#দেয়াল
পর্ব – ৪
লেখকঃ Ramim_Istiaq
.
দু পা পিছিয়ে আসে রামিম।
চোখ বন্ধ করে তিন পা এগুলেই শুন্য।
শুন্যে ভাসতে কি মজা লাগে নাকি দম বন্ধ হয়ে আসে?
হয়তো মাটিতে আছড়ে পড়ার আগ পর্যন্ত বেশ ভালোই লাগবে তারপর যখন দেহটা মাটিতে পড়বে তাজা রক্ত ছিটকে বেরুবে শরীর থেকে, গরম রক্তে কি তখন ভালোলাগবে?
নাহ ভালোলাগার কথা না তখন যন্ত্রনায় মৃত্যুবরণ হবে।
এসব রামিমকে দিয়ে হবেনা, ভয় লাগে তার।
তবে একটা জিনিস বেশ ভালোই পারে। সিগারেট।
বাড়ির সবার থেকে লুকিয়ে সিগারেট খায় রোজই।
রামিমের ধারনা বাড়ির কেউ জানেই না সে সিগারেট খায়।
এই বাড়িতে দুজন মানুষ জানে যেটা রামিম নিজেও জানেনা।
তিন্নি আর কামরুল সাহেব।
কামরুল সাহেব জেনেও কিছু বলেন না।
মাঝে মাঝে ভাবেন কখনো ছেলেটাকে আদর – স্নেহ ভালোবাসা কোনোটাই দিতে পারিনি তবে আজ শাষন কেনো করবো?
অধিকার নেই তার। এই ভেবে কিছু বলেনা।
দুদিন বাইরে যাওয়া হয়নি।
যে ব্যাথা বাইরে কিভাবে যাবে।
এখন ব্যাথা কম, আজ যেতে হবে।
জিরু বাবার সাথে দেখা না করে ভালোলাগছেনা।
খাবার টেবিলে কথা বলেনা রামিম, চুপচাপ খায়।
পাশে কামরুল সাহেব ছেলেটার দিকে তাকাবেনা তাকাবেনা করেও বারবার দেখছে রামিমকে।
তার মনের ভিতর কি চলছে কে জানে!
তিন্নিও চুপচাপ।
ওই ঘটনার পর থেকে নাজনীন বেগমও দরকার বাদে কোনো কথা বলেনি কামরুল সাহেবের সাথে।
বাড়ির সবাই চুপচাপ শুধু টুনি বাদে।
ও দিব্বি চিল্লায়, এটা করে ওটা করে।
ওর এখন ভিষন আনন্দ, বাড়ির কেউ কিছু বলেনা কেউ শাষন করেনা।
যা ইচ্ছা করে বেরাচ্ছে ভালো থাকারই কথা।
খাওয়া শেষে রামিম ডাকে,
– এই টুনি বুড়ি আমার রুমে আয় তো।
– নাহ যাবোনা তোমার সাথে গেলে আমিও অসুস্থ হয়ে যাবো।
– আমি সুস্থ হয়ে গেছি এই দেখ হাটছি কথা বলছি।
– সত্যিতো?
– হু।
– আচ্ছা চলো।
রামিমের পিছে পিছে টুনি রুমে যায়।
– বলো কি বলবে?
– আগে পাপ্পি দে একটা।
টুনি মেয়েটা খিলিখিল করে হেসে উঠে।
ছোট বাচ্চাদের সব অবস্থাতেই ভালো লাগে।
আল্লাহ বানিয়েছেনই এমন করে।
হাসি থামিয়ে টুনি বলে,
– চাচ্চু তুমি বড় ফাজিল হয়েছো, তিন্নি আন্টির থেকেও পাপ্পি চাও আমার থেকেও চাও।
– তিন্নির থেকে চাই সেটা তুই কিভাবে জানলি?
টুনি বিজ্ঞদের মতো গম্ভীর ভাব নিয়ে বলে,
– আমি এ বাড়ির সব খবর রাখি।
– তাহলে আমার একটা কাজ করে দে।
– কি কাজ?
