নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:৩০(২য় খন্ড)
সাদের মুখে এমন কথা শুনে ভাবনার জগৎ থেকে হুমড়ি খেয়ে পড়লো সাজি। ঘাবড়ে গিয়ে সাদের দিকে তাকালো। সাদের মুখায়বব স্বভাবিক। না বিষ্ময় প্রকাশ পাচ্ছে, না রাগ প্রকাশ পাচ্ছে।সাজি মনে মনে ভয়ে কুঁ*ক*ড়ে গেলো। হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। স্যারকে দেখে সাদ ভাই ভুল বুঝলো নাতো? সাজির মনে মনে এই প্রশ্ন সাত-আটবার আওড়ালো।
সাদ সাজির মুখোমুখি দাঁড়ালো।বুক ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নিয়ে সাজির মুখের উপর লেপ্টে থাকা ভেজা চুল গুলো আলগোছে কানের পেছনে গুঁজে দিলো। সাজি ভীতু চোখে সাদের দিকে তাকালো। নিজেকে কেমন অপরাধী মনে হচ্ছে।সব দোষ ওই বেটা স্যারের। তার জন্যই আমার ছোট্ট হৃদয়ের পানি শুকিয়ে সাহারা মরুভূমি হচ্ছে।
সাদ যেন সাজির মনের কথা বুঝে ফেললো।সাদ সাজির হাত ধরে নিজের সঙ্গে নিয়ে যেতে যেতে বললো,, পছন্দ-ও করবে,ভালোবাসতেও শুরু করবে এইটাতে খারাপের কিছু নেই। শুধু তুই না বাসলেই হবে।
সাদের কথা শুনে সাজি মুখ বাঁকিয়ে বললো,, আমার এতো বাসাবাসির দরকার নেই। এমনিতেই ভালো আছি। রইলো স্যারের কথা, আপনার নিশ্চয়ই কোথাও ভুল হচ্ছে। স্যার আর পছন্দ? পড়ালেখা ছাড়া দু’কথা কারো সাথে বলে না। গম্ভীর মুখে থাকে সারাক্ষণ,হাসি বোধহয় বাপের জন্মেও কেউ দেখেনি। নেহাত ভার্সিটির ভেতরে আছি দেখে আন্দাজ করে স্টুডেন্ট বলেছে ,তা না হলে আমাকে চেনা তো দুরের কথা নাম ওবদি জানে না।
~ অবশ্যই চেনে। তার চোখ বলছে সে তোকে খুব ভালো করেই চেনে।
সাজি চোখ ছোট ছোট করে বললো,, বাইদা ওয়ে আপনি ইনসিকিউর ফিল করছেন নাতো?
সাদ সাজির কথা শুনে মুচকি হেসে বলল,, ইনসিকিউর ফিল করবো কেন? তাছাড়া তোকে ভালোবেসে উ*ল্টিয়ে ফেললেও তোর মো*টা মাথায় সেটা ঢুকবেনা। যেখানে এতো বছর আমাকে সামনে দেখেও বুঝিসনি সেখানে কয়েকঘণ্টায় স্যারের ভালোবাসা কি করে বুঝবি?
সাজি ঠোঁট ফুলিয়ে সাদের হাত টেনে ধরে বললো,, একেতো আপনার ভেতর কোনো প্রকার ইনসিকিউর ফিল দেখছি না। তারউপর এতোবড় অপ*মান ?
সাজির কথা শুনে মুচকি হাসলো সাদ। একপাক্ষিক ভালোবাসা দেখে ইনসিকিউর ফিল করার কিছুই দেখছে না সাদ। এই নিরাপত্তাহীনতা-ই সন্দেহ সৃষ্টি করে। যা তৃতীয় পক্ষের আগমন নিশ্চিত করে সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়।সাদ জানে সাজি তাকে ঠিক কতটা ভালোবাসে। যার ফলে ইনসিকিউর শব্দটা সাদের কাছে ভিত্তিহীন বলে মনে হয়।সাদ মৃদু হেসে বলল, অ*পমান না অভিযোগ তা নাহয় পরে বলবো। এখন দেখ বাইরে কিসুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে।
সাজি সাদের কথা অনুসরণ করে বাইরে তাকালো। বছরের প্রথম বৃষ্টি তাও মুষলধারে হচ্ছে। সাজি হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানি নিয়ে সাদের দিকে ছু*ড়ে মা*র*লো। সাদ হকচকিয়ে যেতেই খিল খিল করে হেসে উঠলো সাজি।
সাদে চোখে বিষ্ময় কে*টে মুগ্ধতা ছেয়ে গেলো।সাজির হাসির শব্দ যেন সমস্ত হৃদয় জুড়ে খনে খনে ঝংকার তুলছে। সাদ সাজির হাতটা শক্ত করে ধরে আদুরে গলায় সুধালো,, ভিজবি সাজঁবাতি?
