ঝরা_ফুলের_কান্না পর্ব শেষ

সত্য ঘটনা অবলম্বনে
#ঝরা_ফুলের_কান্না
#রাবেয়া_সুলতানা
#১৯

সন্ধ্যায় অনেক বার শাদাবকে কল দিলো সম্পূর্ণা।কিন্তু শাদাব রিসিভ করেনি। রাত যখন বারোটা তখন শাদাব নিজেই কল দিয়েছে।
-” কী ব্যাপার! এতবার কল দিয়েছ কেন? সব ঠিক আছে তো?”
-” হ্যাঁ ঠিক আছে। তুমি কেমন আছ?”
-” ভালো না। একটা ঘটনা ঘটে গেছে।”
সম্পূর্ণা ভয়ে ভয়ে বলল, ” কী হয়েছে?”
-” আর বলো না! যে দুই বন্ধুর সাথে শেয়ারে ব্যবসা করতাম একজন আমাদের অনেক টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে।”
-” তোমরা কী ওর কাছে টাকা দিয়ে রাখ?”
-” বোকার মতো কথা বলো না। আমি দেশে গিয়েছিলাম না! তখন আমার ভাগেরটা ওকে বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছিলাম। আর সে এমন কাজ করবে আমি ভাবতেও পারিনি।”
সম্পূর্ণা অসহায় গলায় বলল,” এখন কী করবে ভাবছ?”
-” এখন যা করার তুমি করবে। তোমার বাবার কাছ থেকে আমাকে ত্রিশ লাখ টাকা নিয়ে দাও। আমি কয়েকমাসের মধ্যে দিয়ে দিব।”
সম্পূর্ণা কঠোর গলায় বলল, ” আমার বাবা টাকা পাবে কোথায়?”
-” কেন! তোমার দুই ভাই লন্ডন আরেক ভাই দুবাইতে থাকে টাকার কী তোমার বাবার অভাব আছে নাকি?
দেখ সম্পূর্ণা তুমি তোমার বাবার কাছ থেকে কীভাবে টাকা নিবে আমি জানি না। তবে টাকাটা তোমাকে নিতে হবে। আমার খুব প্রয়োজন।”
-” তুমি মরে গেলেও টাকার কথা আমি বাবাকে বলতে পারবো না। আমার বাপ ভাইয়ের ঠেকা পড়েনি তোমাকে টাকা দেওয়ার জন্য।”
শাদাব অবাক গলায় বলল,” আমি ধার চাইছি সম্পূর্ণা। আমি তো বলেনি টাকাটা আমি সারাজীবনের জন্য নিব।শুধু মাত্র কয়েকটা মাসের জন্য।”
-” যাইহোক না কেন! টাকা আমি চাইতে পারব না। এরচেয়ে বরং তুমি আমাকে মেরে ফেলো। আমার বাবার কী এতই ঠেকা পড়ছে তোমাকে টাকা দিবে। তাদের মেয়ে বিয়ে দিয়েছে বলে এই নয় তারা তোমাকে টাকা দিতে হবে।”
-” তার মানে তুমি বলবে না!”
-” না!”
শাদাব সেদিন আর কিছুই বলল না। ভেবেছিল সম্পূর্ণাকে পরে আবার বুঝিয়ে বলবে। সম্পূর্ণাও লামিয়ার সাথে তার বাপের বাড়ি যাবে সে কথা আর জানায়নি। জানালে হয়তো তার যাওয়া হবে না।
সারারাত ঘুমায়নি সম্পূর্ণা। চটপট করতে করতে তার রাত পার হলো।
সকালেই নাশতার টেবিলে সম্পূর্ণা তার বাবাকে টাকার কথা বলল।
সাইফুল ইসলাম অবাক হয়ে আতিকা বেগমের মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। আতিকা বেগম বললেন,” এত টাকা কীভাবে জোগাড় করবো?”
সম্পূর্ণা ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল, ” সেটা তো আমি জানি না মা। শৈলীর বাবার ত্রিশ লাখ টাকা লাগবে আমি এটাই বুঝি। তোমরা কীভাবে দিবে সেটা তোমরা জানো। তোমার ছেলেদের বলো টাকাটা দিতে তাহলেই তো হয়। তিন জনে মিলেই কী ত্রিশ লাখ দিতে পারবে না?”
