দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-১২
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
ভোরে আলো ফুটে ওঠার আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে মিতু।শরীরটাও ক্লান্ত তবে ফুরফুরে লাগছিল বেশ।রাতে প্রথমবারের মতো তার স্বামীর দেয়া উষ্ণ পরশ গায়ে মাখিয়েছে এ ভাবনায় আরো বেশী উৎফুল্ল সে।কিন্তু ঘুম কি আর সহজে আসতে চায়?একে তো বন্ধনের উতলা বাহুডোর থেকে ছাড়িয়ে এনেছে রাতে।মিতুর শরীর খারাপের জন্যে বেচারা কি মনটাই না খারাপ করলো?বারবার বন্ধনের আদর আর মন খারাপ করা মুখটাই ভেসে আসে।তার উপর সোনার নূপুর কই গেল বুঝতে পারছে না।ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুম ছেয়ে গেল মিতুর চোখে।
ঘুম থেকে উঠল একটু বেলা করেই।পাশ ফিরে দেখে নানুও নেই।
“নানু কি ভালো হয়ে গেলো?কই গেলো এই শরীর নিয়ে?আর একটু ঘুমালেও তো পারে?’
এরপর মোবাইলের স্ক্রীনে সময় দেখে।সাড়ে দশটা বেজে গেছে?ওমা এতো বেজে গেছে ও টেরই পায়নি?পাবে কি করে কাল রাতের ঘটনা গুলো ভেবেই মিটিমিটি হাসে মিতু।আবার সেই মুগ্ধতার আবেশ মিতুর চোখে মুখে।বন্ধনের কাছ থেকে ফিরে ওয়াশরুমে বোধহয় একবার গিয়েছিল।ফ্রেশ হবার জন্য ওয়াশরুমে যায় সে।
“আচ্ছা বুড়ি আবার আমার এই পোশাকে কিছু ভাবে নি তো?রাতে শাড়ী পড়া ছিলাম।বন্ধনের কারনে এই স্লিপিংসু্্যটটা পড়ে আছি।আচ্ছা ভাবলে ভাবুক।স্বামীর ঘরে ছিলাম, পাপ তো কিছু করিনি?’
ওয়াশরুমে ঢোকা মাত্রই হতচকিত হয় মিতু।ওয়াশরুমের বেসিনের আয়নায় নিজের মুখটা দেখে লজ্জায় মরে যায় সে।পুরো মুখ গালের এপাশ ওপাশ জুড়ে লাল লাল দাগ।বন্ধনের সোহাগের চিহ্ন।গলা,ঘাড়,ফর্সা বাহুতেও দাগ বসানো।বন্ধন তাকে কখনো চুষে কখনো কামড়ে এ দাগ গুলো বানিয়ে দিয়েছে।আদরের আবেশে রাতে ওয়াশরুমে এসেও তখন ভালোমতো বুঝতে পারে নি মিতু।
“হায় আল্লাহ? এখন আমি বের হবো কি করে?’
ঘরে কে কে আছে এখন কে জানে?
“বাবাই,নীবিড়,নানু ও বুয়া সবাই তো আছে ঘরে?তারা তো দেখবেই,জিজ্ঞেস করলে কি বলবো?এই পাঁচ মাস পরে এসব দাগ?এতদিন পরে কি ভাববে তারা আল্লাই জানে….?’
মিতু তার শোবার ঘরটায় ঢুকে দেখে বন্ধন নেই।উনি তো বেশীরভাগ দিনই ফজরের নামাজ পড়ে অফিসে চলে যান।দেরী হলেও সর্বোচ্চ দশটার আগেই বের হয়ে যান।তাদের বিছানাটার দিকে তাকায় মিতু।লাজুক হাসি হাসে ফের।এরপর নূপুরটা খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।তছনছ করে খোঁজে মিতু।
“আশ্চর্য কই গেল নূপুর?পড়ে থাকলে তো এখানে বা আশেপাশেই থাকবে?’
বুয়া আসে ঘরটাতে ঝাড়ু নিয়ে।মিতু বন্ধনের বিছানা গোছাতে গোছাতে জিজ্ঞেস করে,
“কি খুঁজতাসেন আফামনি?’
