#দিওয়ানা
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৬
সোহা চারিদিকে দেখছে আর রাগ লজ্জা আর বিরক্তি নিয়ে নিজেকে ছাড়াতে চাইছে আমন এর থেকে। আমন সোহা কে কোলে নিয়ে হসপিটাল থেকে নিয়ে যাচ্ছে। সোহার পায়ের চোট এর জন্য হাঁটতে অসুবিধা হচ্ছিল তাই আমন সোহা কে কোলে তুলে নেয়। সোহা আমন এর থেকে নিজেকে ছোটানোর জন্য হাত পা ছুটিয়ে নিতে গেলে আমন সোহা কে আরো শক্ত করে নিজের বুকের সাথে লাগিয়ে নেয়। সোহা চারিদিকে দেখতে ব্যস্ত। কারণ হসপিটাল এর সবাই এখন তাদের দেখছে। আর কেউ কেউ মুচকি মুচকি হাসছে। আর এই সব দেখেই সোহা নিজেকে ছাড়াতে না পেরে রাগ লজ্জা আর বিরক্তি নিয়ে আমন কাঁধে নিজের মুখ লুকিয়ে নেয়। আমন এতক্ষণ নিজের মুখ শক্ত করে রাখলেও সোহার তার কাঁধে মুখ লুকিয়ে নেওয়া তে মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
-“নিজের শক্তি না দেখিয়ে চুপচাপ শান্ত হয়ে থাক। তোমার মনে হয় তোমার এই হওয়ায় এর মতো শরীরে তুমি আমার কাছে থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পারবে। আমন বলে ওঠে।
-” চারিদিকে সবাই আমাদের দিকে দেখছে। তোমাকে কে বলেছে আমাকে এই ভাবে কোলে নিতে। আর তাছাড়া আমি বুঝতে পারছি না যে হঠাৎ করে আমার সাথে এত চিপকানোর মত কি হয়েছে। নাকি এটাও তোমার আমাকে অপমান করার একটা রাস্তা। সোহা আমন এর কাঁধে মুখ লুকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে ওঠে।
-“চারিদিকে সবাই দেখছে কারণ ওরা তোমাকে দেখে জ্বলছে। কারণ ওরা আমার মত ছেলে কে পায়নি। আমার মত এত সুন্দর একটা ছেলে তোমার মত একটা মেয়ে কে কোলে নিয়ে যাচ্ছে। ওরা ভাবছে আমাদের মধ্যে কত না ভালোবাসা তাই। আর তোমার বাকি প্রশ্নের উত্তর গুলো ও তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবে। তাই নিজের খিচুড়ি পাকা মাথা টা কে শান্ত রাখো। আমন সোহা কে বলে ওঠে।
সোহা আমন এর কথা শুনে আর কোনো কথা বলেনি। চুপচাপ মনে মনে আমন কে গালাগাল দিতে আছে। মুখ ফুলিয়ে রেখেছে সোহা আর এটা দেখে আমন এর ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে।
—————
আমন সোহা কে নিয়ে মল্লিক ম্যানসনে চলে আসে। গাড়ি থেকে নেমে ঘুরে এসে সোহার দিকে গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে ঝুঁকে সোহা কে কোলে তুলে নেয়। এদিকে সোহার মুখের এক্সপ্রেশন চেঞ্জ হয়ে গেছে নিজের বাড়ি দেখতেই। সে জানে এখন ভিতরে গেলে আবারো তাকে তার ওই বাবা নামক প্রাণী কে দেখতে হবে। আর এখন তো ওর সাথে এই বদমাশ ছেলে টাও আছে তবে আমন এর এখন কার ব্যবহার দেখে সোহা বদমাশ বলে মনে করতে পারে না। সোহার এই সব ভাবনার মাঝেই আমন সোহা কে কোলে নিয়ে বাড়ির ভিতরে যায়।
