ধোয়ার নেশা পর্ব ১৩

#ধোয়ার-নেশা

#রোকসানা-রাহমান

পর্ব (১৩)

অন্ত্রীশা পুনরায় প্রশ্ন করার জন্য ঠোট নাড়াতেই পালক ওর ঠোটে নিজের ঠোট ডুবিয়ে দিয়েছে। নিজের ধোয়াগুলো অন্ত্রীশার মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার তাড়নায় থাকলেও আজ সে ব্যর্থ হলো। অন্ত্রীশা নিজের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে পালককে ছাড়িয়ে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিয়েছে। ওর ডান গালে!

অন্ত্রীশার এমন হুট করে হাইপার হয়ে যাওয়াটা হজম করতে পারছেনা পালক। একটু আগে তার সাথে কি হয়েছে বুঝার আগেই অন্ত্রীশা বলে উঠলো,

“” আপু,তুমি?””

পালকের সাথে সাথে অনিকশাও হতভম্ব। অন্ত্রীশার এমন কঠিন রুপ সে আগে কখনো দেখেনি। হঠাৎ কি এমন হলো যে সে পালককে চড় মেরে বসেছে? স্বামী তার বউকে চুমু খাবে এটাই স্বাভাবিক,এতে এতো রাগের কি আছে? তবে কি অন্ত্রীশাও বুঝতে পেরেছে পালক তাকে ভালোবাসেনা???

অনিকশা দরজার কাছটাতে দাড়িয়েই পালকের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্ত্রীশার ছুরে দেওয়া প্রশ্নটা যেন তার কাছে পৌছোয়নি। অন্ত্রীশা দরজার কাছটাতে এগিয়ে গিয়ে বেশ স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো,

“” আপু,তুমি কখন এলে?””

এতোকাছ থেকে অন্ত্রীশার ডাকে এবার অনিকশা অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়েছে। কিছুটা আনমনা হয়েই বললো,

“” এইদিকে একটা কাজে এসেছিলাম তাই ভাবলাম তোর সাথে দেখা করে যাই।””
“” ওহ! আচ্ছা।””

কিছুক্ষন আগেও যে মেয়েটা রাগে ফেটে যাবার উপক্রমে ছিলো সেই মেয়েটার এতো ঠান্ডা মেজাজটা অনিকশার কাছে অস্বাভাবিক লাগছে। অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়ে বললো,

“” তুই ঠিক আছিস তো,বোন?””
“” আপু,তুমি ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসো আমি আসছি!””

অনিকশাকে রেখেই অন্ত্রীশা আবার জোরে জোরে কদম ফেলে নিজের রুমের দিকে ছুটছে। পালক এখনো বারান্দাতেই দাড়িয়ে আছে,হাতে জ্বলন্ত সিগরেট! যেটা আগুনের রেখা ফুটিয়ে নিজেকে বিসর্জন দিচ্ছে!

অন্ত্রীশা পালককে নিজের দিকে ঘুরিয়ে পুনরায় পরপর দুটো থাপ্পড় মেরে বসে পালকের গালে।

“”ইচ্ছে করছে আপনাকে আরো কয়েকটা থাপ্পড় মারি। পৃথিবীতে যতগুলো সিগারেট আছে ততগুলো থাপ্পড় মারি। লজ্জা করেনা অন্যের জন্য সিগারেট খেয়ে আমাকে বিষাক্ত করতে? আর কখনো যদি এই দুর্গন্ধ জিনিসটা ছুয়ে আমাকে ছুতে আসেন তাহলে এই সিগারেটের মতো আমিও আপনাকে জ্বালিয়ে শেষ করে দিবো!””

অন্ত্রীশা নিজের বক্তব্য পেশ করে হনহন করে বেড়িয়ে এলো।

একটা মেয়ের কাছ থেকে পরপর তিনটা থাপ্পড় খেয়েও এতোটা শান্ত কি করে আছে বুঝতে পারছেনা পালক। তার তো রাগ করা উচিত,এমন রাগ যে রাগে অন্ত্রীশা ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে। কিন্তু তার কেন রাগ হচ্ছে না? কেন সে অন্ত্রীশার হাতটা শক্ত করে ধরতে পারেনি? কেন সে অন্ত্রীশার চড়ের বিপরীতে সেও চড় মারতে পারেনি? তবে কি সে চাইছিলো অন্ত্রীশা তাকে মারুক? মারতে মারতে তাকে শেষ করে দিক? কিন্তু কেন?

