#দীপ্ত_গোধূলি
#লেখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব -৩১
এই দীপ্ত এতক্ষণ কোথায় ছিলি রে?
– আদিবাপু আমি একটু কাজে আটকে গিয়েছিলাম।এখন বলো কি করতে হবে।
– তোকে কিছু করতে হবে না।তুই ছাদে যা সবাই ওইখানেই আছে।
– আম্মু কোথায় গো?
– ফুপি একটু বাসায় গেছে।কাল সকালে আসবে।তোর ফোন সুইচ অফ ছিল তাই তোকে জানাতে পারে নি।ফুপি বলে গেছে রাতে তোকে আমাদের বাসাতেই থেকে যেতে।এখন তুই ছাদে যা আমি আসছি কেমন।
– ওকে।
_________
আরে দীপ্ত যে!এই বুঝি তোমার আসার সময় হলো!তোমাকে সবাই ফোনে কত ট্রাই করছিলাম বাট তোমাকে তো পাওয়াই যাচ্ছিল না!যাকগে এখন তুমি এসে গেছো তো গাইস লেটস স্টার্ট!
– এক সেকেন্ড সিফাত ভাইয়া!আপনি কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না!শুরু করবে মানে? কি শুরু করবে?
– আরে দীপ্ত আগে তুমি এখানে এসে বসো তো!দেন তোমাকে সবটা বুঝিয়ে বলছি!
রোহান উঠে এসে দীপ্তকে টেনে নিয়ে গিয়ে ওর পাশে বসালো।
– ঠিক আছে এখন তো বসলাম!এবার বলুন কিসের কথা বলছিলেন?
– দীপ্ত!ভাই আমার আমি সবটা বুঝিয়ে বলছি।
ইফতির কথায় এতক্ষণে দীপ্ত ওর দিকে তাকায়।যদিও ভালো মনেই তাকিয়ে ছিল!কিন্তু মন আর বেশিক্ষণ ভালো রইলো না! ইফতির ঠিক বাম পাশে গোধূলিকে বসে থাকতে দেখে মাথা গরম হয়ে গেল!
– আমি তো কিছুতেই বুঝতে পারছি না এই ইফতি আসার পর থেকেই গোধূলির সাথে সব জায়গায় কেন এইভাবে ছায়ার মতো লেগে থাকে।আর গোধূলিকেও বলি হারি! এই ইফতিকে এত পাত্তাই বা দেওয়ার কি আছে।মানলাম মামীর বেস্ট ফ্রেন্ডের ছেলে আদিবাপুরো বেস্ট ফ্রেন্ড!তো কি হয়েছে?সব সময় ওকে কেন এই ইফতির সাথে বসে থাকতে হবে!
– আরে এই দীপ্ত ভাইয়া!কোথায় হারিয়ে গেলে?
ইহানের ধাক্কায় ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে দীপ্ত।নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলে,
– জ্বি ভাইয়া আপনি যেন কি বলছিলেন?
– আমি,রোহান,সিফাত,সোনিয়া,মুক্তি,রুহি,ইহান,
আহান,লাজুক,গোধূলি,তুমি,আদিবা আমরা বারো জন আছি।সো আমরা এখন পালাবদল খেলবো।
– হোয়াইট ইজ পালাবদল?আর এইসব খেলা এখন ব্যাকডেটেড হয়ে গেছে।
– তো?
– তো এই খেলা ক্যান্সেল।গাইস আমরা ট্রুথ অর ডেয়ার খেলতে পারি!এটা তাও ইন্টারেস্টিং আছে।যারা ট্রুথ নিবে তাঁদের মাধ্যমে আমরা অনেক সিক্রেট তথ্য জানতে পারবো,আর যারা ডেয়ার নিবে তাঁরা নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারবে।খুব ভালো হবে না ব্যাপারটা?বেশ ইন্টারেস্টিং হবে!সো লেটস স্টার্ট দ্যা গেইম আর তার আগে আমার কিছু…..
– নাআআ!
দীপ্তের কথা শেষ করতে পারলো না তার আগেই গোধূলি চিৎকার করে উঠে।
– কি হলো গোধূলি?তুমি আবার দাঁড়িয়ে গেলে কেন?
