#ধোয়ার-নেশা
#রোকসানা-রাহমান
পর্ব (১৪)
ফ্যানটা ছেড়ে দিয়ে অন্ত্রীশার পাশে এসে বসেছে অনিকশা। ঠোটে আগের হাসিটা এখনো লেগে আছে।
“” ওর দাদা দাদির সাথে হাটতে বেড়িয়েছে। তুই তো ঘেমে গোসল করে ফেলেছিস। একটু বোস আমি সরবত বানিয়ে আনছি।””
অনিকশা উঠতে নিলেই অন্ত্রীশা ওর হাত চেপে ধরে বললো,
“” আপু,তোমার সাথে আমার কথা আছে৷ অনেক ইম্পর্ট্যান্ট কথা। একটু বসবে প্লিজ?””
অনিকশা অন্ত্রীশার চেপে ধরা হাতটার দিকে তাকিয়ে আবার অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়েছে। ওর চোখমুখটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে রাতে ঠিকমতো ঘুম হয়নি। আর এতো সকালে উঠে এ বাসায় আসা তাও কিছু না জানিয়ে হুট করে চলে আসা স্বাভাবিক নয়। কিছুতো একটা হয়েছে। কিন্তু কি? আর কিই বা এমন ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলবে ও? পালককে নিয়ে কিছু বলবে না তো?? পালকের কথা মনে পড়তেই অন্ত্রীশার ভেতরটা ছেদ করে উঠেছে। যা থেকে সে দুরে থাকতে চাই তাই কেন বার বার তার কাছে এসে ল্যাপ্টে পড়ে?
অন্ত্রীশা আপুকে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে দিয়ে বললো,
“” ছোটবেলা থেকেই তুমি আর আমি একসাথেই বেড়ে উঠেছি। তুমি যে আমাকে অসম্ভব ভালোবাসতে তা কারো অজানা নয়। তোমার দিনে রাতের চব্বিশটা ঘন্টায় আমাকে নিয়ে কাটতো। কারোর উপর রাগ থাকলেও আমার কাছে এসে ঝাড়তে,আবার খুব খুশি হলেও আমাকে জড়িয়ে ধরেই দুটো চুমু খেয়ে বলতে,আমার সব খুশির ভাগ আমি তোকে দিতে চাই,অনতি! কিন্তু হঠাৎ করেই তুমি চেন্জ হতে লাগলে,আমার থেকে দুরে দুরে থাকার চেষ্টা করতে। যেখানে তুমি আর আমি সবসময় একি রুমে দুজন দুজনাকে জড়িয়ে ঘুমাতাম সেখানেও তুমি অন্য রুমে থাকার বায়না করা শুরু করে দিলে। শুধু রাত না দিনের বেলাও তোমার রুম বন্ধ! আসতে আসতে তুমি আমাদের থেকে দুরে যেতে লাগলে। কিন্তু এই দুরত্বটা আমাদের কাছে অসহনীয় লাগলেও তোমার মধ্যে ছিলো অনাবিল সুখ। তোমার চালচলন,আচার ব্যবহার সবকিছুতেই চেন্জ। নিত্যনতুন জামা কাপড় কেনার বাহানায় শপিংমল,সাজগোজের বাহানায় পার্লার এমন কি রাত করে বাসায় ফেরাও শুরু করলে। এই জিনিসগুলোতে আমরা যখন অভ্যস্ত হয়ে পড়লাম ঠিক তখনি তুমি অরিদ ভাইয়াকে নিয়ে হাজির! বাড়িতে তুমি বড় মেয়ে ছিলে,আদর ভালোবাসাটাও তেমনি ছিলো। আমাদের কোনো ভাই না থাকার সুবাদে তোমার লুকিয়ে বিয়েটাকেও মেনে নিয়েছিলাম আমরা। এতে যেন আমাদের থেকে তোমার দুরত্ব আরো বেশি বাড়তে লাগলো। ছোটখাটো জিনিস নিয়ে রাগারাগি,ঝগড়া বিবাদ,সারাক্ষন তিকতিক্ষে মেজাজ তোমার।””
“” তুই এগুলো বলার জন্য এখানে এসেছিস,অনতি?””
অন্ত্রীশা অনিকশার আরেকটু কাছে চেপে এসে বললো,
“” নাহ,আপু। কিন্তু আমি যা বলতে চাই তারসাথে এগুলো রিলেটেড! একটু চুপটি করে শুনো আপু!””
