দীর্ঘ রজনী পর্ব -৩৭+৩৮

নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:৩৭

শাড়ির আঁচল হাতে পেঁচিয়ে ধরে ফুঁসছে সাজি । দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাক্তির উপর রাগ অভিমান গুলো পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। একবার কল রিসিভ করলে কি হতো? লোকটা একবারও ভাবলো না আমার কি অবস্থা হচ্ছে? ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করলো সাজি। তবুও দুফোঁটা চোখের জল ঠিকই গড়িয়ে পড়লো।
সাদ বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো।সাজি পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে আছে দেখে সাদ দরজা আটকে হেলান দিয়ে দাড়ায়। তখন রেগে ছিলো ঠিকই তবে রাগটা ঠিক সাজির উপর না। রাগটা সাজিকে কেন সুন্দর লাগছে সেই জন্য।সাদ প্রথম থেকেই জানতো সাজি এমন কিছুই করবে। তবে তা যে এইভাবে করবে জানা ছিলো না। সাদ মৃদু হেসে বলে উঠলো,, কি হয়েছে এইভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? এইদিকে আয়!
না প্রশ্নের জবাব দিলো সাজি ,না এগিয়ে এলো। বরং আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে ফুসতে লাগলো। যখন কল ইগনোর করেছে তখন মনে ছিল না! এখন কেন এসেছে?এই লোকের সাথে কোনো কথা নেই। থাকুন সে নিজের মতো।সাজি তার সিদ্ধান্তে অটল। সাদের কোনো কথার জবাব সে দিবে না।

সাজির এমন হেঁয়ালিপনা দেখ সাদ অবাক হলো। প্রিয়তমার রাগকি বেশি হয়ে গেছে?নাকি অভিমান ভারী হয়ে উঠেছে বুঝে উঠলো না সাদ। তাই চেহারার যথেষ্ট গাম্ভীর্য এনে সাজির সামনে গিয়ে দাড়ায়। সাজি মাথা নিচু করে আছে।সাদ ভ্রু কুঁচকে নিরেট স্বরে বলল,, তোর কতো বড় সাহস তুই এইভাবে ওই বাঁদরের সামনে গিয়েছিস? অনুমতি নিয়েছিস আমার?
সাদের কথা যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করলো। সাজি ফুঁসে উঠে সাদের দিকে তাকায়।
সাদ সাজির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। দুগাল লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে,কাজল ছড়ানো চোখ দুটো ঈষৎ লাল বর্ন ধারন করেছে।দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভীষণ রেগে আছে।
সাজি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,, আপনার মোবাইল কোথায়? সাদ হাত উঠিয়ে মোবাইল দেখিয়ে বলল,,এইতো!
সাজি সাদের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে আনলক করে কললিষ্ট দেখিয়ে বলল, কয়েকটা মিসড্ কল দেখুন তো?
সাদ মোবাইল স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে বলল,, ২০৮টা।সাজি টেনে নিঃশ্বাস নিয়ে ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে বললো,, আমি মজা করে দেইনি সাদ ভাই।এক একটা কল কতোটা অসহায়ত্ব নিয়ে দিয়েছি জানেন? একবারও মনে হয়নি রিসিভ করা উচিৎ ছিলো? একটা বার মনে হয়নি ওপাশের মানুষটা ঠিক কতোটা আশা নিয়ে আপনাকে লাগাতার কল করে যাচ্ছে? একবার মনে হয়নি আপনাকে আমার প্রয়োজন হতে পারে? অনুমতির কথা বলছেন? কার কাছ থেকে নিবো অনুমতি?
সাদ সাজির গালে আলতো করে হাত রেখে বলল, স্যরি সাজঁবাতি। মোবাইল সাইলেন্ট ছিলো তাই দেখিনি।
সাজি ঝাড়া দিয়ে সাদের হাত ছাড়িয়ে নিলো। সাদ অবাক হয়ে সাজির দিকে তাকিয়ে আছে।আজ প্রথম সাজিকে তার উপর রাখতে দেখছে। সাজি মোবাইলটা আছাড় মেরে ভেঙ্গে চিৎকার করে বলে উঠলো, একদম মিথ্যা কথা বলবেন না। সকাল থেকে দুপুর ওবদি আপনার মোবাইল সাইলেন্ট থাকার কথা নয়। আপনি ইচ্ছে করে এমনটা করেছেন। ইচ্ছে করে আমাকে কাঁদিয়েছেন। সব কিছু ইচ্ছে করে করেছে!সাদ স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। সাজি চোখ মুছে শক্ত গলায় বলল,, ওকে ফাইন! আপনাকে আর বিরক্ত করবো না। যান চলে যান। আ’ম স্যরি আমি আপনাকে কল করে বিরক্ত করেছি। সব কিছুর জন্য স্যরি। সব কিছুর জন্য।
সাজি দুহাতে মুখ ঢেকে অঝোর ধারায় কাঁদছে। সাদ থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে।আজ প্রথম সাজি সাদের উপর রাগ দেখিয়েছে।রাগের চেয়ে অভিমান, অভিযোগ স্পষ্ট।তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছে। সাজিযে এতোটা কষ্ট পাবে তা সাদের কল্পনাতেও নেই। সাদ যেন কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। নিজের উপর নিজের রাগ হচ্ছে। আসলেই তো একবার কল রিসিভ করলে কি হতো? সাদ টেনে নিঃশ্বাস নিয়ে সাজির কাছে গিয়ে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।যে করেই হোক প্রনয়ীনির সকল রাগ অভিমান ভাংতে হবে। সাজি কাঁদতে কাঁদতে সাদকে ধাক্কা দিতে লাগল। সাদ দুরে সরলো না বরং সাজিকে আরেকটু নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু আটলো। সাজি সাদের কোট মুঠ করে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,, চলে যান বলছি! আপনাকে আমার দরকার নেই। চলে যান! আমার কষ্ট হচ্ছে খুব চলে যান আপনি!
সাজি চলে যেতে বলছে ঠিকই, কিন্তু সাদ জানে সাজি তাকে যেতে বলছে না বরং তাকে পাশে চাইছে।সাদ সাজির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,,হুস! আর কাঁদতে হবে না। ভুল আমার ছিল। আমি স্যরি।আর কখনো এমন হবে না।