সাদের এহেন কথায় থমকালো সাজি। বোবা চোখে সাদের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ালো।
সাদ সাজির হাত ধরে বাইরে পা বাড়ায়। সাজি সাদের পায়ে পা মিলিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো। বৃষ্টির জল দুজন ভিজে টইটম্বুর হয়ে গেছে। আশেপাশে কেউ না থাকলেও দোতলা আর তিনতলা ভবনের দাঁড়িয়ে থাকা কিছু স্টুডেন্ট সাদ আর সাজিকে দেখে হই হই করে উঠলো। সাদ সেই দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে সাজির হাত আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরলো। মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলে এই বুঝি পালিয়ে যাবে। অতঃপর দ্রুত পায়ে হেঁটে গাড়ির দিকে গেল।
সাদ গাড়ির দরজা খুলে সাজিকে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লো। গাড়ি স্ট্রার্ট দিয়ে গন্তব্যহীন পথে ছুটে চললো।
নির্জন রাস্তায় গাড়ি থামালো সাদ। এই রাস্তায় গাড়ির দেখা পাওয়াটা প্রায় স্বপ্নের মতো। ঘন্টায় একটা গাড়ি পার হয় কিনা সন্দেহ। অনেক সময় ঘন্টা পেরোয় কিন্তু গাড়ি পেরোয় না।
সাদ গাড়ি থেকে নেমে সাজির পাশের দরজা খুলে দিল। সাজি সাদের হাত ধরে নেমে ,চঞ্চলা চোখ দুটো দিয়ে আশপাশ অবলোকন করায় ব্যাস্ত হলেও সাদ সাজিতে ব্যাস্ত।সাজি হাত ছেড়ে সামনে যেতেই সাজির চুল খুলে দিলো সাদ। সাজি অবাক চোখে তাকায়, যা দেখে সাদ মুচকি হেসে বললো,, এইবার মনে হচ্ছে বৃষ্টি কন্যা।
সাদের এহেন কথায় লজ্জায় কুঁ*ক*ড়ে গেলো সাজি। গালের দুপাশ লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে ততক্ষণে।
সাদ গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,, ভ’য়ং’ক’র অ*সুখ বাঁধিয়ে দেওয়ার জন্য বৃষ্টিতে ভেজা তুমিকি কম ছিলে? এখন আবার লজ্জায় রাঙা হয়ে খু’ন করতে চাইছো!
মেয়ে তুমি বড্ডো বেশি জ্বা*লা*চ্ছো।
ইনশাআল্লাহ চলবে,,,
বিঃদ্রঃ বিচ্ছেদ ছাড়াও অনেক সময় সম্পর্কে তৃতীয় ব্যাক্তির সংজ্ঞা সুন্দর হয়।
(ভুল গুলো সুধরে দিবেন।)নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:৩১
বর্ষা মৌসুমে গ্ৰাম আর শহরের বেড়ে উঠা মানুষ গুলোর মধ্যকার পার্থক্য বেশি দেখা যায়। গ্ৰামে সকলেই বৃষ্টিতে ভিজে নিজেদের কাজ করে থাকে। বাচ্চারা দল বেঁধে বৃষ্টির পানিতে ভিজে শৈশবের মজা নেয় । একঝাঁক কিশোর কিশোরী বৈশাখী ঝড় মাথায় নিয়ে আম কুড়াতে নামে।
সেখানে শহুরে জীবন ভিন্ন ধারার অতিবাহিত হয়। বৃষ্টি নিয়ে তাদের যত রোমান্টিক মূহূর্ত রচনা করা হলেও বৃষ্টির সাথে তাদের সম্পর্ক দূর দূরান্তের। বৃষ্টির পানি গায়ে পড়লে অসুস্থ হয়ে যাবে বলে অনেকেই বৃষ্টিতে ভেজে না। আবার কেউ কেউ আছে দু’ফোটা বৃষ্টির জল মাথায় পড়লে জ্বর বাঁধিয়ে বসে। বৃষ্টিতে ভিজলে তো কথাই নেই। সপ্তাহখানেক জ্বর আর বিছানায় সাথে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে তাদের।
সাদ সেই শহুরে মানুষের মধ্যে একজন হলেও সাজি ভিন্ন ধারার। বৃষ্টিতে ভেজার আজ নিয়ে চতুর্থতম দিন হলো।এই চার দিনে সাদকে জ্বর কাবু করে ফেলেছে। নাম মাত্র বিছানা থেকে উঠেছে সাদ। সেখানে সাজি নিয়ম করে ভার্সিটির সব কটা ক্লাস এটেন্ড করেছে। সাজির কাছে বৃষ্টি মানে ভালোবাসা। ছোট থেকেই লুকিয়ে চুরিয়ে বৃষ্টির জল গায়ে মাখে সাজি। বৃষ্টির সাথে সুসম্পর্ক থাকায় বৃষ্টির জল তাকে কাবু করতে পারেনি। অন্যথায় সাদের অবস্থা সাজির বিপরীত। জ্বরে চোখ মুখ লাল হয়ে বিছানায় প*রে আছে সাদ।