অনিকশাকে কিছু বলতে না দিয়েই অন্ত্রীশা আবার বলতে শুরু করে দিয়েছে,
“” অরিদ ভাইয়াকে তুমি নিজে বিয়ে করেছিলে। তারমানে উনি তোমার ভালোবাসার মানুষ ছিলো। কেন করেছিলে এটা আমরা একবারও জানতে চাইনি। আব্বু চাইনি এটা নিয়ে কোনো ঝামেলা হোক তাই। কিন্তু এক দু মাস যেতে বা যেতেই তুমি অরিদ ভাইয়ার সাথে রাগারাগি করে সবকিছু উল্টোপাল্টে করে দিচ্ছিলে। তোমার বোন হওয়ার সুবাদেও আমি অরিদ ভাইয়ার দলেই কারন উনি তোমাকে প্রচন্ড ভালোবাসেন। আর যে সংসারে স্বামী তার বউকে এতো ভালোবাসে সে সংসারে ঝগড়া কিভাবে লাগতে পারে? এমন তো নই যে তুমি তাকে ভালোবাসোনা। যদি ভালো নাই বাসতে তাহলে তো বিয়েটা তুমি করতে না!””
অন্ত্রীশা কথা বলতে বলতে এক সময় অনিকশার কাধে মাথা রেখে হালকা জড়িয়ে নিয়ে আদুরী গলায় বললো,
“” তুমি এতে বছর ধরে যে সত্যটাকে ভেতরে পুষে রেখেছো সেটা আজ মুক্ত করে দাও আপু। যে সত্যটা তোমাকে এভাবে কঠোর থেকেও কঠোরতার রুপে বন্দি করছে সেটাকেও মুক্ত করে দাও। আমি তোমাকে হেল্প করবো,আপু!””
অন্ত্রীশাকে নিজের কাধ থেকে সরিয়ে শক্ত কন্ঠ ধারন করলো অনিকশা,
“” কি বলতে চাস,তুই? সেটা সোজা করে বল এতো পেচাচ্ছিস কেন?””
অন্ত্রীশা এবার জোর করে তার আপুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো,
“” তুমি আর আমি আব্বুর আদর্শে বড় হয়েছি,আপু! আমি জানি তুমি কোনো অন্যায় কাজ করতে পারোনা। হয়তো তুমি কোনো অন্যায় কাজের মুখোমুখি হয়েছিলে,যেটা তোমাকে তোমার আদর্শ থেকে নড়াতে পারেনি। আর এই অন্যায় কাজটা তুমি করতে পারোনি বলেই আজ তুমি অন্ধকারে ডুবে আছো সাথে আমাদেরকেও ডুবিয়ে রেখেছো!””
“” অনতি,তুই কিন্তু…””
“” পালক আর তোমার মধ্যকার সম্পর্কের কথা জানতে চাই!””
অন্ত্রীশার এই ছোট্টবাক্যটাই যেন অনিকশাকে থমকে দিয়েছে। অনেকটা কাচের মতো শক্ত হয়ে গেছে সে। যাকে এখন একটু আঘাত করলেই হাজারটা টুকরো হয়ে ভেংগে পড়বে।
“” পালককে কি তুমি আগে থেকে চিনতে?””
অনিকশা নরম ধাচের শক্ত আয়নার মূর্তি হয়ে বললো,
“” পালক এন্ড আই ওয়াজ ইন এ রিলেশনশীপ!””
অনিকশার উত্তরে অন্ত্রীশার যতটা না বিস্মিত হওয়ার কথা ছিলো তার ছিটেফোটা ছাপ প্রকাশ পাইনি তার চেহারায়। বরংচ আরো সহজ স্বাভাবিকভাবেই বললো,
“” আমি পুরোটা শুনতে চাই আপু। বিস্তারিতভাবে। যাতে আমার চোখের সামনে তোমাদের লাভ স্টোরিটা ভেসে উঠে।””
অন্ত্রীশার এমন আবদারে থতমত খেয়ে যাচ্ছে অনিকশা। নিজের স্বামীর লাভস্টোরী অন্য মেয়েকে নিয়ে তাও মেয়েটা অন্য কেউ নয় তারই বড় বোন,এইভাবে স্বাভাবিক শান্ত হয়ে কিভাবে শুনতে চাই? ও কি আদৌ হুশে আছে নাকি বেহুশ হয়ে হুশে থাকার অভিনয় করছে??
অনিকশার কাধে ঝাকি দিতেই অনিকশার চোখের পলক পড়ছে।
“” আপু বলোনা,প্লিজ। আমি ওয়েট করছি!””