বেশ কিছুটা সময় পর সাজির কান্নার বেগ কমে এলো। সাদ মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আদুরে গলায় বলল,, এতো কাঁদতে হয়? কেমন চোখ মুখ ফুলে গেছে দেখ?
সাজি হেঁচকি তুলতে তুলতে বললো,, আপনি কেন এমন করলেন সাদ ভাই? যদি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতাম তখন কি করতেন?তখন তো চির জীবনের জন্য আমাকে দেখতে পেতেন না।বকা দেওয়ার জন্যেও কেউ থাকতো না।কেউ এমন অসময়ে ২০৮টা কল দিয়ে বিরক্ত করতো না।
সাজির কথা শেষ করার আগেই সাদ সাজির দুগালে হাত রেখে ব্যাতি ব্যাস্ত হয়ে বললো,, তোর মাথা ঠিক আছে?এইসব আজে বাজে কথা কেন বলছিস? এই বল এইগুলো কেন বলছিস?
সাজি টলোমলো চোখে সাদের দিকে তাকিয়ে বলল,, আর একবার আমাকে ইগনোর করলে সত্যি সত্যি এমন কিছু করে বসবো। সাজির কথা শেষ হতেই সাদ সাজিকে শক্ত করে বুকে চেপে ধরে নরম গলায় বললো,, I promise আমি কখনো এমন করবো না। তাও এইসব বা*জে চিন্তা ধারা মাথায় আনবি না।
সাদের কথা শুনে সাজির রাগ অভিমান সব যেন নিমেষেই হাওয়া হয়ে গেল। সাজি লম্বা শ্বাস টেনে দুহাত দিয়ে সাদের পিঠ জড়িয়ে ধরে বললো,,এমন করলে একশোবার আনবো।

সাজির স্পর্শ আর কথায় সাদ ঠোঁট এলিয়ে হাসলো। সাজ জানে এই মূহুর্ত থেকে রাগ অভিমান শূন্যে গিয়ে ঠেকেছে। সাদ সাজির কপালে চুমু এঁকে বলল,, সময় হোক দেখা যাবে।

সাজি চোখ বুজে বললো,,সময় হবে না। আপনার গার্লফ্রেন্ডের বিয়ের জন্য এসেছে। পাত্র পক্ষের ভীষণ পছন্দ হয়েছে। বিয়ে হয়ে যাবে । আপনি আপাতত দুঃখের গান ডাউনলোড করুন।
সাদ শব্দ করে হেসে উঠে বললো,, তাই? প্রথম পক্ষরা পালিয়েছে। বুঝতেই পারছেন! আমি ছাড়া আপনার গতি নেই।

