#দুষ্টু_মিষ্টি_প্রেমকথণ💓💓
#পর্বঃ০২
#লেখিকাঃতাবাসসুম_তোহা
আমাকে কোলে থেকে নামান বলছি। এই কানে শুনতে পারছেন না??? বলছিনা নামান কোল থেকে,,,রোদ্দুর এর বুকে কিল ঘুষি দিচ্ছি নিজের সর্বশক্তি দিয়ে হাত – পা ছোটাছুটি করছি। কিন্তু এই লোহার ন্যায় শরীরে এর বিন্দু মাত্র কোনো প্রভাব পরছে না,,তারপর ও আমি আমার ব্যার্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। উনি উনার মতো ভাবলেশহীন ভাবে আমাকে নিয়ে সিড়ি দিয়ে নিচের দিকে যাচ্ছে।বাড়ির সব স্টাফরা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমিতো বেশ লজ্জায় পড়ে গেলাম। হঠাৎ রোদ্দুর নিচে দাঁড়িয়ে পরলেন,,,আর স্টাফদের দিকে একনজর তাকালেন শুধু। স্টাফরা সেইটা লক্ষ্য করে তরিঘরি নিজেদের কাজ করতে লাগলেন, যেনো কিছুই হয়নি, তারা কিছুই দেখেনি। আমিতো মনে মনে ভাবছি,,এই মানুষটাকে এতো ভয় পায় কেন এরা?? অবশ্য ভয় পাওয়ার ই কথা। দানবের ন্যায় শরীর,, আমার মতো এমন হ্যাঙলা মেয়েকে মারার জন্য তার এক টোকাই যথেষ্ট,, ভেবেই ভয়ে একটা শুকনো ঢোক গিললাম। আচমকা পানিতে পড়ে নিজের ধ্যানে ফিরলাম,,আর চিল্লিয়ে উঠলাম,
আহহহ্…..এইটা কি করলেন আপনি?? সুইমিংপুল এর মাঝে দাঁড়িয়ে আছি। রোদ্দুর আমাকে কোলে করে এনে এই মুহুর্তে আমাকে এই সুইমিংপুল এ ফেলে দিলো। এতো সকালবেলা তাও আবার ঠান্ডা পানিতে পরে কাপছি আমি।
ক্,,কী করলেন? আমাকে এ্ এইভাবে এখানে ফে,,,ফেলে দেওয়ার মানে কি?? হাচ্চুউ্…. কাপা কাপা গলায় বললাম,,,এই মুহুর্তে অনেক ঠান্ডা লাগছে আমার। এতো সকালে গোসল করার অভ্যাস আমার নেই। সকালে গোসল করলেই আমার ঠান্ডা লেগে যায়,,তাই আজও তার ব্যাতিক্রম হবে না,তা আমি জানি। তাই তো পানিতে পরতে না পরতেই হাচ্চু দেওয়া শুরু হয়ে গেছে আমার।
তুমি এই বাড়ির রুলস্ ব্রেক করেছো। তাই এইটা তোমার শাস্তি। বুকে হাত গুজে দাঁড়িয়ে ধমকের শুরে বললো রোদ্দুর। কিন্তু আমার মাথায়তো কিছুই ঢুকছে না, এই মুহুর্তে। আমি এই বাড়িতে তো এসেছি ই মাত্র কালকে আর আমিতো কোনো রুলস্ এর কথা জানিনা।
বাড়ির সকল স্টাফ সুইমিংপুল এর সামনে জড়ো হয়েছে। আমার বেশ লজ্জা লাগছে। এখানে মহিলা আর পুরুষ উভয় স্টাফ ই আছে তাদের সামনে আমি এইভাবে ভেজা শরীরে দাঁড়িয়ে আছি।