আতিকা বেগম করুণ গলায় বললেন,” সম্পূর্ণা এতগুলো টাকা বললেই তো হয়ে যায় না।”
-” হয়ে যায় না মানে কী? ও কী তোমাদের কিছু চেয়েছে? ওর মতো ছেলে তোমাদের মেয়েকে বিয়ে করে উদ্ধার করেছে এটাও তো তোমাদের কপাল। ওকে ত্রিশ লাখ নয় এক কোটি দিলেও ঋণ শোধ হবে না। ও তো ধার হিসেবে চাইছে। এখন তোমরা কীভাবে টাকা জোগাড় করবে আমি জানি না।”

লামিয়া ঘন্টা খানেক পর এসে বলল,” শাদাবকে বলেছিস? আমরা আজ বিকেলেই যাব।”
সম্পূর্ণা তখন সাত পাঁচ না ভেবেই বলল, ” বলেছি। ও যেতে বলেছে।”
আতিকা বেগম অবাক হয়ে বললেন,” কোথায় যাবি তোরা?”
লামিয়া হাসি মুখে বলল,” আমার বাপের বাড়ি চাচী।”
-” সম্পূর্ণা যাবে কেন?”
সম্পূর্ণা এগিয়ে এসে,” মা আমিই ভাবিকে বলেছি যাব। সারাদিন তো বাড়িতেই থাকি। বিয়ের পর তো আত্মীয় স্বজনের বাড়ি চোখেও দেখি না। তাই ভাবিকে বলেছি আমাকে নিয়ে যেতে।”
আতিকা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে,” শাদাব যদি কিছু বলে?”
-” বলবে না। আমি বলেছি না?”
-” তাহলে যা। লামিয়া কাল কিন্তু ফিরে আসিস মা।”
-” ঠিক আছে চাচী।”
বিকেলেই রওনা হলো লামিয়া আর সাথে সম্পূর্ণা।
লামিয়া বাড়িতে ঢুকতেই সবাই অবাক। অনেকদিন পর লামিয়া বাপের বাড়ি এসেছে। সামনের রুমে বসেছে সবাই। লামিয়া চাচাতো বোনকে দেখে,” কিরে তুই কবে এলি?”
-” আজ সকালেই। আম্মার অবস্থা ভালো না। তাই আমিও দেখতে আসছি।”
-“থাকবি নাকি কয়েকদিন?”
-” না কাল সকালেই চলে যাব। আমার মেয়েরা আবার ঘরে একা। তোর সাথে তোর চাচাতো ননদ না এইটা?”
-” হ্যাঁ। সম্পূর্ণা আর ওর মেয়ে। আচ্ছা আমাদের আফরা না-কি এই বাড়িতে। কই দেখছি না যে?”
-” ছিল তো এতক্ষণ এইখানে। এমন সময় আফরা এসে সালাম দিয়ে,” আরে আপা কখন এসেছেন?”
-” এইতো কিছুক্ষণ। আমার ননদ।”
আফরা তাকেও সালাম দিয়ে সামনে বসে অনেকক্ষণ যাবত খেয়াল করলো সম্পুর্ণা তার দিকেই চেয়ে আছে। আফরা মাঝেমধ্যে চোখেচোখ পড়লেই মুচকি হাসি দিচ্ছে। তারপর উঠে গিয়ে মেজ জাঁ-কে বলল,” ভাবি,মেয়েটা আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে কেন?”
-” কে জানে। জানিস মেয়েটার জীবনে অনেক কাহিনি আছে। তুই এককাজ কর আপাদের নাশতা দিয়ে আয়। আমি এইদিক সামলাচ্ছি।
আফরা নাশতা নিয়ে সামনে দিয়েছে। তখনও সম্পূর্ণা তাকিয়ে আছে। রাতে যখন খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই ঘুমাতে যাবে তখন সম্পূর্ণা বলল সে আফরার সাথে ঘুমাবে। আর সে ঘুমাতে এসে আস্তেআস্তে আফরার সাথে মিশতে লাগলো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,” আমি চাইছি আমার গল্পটা ছোট করে হলেও লেখা হোক। আমার সাথে কোনো লেখক বা লেখিকার যোগাযোগ নেই। কাউকে তেমন চিনি না। কিন্তু ফেসবুকে আপনাকে দিয়ে আমার গল্প পড়া।আর যখন জানলাম আপনিই আমার ভাবির ভাইয়ের বউ তখন তো না দেখা করে উপায় কী!”
