দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-৪১
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
স্ট্যাটাস এর কি বাহার!
“তুই পুড়ে ছাই হলে আমার কি?আগে মনে ছিল না?’
হীমেল আবার ম্যাসেঞ্জারে টেক্সট পাঠিয়েছে মিতুকে।
“মিতালী আমাকে এক্সেপ্ট করতে হবে এমন কোন কারন নেই,কিন্তু আমরা কি ভালো বন্ধু হতে পারিনা?’
রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে মিতুর,
“আপনার সমস্যাটা কি হ্যা?’
টেক্সট ব্যাক করতে চেয়েছিল মিতু।আর করেনি।
কারন করলেই সেও রিপ্লাই দিবে।এভাবে কথার পিঠে কথা বাড়বে।মিতু জাস্ট ইগনোর করে দিল হীমেলের পাঠানো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট।
এবার বন্ধনকে টেক্সট করে মিতু,
“কই আপনি?আপনার ফোন বন্ধ কেন?কবে আসবেন?নাকি আসবেন না,থাকেন আপনার মিশন নিয়ে…।’
মিতুর চোখ ছলছল হয়ে যায়।বন্ধনকে ভীষন মিস করছে সে।
সন্ধ্যার দিকে জীপ গাড়ীটা আসে মিতুকে নিতে।
মিতু তার বাবার ঘরে যায়।
“আব্বু আমি আজ চলে যাচ্ছি।’
“সে কি রে মা কালই তো এলি,জামাইও তো এলো না?’
“তোমাদের জামাই এর কথা আর বলো না খালি কাজ আর কাজ,মিশন, কনফারেন্স লেগেই থাকে।’
আক্ষেপ এর সুর মিতুর।
“বলিস কি মা,তোকে সময় দেয় না বন্ধন?’
“না তা দেয়, আচ্ছা আব্বু শুনো সারাক্ষন ঘরে থাকবে না,এত ঘুমাবে না,মসজিদে যাবে,প্রতিবেশী চাচাদের বাসায় যাবে তাদের আসতে বলবে।’
মুরব্বীদের মতো বোঝায় মিতু তার বুড়ো ছেলেকে।
“তুমি যাবে আমার বাসায় গেলে চলো,ভালো লাগবে।’
“না মা মুহিন একা বুঝিস না।’
মিতু বাবাকে জড়িয়ে ধরে বিদায় নেয়।
মুহিন খুব মন খারাপ করে।
মিতু ভাইয়ের হাতে দুহাজার টাকা গুজে দেয়।
“আবার টাকা কেন?’
“টাকা কেন মানে?আমি দিতে পারিনা তোদের টাকা?’
“তুমি তো ভালোভাবে থাকলাই না,আর টাকা দিয়ে কি করবো?’
“শোন আব্বুর জন্যে ভালো বিস্কিট,বাজারে ভালো দেশী পরোটা পাওয়া যায় ওগুলি কিনবি,তোর যা মন চায় খাবি,সামনে ভার্সিটি এডমিশন মন দিয়ে পড়বি।’
ফের বলে মিতু,
“আচ্ছা কি শুনছি তুই নাকি টাকা ধার দিয়ে বেড়াস বন্ধুদের?’
“কে বলেছে,আঁখি এ খবরও বাতলে দিয়েছে?’
“বেশ করেছে,এত হাতেম তাই ফলাতে হবে না তোকে,সমাজ এত সহজ না,আর তোর বয়সই বা কত যে বন্ধুরা তোর কাছ থেকে টাকা নিবে।খবরদার মুহিন আমি যেন এসব আর না শুনি।’
“হুম ঠিক ঠিক আছে জো হুকুম মেরে আকা।’
“আব্বুর দিকে খেয়াল রাখবি,কিছু খেতে চাইলে বলবি দুজনে এসে খেয়ে যাবি,আমি না হয় রান্না করে পাঠাবো।’
“হ্যা আপু বহুদিন তোমার হাতের রান্না খাইনা,কতো শখ ছিল এবার তোমার হাতের মুরগীর ঝোল খাবো।’
“ঠিক আছে চল আজ খাওয়াবো।’
“না আজ না আজ তোমাকে দিয়ে এসে অন্য জায়গায় যাব কাজ আছে।’
“কই যাবি আবার?’
