#দেয়াল
পর্ব – ২
লেখকঃ Ramim_Istiaq
.
তিন্নি জবাব না দিয়ে উঠে যায়।
এ প্রশ্নের উত্তর তার কাছে নেই। হয়তো আছে সে বলবেনা। বলবে কেনো? সমাজে বসবাস করতে হলে সমাজের নিয়ম কানুনও মানতে হবে।
রামিমের আর ঔষধ খাওয়া হয়না।
মার বেশ ভালোই পড়েছে তার রিয়েকশন এখন দেখা যাচ্ছে।
জ্বর এসে গেছে শরীরে, ব্যাথার তো কথাই নেই।
রহিমা কাকি এসে গরম তেল মালিশ করে দেওয়ায় কিছুটা ব্যাথা কমেছে রামিমের।
তিন্নি রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করেছে আর খোলার নামগন্ধও নেই।
রাতে খেতেও যায়নি সে। কামরুল সাহেব মেয়েটাকে ভিষন পছন্দ করেন। সে নিজের হাতে প্লেটে করে ভাত আর মাছের মাথাটা নিয়ে রওনা দেন তিন্নির রুমের দিকে।
রামিমের প্রতি বাড়ির সবারই প্রচুর দুর্বলতা আছে।
বাড়ির ড্রাইভার মানে রহিমা কাকির স্বামি রোস্তম মিয়া সেও এসে কামরুল সাহেবকে বললো,
– আমার ছেলেটাকে মারবেন কেনো? ভুল করেছে আমাকে বলতেন এভাবে মারার কোনো দরকার ছিলো?
কামরুল সাহেব বেশ অবাক হন।
কতটা আপন হলে বাড়ির ড্রাইভার রামিমকে নিজের ছেলে ভাবে।
এ বাড়িতে রামিমকে নিয়ে মাথা ঘামানোর আর কেউ নেই, তবে তার মামাবাড়ি একজন আছে।
মেয়েটার নাম তিথী, রামিমের মামাতো বোন।
মামাবাড়ি গেলে তিথীর চাইতে খুশি কেউ হয়তো হয়না।
ছোটবেলায় একরুমেই ঘুমাতো মামাবাড়ি গেলে এখন বড় হয়ে গেছে কেমন একটা লজ্জা কাজ করে তাই দুইজন আলাদা রুমে ঘুমালেও ঘুমানোর আগ পর্যন্ত ফেবিকলের মতো পিছু লেগে থাকে তিথী।
ছেলেটাকে যে তার এত ভালোলাগে তার অবশ্যি কিছু কারনও আছে।
কারন ছাড়া কাওকে ভালো কেনো লাগবে?
রামিমের চুলগুলা তিথীর ভালোলাগে।
ঘন, কালো আর সিল্কি চুল।
এতটা সিল্কি মেয়েদেরও হয়না, রামিম মামাবাড়ি গেলে তিথীর ইচ্ছা হয় ছোটবেলার মতো রামিম ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকবে আর তিথী চুলে হাত বুলিয়ে দিবে।
এতো গেলো তিথীর কথা। এবার রামিমের কথা বলি।
রামিম ছেলেটার সাথে তিন্নির গলায় গলায়।
সে সবসময় ঝগড়া করতে চায় তিথীর সাথে।
দুজন দুজনের প্রতি দুইরকম ইচ্ছা প্রকাশ করে।
তিথী যেখানে রামিমকে কোলে মাথা রাখিয়ে চুলে হাত বুলাতে চায় রামিম সেখানে তিথীর চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলতে চায়।
ছোটবেলায় অবশ্য এমন ছিলোনা তবে বড় হওয়ার পর এই ইচ্ছাটা তিব্র হচ্ছে রামিমের।
দরজায় টোকা দেন কামরুল সাহেব।
সাড়াশব্দ না পেয়ে ডাক দেন,
– তিন্নি মা দরজাটা খুলতো।
দরজা খুলে যায়।
কামরুল সাহেব রুমে ঢুকতেই তিন্নি
বিছানায় গিয়ে বসে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে কেঁদেছে এতক্ষণ। কেমন একটা গ্লানি দেখা যাচ্ছে তিন্নির চোখেমুখে।
– শুনলাম খাওয়া দাওয়া নাকি করিসনি?
– হ্যা বাবা, ভালো লাগছেনা।
– মন খারাপ?