দাদুভাই,,তুমি মেয়েটার সাথে এইটা ঠিক করলে না,,মেয়েটাতো কাল ই এসেছে এই বাড়িতে,,ওকে হয়তো এখনো জানানো হয়নি এই বাড়ির রুলস্ সম্পর্কে। একজন বৃদ্ধা মহিলা স্টাফদের মাঝ দিয়ে আসতে আসতে বললেন,,স্টাফরা তাকে ম্যাম বলেই সম্মোধন করলো আর স্টাফরা দুইপাশে সড়ে পরলো,,,মাথা নিচু করে বৃদ্ধা মহিলাটাকে উদ্দেশ্য করে বললো,,,,,গুড মর্নিং ম্যাম,,,,বৃদ্ধা মহিলাটিও তাদেরকে প্রতিউত্তরে হাসি মুখে বললেন,,,, গুড মর্নিং,,তারপর হুইলচেয়ারটায় করে রোদ্দুর এর পাশে আসলেন,,,
আরে দিদুন তুমি?? তোমাদের না আরো দুইদিন পর আসার কথা ছিলো?? হাটু ভাজ করে মহিলাটির সামনে বসে পড়লো রোদ্দুর।
হুম। কিন্তু লাইসার কাছ থেকে এইসব শোনার পর,,, কাল রাতেই চলে আসলাম। তোকে বলিনি কারন তুই ঘুমিয়ে গেছিলি, তাই আর তোকে ডিস্টার্ব করতে চাইনি।
দিদুন তুমি আমার কাছে আসলে আমি ডিস্টার্ব হবো?? এই কথা তুমি বলতে পারলে??
you know? na?? how much I love you( তুমি জানোনা?? আমি তোমায় কতোটা ভালোবাসি)বলেই জড়িয়ে ধরলো,,মহিলাটাকে।মনে হয় রোদ্দুর এর দাদী উনি। আর আমি এইদিকে শীতে কাপাকাপি করছি। এদের এই ভালোবাসা কখন শেষ হবে!! কে জানে?? আমার দিকেও একটু তাকাও কেউ!! এইভাবে পানিতে আর কতোক্ষন,,,।
হুম I know (আমি জানি) আমাকে আমার দাদাভাই অনেক ভালোবাসে কিন্তু এখন একটু আপনার বউটার দিকেও খেয়াল করেন। বেচারি কতোক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে আছে এইভাবে।
নাহ্, দিদুন ও এইভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবে।
স্যার,, কুহুকে মাফ করে দিন। ও জানেনা এইসব রুলস্ সম্পর্কে। আসলে আমি কাল ওকে বলতে ভুলে গেছি,,,মাথা নিচু করে বললো মামুনি( কাল যেই স্টাফটা আমাকে আমার রুমে নিয়ে গেছিলো উনি। তাকে আমি মামুনি আর উনি আমায় কুহু ডাকেন)
রোদ্দুর বসা থেকে উঠে মামুনির দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন ,,,,, লাইসা আপনি কি দিন দিন এই বাড়ির সব নিয়ম কানুন ভুলে যাচ্ছেন?? আপনি এইবাড়ির অনেক পুরোনো সদস্য,। আপনার কাছ থেকে এই রকম ভুল আসা করি না। এইবার আপনাকে ক্ষমা করলাম But Don’t repeat this mistake .!! get it???(কিন্তু এইভুল আর পুনরায় করবেন না.! বুঝতে পেরেছেন??)
ইয়েস স্যার। মাথা নিচু করে,,,
________________________________________________________________________________
উঠে এসো অখান থেকে,, আমার দিকে তাকিয়ে বললেন রোদ্দুর,,,
আমি ধীরে ধীরে পুলের কিনারায় গেলাম আর আমার হাত রোদ্দুরের দিকে বাড়িয়ে দিলাম,,
কি হলো হাত এইভাবে আমার দিকে বাড়িয়ে দিলে কেনো??
