ঝরা_ফুলের_কান্না পর্ব ১৫+১৬

সত্য ঘটনা অবলম্বনে
#ঝরা_ফুলের_কান্না
#রাবেয়া_সুলতানা
#১৫

শাদাবের বাবা এসেছেন সম্পূর্ণাকে দেখার জন্য সকালে। সম্পূর্ণা এসে সালাম করতেই তিনি বললেন,”ওই বাড়িতে কবে যাবি তুই?”সম্পূর্ণা ম্লানমুখে বলল,” আব্বা দুইদিন থেকেই চলে যাব।”
শাদাবের বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে,” তোর বাবা বাড়িতে নেই?”
-” আপনি বসুন আব্বা, বাবা এখুনি চলে আসবে।”
সম্পূর্ণাও পাশে বসলো। শাদাবের বাবা বললেন,” এই বাড়িতে বেশি থাকিস না তুই। আমার কথা শুনতে তোর খারাপ লাগলেও বলছি। শাদাবের কান ভাঙানোর জন্য ওই বাড়িতে লোকের অভাব নেই। তুই আসার পর থেকে শাদাবের কান ভাঙানো শুরু হয়েছে।” কথাগুলো শুনে সে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তার শ্বশুর মিথ্যা কথা বলেন না। তিনি সরকারি চাকরি করতেন।রিটার্ন হয়েছে প্রায় ছয়মাস যাবত। বাড়িতে তিনি খুবই গম্ভীরমুখে চলাফেরা করেন। সম্পূর্ণা এই কয়েকদিনে যতটুকু বুঝেছে তিনি খুব ভালো মনের মানুষ। বাহিরে থেকে কঠোর মনে হলেও ভেতরে তুলোর মতো নরম। সম্পূর্ণা মুখে কিছু বলল না। দীর্ঘশ্বাস ফেলতেই দেখে, তাবিয়া নাশতা নিয়ে এসেছে। বাবাও বাহিরে থেকে এসে শাদাবের বাবাকে দেখে কোলাকুলি করে নিলেন। দু’জনেই অনেক কথা বলছেন। যাওয়ার সময় তিনি আবারও বললেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে যেতেন। সম্পূর্ণা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো।
বিকেলে শাদাব ফোন দিয়েছে। সম্পূর্ণা ছাদে বসে পাশের বাড়ির উঠানে জন্টুরা খেলছে সেদিকে তাকিয়ে আছে। শাদাব ফোনদিতেই সম্পূর্ণা রিসিভ করলো।
-” আসসালামু আলাইকুম।”
-” রাখো তোমার সালাম। আচ্ছা তুমি সারাদিন রুমের ভেতর কী করো?”
-” বুঝলাম না!”
-” না বুঝার কী আছে? ভাবি আর আপুর সাথে টুকটাক কাজকর্ম তো করতে পারো। না-কি সেটাও আমাকে বলে দিতে হবে?”
-” টুকটাক কাজ করবো?”
-” কেন? তুমি কাজ জানো না? তখন তো ওই ছেলের সাথে ঠিকি পালিয়ে গিয়ে ঘরের ছাউনি পর্যন্ত দিছ? এখন আমার বাড়িতে তোমার সামান্য কাজ করতেও এত অনিহা? দেখ সম্পূর্ণা, মা বাবার বয়স হয়েছে। তাদের একটু সেবা যত্ন করো। তারা সারাজীবন বেঁচে থাকবে না। একদিন তুমিও শ্বাশুড়ি হবা। তখন তোমার ছেলে মেয়েরাও এমন করবে।”
সম্পূর্ণার দীর্ঘশ্বাসে যেন পাখিরাও শুনতে পেল। শাদাব আবার বলল,” দুই মাস পর আমি চলে আসবো। এই কয়েকটা দিন ভালোভাবে চলো। আমি আসলে তোমার কাজ করতে হবে না। তোমার কাজ আমিই করে দিব।”
-” আমি কী একবারও বলেছি আমি কাজ করতে পারবো না?”
-” না বললে করো না কেন? সারাদিন রুমে কী আছে? এমন তো না আমি আছি।” শাদাবের উচ্চস্বরে কথাগুলো কানে লাগছে তার। শাদাব আবার বলল,” কাল বাড়ি চলে যেও। মা অসুস্থ, আমাকে টাকা পাঠাতে বলল ২ লাখ।”
-” কিসের জন্য এত টাকা?”