“” সেদিন ছিলো ১৪ ফেব্রুয়ারী,ভেলেন্টাইনস ডে! যেহেতু এটা সরকারী ছুটি না সেহেতু এই দিনে ভার্সিটি অফ থাকার কথা না। তোকে কলেজে নামিয়ে দিয়েই আমি আমি আমার ক্লাসের দিকে এগুচ্ছিলাম। আমার ফাইনাল ইয়ারের লাস্ট এক্সাম ছিলো ওইদিন। এক্সাম শেষে বের হতেই রিতালী আমার চোখ ধরে ফেলে! আমাকে চুপ করিয়ে আমাদের ক্যাম্পাসের মাঠের ঠিক মাঝখানে দাড় করিয়ে আমার চোখ থেকে হাত সরিয়ে ফেললো। আমি রিতালীকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই চোখের ইশারায় বললো নিচের দিকে তাকাতে। আমি নিচে তাকাতেই,,,””
“” পালককে হাটু গেড়ে বসে থাকতে দেখলে তাইনা আপু?”‘
“” হুম!””
“” তারপর? কটিনিউ করো!””
“” তারপর আর কি ও প্রপোস করলো আর আমি রাজী হয়ে গেলাম!””
অন্ত্রীশা এতক্ষন সোফাতে শুয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে অনিকশার কথা শুনছিলো। শোয়া থেকে উঠে বসে বললো,
“” প্রপোস করলো আর তুমি রাজী হয়ে গেলে? তুমি কি আগে থেকেই পালককে ভালোবাসতে,আই মিন পছন্দ করতে?””
“” তা জানিনা। কিন্তু আমাদের ভার্সিটির প্রত্যেকটা মেয়ের ক্রাশ ছিলো ও। আমি এটা সিওর ছিলাম আমার জায়গায় অন্য মেয়ে থাকলে সেও আমার মতো একি কাজ করতো!””
“” তুমি আমার আপু হয়ে পালকের কাছে সাধারন হয়ে গেলে? এটলিস্ট নিজের সেল্ফ এটিটিউটটা বজায় রাখার জন্য পরে জানাবে এটাও তো বলতে পারতে। আচ্ছা তারপর কি হলো?””
“” তারপর আরকি,ওর গভীর ভালোবাসার সমুদ্রে ডুব দিতে থাকলাম। ডুবতে ডুবতে এতোটাই অতলে চলে যাচ্ছিলাম যে তোদের কাছ থেকে দুরে সরে যাচ্ছিলাম। অবশ্য আমার দোষটা কিসের বল ও মানুষটাই এমন। যে কাউকে নিজের প্রেমে ফেলে দিতে পারে,যেমনটা তোর ক্ষেত্রেও ঘটেছে। এক চুমুতেই তুই বশ হয়ে গেলি!””
অনিকশা কথার ছলে অন্ত্রীশার গাল টিপে দিতেই অন্ত্রীশা বলে উঠলো,
“” তাহলে তুমি অরিদ ভাইয়াকে কেন বিয়ে করলে? পালক তো এখনো তোমাকে ভালোবাসে। উনি তো তোমাকে ধোকা দেইনি আপু,তুমি কেন দিলে?””
অন্ত্রীশার এই প্রশ্নটাই বেশ ঘাবড়ে গিয়েছে অনিকশা। ওর কাছ থেকে কিছুটা সরে এসে আমতা আমতা করে বললো,
“” ওর সাথে আমার কোনোকিছুতেই মিলছিলোনা। যার সাথে একটা বছরও আমি মানিয়ে নিয়ে চলতে পারিনি তার সাথে সারাজীবন কিভাবে থাকতাম?””
“” তাহলে যাকে কখনো ভালোইবাসোনি তার সাথে সারাজীবন থাকার দলিলে কিভাবে সাইন করলে আপু?””
অনিকশা কিছুটা রাগ নিয়ে অন্ত্রীশাকে ধমকে বললো,
“” তোর যা জানার ছিলো বলে দিয়েছি,আমার আর অরিদের মাঝখানে আসবিনা। তাহলে কিন্তু আমি…””
“” আপু,আমি আসি!””
“” আসি মানে? মাত্রই তো এলি,এখনি চলে যাবি?””
“”হুম!””
অন্ত্রীশা সোফা থেকে পার্স আর মোবাইলটা নিয়ে দরজার কাছটাতে এগুতেই অনিকশা ডেকে উঠলো,
“” অনতি!””
অন্ত্রীশা উল্টো দিকে মুখ রেখেই বললো,
“” কিছু বলবে আপু?””