– রুহি আপু আমার একটা কাজের কথা মনে পরে গেছে তোমরা বসো আমি আসছি।
গোধূলি আর এক সেকেন্ডও দেরি না করে চলে যেতে নেলেই দীপ্ত বলে উঠে,
– ট্রুথ অর ডেয়ার খেলতে হবে এটা শুনে অনেকেই ভয় পাচ্ছে রুহি আপু।ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক!সবাই তো আর সাহসী না!কিছু মানুষ ভীতুও হয়।
কয়েক কদম এগিয়ে দীপ্তের কথায় থেকে যায় গোধূলি।হনহন করে চলে এসে আবার আগের জায়গায় বসতে বসতে বলে,
– রুহি আপু….
– না গোধূলি তোমার কাজ থাকলে যেতে পারো!আমরা না হয় একটু অপেক্ষা করবো!
– তার আর দরকার আপু।গোধূলি এত ভীতু নয় যে ট্রুথ অর ডেয়ার খেলতে ভয় পাবে!
– ওহ রিয়েলি গোধূলি? তাহলে আমি যখন বলছিলাম তখন ওমন নাআআ বলে চেচালি কেন?
দীপ্ত কিছুটা মুখ ভেঙচিয়ে কথা বলে।দীপ্তের উপর গোধূলির বিশাল রাগ হচ্ছে।না পারছে কিছু বলতে আর না পারছে সইতে।শুধু ফোসফোস করে দম ছাড়ছে।
ধুর চলে গেলেই তো ভালো হতো।কেন যে এই বদ লোকটার কথায় ফিরে এলাম!কি না কি ট্রুথ ডেয়ার দিয়ে দিবে শেষে আমাকে লজ্জায় পড়তে হবে।এমনিতেই এখানে সবার থেকে আমি ছোট। কারো কথা ফেলতেও পারবো না!
– আরে এই গোধূলি!তুই এত কি ভাবছিস বল তো?
লাজুকের ডাকে গোধূলি ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে।
– হুম!কিছু না লাজুবু।আচ্ছা আমি একটা কথা বলছিলাম কি কালকে তো অনেক কাজ আছে তো আজকে সবাইকে খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়া দরকার!তা না হলে সকালে উঠতে পারবে না তোমরা!
– আমাদের এইসব উনিশ বিশ বুঝাতে আসবি না!সবার কথা তোকে ভাবতে হবে না।তুই বাচ্চা মানুষ! যা তুই গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।
– আমি কি বলেছি আপনাকে আমার ঘুম পাচ্ছে?আর আমি তো ভালো কথাই বললাম।
– তোর ওই ভালো কথার মানে আর কেউ না বুঝলেও আমার বুঝা হয়ে গেছে। সো এত ড্রামা না করে সোজাসাপ্টা বলে দিলেই হয় তুই এই গেইমটাই খেলতে চাস না।তুই খুব ভয় পাচ্ছিস আর…..
দীপ্তের কথায় ফোস করে গোধূলি।
– বড়দা ভাই শ্যাম্পেনের বোতলটা আমার কাছে দাও তো খেলাটা না হয় আমিই আগে স্টার্ট করি!
গোধূলির মুখ থেকে এই কথা শুনবে বলেই তো সেই কখন থেকে হাপিত্যেশ করছিল দীপ্ত!আহানের কাছ থেকে শ্যাম্পেনের বোতলটা নিয়ে গোধূলি যেই ঘুরাবে ওমনি দীপ্ত বলে উঠলো,
– এক মিনিট!আগে খেলার নিয়মটা ভালো করে শুনে নিবি তো নাকি?
– আপনার কি মনে হয় আমি নিয়ম জানি না?
– উফফ গোধূলি তুই না বেশি বুঝিস!আমার পুরো কথাটা তো শুনবি!
– আচ্ছা দীপ্ত গোধূলির কথা বাদ দে তুই বল কি বলবি।
– সেটাই তো করতে যাচ্ছিলাম আহান!কিন্তু বোন তো আমাকে বলতেই দিচ্ছে না।
কথাটা দীপ্ত বেশ ঝাঁঝালো কন্ঠেই বলেছে।যেটা শুনে গোধূলির মনে লজ্জায় এক রাশ অভিমান এসে ভিড় করে!
– আচ্ছা এখন বল!
