দায়িত্ব পর্ব ৩

#দায়িত্ব
#পর্ব_৩
#আদরিতা_জান্নাত_জুঁই

খাবো না আমি… আর কি বললে তুমি মা…? কিসের মা কে মা.?.. বার বার কেনো বলছো উনি আমার মা… আমার মা তো মরে গেছে…।

এই বলেই বিন্দু খাবার প্লেটটা ছুড়ে শায়েরির সামনে দিল… সাথে সাথে শ্রেয়ান শায়েরিকে সরিয়ে নেই.. না হলে শায়েরির গায়ে লেগে যেতো….।

শ্রেয়ান বিন্দুকে চেয়ারে বসিয়ে বিন্দুর সামনে হাটু গেড়ে বসে বলে..
” আচ্ছা বিন্দু তুমি তো এখন বড় হচ্ছো…তাহলে তোমার এমন বিহেভ কি মানায় বলো… উনি এটা কি শব্দ হ্যাঁ..? মা না বলো নতুন মা বলে ডেকো..? হ্যাঁ তোমার নিজের মা মরে গেছে তাই তো তোমার জন্য নতুন মা নিয়ে এসেছি… যে তোমাকে অনেক ভালোবাসবে আদর করবে তোমার খেয়াল রাখবে…তোমাকে কোচিং এ নিয়ে যাবে নিয়ে আসবে.. তোমার ফেবোরিট ফেবোরিট টিফিন বানিয়ে দিবে…. তুমি তো বলতে সব সময় তোমার মা থাকলে তোমাকেও তোমার সব ফ্রেন্ডদের মতো কোচিং এ নিয়ে যেতো নিয়ে আসতো…।
” কিন্তু আন্টি যে বললো…

বিন্দুর কথা শেষ করার আগেই নিলা [ বিন্দু যাকে আন্টি বললো.. নিলা হচ্ছে শ্রেয়ানে এর ভাবি আর বিন্দু নিলা কে আন্টি বলে ডাকে ] বলে উঠলো…
” হ্যাঁ পরের সন্তান কে কি আর নিজের সন্তান এর মতো ভালোবাসা যায়…? যে মেয়ে ছোট থেকে জেনে আসছে তার মা আর বেচে নেই… তার সামনে যদি ছয় বছর পর একজনকে মা সাজিয়ে নিয়ে এসে বলো এই হচ্ছে তোমার মা… সেটা মেনে নেয়া আদৌ সম্ভব…? এই টুকু একটা বাচ্চা মেয়েও সেটা বুজে গেছে….।

এতোক্ষনে সবাই কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছে বিন্দুর এসব কথা বলার কারন…আর নিলা উদ্দেশ্যটাও সবার কাছে ক্লিয়ার…

নিলার কথা শুনে শ্রেয়ান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে..
” হ্যাঁ আদৌ সেটা সম্ভব হতো যদি শায়েরির জায়গায় তোমার বোন রুসা থাকতো তাই না…?
“দেখো শ্রেয়ান আমি ওসব ভেবে কিছু বলিনি.. যেটা আজকাল সচারআচর ঘটে সেটাই বললাম…
” ভাবি প্লিজ তোমার বোনকে বিয়ে করিনি বলে… আমার এই ছোট্ট মেয়েটার মনটা বিষিয়ে দিও না… এখন ওর যে বয়স ওকে যা বুঝানো হবে তাই বুঝবে… ভালো খারাপ যাই বুঝাও না কেনো সবটাই ওর মাথায় স্ট্রংলি ক্যাচ করবে…তোমার মনের মাঝে পুষে রাখা রাগটা আমার মেয়ের মাধ্যমে আমার সংসারে ইফেক্ট ফেলো না….।
” তুমি এসব কি বলছো শ্রেয়ান.. আমি বিন্দু কে এসব বলে উসকিয়ে দিচ্ছি… আমি কি ওর খারাপ চায়…?
” হয়তো ভালোই চাও তবে ভালো চাইতে গিয়ে খারাপ কিছু করে ফেলো না….।

শুরু হয়ে গেলো নিলার মেলো ড্রামা.. আই মিন টু সে নিলার কান্না… সব সময় চোখের আগায় পানি এসেই থাকে…