“আমি তো কোচিং করি আবার করাইও তুমি জানো না?’
“হুম।’
মুহিন মিতুকে দিয়ে আসে।
বাসায় আর ঢোকে না অনেক কাজ তার।
ফের মিতু বলে,”তুই কতদিন এভাবে আমাকে দিয়ে আসবি,যেদিন একা বের হই সেদিন।’
“একা কেন বের হবা,দুলাভাই থাকলে,তার সাথে নাহলে নীবিড় ভাই অথবা বাবাইকে সাথে নিবা।’
“আবার নীবিড় উফ্ফ ‘মনে মনে আওরায় মিতালী।
“কেন একা বের হলে কি হয়,গাড়ী তো আছেই।’
“গাড়ী থাকলে কি একা বের হবা না,দিনকাল খারাপ বুঝছো।’
বেশ একটা মুরব্বী ভাব মুহিনের।
মুহিন চলে যায়।
মিতু ঘরে ঢোকে।দরজাটা খোলা দেখে অবাক।ড্রাইভার লাগেজ পৌঁছে দেয় ঘরে।
“ঘরে কি কেউ নেই,দরজা খুলে দিল কে তাহলে?’
হঠাৎ আচমকা হ্যাচকা টানে পেছন থেকে মিতুকে জড়িয়ে ধরলো দুটো রোমশ হাত।
শিউরে কেঁপে ওঠে মিতু…..(চলবে)নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের ঠিকানা ওয়েবসাইট এবং গল্পের শহর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে করে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই নোটিফিকেশন পান দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-৪২
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
নিঃশ্বাস এর শব্দ আর শরীরের ঘ্রান শুঁকেই মিতু বুঝে যায়,এ যে আর কেউ নয়,তার প্রিয়তম সবচেয়ে কাছের মানুষটা,তার ভালোবাসা….
মিতু বন্ধনের দিকে ফিরে তার রোমশ বুকে হাত দিয়ে ঘুষির মতো করে ছোট ছোট কয়েকটা ঘা দেয়।
“কই ছিলেন বলেন,কেন এত কষ্ট দেন আমাকে?এতদিন আমাকে ছাড়া কিভাবে পারলেন থাকতে….?’
শিশুর মতো অবুঝ হয় মিতু,ছোট বাচ্চাদের মতো ফোঁপাতে থাকে সে।
বন্ধনের খুব ভালো লাগে মিতুর এই আল্লাদি আচরন।এমনি বাচ্চা বাচ্চা মায়ামায়া চেহারা মিতুর তার উপর এমন আল্লাদিপনা বন্ধনকে কি এক আবেশে কোথায় যে হারিয়ে নিয়ে যায়?ভেবে পায় না বন্ধন,
“এত মায়া কোথা থেকে পেল মেয়েটা….’
“আমি এই এতদূর থেকে ছুটে এসেছি শুধু তোমার জন্যে আর তুমি আমাকে কিল ঘুষি দিচ্ছো বাবু?’
“বেশ করেছি।জানেন প্লেনে কত কষ্ট হয়েছিল আমার?সারা রাস্তায় বমী করেছি,আর আপনাকে ডেকেছি।’
“জানি গো সোনা।’
“আচ্ছা কাপড় ছাড়েন,কি খাবেন বলেন।’
আল্লাদে আটখানা মিতালীর স্বামীকে কাছে পেয়ে।
“তোমাকে খাবো।’
“ছিছিঃ কি বলেন এগুলি?’লজ্জায় লাল মিতুর।
“ঐ ছিছিঃ কি আবার, আমার বউকে আমি খাবো,তাতে কার কি?সেই এতদূর ইন্সপেকশন ফাঁকি দিয়ে তোমাকে খাওয়ার জন্যে এসেছি।খাওয়া শেষ করে আবার যেতে হবে….’
“এত অশ্লীল কেন আপনি?অসভ্যদের মতো কি বলেন ছিঃ…’
“ওতো ছিঃ ছিঃ করছো কেন?আমরা পুরুষ মানুষ এমন অশ্লীলই বুঝছো?আর তোমার মতো নরম তুলতুলা জিনিস পাইলে কারো মাথা ঠিক থাকবে নাকি?’