– আমরা এইখানে দুইটা বক্স রাখবো।একটাতে ট্রুথ এর জন্য প্রশ্নের চিরকুট রাখা হবে আরেকটাতে ডেয়ার এর চিরকুট রাখা হবে।যে যেটা চুজ করবে তাকে সেটাই দেওয়া হবে। ট্রুথ নিলে প্রশ্নের অনেস্টলি উত্তর দিতে হবে!আর ডেয়ার নিলে চিরকুটে যা লেখা থাকবে সেটাই করতে হবে!আর একটা কথা এটা সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট।যার যখন টার্ন থাকবে সে বোতল ঘুরানোর আগেই একজনকে চুজ করে নিবে।আর সে যদি ব্যর্থ হয় তাহলে যাকে চুজ করবে সে উল্টো ট্রুথ অর ডেয়ার দেওয়ার সুযোগ পাবে।
– বাহ!দীপ্তের এই ভিন্ন ধরনের আইডিয়াটা তো বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে!তাহলে আর দেরি কেন খেলা শুরু করা যাক।
– দাঁড়ান মুক্তি আপু!ইহানকে বক্স আর কাগজ-কলম আনতে পাঠিয়েছি।আগে সসসব লিখে নেইইই!
গোধূলির বেশ সন্দেহ হচ্ছে এবার।কারণ লাস্টের কথাটা দীপ্ত অনেকটা টেনে বলেছে!তাও আবার গোধূলির দিকে তাকিয়ে!
____________
এতক্ষণ খুব ভালো ভাবেই খেলা চলছিল কিন্তু দীপ্তের টার্ন আসতেই দীপ্ত গোধূলিকে চুজ করে নিলো!আর গোধূলি মনে মনে দোয়া দরুদ পড়া শুরু করে দিয়েছে যাতে দীপ ব্যর্থ হয়!শেষ রক্ষা আর হলো না!কেউ ঠিকঠাক নিশানায় লাগাতে পারে নি!কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে দীপ্ত ঠিকই গোধূলিকে তাক করছে!
– বাব্বা!দেখেছ আমরা এতক্ষণ কেউই ঠিকঠাক নিশানায় লাগাতে পারি নি দীপ্ত ঠিকই জিতে গেলো!
সবাই বাহবা দিচ্ছে দীপ্তকে।
– তা গোধূলি এখন তুই চুজ কর কি নিবি ট্রুথ অর ডেয়ার?
– আমার বোন কি ভীতু নাকি যে ট্রুথ নিবে?সাজি ডেয়ার নিবে।দাঁড়াও দীপ্ত ভাইয়া আমি হেল্প করছি সাজিকে!
ইহানের কথা শুনে গোধূলির সারা শরীর রাগে জ্বলে যাচ্ছে!কি দরকার ছিল তোকে আগ বাড়িয়ে বলতে যাওয়ার!আর ওইখান থেকে উঠে চলে এসেছিস আমাকে হেল্প করতে!আমি কি তোকে হেল্প করতে বলেছি?ইচ্ছে করতে এক ধাক্কা দিয়ে ছাদ থেকে ফেলে দেই!কি না কি ডেয়ার লেখা আছে একমাত্র আল্লাহ মালুম!দাঁড়া আমাকে ফাঁসালি তো তুই এর মজা আমি তোকে পরে বুঝাবো!গোধূলি মনে মনে এইসব বলছে আর ইহানের দিকে রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে।ইহান এসে ডেয়ারের বক্স থেকে একটা চিরকুট নিয়ে ইফতির কাছে দেয়!ইফতির কাছ থেকে একে একে হাত বদল হতে থাকে!সবাই চিরকুটটা এক নজর দেখেই অন্য জনকে দিয়ে দিচ্ছে! এইভাবে এক সময় চিরকুট গোধূলির কাছে এসে পৌঁছায়।গোধূলি এটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না!চিরকুটটা হাতে নিতেই মুখ হা হয়ে আসে গোধূলির।
সবার প্রায় একই পোজ দেখে দীপ্ত গোধূলির হাত থেকে চিরকুটটা রীতিমতো জোর করেই নিতে নিতে বলে,
– আমি বুঝতে পারছি না!এই চিরকুটটাতে কি এমন আছে যে সেই হাতে নিচ্ছে সেই এইরকম নির্বাক হয়ে গেল!
সবার দিকে এক ঝলক তাকিয়ে দীপ্ত চিরকুটটায় তাকাতেই ওর চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো!ও নিজেও এটা এক্সপেক্ট করে নি!
#দীপ্ত_গোধূলি
#লেখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব -৩২
– আ’আমাকে কিস ক’করতে হবে?
– এখন তোতলাচ্ছিস কেন?ডেয়ার লেখার সময় মনে ছিল না?আর এই অদ্ভুত নিয়ম তো তুইয়েই বানিয়েছিস!তো এখন কি হলো?
