এই রাত তোমার আমার পর্ব ২২

#এই_রাত_তোমার_আমার
#সানজিদা_ইসলাম
#২২তম_পর্ব

চট্টগ্রাম তার ভাইয়ের বাসায় যাওয়ার পর ফিমা একদম একা হয়ে গেলো,ফাহিম বাড়ি ফেরার পরের দিনই চাকরিতে জয়েন দিয়ে দিয়েছিলো।তাই ফিমার সাথে বেশিক্ষণ সময় কাটাতে পারতো না। সকালে নাস্তা করেই অফিসে চলে যেতো আবার রাতে দেরি করে ফিরতো। অনেক দিন ছুটি নেয়ায় কাজের চাপ বেশি ছিল তবুও চেষ্টা করতো টুকটাক ফিমার সাথে সময় কাটাতে।আর বাবা মায়ের সাথেও যোগাযোগ নেই শুধু ফাহির সাথে কথা হতো।আর পুরোটা সময় একা থাকতে হতো একদম একা।যা তাকে ভেতরে ভেতরে আরো ভেঙ্গে ফেলেছিলো।মাহিরের কথা ভেবে মাহিয়াতের কথা ভেবে আরো দূর্বল হয়ে যাচ্ছিলো। খাওয়া দাওয়া ঔষধ প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলো যার দরুন আবার অসুস্থ।সেবারও তাকে দুই দিন হসপিটালে থাকতে হয়েছিলো।

ফাহিম হতাশ হলো!সে ভেবেছিল সবার থেকে দূরে চলে এলে বুঝি ফিমা একটু স্বাভাবিক হবে। কিন্তু উল্টো আরো অসুস্থ হয়ে পড়লো।সে ফিমাকে বোঝালো জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না, তার আপন গতিতে চলতে থাকে। আর সেই সময়টাকে মানুষ অতীত আকড়ে ধরে দুঃখের সাথে কাটাবে নাকি অতীত কে পেছনে ফেলে নিজেকে সুখে রাখার চেষ্টা করবে তা সম্পূর্ণ নিজের উপর নির্ভর করে।

সবার ভালো থাকার অধিকার আছে, তাহলে সে কেনো কষ্ট পাবে?কাদের জন্য ?কতিপয় স্বার্থপর লোকেদের জন্য?যারা দিব্বি সুখে সংসার করছে। তাদের মনে রেখে নিজেকে কষ্ট দেওয়ার কোনো মানেই হয় না।আর এমনটা তো হওয়ারই কথা ছিলো।সে আগে থেকেই যেহেতু সব জানতো সেখানে জেনে শুনে মাহিয়াতের প্রমে পরা বোকামি।আর তার বোকামিকেই মাহিয়াত কাজে লাগিয়েছে।তাই নিজের বোকামির জন্য কষ্ট না পেয়ে তাদের ভুলে সামনে এগিয়ে যাওয়া উচিত।

মানুষকে ভোলা কোনো কঠিন ব্যাপার নয়।নিজে চাইলেই সব সম্ভব।আর মানুষ ভোলার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে নিজেকে সর্বচ্চ ব্যস্ত রাখা।ব্যস্ততা এমন এক ঔষধ যা কঠিন থেকে কঠিন স্মৃতি ভুলিয়ে দিতে সক্ষম। যদিও সব স্মৃতি ভোলা যায় না একা পেলেই জেকে ধরে তবুও তো ভালো সারাক্ষণ কষ্ট পাওয়ার চেয়ে অল্প কষ্টই ভালো।

ফাহিমের কথাগুলো ফিমার মনে ধরলো,সেও ভালো থাকতে চায় কিন্তু অতীতের স্মৃতিগুলো তাকে ভালো থাকতে দেয় না।তাই কাজের মাধ্যমে নিজেকে ব্যস্ত রাখবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় যদি কিছু সময়ের জন্য হলেও যন্ত্রণা গুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলা যায় তাহলেও কম কি? কিন্তু কিভাবে নিজেকে ব্যস্ত রাখবে তা ভেবে পেলো না। কারণ সে মাত্র এস এস সি পাশ তবুও খুব বেশি ভালো রেজাল্ট না। বর্তমান সময়ে এই সার্টিফিকেটের কোনো মূল্যই নেই। যদিও এই সার্টিফিকেটে কাজ পায় তও হবে খুব নিন্মমানের।