– দেখতো পাশের রুমে তিন্নি আছে কিনা, আমি ও রুমে যাবোনা।
– আচ্ছা দেখতাছি।
টুনি ইনোসেন্ট একটা ভাব নিয়ে হাসিমুখে তিন্নির রুমে যায়।
তিন্নি রুমে নেই, ফিরে এসে বলে।
রামিম বিছানার নিচে থেকে চকলেট বের করে মেয়েটার হাতে দেয়।
টুনি খুশি হয়ে একটা পাপ্পি দেয় রামিমকে।
টুনি চলে যায়,
রামিম আবার বিছানার নিচে হাত দেয়।
এক কোনে একটা প্যাকেটে দুটো সিগারেট আছে।
জানালা বন্ধ করে সিগারেট ধরায় রামিম।
এগারোটা বেজে গেছে।
রামিম বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তার পাশে টংয়ের দোকানে বসেছে।
ছোট মামা টেলিফোন করে জানিয়েছে সে আসবে কিন্তু বাসায় যাবেনা তাই এখানে বসা রামিমের।
তবে রামিম ভেবে রেখেছে আজ মামাকে নিয়ে জিরু বাবার কাছে যাবে।
বয়স কত হলো এখনো বিয়ে করেনি কেনো?
এর একটা বিহিত করতে হবে।
পকেটে টেলিফোনটা আবার বেজে উঠে রামিমের।
– মামা কোথায় তুমি আমি কখন এসে বসে আছি।
– তুই একটু বাসায় আয় আমি কাজে ব্যস্ত আছি।
– আচ্ছা আসছি।
বিরক্ত মুখে ফোন কেটে দেয় রামিম।
এখন আবার এগারো মিনিট হাটো।
তবে দেখা করাটা মনে হয় জরুরি তাই মামা ডেকেছে, যেতেই হবে।
যেতে যেতে ছোট মামার বিবরন দেই।
নাম রন্টু মিয়া, দেখতে পুরাই সালমান খান।
বডিটা বানিয়েছে জটিল।
রামিমের মাঝে মাঝে হিংসে হয় মামাকে দেখে।
শুধু নামটা যদি রন্টু মিয়া না হয়ে রন্টি ইয়ো ইয়ো হতো তাহলে পুরাই আমেরিকান মনে হতো মামাকে।
এই একটা নাম নিয়ে তার আক্ষেপ,
আকিকা করে নাম পরিবর্তন করার পরও সবাই তাকে রন্টু মিয়া বলেই ডাকে।
রামিম ডাকে রন্টি ইয়ো ইয়ো।
এজন্যই বেশ পছন্দ করেন রামিমকে।
রন্টু ডাকে সমস্যা নেই তবে মিয়া কেনো ডাকবে?
এই মিয়া তার নিয়ে যত ঝামেলা।
তিনি ভাবেন সবাই যদি রামিমের মত রন্টি ইয়ো ইয়ো ডাকতো তবে কেমন হতো?
রামিম মামাবাড়ি পৌছায়।
সবার আগে বেরোয় তিথী।
রামিমের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ভিজে উঠে তার।
ছলছল চোখে তাকায়।
চোখ ভিজে আসার আগেই চোখ নামিয়ে নেয় তিথী।
হাত ধরে টেনে ছাদে নিয়ে যায় রামিমকে।
ছাদে উঠেই জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে তিথী।
এটা রামিমের কাছে নতুন কিছুনা।
রামিমের সাথে কিছু খারাপ হলেই সে এভাবে কাঁদবে।
রামিম প্রতিবারের মতো এবারও ছাদের দরজা আটকে দেয় যাতে কেউ এই অবস্থাতে না দেখে ফেলে।
এখন বড় হয়েছে লোকে নানান জিনিস ভাবে।
– কি হয়েছে কাঁন্না করিস কেনো?
– তোকে মেরেছে খুব তাইনা?