সাদের কথা শুনে মুখ বাকায় সাজি। যা দেখে সাদ নিজেকে সাজি থেকে ছাড়িয়ে গা ঝাড়া দিয়ে অবাকতার সুরে বললো,, ছিঃ কি নির্লজ্জ মেয়ে? নিরীহ ছেলের ইজ্জত নিয়ে টানাটানি। আরে ভাই শুধু পাত্রী দেখতে এসেছি। আপনিতো সোজা জড়াজড়ি ওবদি পৌঁছে গেছেন।
সাজি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।কে কাকে জড়িয়ে ধরেছিল। আর এখন দোষ কার পড়েছে!এই লোকতো দেখছি ভীষণ পাল্টিবাজ?

সাজির চেহারা দেখে সাদ মুচকি হেসে দু’কদম পিছিয়ে এলো। পা থেকে মাথা ওবদি সাজির দিকে তাকিয়ে বলল,, তাকে আমার বরাবরই পছন্দ। অনেক আগ থেকেই পছন্দ। দেখতে আসাতো নিয়ম মাত্র।
সাজি সাদের মতো করে সাদের দিকে তাকিয়ে বলল,, এই ছেলে থেকে বেটার অপশন আমার হাতে আছে। তা ছাড়া এমন ছেলেকে কে বিয়ে করবে,যে সময় মতো কল রিসিভ করে না। আমি এক্ষুনি যাচ্ছি বাবাকে বলবো আগের পাত্রটাকে ফাইনাল করতে।
সাজির কথা শুনে সাদ বিস্মিত হয়ে বললো,, মনে মনে এই ছিল তোর? থা*প্পড় মে*রে দাঁত ফেলে দিবো।কতো বড় সাহস আমার সামনে ওই বেটার কথা বলিস!এই সপ্তাহের মধ্যে বিয়ে ফাইনাল করা হবে। তখন দেখা যাবে তোর অপশন কোথা থেকে আসে।

সাদের রাগ দেখে শব্দ করে হেসে উঠলো সাজি।মুগ্ধ হয়ে প্রিয়তমার হাসি দেখছে সাদ।
~ এইটুকুতে এতো রাগ?বুক ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নিয়ে মেঝেতে দৃষ্টি স্থির করলো সাজি। সাদের মোবাইল ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। সাজি নিচে বসে সবটা কুড়িয়ে নিতে নিতে বলল,, আপনার উপর রাগটা ক্ষনস্থায়ী কেন সাদ ভাই। না বেশিক্ষন রাগতে পারি, না অভিমান করতে পারি। অভিযোগ গুলোও ভিত্তিহীন হয়ে পড়ে।কেন বলুন তো!

সাদ সাজির হাত থেকে সেই টুকরো গুলো নিয়ে বললো,, ভালোবাসিস তাই।
সাজি মুচকি হেসে বলল,ভেঙ্গেছি দেখে রাগ করেন নি কেন ? সাদ সাজির কথার উত্তরে বললো,, আমিও ভালোবাসি তাই।সাদের জবাবে ঠোঁট প্রসস্ত করে হাসলো সাজি। রাগ অভিমান শেষে ভালোবাসার মানুষের মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শোনার চাইতে সুন্দরতম অনূভুতি বোধহয় আর একটাও নেই। সাজি ভুলে বসলো পুরো দিনের সেই তিক্ত অনুভূতির কথা। “ভালোবাসি” শব্দটা যেন নিংড়ে নিলো সব তিক্ততা।

ইনশাআল্লাহ চলবে,,

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:৩৮

জুবায়ের আর অনিলা মিলে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে ফেললো। ঠিক সাত দিন পর বিয়ে হবে।দুই পরিবারের সকল আত্মীয়-স্বজনের উপস্থিতিতে তার দুইদিন আগে এংগেইজমেন্ট সম্পন্ন করা হবে।
সেঁজুতি আর রেনু বসে বসে মেহমানদের লিষ্ট তৈরি করছে। তার পাশে বসে লতা রাফি আর চাঁদের সাথে খেলছে।
সাদ বেরিয়ে গেছে আরো ঘন্টা দুই আগে। কিন্তু সাজি এখনো ওবদি রুম ছেড়ে বেরহয়নি। লজ্জায় দুগাল লাল করে বসে আছে।

পরেরদিন দিন জুবায়ের সেঁজুতি আর অনিলাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। অনেকদিন পর মায়ের কাছে যাবে বলে কথা তাও এতো বড় খুশীর সংবাদ নিয়ে।