অনেক ভেবে চিন্তেও কিছু বের করতে পারলো না সে। অবশেষে ফাহিমের সাথে কথা বললো সে কোনো চাকরি ম্যানেজ করে দিতে পারে কিনা? কিন্তু সেখানেও হতাশ হলো তাদের কম্পানিতে কোনো পোস্ট খালি নেই। অবশেষে সে বুদ্ধি বের করলো অনলাইন বিজনেস করার।ফিমা ফেসবুক ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো কোন পন্যের চাহিদা বেশি এবং লস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। অবশেষে সে সিদ্ধান্ত নিলো সে কাপড়ের ব্যবসা করবে।সে মোটামুটি শুদ্ধ ভাষায় কথা বলে আর বিভিন্ন লাইভ দেখে লাইভে কথা বলার ধরণ শিখে নিলো।

প্রথমে নিজের জাবতীয় ইনফরমেশন দিয়ে নিজের নামে একটি পেইজ খুললো, ফারহান প্রথম দফায় কাপড় আনতে ফিমাকে সাহায্য করলো। প্রচন্ড ভয় আর নার্ভাসনেস নিয়ে ফিমা তার প্রথম লাইভ করলো এবং তা বিভিন্ন গাল্স গ্রুপে শেয়ার করলো।প্রথমে ভালো কোয়ালিটির কাপড় সীমিত লাভে বিক্রি করায় মোটামুটি ভালো সারা পেলো।আর নতুন পেইজ হওয়ায় আবার অনেকে আস্থা পেলো না। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আস্তে আস্তে পেইজে মেম্বার বাড়তে লাগলো।এর মধ্যেই একদিন ইউটিউব ঘাটতে গিয়ে হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য ফুলের গয়না কিভাবে বানাতে হয় দেখে নিলো পরে কয়েক বার চেষ্টা করে নিজে কয়েটা গয়না বানিয়ে পেইজে আপলোড দিলো এবং তাতেও মোটামুটি সারা পেলো।

আস্তে আস্তে সত্যিই ফিমার ব্যস্ততা বাড়তে লাগলো। কয়েকদিন পর পর কাপড় আনতে যাওয়া,একা লাইভ করা,আবার গহনার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনা,রান্ন করা,ডেলিভারির কাপড় গুলো বিভিন্ন কুরিয়ারে পাঠানো।সব মিলিয়ে সে হিমসিম খেতে শুরু করলো।তাই ফাহিম তার সাহায্যে জন্য একজন অল্প বয়সী মেয়ে‌কে পারমানেন্টলি কাজে রাখলো। কিন্তু বিপত্তি ঘটলো তার থাকা নিয়ে। ফাহিম একরুম আর ছোট ডাইনিংরুমের একটা ফ্লাট নিয়ে থাকতো।ফিমা আসাতে সে ডাইনিং রুমেই ছোট খাট রেখে সেখানে ঘুমাতো কিন্তু ঐ মেয়ের থাকার মত জায়গা তাদের ঘরে নেই। অবশেষে ফিমা অন্য জায়গায় রুম দেখতে শুরু করলো।একটু দূরে যেখানে যাতায়াতের ভালো সুবিধা হয়।আর মাস খানিকের মধ্যই সেখানে চলে গেলো।ফাহিমের অফিস তার বর্তমান বাসা থেকে কাছে থাকায় সে আর ফ্লাট পরিবর্তন করলো না।




নতুন বাড়িতে আসার একদিনের মধ্যেই সব গুছিয়ে নিলো ফিমা।কারণ তাদের আসবাবপত্র খুব বেশি নেই। প্রথম দিন ফাহিম তার সাথে এসেছিলো তাই তার বেশি কিছু করতে হয়নি। দুপুরে বাইরে থেকেই খাবার কিনে খেয়ছে তাই রাতে রান্না করার কথা ভাবলো, কিন্তু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র না থাকায় সে বেড়িয়ে পড়লো সন্ধ্যা হওয়ার আগেই তাকে আবার ফিরতে হবে। আসার সময় সম্ভবত কাছেই একটা বাজার দেখেছিল।