-” বললাম না মা অসুস্থ? আর আমার মাকে টাকা দিবো সেটাতেও কী তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে?”
-” আমি কখন বললাম?”
-” ওকে এখন রাখছি। নিজের প্রতি খেয়াল রেখো।”
শাদাব ফোন রেখে দিলো। সম্পূর্ণার সকালের কথা মনে পড়লো। শাদাবের বাবা তাহলে ইঙ্গিত ঠিকি দিয়েছিল শুধু সেই বুঝেছে দেরিতে। তাবিয়া ছাদের জামাকাপড় নিতে এসে দেখে সম্পূর্ণা মন খারাপ করে অপলক চোখে তাকিয়ে আছে পোলাপানগুলোর দিকে। তাবিয়া জামাকাপড় হাতে নিয়ে এগিয়ে এসে,” মন খারাপ কেন আমাদের রানীর?”
-“ভাবি শাদাব ফোন দিয়েছে।”
-” তাহলে খুশি না হয়ে মন খারাপ কেন?”
-” জানো, এখন ওদের বাসার মোটামুটি সব কাজ আমিই করি। বড় ভাবি শুধু রান্নাটা বসিয়ে দেয়। কিন্তু শাদাব বলে আমি না-কি কোনো কাজই করি না। হয়তো ওরাই তাকে বলেছে।”
কথাটা শুনে তাবিয়া তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আবার সহজ হয়ে বলল,” আরে দূর বাদ দাও তো এইসব। শাদাব যখন বুঝতে পারবে দেখবে ঠিক হয়ে যাবে। এখন নিচে চলো। এক কাপ চা খাও। আশিকরা আবার রাতে রওনা দিবে। ”
সম্পূর্ণা তাবিয়ার সাথে নিচে চলে এলো।

পরেরদিনই সম্পূর্ণা শাদাবের বাড়ি এলো। শাদাবের মা বলল,” তুমি এত সকাল চলে এলে কেন? আরও কয়েকটা দিন থাকতা।”
-” আপনার ছেলেই তো আসতে বলেছে।”
-” ও বললে তুমি আসবা না-কি? এসে যখন গেছ ইশরাত জামাকাপড় কতগুলো বালতিতে ভিজিয়ে রেখেছে। ওইগুলো ধুয়ে ছাদে দিয়ে আসো। বড় বউ বাপের বাড়ি গেছে। না হলে ওকে বলতাম।”
সম্পূর্ণা কিছু না বলে জামাকাপড় ধুতে গেল। তার হঠাৎ মনে হলো ইনি তো পুরাপুরি সুস্থ। কিন্তু শাদাব যে বলল ইনি অসুস্থ! সম্পূর্ণার মাথায় কিছু ঢুকছে না।
রাতে আজ সম্পূর্নাই রান্না করেছে। বিকেলে শাদাবের বাবা একটা কাতল মাছ এনেছে। ইয়াসমিন বেগম বললেন,” রাতের জন্য বেশিকিছুর দরকার নেই। মাছ ভাজা,ডাল,আর কাচা কলার ভর্তা হলেই চলবে। সম্পূর্ণাও তাই করলো।
কিন্তু যখন খেতে বসলো ইশরাত তার দুই ছেলেকে চার পিস মাছ খাইয়েছে। ইয়াসমিন বেগম আর ইশরাতও খেয়ে চলে গেল। যখন শাদাবের বাবা খেতে এলো মাছ এক পিস আছে। শাদাবের বাবা বললেন, তুই খেয়েছিস?”
-” আপনি খান আব্বা। আমি পরে খেয়ে নিব।”
-” মাছ দেখি এক পিস। তুই খাবি না? আমাকেই দিয়ে দিলি?”
-” আমার মাছ খেতে ভালো লাগে না। আপনি খান।”
-” আরে আমি খেয়ে নিব? না তুইও বস। এক সাথে ভাগ করে খাই। আর এত বড় মাছ কয়েকটা পিস বেশি ভাজি করলেই তো পারতি। না-কি সেটাও হুকুম পাস নাই?”