“” পাপড়ি ছাড় আমাকে। ভালো হবেনা বলে দিচ্ছি। এমন গায়ে পড়া মেয়েগুলো আমার একদম পছন্দ না!””
“” না ছাড়বোনা। আপনি আমার কল রিসিভ করেননি কেন? এই তিনদিনে আমার কি অবস্থা হয়েছে জানেন? আমি মানসিক সিক হয়ে পড়েছি। কাউকে কিছু বলতেও পারছিলাম না।””

পাপড়ি তার অভিমানির কথার সুরের সাথে আতিশকে আরো বেশি করে জড়িয়ে নিচ্ছে। পারলে সে আতিশের মধ্যে ডুকে যায়।

পড়ালেখা আর চাকরীর টেনশনে আতিশের জীবনে কোনো মেয়ের আগমন ঘটেনি। যেহেতু কোনো মেয়েকে নিয়ে তার চিন্তার রাজ্যে চিন্তারা বিচরন করেনি সেহেতু কোনো মেয়েকে ছোয়াও তার দ্বারা সম্ভব হয়নি। আর এভাবে জড়িয়ে ধরাও সে কল্পনা করেনি। তাই এমন হুট করে পাপড়ির জড়িয়ে ধরাটা আতিশের ভেতরটা নাড়িয়ে দিচ্ছে। পাপড়ির ঘেমে যাওয়া শরীর থেকেও এক অদ্ভুত ভালো লাগার সুঘ্রান পাচ্ছে সে। ভেতরে ভেতরে অনেককিছুই ভালোমন্দ করার চিন্তাভাবনারাও জমা হচ্ছে। সে চাইলেই যে এই বদ্ধ ঘরে অনেক কিছুই করতে পারে এটাও খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। এই মুহুর্তে পাপড়ির মধ্যে ভালোমন্দ আলাদা করার বোধশক্তি নেই। সে এখন আতিশের ভালোবাসা চাই। আতিশের ভালোবাসায় ডুব দিতে চাই।

নিজের জাগ্রত হওয়া পুরুষত্বকে বিসর্জন দিয়ে পাপড়িকে ছাড়িয়ে নিলো নিজের থেকে। আতিশ চাইনা এই ছোট্ট পবিত্র মেয়েটার শরীরে কোনো কলংকের দাগ বসাতে। ওকে ভালোবাসারই কোনো যোগ্যতা নাই নিজের মধ্যে তাহলে তাকে বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে কিভাবে জড়াবে? আর পালক? পালক কি কখনো মানবে এটা? বন্ধু হওয়ার সুবাদে সেতো জানে আমি কেমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আজ এখানে এসে থেমেছি?? কোনো ভাই চাইনা তার বোনকে নুন আনতে পান্তা ফুরায় এমন পরিবারে বিয়ে দিতে। সব ভাই চাই তার বোনটাকে একটা রাজপ্রাসাদের রানী বানিয়ে দিতে। যেখানে সে সুখ দুখের গল্প করতে করতেই দিনরাত পার করে দিবে। আর পাপড়ি? দেখতেও তো কোনো রাজকুমারীদের চেয়ে কম নয়!

আতিশ বেশ ঝাঝালো কন্ঠে ধমকিয়ে উঠলো পাপড়িকে,

“” তোর লজ্জা করেনা আমাকে জরিয়ে ধরতে? তোর কি মনে হয় তোর মতো পিচ্ছি মেয়েকে আমি বিয়ে করবো? একরাত আদর করলে পরের রাতে খুজে পাওয়া যাবেনা। তোর মতো শুটকি মেয়ে কখনোই আমার বউ হতে পারেনা। আমার তো নাদুসনুদুস বউ চাই। আর তুই তো বয়সেও অনেক ছোটো। দেখা যাবে তোকে শিখাতে শিখাতে বাসর রাত শেষ হয়ে ভোর হয়ে গেছে। পরে তো আমার বাসর রাতও করা হবেনা। সব থেকে বড় কথা তুই পালকের বোন মানে আমারও বোন। এক্ষুনি বাসায় যাবি বাকি আমি পালককে তোর কীর্তিকলাপ দেখানোর জন্য ডেকে আনবো?””

আতিশের কথায় পাপড়ি ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। চোখে পানি টলমল করছে। মনে হচ্ছে চোখের দুটো পাপড়ি এক হওয়ার সাথে সাথে পুরো পৃথিবী ডুবে যাবে।

“” এখনো দাড়িয়ে আছিস কেন? আমার কথা কি তোর কানে ঢুকেনি?””