বাড়ির ভিতরে যেতেই দেখে ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে সোনিয়া ও সাজিদ মল্লিক ব্রেকফাস্ট করছে। আমন কারোর দিকে না তাকিয়ে ভিতরে ঢুকে সোহা কে সোফায় বসিয়ে দেয়। সোহা হঠাৎ এমন ভাবে একটা ছেলের কোলে করে আসতে দেখে সোনিয়ার মাথা ঘুরে যায়। আর সাজিদ মল্লিক তো রাগী চোখে দেখছে। কাজের লোক সোহার ফুল কাকু সোহা কে এমন অবস্থায় দেখে ছুটে আসতেই আমন সবাই কে আনদেখা করে দেয়।
-“সকাল থেকে তুমি কোথায় ছিলে? তোমার সাহস কি করে হল বাইরে যাওয়ার? সাজিদ মল্লিক রেগে বলে ওঠে।
-” তুমি জানো না তোমার বাপি সকাল সকাল অফিসে যাবে? ব্রেকফাস্ট আর বাড়ির কাজ না করে তুমি বাইরে কোথায় ঘুরতে গেছিলে? আজ তোমার জন্য কত দেরি হয়ে গেলো। আর তার ওপর এটা কে যার কোলে উঠে এলে। তুমি জানো না আমাদের একটা রেপুটেশন আছে এই সমাজে। সোনিয়া ভালো মানুষের মত করে ধীরে ধীরে বলে ওঠে।
-“ওর সমস্ত জিনিস পত্র গুছিয়ে দিন। আমন গম্ভীর ভাবে কাজের লোক কে বলে ওঠে ওদের কথা এড়িয়ে গিয়ে যেনো শুনতে পাই নি ।
আমন এর কথা শুনতেই সবাই অবাক হয়ে আমন এর দিকে তাকিয়ে দেখে। আর কাজের লোকের মুখ তো হা হয়ে গেছে। সোহা অবাক হয়ে কিছু বলতে নিলে আমন আবারো বলে ওঠে।
-” সোহার সমস্ত জিনিস গুছিয়ে দিন। এবার একটু জোরে বলে আমন।
আমন ওখানে থাকা বাকিদের কোনো কথা না শুনে বলে ওঠে। সোহা অবাক চোখে আমন এর দিকে তাকাতে দেখতে পায় আমন এর চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট। কিন্তু এটা কেনো সেটা সোহা বুঝতে পারে না। এদিকে সাজিদ মল্লিক আর সোনিয়া ও অবাক হয়ে যায়। তাদের রাগ আর চিৎকার এর কোনো পরোয়া না করে এটা কি বলছে ছেলে টা। সব মিলিয়ে রাগে তিলমিলিয়ে উঠে সাজিদ মল্লিক ও সোনিয়া সোহার কাছে এসে দাঁড়ায়।
-“তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি? তুমি চুপ করে আছো কেনো? বাড়ির কাজ গুলো কে করবে শুনি? তোমার জন্য তোমার হাত পুড়িয়ে ব্রেকফাস্ট করেছে। তোমাকে তো আমি। বলেই সাজিদ মল্লিক হ্যাচকা টান দিয়ে সোহা বসা থেকে উঠিয়ে নেয়।
