#দিওয়ানা
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৫
মুখের ওপরে কারোর উষ্ণ নিঃশ্বাস ও মাথায় হাতের স্পর্শ পায় সোহা ঘুমের মধ্যেই। চোখ না খুলেই ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি টেনে সোহা আদো আদো কন্ঠে ডেকে ওঠে
-“মন।
মুখের ওপর তরল কিছু পড়তে না চাইতেও জোর করে পিট পিট করে চোখ খুলে তাকায় সোহা । সাথে সাথে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে সোহা।মুখে থাকা মিষ্টি হাসিটা ও মিলিয়ে গেছে। মুখে ফুটে আছে বিরক্তির ছাপ।
-” দিনে জ্বালিয়ে এখনও শান্তি মেলেনি এখন ঘুমের মধ্যে ও চলে এসেছে বিরক্ত করতে। বিড়বিড় করে বলে ওঠে সোহা।
আবারো চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়। সোহা মনে করেছে সে ঘুমের ঘোরে ভুল দেখছে। আর ঘুমের মাঝে আবারো বিরক্ত করতে চলে এসেছে তাকে আপদ টা। কিন্তু মাথায় হাতের স্পর্শ এখনও পাচ্ছে আর মুখের ওপরে তরল জিনিসটা এখনও টুপ টুপ করে পড়ছে। মনে হচ্ছে কেউ কাঁদছে। কারোর চোখের পানি তার মুখে পড়ছে। তাই এবার সোহা পুরো পুরি চোখ খুলে তাকায়। আর আবারো তার সামনে মুখের ওপর সেই মুখটা দেখতে পায়। হ্যাঁ আমন তার মুখের ওপর ঝুঁকে বসে আছে। আমন এর মুখটা প্রায় ছুই ছুই হয়ে লেগে আছে তার মুখের সাথে। সোহা এটা স্বপ্ন না সত্যি ঠিক বুঝতে পারছে না। সোহা বুঝতে পারছে না যে আমন এখানে কি করছে। আর তার মুখের ওপর এমন ঝুঁকে আছে কেনো। চোখ গুলো ও কেমন লাল লাল হয়ে ফুলে আছে। চোখের পাপড়ি গুলো ভেজা ভেজা। গালে পানির ছাপ ফুটে আছে। আর তার দিকে কেমন গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে। চোখে ফুটে আছে হাজারো যন্ত্রণা আর তার সাথে রাগ। কিন্তু সোহা বুঝতে পারছে না হঠাৎ এমন কেনো লাগছে আর আমন বা তার রুমে কি করে এলো আর এখানে কি করছে আর চোখ মুখ গুলো এমন লাগছে কেনো। সোহা ভ্রু কুঁচকে আমন এর দিকে তাকিয়ে আছে। আমন সত্যি আছে কি না বোঝার জন্য নিজের হাত উঁচু করতে যায় কিন্তু সাথে সাথে মুখ থেকে বেরিয়ে চাপা আর্তনাদ।
-“আরে তুমি পাগল হয়েছ নাকি? হাত কেনো তুলছো এভাবে? দেখছ না হাতে স্যালাইন লাগানো আছে। আমন হন্তদন্ত হয়ে বলে ওঠে।
আমন এর কথা শুনে যেনো সোহা আকাশ থেকে পড়ে। কি বলছে এই সব। তার রুমে স্যালাইন কোথায় থেকে এলো। আর আমন এর কথা শুনে বুঝতে পারে যে আমন তার ভ্রম না তার সামনে সত্যি সত্যি আছে। এবার চারিদিকে মাথা ঘুরিয়ে দেখে সে হসপিটাল এর বেডে শুয়ে আছে। তার পাশে মেশিন পত্র রাখা আছে। তার হাতে স্যালাইন লাগানো মাথায় ব্যান্ডেজ করা। তার গায়ে হসপিটাল এর ড্রেস পরানো আছে। সোহা এবার অবাক এর চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়। সে বুঝতে পারছে না সে রুম থেকে হসপিটাল এর বেডে আসলো কি করে। প্রশ্ন নিয়ে আমন এর দিকে তাকায় সোহা।