পাপড়ি অসহায়ভঙ্গিতে আতিশের হাতটা চেপে ধরে বললো,

“” আমি আপনার বোননা বউ হতে চাই। আমি সব শিখে নিবো। আমি বেশি বেশি খেয়ে মোটা হবো। আপনি যা বলবেন তাই শুনবো তবুও আমাকে এভাবে ফিরিয়ে দিয়েননা প্লিজ! আমি এ অবস্থায় বাসায় যেতে পারবোনা। দেখুন আমি তো এখনি নিশ্বাস নিতে পারছিনা। আর আপনি না থাকলে নিশ্বাস কিভাবে নিবো? আমি আপনাকে ভালোবাসি আতিশ!””

পাপড়ির মুখে ভালোবাসি কথা শুনতেই ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিয়েছে আতিশ। কিছুটা উগ্র হয়ে বললো,

“” তুই যদি এক্ষুনি আমার সামনে থেকে না যাস,তুই আর কোনোদিনও আমার মুখ দেখতে পারবিনা। কোনোদিনও না।””

আতিশ উল্টোদিকে ঘুরে দাড়িয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস ছাড়ছে। তারও যে এখন পাপড়ির মতো নিশ্বাস আটকে আটকে আসছে! তারও যে চোখ ভিজে আসছে। তারও যে বুকের ভেতরে জ্বলেপুরে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে সমুদ্রের অথৈ জলে ডুবে মরে থাকতে। আর কত সে নিজের ব্যর্থতা বয়ে বেড়াবে? ব্যর্থতার গ্লানি টানতে টানতে সে আজ নিশ্ব হয়ে গেছে। একেবারে নিশ্ব হয়ে গেছে। আজ তার আফসোস হচ্ছে খুব বেশিই আফসোস হচ্ছে,তার গরীব ঘরে জন্ম নেওয়ার জন্য।

“”তুমি কি কিছু বলবে? নাকি এভাবে হনুমানের মতো তাকিয়ে থাকবে? আমি কল কেটে দিলাম।””
“” এই না না,অনি। তুমি এখন কল কেটে দিলে আমি বিষ না খেয়েও মরে যাবো। পরে,দেখবে নিউজ পেপারে প্রথম পৃষ্ঠায় আমার ছবি দিয়ে শিরোনাম দিয়েছে,বউয়ের ভিডিও কল কেটে যাওয়ায় বিষপানহীন যুবক মৃত!””
“” এইসব ফালতু ফালতু কথা তুমি কই পাও অরিদ? শুনলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।””
“” আজ দুদিন পর তুমি আমাকে কল দিলে তাও ভিডিও কল,এই রাগ দেখানোর জন্য? আমিতো ভাবলাম তুমি আমাকে ছাড়া থাকতে না পেরে এতক্ষনে পাগল হয়ে গেছো। যেমনটা আমি।””
“” আবার?””
“” আচ্ছা সরি বউ। এতো রাগ করো কেন? আমি যে তোমাকে ঘন্টা ঘন্টায় কল দিচ্ছি,ভিডিও অডিও,মেসজ,কোনোটারই তো রিপলাই করোনা। আজ নিয়ে তিনদিন হলো তোমাকে ছেড়ে পঞ্চগড়ে পড়ে আছি। তিনদিনে মাত্র তিনবার কথা হয়েছে তোমার সাথে তাও পাঁচমিনিটের বেশি হবেনা। এতো ব্যস্ততা কি নিয়ে জানতে পারি?””
“” আমার কি এখন তোমার কাছে জবাবদিহি করতে হবে অরিদ?””
“” আরে,তুমি তো আবার রেগে যাচ্ছো। আচ্ছা এসব বাদ। একটা চুমু দাওনা লক্ষী বউ!””

অনিকশা অরিদের আবদারকে তোয়াক্কা করেই বললো,

“” তুমি আসবে কবে?””
“” তুমি বললে আমি এখনি চলে আসবো। আসবো অনি?””
“” তোমার কাজ শেষ?””
“” না। কিন্তু তোমাকে কষ্ট দিয়ে কাজ করতে মন চাইছেনা। অনি, আমি চাকরীটা ছেড়ে চলে আসি?””
“” আসো। আমিও সবকিছু গুছিয়ে অরিদ্রাকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যাবো।””

অনিকশার এমন উত্তরে অরিদের মুখটা চুপসে গিয়েছে। মন খারাপ করে বললো,

“” আচ্ছা আসবোনা।””

অরিদের অমন মন খারাপ হওয়া মুখটা অনিকশার দেখতে ইচ্ছে করছেনা। কলটা কেটে দিবে ভেবেও কাটলোনা। প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বললো,