অপরদিকে সাদ সাজির জন্য এংগেইজমেন্ট থেকে শুরু করে রিসেপশন ওবদি সব কিছুর শপিং কমপ্লিট করে ফেলেছে । এই শপিংয়ের কারনে রায়হানের অবস্থা খারাপ। বেচারা পারছেনা হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাঁদতে। শপিং ব্যাগ নিতে নিতে হাত দুটো খুলে পড়ে যাওয়ার জোগাড়। রায়হান মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে বিয়ে যদি করতেই হয় তবে পালিয়ে বিয়ে করবে।নাহয় বিয়ে করবেই না।
রায়হান সাদের দিকে তাকিয়ে ফুঁসছে। এতো হাটলো তাও তার পায়ের জোর কমলো না। কেমন মেয়েদের মতো সব কিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে কিনছে। পা ব্যাথ্যা করবেই বা কেন! বিয়ের খুশিতে বেটা এমনিতেই আকাশে উড়ছে। পা মাটিতে পড়লেইনা ব্যাথ্যা হবে! রায়হান দাঁত কিড়মিড় করে সাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
সাদ তখন মা আর মামুনীর জন্য কেনাকাটা করছে। দুটো সাড়ি হাতে নিয়ে রায়হানের দিকে তাক করাতেই ভ্রু কুঁচকে গেলো।সাদ জানে রায়হান মনে মনে তাকেই সাবান দিয়ে পরিষ্কার করছে। রায়হানের অবস্থা দেখে সাদ ঠোঁট টিপে হেসে বলল,, রায়হান! তুমি চাইলে তোমার বিয়ের শপিংটা আমি স্পন্সার করতে পারি। তবে শর্ত সাপেক্ষে শপিংটা এখনই করতে হবে।
সাদের কথা শেষ হতেই রায়হান দুহাত উচু করে মৃদু চিৎকার দিয়ে বললো,, না,,, দরকার নেই। আমি বিয়েই করবো না। আগে জানলে আমার বাপ দাদাকেও মানা করতাম।এতো ভেজাল অসয্য।
রায়হানের কথা শুনে শপকিপার আর সাদ দুজন উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো।

সাজি ঘরে বসে আছে। রেনু আর লতা মিলে সকাল থেকে সাজিকে রূপচর্চা নামক ট*র্চার করায় ব্যাস্ত।সাজি কিছু বলতে পারছে না।বললেই রেনু সাদকে বলে দিবে বলে ভয় দেখাচ্ছে।সাদ যেন রেনুকে আলাদা কোনো ক্ষমতা দিয়ে রেখেছে ।রেনু সেই ক্ষমতার জোরেই এমন করছে। রেনু ইউটিউব দেখে দেখে নানান রকমের ফেইস প্যাক তৈরি করছে। সেই প্যাক তৈরি করে সাজির মুখ, হাত, পা কিছুই বাদ রাখছে না। এর মধ্যে লতা নিজেও ফেঁসে গেছে। লতাকে সাজির পাশে বসিয়ে তাকেও রূপ চর্চায় শামিল করে রেখেছে রেনু। যদিও রেনু নিজে একবার মুখে এইসব মেখে ছিলো। কিন্তু দুর্ভাগ্যবসত চাঁদ রেনুকে ফেইস প্যাক লাগনো ফেইস দেখে পুরো আধা ঘন্টা কেঁদেছে। মেয়েটা মাকে এই রূপে দেখে ভয় পেয়ে গেছে।রেনু মেয়ের কান্না থামাতে মুখ ধুয়ে ফেলেছে। আপাতত দুইজন রেনু নামক অ*ত্যা*চারে অ*ত্যা*চা*রিত হচ্ছে।

চোখ থেকে একটা শসা সরিয়ে মোবাইল নিয়ে বসলো সাজি। কনট্রাক নাম্বার থেকে রিমির নাম্বার বের করে ডায়েল করলো। রিমিকে বেশ কয়েকবার কল দিয়েছে। রিমির নাম্বার আনরিচিবল বলছে। সাজি সুস্থ হওয়ার পর থেকে কম চেষ্টা করেনি। কিন্তু প্রতিবারই আনরিচেবল বলছে। সাদের কাছে শুনেছে সাজি কোমায় থাকা কালীন রিমি প্রতি সপ্তাহে একবার করে দেখতে আসতো। তবে সাজি সুস্থ হওয়ার এক সপ্তাহ আগ থেকে রিমিকে আর দেখা যায়নি। এই নিয়ে সাদ নিজেও তেমন একটা মাথা ঘামায়নি।সাজি মোবাইল রেখে মন খারাপ করে বসে রইল। স্কুল থেকে কলেজ ওবদি রিমিই একমাত্র মেয়ে যার সাথে সাজি নিজের সকল কথা শেয়ার করে এসেছে। যাকে সাজি বেষ্ট ফ্রেন্ড বলে।রিমি ছাড়া সাজির আর কোনো বান্ধবী না ছিলো,না আছে।