এই চারদিনে অনিলা রহমান হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। ছেলে তার হাতে পায়ে বড় হয়েছে । তা না হলে এখনো সেই ছোট্ট সাদ-ই আছে। যে জ্বর হলে মায়ের আঁচল ধরে ফিকরে কেঁদে দুনিয়ার যত লুকানো কথা সব উগলে দেয়। আজও তার ভিন্ন কিছু হলো না। মায়ের কোলে মাথা দিয়ে ফিকরে কেঁদে উঠলো সাদ। এতো বড় ছেলের কান্নায় হা হুতাশ করে উঠলো অনিলা। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে চোখের পানি মুছে দিলো। কপালে স্নেহের পরশ বুলিয়ে বললো,, কি হয়েছে বাবা ?বেশি খারাপ লাগছে? রায়হানকে কল দিয়ে আসতে বলি? রায়হান এলে না হয় হাসপাতালে নিয়ে যাবো।
মায়ের কথা শুনে হাত চেপে ধরলো সাদ। জ্বরে কম্পিত গলায় বলল,, সাজিকে ডেকে দাও মা। মেয়েটা বড্ডো বেশি জ্বা*লাচ্ছে। ছেলের কথায় মুচকি হাসলো অনিলা। আজ ওবদি সাজি জানে না সাদের অসুখের কথা। সাদ নিজেই বলতে বারন করেছে। কিন্তু আজ হঠাৎ কি হলো? ছেলের মাথায় কি চলছে ভেবে পায় না অনিলা। এই চারদিনে সাজিকে নিয়ে কতোশত কথা বলেছে তার হিসাব নেই। এমন কোনো কথা নেই যা সাজিকে নিয়ে সাদ বলেনি। সাজিকে পছন্দ করা থেকে শুরু করে আজ ওবদি সব কিছুই এই জ্বরের ঘোরে উগলে দিয়েছে সাদ। অনিলা দুঃখ প্রকাশ করবে, না খুশি হবে সেটাই বুঝতে পারছে না।
সাদকে বিছানায় শুইয়ে উঠে পড়লো অনিলা। মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে প্রথমে সেঁজুতিকে কল দিলো। সেঁজুতির সাথে কথা বলে জানতে পারলো সাজি ভার্সিটিতে গেছে। অনিলা সেঁজুতিকে সাজির কথা বলাতে সেঁজুতি অমত পোষন করলো না। বরং অনুমতি সহ দুইদিন রেখে দিতে বললো। সেঁজুতির কথা শুনে মুচকি হেসে ফোন কা*টলো অনিলা।
আজ ভার্সিটিতে শুধু দুটো ক্লাস ছিলো। একটা ক্লাস শেষ হতেই বেরিয়ে পড়লো সাজি। পরের ক্লাসটা রিসাদ স্যার নিবে। এই চারদিনে রিসাদ স্যারের হাবভাব ভালো লাগছেনা সাজির কাছে। পুরো ক্লাস জুড়ে সাজিকে একটু বেশি প্রায়োরিটি দিচ্ছে। যা সবার চোখে পড়ছে। বিষয়টা নিয়ে ক্লাসে সবাই কানাঘুষা শুরু করছে। অন্যদিন হলে সব শুনে চুপ করে থাকতো সাজি। কিন্তু আজ সাজির মন ভীষণ খারাপ। সেই দিনের পর থেকে একটা বারের জন্যেও সাদ ভাইকে দেখতে পায়নি সাজি।কল দিয়ে খোঁজ নেওয়া তো দূরের কথা , উল্টো যতবার কল দিয়েছে ততবারই ফোন কেটে দিয়েছে সাদ। অভিমানে বুকটা ভারি হলো সাজির। ইতিমধ্যে চোখ জোড়া ভিজে উঠলো।
তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে চোখ মুছলো সাজি। মোবাইল বের করে ড্রাইভারে নাম্বার কল দিবে তার আগেই মোবাইল ফোন বেজে উঠলো। ভিজে উঠা চোখ জোড়ার ঝাঁপসা দৃষ্টি মোবাইল স্ক্রীনে রাখলো। গোটা গোটা অক্ষরে ” ফুপ্পি” লেখা নামটা দেখেই চমকালো সাজি। মনের মধ্যে হাজরো প্রশ্নের জটলা পাকিয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা ফুপ্পির নাম্বার থেকে সাদ ভাই কল দেয়নি তো? নাকি ফুপ্পিকে সাদ ভাই সব বলে দিয়েছে? ভয়ে ভয়ে পুরো শরীর শিউরে উঠলো সাজির। সাদের সাথে সম্পর্কটা অন্য দিকে মোড় নেওয়ার পর থেকে ফুপ্পি শব্দটাকে ভয় পেতে শুরু করেছে সাজি। সব কিছু জানার পর ফুপ্পির সাথে সম্পর্কটা ঠিক আগের মতো থাকবে কিনা সেটা নিয়েই বেশি ভয় হচ্ছে সাজির।
কল একবার কেটে দ্বিতীয়বার বেজে উঠলো। সাজি ভয়ে ভয়ে কল রিসিভ করে কানে চেপে ধরলো।
অনিলা রহমান কোমলমতি গলায় হ্যালো বলতেই সাজি নিম্নস্বরে সালাম দিলো। অনিলা রহমান সাজির গলার স্বর শুনেই বুঝতে পারে সাজি ভালো নেই। অন্য দিনের মতো গলায় সেই চঞ্চল ভাবটা নেই। কেমন জানি মিইয়ে গেছে। এর কারনটা যে তার একমাত্র ছেলে তা বুঝতে বাকি রইলো না।
অনিলা রহমান সালামের উত্তর দিয়ে বললো,, সাজিঁ মা! ফুপ্পি তোর জন্য গাড়ি পাঠিয়েছি। ক্লাস শেষে সোজা আমাদের বাড়িতে চলে আসবি। আর হ্যা! তোর মাকে নিয়ে কোনো টেনশন করবি না, আমি বলে দিয়েছি তোর কথা। ঠিক আছে?