-” আপনি খান। আমি মাছ তেমন একটা খাই না।”
শাদাবের বাবা আর কিছু বললেন না। তিনি খেয়ে উঠে গেলেন। সম্পূর্ণা ডাল আর ভর্তা দিয়ে খেয়ে নিলো।

ইয়াসমিন বেগম ডাক্তারের কথা বলে দুইদিনের জন্য বাহিরে চলে গেলেন।সাথে ইশরাতকেও নিয়ে গেলেন।ইশরাত যাওয়ার সময় ইশরাতের দুই ছেলেকে সম্পূর্ণার কাছে হাসিব আর রিফাতকে রেখে গেল। হাসিব এইসএসসি ফাইনাল দিবে আর রিফাত ক্লাস নাইনে। ইশরাত যাওয়ার সময় বলল,” হাসিব যখনই বাসায় আসবে তখন যা চায় দেওয়ার জন্য। সম্পূর্ণাও মাথা নাড়লো। কারণ আসার পর থেকে সম্পূর্ণা দেখেছে হাসিব অন্য রকমের। কিছু চাইলে দেরি হতে পারে না। তাহলেই ভাংচুর শুরু করে দেয়। কিন্তু রিফাত বিপরীত। সে খুবই শান্ত আর ভদ্র।
হাসিব বিকেলে বাসায় এসে জানতে পারে তার মা আর নানি ঢাকায় গেছে ডাক্তার দেখাতে। সম্পূর্ণা কথাটা বলতেই বলল,” আপনি আমাকে আগে জানান নাই কেন? আচ্ছা বাদ দিন এখন। আমাকে কিছু নাশতা দেন খেয়ে বেরিয়ে যাব। রাতে দেরি হবে আসতে।”
-” ঠিক আছে। তুমি বসো আমি নাশতা নিয়ে আসছি। রিফাতকে বলিও যেন তাড়াতাড়ি বাসায় আসে।”
হাসিব কিছু বলল না। সম্পূর্ণা রান্নাঘরে গিয়ে চা বানালো সাথে পান্তুয়া বানিয়ে দিলো। হাসিব খেয়ে আর দেরি করলো না। বেরিয়ে পড়লো।
রিফাত সন্ধ্যায় বাসায় এসে পড়তে বসেছে। শাদাবের বাবাও রাত দশটার সময় এসেছেন। তিনি বাজারের দোকান কেনার ব্যাপারে কথা বলতে গিয়েছিলেন। বাড়িতে বসে থাকতে ভালো লাগছে না। তাই তিনি ভাবছেন পেনশন দিয়ে একটা দোকান নিয়ে নিবেন।
তিনি রাতে এসে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বললেন,” শাদাবকে বলিও আমাকে ফোন দিতে। দোকানের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবো।”
-” ঠিক আছে আব্বা।”
-” হাসিব আসেনি?”
-” না, সে তো বলে গেল আসতে দেরি হবে।”
-” তাহলে তুই অপেক্ষা করিস না। টেবিলে খাবার রেখে শুয়ে পড়। আসলে আমি দরজা খুলে দিব।”
সম্পূর্ণা তাই করলো। সে গিয়ে শুয়ে পড়েছে। তবে দরজাটা আটকতে সে ভুলেই গিয়েছিল। শাদাবের সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে কখন ঘুমিয়েছে তার মনে নেই।
হাসিব আসতেই রিফাত গিয়ে দরজা খুলে দিলো। শাদাবের বাবা গভীর ঘুমে ছিল বলে দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ শুনতে পায়নি। রিফাত হাসিবকে বলল,” ভাইয়া, মামী তোর জন্য টেবিলে খাবার রেখেছে। বলেছে তোকে খেয়ে শুয়ে যেতে। আমি গিয়ে ঘুমাচ্ছি।”
-” তুই এখনো ঘুমাসনি?”