আফরা সব শুনে বলল,” টাকাটা তো আপনি বাবা মায়ের কাছে চাইলেন তাহলে কেন আর শাদাবকে বললেন টাকা দিবেন না?”
-” বলেছি কারণ আমার বাবা যদি না জোগাড় করতে পারে? তখন তো শাদাব আমাকে কথা বলতে এক চুল ছাড় দিবে না। এখন তো না দিলে বলতে পারবো আমি আগেই বলেছি টাকার কথা বলতে পারবো না।”
-“আমার কাছে শাদাবকে কেমন জানি লাগে? আপনার কাছে লাগে না?”
-” না। কারণ ও সত্যিই অনেক ভালো ছেলে। আমি ওকে বুঝি। ও আমাকে ভালোবাসে কিন্তু আমার অতীত তাকে কষ্ট দেয়। আসোলে ও চায় আমি এমন ভাবে চলি যাতে ওর পরিবার আমাকে অনেক ভালোবাসে।সবাই যেন বলে শাদাবের বউ যোগ্য বউ। আবার তার মা কিংবা বোন আমাকে কিছু বলতে পারবে না। তাদেরকেও সে ছেড়ে কথা বলে না। তার বউকে কেউ কিছু বলতে পারবে না। যা বলার ও নিজেই বলবে। তাই ওকে আমার ভালো লাগে। এমন তো না নিজের স্ত্রীকে অন্য মানুষের দ্বারা অপমান করে!”
চারদিকে ফজরের আজান দিতে লাগলো। আফরা তখন বলল,” নামাজ পড়ে আসি।”
সম্পূর্ণাও নামাজ আদায় করে শুয়ে বলল,” লিখবেন তো আপনি আমার গল্পটা?”
আফরা মুচকি হেসে,” আমার হাতে একটা বইয়ের কাজ আছে। সেটা শেষ করে না হয় শুরু করবো।”
-” ঠিক আছে আপনার যখন সময় হবে। তবে কোনো তাড়া নেই। যখন আপনার ইচ্ছে জাগবে।”
সেদিনের মতো আর কথা হলো না। সকালেই সম্পূর্ণা চলে গেল। কেটে গেল কয়েকটা মাস। আফরার শ্বাশুড়ি মারা যাওয়ার কথা শুনে লামিয়া সন্ধ্যায় আসতে পারেনি। পরেরদিন ভোরে সে এসেছে। সারাদিন নানা ব্যস্ততায় লামিয়ার সাথে কথা হয়নি আফরার। সন্ধ্যায় আফরা জিজ্ঞেস করলো আপা আপনি এত দেরি করে এলেন যে? মা মারা গেল সন্ধ্যায় আর আপনি আসছেন ভোরে! সন্ধ্যায় আপনাকে ফোন দেয়নি কেউ?”
-” আর বলিস না। সম্পূর্ণার মাটি দিতে রাত বারোটা বাজছে। আমার চাচী শ্বাশুড়ির তো একবার অজ্ঞান হয় আবার ফিরে আসে। উনারে রাখে কীভাবে আর এত রাতে আসি। তাই ভাবলাম চাচীর যখন সকালেই মাটি হবে ভোর বেলায় যাব।”
লামিয়ার কথা শুনে আফরা হতভম্ব হয়ে আপা সম্পূর্ণা কী ওই মেয়েটা? যে আমাদের বাড়ি এসেছিল?”
-” হ্যাঁ!” কথাটা বলে লামিয়া উঠে গেল কারো ডাকাতে। আফরা সেখানে অবাক নিস্তব্ধ নির্বিকার হয়ে বসে আছে। কী শুনলো সে? লামিয়াকে পিছন থেকে ডাকার তার সাহস হচ্ছে না। এত কষ্টের পর মৃত্যু সেটাই কী দুনিয়ার নিয়ম? বাস্তবতা কী এতটাই কঠিন?
