ঝরা_ফুলের_কান্না পর্ব ১৩+১৪

সত্য ঘটনা অবলম্বনে
#ঝরা_ফুলের_কান্না
#১৩

দুইদিন পর সম্পূর্ণা বাপের বাড়ি এলো। আশিক গিয়ে ওদের নিয়ে এসেছে সম্পূর্ণাকে। শাদাব সন্ধ্যায় আসবে ওর বন্ধুদের নিয়ে। ইয়াসমিন বেগম বললেন,” জামাই শ্বশুর যাওয়ার সময় কিছু নিয়ম আছে। কথাটা শুনে শাদাব বিরক্তিকর গলায় বলল, ” মা এইখানেও নিয়ম? তাও আবার এই মেয়ের জন্য?ইয়াসমিন বেগম গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,” জামাইদের কিছু নিয়ম থাকে।তবে না মানলেও সমস্যা নেই। আগে থেকেই যখন এই প্রথা প্রচলিত তাই এখনো মানুষ করে।”
-” কী প্রথা?”
-” আজকের দিনে গেলে জামাইদের মুদি বাজার থেকে শুরু করে মাছ মাংসও নিতে হয়।”
শাদাব মায়ের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে বলল,” আচ্ছা ঠিক আছে এখন আমি আসছি।”
-” সাবধানে যাস।”
শাদাব বাড়ি থেকে বেরিয়ে তার দুই বন্ধুকে ফোন দিয়ে নিয়ে এলো সম্পূর্ণাদের বাড়ি যাবে বলে।

সম্পূর্ণা আসার পর থেকেই ঘুমাচ্ছে। বাড়ির সবাই আসছে আর যাচ্ছে তাকে দেখার জন্য। কিন্তু সে কারো উপর তোয়াক্কা না করেই ঘুমিয়ে আছে তাবিয়ার রুমে। এই বাড়িতে আসার পর থেকে তাকে তার রুমে ঢুকতে দিচ্ছে না। কী আছে কে জানে? শুধু এইটুকুই বলছে শাদাব আসলে এক সাথে।
সন্ধ্যায় সাতটায় শাদাব এলো। আসার সময় বাজারের সব যেন ও নিয়ে চলে এসেছে। মনে হচ্ছে সুপার শপ খুলে বসেছে। সাইফুল ইসলাম সোফায় তাদের বসতে দিয়ে নিজে বসে, “কী দরকার ছিল এইগুলোর বাবা। তোমরা এখন শিক্ষিত পোলাপান। তোমরা যদি প্রথাটা ধরেই রাখো তাহলে সামনের জেনারেশন কী শিখবে? আগে দাদা দাদীরা মেনে আসছে তাই হয়তো সবাই এখনো একটু আকটু মানে। কিন্তু তুমি তো এলাহি কান্ড করে বসেছ।”
এমন সময় আতিকা বেগম তাবিয়া আর মেজ ভাবি এসেছে। সাথে কতরকমের নাশতা ট্রে-তে। শাদাব সবাইকে সালাম দিয়ে চোখ দুটো সম্পূর্ণাকে খুঁজছে। কোথায় গেল? আমি এসেছি সে কী শুনতে পায়নি? ভাবতে ভাবতে তাবিয়া বলে উঠলো, সম্পূর্ণা আসার পর থেকেই ঘুমিয়ে যাচ্ছে। এত করে ডাকলাম আসলো না এইখানে।”
শাদাব মনে মনে ভাবছে আমার কথা শুনেও সে এলো না? ওর তো বোঝা উচিত আমি এই বাড়িতে প্রথম এসেছি। কাউকে তেমন চিনিও না। একটু কাছে থাকলে সাহস পেতাম। আবার নিজের মনকে উল্টিয়ে বলল,” ঘুমাচ্ছে ঘুমাক। আসোলে আমিও মেয়েটাকে তেমন ঘুমাতেই দিইনি এই কয়টা দিন। সহ্য করে গেছে নাকি সুখী হয়েছ জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল। হঠাৎ করে আতিকা বেগম বললেন,” তাবিয়া, জামাইকে তোমার রুমে নিয়ে যাও। সম্পূর্ণা ওইখানে আছে আর তোমার চাচী শ্বাশুড়িরাও সেখানে। সবার বকবকানির মাঝেও সম্পূর্ণার কোনো খবর নেই। শাদাব এসে সবাইকে সালাম দিয়ে রুমে ঢুকলো। সবার দিকে একবার তাকিয়ে সম্পূর্ণার দিকে নজর দিলো। দেখে সে গুটিয়ে শুয়ে আছে। মুচকি হেসে সবার সাথে কথা বলছে আর সম্পূর্ণার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে আবার কথা বলছে। হঠাৎ সম্পূর্ণা চোখ খুলে দেখে শাদাব দাঁড়িয়ে আছে দরজার সাথে। তড়িঘড়ি করে উঠে বসে বিড়বিড় করে বলল কখন এসেছে আল্লাহ ভালো জানে। খাট থেকে নেমে শাদাবের সামনে গিয়ে,” তুমি কখন এলে?”