সাদ শপিং শেষ করে রায়হানকে নিয়ে সাজিদের বাড়িতে পৌঁছায়। ততক্ষণে সাজি রেনু নামক ট*র্চার সেল থেকে মুক্তি পেয়ে শাওয়ার নিতে বাথরুমে ঢুকেছে। সাদ সবার শপিং ব্যাগ গুলো ভাগে ভাগে রেনুকে বুঝিয়ে দেয়। রেনু সেই গুলো রেখে আসলে সাদ পাঁচটা ব্যাগ রেনুকে আর তিনটা ব্যাগ লতার হাত ধরিয়ে দেয়। রেনু ব্যাগ গুলো খুলে দেখে ঠোঁট চেপে কেঁদে উঠলো।সাদ তাকে এতো এতো শপিং করে দিয়েছে ভাবতেই পারছে না। এই বাড়িতে আসার পর থেকে জিবনটা অন্য রকম হয়ে গেছে। যা কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি তা এইখানে রোজ দেখছে।
লতা কয়েক সেকেন্ড ব্যাগ গুলোর দিকে তাকিয়ে সাদকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। সাদকে ভাই বলে ঠিকই। লতার ধারনা নিজের ভাই গুলো কখনো নিজের বোনের জন্য এতো কিছু করেনা যা সাদ তার জন্য করে আসছে।একটা ড্রাইভারের মেয়েকে নিজের বোনের মতো করে আগলে রেখেছে সাদ । যা ভেবেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো লতা। রায়হান একপাশে দাড়িয়ে বুক ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নিলো। আজ আবারো সাদের প্রতি তার সম্মান দ্বিগুণ মাত্রায় বেড়ে গেছে।
সাদ লতার মাথায় স্নেহ ভরা হাত বুলিয়ে বললো,, কাঁদছিস কেন পাগলি?আমি বুঝি আমার বোনের জন্য এতোটুকু করতে পারবো না?চোখ মুছে এইগুলো আলমিরাতে রেখে আয়। বিকালে দুইজন মিলে রায়হানের সাথে গিয়ে সব গুলো জামা সেলাই করতে দিয়ে আসবি।
সাদ রায়হানকে উদ্দেশ্য করে বলল,, খেয়াল রাখবে সব গুলো যেন সময় মতো দিয়ে দেয়।
রায়হান মাথায় নাড়িয়ে বললো, ঠিক আছে স্যার।
লতা শপিং ব্যাগ গুলো নিয়ে হেলতে দুলতে রুমে চলে গেছে। সাদ রেনুর হাতের একটা ব্যাগ দেখিয়ে বলল,, রেনু এইখানে চাঁদের জন্য জামা আছে। পরিয়ে দেখিস। গায়ে বড় হলে আবার চেঞ্জ করে আনবো।
রেনু চোখ মুছে মাথা দোলায়। সাদ সাজির ঘরের দিকে তাকিয়ে বলল,, আজকে মেডাম কোথায়?
রেনু সকাল থেকে এই ওবদি প্রতি মিনিটের রিপোর্ট সাদকে দিয়ে প্রস্থান করে। সাদ রায়হানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। সাদের এই হাঁসি রায়হানে কলিজা কাঁপানো জন্য যথেষ্ট। রায়হান কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো,, দেখুন স্যার আমি মা*ন*বা*ধিকার ক*মি”শনের কাছে আপনার নামে বিচার দিবো। আমার মতো নিরীহ বাচ্চার উপর এতো অ*ত্যা*চার!আপনার দুই একটা শালিকা নেই যে আমি ওদের লোভে লোভে গায়ে গতরে খাটবো। আমাকে আজকের জন্য মাফ করে দেন। আমি গেলাম।