-“না, কাল আমার একটা পরীক্ষা আছে। তাই পড়ছিলাম।”
-” তুই যা আমি খেয়ে যাচ্ছি।”
হাসিব হাত ধোয়ার জন্য বেসিং এ যাওয়ার সময় দেখে সম্পূর্ণার দরজা খোলা। সে উঁকি মেরে দেখতে গিয়ে চোখটা যেন সেদিকেই লেগে গেল। গায়ে ওড়না নেই, চুলগুলো সামনে এসে পড়েছে কিছুটা।সম্পূর্ণা গুটিসুটি হয়ে শুয়ে আছে। হাসিব সম্পূর্ণার ঘুমান্ত চেহারাটা দেখে লোভ সামলাতে পারলো না। ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল সে। মাথার পাশে থাকা ফোনটা সরিয়ে সাইড বক্সের উপরে রাখলো হাসিব।সত্য ঘটনা অবলম্বনে
#ঝরা_ফুলের_কান্না
#রাবেয়া_সুলতানা
#১৬

শাদাবের বন্ধুর সাথে কথা বলার ফাঁকেই সম্পূর্ণা ঘুমিয়ে গিয়েছিল। শাদাবের কানে ব্লুটুথ থাকার কারণে কথা বলতে বলতে ভুলেই গিয়েছিল সে ফোন কাটার কথা। হাসিব এসেই সম্পূর্ণার পাশে বসে মুখের সাথে মুখ লাগাতে যাওয়ার আগেই সম্পূর্ণার নিজেকে ভারি মনে হতে লাগলো। হঠাৎই চোখ খুলে হাসিবকে দেখে লাফ দিয়ে উঠে বসে,” হাসিব তুমি এইখানে?”
কথাটা কানে ভাসতেই শাদাব চুপ করে শুনতে লাগলো।
হাসিব এক ফালি হাসি দিয়ে, ” মামী আপনি ভয় পাচ্ছেন কেন?”
সম্পূর্ণার চোখেমুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। ধমকের স্বরে বলল,” ভয় পাচ্ছি মানেটা কী? তুমি এত রাতে কী করছ সেটা তো বলবে?”
-” মামী একবার! একবার আপনাকে ভালোবাসি?”
সম্পূর্ণার শরীর তখন থরথর করে কাঁপছে। শরীরের শিরা-উপশিরা বন্ধ হয়ে আসছে। ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল,” তুমি যাও এইখান থেকে। আমি তোমার মামী। আর মামী মানে মা। মা’কে কখনো অসম্মান করতে নেই হাসিব। যাও তুমি এইখান থেকে। হাসিব ঘাড় বাঁকা করে বলল,” আমি তো যাব না। আপনাকে আমার অনেক ভালো লাগে মামী। কিচ্ছু হবে না। আমি কাউকে বলবো না। প্লিজ মামী একবার! আপনি একবার করলে কী হয়?”
সম্পূর্ণা উঠে ওড়নাটা নিয়ে হাসিবকে দুই ধাক্কা দিয়ে সরালো। নিজেকে সামলে কঠোর গলায় বলল,” আমি তোমাকে যাতে বলছি যাও। বলছি না যাইতে? তুমি যদি আমার সাথে আর একবার বেয়াদবি করছ তো আমি এখুনি আব্বাকে ডাকবো। আব্বা, আব্বা।” হাসিব আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। সেদিন রাতের ব্যাপার রিফাতের চোখ এড়ায়নি। কিন্তু বড় ভাই কী করতে যাচ্ছিলো? হাসিব যেতেই সম্পূর্ণা দৌড়ে দরজাটা লাগিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। সেদিন সারারাত সম্পূর্ণা ঘুমায়নি। কিছুক্ষণ পর পর শব্দ করে কান্নায় ভেঙে পড়ে। সকালেই হাসিব ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। সম্পূর্ণা সারাদিন না খেয়েই ছিল। গলা দিয়ে কোনো খাবার তার যাচ্ছে না। আল্লাহ তাকে এইভাবে বাঁচিয়ে দিলো!শাদাব আজ একবারও কল করেনি তাকে। শাদাবকে কী বলবে কথাটা? ছিঃ কী করে বলবে এমনটা?