হঠাৎ করে ফুপ্পি তার বাড়ি যেতে বলছে। ব্যাপারটা ঠিক বুঝে উঠলো না সাজি। কি এমন কাজ হতে পারে? সাজির চিন্তা ভাবনার মাঝে অনিলা রহমান পুনরায় বলে উঠলো,, কি হলো কথা বলছিস না কেন মা?
অনিলার কথায় ধ্যাণ ভাঙ্গলো সাজির। তড়িগড়ি করে বলে উঠল,, ঠিক আছে ফুপ্পি। আমার ক্লাস শেষ গাড়ি এলেই আমি বেরিয়ে পড়বো।
~ এতক্ষণে হয়তো গাড়ি পৌঁছে গেছে। তুই বরং গেইটের কাছে গিয়ে দাড়া। সাবধানে আসিস। আল্লাহ হাফেজ।
সাজিঁ অনিলাকে সালাম দিয়ে ফোন রেখে দিল। সাজি অন্য মনস্ক হয়ে ধীর পায়ে হেঁটে গেইটের কাছে যেতে লাগলো । সাদের প্রতি ভীষণ অভিমান হলো। একটা বার কল দিলে কি হতো? কল বাদ একটা মেসেজ তো দিতে পারতো? বুক চি*রে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে এলো। টে*নে নিঃশ্বাস নিয়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা চালালো সাজি,ইতিমধ্যে গলা ব্যাথ্যাও শুরু গেছে।কারো সহানুভূতি পূর্ণ হাত মাথায় রাখলে হয়তো কেঁদে ভাসাবে।
যতক্ষনে সাজি গেইটের সামনে গিয়ে পৌঁছায় ততক্ষণে সাদের গাড়িটাও এসে থামে। ড্রাইভার দরজা খুলে দিতেই সাজি গিয়ে বসে পড়ে। সাদের গাড়ির ব্যাকসিটে শুধু একবার বসেছিল সাজি। তাও সাদের সাথে,সেই দিন ঘুমের ঘোরে সাদ তাকে ভালোবাসার কথা কনফেস করে দেয়।গা শিরশির করা অনূভুতি হয়েছিল তখন। হৃৎপিণ্ড আন্দোলিত হয়ে বলেছিলো,সাজি সাদ ভাই নামক মানুষটা তোকে সত্যি ভালোবাসে”। অন্য দিকে মস্তিষ্ক জুড়ে একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছিল, যা শুনেছে হয়তো তা মনের ভুল।
অবশেষে সাজির মন জয়ী হয়েছে। মনের কথাই ঠিক। সাদ ভাই নামক মানুষটা সত্যি তাকে ভালোবাসে।সেই কথা ভেবে মুচকি হাসলো সাজি।
সময় যে কতো দ্রুত অতিবাহিত হয়! মনে হচ্ছে এই তো সেই দিনকার ঘটনা। কিন্তু সেই ঘটনার প্রায় দেড় বছর হতে চলল। জানালার কাঁচ নামিয়ে চোখ বুজে নিলো সাজি। বাতাসের ঝাপটায় চুল গুলো এলোমেলো হতে লাগলো। সেই দিকে সাজির কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সাজি এখন তার কল্পনার জগত নিয়ে মত্ত। অভিযোগ, অভিমান ভরা কল্পনা জগৎ ।যা শুধুই সাদময়।
ইনশাআল্লাহ চলবে,,
(ভুল গুলো সুধরে দিবেন। গল্প না দিতে পারার জন্য দুঃখিত। আজকের পর্বটাও ভীষণ খাপছাড়া হয়েছে।আসলে লেখার মতো ওইরকম স্পেস পাচ্ছি না। পুরো মাথা শূন্য শূন্য লাগছে।)নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:৩২
গেইটের সামনে গাড়ি থামতে নেমে পড়ে সাজি। গুটি গুটি পায়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকলো। অনিলা রহমান এতক্ষণ সাজির অপেক্ষাতেই ছিলো। বাড়িতে ঢোকা মাত্র পানির গ্লাসটা সাজির দিকে বাড়িয়ে দেয়। সাজি মুচকি হেসে গ্লাস হাতে নিয়ে অনিলাকে জড়িয়ে ধরে। অনিলা রহমান স্মিত হেসে বললো,, অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছিস মা।যা রুমে যা। আমার রুমে তোর জন্য ড্রেস রাখা আছে, গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নে।পরে কথা হবে।