– হ্যা মেরেছে।
– কে কে মেরেছে?
– বাবা আর তিন্নি।
– তিন্নি কেনো মারবে?
– জানিনা।
– ওর জন্যই তো বলছিলি ও নিজেই মারলো?
– বাদ দে তো।
– আচ্ছা দিলাম বাদ তবে তুই এখন আর আমাদের বাড়ি আসিস না কেনো? তুই আসলে আমার ভালোলাগে।
– আচ্ছা আসবো।
– তোর জন্য বিরিয়ানি রান্না করছি আনবো?
– নাহ আগে ছোটমামার সাথে দেখা করি তারপর।
– আচ্ছা রুমে আসিস।
– আচ্ছা ছাড় এবার আমাকে লোকে দেখে ফেললে বাজে কথা বলবে।
– বলুক গে আমার কি! আমার কিছু যায় আসেনা।
– আমার আসে।
রামিম নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ছোট মামার রুমের দিকে পা বাড়ায়।
রুমে নক করতেই দরজা খুলে দেয় মামা।
বয়সের পার্থক্য খুব একটা না ৫ বছর মাত্র।
রন্টি মামাকে তাই বন্ধুর মতোই ভাবে রামিম।
.
রুমে ঢুকতেই রন্টু মামা সিগারেট দেয় রামিমের হাতে।
রামিম সিগারেট ধরিয়ে বলে,
– মামা কাহিনি কি বলোতো, আজ হঠাৎ সিগারেট খাচ্ছো।
– ভাগ্নে বড় বিপদে আছি তোর সাহায্য দরকার।
– কি সাহায্য মামা?
– ভাগ্নে আমি বিয়ে করেছি কিন্তু বাসায় কিভাবে জানাবো বুঝতাছি না।
রামিম সিগারেট ফেলে মামার মুখের দিকে তাকায়।
এখন নেশা সিগারেটে না, মামার চোখের দিকে তাকালেই নেশা লেগে যাবে রামিমের।
– রন্টি মামা ইয়ো ইয়ো তুমি বিয়ে করেছো?
– আস্তে বল শালা, সরি ভাগ্নে। বাল পেইনে আছি কি বলছি তার ঠিক নেই।
– বুঝছি চলো তোমার ব্যবস্থা করতে হবে।
– কোথায় যাবি?
– জিরু বাবার কাছে। তিনি একটা হেস্তনেস্ত করেই দিবে।
রন্টু মিয়া রামিমের পিছে পিছে হাটে।
জিরু বাবাকে ভয় লাগে তার তারপরও যাচ্ছে।
সমস্যায় থাকলে কত কিছুই না করতে হয়।
রামিমের আর বিরিয়ানি খাওয়া হয়না।
তবে তিথী এসে খাইয়ে দিয়ে যাবে সেটা অজানা নয় রামিমের।
তিথী এত কষ্ট করে রান্না করেছে আর রামিমকে খাওয়াবেনা এটা হতেই পারেনা।
জিরু বাবা রামিমকে দেখে খুশি হয়।
কাছে ডাকে,
– বাবা আয়, অনেকদিন আসিস না তোরে খুব দেখতে ইচ্ছা করছিলো কয়দিন ধরে।
– বাবা ক্ষুদা লাগছে।
– কলা পাউরুটি খাবি? খিচুরি ও আছে গরুর মাংসের।
– তুমি খাওনি?
– খাইছি তুই আসবি আজ তাই রাখছিলাম।
– আমি আসবো তুমি কিভাবে জানো?
– বাবা তুই যে বিপদে আসিস সেটাও জানি।
রামিম বিষ্ময় নিয়ে তাকায় জিরু বাবার দিকে।
লোকটা আসলেই অনেক কিছু বুঝতে পারে।
পিছে চোখজোড়া চকচক করে উঠে রন্টু মিয়ার।
সে ভাবে সমস্যার সমাধান তিনিই করতে পারবেন।
চলবে?