আহান দীপ্তের দিকে বিরক্তিকর লুক দিয়ে বলে কথাটা।
– আচ্ছা গাইস সবাই আমাকে একটা কথা বলো তো এই ডেয়ারটা যদি তোমাদের কারো কাছে যেতো তাহলে তোমরা কি করতে?ইফতি ভাইয়া আপনাকে দিয়েই শুরু করি বলুন আপনি কি করতেন!
– আমি তো ডিরেক্ট কিস করে দিতাম!
বেটা খাচ্ছর তুই তো কিস করবিই!তোর তো কাজেই সারাদিন মেয়েদের সাথে চিপকে থাকা!অসভ্য ছেলে কোথাকার!দীপ্ত মনে মনে ইফতিকে বকাঝকা করে গলা ঝেড়ে বলে,
– গুড!আচ্ছা রুহি আপু আপনি কি করতেন?
– আমিও হয়তো কিসই করতাম!যদি বাছাইকৃত মানুষটি আমার কাছের কেউ হতো তাহলে।তবে সেটা অবশ্যই আমার জন্য দুঃসাহস দেখোনো হয়ে যেত। তবে আমি কিন্তু ডেয়ার না ট্রুথ নিতাম!
– ওকে!আপনার কথাগুলোর গভীরতাটা মনে হচ্ছে একটু বেশিই!আপনার উত্তরটা ঠিক কিভাবে নিবো বুঝতে পারছি না!যাকগে তারপরেও আমরা এটাকে এক ধরনের উত্তর হিসেবে নিতেই পারি!আদিবাপু তুমি বলো!
– আমার ক্যান্ডিডেট কোনো ছেলে হলে ট্রুথ নিতাম আর মেয়ে হলে একটু ভেবে দেখতাম।তখন আমার মোড যে রকম থাকতো সেটার উপর ডিপেন্ড করে চুজ করতাম!
– দ্যাটস গুড!তারপর সিফাত ভাইয়া আপনি?
দীপ্ত একে একে সবার মতামত নিয়ে বলে,
– তাহলে তোমাদের সবার মতামত নিয়ে এটা বুঝতে পারলাম এখানে প্রায় অর্ধেকের বেশি কিস করার পক্ষে আর অন্যরা বিপক্ষে!আর আমার উত্তরও কিন্তু কিস করার পক্ষে!সো এখন আমার কি করা উচিত গোধূলি?
দীপ্তের মুখে গোধূলি ওর নাম শুনে আঁতকে উঠে।ও কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না।শুধু নিচ দিকে তাকিয়ে ওরনাটা শক্ত করে মুঠি দিয়ে ধরে রেখেছে।ও তো ডেয়ার নিতোই না!শুধু শুধু ইহানটা ওকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।গোধূলি লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে সেই কখন থেকে।একবারের জন্যও মাথাটা উপরে তুলে নি!
– যেহেতু এটা খেলারই একটা অংশ সো গোধূলি তোকে ডেয়ার কমপ্লিট করতে হবে।এত লজ্জা পেলে খেলতে আসিস কেন?আগেই বলেছিলাম তুই বাচ্চা মেয়ে যা গিয়ে ঘুমিয়ে পড়!কিন্তু আমার কথা শুনিস নি!এখন খেলার নিয়ম অনুযায়ী ডেয়ার কমপ্লিট কর!
– একটা কিস তো গোধূলি করে দাও না!
এই সোনিয়া কি বলছিস তুই?দেখতে পাচ্ছিস না গোধূলি লজ্জা পাচ্ছে!যতোই খেলার নিয়ম হোক না কেন কিস এর মতো একটা সেনসেটিভ বিষয় এইভাবে আমাদের বড়দের সামনে…না মানে এটা কেমন দেখায় না!
– আরে রুহি তুই ব্যাপারটাকে কমপ্লিকেটেট কেন করছিস?দীপ্ত তো গোধূলির ভাইয়েই হয়!সো ভাইকে কি বোন কিস করতে পারে না?গোধূলি আমি কি ভুল বললাম?