আমাকে ধরে উঠান। একা উঠতে পারবো না।
একরাশ বিরক্তি নিয়ে হাত বাড়ালো রোদ্দুর,,,আহ্হা,,,এমন সুযোগ কি আর পাবো?? আমাকে বিনা কারনে শাস্তি দেওয়ার মজা এইবার সামলাও মি:রোদ্দুর শাহরিয়ার,,, যেই ভাবা সেই কাজ,,,হাত ধরে দিলাম টান,,সামলাতে না পেরে সোজা মুখ থুবড়ে পানিতে পরে গেলো,,,আমি ঠোট কামড়ে হাসছি।ভিজে কাকতাড়ুয়া হয়ে গেছে একদম,,,আমার দুকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো,,আমি সেইদিকে না তাকিয়ে। কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম যেনো আমি কিছুই করিনি।
আরে দাদাভাই তুই পরলি কিভাবে?? ওকে তুলতে গিয়ে নিজেই হিমশিম খাচ্ছিস?? তাহলে এমন বডি বিল্ডার হয়ে লাভ কি হলো তোর??বলেই হেসে দিলেন দাদুন।
এতোক্ষনে আরো দুইটা নতুন মুখ বাইরে এলো। মানে আরো দুইজন মানুষ এসে দাড়ালো দিদুনের পাশে। মনেহয় এই বাড়ির ই কেও এরা। একজন মেয়ে আমার বয়সী, আরেকজন মহিলা। তাদের মাঝ থেকে মেয়েটা বলে উঠলো,
বাহ্,,,সকাল সকাল এমন রোমান্টিক কাপল এর লাইভ টেলিকাস্ট দেখতে পারবো ভাবতেই পারিনি,,,ভাইয়া ভালোই তো তলে তলে চালিয়ে যাচ্ছিস। বিয়ে করে বউ এর,,,,মেয়েটাকে থামিয়ে রোদ্দুর বললো,,,,
এসে গেছে এইবাড়ির মাইক,,,সারাক্ষন বাজতে বাজতে আমার কান ঝালাপালা করে দিবে। এই তুই এখন আর কিছু বলিস না আমার বোনটি।
হুম ভাইয়া। এইযে আমি চুপ রইলাম, নতুন ভাবি তো তাই আর তোমার প্রেস্টিজ এর ফালুদা বানালাম না।
আরে আরে তোরা থাম। রোদ্দুর কায়নাত কে নিয়ে ঘরে যাও। দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাটি বলে ঊঠলেন।
*
*
একী?? আমাকে কোলে তুললেন কেনো?? রোদ্দুর ফিস ফিস করে বললো,,,,, চুপ থাকো তোতাপাখির মতো বেশি কথা বললে না? এখানে আজ সারাদিন দাড় করিয়ে রাখবো। আমি আর কিছু বললাম না, চুপটি করে রইলাম রোদ্দুর এর কোলে। রোদ্দুর আমাকে আমার ঘরে নিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেন তখন দিদুন বললো,,,রোদ্দুর তুমি ওকে নিজের রুমে নিয়ে যাও, শুনলাম কাল নাকি ও অন্য রুমে ছিলো?? বিয়ে যখন করেছো, তার দ্বায়িত্ব ও তোমাকে পালন করতে হবে। রোদ্দুর শুধু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। আমি বেশ বুঝতে পারলাম এই বাড়িতে দিদুন এর কথাই সবার আগে,,কারন এনার মতো একটা রাগী বনমানুষ ও দিদুন এর কাছে কাত হয়ে যায়।
*
*
*
