গল্প :- #দ্বিতীয়_স্ত্রী
পর্ব :- ০৫ এবং শেষ
Writing by Kabbo Ahammad
.
.
-:”তারপর লাগেজ হাতে বাড়ির বাইরে এসে দাঁড়ালো নুপুর, চোখের জল মুছে সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে যাবার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই পেছন থেকে দাদী ডেকে বললো,
–‘জানি তোকে আটকে রাখার কোনো পথ নেই, তুই চলে যাচ্ছিস, আর তোর সাথেই চলে যাচ্ছে এই বাড়ির হাসি আনন্দ: যেখানেই থাকিস ভালো থাকিস এটাই কামনা।
কাব্য তখন দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ, কিছু বলছে না।
নুপুর এখনও খুব ধীরে ধীরে পা ফেলে এগোচ্ছে শুধু কাব্যর একটি ডাকের অপেক্ষায়, কিন্তু সেই ডাক শোনা নুপুরের ভাগ্যে নেই। একবুক যন্ত্রণা, হতাশা আর চোখের জল নিয়ে চলে গেল নুপুর। মেয়েটি এসেছিলো একবুক আশা নিয়ে, আর ফিরলো একবুক যন্ত্রণা নিয়ে। এসেছিল দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে, আর ফিরলো দুচোখ ভরা জল নিয়ে। হয়তো বিধাতা সুখ লেখেননি নুপুরের কপালে! কিছু জীবন দুঃখের সাগরে হাবুডুবু খায়, তবুও বাঁচে একটু সুখের আশায়, সেই আশা পূর্ণতা না পেলে জীবনটা থেকে যায় যন্ত্রণাময়। নুপুরের জীবনটা হয়তো এমনই।
এরপরে কাব্যর মা-বাবা, দাদী, ছোট ভাই রায়হান, সবাই যে যার মত রুমে চুপচাপ বসে আছে, পুরো বাড়ি জুড়ে শুধুই নীরবতা। তখন কাব্য ড্রইং রুমে এসে চেচিয়ে বললো,
–‘বাহ! যে চলে গেলে আমার পথের কাটা দূর হয়, সে চলে গেল বলে সবাই শোক পালন করছো? আমার থেকে ঐ মেয়েটা তোমাদের কাছে বেশি দামী হয়ে গেল!
কিন্তু কাব্যর কথার কেউ কোনো জবাব দিলো না, সবাই আগের মতোই চুপচাপ।
কারন- মেয়েটি এসে অল্প কদিনে সবার মন জয় করে নিলো, শুধুমাত্র কাব্যর মনে ঠাই মিললো না।
তার একটু পরেই কলিং বেল বেজে উঠল। কাব্য দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে নীলাকে দেখে খুশীতে আত্মহারা। তখন সবাইকে ডেকে ডেকে চেচিয়ে বললো,
–‘মা-বাবা, রায়হান, দাদী তোমরা সবাই দেখে যাও আমার নীলা ফিরে এসেছে, আমি জানতাম নীলা ফিরে আসবেই।
কিন্তু কারো কোনো সাড়া নেই, সবাই আগের মতোই যে যার ঘরে চুপচাপ বসে আছে।
এদিকে নীলা এগিয়ে এসে সোফায় বসে কাব্যকে বসতে বললো। আর কাব্য ও নীলার মুখোমুখি বসলো। তারপর নীলা বললো,
–‘আচ্ছা কাব্য, যে জিনিসটা তোমার অপ্রিয়, সেটা বারবার তোমার সামনে এলে কেমন লাগবে?
–“অবশ্যই বিরক্ত লাগবে।
–“তাহলে তুমি কেন বুঝছো না আমি স্বইচ্ছায় আলাদা হয়ে যাবার কারণ এটাই যে তোমাকে আমার ভালো লাগেনা। তোমার উগ্র মেজাজ, অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, গম্ভীর স্বভাব, এগুলো চুপচাপ মেনে নিয়ে চলা হয়তো একটা রোবটের পক্ষে সম্ভব, কিন্তু আমার মত রক্তে মাংসে গড়া কোন মানুষের পক্ষে নয়।
–“এগুলো কি বলছো নীলা!