“” পালক একটা নিষ্পাপ ছেলে,কোনো কালো ছায়া ওর উপর পড়েনি। একটা বছরে ওর সাথে আমার হাজার স্মৃতি জড়িয়ে আছে কিন্তু কোনো ঘনিষ্ঠতার স্মৃতি নেই। আমরা এমন সিচিউশনেও ছিলাম যেখানে আমাদের মধ্যে অনেককিছুই হতে পারতো কিন্তু ও আমার হাতটা পর্যন্ত ধরেনি। একেবারেই ধরেনি এটা বলবোনা,ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োজনে ধরেছিলো যে ছোয়ায় কোনো ভালোবাসা বা কামুকতা ছিলোনা,ছিলো দায়িত্ববোধ!””
“” সত্যি?””
“” হুম! ওর ভেতরের ভালোবাসাটা ছিলো পবিত্রায় ঘেরায় যেটা আমি ভাংতে পারিনি।””
“” তুমি উনাকে এখনো ভালোবাসো তাইনা আপু?””
অনিকশা অন্ত্রীশার কপালে দুটো চুমু খেয়ে বললো,
“” নারে পাগলী,ওর প্রতি আমার কখনোই ভালোবাসা জন্মায়নি। ওর ভালোবাসা আমাকে অবাক করতো। কিন্তু কেন জানি আমার ওকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করতোনা। যদি ইচ্ছেই করতো তাহলে আমি কখনোই অরিদকে বিয়ে করতাম না। আমি তো এটাও জানি আমি যদি এখনো ভালোবাসার দোহায় দিয়ে ওর কাছে ফিরতে চাই ও খুশি মনে আমাকে বরন করে নিবে। কিন্তু আমি কেন যাবো?””
“” তারমানে তুমি বলতে চাচ্ছে উনি যে তোমাকে জেলাস করানোর জন্য এতকিছু করতো তুমি একটুও জেলাস হওনি?””
“” একদম না। তুই যে জেলাসের কথা বলছিস সে জেলাস ফিল করিনি। করলে এতদিনে অনেককিছুই ঘটে যেতো। তবে হ্যা,একটু একটু মন খারাপ হয়েছে। যেমনটা তোর কোনো ফ্রেন্ড অন্য কোনো মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করলে তুই আমার কাছে এসে কাঁদতি,তেমনটা। একটা বছর একসাথে চলাফেরা করেছি। হুট করে অন্য কারো সাথে বন্ধুত্ব করে নিলেতো খারােপ লাগবেই তাইনা?'”
সকালে রোদের তীব্রতাকে মাথায় না নিলেও এখন নিতে হচ্ছে। যেমনটা চুপচুপা ঘাম নিয়ে অনিকশার বাসায় পৌছে ছিলো,অন্ত্রীশা। এখনও সে সেরকমই চুপচুপা ঘাম নিয়েই বাসে বসে আছে। তারাহুড়োয় ছাতা নিয়ে বের হয়নি সে। আজ যে তাকে মাথা ব্যথারা খুব করে চেপে ধরবে খুব বুঝতে পারছে সে। বাসের জানালা দিয়ে বাইরের প্রকৃতিতে ডুবে যেতে যেতে আবারও ভাবনায় ডুব দিচ্ছে অন্ত্রীশা!
অনিকশা যে তাকে সবকিছু খুলে বলেনি সেটা সে তখনি বুঝতে পেরেছে। অন্ত্রীশারও কেন জানি ইচ্ছে হয়নি সবটা জানতে। কেন হয়নি? আপু বলতে ইততস্ততায় ভুগতো তাই? নাকি অন্য কারনে??? অন্ত্রীশা চোখ বন্ধ করেই হালকা হেসে উঠে।
আচ্ছা সত্যিই কি পালক আপুর সাথে ঘনিষ্ঠতাই আবদ্ধ হয়নি? যেখানে বাসের পাশের সিটের পাঁচ মিনিটের জন্য একজন অপরিচিত মেয়েকে দেখলেও পুরুষজাতিগুলো কামুকতায় ছটফট করে। নানাভাবে তাকে ছুয়ার বাহানা বানায়। কেউ কেউ তো প্রকাশেই! তাহলে সেখানে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে এতোটা কাছাকাছি,এতোটা নিরিবিলি জায়গায় এতোটা সময় একসাথে থাকলে ছেলেদের মনে একটু অন্যকিছু করার ইচ্ছে জাগবে এটাই স্বাভাবিক। বরংচ না জাগাটাই অ স্বাভাবিক! তবে কি আপু আমাকে মিথ্যে বলেছে? যদি আমার জায়গায় অন্য মেয়ে থাকতো তাহলেও কি এই কথাগুলো বলতো?