তবুও শাদাবকে কল দিলো সে। কিন্তু শাদাব ফোন রিসিভ করে পরে ফোন দিবে বলে রেখে দিলো। বিকেলেই ইয়াসমিন বেগম এস বাড়ি মাথা করছেন চিল্লাপাল্লা করে। সম্পূর্ণা কিছুই বুঝলো না। ইনি আবার কেন চেঁচাচ্ছেন? শাদাবের বাবা এসে দেখে ইয়াসমিন বেগম একেরপর এক গালি আওড়াচ্ছে আর ইশরাত পাশে বসে নিস্তব্ধ হয়ে আছে।
-” খান* মা* ঘরে নিয়ে আসলে কী আর ঘর শান্তি থাকবো? এইসব মাইয়া বারো ব্যাটার সাথে থাকছে। এখন কী আমার ছেলেরে ভালো লাগবো? লাগবো তো কচিকাঁচা ছেলেপেলেরে। ভাগ্য ভালো আমার নাতি আমারে বলছে। না বললে জানতাম? ইশরাত, শাদাবকে কল দে। আমি একটু কথা বলি। বলবো কী ঘরে রেখে গেছোস? মানসম্মান তো আর কিছুই রইল না। লোকে জানাজানি হলে মুখ দেখাতে পারব এই সমাজে? এর থেকে শাদাবরে বলি এর বাপ মা এসে নিয়ে যাইতে।”
-” সম্পূর্ণা এইগুলো শুনে কেঁদে কেঁদে চোখ মুখ লাল বানিয়ে ফেলেছে। শাদাবের বাবা কোনো কিছুর আগামাথা বুঝলেন না। তিনি দোকানে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই রিফাত এসে সব বলল। সকালেই হাসিব ভালো সাজার জন্য নানির কাছে ফোন দিয়ে সম্পূর্ণার নামে বাজেভাবে বলেছে। নিজে যা করছে তার বিপরীত কথাবার্তা বলছে।আর সেগুলো শুনেই ইয়াসমিন বেগম গরম হয়ে আছেন। শাদাবকে কল দেওয়ার পর রিসিভ করে, সালাম দিলো সে। ইয়াসমিন বেগম সালামের উত্তর না দিয়েই বলল,” তোর বউ রেখে গেছিস কী আমাদের মানসম্মান ধুলায় মিশানোর জন্য? কী করছে তোর বউ জানিস?”
হাসিব যদি আমাকে সকালে না বলতো তাহলে আমরা জানতামই না। বাবারে এই বউ এই বাড়ি রাখা যাবে না। এই বাড়ি রাখলে আমার নাতিগুলোকে নষ্ট করে ছাড়বে। তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি আয়। কিছু একটা কর।”
শাদাব শান্ত গলায় বলল,” তোমার বলা শেষ হয়েছে মা?”
-” তোর কথা শুনে তো মনে হচ্ছে আমি মিথ্যা বলছি।”
-” হাসিব কোথায়?”
-” ওর ঘরে।কেন?”
-” ডেকে ফোন লাউডস্পিকারে দাও।”
ইয়াসমিন বেগম তাই করলেন। হাসিবকে ডেকে নিয়ে এসে ফোন লাউডস্পিকারে দিলেন। শাদাব বলল,” হাসিব তোর মামী তোকে এতগুলো কথা বলল তুই সুযোগ নিলি না?”
ইশরাত কথাটা শুনে পাশ থেকে বলল,” শাদাব তুই এইসব কী বলছিস? আমার ছেলের এসবের বয়স হয়েছে?”
শাদাব ধমক দিয়ে বলল,” তোর ছেলে যদি মামীর কাছে একবার চাইতে পারে,ভালোবাসার কথা বলতে পারে। তাহলে ছেলের আর কত বয়স হলে বুঝবি তুই? দেখ আপু, কাল রাতে কী হয়েছে আমি সব জানি। আর আমার মা, মা তুমি বড় বড় যে কথা বলছ নাতির ব্যাপারে তুমি সব জানো? তোমার কী মনে হয়? সম্পূর্ণা এমন কাজ করলে তোমার নাতি তোমার কাছে গিয়ে বলতো? জীবনেও বলতো না। কাল রাতে আমি ফোনেই ছিলাম। যা হয়েছে আমি না দেখলেও সব শুনেছি। যখন শাদাব সব খুলে বলল তখন ইয়াসমিন বেগম চুপ হয়ে গেলেন। ইশরাত তো বিলাপ ধরে কান্না জুড়ে দিলো। মা ভাই পালটে গেছে। বিয়ে করেছে তো এখন সব আমার ছেলের দোষ দিতে চাইছে। মা শাদাব জীবনেও এমন ছিল? এখন বউয়ের কথায় আমার ছেলেটাকে বাড়ি ছাড়া করতে চাইছে।”
ইশারাতের কান্না দেখে শাদাব বলল,” তুই শুরু করেছিসটা কী? তোর ছেলেকে আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলবো না। কিন্তু সে অন্যায় করেছে তাকে বল সম্পূর্ণার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে। আমি আবার ফোন করে যেন শুনতে পাই হাসিব ক্ষমা চেয়েছে।”
কথাটা বলে শাদাব ফোন রেখে সম্পূর্ণাকে ফোন দিলো।
সম্পূর্ণা কান্নার জন্য গলা থেকে কথা বের হচ্ছে না। ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল,” তুমি কী বিশ্বাস করছ আমি খারাপ চরিত্রহীন?”