মিতু অস্থির ভঙ্গীতে বলে “আরে আমার নূপুর কাল রাত থেকে খুঁজে পাচ্ছি না।দেখোতো বুয়া ভালো করে খুঁজোতো কই গেল?’
বুয়া যে কিছু একটা টের পেয়ে গেছে সেটা তার চাহনী আর মিটমিটি হাসি দেখেই বোঝা যাচ্ছে।মিতু এখনো নাইটি পড়ে আছে,তার উপর চুল এলোমেলো,মুখ ভর্তি দাগ তো আগেই যা বোঝানোর বুঝিয়ে দিচ্ছে।
মিতু এবার স্বাভাবিক হয়।ওয়ার্ডরব থেকে ওর জামা কাপড় দ্রুত বের করে। গোসল করতে হবে দ্রুত।তবে বুয়াকে আবার তার পছন্দের নূপুর খুঁজে দেবার জন্য তাগাদা দেয়।
“আরে আফামনি টেনশন নিয়েন না,নূপুর ঘরেই আসে কই আর যাইব?জায়গামতোনই আসে?’
বলে আবার সেই হাসি।
“জায়গামতো কই আছে?খুঁজে দাও তাহলে?’
এবার মিতুর কোন কথার জবাব দেয় না বুয়া।দিব্যি হেসেই চলেছে সে।ফের জিজ্ঞেস করে
“কালকে কই ঘুমাইসেন হেই জায়গায় দেখসেন?’
মিতু বুয়ার কথায় লজ্জা পেয়ে যায়।কাল সে যদিও নানুর রুমে ছিল।কিন্তু এই পোশাকে এই বেশে নানুর ঘরে কি করছিল? নিশ্চুই অন্য ঘরে গিয়েছে সে? সেটা যে কেউ দেখেই বুঝে ফেলবে।মিতু আর দেরী না করে গোসলখানায় ঢুকে যায়।
আজ বাবাইকে নীবিড় দিয়ে এসেছে স্কুলে।বন্ধন সাহেব সময় পাননা,আগে সৈনিকই দিয়ে আসতো।বাবাই এরও ভাল লাগে না।তবে এখন বেশীর ভাগ মিতুই যায়।স্কুলে তার পরিচিত অনেকেই আছে,বাচ্চাগুলো যাদেরকে সে পড়িয়েছে তারা,তার কলিগ, গার্ডিয়ান আরো অনেকে।তাদের সাথে গল্প করেও মিতুর সময়টা ভালোই কাটে।তবে আজ তো কোনভাবে সে স্কুলে যেতে পারতোনা।নীবিড় বাঁচিয়ে দিয়েছে তাকে।
মিতু গোসল সেরে পরিপাটি হয়ে রান্নাঘরে যায়।নানু বসে বসে টিভিতে বাংলা ছায়াছবি দেখছেন।রাজ্জাক কবরীর পুরোনো দিনের ছবি খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছেন।একবার খোঁজ নেয়া দরকার শরীর এখন কেমন লাগছে।পুরোনো দিনের বাংলা ছবি দেখতে খুবই পছন্দ করে নানু।বন্ধন, নীবিড় বিভিন্ন জায়গা থেকেও কিনে আনে নানুর জন্যে।আজকাল সিডির দোকানে সব সিডি পাওয়া যায়না।আজীজ সুপার মার্কেট শাহবাগে বোধহয় পাওয়া যায়।ছবি দেখে তো মনে হচ্ছে, বেশ আছে নানু।সত্যি উনার উপর আল্লাহর অনেক রহম।তবু তো মিতুর একবার জিজ্ঞেস করা উচিত।কিন্তু বুড়ি অনেক চালাক চশমার ফাঁকে মিতুকে দেখে কি নাকি জিজ্ঞেস করে বসে।নীবিড়ও কাছেই বসা।
স্কুলে পৌঁছে দিয়েই নীবিড় হাকডাক করছে।
“ভাবী কই গেলা তুমি। খেতে দাও জলদি।খিদেয় তো মারা যাচ্ছি।’
বলেই ডায়নিং টেবিলে রাখা ফলের বোল থেকে আপেলটা নিয়ে উপরে বলের মতো ছুঁড়ে কামড় বসালো তাতে।
“হুম দিচ্ছি তো। আপেলটা এখন খাচ্ছো কেন?ওটা রাখো নাস্তা খেয়ে তারপর খাও।’
মিতু তার দেবরের জন্য পরোটা বেলে দেয়।বুয়া এসে তাওয়া বসায় চুলোয়।
“না পাইলাম না আফামনি।ঘরের কোণাকাঞ্চি,নানীর ঘরে বেবাগ খুঁজচি হেও পাই নাই।’
নীবিড় এবার জিজ্ঞেস করে
” কি খুঁজছো তোমরা?কি হারালো আবার?’