-“নিজের এই ভাঙা মাথায় আর বেশি জোর না দিয়ে চুপচাপ রেস্ট করো। এখানে তোমাকে আমি নিয়ে এসেছি। আর বাকি যে প্রশ্ন গুলো মনের মধ্যে জমে আছে সেগুলোর উত্তর পরে পেয়ে যাবে। তাই এখন চুপচাপ শুয়ে থাকো। আমন একদম আদেশের স্বরে বলে ওঠে।
সোহা আমন এর এমন কথায় শুধু চোখ পিট পিট করে আমন কে দেখে যাচ্ছে কিছু বলতে নিলেই আমন রাগী চোখে তার দিকে দেখছে তাই এখন বাধ্য মেয়ের মত চুপচাপ শুয়ে আছে সোহা। তবে মনের মধ্যে এখনও হাজার প্রশ্নেরা জড়ো হয়ে খিচুড়ি পাকিয়ে যাচ্ছে। যেমন আমন হঠাৎ করে তার সাথে এমন ভালো মানুষের মত ব্যবহার করছে কেনো? আর তাকে রুম থেকে এখানে কি করে আনলো? আর কেনো বা তাকে নিয়ে এসেছে? এই সব ভেবে যাচ্ছে। এর মাঝে ডক্টর রুমে আসে।
-“মিস্টার চৌধুরী কেউ এমন জানোয়ার কি ভাবে হতে পারে যে এই ভাবে শরীরে আঘাত করেছে। মিস জৈন এর আঘাত গুলো দেখে তো মনে হয়না যে ওনার অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। শরীরে প্রতিটা ক্ষত দেখে মনে হচ্ছে কেউ হিংস্র জানোয়ার এর মত পিটিয়েছে। কেউ এমন পশুর মত আচরণ কি ভাবে করতে পারে। শরীরে পঞ্চাশ এর ও বেশি ক্ষত আঘাত এর ঘা আছে। আর আঘাত গুলো ও এমন এমন জায়গায় যেখানে কখনই মারা উচিত নয়। ডক্টর বলে ওঠে।
ডক্টর এর কথা গুলো শুনেই আমন এর মাথার রগ ফুলে উঠেছে মুখ এর চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে চোখে ফুটে আছে রাগের পাহাড় মনে হচ্ছে সামনে পেলে একদম কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলব। এমন বাপ কেমন জানোয়ার যে তার নিজের রক্ত কে এই ভাবে পশুর মত পিটিয়েছে। শরীরের আঘাত দেখেছে কিন্তু পঞ্চাশ এর ও বেশি আঘাত শুনে আমন এর মাথা ছিড়ে যাচ্ছে রাগে।
-“ওনার এখন রেস্ট প্রয়োজন। আর শরীরের ক্ষত গুলো ও ঠিক হওয়ার জন্য টাইম টু টাইম মেডিসিন নিতে হবে। সকালের পর ওনাকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন। বলেই ডক্টর রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
-” তুমি কি বাচ্চা নাকি যে মার খাওয়ার সময়ে ও বুঝতে পারো না যে তোমার শরীরের কত আঘাত লেগেছে। তুমি কি মার খাওয়ার সময়েও নিজেকে বাঁচাতে পারো না। আর নিজের ক্ষত গুলো তে মেডিসিন কেনো লাগানো হয়না। তুমি জানো তোমার আজ কি অবস্থা হয়েছিল। জানো তুমি কতক্ষণ অজ্ঞান ছিলে জানো কিছু দেখো এখন কটা বাজে ঘড়িতে। ভোর পাঁচটা। তোমার এতক্ষণ কোনো জ্ঞান ছিল না। আজ যদি আমি না যেতাম তাহলে কি হতো ভাবতে পারছ তুমি। আমন রেগে চিৎকার করে বলে ওঠে।
-“কি আর হতো মরে যেতাম। এটা আর নতুন কি। এতদিন বেঁচে থেকেও প্রতিদিন মরে বেঁচে কাটিয়েছি আর আজ না হয় পুরোপুরিই মরে যে..