ফুপ্পির কথায় মাথা নেড়ে রুমের দিকে অগ্রসর হলো সাজি। অনিলা রহমান মুচকি হেসে কিচেনের দিকে ছুটলো। তিনি জানে সাজি আর যাই করুক রেষ্ট নিবে এমন মেয়ে নয়। তার ওপর ছেলে যা গন্ডগোল করেছে। রেষ্ট নিবে না বরং উল্টো পাল্টা বুদ্ধি খাটিয়ে ছেলের পেছনে লাগবে।
একেবারে শাওয়ার নিয়েই বের হলো সাজি। ফুপ্পির দেওয়া থ্রিপিস পরে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। সাদা-সবুজ কম্বিনেশনের থ্রিপিস। আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিজেই নিজেকে বলে উঠল,, নাহ বা*জে লাগছে না। বরং ভালোই লাগছে।
টাওয়েল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে রুম থেকে বেরোয় সাজি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো। সবে মাত্র বারোটা, এখন নিশ্চয়ই সাদ ভাই ভীষণ ব্যাস্ত থাকবে! এই ব্যাস্ততার ভিড়ে আমি কি কোথাও নেই? একটা কল , একটা মেসেজ দিলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেত? নিজেকে নিজে সুধালো সাজি।
পাহাড় সমান অভিমান নিয়ে ধীর পায়ে সাদের রুমের দিকে এগোও। কি আছে এই রুমে?যার জন্য কেউ এই রুমে ঢুকলেই সাদ ভাই রেগে যায়? এই ঘরটা ফুপ্পি ছাড়া আর সবার জন্য ব্যান করা। ক্লাস এইটের বছর পরীক্ষা শেষে সাজি এই বাড়িতে বেড়াতে আসে। তখনই ভুল ক্রমে সাদের রুমে ঢুকে পড়ে। রুমে গিয়ে ক্ষান্ত হয়নি সাজি বরং সাদের খুব প্রিয় ট্রফি ভে*ঙ্গে গু*ড়িয়ে দেয়। সাদ ভীষণ রেগে যায়। এতোটাই রেগে যায় যে ,সাদ সেই দিন প্রথম সাজির গালে ক*ষে চ*ড় মারে।
সেইদিনের থা*প্প*ড়ের কথা মনে পড়তেই আপনা আপনি হাতটা গালে চলে গেলো।ওই দিনের পর থেকে সাদ ভাইকে জমের মত ভয় পায় সাজি। ঢোক গিলে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে গেল। রুমে ঢুকবে কি ঢুকবেনা ভাবতে ভাবতে দিশেহারা । এই লোকের বিশ্বাস নেই ধরা খেলে এইবার গায়ের সর্ব শক্তি দিয়ে থা*প্প*ড় মা*রবে।নাহ যাওয়ার দরকার নেই।
সর্বোপরি মানব জাতির একটাই দোষ। যেটার জন্য মানা করা হয় ,সেটার প্রতি কৌতুহল একটু বেশিই থাকে। সাজিও তার ব্যাতিক্রম নয়।মনে মনে দোয়া দরুদ পড়ে নিলো।হুহ এখন আর সাদ ভাইকে থোড়াই না ভয় পায়! কিছু বলতে আসুক সোজা সুজি ব্রেকাপ করে দিবো।
একবুক সাহস সঞ্চার করে ভীড়ানো দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলে হড়বড়িয়ে রুমের ভেতর ঢুকে পড়লো। ফলস্বরূপ খাটের সাথে পায়ের আঙ্গুলের সংঘর্ষ। ব্যাথ্যায় চোখ মুখ কুঁচকে আর্তনাদ করে উঠলো সাজি। পুরো রুম ঘুটঘুটে অন্ধকার।দিনের বারোটা নয় দেখে মনে হচ্ছে রাত বারোটা।
এতক্ষণে ঘরের ভেতরে অবস্থা টের পেলো ।এমন পরিবেশ দেখে ঘাবড়ালো সাজি!একেতো অন্ধকার দ্বিতীয়ত রুমের টেম্পারেচার ভুতুড়ে টাইপের হিমশীতল। নিজেকে কেমন লা*শ ঘরের বাসিন্দা মনে হচ্ছে। থেমে থাকা পা জুগল বাড়ানোর সাথে সাথে হাত টান পড়লো। আকস্মিক ঘটনায় টাল সামলাতে না পেরে বিছানায় হুমড়ি খেয়ে পড়লো সাজি ।