শায়েরি দাঁড়িয়ে সবটা শুনছিল… শ্রেয়ান আর নিলার কথায় কিছুটা বুঝতে পেরেছে… শায়েরি কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছেনা… ও এ বাড়িতে নতুন এসবের মাঝে কি ওর কথা বলাটা ঠিক হবে…? সংকোচবোধ কে আটকিয়ে
” ভাবি ২৪ ঘন্টাও হয়নি আমি এ বাড়িতে এসেছি… তার আগেই তুমি আমাকে নিজের প্রতিদ্বন্ধি ভাবতে শুরু করেছো… আসলে প্রতিদ্বন্দ্বি বললাম এই কারনেই যে তোমার উইস তুমি আমার বিরুদ্ধে আমার মেয়েকে উসকিয়ে দিবে… যাতে আগে থেকেই ওর মনের মাঝে আমাকে নিয়ে খারাপ ধারনা তৈরী হয়ে যায়.. আর চাইলেও যেনো আমরা বিন্দুর মন থেকে ভুল ধারনাটা না ভাংতে পারি… কারন বাচ্চা মানুষ মনের মাঝে একটা ধারনা জন্ম নিলে সেটাই আস্তে আস্তে ওর বড় হওয়ার সাথে সাথে বেড়ে উঠবে….আর শ্রেয়ান যেটা বললো সেটা যদি হয়… তাহলে বলবো এসব কারন এর জন্য নিজেদের রিলেশনশীপ নষ্ট করো না… আমার আর শ্রেয়ান এর বিয়েটা হয়ে গেছে… তোমরা চাইলেও সেটা ভাঙতে পারবেনা… আল্লাহ তোমার বোনের সাথে নয় বরং আমার সাথে শ্রেয়ান এর এক হওয়াটা লিখেছিল.. আর বিন্দুর মা হওয়াটাও… তুমি বললে না অন্যর সন্তান কখনো নিজের সন্তান হয়না…হয় সেটা আমি প্রমান করবো বিন্দুর মা হয়ে… তুমি তো নিয়ান কে জন্ম দিয়েছো… তুমি নিয়ান এর কাছে যতো টা না প্রিয় তার থেকেও দ্বিগুণ প্রিয় আমি বিন্দুর কাছে হবো… এবং বিন্দু ও আমায় তোমার সন্তান এর থেকেও বেশি ভালোবাসবে….।

শায়েরির এভাবে কথা বলাতে শ্রেয়ান এবং রেহেনা বেগম দুজনেই অবাক… শায়েরির কথা বলা আর চোখ মুখের চাহনিতেই মাতৃত্ব ফুঠে উঠেছিল..মা হওয়ার লড়াই ফুঠে উঠেছিলো…!

শায়েরি বিন্দু কে পাস্তা খাইয়ে রেডি করে দিলো… শ্রেয়ান অফিস যাওয়ার পথে বিন্দুকে কোচিং ড্রপ করে অফিস চলে গেলো…

বিয়ের পরের দিন অফিসে গেল.. কারন বিয়েটা শুধু সব রিচুয়াল মেনে পারিবারিক ভাবে হয়েছে… কোনো এরেন্জমেন্ট হয়নি… তাই বিয়ের জন্য এক্সট্রা ছুটিও নেয়া হয়নি… সব কিছু আগের গতিতেই চলছে… বিয়ের জন্য এক্সট্রা কোনো তোরজোর নেই….!

প্রতিদিন অফিস যাওয়ার সময় শ্রেয়ান বিন্দুকে কোচিং ড্রপ করে দেই… আর কোচিং শেষে ড্রাইভার গিয়ে বিন্দুকে পিক করে আনে…এটাই প্রতিদিনের রুটিন বিন্দুর… কোচিং শেষে ওর সম বয়স’ই বন্ধু বান্ধবরা তাদের মায়েদের সাথে টাইম স্পেন্ড করে বা ক্যানটিনে বসে কিংবা পাশের শিশু পার্কে যায়.. কিন্তু বিন্দু এসব থেকে বঞ্চিত… তার বাবার পক্ষে এতোটা সময় বিন্দুকে দেয়া হয়ে উঠেনা… কারন অফিস…..।

আজও বিন্দু আশে পাশে সবাইকে দেখতে লাগলো… সবাই দৌড়ে তাদের মায়েদের কাছে যাচ্ছে….
ঠিক তখনই কেউ একজন দৌড়ে এসে বিন্দুকে জড়িয়ে ধরলো… হঠাৎ এভাবে বিন্দুকে ধরাতে বিন্দু কিছুটা ঘাবড়ে যায়… সাথে সাথে নিচের দিকে তাকিয়ে অনেক বেশি অবাক হয়ে যায়….!
.
.

কারন শায়েরি এসে এভাবে বিন্দুকে জড়িয়ে ধরেছে… পারলে তো শায়েরি বিন্দুকে কোলে তুলে নেই…কিন্তু বিন্দু যথেষ্ট বড় হয়ে যাওয়াতে কোলে নেওয়া সম্ভব হয়নি…
বিন্দুর কপালে কিস করে শায়েরি বলে…
” কি হয়েছে আমার মামুনিটার হুমম…?
” কিছুনা…
“তাই? তাহলে মুখটা এমন গম্ভীর কেনো…?
” এমনিতেই… তুমি এখানে এসেছো কেনো…?
“এখন থেকে তো রোজ এখানে আসবো আমি…
” কেনো…?
“কারন প্রতিদিন কোচিং শেষে আমার মেয়েটাকে আমি নিতে আসবো…।

বিন্দু আর শায়েরির কথা গুলো পাশ থেকে বিন্দুর ক্লাসমেট সেতুর মা নোটিশ করছিলো… তিনি এগিয়ে এসে শায়েরি কে উদ্দেশ্য করে বলে…
” প্রথম প্রথম নিজের মেয়েই মনে হবে… ফ্যামিলির সবার মন জয় করতে হলে তো বিন্দুকে মেয়ের মতো ভালোবাসতেই হবে… না হলে তো আর যাই হোক টাকাওয়ালা স্বামীর মনটা পাবেনা…