“” খেয়েছো?””
“” হুম! তুমি খেয়েছো বউ?””
“” সত্যি খেয়েছো?””
“” না।””
“” তাহলে মিথ্যে বললে কেন?””
“” নাহলে তুমি খাওয়ার বাহানা দিয়ে কল কেটে দিবে। তোমাকে তো আমি চিনি। সবসময় আমাকে দুরে রাখার কৌশলে ডুবে থাকো। এতদিন পর কল দিলে অথচ আমার দিকে একটু ভালো করে তাকালেওনা। তাকালে ঠিক বুঝতে পারতে,তোমার থেকে দুরে থেকে এই তিনদিনেই আমার কি হাল হয়েছে! আমার বোধহয় আর, এই জন্মে তোমার ভালোবাসা পাওয়া হবেনা,অনি!””

অরিদের কথাগুলো অনিকশার শরীরে কাটা হয়ে বিধছে। অসহ্য ব্যথা অনুভব হচ্ছে তার। কাটাগুলো কি শরীর ভেদ করে তার হৃদপিন্ডেও ঢুকে গেছে? হয় তো তাই হবে। নাহলে চামড়াই ব্যথা না হয়ে হৃদপিন্ডে ব্যথা অনুভব হচ্ছে কেন?

কে বলেছে সে অরিদকে দেখেনি? দেখেছে,খুব ভালো করে দেখেছে। এই যে ছেলেটা না খেয়ে,না ঘুমিয়ে চোখের নিচে গর্ত করে ফেলছে এটাও সে ভালো করে দেখেছে। তার ফর্সাগালগুলো যে রোদে পুরে কালচে হয়ে গেছে,এটাও সে দেখেছে,তার ঠোটগুলো যে শুকিয়ে বিবর্ন হয়ে গেছে এটাও সে দেখেছে। কিন্তু সে যে দেখেছে এটাই তো দেখেনি অরিদ। এখানেই তো ফারাক রয়ে গেলো। বুকের ভেতরটা হাহাকার করছে অনিকশার। তার ভেতরটাও যে অরিদের জন্য পুরে সেটা কি সে কখনো প্রকাশ করতে পারবেনা? কোনোদিনও না? আর কত মানুষটাকে এভাবে দুরে রাখবে???

“” কিগো,ক্যামেরা অফ করে রাখলে কেন? ভালোবাসা দিবেনা বলে একটু দেখতেও দিবেনা? এমন করলে কিন্তু সত্যি সত্যি আমি সব ছেড়েছুড়ে চলে আসবো। আমি আর এভাবে থাকতে পারছিনা। একটু দুরে এসেছি বলে তুমি বেশি বেড়ে গেছো না? শুনেছি ভালোবাসার গভীরতা বাড়াতে মাঝে মাঝে নাকি প্রিয় মানুষের কাছ থেকে দুরে আসতে হয়। আমিতো তাও করেছি এবারও কি তোমার ভালোবাসা পাওয়া থেকে ব্যর্থ হবো? অনি? ও অনি,বউ ক্যামেরাটা অন করোনা।””
“” সারাক্ষন ভালোবাসা ছাড়া তোমার কি আর কোনো কথা নাই? করবো না অন। তুমি এভাবেই থাকো।””
“” যার যেটার অভাব সেতো সেটার পিছনেই ছুটবে,অনি! এতো রাগ না? এবার এসে নেইনা। তোমার সব রাগ আমি বস্তায় ভরে রেললাইনে রেখে আসবো। রেলগাড়ী পিষে দিয়ে যাক, আমার অনির সব রাগ!””
“” আমি রাখলাম!””
“” অনি!””
“” হুম!””
“” আমি আর এভাবে তোমার অবহেলা নিয়ে থাকতে পারছিনা। তুমি কি করবে আমি জানিনা। কিন্তু আমার অনির ভালোবাসা আমার চাই। ফিরে এসে যেন আমি আমার অনিকশা,আমার বউকে পাই। যার মধ্যে গিজগিজ করবে অরিদের জন্য ভালোবাসার!””

অরিদ তার কথা শেষ করে টুপ করে লাইন কেটে দিয়েছে। সে জানে এখন লাইন না কাটলেও অনিকশা লাইন কেটে দিতো। সবসময় তার ইচ্ছে রাখবেনা সে। এখন থেকে আমার ইচ্ছাও তোমাকে রাখতে হবে অনি। রাখতেই হবে!