– নাতো।মন খারাপ কেনো থাকবে?
– আয় আমি তোকে খাইয়ে দেই।
কামরুল সাহেব ভাত মেখে খাইয়ে দেয় তিন্নিকে।
এ বাড়িতে কামরুল সাহেব যা বলেন তাই হয়।
তবুও তিন্নিকে মাঝে মাঝে লুকিয়ে লুকিয়ে খাইয়ে দিয়ে যায় কামরুল সাহেব।
অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে তার মধ্যে।
দরজা খোলাই ছিলো হঠাৎ রহিমা কাকি এসে দেখে বাবা মেয়ের এই দৃশ্য।
বেশ কঠিন গলায়ই বলে,
– ভাব দেখে আর বাঁচিনা, ছেলেকে আধমরা বানিয়ে রেখে মেয়েকে খাইয়ে দেওয়া হচ্ছে।
কামরুল সাহেব আমলে নেননা।
বলবেই তো বলবেনা কেনো, একবারো তো ছেলেটাকে দেখতে যায়নি সে। ছেলেটার প্রতি কি একটুও ভালোবাসা নেই তার?
রাত দুইটা,
গা ঘাঁমিয়ে জ্বর ছেড়েছে রামিমের, হয়তো আবারো আসবে।
শরীরের কয়েক জায়গায় বেশ ফুলে গেছে।
ওটা যেনো একটা ব্যাথার বাক্স।
অল্প ছোঁয়া লাগলেই সারা শরীরে ব্যাথার সাপ্লাই দিয়ে দেয়।
পাশের রুমে লাইট জ্বলছে এখনো।
রামিম ভাবে,
তিন্নি কি ঘুমায়নি? এত রাতে জেগে কেনো আছে?
অন্য সময় হলে রামিম রুমে যেতো অথবা দেয়ালে লাথি দিয়ে ওর ঘুম ভাঙিয়ে বলতো – লাইট অফ করে ঘুমা আমার রুমে আলো আসলে আমি ঘুমাতে পারিনা।
তিন্নির আবার বদঅভ্যাস।
রামিমকে জ্বালানোর জন্য রাতে লাইট অন করেই ঘুমায়।
রামিম আবার ভাবে,
নাহ ও তো জেগে নেই লাইট অন করেই ঘুমায় সবসময়।
শুয়ে থাকতে ইচ্ছা করছেনা আর রামিমের।
উঠে দাড়াতেই খেয়াল করে শরিরে প্রচুর ব্যাথা।
অনড়ভাবে শুয়ে থাকার দরুন এতক্ষণ বোঝা যায়নি তবে এখন উঠতেই পুরো ব্যাথাটা অনুভব করছে রামিম।
হঠাৎ রামিমের মনে পড়ে জিরু বাবার কথা।
রামিমের ওখান থেকে মাত্র ১০ মিনিটের রাস্তা।
মাজার শরীফে একটা পাগলা বাবা থাকে নাম জিরু বাবা।
হাতে পায়ে গলায় প্রায় ৩৬ কেজি ওজনের শিকল বাধা।
ওই অবস্থাতেই খায়, ঘুমায়।
গোসল করেনা লোকটা তবুও সবসময় আতরের গন্ধ লেগেই থাকে গায়ে।
জিরু বাবার সাথে রামিমের ভালো সম্পর্ক।
মাজারে গেলেই জিরু বাবা ডাকে,
– কিরে ব্যাটা এসেছিস? আয় একটা ডিম খা। কলা পাওরুটি খা।
প্রথম প্রথম ঘেন্না লাগলেও পরে একসময় রামিম বুঝলো লোকটার আশ্চর্য কিছু ক্ষমতা আছে।
লোকটার শরীর দিয়ে কখনো দূর্গন্ধ বেরোয় না, ৩৬ কেজি শিকল পড়ে আরামসে ঘুরে বেড়ায়।
আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো লোকটা কাছে গেলেই মন ভালো হয়ে যায়।
রামিম ভাবছে কাল একবার যাবে জিরু বাবার কাছে।
হয়তো কোনো উপায় বের করে দিবে তিনি।
হঠাৎ দরজায় ঠকঠক শব্দ।
তারপর ফিসফিসে কণ্ঠে আওয়াজ আসে,
– রামিম জেগে আছিস?
তিন্নির গলা।
এতরাতে ও আমার রুমে কেনো?
চলবে?