছিল.. তবুও সেটা সামলে নিয়ে শ্রেয়ান কে বলে…
” দ্বিতীয় বার ভুলেও আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না.. যদি করেন সেটা আপনার জন্য মোটেও ভালো হবেনা….
শায়েরির কথা শুনে শ্রেয়ান খুব দ্রুত শায়েরির কাছ থেকে সরে এসে বলে..
” আসলে আমি স্যরি.. বুঝতে পারিনি প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড… নেক্সট টাইম এরকম ভুল হবেনা… তুমি না চাইলে তোমাকে স্পর্শ পযর্ন্ত করবো এসব তো দূরের কথা…।
” হুমমম মনে যেনো থাকে…।
” তাতো থাকবেই.. আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো আমার মেয়ের সাথে সাথে আমাকেও মেনে নিয়েছো..তার জন্যই হয়তো এই ভুলটা করে ফেলেছি…কিন্তু তুমি যে আমার মেয়ের মা হয়ে উঠার দায়িত্ব নিয়েছো এটাই আমার জন্য অনেক…কিন্তু সব সময় আমি চেষ্টা করবো তোমার ভালো বন্ধু আর ভালো হাসবেন্ট হয়ে উঠার…।
শ্রেয়ান এর কথা বলার ধরনে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে শ্রেয়ান কিছুটা অপমানিত হয়েছে..শায়েরির তো খুব হাসি পাচ্ছে… প্রথম দিনই শ্রেয়ানকে হাদা রাম গাদা বানিয়ে ফেলেছে…
শ্রেয়ান আর কি বলবে… বেডের কাছে গিয়ে বালিশ হাতে নিয়ে বলে..
“আচ্ছা অনেক রাত হয়ে গেছে ঘুমাও..
” আপনি কোথায় ঘুমাবেন…?
” সোফায়.. যদি তোমার অসুবিধা থাকে তো আমি করিডোরে গিয়ে….
এই পর্যন্ত বলতেই শায়েরি আর নিজের হাসিটা আটকে রাখতে পারলো না… অবশেষে হেসেই দিলো..
শায়েরির এমন হাসিতে শ্রেয়ান এর ফেসটা আবার বোকা বোকা হয়ে গেছে…
শায়েরি হাসতে হাসতে বলে…
” এক মিনিট দাড়ান প্লিজ একটু হেসে নেই আগে…
শায়েরির এমন পাগল করা হাসিতে শ্রেয়ান আবার আবার ঘায়েল…শায়েরি হাসতে হাসতে শ্রেয়ান এর দিকে চোখ পরে.. দেখে শ্রেয়ান তার দিকেই হা করে তাকিয়ে আছে… শায়েরি হাসি থামিয়ে শ্রেয়ানকে বলে..
“একটা শর্তে আমি আপনাকে এ রুমে প্লাস বেডে শুতে দিবো…
“কি শর্ত…??
” শর্তটা হচ্ছে……
“প্লিজ তাড়াতাড়ি বলো খুব নার্ভাস ফিল হচ্ছে….
” হুমম বলছি… আমার খুব শখ.. আসলে এই শখ টা যখন থেকে প্রেম ভালোবাসা বুঝতে শিখেছি তার পর থেকেই মনের মাঝে পুষে বড় করেছি…
“আরে কি শখ সেটা বলবে তো…?
” হুমম বলছি তো… আপনিই তো কথার মাঝে কথা বলে আটকে দিচ্ছেন…।
“আচ্ছা বলো..
” আমার খুব শখ নিজের বরের সাথে প্রেম করার… মানে একটা ছেলে মেয়ে যখন প্রেমে পরে.. একে অপরকে ইমপ্রেস করার জন্য কতো কিছুই তো করে.. সেই সব আপনাকেও করতে হবে… এবং আপনার প্রতি আমাকে ইমপ্রেস করে আপনার প্রেমে হাবুডুবু খাওয়াতে হবে… তার আগ অবদি আমার থেকে ৬ ইঞ্চি দূরত্ব মেইনটেন করে চলবেন…
“কিছুই বুজলাম না…
“তা বুঝবেন কেনো এতোদিনে একটু প্রেম ও করিনি.. নিজের স্বামীর সাথে প্রেম করবো বলে সব প্রেম জমিয়ে রেখেছিলাম… তাহলে আমার এতোদিনের কষ্টের কি লাভ…
” প্রেম করোনি বলে খুব কষ্ট হয়েছে…? তো বারন করছিলো কে? করতে দু চার পাচ দশটা প্রেম… তাহলে আজ অন্তত ৬ ইঞ্চি ডিসটেন্স মেইনটেন করে চলতে হতো না…
” ছিঃ ছিঃ কি বলছেন এসব… নিজের বউকে বলছেন প্রেম করতে বারন করছে কে..? ওকে ফাইন এতোদিন যেটা করিনি সেই মিশনেই নামতে হবে কাল থেকে..
” আচ্ছা আচ্ছা… তোমার সব ইচ্ছেই আমি ফুলফিল করবো… কিন্তু একটা প্রশ্ন..?
“কিহহ..?
“আমি তোমাকে খুবব মন চাইলেও কি জড়িয়ে ধরতে পারবো না…?
“ওমমম হুম পারেন তবে টুকটাক…
শায়েরির বলতে যতোক্ষন তার আগেই শ্রেয়ান গিয়ে জড়িয়ে ধরে ফেলেছে….!
৩০সেকেন্ড পরেই শায়েরি শ্রেয়ানের থেকে নিজেকে ছারিয়ে নিয়ে বলে..
” হয়েছে..? এবার ঘুমান.. আর খবরদার বলছি রাতে ভুলেও আমাকে ধরার চেষ্টা করবেন না…
“ওকে…।
।
।
।
সকালে….
শায়েরি কিচেনে গিয়ে অলমোস্ট সবার জন্য ব্রেকফাস্ট রেডি করে ফেলেছে… শুধু বিন্দুর জন্যই কিছু করেনি… কারন বিন্দু কি পছন্দ করে না করে সেসব কিছুই জানেনা…তবুও কিছু একটা ভেবে বিন্দুর জন্য পাস্তা আর ভেজিটেবল নুডলস রান্না করলো…. যদিও রেহানা বেগম শায়েরিকে রান্না করতে বারন করেছিল…কিন্তু এটাও শায়েরির একটা ইচ্ছের মধ্যে পরে তাই আর তিনি না করেনি….।
সবাই ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে খাচ্ছে… বিন্দুর সামনে ভেজিটেবল নুডলস রাখতেই বিন্দু রেগে..
” আমার নুডলস ভেজিটেবল দিয়েছে কে..? তোমরা জানো না আমি ভেজিটেবল খাইনা…?
শায়েরি এগিয়ে এসে..
” আচ্ছা তুমি ভেজিটেবল নুডলস খাও না তাই তো..? তাহলে পাস্তা খাও.. তোমার জন্য স্পেশাল ভাবে রান্না করা হয়েছে….।
বিন্দু পাস্তা দেখে খুশিতে তাড়াতাড়ি সামনে নিয়ে নিলো… দু চামচ মুখে দিয়ে বলে…
” এটা কে রান্না করেছে…?
বিন্দুর দাদু বললেন…
” কেনো ভালো হয়নি খেতে…?
” হ্যাঁ অন্য দিনের থেকে…
“এটা তো তোমার মা রান্না….
এতোটুকু বলতেই বিন্দু পাস্তার প্লেটটা সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো…!
চলবে…