তাই কলিকে বলে সে তাড়াহুড়া করে নিচে নামতে নিলেই হঠাৎ শক্ত কিছুর সাথে ধাক্কা খায়। সাথে সাথে সে কিছু টা দূরে সরে যায়, আর কাঁচ ভাঙ্গার শব্দ শুনতে পায়।সে মাথা ডলতে ডলতে নিচে তাকিয়ে দেখে ব্যাগ থেকে লিকুইড কিছু বের হচ্ছে, সম্ভবত ঔষধ। সে সামনে তাকিয়ে সরি বলার আগেই এক বিকট আওয়াজের ধমক শুনতে পেলো,

—আরে আন্ধ নাকি আপনি?দেখে চলতে পারেন না? দিলেন তো আর ঔষধের বতোলটা ভেঙ্গে, এমনিতেই ঝামেলার মধ্যে আছি তার উপর আবার উটকো ঝামেলা, ধেত!

এতো গুলো কথা শুনে ফিমার মন খারাপ হয়ে গেলো,সেকি ইচ্ছে করে ধাক্কা খেয়েছে নাকি তাড়াহুড়া করতে গিয়েই তো দুর্ঘটনা হল, সে না হয় দেখতে পাইনি তাই বলে কি উনিও দেখেনি? তার তো একটু দেখে চলা উচিত ছিল। দোষ তো তারও আছে। তবুও ফিমা নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চাইল,

—সরর সরি আমি আমি আসলে তাড়াহুড়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম…

লোকটা নিচে বসে ব্যাগ খুলে দেখছিলো সব ভেঙ্গে গেছে কিনা,ফিমার কথা শুনে মুখ বাংলার পাঁচের মত করে অত্যন্ত বিরক্তির সাথে ফিমাকে কথার মাঝেই থামিয়ে দিলো,

—আরে রাখেন আপনার সরি।সরি দিয়ে কি করবো? আচার দেবো?নাকি মুড়ি মাখিয়ে খাবো?সরি বললেন আর সব সমাধান হয়ে যাবে?আমার ঔষধের বতোল গুলো কি জোরা লেগে আগের মত হয়ে যাবে? আপনি জানেন আমার কতটুকু ক্ষতি হয়ে গেছে?আবার সরি বলে।

শেষের কথাটা তাচ্ছিল্যের সাথে আস্তে করে বলে উঠে দাড়ালো তারপর ব্যাগটা পাশের ময়লার ডাষ্টবিনে ফেলে আবার নিচে যেতে নিলে ফিমা‌ বলে,

—আপনার কত টাকা ক্ষতি হয়েছে আমাকে বলুন আমি দিয়ে দিচ্ছি।

বলে ব্যাগ থেকে টাকা বের করতে নিলো,সে ভেবেছে ঔষধ গুলো বোধহয় অনেক দামি লোকটার অনেক টাকা ক্ষতি হয়েছে তাই বোধহয় এতো রেগে গেছে। ফিমার কথা শুনে এবার অপর পাশের ব্যাক্তি মনে হয় চটে গেলো, চলে যেতে নিয়েও আবার হনহন করে উপরে উঠে ফিমার সামনে এসে আঙ্গুল দিয়ে নিচের দিকে ইশারা করে জোরে জোরে বললো,

—এই আপনি যান তো। আমার চোখের সামনে থেকে যান। ইডিয়েট আসছে আমার ক্ষতি পূরণ দিতে। টাকার জোর দেখায়।

লোকটার ধমকে সে একপ্রকার লাফিয়ে উঠলো এভাবে কেউ কাউকে ধমকায়?নিজেই তো বললো ক্ষতি হয়েছে তাইতো ক্ষতি পূরণ করতে চাইছে এখন আবার ইডিয়েট বলা হচ্ছে। আসলেই কারো ভালো করতে নেই। আনমনে কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই সে দ্রুত সিড়ি দিয়ে নেমে গেলো।

আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো আর কোনোদিন এই লোককে দেখলে তার ছায়াও মারাবে না সে।কি ভয়ংকর মেজাজের লোক।দেখতে তো ভালো ঘরের মনে হয়েছে অথচ ব্যবহার একেবারে জঘন‌্য।





নতুন দুই রুমের ফ্লাটে বেশ ভালোই চলছিল সব কিছু। কয়েক মাস যেতেই আস্তে আস্তে তার বিক্রি বাড়তে থাকলো।মাহিয়াতের দেয়া এক লক্ষ টাকা দিয়েই সে ব্যবসা শুরু করেছিলো।আর দিন শেষে বেশ ভালোই আয় হতো। তাছাড়া তাদের বাড়ির আশেপাশে থেকেও ভালো রেসপন্স পেলো। কয়েকদিনেই ভালো খাতির হয়ে গেল সবার সাথে।

বিশেষ করে তাদের বাড়িওয়ালা আন্টি জুবাইদা আন্টির সাথে। তার দুই নাতনি নিয়ে প্রায় সারাক্ষণই ফিমার কাছে পরে থাকতো। তার বাড়িতেও কেউ নেই স্বামী দেশের বাইরে থাকে এক ছেলেই মাত্র নিজের ব্যবসা আছে ছেলে বিয়ে করেছিলো কিন্তু বিয়ের চার বছর পর জমজ সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় মারা গেছে।সে নাকি একদম ফিমার মত ছিলো, খুবই ভালো ছিলো, তার ছেলেও খুবই ভালো, শিক্ষিত,অল্প বয়স,নিজের ব্যবসা আছে স্ত্রী নেই তাই ছন্নছাড়া জীবন যাপন করছে এখন সে তার ছেলের জন্য একটা ভালো মেয়ে খুঁজছে যে তার দুই নাতনি কে মায়ের মত ভালোবাসবে ঠিক যেমন ফিমা ভালোবাসে।

মহিলা যে ইনিয়ে বিনিয়ে তাকে তার পুত্র বধু করার প্রস্তাব দিচ্ছে তা ফিমা বুঝেও পাত্তা দিলো না। তার সব ধ্যান সারাদিন শুধু মেয়ে দুটোর দিকেই থাকতো। বাচ্চা দুটোকে কোলে নিলেই তার মনে হতো নিজের বাচ্চা। বাচ্চা গুলোর বয়স এক বছরের একটু বেশি ছিলো যখন সে এখানে এসেছিলো দুটো মেয়েই হাঁটতে পারে অল্প অল্প কথা বলতে পারে। কয়েকদিন ফিমার সাথে মিশেই মা মা বলতে শুরু করেছে।এটা অবশ্য তাদের দাদু তাদের শিখিয়ে দিয়েছে। তবুও ফিমা কিছু বলে নি তাদের মুখে মা ডাক শুনেই তার মনটা জুড়িয়ে যেতো।

আস্তে আস্তে আরো সময় যেতে লাগলো বাচ্চাগুলো বেশির ভাগ সময় ফিমার কাছেই থাকতো। তার দাদু নানান বাহানায় দিনের বেশিরভাগ সময় তাদের ফিমার কাছেই রেখে যেতো, তাদের খাওয়া ঘুম গোসল ফিমা নিজ হাতে সব করতো। অবশ্য তাদের সাথে থাকার যে মেয়েটা রাখা হয়েছে সেও তার সাথেই থাকতো একদম রাতে তাদের বাবা বাড়িতে আসার আগেই চলে যেতো। এদের সামলাতে গিয়ে ফিমা মোটেও বিরক্ত বোধ করতো না বরং আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করতো তার এক সন্তান তার কাছ থেকে আলাদা করে দুই সন্তানের জননী বানিয়ে দিলো।

একদিকে কাজ অন্যদিকে এদের সামলানো। ভালোই সময় কেটে যেতো ফিমার। অতীতের কথাগুলো মনে করার সময়ই পেতো না। সারাদিনের কাজ শেষে ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়লেই রাজ্যের ঘুম এসে ভর করতো তার চোখে মুখে।দা ভাই ঠিকই বলেছিলো ব্যস্ততা আর বহমান সময় সব কিছু ভুলিয়ে দিতে সক্ষম।