সোনিয়ার কথা শুনে গোধূলি কাঁদোকাঁদো মুখ নিয়ে দীপ্তের দিকে তাকালো। গোধূলির এখন ঠিক কি অবস্থা দীপ্ত ঠিক বুঝতে পারছে।গোধূলি যে ডেয়ার নিতো না সেটাও দীপ্ত খুব ভালো করে জানে।শুধু মাত্র ইহানের জন্য বেচারির এখন এই হাল।গোধূলির এমন নাজেহাল অবস্থা দেখে দীপ্ত ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসি ঝুলিয়ে বলে,
– আচ্ছা যা তোকে এই ডেয়ার কমপ্লিট করতে হবে না।কিন্তু তোকে অন্য ডেয়ার নিতে হবে!এই আহান একটা চিরকুট তুল তো।তোর বোন যে ভীতু!
আহান একটা চিরকুট তুলে সোজা দীপ্তের হাতে দিলো।দীপ্ত চিরকুটটা খুলে দেখল ওটাতে কি লিখা আছে!
– আচ্ছা গোধূলি আগে এটা বল তো তুই কি আদৌ গান গাইতে পারিস!
– কেন?
– কারণ এখানে ডেয়ার দেওয়া আছে যে গান গাইতে হবে!কিন্তু তোকে দেখে তো মনে হয় না গান টান কিছু জানিস বলে!
– এই দীপ্ত একদম আমার বোনকে জাজ করবি না! আগে শুন তারপর কথা বলবি!সাজি তোর গান দিয়ে দীপ্তের মুখটা এক্কেবারে বন্ধ করে দে তো!
– আহান ঠিকই বলেছে গোধূলি।তুমি এবার একটা গান ধরো তো দেখি!অনেকেই হয়তো জানে না তুমি ঠিক কত গুনে গুণান্বিত!
– কিন্তু ইফতি ভাইয়া……..
– প্লিজ গোধূলি!
– ওকে!আমি চেষ্টা করছি!
গলা ঝেড়ে নিয়ে গোধূলি যেই গানটা গাইতে যাবে ঠিক তখনই কারেন্ট চলে গেলো।সবাই হতাশা নিয়ে গোধূলির দিকে তাকিয়ে আছে।
– আরে তোমরা সবাই আমার দিকে এইভাবে কেন তাকিয়ে আছো।কারেন্ট চলে গেছে আর আমি না!অন্ধকারেও তো গানটা গাওয়া যাবে।এই ছোটদা তুই বরং কয়েকটা মোমবাতি নিয়ে আয় গিয়ে।অবশ্য আজকে চাঁদনী রাত! তারপরেও অন্ধকারে অনেকের বোরিং ফিল হতে পারে!ছোটদা যা তাড়াতাড়ি করে।
– হুম যাচ্ছি।
___________________
এই যে আলো এসেছে!নে এবার তোর গান শুরু কর বোন।তোর এই ডেয়ারের চক্করে অনেকটা সময় চলে গেছে।কারেন্ট চলে এলে সবাইকে নিচে যেতে বলেছে আব্বু।
– কেন?
– জানি না আব্বু বলল!
– আচ্ছা ঠিক আছে ইহান তুমি আগে আমাদের সাথে জয়েন করো।গোধূলির গানটা আগেই শুনি তারপর এমনিতেই চলে যাবো!কারেন্ট আসার জন্য আর অপেক্ষা করবো না।ইফতি ইহানের হাত টেনে নিয়ে ওর পাশে বসিয়ে দিলো।
আর এই দিকে ইহানের মোমবাতি নিয়ে আসতে দেরি হচ্ছিলো বলে দীপ্ত উঠে গিয়ে ছাদের রেলিং এ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বুকে হাত গুজে আকাশের ঝলমলে ওই পূর্ণিমার চাঁদটার দিকে তাকিয়ে ছিল।
– দীপ্ত ভাইয়া তুমি ওইখানে কি করো?এইদিকে আসো।
ইহান দীপ্তকে ডাক দিলে দীপ্ত বলে,
– আমি এইখানেই ঠিক আছি!
– গোধূলি তুমি এবার গানটা শুরু করো তো!