“আরে আমার নূপুর?’
“সোনার?’
“হুম।’
“নানুর রুমে খুঁজেছে কেন কাল রাতে ঐরুমে ছিলা?এজন্য আজকে ভাইয়েরও নাস্তা দাও নি?’
মিতু কি বলবে বুঝতে পারে না।
“তুমি জানলা কিভাবে নীবিড়?তুমি তো এত সকালে উঠো না?’
“আরে নানু বলছিল আর কি তার বাবুসোনা নাস্তা না খেয়ে আজ অফিসে গেসে।তুমি নাকি ঘুমাচ্ছিলা তার ঘরে।ভাই আবার যাবার সময় নানুর রুমে তোমাকে দেখে গেসে।’
মিতু তো শুনে পুরাই অবাক।
“বুড়ী রে বুড়ী তলে তলে এই?যার জন্যে করলাম চুরি সে বলে চোর?নানুর অসুস্থতার জন্যে যে ছিলাম এটা একবারো বলেনি?’
নীবিড়ের নাস্তা পরোটা, ডিমভাজা প্রায় শেষ।সকালে বা যতবেলাতেই ঘুম থেকে উঠুক না কেন,ভাবীর হাতের নাস্তা স্পেশালি তার হাতে জাদুকরি ছোঁয়ায় বানানো ঘি আর সামান্য তেলে ভাজা পরোটা খেতে ভালোবাসে নীবিড়।যদিও আগেরদিন রাতে মিতুকে বলে রাখে বিশেষ এই পরোটার কথা।কানাডা প্রবাসী,সর্বদা ফিগার কনশাস নীবিড় যদিও তেলের জিনিস এভোয়েড করে তবু যে কয়দিন এখানে তাদের সাথে আছে ভাবীর হাতের খাবার খাবে না তা কি হয়?
মিতু খেয়াল করলো নীবিড় তার কাছাকাছি আসছে।অনেকক্ষণ ধরে নীবিড়ের চোখের আড়াল হতে চাইছে সে।মনে হচ্ছিল নীবিড় ও ব্যাপারটা ধরে ফেলেছে।বারবার মুখের দিকে তাকালেই ভাবী সরে যাচ্ছে।
ভাবী দ্রুত নাস্তা বেড়ে দেয় নীবিড়কে।
কই যাও ভাবী বসো না?তুমি খাবানা নাস্তা?’
“আসছি চুলোয় চা বসিয়েছি তো?’বলেই চম্পট দেয় মিতু।
নীবিড় পরোটা ছিঁড়তে ছিঁড়তে একটু চেঁচিয়ে বলে,”ভাইয়ের সাথে কিছু হয়েছে আজকে?’
ওপাশ থেকে মিতুর জিজ্ঞাসা”কি হবে?’
“ঐ তো সংসারে যা হয় ঝগগড়াঝাটি?’
মিতু কি বলবে এবার ভাবতে থাকে।নীবিড়ের সামনে এভাবে যেতে ভীষন লজ্জা করছে তার।গোসলের পর। যে ক্রীম লাগিয়ে অভ্যস্থ ফেয়ার এন্ড লাভলী সেটা মেখেও কাজ হয়নি।দাগগুলো মুখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।অনেকআগে মিতু তখন ছোট তার ফুপাতো ভাইয়ের বউকে দেখেছিল ওরকম দাগ হতে,ওদের বিয়ের পরের ঘটনা ছিল সেটা।ফুপুর বাসায় বেড়াতে গিয়ে সেদিন ব্যাপারটা ভাল করে না বুঝলেও ভাবীকে নিয়ে সবার হাসাহাসি,রসিকতায় আন্দাজ করে ছিল।কিন্তু সেটা ছিল তাদের বিয়ের পরদিন।কিন্তু আজ তো আর সেটা না?আর নূপুরটাও বা কোথায় গেল?মিতু আনমনে চুলোয় চা বসিয়ে ভাবছে এসব।
হঠাৎ তাকে চমকে দিয়ে নীবিড় একটু জোরেই বল্ল,
“ভাবী! তোমার মুখে কি হইসে এগুলা?এরকম দাগ কেন এত?’