সেদিন এই ব্যাপারে লামিয়ার সাথে কোনো কথা হয়নি তার। পরেরদিন আফরা লামিয়াকে আবার সেই এক প্রশ্ন। সম্পূর্ণার কী এমন হলো? যার কারণে শেষ তার মৃত্যুটাই বরণ করতে হয়েছে?”

লামিয়া বললতে লাগলো,” এই বাড়ি থেকে যাওয়ার পর শাদাব আবার ফোন করে টাকার জন্য। টাকার ব্যবস্থাও করে দিয়েছিল সাইফুল ইসলাম। টাকা পাওয়ার পরপরই শাদাব দেশে আসে। এইদিকে সম্পূর্ণার ডেলিভারি সময় হয়ে আসছে। ডাক্তার কাছে নিয়ে যখন জানতে পারলো এইবারেও মেয়ে তখন শাদাব কিচ্ছু বলল না। বরং সম্পূর্ণাকে শান্তনা দিতো।কিন্তু তার মা আর বোনের বকবকানি যেন দিনদিন বেড়েই চলেছে। ইয়াসমিন বেগমের এক কথা। একটা ছেলে হলে কী এমন ক্ষতি হতো। এইভাবেই কয়েকটা মাস যেতেই ডেলিভারি দিন নার্স খবর দেওয়া হয়েছে। শাদাব বলেছিল হসপিটাল নেওয়ার জন্য। কিন্তু ইয়াসমিন বেগম বললেন আগেরটা যখন বাড়িতে হয়েছে এবারেরটাও হবে। আর হসপিটাল নিলে ডাক্তাররা নান অযুহাত দেখিয়ে সিজার করাবে। মেয়ে যখন হবে সিজার করানোর তো প্রশ্নই আসে না।”
শাদাব মায়ের কথাই মেনে নিলো। সম্পূর্ণার ব্যথায় যখন চিৎকার করছিল শাদাব ড্রইংরুমে বসে স্তব্ধ হয়ে আছে। নার্স তখন ইয়াসমিন বেগমকে বললেন,” দেখুন বাচ্চার পজিশন ঠিক নেই। আপনারা হসপিটাল নিয়ে আসুন। আমার দ্বারা এইটা সম্ভব হবে না।”
ইয়াসমিন বেগম ধমকের স্বরে বললেন,” না পারলে আসছেন কেন? আমরা অন্য কাউকে খবর দিতাম।”
নার্স তখন বলল,” উনার আসল গার্ডিয়ান কই? মানে উনার মা! উনাকে ফোন দিন আমি উনার সাথে কথা বলবো।”
ইয়াসমিন বেগম বললেন,” ফোন দিতে হবে না। আপনি না পারলে বলুন।আমরা অন্য ব্যবস্থা করবো।”
নার্স মুখে কিছু না বলে উঠে গিয়ে শাদাবের কাছে গিয়ে বলল,” আপনার শ্বাশুড়িকে একটা কল দিন। আপনার ওয়াইফের অবস্থা ভালো না।”
শাদাব তাড়াতাড়ি ফোন বের করে দিয়ে আতিকা বেগমকে ফোন দিয়ে নার্সকে দিলেন।”
নার্স সালাম দিয়ে নিজের পরিচয় বলে বলল,” আপনার মেয়ের অবস্থা ভালো না। আপনার মেয়ের ডেলিভারি আপনি আসেননি কেন?”
-” আমি তো জানিই না। এখন কী অবস্থা আমার মেয়ের?”