সোহার কথা আর শেষ হয় না তার আগেই আমন সোহার গাল চেপে সোহার ওপরে ঝুঁকে গিয়ে সোহার শুষ্ক ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে সোহার মুখ বন্ধ করে দেয়। সোহা এইরকম আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিল না। তাই হকচকিয়ে যায়। নিজেকে সামলে নিয়ে আমন কে নিজের থেকে সরাতে চেয়েও পারছে না। কারণ সোহার শরীরে আঘাত এর জন্য নড়েচড়ে ওঠার মতো অবশিষ্ট শক্তি বেঁচে নেই। তার সারা শরীরে ব্যাথা হয়ে আছে। তাই শুধু মাথা টা ঘুরিয়ে নিতে চাইছে কিন্তু সেটাও পারছে না। তার মুখ শক্ত করে চেপে আছে আমন। মনে আঙুল গুলো গাল এর মাংস ভেদ করে ভিতরে ঢুকে যাবে। শেষে আমন তার রাগ মিটিয়ে সোহার ঠোঁটে একটা জোর কামড় বসিয়ে সোহার ঠোঁট ছেড়ে দেয়। দুজনই হাফাচ্ছে। সোহা চোখে পানি নিয়ে আমন এর দিকে দেখলেই দেখে তার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে আমন। সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে কোনো কথা না বলে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। আর এদিকে এখনও হতভম্ব হয়ে আছে সোহা। তার সাথে এগুলো কি হচ্ছে বুঝতে পারছে না। তার মাথায় আবারো যন্ত্রণায় শুরু হয়ে গেছে এত চিন্তার জন্য। আসতে আসতে চিন্তার থেকে নিজেকে মুক্ত করে চোখ বুজে নেয় সোহা।
আমন রুম থেকে বেরিয়ে বারান্দায় শেষের দিকে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। কাঁচ ভেদ করে দেখতে নিচের রাস্তার দিকে যেখানে আসতে আসতে সকাল হওয়ার সাথে সাথে মানুষের সমাগম চলতে আছে। দেয়ালে ঘুষি মেরে আমন ভাবতে কয়েক ঘণ্টা আগের কথা। আমন এর এটা ভাবতেই রক্ত হিম হয়ে যাচ্ছে যে আর দেরি করলে হয়তো সে তার জেলেবি কে হারিয়ে ফেলত। এটা ভাবতেই বুক কেঁপে উঠছে আমন এর।
কয়েকঘণ্টা আগের মুহুর্ত……
আমন পাইপ বেয়ে বারান্দায় থেকে সোহার রুমে ঢুকে যায়।সোহা কে নিচে বসে থাকতে দেখে ভেবেছিল ঘুমিয়ে গেছে তাই তার মনের কথা গুলো বলছিল আর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ পর আমন নিজের হাত ভেজা ভেজা অনুভব করে। বুঝতে পারে না হটাৎ করে মাথায় থেকে হাত কী ভাবে ভেজা ভেজা মনে হচ্ছে। পকেট থেকে ফোন বের করে ফ্ল্যাশ অন করে হাত সামনে আনতে আমন আতকে ওঠে। হাত পুরো রক্তে ভরা হয়ে আছে। আমন কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন এগিয়ে নিয়ে সোহা কে ভালো ভাবে দেখতে থাকে। লাইট এর আলোয় দেখতে পায় সোহার অবস্থা। পরনের শাড়ি টা বেশ কিছু জায়গায় ছিড়ে গেছে চুল গুলো উস্কখুষ্ক হয়ে আছে মাথা আর হাত হাঁটুর মাঝে থাকার জন্য ঠিক বুঝতে পারছে না। লাইট মাথার পিছনে নিতেই দেখতে পায় মাথার থেকে রক্ত বেরিয়ে পিট বেয়ে পড়ছে। চুল পুরো