সোহা হঠাৎ এমন হওয়া তে বুঝতে পারে না আর পায়ের আঘাত এর জন্য দাঁড়াতে পারে না উল্টে পড়ে যেতে নিলেই আমন দু হাত দিয়ে সোহা কে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়। আমন ঘুরে দাঁড়িয়ে হাত উঠিয়ে সাজিদ মল্লিক এর মুখ বরাবর একটা ঘুষি মেরে দেয়। এত জোরে মেরেছে যে সাথে সাথে কিছুটা দূরে ছিটকে পড়ে আর তার সাথে নাক ফেটে রক্ত পড়তে শুরু করে। এটা দেখেই সবাই হয়রান হয়ে যায়. আর সোহা তো পুরো হতবাক হয়ে যায়। হাত দিয়ে আমন এর জ্যাকেট খিচে ধরে। আর সোনিয়া তো এত দেখেই ছুটে গিয়ে সাজিদ মল্লিক কে তুলে ধরে আনাপ সানাপ বলতে থাকে। আমন কাজের লোকের দিকে ইশারা করতে চলে যায় সোহার জিনিস গুছিয়ে দিতে। আমন সোহা কে ধরে বসিয়ে দিয়ে নিজে ও সোহার পাশে পায়ের পা তুলে বসে। এক হাত দিয়ে সোহা কে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে সামনে মেঝেতে বসে থাকা সাজিদ মল্লিক আর সোনিয়া কে দেখতে থাকে।
-“কি আংকেল খুব জোরে লেগেছে বুঝি আহারে। মুখ দিয়ে আওয়াজ করে আমন শক্ত গলায় বলে ওঠে।
-” তোমার সাহস কি করে হল আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমার গায়ে হাত তোলার? তুমি জানো আমি তোমার কি করতে পারি। সাজিদ মল্লিক নিজের নাকে হাত চেপে রেখে চিৎকার বলে ওঠে।
-“ওমা তাই নাকি। ইস আমি তো ভয় পেয়ে গেছি এবার কি হবে? আমন মুখ টা কুঁচকে বলে ওঠে।
-“এটা আপনার বাড়ি নাকি কই আমি তো জানি এটা সোহা জৈন মল্লিক বাড়ি ইনফ্যাক্ট এই পুরো প্রোপার্টি টা সোহার তো তাহলে এটা কোন দিকে থেকে আপনার বাড়ি হল? আমন দৃষ্টি সামনে রেখে ভয়াবহ আওয়াজে বলে ওঠে।
আমন এর এমন কথা শুনে সাজিদ মল্লিক সোনিয়া আর সোহা অবাক হয়ে গেছে। সোহা এক দৃষ্টিতে আমন এর দিকে তাকিয়ে আছে। সোহা নিজেও এত কথা জানতো মা তাহলে এই ছেলে টা তার ব্যাপারে এমন কথা জানলো কি করে ভাবতে থাকে সোহা।
-“এই ছেলে কে তুমি হ্যাঁ? এটা আমাদের ফ্যামিলি ব্যাপার এখানে কেনো তুমি কথা বলছো কেনো? আর তাছাড়া সোহার প্রোপার্টি মানেই আমাদের আমরা ওর মা বাবা। সোনিয়া বলে ওঠে।
-” ওহ রিয়েলি । আপনারা ওর বাবা মা নাকি? দেখে তো মনে হয়না? আমন তাচ্ছিল্য ভাবে বলে ওঠে।
-“তোমার মনে না হলেও এটাই সত্যি আমি সোহার বাপি। আর তুমি কে হ্যাঁ যে আমাদের মধ্যে কথা বলতে এসেছ। ও আমার মেয়ে তাই আমি যা খুশি করতে পারি। সাজিদ চিৎকার করে বলে ওঠে।
আমন কোনো কথা না বলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সাজিদ মল্লিক কে দেখতে থাকে। আর সোহা সে তো শুধু আমন কে দেখতে আছে। কাজের লোক সোহার সমস্ত জিনিস প্যাক করে এনে রাখে। এটা দেখেই সাজিদ মল্লিক এর সোনিয়া অবাক হয়ে যায়।
-“এই ছেলে তুমি ওকে কোথায় নিয়ে যাবে শুনি? সোহা কোথাও যেতে পারবে না। ও এই বাড়িতে থেকে এক পা ও বাইরে রাখতে পারবে না।নাহলে আমি এখুনি পুলিশ কে জানাবো। সোনিয়া আমন এর সামনে এসে বলে ওঠে।