শায়েরি অবাক হয়ে মহিলাটার দিকে তাকিয়ে রইলো… চেনা নেই জানা নেই নিজের মন গড়া কথা গুলো কতো ইজিলি বলে দিলো… আর এসব কথাতে শায়েরির কিছু যায় আসেনা… কিন্তু উনার কথাতে বিন্দুর মন খারাপ হয়ে গেছে… শায়েরি মহিলাটাকে সালাম দিয়ে বলে…
” আচ্ছা আপনাদের সমস্যা টা কি বলেন তো…? নিজের মেন্টালিটি কেনো অন্যর উপর চাপান… সবার মেন্টালিটি যে এক হবে সেটা কেনো ভাবছেন…? একসেপশনাল বলেও যে কিছু আছে সেটা মে বি জানেন না… আমাকে এবং বিন্দু দুজনকে আপনার বেষ্ট উইস করা উচিত ছিল… আর শুরুতেই কিসব বললেন… এসব কথায় বিন্দুর উপর কতোটা প্রভাব ফেলতে পারে সেটা ভেবেছেন…ওর মনে আমার প্রতি একটা খারাপ ধারনা তৈরি হবে… ওর বাবাকে বিয়ে করেছি ওর বাবার টাকা দেখে নয়.. ওর বাবার এই মেয়েটাকে দেখে…আর এই মেয়েটার মা হওয়ার জন্য.. আর টাকার কথা বললেন..? আমার বাবার ব্যাংক ব্যালেন্চ ও কিছু কম নয়…।
” এখন এসব মনে হলেও… যখন নিজের সন্তান হবে তখন আর এসব মনে থাকবে না…।
বলেই তিনি চলে গেলেন…

আর বিন্দু অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে শায়েরীর দিকে….শায়েরি মুখে হাসি ফুটিয়ে বিন্দুর হাত ধরে বেঞ্চে গিয়ে বসে…
” মন খারাপ করেনা লক্ষীটি আমার… আচ্ছা বলো তো তোমার কোনটা বেশি ফেবোরিট আইসক্রিম নাকি চকোলেট…?

বিন্দু কোনো কথা না বলে চুপ করে মন খারাপ করেই বসে রইলো… শায়েরি উঠে গিয়ে ক্যান্টিন থেকে আইসক্রিম আর চকোলেট নিয়ে আসলো… চকোলেট আর আইসক্রিম বেঞ্চে রেখে মন খারাপ করে গালে হাত দিয়ে বসে রইলো…

কিছুক্ষন দুজনেই চুপচাপ বসে রইলো… অবশেষে বিন্দুই বললো…
“কি হলো তুমি এমন গালে হাত দিয়ে বসে আছো কেনো…? আর এই গুলো এখানে এনে রাখলে কেনো…?
” মন খারাপ তাই গালে হাত দিয়ে বসে আছি… আর ওই গুলো তো খাওয়ার জন্য এনেছিলাম… আমি তো আর একা খেতে পারিনা আমার মেয়েকে রেখে তাই…
“মন খারাপ হলো কখন আর কেনো..?
” কারন তোমার মন খারাপ তাই আমারো.. আর জানো আইসক্রিম আর চকোলেট আমার খুবব বেশিই প্রিয়.. তবুও খেতে পারছিনা…

শায়েরি মুখটা এমন এক্সপ্রেশন এ কথা বললো যে বিন্দু না হেসে পারলো না…বিন্দুর হাসিতে শায়েরির মুখেও হাসি ফুটে উঠলো…বিন্দু শায়েরির দিকে তাকিয়ে…
“তুমি হাসছো কেনো? তোমার না মন খারাপ…?
” আমার মেয়েটা হাসছে তাই… এখন তো আমার মন ভালো হয়ে গেছে… তাহলে চলো এগুলো আমরা খাই…
” আমি খাবোনা.. তুমি খাও..।
” আচ্ছা তাহলে কারোরই খেতে হবেনা.. চলো বাড়ি ফিরে যাই…

মুখটা গম্ভীর করে বেঞ্চ থেকে উঠতে যাবে তখন শায়েরির হাত টেনে ধরে বিন্দু…
” বসো মুখটা হাড়ির মতো করতে হবেনা…
” বসবো কেনো…?
” কারন এখন আমরা এগুলো খাবো তাই…
” সত্যিই….?
অনেকটা খুশি হয়ে বিন্দুর পাশে গিয়ে বসলো…

তারপর দুজন মিলে আইসক্রিম আর চকোলেট খেলো… শায়েরি দুষ্টুমি করে আইসক্রিম বিন্দুর নাকের ডগায় লাগিয়ে দিয়েছে.. বিন্দু ও কিছু কম যায়না… বিন্দু ও লাগিয়ে দিয়েছে শায়েরিকে… শায়েরিও যেনো বিন্দুর বয়সে নেমে এসেছে… দুজনে মজা খুনসুটিতে মেতে উঠেছে….।

চলবে….

[ বানান ভুল ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন… কারন ধৈর্য্য ধরে রিচেক দিতে পারিনি ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here