রক্তে ভোরে আছে। তাড়াতাড়ি করে রুমের লাইট জ্বালিয়ে সোহা কে উঁচু করে তোলে আর সাথে সাথে আমন বুক কেঁপে ওঠে সোহার অবস্থা দেখে। মুখের এক সাইট পুরো রক্ত ভোরে আছে মাথা ফেটে গেছে। ঠোঁটের কোন বেয়ে ও রক্ত পড়ছে। হাত আর বাকি পা পিট আর শাড়ি ছিড়ে যাওয়ার জন্য পেট যেটুকু দেখা যাচ্ছে পুরো আঘাতে ভরা হয়ে আছেন। সোহা কে এই অবস্থায় দেখে রক্ত শূন্য হয়ে গেছে আমন। ফোন হাতে নিয়ে কয়েকটা ফোন করে। তারপরেই সোহা কে বিছানায় রেখে নিজের গায়ের থেকে জ্যাকেট খুলে সোহা কে জড়িয়ে দেয়। সাথে সাথে সোহা কে কোলে তুলে নিয়ে বারান্দায় থেকে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে। নিচে আমন এর গার্ড ছিল যাদের আমন ফোন করে ডেকে এনেছে আর সিঁড়ির ব্যবস্থা করিয়েছে। সোহা কে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসেই হসপিটাল এর দিকে গাড়ি ছুটায়। পুরোটাই সময়ে সোহার কোনো জ্ঞান ছিল না. হসপিটাল আসতে সাথে সাথে চিকিৎসা শুরু হয়। আর একটু দেরি করলে কি হতো আমন এখনও ভাবতে পারছে না।।
এগুলো ভাবতেই আমন এর মাথায় রক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে রাগে সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে। সোহার বাপি কে যদি সামনে পেতো তাহলে হয়তো কি করত সেটা আমন জানে না। তার ড্যাড এর কাছে থেকে সব কিছু শোনার পর থেকেই সে জানে এটা কে করতে পারে। হটাৎ মনে পড়ে সোহা জ্ঞান ফেরার সময়ে তাকে খুঁজছিল। তার নাম ডেকে ছিল। তার মানে কি এখনও সোহা তাকে সেই আগের মত খোঁজে ঘুমের ঘোরে। এখনও সে তার জেলেবির মনের মাঝে বাস করে। এটা ভাবতেই আমন রাগ টা কমে গিয়ে মুখে এক চিলতে হাসির রেখা ফুটে ওঠে। হ্যাঁ তার জেলেবি তাকে এখনও মনে রেখেছে।
-“এতদিন আমি তোমার ওপর রাগ দেখিয়ে আমার ভালোবাসা বোঝাতে চেয়েছিলাম। তোমাকে নিজের করতে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম আমার রাগ দেখে আমার সাথে তুমি ঝগড়া করবে আর আমি তোমাকে মানিয়ে নিজের করে নেবো। কিন্তু তুমি দিনে দিনে আরো চুপচাপ হয়ে গেছিলে। কিন্তু আর নয়। এবার তুমি দেখবে এই আমন চৌধুরী কে যে কি কি করতে পারে আর কি কি হতে চলেছে তোমার সাথে। এবার দেখবে তোমার মন এর দিওয়ানাপান। তুমি শুধু দেখতে থাকো মাই লাভ। আমন মনে মনে বলে ওঠে।
.
.
.
. 💚💚💚
. চলবে…..
ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন ।সবাই নিজেদের মতামত জানাবেন।
( আর হ্যাঁ যাদের নিক নেম নিয়ে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে বা ভালো লাগছে না তার জন্য বলব নিক নেম গুলোর কোনো না কোনো মানে রিজন অবশ্যই আছে। তাই সময় হলেই জানতে পারবেন। লেখার মধ্যে কোনো ভুল হলে ধরিয়ে দেবেন। ধন্যবাদ 😊)