আমন কোনো কথা না বলে হাত বাড়িয়ে সোনিয়ার গলায় থাকা চেইনে টান মারে সাথে সাথে সোনিয়ার গলা কেটে গিয়ে চেন আমন এর হাতে চলে আসে। সোনিয়া নিজের গলায় হাত রেখে অবাক হয়ে যায়।
-“কাক যতোই ময়ূর পুচ্ছ জড়িয়ে নিক কেনো তার শরীরে সে কখনো ময়ূর হতে পারবে না। তাই নিজের গেট আপ যতো চেঞ্জ করো না কেন তুমি কখনই সত্যি বদলাতে পারবে না যে তুমি একটা রাস্তার নোংরা মহিলা যাকে দয়া করে এই বাড়িতে তুলে আনা হয়েছে। আমন কাঠ কাঠ গলায় বলে ওঠে।
আমন এর কথা শুনে সাজিদ মল্লিক আর সোনিয়া তো যেনো আকাশ থেকে আছাড় খেয়ে মাটিতে পড়েছে । এত দিনের পুরাণো কথা আমন জানলো কি করে তারা বুঝতে পারছে না।
-“অফিসার আপনারা ভিতরে আসুন। আমন গলার আওয়াজ উঁচু করে বলে ওঠে।
সাথে সাথে পুলিশ অফিসার ও উকিল বাড়ির ভিতরে ঢোকে আর সাথে কিছু বডিগার্ড। এটা দেখেই আরো হয়রান হয়ে যায় সবাই। উকিল এগিয়ে এসে কিছু পেপার্স বের করে আমন এর হাতে ধরিয়ে দেয়। আমন পেপার্স গুলো নিয়ে সোহার সামনে রাখে।
-“এখানে সাইন করো। আমন সোহা কে বলে ওঠে।
সোহা অবাক হয়ে একবার সামনে রাখা পেপার্স ও একবার আমন এর দিকে দেখে কিছু বলতে নিলে আমন বাঁধা দেয়।
-” তোমাকে কোনো কথা বলতে বলিনি তোমাকে এখানে সাইন করতে বলেছি। বড়ই রুক্ষ ভাবে বলে ওঠে আমন।
আমন এর এমন আওয়াজ শুনে সোহা কেঁপে ওঠে। আজ তার সাথে কি হচ্ছে সে বুঝতে পারছে না সকাল থেকেই সে শক এর শক খেয়ে যাচ্ছে। আমন এর রাগী চোখে মুখের দিকে তাকিয়ে কোনো কথা না বলেই তাড়াতাড়ি সাইন করে দেয় পেপার্স গুলোতে। সাজিদ মল্লিক ও সোনিয়া অবাক হয়ে দেখতে থাকে।
-“মিস্টার মল্লিক আজ থেকে মল্লিক এম্পায়ার এর একমাত্র ওনার মিস সোহা জৈন মল্লিক। আর এই বাড়িটা ও নিলাম করা হচ্ছে। আর সাথে আপনি ব্যাংকক্রাপ্ট হয়ে গেছেন। উকিল বলে ওঠে সাজিদ মল্লিক কে।
-” মানে আপনারা কি মজা করছেন নাকি? আর মল্লিক এম্পায়ার একমাত্র ওনার সোহা কি করে হবে আর এই বাড়িটা তো আমার স্ত্রী সোনিয়ার নামে এটা কি করে নিলাম হতে পারে। আর আমি ব্যাংকক্রাপ্ট কি ভাবে হলাম? সাজিদ মল্লিক চিৎকার করে বলে ওঠে।