অনিকশাকে বিদায় দেওয়ার পর পালকের সাথে আর কোনো কথা হয়নি অন্ত্রীশার! সে চাইও না কথা বলতে! যেকোনো জিনিসেরই একটা লিমিট থাকে। কিন্তু পালক সেটারও অতিক্রম করে ফেলেছে। যে জিনিসটার ধারে কাছেও কখনো যাইনা অথচ তার ধোয়াই কিনা আমার পেটে দিবে? কেন আমি কি করেছি উনাকে? সবসময় আমার সাথে এমন কেন করবেন উনি? এমনি এমনি তো একটু কথাও বলতে আসেনা যখন আসবে তখন তাকে ধোয়া নিয়ে আসতে হবে? তাও আবার অন্যের সামনে? এমন হুটহাট চুমু খেয়ে বসে যে আপু দেখে ফেলে! আমি নাহয় জানতামনা উনি চুমু খাবেন কিন্তু উনিতো জানতেন? তাহলে দরজাটা লাগিয়ে আসলে কি হয়? উনার নাহয় লজ্জা বলতে কিছু নেই,কিন্তু আমার তো আছে? বড় আপু হয় আমার। আমার আপু মানে তো উনারও আপু তাইনা???

শুয়ে একমনে হাজারও ভাবনায় ডুবে থাকলেও এবার যেন তার টনক নড়ে উঠেছে। শুয়া থেকে উঠে বসে পড়লো অন্ত্রীশা। আবার বিড়বিড় করে বললো,আরে তাইতো,এই ব্যাপারটা তো আমার মাথায় কখনো আসেনি। উনি যখনই আমার কাছে তখনি আপু চলে আসে। এটা কি সত্যি এক্সিতেন্টলি ঘটে নাকি কারো ইচ্ছাকৃত সাজানো ঘটনা?

টেনশনে অন্ত্রীশা বসা থেকে দাড়িয়ে পড়েছে। পায়চারী করতে করতে তার সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনাকে পরপর সাজিয়ে নিচ্ছে। খুটে খুটে সব বুঝার চেষ্টা করছে। অজান্তেই অন্ত্রীশার মুখ দিয়ে বের হয়ে আসলো,তবে কি আপুর সাথে পালকের??? ওহ মাই গড! এটা কি করে হতে পারে? না আমি আর কিছু ভাবতে পারছিনা!

পালক সোফাতে শুয়ে শুয়ে অন্ত্রীশার কর্মকান্ড দেখছিলো। একবার বসছে তো আরেকবার শুয়ে পড়ছে। আবার শুয়া থেকে উঠে পায়চারী করছে। তো আবার গিয়ে বসে পড়ছে। এক পর্যায়ে অন্ত্রীশা জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকতেই পালক বেশ অবাক হলো। হয়েছেটা কি এর?

অন্ত্রীশা সারারাত ছটফট করে কাটিয়ে দিয়েছে। সারারাতে একটা মিনিটের জন্যও চোখ বন্ধ করতে পারেনি সে। নানান প্রশ্ন তাকে জর্জরিত করেছে । আর এই সব প্রশ্নের উত্তর খোজার জন্যই সকাল সকাল অনিকশার বাসার উদ্দশ্যে রওনা দিয়েছে অন্ত্রীশা!

“” অনতি,তুই?””
“” এমন চমকে গেলে যে, আপুর বাসায় কি বোন আসতে পারেনা?””

অনিকশা মুখে হাসি ফুটিয়ে অন্ত্রীশাকে ভেতরে এনে দরজা লাগাতে লাগাতে বললো,

“” তা না বিয়ের পর তো এই প্রথম আমাদের বাড়ি এলি,তাও না জানিয়ে,তাই একটু অবাক হয়েছি।””
“” অরিদ ভাইয়ার কি খবর? আর অরিদ্রাকে দেখতে পাচ্ছিনা যে?””

ফ্যানটা ছেড়ে দিয়ে অন্ত্রীশার পাশে এসে বসেছে অনিকশা। ঠোটে আগের হাসিটা এখনো লেগে আছে।

“” ওর দাদা দাদির সাথে হাটতে বেড়িয়েছে। তুই তো ঘেমে গোসল করে ফেলেছিস। একটু বোস আমি সরবত বানিয়ে আনছি।””

অনিকশা উঠতে নিলেই অন্ত্রীশা ওর হাত চেপে ধরে বললো,

“” আপু,তোমার সাথে আমার কথা আছে৷ অনেক ইম্পর্ট্যান্ট কথা। একটু বসবে প্লিজ?””

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here