দুরে নয় কাছেই আছি পর্ব -০২

#দূরে নয় কাছেই আছি!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্বঃদ্বিতীয়

শায়োরীর ভাবনার মাঝেই দরজায় করাঘাত হলো প্রবলভাবে! দরজা খুলেই দেখলো তার স্বামী আরাফ দাড়িয়ে আছে। শায়োরী দরজা থেকে দূরে সরে দাড়িয়ে পরল। আরাফ এখনো মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।
শায়োরী বুঝতে পারছেনা কি কারনে আরাফ তার সঙ্গে এমনটা করছে?আর কেনই বা!শায়োরী ভাবতে লাগল আচ্ছা আরাফ কি আমাকে পছন্দ করে না?
আরাফকে আঙ্কেল জোর করে বিয়ে করিয়েছে ঠিক আছে, আরাফ আমায় পছন্দ করে না বলতেই পারে!
হয়তো তার পছন্দের কেউ আছে!

আরাফ দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে নিচু স্বরে বলে উঠলো –

–” আসসালামু আলাইকুম, ভালো আছেন?”

–” অলাইকুম আসসালাম”

–” আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে!”

–” জ্বী বলুন ”

–“প্রথম কি দিয়ে শুরু করবো বুঝতে পারছি না!”

–” বুঝতে হবে না, আপনার মন থেকে যা আসবে তাই বলুন!”

–“আচ্ছা তাহলে শুনুন, আমি বরাবরই ঢাকা শহরে ছিলাম। একরকম বলতে পারেন ঢাকায় জন্ম ঢাকায় বেড়ে উঠা, কখনোই ঢাকার বাইরে যাইনি। যেতে ইচ্ছে ও করতো না। বড় হবার পর বন্ধুদের চাপে পরে কিছুটা বেড়িয়েছি, তাও জাফলং, কক্সবাজার, সাজেক!
এর বাইরে অন‍্য কোথাও আমার যাওয়া হয়নি। কখনো গ্রামে যাওয়া হয়নি। সেইদিক থেকে আমার ব‍্যার্থতা রয়ে যাবে তা তো হয় না। তাই ভাবলাম গ্রামে যাবো, যা ভেবেছি ঠিক তাই করলাম, পিন্টু মামাকে সঙ্গে নিয়ে কাজিন আর বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে সে বছর আমি গ্রামে যাই। গ্রামবাংলার মুখ দর্শন সেই বছরই আমার হয়, সত‍্যি বলতে যদি সে বছর আমি ইচ্ছে করে না বেড় হতাম তাহলে আমি অনেক কিছু থেকে পিছিয়ে পরতাম, কিছু নাম না জানা অনুভূতি থেকে বঞ্চিত হতাম। যে অনুভূতি আমাকে দেখিয়ে ছিল এক মুহুর্তের জন‍্য কি করে কারো মায়ায় পরতে হয়।” বলেই খানিক থামল আরাফ,

–” খুব তেষ্টা পেয়েছে একগ্লাস ঠান্ডা পানি হবে! একটু গলাটা ভেজাতাম, গলাটা বেশ শুকিয়ে এসেছে ”
এতদিন পর স্বামীর সঙ্গে সাক্ষাৎ, স্বামীর বলা কথাগুলোয় মগ্ন থাকা শায়োরীর কানে গিয়ে যেন ঠেকল
খুব তেষ্টা পেয়েছে শব্দটি!, শায়োরী উঠেগেল।
বেড সাইড টেবিলের পাশে থাকা পানির গ্লাস থাকার পরও। সে আবারো এক গ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে এলো।

–” আহ! ধন‍্যবাদ খুব তেষ্টা পেয়েছিল আমার, আচ্ছা কোথায় যেন ছিলাম?”

–” কারোর মায়ায় পরেছিলেন!”