-” তা নয়তো কী? তোর কী মনে হয় তুই ভালো? তুই দরজা খুলে ঘুমালি কেন? তোরে আমি ফোন দিছি তুই আমার সাথে কথা না বলে ঘুমাচ্ছিস?আমি চলে আসছি কয়দিন হয়েছে? এর মধ্যে তোর আরেকজন দরকার পড়ছে! এইটা আগে বলতি আমি নিজেই চলে আসতাম। কুত্তী রেডি থাক আমি দুই দিনের ভেতর আসতেছি।
সম্পূর্ণা বলল,” তোমার যা ইচ্ছে করো তবুও আমাকে ভুল বুঝো না। বিশ্বাস করো আমি ঘুমে ছিলাম।আমি ভেবেছিলাম তোমার সাথে কথা শেষ করে দরজা লাগিয়ে দিব। ওর মা ছিল না। খাবার টেবিলে দিয়েছি কি লাগবে না লাগবে দিতে হবে না? যদি না দিই তাতেও তো আমার কথা শুনতে হবে। আমি কী করতাম?”
-” আমি মানছি তোমার দোষ নেই। কিন্তু ছেলেটা যখন তোমাকে বলল একবার দিতে তাহলে তুমি তখন ওকে কষিয়ে একটা চড় দিলে না কেন? যা হবার আমি দেখতাম। তুমি তখন ছেলেটাকে ভদ্রভাবে যেতে বলছ।সম্পূর্ণা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না তুমি এত শান্ত ছিলে কীভাবে? ”
-” আমি কী করতাম? যদি ও অন্যকিছু করে বসতো?”
-” রাবিস। তোর এসব কান্না থামা। তোর এত সমস্যা জেনেও আমি তোকে নিয়ে সংসার করছি। তোর একটা কিডনি নেই জেনেও নিজেকে বুঝিয়েছি। কিন্তু তুই? তুই আমারে ভালো থাকতে দিবি না। তুই বিশ্বাস কর তোকে দেশে রেখে দেখছি আমি শান্তি পাব না। আমি চলে আসবো তুই এই কথা মনে রাখিস।”
শাদাব আরও অনেক ধমকিয়ে ফোন রেখে দিলো। ইয়াসমিন বেগম হাসিবকে নিয়ে এসেছে মাপ চাওয়ার জন্য। হাসিব সহজেই মাপ চেয়ে চলে গেল। সম্পূর্ণা অবাক হলো। ইয়াসমিন বেগম এত সহজে মেনে নিলেন? এইটা কীভাবে সম্ভব!

শাদাব সত্যিই কয়েকদিন পর বাড়ি চলে এলো। সম্পূর্ণার দেখা শোনাও করে আবার কথা বলতে একচুল ছাড় দিতে রাজি না সে। কয়েকমাস যেতেই সম্পূর্ণাকে নিয়ে ডাক্তার কাছে গেল। আল্ট্রাসনোগ্রাম করে জানতে পারলো মেয়ে হবে। শাদাব কথাটা শুনে বেশি খুশি হতে পারলো না। কিন্তু সম্পূর্ণাকে কিছু বলেনি। বাড়িতে আসতেই ইয়াসমিন বেগম জিজ্ঞেস করতেই শাদাব কিছু না বলে নিজের ঘরে গেল। সম্পূর্ণা দ্বিধা গলায় বলল, ” মেয়ে হবে।”
ইয়াসমিন বেগম কথাটা শুনে,” আমি আগেই জানতাম এমন কিছুই হবে। আল্লাহর কাছ থেকে একটা ছেলে চাইতে পারো নাই?”
-” আল্লাহর কাছে চাওয়ার আগেই তো আপনি বলে দিলেন মেয়ে হবে। তাহলে আল্লাহর কাছে চাইলে আর হতো? মা একটা কথা বলি। আপনারা যেটা করছেন এইটা শেরেক।মানুষ গায়েবি কিছু বলতে পারে না। তারা শুধু অনুমান করে। আর এই অনুমানটাই শেরেক।” কথাগুলো বলে সম্পূর্ণাও চলে গেল। ইশরাত হা করে তাকিয়ে থেকে বলল,” মা ও কী তোমায় জ্ঞান দিয়ে গেল?”

চলবে,,,,

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here