-” মিস্টার মল্লিক আপনি আগে শান্ত হন। এখানে সব পেপার্স আছে। মিস সোহার নামে সেভেন্টি পার্সেন্ট শেয়ার আছে। মিস সোহার আঠারো বছরের পর যেটা কানুনি নিয়মে ওনার নামে হয়ে যাবে। আর আপনার নামে যে থার্টি পার্সেন্ট শেয়ার ছিল সেটা আপনি নিজেই কিছুদিন আগে আপনার বিজনেস এর জন্য মটগেজ রেখেছিলেন যেটা ওনারা মিস সোহার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে আপনি ডেটে ওদের পাওনা না দেয়ার জন্য। তাই এই পুরো মল্লিক এম্পায়ার এর মালিক এখন থেকেই মিস সোহা জৈন। আর আপনি এই বাড়ির পেপার দিয়ে ব্যাংক থেকে ও মোটা টাকার লোন নিয়েছিলেন সেটাও সময় মত পরিশোধ করতে পারেন নি তাই আপনাকে ব্যাংকক্রাপ্ট করা হয়েছে সাথে বাড়িটা কে নিলামে তোলা হয়েছে। উকিল পুরো মুখস্ত পড়া দেয়ার মত গড়গড় করে বলে ওঠে।
উকিল এর কথা শুনে সাজিদ মল্লিক মাথায় হাত দিয়ে পড়ে যেতে নিলে সোনিয়া ধরে নেয়। আর সোহা চোখ বড় বড় করে দেখতে থাকে আমন কে। আমন কোনো কথা না বলে কঠিন চোখে সাজিদ মল্লিক ও সোনিয়া কে দেখতে থাকে পুরো টাইম টা।
-“মিসেস সোনিয়া মল্লিক আপনাকে অ্যারেস্ট করা হচ্ছে মিসেস আরিনা মল্লিক এর খুনের অপরাধে।
পুলিশ এর কথা শুনে যেনো এবারে ঘরের মধ্যে বাজ পড়ার মত সবাই চমকে যায়। সোহা চোখ বড় বড় করে দেখতে থাকে. সাজিদ মল্লিক ও হয়রান হয়ে যায় পুলিশ এর কথায় আর সোনিয়া তো আতকে ওঠে এমন কথা শুনে।
-“এইসব কি ফালতু কথা বলছেন অফিসার। আমার স্ত্রী কিছু করে নি। আরিনা মারা গেছে এই খারাপ মেয়েটার জন্য যদি কাউকে অ্যারেস্ট করতে হয় তো এই শয়তান মেয়েটা কে অ্যারেস্ট করুন বাজে মেয়ে একটা আমার বিরুদ্ধে চাল চালা হচ্ছে। আমার শেয়ার আমাকে ফিরিয়ে দেয়। সব কিছু। না হলে তোকে এখানে মেরে ফেলব। কেউ তোকে আমার হাত থেকে বাঁচাতে পারবে না। বলেই সাজিদ মল্লিক সোহার দিকে এগিয়ে এসে বলে সোহার গলা চেপে ধরে।
আমন এতক্ষণ চুপচাপ বসে থাকলেও এবার আর চুপ করে বসে থাকে না। উঠে দাঁড়িয়ে এক ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় সাজিদ মল্লিক কে। আমন এগিয়ে গিয়ে সজোরে একটা লাথি মারে সাজিদ মল্লিক কে। সাথে ছিটকে গিয়ে দেয়ালের সাথে আছাড় খায়। এখন আমন কে দেখলে যে কেউ ভয় পেয়ে যাবে। এখন দেখতে পুরোই হিংস্র ভয়ংকর লাগছে। চোখ মুখ লাল করে এগিয়ে গিয়ে দেয়ালে টানানো চাবুক নিয়ে সাজিদ মল্লিক কে মারতে থাকে। এতদিন এটা দিয়েই সে সোহা কে মেরে ছিল আর আজকে আমন এটা দিয়ে তাকে মারছে। সোনিয়া এইসব দেখেই সোহার দিকে এগিয়ে এসে রাগে সোহার চুলের মুঠি চেপে ধরে। সাথে সাথে সোহার মুখ দিয়ে চাপা আর্তনাদ বেরিয়ে আসে। সোহার শরীরে এখন কোনো শক্তি নেই আর তার সাথে এত জোরে চুল চেপে ধরতে ব্যাথায় চিৎকার দিয়ে ওঠে। আমন এই দৃশ্য দেখে এগিয়ে এসে টান মেরে সোনিয়া কে