‌।

দেখতে দেখতে প্রায় এক বছর কাটিয়ে দিলো এই বাড়িতে সে।ফাহিম প্রতি মাসে এক দুই বার দেখা করতে আসতো প্রতিদিন খোঁজ খবর নিতো। বোনের এমন পরিবর্তন দেখে খুব খুশি সে।ফাহিও এসেছিলো কয়েকবার বেশ কয়েকদিন থেকেও গেছে। তার বাবা মা নাকি ফিমার কথা বলে তাকে দেখতে চায়। প্রতিদিন কাঁদে তার জন্য।আর তাদের ভুলের জন্য তারা খুবই অনুতপ্ত।মা বাবার কষ্টের কথা শুনে ফিমা তাদের সাথে যোগাযোগ শুরু করলো।তারা তাদের ভুলের জন্য অনুতপ্ত এই বেশি।হয়তো তারা সত্যিই ফিমার ভালো করতে চেয়েছিল।

এদিকে জুবাইদা আন্টি এখন আর ফিমার সাথে কোনো ফর্মালেটি করে না। ঘরের মানুষের মতই ব্যবহার করে যেমন ফিমা তারই মেয়ে।ফিমাও বেশ খুশি বাড়িতে থেকে দূরে এসে এমন আপন মানুষ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু তার মনে হয় তারা যদি তার অতীত সম্পর্কে জানতো তার দুই বিয়ে আর বাচ্চার কথা জানতো নিশ্চিত তার সাথে কথাও বলতো না।আজ কিছু জানেনা বিধায় এত ভালোবাসা।



আগামী কাল দুই মেয়ে মানে কুইন এলিনের দ্বিতীয় জন্মদিন। বাসায় ছোট খাট একটা অনুষ্ঠান রেখেছে জুবাইদা বেগম।আর একটা সারপ্রাইজ ও যা শুধু ফিমার জন্য।

সে ফিমাকে কড়া ভাবে বলে দিয়েছে অনুষ্ঠানের সাজসজ্জা আর বাচ্চাদের কাপড় ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের দায়ীত্ব তার উপর।ফিমাও তার কথা মাথা পেতে নিলো।

পরেরদিন সকাল ‌‌সকাল যুবাইদা এসে ফ্রিমাকে তাদের ঘরে নিয়ে গেল আর সেও কাজে লেগে পরলো রান্নাবান্না বাবুর্চি দিয়ে করা হয়েছে অনুষ্ঠান শুরু হলো বিকেলে।ফিমা একটা কালো শাড়ি পরে এলো।পরী দুজনকে লাল জামা পরিয়ে বড় বড় চুল গুলো সুন্দর করে বেঁধে রেডি করে দিয়ে অনান্য কাজ দেখছিলো। হঠাৎ তার চোখ গেলো ঘরের প্রবেশ দ্বারে ঐ আকরু লোকটা ঘরে ডুকছে। নিশ্চয়ই তাকেও দাওয়াত করেছে।

ফিমা তারাতাড়ি লুকানোর জায়গা খুঁজলো কারণ সে দিন সে তার সামনে না পড়ার প্রমিস করলেও এ লোকটা বোধহয় তার উল্টো প্রমিজ করেছিল। তাই যতবারই দেখা হয়েছে লোকটা গায়ে পড়ে ঝগড়া বাধিয়েছে, কারণে অকারণে ফিমাকে ঝেড়েছে।এমনও হয়েছে ফিমা চুপচাপ রাস্তায় রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছিল আর লোকটা তাকে দেখেই প্রায় দৌড়ে এসে নাক মুখ ফুলিয়ে রাস্তায় কেনো চুপ চাপ দাঁড়িয়ে আছে ?হাটলো না কোনো? আরো নানান কথা বলে ধমকা ধমকি করে চলে গেছে।ফিমা জানেনা লোকটার সাথে তার কিসের শত্রুতা?কেনো সে ফিমাকে এতো বকে? কেনো তার সাথেই পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করে?আর ফিমা চাইলেও লোকটাকে কিছু বলতে পারে না।সেই সুযোগ দিলে তো। কিছু বলতে নিলেই জোরে ধমক।আর তাতেই ফিমা চুপ।