আচম্বিত হলো সাজি। আচমকা এমন হওয়াতে হৃৎপিণ্ড কেঁপে উঠলো, অজানা ভয়ে হাত-পা অসাড় হয়ে আসছে।মুখ থেকে কথা ওবদি বের হচ্ছে না। অনেকেই বলে যে ঘরে জিন ভুত থাকে সেই ঘরটা এমনই হয়। বাই এনি চান্স সাদ ভাই এমন কিছু সঙ্গে নিয়ে থাকে না তো? ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে যতক্ষনে উঠার কথা ভাবলো ততক্ষণে দুটো শক্ত পোক্ত হাত তাকে ব্লাঙ্কেটের ভেতরে মুড়িয়ে নিলো। দ*মব*ন্ধ কর পরিস্থিতিতে মুচড়া মুচড়ি শুধু করে দিলো সাজি।এমন সময় ভরাট কন্ঠে সাদ বলে উঠলো,, শুধু শুধু শক্তি অপচয় করছিস। যতক্ষন না আমি নিজের ইচ্ছায় ছাড়বো ততক্ষন ওবদি এই ভাবে থাকতে হবে। বিশ্বাস না হলে চেষ্টা করে দেখ।
সাদের কন্ঠস্বর কর্ণগোচর হতেই থামকালো সাজিঁ। বুকের ভেতরটা ধক করে উঠল। জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে একদম স্থীর হয়ে গেলো। সাদ হাত বাড়িয়ে মোবাইল ফোন খুঁজে ফ্লাশ লাইট অন করে বিছানার এক কোণে ছুঁড়ে মা*রলো।
জমাট বাঁধা অভিমান চোখের কোণে ভীড় জমাতে শুরু করলো। দুফোঁটা অভিমান গড়িয়ে পড়তেই কেঁপে কেঁপে উঠছে শরীর। অভিমান যেন বাড়ছে ব-ই কমছে না। বাড়িতে আছে তাও একটা বার কল দিলো না? আছি ,নাকি ম*রে গেছি তা জিজ্ঞেস করার জন্যেও তো মানুষ একটা কল দেয়। একটা কল দেওয়ার সময় হয়নি তার। চোখের জল বাঁধ ভাঙার মতো করে গড়িয়ে পড়ছে। লম্বা নিঃশ্বাস টেনে নিজেকে ধাতস্থ করলো সাজি।রাশ ভারী গলায় সাদকে উদ্দেশ্য করে বলল,, ছাড়ুন! আমি বাইরে যাবো।
সাজির কথায় অভিমানের ছাপ স্পষ্ট।সেই অভিমান বুঝতে পেরে মুচকি হাসলো সাদ। প্রনয়ীনির অভিমান ভাঙ্গাতে প্রেমিক মন সব সময় উদ্যত।সেই সুবাদে সাজিকে ছাড়লো না। বরং সাজিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ব্লাঙ্কেটের ভেতরে টেনে নিলো। দুহাত বাড়িয়ে নিবিড় ভাবে বুকে জড়িয়ে নিলো।
সাদের শরীরের উত্তাপ এতোটাই বেশি সাজি যেন ঝ*ল*সে যাওয়ার জোগাড়।
সাদ গম্ভীর গলায় বললো,, তুই তো কটন ক্যান্ডির মতো দেখছি।একদম তুলতুলে,সত্যি করে বলতো কি খাস তুই? ভাত ছেড়ে তিনবেলা নিয়ম করে কটন ক্যান্ডি খাচ্ছিস নাতো?
সাদের কোনো কথাই যেন সাজির কান ওবদি পৌছালো না।সাদের শরীরের অস্বাভাবিক তাপমাত্রা নিয়ে চিন্তিত সাজি। নড়ে চড়ে উঠে ব্যাতি ব্যাস্ত হয়ে বললো,, আপনার শরীর এতো গরম কেন?কি হয়েছে আপনার?
সাজি হাত বাড়িয়ে সাদের গালে হাত রাখলো।সাদ ঈষৎ আলোতে সাজির অশ্রুসিক্ত চিন্তিত মুখায়বব এর দিকে তাকিয়ে বলল,তেমন কিছু না। একটু জ্বর হয়েছে। চোখ পা*কা*লো সাজি। রাগান্বিত হয়ে শা*ষণে সুরে বলল,, একটু জ্বর? এই আপনার মা*থা ঠিক আছে? আপনার শরীরের উত্তাপ এতোটাই বেশি আমার গা জ্ব*ল*ছে রীতিমত। আপনি বলছেন একটু জ্বর?এতো জ্বর কখন বাধিয়েছেন?
সাজির অধিকার বোধ দেখে সাদ মুচকি হেসে বলল,, তুই জেনে কি করবি?আমার জ্বর হলে তোর কি? তুইতো রেগে আছিস। অভিমানের পাহাড় জমিয়ে রেখেছিস। আমার পাশে থাকতেই চাইছিস না।
সাদের কথা শুনে সাজি ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বললো,, রাগ ,অভিমান করার মতো যথেষ্ট কারন কি ছিলো না সাদ ভাই?চার চারটা দিন পার হলো। না কোনো ফোন কলস্,না কোনো মেসেজ। রেগে থাকাটাই স্বাভাবিক।
সাদ সাজির গালে হাত ছুঁইয়ে দুর্বল গলায় বললো,, বৃষ্টিতে ভিজার পর থেকেই জ্বর। তুই চিন্তা করবি দেখে তোকে বলতে চাইনি। মেসেজ কল সবাইটা সেইজন্য ইগনোর করেছি। কিন্তু আজ তোকে খুব বেশি দেখতে ইচ্ছে করছিলো সাজঁবাতি। একটু থাকনা পাশে!