সোহার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে মাটিতে আছাড় মেরে ফেলে। রক্ত লাল চোখে তাকিয়ে হাতে থাকা চাবুক টা আমন সোহার দিকে এগিয়ে দেয়। সোহা একবার আমন এর দিকে তাকিয়ে আমন এর ইশারা পেয়ে হাতে তুলে নেয়। সাথে সাথে মনে পড়ে তার এতদিনের অত্যাচারের কথা আর একটু আগে অফিসারের বলা কথা গুলো এই মহিলার জন্য তার মা তাকে ছেড়ে চলে গেছে এই মহিলার জন্য তার বাপি থেকেও তার নয় সে এখন জানোয়ারে পরিনত হয়েছে তার শৈশব থেকে আর এই পর্যন্ত তাকে প্রতি মুহূর্তে যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে ভাবতেই সোহার মাথায় খুন চেপে বসে। আসতে আসতে এগিয়ে গিয়ে হাতে থাকা চাবুক দিয়ে সোনিয়া কে মনের ইচ্ছা মত পেটাতে থাকে। আমন কোনো কথা না বলে পায়ের পা তুলে বসে। এদিকে অফিসার আর উকিল বডিগার্ড চুপচাপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে দৃশ্য গুলো নিজের চোখে তাদের এখন এখানে কিছু করার নেই। কারণ এখানে স্বয়ং আমন চৌধুরী বসে আছে যার এই পুরো কলকাতায় রাজ চলে তার ওপরে কথা বলে নিজের চাকরি খোয়াতে চায় না কেউ তাই চুপচাপ দেখছে দাঁড়িয়ে থেকে।
শেষে আমন সোহা কে সোনিয়া থেকে সরিয়ে এনে পুলিশ অফিসার ইশারা করতে সোনিয়া কে কয়েক জন মহিলা কনস্টেবল তুলে নিয়ে যায়। সাথে উকিল ও বেরিয়ে যায়। আমন সোহা কে কোলে তুলে নেয় আর সাথে নেয় বাড়ির কাজের লোক ফুল কাকু কে নিয়ে বেরিয়ে যায়। আর বডি গার্ড সোহার ল্যাগেজ নিয়ে পিছন পিছন যেতে থাকে। আমনরা বেরিয়ে যেতে ইন্সপেক্টর আর বাকি থাকা কনস্টেবল সাজিদ মল্লিক আর বাকি লোক গুলো কে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে সিল করে দেয়।
সোহা আমন এর সাথে গাড়িতে বসেই বাড়ির দিকে তাকিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। তার মনের ভিতর জমে থাকা এতদিনের কষ্ট গুলো বেরিয়ে আসে কান্না রূপে। এই বাড়িতে সে দিনের দিন কষ্ট যন্ত্রণা সহ্য করে গেছে। আমন কোনো কিছু না বলে সোহা বুকে জড়িয়ে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে. সে আজ সোহা কে কাঁদতে বাঁধা দেয় না। তাকে তার মনের সব কষ্ট গুলো কে মন থেকে বের করতে দেয়। শুধু সাপোর্ট হিসাবে তাকে জড়িয়ে রাখে নিজের সাথে। আর কখনই তাকে কষ্ট পেতে দেবে না কোনো মূল্যেও নয় সব সময়ে আগলে আগলে রাখবে সোহা কে।
.
.
.
. 💚💚💚
. চলবে….
ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন রি-চেক করা হয়নি। সবাই প্লিজ নিজেদের মতামত জানাবেন নেক্সট ও নাইস দূরে রেখে। 😊 😊 😊