চুলার উল্টামুখে দাঁড়ানো মিতু।অগত্যা ধরা
খেতেই হলো……..।(চলবে)দ্বিতীয়বাসর(গল্প),পর্ব-১৩
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
মিতু আমতা আমতা করছে।নীবিড়ের পাশ থেকে সরে এসে চায়ের কাপে চা ঢালছে।নীবিড়েরও তর সইছিল না কখন ভাবীর মিষ্টি হাতের চা খাবে।তাই কিচেনের বেসিনে এসেই হাত ধুচ্ছিল নাস্তা খেয়ে।তারপর ভাবীর মুখের দিকে তাকিয়েই প্রচন্ড অবাক হয়ে গেল।
“কি হয়েছে ভাবীর সামনেও তো আসছে না?দেবরকে নাস্তার টেবিলে বসিয়ে রেখে কোন খবর নাই!’
মনে মনে বিড়বিড় করে একসময় ভাবীকে জিজ্ঞেস করতে তার কাছে যায়।
“কি হইসে বলবা তো?’
“কি কি হয়েছে?’চায়ের কাপটা নীবিড়ের হাতে দেয়।
“তখন থেকে জিজ্ঞেস করছি?মুখে কি হইসে তোমার?এলার্জি?’
“হুম’
“কিভাবে হল?পার্লারে গেসিলা?’
“না।আমি নিজে নিজে মাস্ক লাগিয়ে রূপচর্চা করেছিলাম।’
“তাই এই অবস্থা?তোমরা মেয়েরা যে কি আটা ময়দা মাখো তাই ই বুঝি না!এত সুন্দর মুখটাকে কি করসো?’
মিতু মাথা নীচু করে ভাবে,
“নীবিড় কি বলদ?না বলদের একটিং করছে?’
“ভাইয়া দেখসে?ও তোমার তো আজ তার সাথে দেখাই হয় নি?’
“হায় আল্লাহ এটা তোর ভাই ই করেছে….তুই বুঝতে পারছিস না ?’মনে মনে ফের বলে মিতু।
“চলো।’
“কোথায়?’
“কোথায় আবার ডাক্তারের কাছে।তোমার মুখের এই দশা ভাই আসার আগেই ঠিক করতে হবে।না হলে ভাইয়া বলবে তুই কেন তোর ভাবীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলি না?’
“উফ্ নীবিড় আচ্ছা নাছোড়বান্দা তো?’মনে মনে বিরক্ত মিতু।
“এই সামান্য কারনে ডাক্তার দেখাতে হবে না।যাও তো নীবিড়, ঘরে যেয়ে গান শুনো গিয়ে।আমার রান্না আছে, অনেক কাজ আছে আমার।’
“ভাবী’
“আবার কি?’
“সত্যি একটা কথা বলবা?’
মিতু এবার ঢোক গিলছে নীবিড় এখন কি জানতে চায় আবার?
“কি কথা?’
“তোমাকে আজ অন্যরকম লাগছে।’
“কি রকম?’
“মনে হচ্ছে তোমার কালকে কিছু হয়েছে মানে তোমাদের আই মিন….’
“কি বলতে চাস তুই?’মাঝে মাঝে রেগে গেলে বা মজা করেও নীবিড়কে তুই বলে মিতু।
“মানে বাসর হয়েছে তাই না ভাবী?’
মিতু ফের মাথা নীচু করে ফেলে,তার দেবর যে এতক্ষণ অভিনয় করছিল,সব বুঝেও না বোঝার ভান করছিল তা মিতু বুঝেছে এতক্ষনে।
“বাট ভাবী সত্যি তোমাকে না আগের চেয়ে বেশী সুন্দর লাগছে।দ্যা ক্রেডিট গোওস টু মাই হ্যান্ডসাম ব্রো বন্ধন আহমেদ।’
বলে তুড়ি মারে দুহাতে নীবিড়।
নীবিড় আজকাল বেশ দুরন্ত হয়ে যাচ্ছে।এই যে শুরু হলো ওর বাঁদরামি।না জানি আর কি কি বলে লজ্জা দিবে সে।
“তুমি ভেবেছো আমি কিছু বুঝবো না? ‘ফের শুরু করে বাঁদরটা।
“কি?কি বুঝেছিস তুই?বিয়ে কর তখন আমরাও বুঝবো।’
“হুম তোমার মতো মেয়ে পেলে করবো না হলে আজীবন বান্দা একাই থাকবে বুঝেছো?’