–“হ্যাঁ একদম ঠিকই বলছি, তুমি কি করে ভাবলে তোমার মতো একটা লোকের কাছ থেকে মুক্তি পাবার পরে আবার আমি তোমার কাছে ফিরে আসবো।
আর হ্যাঁ আমার মন বুঝতে পারে, স্ত্রী হিসেবে যতটুকু মূল্যায়ন করা উচিৎ, আমার ইচ্ছা অনিচ্ছার দাম যার কাছে আছে, এমন একটা লোককে আমি জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়ে গেছি, এবং তাকে নিয়ে আমি খুব হ্যাপি। তুমি শুধু শুধু বারবার ফোন, মেসেজ এসব করে আমাকে বিরক্ত না করলেই আমি খুশী হবো। এবং এসব বলার জন্যই শেষবারের মতো এখানে আসা, তোমার সাথে পুনরায় সংসার করার জন্য নয় মিঃ কাব্য। (নীলা)
এসব কথা শেষে নীলা উঠে হনহন করে হেটে চলে গেল। আর কাব্য ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। মা-বাবা, রায়হান এবং দাদি সবাই এক যায়গায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। এরপর একবার সকলের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে কাব্য ও চুপচাপ নিজের রুমে চলে গেল।
এরপরে প্রচন্ড ভাবে ভেঙে পড়েছে কাব্য, কারন- কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারছে না। যাকে এতটা ভালোবাসলো সেই নীলার কাছে কি’না কাব্য বিরক্তিকর, উগ্র মেজাজী!
আবার এই কাব্যকে ভালোবেসে আগলে রাখবে বলে এত যন্ত্রণা সহ্য করেও নুপুর শেষমেশ কাব্যর ভালোবাসা পেতে ব্যর্থ হয়ে একবুক যন্ত্রণা নিয়ে চলে গেল।
নুপুরের ভালোবাসা কাব্য এখন ভীষণ করে উপলব্ধি করতে পারছে, প্রতিটি মূহুর্তে নুপুরের সাথে করা অন্যায়ের অপরাধ বোধ খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে যন্ত্রণা দিচ্ছে কাব্যর হৃদয়ে।
আজ দুদিন হলো কাব্য ঠিকমতো নাওয়া খাওয়া নেই, বেহাল দশা। তখন দাদী এসে কাব্যর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
–‘অতোটাও দেরি হয়ে যায়নি, এখনও সময় আছে, চল নুপুরকে ফিরিয়ে নিয়ে আসি।
দাদীর কথায় আর অমত করলো না কাব্য। সকলে মিলে রওনা দিলো নুপুরের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
নুপুরের গ্রামের বাড়িতে এসে উপস্থিত সবাই, কাব্য এসেই নুপুরের মা-বাবার কাছে বললো,
–‘আমি ভীষণ অন্যায় করে ফেলেছি নুপুরের সাথে, ভীষণ কষ্ট দিয়েছি, এর জন্য আপনাদের কাছে ক্ষমা চাই, এবং নুপুরের কাছেও ক্ষমা চাইবো, ও যদি ক্ষমা করে তবে আমি আমার স্ত্রীকে নিয়েই বাড়ি ফিরবো।
তখন নুপুরের মা বললো,
–‘নুপুর বাড়ির পেছনের দিকেই আছে আসুন সবাই।
এরপরে সবাই বাড়ির পেছনে আসলো, কিন্তু নুপুর কোথায়? তখন কাব্য প্রশ্ন করলো,
–‘কোথায় নুপুর?
নুপুরের বাবা আঙ্গুলের ইশারা করে একটি নতুন কবর দেখিয়ে বললো,
–‘ঐ তো ঐ কবরে শুয়ে আছে।
এটা শুনে হঠাৎ সবার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো! এটা হতে পারেনা, এটা মেনে নেবার মতো নয়।
সাথে সাথেই নুপুরের মা কান্নায় ভেঙে পড়ে বললো,
–‘আপনাদের ওখান থেকে যেদিন চলে আসে, সেদিন গাড়িতে বসে ফোন করে অনেক কথা বলেছে নুপুর। বলেছিল দূরে কোথায় চলে যাবে, হারিয়ে যাবে কোন এক অজানায়। এর কয়েক ঘন্টা পরে কেউ ফোন করে সড়ক দুর্ঘটনায় নুপুরের মৃত্যুর কথা জানায়। মেয়েটা আমার ঠিকই হারিয়ে গেল দূর হতে দূরে, তুই অপেক্ষায় থাক মা, দেখা হবে পরপারে।
সবার চোখ জলে টলমল করে উঠলো, কান্নায় ভেঙে পড়লো সবাই।
এই প্রথমবার কাব্য চৌধুরীর চোখে জল দেখলো সবাই, হাউমাউ করে কেঁদে উঠে দৌড়ে গিয়ে নুপুরের কবরের পাশে বসে বিলাপ করতে লাগলো,
–‘আমার ভুল হয়ে গেছে নুপুর, আমাকে ক্ষমা করে দাও, ফিরে আসো নুপুর আর একটি বার সুযোগ দাও।
——–সমাপ্ত।