এখানে যেহেতু সে এসেছে তাকে দেখলে নিশ্চই আবার ঝগড়া করবে তাই ফিমা পুরো অনুষ্ঠান লুকিয়ে লুকিয়ে রইলো। এদিকে কেক কাটার সময় জুবাইদা আর কুইন এলিন ফিমাকে খুঁজতে শুরু করলো। লোকটাও তাদের সাথেই আছে কুইন এলিন দুজনকে কোলে নিয়ে হেসে হেসে কথা বলছে।ফিমা এক প্রকার বাধ্য হয়েই তাদের সামনে গলো।লোকটা ফিমাকে দেখে কিছুক্ষণ থ হয়ে রইলো তারপর আবার মুখ বিকৃত করে অন্য দিকে চাইলো।ফিমা তার হাবভাব কিছু বুঝলো না। আর না বুঝতে চাইলো।সে তাকে ধমকাচ্ছে না এই অনেক নইলে এত লোকের সাথে ইজ্জত শেষ হয়ে যেত।

ভালোয় ভালোয় অনুষ্ঠান শেষ হলো জুবায়দা তার ছেলে আনাসের সাথে তার পরিচয় করিয়ে দিলো। আনাস তাকে সালাম দিয়ে মুচকি হেসে তার ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে চলে গেলো। আর ফিমা বিস্ময়ে সালামের উত্তর দিতে ভুলে গেলো।মি আকরু কুইন এলিনের বাবা ভাবতেই তার মাথা ঘুরে গেলো।ফিমা নিজেকে সামলে চলে যেতে নিলেই জুবায়দা তাকে আটকে দিয়ে নিজের ঘরে নিয়ে গেলো।আর তার ছেলেকে বিয়ে করার প্রস্তাব রাখলো। দরকার পরলে সে তার বাবা মায়ের সাথে কথা বলবে বলে জানালো‌।

বিয়ে! বিয়ে‌ নামক জিনিসটা থেকে ফিমার বিশ্বাস উঠে গিয়েছিল সে আর কোনোদিন বিয়ে নামক ষড়যন্ত্রে নিজেকে জড়াবেন না বলে ভেবে নিয়েছিল। কিন্তু জুবায়দার অনুনয় শুনে সে সরাসরি তাকে কিছু বলতে পারলো না।বরং নিজের জঘন্য অতীত তাকে বলে ঘরে এসে কান্নায় ভেঙে পড়লো। নিশ্চই জুবায়দা তার নাতনিদের আর তার সাথে মিশতে দিবে না।

তাকে দুশ্চরিত্রা লোভী ভাববে বা এমনও হতে পারে তাকে বাড়ি থেকে বের করেও দিতে পারে। কিন্তু সে কুইন এলিন কে ছাড়া কিভাবে থাকবে? সে যে তাদের নিষিদ্ধ মায়ায় পরে গেছে। কিন্তু এ ছাড়া যে তার কাছে আর উপায়ও ছিলো না।

ফিমার মনের ভয় সত্যি হলো। দুইদিন যাবত জুবাইদা আর বাচ্চা মেয়ে দুটো তার বাড়িতে আসে না। ফিমার মনের অবস্থা অনেক খারাপ ‌সে মনে মনে নিজেকে তাচ্ছিল্য করলো। তার অতীত এতই জঘন্য যে মানুষ তার সাথে মিশতেও দ্বিধা করে। তিন দিনের দিন ফিমার অবস্থা নাজেহাল হয়ে যায় বাচ্চা মেয়ে দুটোকে ছাড়া সে আর কিছুই ভাবতে পারছিলো না।তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই সে জুবাইদার ফ্লাটে গেলো। কিন্তু সেখানেও তার জন্য বিশাল চমক অপেক্ষা করছিলো…

চলবে…

(কিছু বলবো না পচা লিখছি। কি লিখবো মাথায় কিছু আসতেছিলো না তাই হাবিজাবি লিখে দিয়েছি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here