“ঐ নীবিড় ভাবীর সাথে ফ্ল্যাটারিং শুরু করছিস তাই না?’
বলে তরকারি রাঁধার চটি দিয়ে কানে আস্তে করে বাড়ি দেয় নীবিড়ের।
“দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র ভাবী তাও এত মিষ্টি যে কেউ দেখলেই তো ফ্ল্যাটারিং করতে চাইবে আর আমি তোমার ইয়াং,ডেশিং হ্যান্ডসাম দেবর সো বেবী কুল!’
মিতু নীবিড়ের কথায় হা হয়ে যায় শুনে
“ঐ তুই আমাকে বেবী বল্লি কেন হ্যা?আমি তোর বেবী হতে যাব কেন?এইটা কি ওয়েস্টার্ন কানট্রি পাইসো,যে এটা আমাকে বলবা?মুখে লাগাম দে নীবিড়?’
মিতু এবার সত্যি খুব রেগে যায়।ভয় পেয়ে যায় যেন তাতে নীবিড়।
“আরে বাবা দুষ্টুমি করেছি তো?তাতেই রাগ করলা?বাট ভাবী বাংলাদেশী মেয়েরা এখন আর আগের মতো নেই অনেক আপডেট তারা।’
“হুম যা তুই তাদের কাছে যা আমি এত আপডেট,আলট্রামর্ডান নই যে তুই আমাকে বেবী বলবি?’
নীবিড় দুইকানে হাত দিয়ে বলতে থাকে এবার
“আরে …. ভুল হয়ে গেছে মেরি মা…
প্লিজ ক্ষমা করো,ওকে ওকে তুমি আমার বেবী না ভাই এর বেবী কি এইবার খুশী তো?’
মিতু কথাটা শুনে বেশ মজা পায়।লাজুক হাসে তবে বেশ শব্দ করেই।নীবিড় ফের বলে ওঠে,
“ইশ ভাবী তোমরা মেয়েরা এভাবেই তো ছেলেদের মাথাটা নষ্ট কর এমন পাগলা হাসি দিয়ে?এমন করে হাসলে ভাই আমার ঠিক থাকে কেমনে আল্লাই জানে।’
“উফ নীবিড় যা তো হয়েছে অনেক হয়েছে আমাকে কাজ করতে দাও প্লিজ।’
যাব তার আগে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দাও।
“আবার কোন প্রশ্ন?
“ভাইয়ের মাথাটা কয়বার খেয়েছো ভাবী এমন হাসি দিয়ে?’
মিতু ভাবে বন্ধন ওর মুখের দিকে ভালো করে তাকিয়েছে কিনা কে জানে?কাল রাতে যদিও ও সোহাগ করেছে কিন্তু তাও তো ডিম লাইটের মৃূুদু আলোতে।আর বন্ধনের সামনে সেভাবে হাসার সুযোগও তো পায়নি।
“তোর ভাইকে জিজ্ঞেস করিস এখন যা।’
বুয়া তরকারি, সবজি,সব কেটে রেডি করে দিয়ে যায়।
মিতু চুলোয় বড় বড় চিংড়ির দোপেয়াজা করে আর চুলোয় সবজি বসিয়ে দেয়।
“ভাব দেখাচ্ছো তাই না ভাবী।’
“হুম।আচ্ছা বলো কি বলবা?’তরকারীটা নেড়েচেড়ে দেয় মিতু।
“তুমি তো একটা কথা জানো না ভাবী?’
“কি কথা?’
“ভাইয়া এয়ারফোর্সে ঢোকার আগে,যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালশে চান্স পায় কত মেয়ে ওকে ডিস্টার্ব করতো?’
“তোমার ভাইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো?’