-“অনেকক্ষণ। উঠলে কেন আরেকটু ঘুমিয়ে নিতে।”
তাবিয়া তখন বলল,” ভাইয়া এসেছে তোমাকে একবার বলে গিয়েছি আমি। বাট তুমি ঘুমের ঘোরে খেয়াল করনি।”
-” ওহ।”
শাদাব বিড়বিড় করে বলল,” তুমি ভয় পাচ্ছ কেন এত?
সম্পূর্ণা দ্বিধা গলায় বলল, ” কই না তো।”
শাদাব আর কথা না বাড়িয়ে আবার চলে গেল ড্রইংরুমে। রাতে সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে,”সম্পূর্ণার রুম খোলা হলো তাবিয়া আর মেজ ভাবি লামিয়া আরও কয়েকজনে মিলে সম্পূর্ণাকে রুমের সামনে নিয়ে, “শাদাবকে বল টাকা দেওয়ার জন্য।এত কষ্ট করে বাসর ঘর সাজালাম এমনি এমনি তো যেতে দিব না।”
সম্পূর্ণা শাদাবের দিকে তাকিয়ে,” ওদের দাবিটা কী মিটানো যাবে?”
শাদাব সম্পূর্ণার কথা শুনে তাকে কিছু না বলে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে ভাবি আপাতত এইটা কী চলবে না?”
লামিয়া মুচকি হেসে বলল,” মোটামুটি চলে। তবে আজ ছেড়ে দিচ্ছি পরবর্তীতে ছাড়া হচ্ছে না।”
-” ন্যাড়া বেল তলায় একবারি যায় ভাবি।”
কথাটা বলতেই সবাই হাসাহাসি শুরু করলো। শাদাব কথাটা বলে সবার সামনেই সম্পূর্ণাকে কোলে নিয়ে রুমে এসে দরজাটা লাগিয়ে দিলো। তাবিয়ার রুমে এসে সবাই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললো।লামিয়া বলল,” মেয়েটা অনেক কষ্ট করেছে আল্লাহ এইবার একটু সুখ দেখালেই হলো। শাদাব ছেলেটা বেশ ভালোই মনে হচ্ছে। আমাদের সম্পূর্ণার ভুলগুলো শুধরে কীভাবে আপন করে নিয়েছে দেখেছিস?”
তাবিয়া এগিয়ে এসে বলল, ” আপনি ঠিকি বলেছেন ভাবি। নরক থেকে তো মুক্তি পেয়েছে এটাই অনেক।”
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে শাদাব ওয়াশরুমে যাবে। সম্পূর্ণা আগেই উঠে ফ্রেশ হয়ে রুমে এসেছে। নিজের চুল আঁচড়াতে আচঁড়াতে দেখে শাদাব ঘুম থেকে উঠে বসেছে। সম্পূর্ণা বলল, ” আমাদের বাড়িতে বেডরুমে এডজাস্ট ওয়াসরুম নেই। তোমাকে ড্রইংরুমের ওয়াশরুমে যেতে হবে। এই বাড়িটা আমার দাদু করে গিয়েছেন। দাদু মারা যাবার পর বাবা শুধু সামান্য আভিজাত্য ফুটিয়ে তোলেছে এতটুকুই।”
শাদাব গাঢ় গলায় বলল, ” আমি লুঙ্গি, তোয়ালে ব্রাশ নিয়ে ওয়াশরুমে যাব? এইটা তুমি ভাবলে কী করে?”
-” তাহলে?”