-” আপনার মেয়েকে হসপিটাল এখুনি নিতে হবে। কিন্তু আপনার বেয়াইন মানছেন না।”
আতিকা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বললেন,” আপনি যেভাবে হোক আমার মেয়েকে হসপিটাল নেওয়ার ব্যবস্থা করুন। টাকার জন্য চিন্তা করবেন না।”
নার্স তখন ভরসা পেলেন। আসোলে টাকার কথা প্রশ্নই আসে না। কিন্তু একজন মানুষও গা দিয়ে বলছেন না হসপিটাল নেওয়ার কথা। নার্স তখন নিজেই এ্যাম্বুলেন্স খবর দিলেন। সম্পূর্ণাকে হসপিটাল নেওয়ার জন্য যখন এ্যাম্বুলেন্সে উঠালো শাদাবের দিকে তাকিয়ে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছিলো সে। শাদাব সম্পূর্ণার সাথেই গেল। সম্পূর্ণার চোখের পানিগুলো সে মুছে দিচ্ছিলো।কিন্তু হসপিটালের দরজায় এসে যেন সব থমকে গেছে। শাদাবের হাতে হাতটা যেন নিস্তেজ হয়ে গেছে কিছু বুঝে উঠার আগেই। শাদাব অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তবুও হসপিটালের লোকগুলো এসে টেনে ভেতরের নিয়ে গেল। কয়েটা মিনিট না যেতেই খবর এলো সম্পূর্ণা আর নেই। শাদাব ঠিকি বুঝেছিল সম্পূর্ণার শেষ নিঃশ্বাস তার হাতের উপরে হাত রেখে গিয়েছিল। আতিকা বেগম আর সাইফুল ইসলাম দৌড়ে এলেন। এসেই যখন শাদাবকে স্তম্ভিত মুক্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে দেখে জিজ্ঞেস করার আগেই নার্স এসে সম্পূর্ণার লাশ দেখিয়ে দিলো। আতিকা বেগমের কান্নার চিৎকারে হসপিটালের একেকটা ইট যেন থরথর করে কাঁপছে।
শাদাবের চোখে কোনো পানি নেই। প্যান্টের পকেটে দু হাত গুজে শুধু শৈলীর দিকে তাকিয়ে আছে। সে কী ভাবছে কেউ জানে না। তার কী কষ্ট হয় না? কেউ হয়তো বুঝবে না। সে ভালোবাসতো কিন্তু প্রকাশ করার ক্ষমতা তার নেই। সম্পূর্ণাকে হসপিটাল সে আগেই নিয়ে আসতে পারতো কিন্তু সম্পূর্ণা নিজেই বলেছিল নরমাল ডেলিভারি হবে। মায়ের মতো সেও বলত হসপিটাল গেলেই মানুষ কিচ্ছু বুঝে না। ডাক্তাররা বংচং বুঝিয়ে সিজার করে ফেলে। তুমি আবার আমার ব্যথা উঠলে পাগল হয়ে যেও না। সময় নিও। পরিস্থিতি সামলাতে না পারলে হসপিটালের কথা চিন্তা করো। পরিস্থিতির বাহিরে যাওয়ার আগেই তুমিই চলে গেলে। কিন্তু আমাকে আর শৈলীকে কার কাছে রেখে গেলে? শাদাবের হয়তো ভাবনার জগত এমনি ছিল।

সম্পূর্ণা মারা যাওয়ার কয়েকদিন পরেই শাদাব ফ্রান্স চলে গেছে। যাওয়ার আগে মেয়েটাকে আতিকা বেগমের কাছে দিয়ে গেল। নিজের মা’কে ভরসা করতে পারছে না সে। ইয়াসমিন বেগম বিয়ে করার জন্য বললেও শাদাব শুধু বলেছিল জীবনে মানুষের একটাই বিয়ে। আর সম্পূর্ণা আমার জন্য সেই একজন হয়ে এসেছিল। হয়তো সম্পূর্ণা শাদাবকে শেষ সময় বুঝাতে পেরেছিল নিজের ভালোবাসা। যার কারণে শাদাব সম্পূর্ণাকে আগলে রাখতে চায় একান্তই নিজের মনে। শেয়ার করতে চায় না সম্পূর্ণার কোনো কিছু। আমাদের সমাজে মেয়েরা অবহেলিত। কিছু মেয়ে নিজের দোষে আবার কিছু মেয়ে ভাগ্যক্রমে। যে ভালোবাসা মানুষকে অন্ধ করে ফেলে সে ভালোবাসা জীবনে সুখ বয়ে নিয়ে আসে না। কয়েকদিনের ভালোবাসা কখনোই বাবা মায়ের ভালোবাসার থেকে বড় হতে পারে না। তাই বলবো ভালোবাসা হোক তবে যোগ্য মানুষের জন্যে। যা ভরসা, বিশ্বাস, আস্থায় পার করা যায় মরণ পর্যন্ত।

স মা প্ত