“আরে যখন প্রথমবার আর্মিতে চান্স পায়নি তখন ছয়মাস না একবছর পড়েছিল।কেয়া ভাবি তো তারই ক্লাসমেট।এটা তুমি জানতে না?’
দোপেয়াজাটা নামিয়ে এবার ভাত বসিয়ে দেয় মিতু।
“হুম জানি ভুলে গিয়েছিলাম।’
“আরো অনেক সুন্দর সুন্দর মেয়েরা আমার ভাইকে জ্বালাতো।তার মধ্যে একটা ছিল পাঁপিয়া।’
“তাই না?জ্বালাতো তোর ভাইয়াকে আর নাম তুই মনে রেখেছিস? কেইসটা কি হ্যা? তোর বয়স কত তখন যে মনে রেখেছিস?’
“মনে রাখবো না? সেইরকম দেখতে পাঁপিয়া তখনি ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়তো।নেইলপালিশ লাগানো বড় বড় নখ,চোখে ওলটাইম দামী গোগলস।আমি উঠতি ছেলে আমাদের বাসায় আসত যখন তখন বুঝোই তো?’
“হুম।’
“শুধু তাই না পরেও অনেক জালাতো ভাইকে।কেয়া ভাবী মারা যাবার পরও উঠে পড়ে লেগেছিল ভাইকে বিয়ে করবে।ভাইকে ফোন করে না পেয়ে বাসার ল্যান্ডফোনে বিরক্ত করতো।একবার তো জানো না ভাবী কি হয়েছে।আমি কানাডা কুইন্স ইউনিভারসিটিতে চান্স পাই ভাইয়া সবাই তো মহাখুশি।আর ঐ মহিলা মদ খেয়ে মাতাল হয়ে রাত প্রায় একটার দিকে এসে হাজির।’
“ঐ মহিলার বিয়ে হয়নি?এত রাতে এ বাসায় কেন আসছিল?’
“মহিলা ডিভোর্সী তার মেয়েও বোধহয় ক্লাস নাইন টেন এ পড়ে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে?’
“তারপর তোমরা কি করলে তখন শুনি?’
মিতুর রান্না প্রায় শেষ,কন্ঠে উদ্বিগ্নতা। হঠাৎ নীবিড়ের মোবাইল বেজে ওঠে। সম্ভবত কোন মেয়ে।নীবিড় ফোনটা কানে নিয়ে এবার ভাবীর পাশ থেকে সরে যায়।
যাওয়ার আগে বলে যায়,
“আসছি ভাবী পরে কথা হবে।’
“হুম তাই যাও।আর দুটা সময় বাবাই এর স্কুল ছুটি ওকে নিয়ে এসো কিন্তু।’
“ঠিক আছে ভাবী……..’
মিতুর এবার অসহ্য লাগতে থাকে নীবিড়ের কথা শুনে।বাংলাদেশে আসার পর থেকেই নাকি ছেলেটা অবিরাম বকবক করে ঠিক নানুর মতোই।বংশের ট্রেডিশান মনে হয়।কিন্তু কই বন্ধন তো এত কথা বলেন না।আবিরও কথা বলে ভালই,বোধহয় দু ভাই দেশের বাইরে থাকে তাই দেশে এসে প্রাণ খুলে কথা বলতে চায় তারা আপনজনদের কাছে পেয়ে?
“কিন্তু কে এই পাঁপিয়া?এখনো কি সে বন্ধনকে ভালোবাসে?নীবিড়ই বা কেন এতদিন পর তার কথা তুল্ল?’
ভাবতে ভাবতে ধারালো ছুড়ি লেগে গেল মিতুর বা আঙুলের তর্জনীতে।টমেটো,শসা,সালাদ কাটছিল অন্যমনস্ক হয়ে।টপটপ করে একনাগাড়ে তা থেকে রক্ত বের হতে লাগল।এমনি লো প্রেসারের রুগী সে।সামান্যতেই মাথা ঘোরায়।তাও আবার শরীর খারাপ।ডায়নিং চেয়ারটায় বসে পড়ে মিতু।রক্ত পড়ছে তার…..সেই সাথে পড়ছে চোখের বৃষ্টি।যন্ত্রণায় ঠোঁট দুটো মুখে চেপে রাখে।
ব্যাথার যন্ত্রণা না মনের অজানা কষ্ট ঠিক বুঝতে পারে না মিতু।(চলবে)