-” আমি যাচ্ছি তুমি আসো এইগুলা নিয়ে।”
কথাটা বলেই শাদাব বিড়বিড় করতে করতে এই জন্যইতো কাল ভাবছি আমাকে কমন ওয়াশরুমে নেওয়ার কারণ কী? এখন বুঝতে পারছি সেই কারণ। ”
শাদাব উঠে যেতেই সম্পূর্ণা পিছন পিছন এইগুলো নিয়ে হাঁটছে। শাদাবকে ব্রাশ এগিয়ে দিয়ে এইগুলো এইখানে রাখবো?”
-” ছি ছি এই জায়গায় রাখলে আমি আবার এইগুলা পরবো? সম্পূর্ণা তুমি এমন কেন? আমার পছন্দ অপছন্দ তোমার শীগ্রই জানা উচিত। ”
সসম্পূর্ণা দীর্ঘশ্বাস ফেলে,” আস্তে আস্তে জেনে নেব।”
সম্পূর্ণা দরজায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে শাদাব গোসল করে বেরিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেল। সম্পূর্ণাও পিছন পিছন। আতিকা বেগম বিষয়টা খেয়াল করলেন। তিনি লামিয়াকে বললেন,” লামিয়া, ব্যাপারটা আমার কাছে কেমন জানি লাগছে। ও বাথরুমে যাবে তাই বলে সম্পূর্ণা দাঁড়িয়ে থাকবে কেন?”আতিকা বেগম কথা শেষ করতেই সম্পূর্ণা তোড়জোড় দেখিয়ে বলল,” মা শাদাবের নাশতা হয়েছে? একটু তাড়াতাড়ি করো না!”
আতিকা বেগম কপাল কুঁচকে বললেন,” উঠলো তো মাত্র।তুই এমন দেখাচ্ছি যেন দুইমাস থেকে না খেয়ে আছে।”
-” মা বকবক ভালো লাগে না। নাশতাটা দাও আমি রুমে নিয়ে যাচ্ছি।”
লামিয়া বলল,” চাচী থাকনা। নাশতা তো রেডিই আছে।”
আতিকা বেগম আবার বললেন,” রুমে খাবে? কিন্তু তোর বাবা যে বসে আছে জামাইয়ের সাথে খাবে বলে।”
সম্পূর্ণা কথাটা শুনে কিছু না বলে নাশতা নিয়ে রুমে চলে গেল। আতিকা বেগম অবাক হলেন। সম্পূর্ণার হয়েছেটা কী? এক সাথে নাশতা খেলে কী হতো?”
সম্পূর্ণা এসে খাটের উপরে নাশতার ট্রে রেখে,” তুমি খাও আমি বসছি।”
-” তুমি খেয়েছ?”
-” আমি পরে খাব। তুমি খাও।”
শাদাব ধমক দিয়ে বলল,” পরে খাবে মানে? পরে আলসার হলে ডাক্তার নিয়ে আমাকেই দৌড়াতে হবে। হা করো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”
সম্পূর্ণা বুঝে উঠতে পারে না এই লোকটাকে। ভালো না-কি খারাপ বুঝা বড্ড দায়। একবার মনে হয় নিজেকে পতিতা-দের একজন। কারণ পতিতাদের কোনো সম্মান নেই। তারা রাত বিরাতে কাপড় খোলে পুরুষ মানুষের মনোরঞ্জন করে। সম্পূর্ণাও তো তাই করছে।শাদাব যখন খুশি আসবে এসেই যেন সম্পূর্ণার শরীরটাই তার সব। কিন্তু আবার কিছু কেয়ারিং দেখলে মনে হয়, না মানুষটা খারাপ না। হয়তো বিয়ের প্রথম প্রথম তাই এমন করে। শাদাব সম্পূর্ণাকে খাইয়ে দিয়ে বলল,” বিকেলে বাড়ি চলে যাব।”
সম্পূর্ণা মাথা উঠিয়ে বলল,” কেন?”
শাদাব রাগী চোখে তাকিয়ে,” মেয়ে মানুষ মেয়ে মানুষের মতো থাকবা। কিসের এত তর্ক! হুম?”
সম্পূর্ণা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো।
বিকেলে আতিকা বেগম মন খারাপ করে বলল,” মেয়েটা আসলো একদিন হলো না এখন যেতেই হবে? বাবা শাদাব থেকে যাও না বাবা?”