সাদের এমন আবদারে চোখ জোড়া ছলছল করে উঠলো। চোখের কোন বেয়ে নোনা গড়িয়ে পড়ার আগেই মুছে দিলো সাদ। আলতো করে সাজির মাথায় হাত বুলিয়ে কোমলমতি গলায় বলল,, এই কটা দিন ঠিক করে ঘুমাতে পারিনি সাজঁবাতি। একদাম নড়বিনা আমি এখন ঘুমাবো।
সাজি কিছু বলবে তার আগেই সাজির গলায় মুখ গুঁজে চোখ বুঝলো সাদ। কেঁপে উঠলো সাজি, দ্বি*ধা সংকোচ নিয়ে মিনমিনে গলায় বলল,, ফুপ্পি দেখলে কি ভাববে? উঠুন সাদ ভাই! হয়তো ফুপ্পি আমাকে খুঁজছে।
সাদ সাজির গলায় মুখ গুঁজে রেখে বললো,,মা তোকে মোটেও খুঁজছে না। মা জানে তুই এখন তার একমাত্র ছেলের কাছে আছিস।সো নো মোর ওয়ার্ডস্!
সাদের কথা শুনে থমকালো সাজি। ফুপ্পি জানে আমি এইখানে আছি? কি ভাবছেন উনি?
সাজি সাদকে জিজ্ঞেস করতে চেয়েও চুপ হয়ে গেল। সাদের তপ্ত নিঃশ্বাস সাজির ঘাড়ে আ*চ*ড়ে পড়ছে। নিঃশ্বাসের শব্দ জানান দিচ্ছে সাদ ঘুমিয়ে পড়েছে। ভেপশা গরমে অস্থির হয়ে উঠলো সাজি তাও নড়লো না। কিছুটা সময় অতিবাহিত হতে ধীরস্থির ভাবে সাদ থেকে সরে আসলো। ঈষৎ আলোতে সাদের মুখায়বব স্পষ্ট। মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে। চোখ নিচে কালসিটে দা*গ পড়ে গেছে। গুছিয়ে রাখা চুল গুলো ভীষণ এলোমেলো ঠেকছে। সাদের গালে হাত ছুঁইয়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো সাজিঁ।এতো রাগ অভিমান করে লাভ কি হলো? এই মানুষটার সামনে সব সময় রাগ অভিমান ফিকে পড়ে। কেমন করে জানি মূহুর্তে সকল রাগ, অভিমান বিলীন করে দেয়।সাদের এলোমেলো চুল গুলো গুছিয়ে দিলো সাজি।কিছু সময় সাদের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে তার তপ্ত কপালে অধর ছোয়ালো।ঘুমে বিভোর হয়ে থাকায় টের পেলো না সাদ।ঘুম তার সুন্দরতম অনূভুতি লুফে নিতে দিলো না। অজানা রইলো এই আদুরে পরশ।
রুম ছেড়ে বের হতেই অনিলার সমনে পড়লো সাজি। ফুপ্পিকে দেখে ঘাবড়ে গেল । যার দরুন ভয়ে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। কি বলবে ঠিক ভাবে পাচ্ছে না। অনিলা রহমান সাজির ব্যাপরাটা বুঝতে পেরে বললো,, দেখেছিস মা! বে*য়া*দ*বটা কেমন জ্বর বাধিয়েছে? এই চার চারটা দিন আমার হাড় মাংস জ্বা*লি*য়ে খেলো। না ডাক্তার দেখাতে যেতে চাইছে,না ডাক্তার আনতে দিচ্ছে। এইভাবে চলতে থাকলে বড় কোনো অ*সুখ বাঁধিয়ে ফেলবে।
অনিলার কথার ধরনে সাজি স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে বললো,, ডাক্তার দেখাতে কি সমস্যা ফুপ্পি?
অনিলা রহমান মুখ টিপে হেসে বলল, এইটা টপ সিক্রেট! আমার রাগী ছেলেটা ছোট বেলা থেকেই সুই ভয় পায়।হাত কা*টে গেলেও টু শব্দ করবে না। কিন্তু ইনজেকশন দেখলেই অ*ব*স্থা খারাপ হয়ে যায়। অনিলা রহমানের কথা শুনে খিল খিল করে হেসে উঠলো সাজিঁ। সাদ ভাইয়ের মতো এমন শক্ত পোক্ত মানুষ নাকি ইনজেকশন ভয় পায়? অনিলা রহমান হেসে উঠে বলল,, কি করি বলতো?