হা,,হাচ্চুউ,,, 🤧 বার বার হাচি দিচ্ছি আর এই ইয়া বড়ো রুমটাকে দেখছি। বড়োলোকদের শখ ও বটে এমন ফুটবল খেলার মাঠের ন্যায় এক একটা রুম। এত্তো বড়ো রুম দিয়ে কি করে এরা কে জানে?? হা,,,হাচ্চু🤧,,,আজ হাচ্চি দিতে দিতেই জানটা বেরিয়ে যাবে আমার।
এই নাও,,,আমার দিকে একটা বক্স এগিয়ে দিয়ে বললো রোদ্দুর।
কী এইটা?? হা,,হাচ্চু🤧
এতে ঔষধ আছে,,, খাবার খেয়ে এই ঔষধ গুলো খেয়ে নিও।
ওও আচ্ছা ঠিক আছে। হা,,হাচ্চু🤧
এই বার বার এতো হাচ্চি দেওয়ার কি আছে?? পানির মাঝেই তো ছিলে,,, বরফ এর মাঝে তো আর ছিলে না,,,চোখ মুখ কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন রোদ্দুর।
আপনি বুঝবেন না। আমাকে বিয়ে করেছেন কেনো?? এইরকম ভাবে শাস্তি দেওয়ার জন্য?? নাক মুছতে মুছতে বললাম। আমার কথায় রোদ্দুরের মুখের মানচিত্র বদলে গেলো,,,যা আমি স্পষ্ট খেয়াল করলাম। আল্লাহ্,,,কিছু ভুল বলে ফেললাম নাকি?? এখন কি আমাকে আবার কোনো শাস্তি দিবে?? ভয়ের ঠেলায় আমার হাচি জানালা দিয়ে পালিয়েছে। ওম্মা আমাকে অবাক করে দিয়ে রোদ্দুর বললেন,,,
তোতাপাখি,,,,সব জানতে পারবে,,ধীরে ধীরে!! বাকা হাসলো,,,আর চুল গুলোতে হাত দিয়ে স্লাইড করে চলে গেলেন রুম থেকে। আমিতো ″থ″ মেরে বসে আছি। কি জানবো আমি ধীরে, ধীরে?? আর সত্যি তো উনি আমাদের চিনলো কিভাবে?? আমরা যে বাড়ির খোজ করছিলাম সেইটাই বা জানলো কিভাবে?? আর আমাকে এইভাবে বিয়েই বা কেন করলো?? কে এই রোদ্দুর?? আমি কি চিনি উনাকে?? উফফ্ বুঝতে পারছি না। আমার মাঝে ছেদ ঘটলো কারোর কন্ঠে,,
ভাবী,,,আসতে পারি, দরজার সামনে দাঁড়িয়ে,সেই মেয়েটা। যে একটু আগে রোদ্দুরকে ভাইয়া বলেছিলো,,,
হুম,,আসো হাসি মুখে বললাম। মেয়েটা ভিতরে ঢুকেই বলা শুরু করলো,,,ভাবী আমাকে নিশ্চই চেনো না??
আমি তো এই বাড়ির কাওকেই চিনি না😅 (মনে মনে)
আমি রিফা,,,রোদ্দুর ভাইয়ার ছোটো বোন,,আর আমার সাথে যিনি ছিলেন উনি হলেন আমার আর রোদ্দুর ভাইয়ার আম্মি মানে তোমার শাশুড়ী,,, আর হুইল চেয়ারে যিনি বসে ছিলেন,,,
উনি তোমাদের দিদুন?? তাই তো??
হুম ভাবী,,,তুমি কি করে জানলে??
তখন রোদ্দুরকে ডাকতে শুনেছিলাম।আচ্ছা তোমাদের এই বাড়িতে কে কে আছে?
আমি,,ভাইয়া,, দিদুন,,আম্মি,, আর আমাদের বাড়ির স্টাফ,,তাদের মাঝে লাইসা যিনি উনি আমাদের একটু পুরোনো স্টাফ বলতে গেলে একজন সদস্যই আমাদের এই ফেমেলির।
এই ভুলে গেলাম। তুমি খেয়ে নিচে আসো তাড়াতাড়ি ,,, আজ আমাদের বাড়ির রুলস গুলো আবার পুনুরাবৃত্তি হবে,,,,বলে জোড়ে হেসে দিলো রিফা
আচ্ছা,, তুমি যাও আসছি…….
🌺
🌺
🌺
🌺
🌺
🌺
🌺
🌺
🌺
🌺
🌺
🌺
#চলবে