শাদাব একগাল হেসে বলল,” জি আম্মা” আমি তো থাকতেই চাইছি। কিন্তু সম্পূর্ণা থাকতে চাইছে না। ওকে কত করে বুঝালাম, আসলাম যখন থেকেই যাই। কিন্তু না ও আমাদের বাড়ি যাবেই।”
কথাটা শুনে সম্পূর্ণা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। শাদাব সম্পূর্ণার দিকে তাকিয়ে, ” তাই না সম্পূর্ণা?”
সম্পূর্ণা তড়িৎভাবে ঘনঘন উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো।
সাইফুল ইসলাম সম্পূর্ণার দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে উঠেই চলে গেলেন নিজের রুমে। আতিকা বেগমের কিছু আর বলার রইল না।
সেদিন বিকেলেই শাদাব বাড়ি ফিরে এলো। সত্য ঘটনা অবলম্বনে
#ঝরা_ফুলের_কান্না
#রাবেয়া_সুলতানা
#১৪

বিয়ের একমাস কেটে গেল। শাদাব বাড়ি থেকে চলে যাবে। আরও কয়েকটা দিন ছুটি ছিল। কিন্তু তার বন্ধু নকিব জরুরী ভাবে যেতে বলেছে। শাদাব, নকিব,আর তোসার তিনজনেই শেয়ারের ব্যবসা করে ফ্রান্সে। শাদাব চলে যাচ্ছে শুনে সম্পূর্ণার কোনো অনুভূতি নেই। এই অনুভূতিহীন মানুষটার অনুভূতি জাগিয়ে তোলার চেষ্টা কখনো করেনি শাদাব। শাড়ি আর গহনা পরে থাকলে অনুভূতি সৃষ্টি হয় না। জোর করে ভালোবাসায় অনুভূতি হয় না।এইতো কয়টা দিন আগের কথা। শাদাব টিয়া রঙের একটা শাড়ি এনেছিল। রংটার কথা ভাবলেই সম্পূর্ণার গা গুলিয়ে আসে। আর সেই রঙটাই শাদাব তার জন্য এনেছে।
সম্পূর্ণা শাড়িটা দেখে চুপ। মেয়েটার এমন পিনপতন নীরবতা দেখে শাদাব বলল,” পছন্দ হয়নি?”
সম্পূর্ণা এবার সহজ হলো। আস্তে করে বলল,” কালারটা যদি অন্য…”
মুখের কথা যেন মুখেই রয়ে গেল। তার আগেই শাদাব বলল,” শাড়িটা একদিন পরে ঘর মুছবে। আর এটাই আমার অর্ডার!”
সম্পূর্ণা অবাক হয়ে,” শাড়ি একদিন পরে ঘর মুছবো? এরচেয়ে বরং দোকানে দিয়ে কালারটা পরিবর্তন করা যায় না? শুধু শুধু টাকাটা অপচয়…!
-” তুমি আবার কথা বলছ? চুপচাপ শাড়িটা এখন পরবে। আর পরে আমার সামনে আসো।যাও!”
-” এখন?”
-” হ্যাঁ এখন।”
-” আম্মা বলেছেন উনাকে পানি গরম করে দিতে। বাতের ব্যথাটা বেড়েছে। ছ্যাক দিবে মনে হয়।”
-” পানি একঘন্টা পরে হলে কিচ্ছু হবে না। ওকে তুমি শাড়িটা পরো আমি বড় ভাবিকে বলে আসছি।”
-” ভাবি! ছি ছি ভাবি ভাববেন আমি তোমাকে পাঠিয়েছি নিজে পারবো না বলে।”
-” ভাবুক তাতে আমার কী?”কথাটা বলে শাদাব বাহিরে চলে গেল।
ভাবনাটা শেষ হতেই দীর্ঘশ্বাস তার। শাদাব এসে,” গোছানো শেষ? একটু পর আমাকে বের হতে হবে। যাওয়ার সময় কী আর বলব তোমায়! ফোন দিয়ে যাচ্ছি যদি শুনেছি আমি নেই বলে শরীরের জ্বালা মিটানোর জন্য ফোনে অন্য ছেলের সাথে কথা বলছ তাহলে পরেরদিন আমি বাড়িতে। আর আসলে কী অবস্থা হবে এটা তুমি খুব ভালোই জানো।”
সম্পূর্ণা স্থির হয়ে বসে রইল। কথাগুলো তার গায়ে লাগছে না। নির্বিঘ্নে তাকিয়ে আছে শাদাবের দিকে। সাদা শার্ট আর কালো কোটে তাকে বেশ লাগছে। ছেলেটা সুন্দর, খুব সুন্দর। ফর্সা, গালে খোচাখোচা দাড়ি চোখগুলো মেয়েদের মতো টানা, চুলগুলো সিল্কের মতো তবে সবগুলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সম্পূর্ণা ছোট বেলা শুনতো যার চুল নাকি খাড়াখাড়া সে নাকি খুব রাগী হয়। সম্পূর্ণা এই কথা বৃত্তিহীন ছাড়া কিছু ভাবে না। তবে আজ মনে কেন কথাটা নাড়া দিলো। হয়তো শাদাবকে দেখেই।
শাদাব রুমের দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে,” তোমাকে কী এখনো বলেকয়ে সব করাতে হবে?”