সাজি পেট চেপে হাসি আটকানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,, ফুপ্পি আজ আমি আর তুমি সাদ ভাইকে ভয় দেখালে কেমন হবে বলোতো? চলো ডাক্তার ডেকে আনি?অসুখ-ও সেরে যাবে সাথে ভয় দেখানোর কাজটাও হবে।
অনিলা রহমান সাজির কথায় সায় জানিয়ে বললো,, আইডিয়া খারাপ না। তুই বোস আমি রায়হানেকে কল দিয়ে বলি।বিকালেই যেন ডাক্তার নিয়ে আসে।
ঘুম থেকে উঠে পড়েছে সাদ। জ্বর খানিকটা কমেছে।অনিলা রহমান সাদকে জোর পূর্বক ভাত আর ঔষধ খাইয়ে দিল। এর মধ্যে সাদ বার বার সাজির কথা জিজ্ঞেস করে। কিন্তু অনিলার শক্ত পোক্ত উত্তর,” অনেক আগেই চলে গেছে” । এমন কথা শুনে ফুঁসে উঠলো সাদ। দুর্বল হাত জোড়া মুঠ করে দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে বলে উঠলো,, একবার বলেও গেলো না? কি এমন রাজ্যের কাজ পড়েছে? ভীষণ বে*য়া*দব হয়েছে মেয়েটা। সামনে পেলে থা*প্পর মে*রে দাঁত ফে*লে দিবো।
অনিলা রহমান ছেলের মুখের অবস্থা দেখে ভেতরের কথা আন্দাজ করে ফেললো। ভাতের প্লেট হাতে করে বেরিয়ে যেতে নিয়ে আবার ঘুরে দাড়ায়। গম্ভীর গলায় সাদকে উদ্দেশ্য করে বলল,, না রেগে সুন্দর করে বুঝিয়ে বললেই হয়। এমন চলতে থাকলে অন্য কোথাও মেয়েটার বিয়ে দিয়ে দিবো।এমন রাগী ছেলের কাছে কখনোই আমার ভাতিজির বিয়ে দিবো না।
মায়ের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালো সাদ।বিস্মিত কন্ঠে বললো,,আমি তোমার ছেলে মা! তুমি মা হয়ে ছেলের না হওয়া সংসার ভাঙ্গার জন্য উঠে পড়ে লেগেছো?আনভিলিবেবল!!
অনিলা রহমান হাসতে হাসতে বেরিয়ে পড়লো। ছেলেটাকে এইভাবে ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে শা*য়েস্তা করা যাবে না। সাদের মুখটা দেখার মতো ছিলো।
বিকেলে না হতেই রায়হান ডাক্তার নিয়ে হাজির হয়।
সাজি মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে পা টিপে টিপে রাহানের পাশে দাঁড়িয়ে সাদের ইনজেকশন ভয় পাওয়ার ব্যাপারটা জানিয়ে দিলো। রায়হান যেন হাতে চাঁদ পেয়েছে, পৈ*শা*চিক হাঁসি হেঁসে ডাক্তারের দিকে তাকায়।এমন দূর্বলতার খোঁজেই ছিলো রায়হান।
অনিলার রহমান ডাক্তারকে সাদের অসুখের ব্যাপারে জানাচ্ছে। এইদিকে সাজি আর রায়হান যেন অধৈর্য হয়ে পড়েছে। দুইজন পারলে এক্ষুনি ডাক্তারকে উড়িয়ে সাদের রুমে নিয়ে ফে*লে। অনিলা রহমান এই দুইজনের অবস্থা দেখে ডাক্তারকে নিয়ে সাদের রুমের দিকে অগ্রসর হয়।
সাজি আর রায়হান দাঁত কেলিয়ে মোবাইল নিয়ে তাদের পেছন পেছন ছুটলো।
সাদ বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে। শুয়ে থাকতে থাকতে পিঠ ব্যাথ্যা হয়ে গেছে। মোবাইল হাতে নিয়ে রায়হানকে কল দিবে এমন সময় অনিলা রহমান সাদের রুমে ঢুকে পড়ে। সাদ মোবাইল রেখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,, মা তুমি! অনিলা রহমান মুচকি হেসে বলল, শুধু আমি না। সাথে ডাক্তারও আছে।
অনিলা রহমান বলতে বলতে ডাক্তার রুমে প্রবেশ করলো। তার পেছন পেছন সাজি আর রায়হান-ও এলো।
ডাক্তার নাম শুনতেই ঘাবড়ালেও সয়ং ডাক্তার উপস্থিত দেখে পুরো চেহারার রংটাই পাল্টে গেলো সাদের।
এই দিকে রায়হান আর সাজি মিলে সাদের এক্সপ্রেশন রেকোর্ড করছে। দুইজনই সাদকে ভীষণ ভয় পায়।সাদকে জব্দ করার জন্য আজ দুজনের কাছে সুযোগ আছে। এই সুযোগ হাত ছাড়া করতে কেউই রাজি না। তাইতো সাদের অগোচরে ভিডিও রেকর্ড করায় ব্যাস্ত দুজন।
ইনশাআল্লাহ চলবে,,,
(ভুল গুলো সুধরে দিবেন। বড় করে দিয়েছি কিন্তু।আর হ্যা গল্প প্রায় শেষের দিকে। )