“তাই বলে খাওয়ার কথা কেন বলেন অসভ্যদের মতো?’
“শুনো টাঙাইলের চমচম কি মানুষ মজা করে খায় না?ঐটার টেসট্ একবার যখন পায় তখন কি সে একবারেই খেতে চায়?ঐটা তখন বারবার খেতে চায় বুঝছো….’
মিতু ঘাবড়ে যায় বন্ধনের কথা শুনে,হাবিজাবি কিছু খায়নি তো বাবু?নাকি শরীর খারাপ করেছে?কি বলছে বন্ধন এসব কাজের চাপে লোকটার মাথাও বোধহয় খারাপ হয়ে গেছে।চেহারাটাও কেমন ভিলেনদের মতো লাগছে মিতুকে কাছে পেয়ে।
মিতুর চিবুকে সোহাগের পরশ বুলিয়ে ফের বলে,
“তুমি হইলা আমার টাংগাইলের চমচম, বারবার খাইতে মন চায়…’
“উফফ্ কি যে শুরু করেছেন আপনি?হয়েছে হয়েছে যান এখন কাপড় চোপড় ছাড়েন,আমি টেবিলে ভাত দিচ্ছি।আচ্ছা বাবাই কোথায়?’
“ওকে পাঠিয়ে দিয়েছি নীবিড়ের সাথে।’
“কেন?ওর না স্কুল?’
“কেন বুঝো না?’
“হুম।’
বন্ধন গোসলে যায়।মিতু তার স্বামীর কাপড় চোপড়,তোয়ালে গুছিয়ে দেয় নিত্যকার মতো।বাবু বলছিল ইন্সপেকশন ফাঁকি দিয়ে এসেছে,তারমানে আবার চলে যাবে?মনটা ফের খারাপ হয় মিতালীর।কিন্তু বাসা একেবারে খালি,বন্ধনের হাবভাবও সুবিধের নয়।কি আছে মনে কে জানে?ভাবতে থাকে মিতু।
মিতুও ফ্রেশ হয়ে নেয়।টেবিলে ভাত বাড়ে মিতু।মুরগীর তরকারী আগেই রান্না ছিল মিতু ওভেনে গরম করে নেয়।ভাতটা নিজে রান্না করে।
খাবার টেবিলে বসে দুজন।
“বমীটা কমেছে তোমার।’
“হুম।অনেকটাই।আচ্ছা বুয়াকে খবর দেই?’
“আবার বুয়া কেন?সোয়ামী কাছে কাছে থাকতেসে এইটা ভালো লাগতেসে না আপনার?’
“হুম।আপনি না বল্লেন আবার চলে যাবেন?’
“যখন যাবো,যখনটা তখন দেখা যাবে।’
দুজনের খাবার শেষ হলে,আচমকা মিতালীকে কোলে তুলে নেয় বন্ধন।
“এই কি করেন?’
“দেখি আর কতো ভারী হয়েছো তুমি?এখন তো একটা না সাথে আবার আরেকটা।’
দুজনেই হেসে ওঠে।
মিতালীকে শোবার ঘরে পৌঁছে দেয় বাবু।
“সুন্দর একটা শাড়ী পড়ো যাও,পাতলা শাড়ী পড়বা আর হালকা একটু সাজবা,সুন্দর করে।
“টেবিল গুছাতে হবে তো?’
“আমি গুছিয়ে দিচ্ছি।’
বন্ধন হোম থিয়েটারে ইংলিশ সং ছাড়ে,ফুল ভলিউমে
“Take me to another place
hold me tight
wana hear your heart ….’
বন্ধন টেবিল গোছাতে থাকে।মিতুর বেশ আনন্দ লাগছে আবার কেমন জানি একটু ভয়ও।মতলব কি বাবুর।
সুন্দর একটা গোলাপী,ফ্লোলেল শেডের সফট শাড়ী বের করে পড়ে মিতু।
বন্ধন আসতে আসতে, সুন্দর করে সাজিয়ে নেয় মিতু নিজেকে…..(চলবে)