কথাটা শুনেই সম্পূর্ণা ধীরে দাঁড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল। সে অনুধাবন করলো তার চোখে বিন্দু বিন্দু জল জমেছে। এইটা কী সিন্দুতে পরিনত হবে? আচ্ছা শাদাব এখন কী করবে? যাওয়ার সময়ও কী বলবে সম্পূর্ণা চলো না আর মাত্র একবার! কিন্তু মানুষটা জন্য মায়া হচ্ছে। এতক্ষণ তো হয়নি। এখন হচ্ছে কেন? ভাবতে ভাবতেই শাদাবের স্পর্শ পেয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। শাদাব তাকে জড়িয়ে ধরে মাথার উপরে থুতনিটা রেখে,” স্যরি। এতদিন আমার জন্য এতকিছু সহ্য করার জন্য। আমি চেয়েছি তুমি শুধু আমার কথা ভাবো। বিয়ে যেহেতু হয়েই গেছে তুমি শুধু আমাকে নিয়ে থাকবে। তোমার চোখে, মনে, শরীরের প্রতিটি অঙ্গে শুধু আমার ছোঁয়া থাকবে। আমি চাই না আমার ঘরে থেকে তুমি অন্য পুরুষের স্পর্শ অনুভব কর। আমি চেয়েছি শুধু যেভাবে হোক তোমার মনে দাগ লাগাতে। আমি জানি আমি বেশি করে ফেলেছি। সত্যিই স্যরি।”
সম্পূর্ণা হাউমাউ করে কেঁদে শাদাবের শার্ট খামচে ধরে যেন বুকের ভেতর মিশে যেতে চাইছে। এইভাবে যদি বিয়ের পর একবার বলতো তাহলে নিজেকে নিজে ঘৃণা করে ওর কাছে যেতে হতো না। একমুঠো ভালোবাসা হলেও নিয়ে দাঁড়াতাম ওর দরজায়। সম্পূর্ণার এমন কান্না দেখে শাদাব ভেবেছে সম্পূর্ণা হয়তো তার জন্যই কাঁদছে। সে ভেবেই কথা দিলো দুইমাস পর সে আবার আসবে। কথাটা শুনে সম্পূর্ণা অবাক হলো।এখনো গেলই না কিন্তু চলে আসার নাম নিচ্ছে। নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে চোখমুখ মুছে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। শাদাব সম্পূর্ণার কপালে এক টুকরো ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।
কেটে গেল কয়েকটা দিন।

পিরিয়ড হচ্ছে না দেখে সম্পূর্ণা ভাবলো এমনিই হয়তো হচ্ছে না। এইদিকে মেজ ভাবি চলে যাবে লন্ডন। তাই সাইফুল ইসলাম সম্পূর্ণাকে নিয়ে গেলেন। শাদাবের মা হাসি মুখে সম্পূর্ণাকে বিদায় দিলেও ঘরে এসে বড় মেয়েকে বললেন,” শাদাবের কল আসলে ফোনটা আমার কাছে একটু দিস।”
বড় বোন ইশরাত বলল,” কেন মা?”