– জ্বি ভাইয়া
“”””এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে,
এসো না গল্পো করি ৷
দেখো ওই ঝিলি মিলি চাঁদ,
সারা রাত আকাশে সলমাজরি ৷
এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে,
এসো না গল্পো করি ৷
জাফরানি ওই আলতা ঠোঁটে
মিষ্টি হাসির গোলাপ ফোটে ৷
মনে হয় বাতাসের ওই দিলরুবাতে
সুর মিলিয়ে আলাপ ধরি ৷
দেখো ওই ঝিলি মিলি চাঁদ,
সারা রাত আকাশে সলমাজরি ৷
এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে,
এসো না গল্পো করি ৷
এই রূপসী রাত আর ওই রুপালি চাঁদ বলে জেগে থাকো,
এ লগন আর কখনো ফিরে পাবে নাকো ৷
মখমলের ওই সূচনী ঘাসে,
বসলে না হয় একটু পাশে,
মনে হয় মহুয়ারি আতর মেখে,
তোমার কোলে ঘুমিয়ে পড়ি ৷
দেখো ওই ঝিলি মিলি চাঁদ,
সারা রাত আকাশে সলমাজরি ৷
এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে,
এসো না গল্পো করি ৷
ও. এসো না গল্পো করি ৷””””””
গোধূলির গান শেষ করতেই সবাই গোধূলিকে এত্ত এত্ত প্রশংসা করছে।কারণ গোধূলির গানটা সবারই খুব ভালো লেগেছে।সেটা সবার চোখ মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
– বাহ অসাধারণ চমৎকার হয়েছে গোধূলি!তুমি যে এত ভালো গান গাইতে পারো সেটা তো আগে কখনো বলো নি!আদিবা তুইও তো কখনো বলিস নি তোর বোন এত ভালো গান গাইতে পারে।
– আরে মুক্তি আমি নিজেই জানি না সাজি এত ভালো গান গাইতে পারে!ওকে তো বাসায় শুধু গুনগুন করে গান গাইতে শুনি!
গান চলা কালীন দীপ্ত মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে ছিল গোধূলির দিকে।একটা বারের জন্যও চোখ সড়ায় নি গোধূলির উপর থেকে।দীপ্তের ধারণাতেও ছিল না যে গোধূলি এত সুন্দর গান গাইতে পারে।
– গোধূলি তুমি তো জাস্ট ফাটিয়ে দিয়েছ!যেমন ওয়েদার আর পরিবেশ ঠিক তেমনই তোর সিলেক্ট করা গান আর পরিবেশনা।সব মিলিয়ে অপূর্ব।দেখলে তো দীপ্ত অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়!
ইফতির কথার বিনিময়ে দীপ্ত শুধু দীর্ঘ শ্বাস ফেলে একটু মুচকি হাসি দেয়।
– গোধূলি তোমার গান শুনে মনটা এক্কেবারে ভরে গেলো গো।খুব সুন্দর হয়েছে।
– থ্যাঙ্কিউ সোনিয়া আপু।চলো এবার নিচে যাওয়া যাক।বাবাই কেন ডাকলো গিয়ে শুনি।
সবাই একে একে ছাদ থেকে নেমে গেছে।দীপ্ত এখনও ওইখানেই দাঁড়িয়ে আছে।গোধূলি সবার পরে ছাদ থেকে নামছিল ঠিক তখনই দীপ্ত এসে গোধূলির হাতটা পিছন থেকে ধরে ফেলে।তাল সামলাতে না পেরে গোধূলি কিছুটা পিছিয়ে যায়।এবার গোধূলির হাত ছেড়ে দিয়েছে দীপ্ত।গোধূলির ঠিক পিছনে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে দীপ্ত।দীপ্তের গরম নিঃশ্বাস গোধূলির ঘাড়ে পড়ছে।গোধূলি আঁতকে উঠে ওর জামাটা শক্ত করে মুঠি করে ধরে নেয়।দীপ্তের নিঃশ্বাস ক্রমশ ওর আরো কাছাকাছি মনে হতো লাগলো।গোধূলি লজ্জা আর ভয়ে কুঁকড়ে গেলো।চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিয়েছে।দীপ্ত গোধূলি অবস্থা দেখে ঠোঁট টিপে মুচকি হাসি দিয়ে গোধূলির দিকে ঝুকে যায়!দীপ্তের ঠোঁট গোধূলির কান প্রায় ছুঁইছুঁই!দীপ্ত গোধূলির কানে কানে ফিসফিস করে বলে,
– গানটা সত্যিই খুব ভালো হয়েছে!
চোখ বুজে স্ট্যাচুর হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল গোধূলি।দীপ্তের গলার স্বর কানে যেতেই চোখ খুলে খুব ধীর গতিতে পিছনে ফিরে।গোধূলি পিছনে ফিরতেই দীপ্ত কিছুটা দূরত্বে চলে যায়। ঠোঁটের আগায় হাসি ফুটিয়ে প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে হুইসেল দিতে দিতে ছাদ থেকে চলে যায়।
#চলবে………
.