–” জ্বী, জ্বী, হ‍্যা আমি গ্রামের বাড়িতে গিয়ে, গ্রামের সৌন্দর্যের সাথে এক রমনীর সৌন্দর্যের মায়ায় তীর বিদ্ধ হয়েছিলাম, চোখ জোড়া যেন প্রতিমার মত সুন্দর,
উজ্জল শ‍্যাম, ললাট জুড়ে এলোমেলো চুলের ছড়াছড়ি।
সে এক অপূর্ব! অপূর্ব! সুন্দরী শ‍্যামাঙ্গিনী!

“শায়োরী আরাফের দিকে চেয়ে আছে, একে তো একমাসের মত তার সঙ্গে একদিন ও ঠিক করে কথা বলেনি। এখন আবার তারই সামনে প্রেমিকার বর্ণনা দিচ্ছে। এ কেমন পুরুষ মানুষ!”

–” আপনি বিরক্ত হচ্ছেন নাতো?”

–“না, হচ্ছি না বলুন আপনি!”

–” তাহলে শুনুন, শ‍্যামাঙ্গিনী তখন সবেমাত্র উচ্চমাধ‍্যমিকে পড়তো, সাদা কলেজ ড্রেসের সঙ্গে তার ছিল বিনুনী চুল! আমি যেদিন তাকে দেখেছিলাম, এরপর থেকেই সময় পেলে তাকে লুকিয়ে লূকিয়ে দেখতাম। শ‍্যামাঙ্গিনীর রুপে আমি ডুবে যেতাম,
শ‍্যামাঙ্গিনী হয়তো জানেও না তার আশেপাশে কেউ একজন তার পিছনে ঘুরছে।”

–” শ‍্যামাঙ্গিনীকে আপনার মনের কথা জানাতে পেরেছিলেন?”

–” কিভাবে জানাবো? ওটাতো আগেই কেউ একজন বরাদ্ধ করে ফেলেছে!”

–” কি বরাদ্ধ করে ফেলেছে!”

–” জায়গা, শ‍্যামাঙ্গিনীর মনের জায়গা!”

–” হা, হা,হা, কে সে?”

–” আপনি হাসছেন? আমি আপনার সামনে আমার প্রেমিকার উদাহরণ দিচ্ছি, আর আপনি হেসে যাচ্ছেন?”

–” আচ্ছা হাসবোনা, এবার বলুন!”

–” শ‍্যামাঙ্গিনীকে আমার মনের কথা বলবো বলে একজনকে জানিয়ে ছিলাম, তার মধ‍্যেই শুনলাম তার পাড়ার এক বড় ভাই তাকে পছন্দ করে, আর সে ও নাকি
পছন্দ করে! জানেন সেদিন না আমার খুব খারাপ লাগে! খুব করে চাইতাম সে আসুক! সে আমার হয়েই আসুক!” কিন্তু তাকে বলা হয়নি! শ‍্যামাঙ্গিনী আমি আপনাকে চাই!”

–” আহা, তার সঙ্গে দেখা করেননি?
আর বলেননি তাকে? আপনি তাকে পছন্দ করেন!”

–” না,”

–” বলা উচিৎ ছিল,”

–” কিছু অনুভূতি গোপন থাক!”

–” তার জন‍্য আপনি, আমার সাথে কথা বলেননি?”

–” না আসলে তেমন কিছুই নয়, ”

–” তা না হলে অন‍্য কিছু ও নয়, আপনি অতটা লাজুক নন যে বউয়ের সাথে কথা বলতেই একমাস লাগাবেন।
যাইহোক কে সে শ‍্যামাঙ্গিনী,আপনার সুন্দরী?

–” সময় হলে জানাবো, আমায় এক কাপ কফি করে দিবেন,”

–” অবশ‍্যই, কেন নয়! আপনি বসুন আমি নিয়ে আসছি!”
শায়োরী সরে যেতেই, আরাফ নিজের বুকে হালকা করে চাপড় দিতে লাগল! বুক তার দরফর,দরফর করছে।
সমান তালে দ্রিম,দ্রিম শব্দের তালে তাল মিলিয়ে চলছে। শায়োরী দেখলে কি ভাবতো কে জানে!”
লজ্জায় পরতে হতো, বিষণ লজ্জায়!