-” সম্পূর্ণা বাড়ি থাকলে সব কথা বলা যায়?তুই কতকাল এইবাড়িতে থাকবি? একটা ঘর দরজার তো ব্যবস্থা করতে হবে। শাদাব ফোন দিলে বলব আমি অসুস্থ টাকা দেওয়ার জন্য। সম্পূর্ণার সামনে বললে তো ও শাদাবের কাছে বলে দিবে।বুঝিস না?”
-” হ্যাঁ তা ঠিক বলেছ। ঠিক আছে ভাইয়া আগে কল দিক ।”
সম্পূর্ণা ওই বাড়িতে যাওয়ার যেন আনন্দে মুখরিত। সবাই আড্ডা হৈ-হুল্লোড়ের মধ্যেই দিন যাচ্ছে। তাবিয়া সম্পূর্ণার ঘরে আসছে ছাদে যাবে কি-না!সেই ফাঁকে কথা বলতে বলতে সম্পূর্ণা জানালো শাদাব যাওয়ার পর থেকেই তার পিরিয়ড হচ্ছে না।” তাবিয়া কথাটা শুনে বলল,” কী বলিস? কনসিভ করিসনি তো আবার?”
সম্পূর্ণা সুরু চোখে তাকিয়ে, ” কী বলছ?”
তাবিহা মুচকি হেসে ভ্রু নাচিয়ে,” খুশির খবর মনে হচ্ছে। এককাজ করি তোর ইউরিন টেস্ট করলেই বুঝা যাবে। ”
সম্পূর্ণা ভয়াতুর হয়ে তাকিয়ে আছে। তাবিয়া আবার বলল,” তোর কী ইচ্ছে নেই?”
-” না মানে..”
-” বাবা মা শুনলে অনেক খুশি হবেন। আমি এখন কাউকে বলব না। সকালেই টেস্ট করিয়ে তারপর।”

পরেরদিন সকালেই তাবিয়া আর সম্পূর্ণা ক্লিয়ার হলো সম্পূর্ণা কনসিভ করেছে। তাবিয়া সম্পূর্ণাকে জড়িয়ে বলল,”শাদাবকে আগে খবরটা দে! আমি বাবা মা কে বলে আসছি।”
কথাটা বলে তাবিয়া দৌড়ে গেল। সম্পূর্ণা স্তব্ধ স্থির হয়ে আছে।খাটের কিনারায় বসে শাদাবকে ফোন দিলো।
শাদাব রিসিভ করে বলল,” কী অবস্থা? বাপের বাড়ি এসে দেখছি আমার খবর নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছ?”
-” ভালো। একটা কথা ছিল।”
-” হ্যাঁ বলো।”
-” তুমি ফ্রি?”
-” মোটামুটি, বলো? তোমার কী কিছু হয়েছে? টাকা লাগবে?”
-” ধ্যাৎ তুমি টাকা ছাড়া কিছু বুঝ না?”
-” বউদের টাকা দিলে মাথা ঠান্ডা থাকে তাই বললাম। ঠিক আছে কী বলবে বলো?”
-” আমি কনসিভ করেছি!”
কথাটা শুনে শাদাবের শরীরে শীতল বাতাস যেন প্রবাহিত হয়ে গেল। সম্পূর্ণা কথাটা বলার সময় কোনো বনিতা করে নাই। মেয়েরা নাকি মা হলে লজ্জা পায়। ইনিয়ে বিনিয়ে বলে।কিন্তু সম্পূর্ণা আলাদা সে জানে।তাই বলে এই ব্যাপারেও। শাদাব আলহামদুলিল্লাহ বলে বলল,” মাকে বলেছ?”