রায়হানের কথা শুনে সাদ স্মিত হেসে দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,, ওকে ঠিক আছে। তাহলে আমি ম্যানেজারকে নিয়ে যাচ্ছি। বেচারা সিঙ্গেল আছে। আমার নিজের শালিকা না থাকলে কি হয়েছে। হবু বউয়ের বান্ধবী রূপে শালিকাতো আছে। ম্যানেজার জাহেদ তোমার কপাল তো সেই লেভেলের ভালো। চল্লিশ বছর বয়সে আমার বউয়ের সুন্দরী বান্ধবী তোমার কপালে জুটবে।

রায়হান দাঁতে দাঁত চেপে হিস হিস করতে করতে সাদের গাড়ির ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসলো। এই লোকটা তাকে ফাঁসিতে ওস্তাদ।
সাদ রায়হানকে দেখে মুচকি হেসে পাশের সিটে বসে বললো,, বাড়িতে চলো। দুজন মিলে খাওয়া দাওয়া সেরে রেষ্ট নিয়ে তবেই বের হবো। রায়হান গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,, That’s why I love you sir.উম্মাহ্!!

রায়হানের হাসি আর কাজে সাদের গা শিউরে উঠলো।সাদ অদ্ভুত দৃষ্টিতে রায়হানের দিকে তাকিয়ে বলল,, উম্মাহ্!!এইসব‌ কি? একদম এইভাবে হেসে love you বলবে না।শুনলে কেমন যেন মনে হয় তোমার টেকনিক্যাল ফল্ট আছে!
সাদের কথা শেষ হতেই রায়হান কষে ব্রেক চেপে কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো,, আস্তাগফিরুল্লাহ! নাউজুবিল্লাহ স্যার। আপনি এতো বড় কথা বলতে পারলেন?
সাদ গলা খাকিয়ে সামনে তাকিয়ে বলল,, কখনো এই ভাবে হেসে এইসব বলবে না। তোমার মুখে উইয়ার্ড লাগে রায়হান। চুমো দিচ্চো? ছিঃ ইয়াক!!
রায়হান বিড়বিড় করে বলে উঠলো,,তা তো লাগবেই। এক নারীতে আসক্ত সুপুরুষ বলে কথা। বেটা দেখলেও গা তো শিউরে উঠবেই।
~ কিছু বললে রায়হান?
রায়হান এক ধ্যানে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,, না স্যার কিছু বলিনি।
রায়হানের মুখের অবস্থা দেখে সাদ জানালার বাইরে চোখ রেখে নিঃশব্দে হেসে উঠলো। রায়হানকে ক্ষেপাতে সাদের দারুন লাগে।

জুবায়েদা নাতি আর নাতনীর বিয়ের কথা শুনে বড্ডো বেশি খুশি। তিনি প্রথম থেকে চেয়েছে সাদের সাথে সাজির বিয়ে দিতে। যদিও এই কথা কখনো মুখ ফুটে বলেনি। তবে সাজি আর সাদকে একসাথে দেখে চোখ জুড়িয়ে নিতো ঠিকই। অনিলা মায়ের শিয়রে বসে সাদ আর সাজির বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা করছে। জুবায়ের বড় ভাইয়ের সাথে বেরিয়েছে অনেকক্ষণ। অন্যদিকে সেঁজুতির বড়জা রাজিয়া খবর শুনেই ফুঁসছে। পরশ্রীকাতর ব্যাক্তিরা কখনো অন্যের সুখ সয্য করতে পারেনা। রাজিয়া তন্মমধ্যে একজন।কস্মিন কালেও সে অন্যের সুখ সইতে পারতো না। সেঁজুতির সুখ সে কখনো চায়নি আজো তার বিপরীত নয়। সেইদিন সেঁজুতি যা বলেছিলো তা আজ করে দেখাচ্ছে। এই ভেবে রাগে ফুঁসছে রাজিয়া। ছপ কষছে কি ভাবে কি করা যায়। অন্য দিকে সেঁজুতি তার বড় জায়ের চেহারা দেখেই বুঝে গেছে এই মহিলা কিছু একটা পাকাবে। সেঁজুতি আক্ষেপ করে ম*রছে। কেন রেনুকে নিয়ে এলোনা। রেনু কু*বুদ্ধির সাগর। এই ধ*ড়ি*বাজ ধু*রন্ধর মহিলাকে কাবু করা রেনুর বা হাতের খেল।সেই আক্ষেপ পাশে রেখে সেঁজুতি রাজিয়ার আশপাশে ঘুর ঘুর করা শুরু করে দিয়েছে।না জানি এই মহিলা কখন কাকে কান পড়া দেয়।

ইনশাআল্লাহ চলবে,,

(ভুল গুলো সুধরে দিবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here