শায়োরী কফির মগ নিয়ে আবার হাজির,

–” আপনাকে তো কিছুই প্রশ্ন করা হলো না! আপনি কি পছন্দ করেন?”

–” আমার কোন পছন্দ নেই!”

–” নেই মানে? সবারই বিশেষ কিছু পছন্দ থাকে!”

–” আমার তেমন কিছুই নেই!”

–” আচ্ছা, পছন্দ বা ভালোবাসার মানুষ?”

–” না ”

আরাফ শায়োরীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো –

–” আসলেই নেই?”শায়োরী তারদিকে ফিরতেই, মুখ অন‍্যদিকে ঘুরিয়ে ফেলল। শায়োরীর চোখ জোড়র দিকে তাকালে আরাফের বুক কেমন ধরাস করে উঠে।

–” না নেই!” বাদদিন সেইসব কথা,

–” আচ্ছা বাদ দিলাম, বাবার কাছে শুনলাম আপনি অনার্সে ভর্তি হতে চেয়েছিলেন, হলেন ও। এখন তো তাহলে পুরোপুরি ভাবে ব‍্যাস্ত আপনি!”

-” পুরোপুরি ব‍্যাস্ত কিনা জানিনা, তবে ব‍্যাস্ততা সবসময় থাকবে না। এটা বলতে পারবো।

–” আপনার চেহারার সাথে সাথে কথাগুলো ও বেশ সুন্দর! তবে কথাগুলো সৌন্দর্যের আড়ালে মিছরির মত বেজে যায় কিনা ভাবছি! শেষের কথাটা অনেকটা বিড়বিড় করে বলল।

–“কি বললেন ঠিক বুঝলাম না! আবার বলুন তো!”

–” কিছু নয়, আপনি গ্রামে বড় হলেও, আপনার কথাগুলো বেশ মার্জিত,আর গুছানো!”

–” একথা সবাই বলে, গ্রামে বড় হলে যে গ্রামের সবকিছু ধারণ করতে হবে তেমন কোন কথা নয়, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।”

–” হুম তাই দেখছি, চলুন আপনাকে আমার সেই না বলা সুন্দরী প্রেমিকাকে দেখাই!”

–” হুম, দেখান আমি ও দেখি সেই সুন্দরী রমণীকে!”

আরাফ প‍্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করে সেই ফোনের গ‍্যালারিতে রাখা তার প্রিয়তমার ছবিটা বের করে দেখাতে লাগল।

শায়োরী মুখ পুরোপুরি বন্ধ হয়েগেল। কারন মেয়েটি ছিল শায়োরী, অনেকগুলো ছবি তুলেছে আরাফ।
আরাফ ছবি দেখানো বন্ধ করে বলল-

–” দেখলেন আমার শ‍্যামাঙ্গিনীকে! জানেন শ‍্যামাঙ্গিনীর রুপে আমি সবসময়ই কুপোকাত ছিলাম।
এখনো থাকতাম যদি না তার প্রেমিক পুরুষ থাকতো।”
শায়োরী চমকে উঠলো আরাফের কথায়।
শায়োরীর চমকে তাকানো দেখে আরাফ একটা মুচকি হাসি দিল। আরাফের হাসিটা শায়োরীকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছে।

–” শ‍্যামাঙ্গিনীকে একদিন না দেখলে যেন আমার ঘুমই আসতো, আমি তাই নিয়ম করে প্রতিরাত তার ছবি দেখতাম। তাই আমি বাবাকে অনুরোধ করে ছিলাম
শ‍্যামাঙ্গিনীকে যেন আমার করে নিয়ে আসে। হয়েছে ও তাই, কিন্তু শ‍্যামাঙ্গিনীর মন যে আরেক জায়গায় বাধা!

–” আপনি ভুল বলছেন, শ‍্যামাঙ্গিনীর মন অন‍্য কোথাও বাধা নেই!”

–” তাহলে এগুলো কি?”
শায়োরী মোবাইলের ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে অবাক হচ্ছে। আবির কি তাহলে তার সংসার ভাঙ্গার কাজ শুরু করলো!”

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here