-” তোমাকেই প্রথম জানালাম।”
-” ঠিক আছে আমি বলে দিচ্ছি।”
তারপর দুজনে কথা বলতে লাগলো। শাদাব আজ খুশি। বাবা হচ্ছে সে। সে ভাবেনি এত সকাল এমন একটা খবর শুনবে৷ তবে ভালো লাগছে তার।

সন্ধ্যায় যখন মা’য়ের কাছে ফোন দিলো মা খুশির খবর শুনার আগেই সম্পূর্ণার নামে নালিশ করতে লাগলো।
-” আচ্ছা আমাকে একটা কথা বল, তুই যখন ছিলি তখন কী আমরা তোর বউকে দিয়ে কাজ করিয়েছি? সারাদিনই তো দুজনে রুমে পড়ে থাকতি। এখন তো তুই নেই।তাহলে রুমে সারাদিন কী করে? বউ মানুষ বাড়িতে কত লোকজন আসে। তাদের সাথে কথা বলবে আড্ডা দিবে তা-না সারাদিন সে রুমেই শুয়ে বসে কাটায়।”
শাদাব চুপ থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ” মা একটু সময় দেওয়া উচিত ওকে। আর বড় ভাবি বড় আপু তো আছে তারা কাজ করলেই তো হয়৷”
-” তোরা সবাই তো আমার মেয়েটাকেই দেখিস চোখে। একদিন তো চলে যাবে তখন আর তোদের জ্বালাতে আসবে না।”
শাদাব কথার প্রসঙ্গ পালটে বলল,” মা সম্পূর্ণা কনসিভ করেছে। কথাটা বলার জন্যই ফোন দিয়েছিলাম।”
কথাটা শুনে ইয়াসমিন বেগম বললেন, “কী বলিস? কই সম্পূর্ণা তো আমাদের কিছু বলেনি!”
-” মা সেটা আজ সকালেই কনফার্ম হয়েছে। আর আমি বলেছি তোমাদের জানিয়ে দিব।”
-” ঠিক আছে আলহামদুলিল্লাহ। আমি ফোন দিয়ে খবর নিবো।এখন শুন আমি তো অসুস্থ কয়েকদিন থেকে। কিছু টাকা পাঠাতে পারবি?”
-” ঠিক আছে। কত টাকা লাগবে?”
-” ঢাকা গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে পরীক্ষা করাবো। কোমরের খুব সমস্যা দেখাচ্ছে। লাখ দুয়েক হলেই হবে।”
-” ঠিক আছে পরশু টাকা পাবে। আমি রাখছি মা। আব্বাকে বলিও সম্পূর্ণাকে একবার দেখে আসার জন্য।”
ইয়াসমিন বেগম আর কিছু বললেন না। শাদাব ফোন রেখে দিলো।

সাইফুল ইসলাম খবরটা শোনার পর থেকে কতক্ষণ পর পর লুকিয়ে লুকিয়ে সম্পূর্ণাকে দেখছে। সেই ছোট্র সম্পূর্ণা। যখন প্রথম একটা দুটো করে শব্দ বলতো তখনই সে বা..বা বলতে শিখেছে। সাইফুল ইসলাম যত কাজেই থাকুন না কেন তাকে একবার কোলে নিতেই হতো। সাত মাস থেকেই বাবার সাথে তার অভিমান হতো। বাবা কাছে এলে যতক্ষণ না কোলে নিবে সম্পূর্ণা রাগ করে থাকতো। তাকাতো না তার বাবার দিকে। আর আজ সেই সম্পূর্ণা নিজে মা হচ্ছে। আল্লাহ” আপনি আমার মেয়েটাকে দেখে রাইখেন। অনেক কষ্ট করছে আমার মেয়েটা। আল্লাহ” শাদাবকে দিয়ে সব ভুলিয়ে দিও।

চলবে,,,,

চলবে,,,

বই মেলায় স্টল খুঁজে পাচ্ছেন না তাই নিস্তব্ধতার শেষ প্রহর না-কি অনেকেই খুঁজে পাচ্ছে না। বইবাজার প্রকাশনী স্টল নং ০৮ এ যেভাবে আসবেন

অনিবার্য কারণে মেলার এবারের বিন্যাসে বড়সড় পরিবর্তন ঘটেছে। আমাদের স্টলে যেতে সবচেয়ে কাছের গেট হিসেবে ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট এর পাশের বা শিশুপার্কের পরের গেটটি ব্যবহার করুন। টিএসসির দিকের গেট দিয়ে ঢুকলে বইবাজার প্রকাশনী স্টলটি পর্যন্ত পৌঁছাতে দীর্ঘ পথ হাটতে হবে। ফলে পাঠকদের অনুরোধ করছি শিশুপার্কের পরে ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সিটিটিউটের সংলগ্ন মেলার গেট দিয়ে ঢুকতে, ঐ গেট দিয়ে ঢুকলেই বইবাজার প্রকাশনী স্টলটি প্রথম সারিতে পেয়ে যাবেন। আর নিয়ে আসুন আপনার প্রিয় বইটি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here