কন্টাক্টরের ডাকে অন্ত্রীশা চোখ মেলে। বাস থেকে নেমেই রিকসায় উঠে পড়েছে।
বাসায় আসতেই পালকের মুখোমুখি হয়েছে অন্ত্রীশা। দুজনের চোখে চোখ পড়তেই পালক চোখ সরিয়ে গাড়ী নিয়ে বের হয়ে গেলো। পালকের গালে এখনো লালচে আভা দেখা যাচ্ছে। অন্ত্রীশা নিজের ডান নাতটা চোখের সামনে ধরতেই মু্খ থেকে বেড়িয়ে এলো,তোর হাতে এতো শক্তি? এভাবে একটা পুরুষের গালকে কলংকিত করে দিলি.??
সারাদিন একা ঘরে বসে থাকতে থাকতে বোর হয়ে যাচ্ছিলো অন্ত্রীশা। তার মধ্যেতো যখন তখন নানা ভাবনায় মাথাটাকে পাগল করে দিচ্ছে। কিছুটা রিলাক্স হওয়ার আশায় পাপড়ির রুমের দিকে পা বাড়িয়েছে অন্ত্রীশা!
এ বাসায় আসার পর থেকে পাপড়িকে রুম থেকে তেমন একটা বের হতে দেখেনি অন্ত্রীশা। মেয়েটাকে দেখলে মোটেও শান্তশিষ্ট লাগেনা। চেহারায় একটা চনচলতার ভাব রয়েছে।
অন্ত্রীশা দরজায় পরপর দুবার নক করতেই পাপড়ি দরজা খুলে দিয়েছে।
“” কিছু বলবে ভাবী?””
“” তোমার রুমে ঢুকা নিষেধ?””
“” নাতো,কেন?””
“” এইভাবে আমাকে বাইরে রেখেই সবসময় কথা বলোতো তাই ভাবলাম।””
পাপড়ি রুমের লাইট জ্বালিয়ে অন্ত্রীশাকে ভেতরে এনে বসিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গিয়েছে। এটা যেন বেশ অস্বাভাবিক মনে হলো অন্ত্রীশার কাছে। এখনো তো তেমন রাত হয়নি যে ও ঘুমাবে তার উপর সামনে ওর পরীক্ষাও। তাহলে লাইট বন্ধ করে কি করছিলো?
পাপড়ি ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে অন্ত্রীশার পাশে বসতেই,অন্ত্রীশা বললো,
“” তোমার চোখ,মুখের এই অবস্থা কেন? কাঁদছিলে?””
অন্ত্রীশার এমন হুট করে করা প্রশ্নে বেশ ঘাবড়ে যায় পাপড়ি।
“” কেন কাঁদছিলে,পাপড়ি?””
পাপড়ি অন্ত্রীশার কাছ থেকে উঠে যেতে নিলেই ওকে জোর করে বসিয়ে দিয়ে অন্ত্রীশা বলে উঠলো,
“” এই বয়সে মেয়েরা দরজা বন্ধ করে কেন কাঁদে সেটা মুখ ফুটে বলতে লাগেনা। আমি কি তোমাকে দুটো কথা৷ বলবো? তুমি মন দিয়ে শুনবে?””
পাপড়ি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁবোধক উত্তর দিলেও অন্ত্রীশা কিছু না বলেই বেড়িয়ে এলো। মেয়েটা আরেকটু কেঁদে হালকা হোক তারপর নাহয় বলা যাবে।
পালক অফিস থেকে বেশ রাত করেই ফিরেছে।অন্ত্রীশার মুখোমুখি হওয়ার ভয়ে। কিন্তু রুমে ঢুকেই খালি বিছানা পেয়ে সে হতাশ। তারমানে ও ঘুমোয়নি? তাহলে কোথায় গেলো? বারান্দার দিকটাই তাকাতেই চাঁদের আলোই অন্ত্রীশার ছায়া দেখতে পাচ্ছে। এতোরাতে ওখানে কি করছে? রাতে অমন ছটফট করে সকালে কোথায় বেড়িয়েছিলো? ওর মনে চলছেটা কি??
ভাবনাতুর চেহারায় ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমের দরজায় হাত পড়তেই একটা চিরকুট দেখতে পেলো পালক। ছোট্ট করে লিখা,
**সরি!!
ইতি
অন্ত্রীশা
যেটা টেপ দিয়ে দরজায় আটকানো। পালকের চিরকুটে চোখ পড়তেই চোখ,মুখ উজ্জ্বল হয়ে যাচ্ছে।
পালক ফ্রেশ হয়ে জামাকাপড় চেন্জ করে বারান্দার দিকে পা বাড়িয়েছে। অন্ত্রীশা পাশে এসে দাড়িয়েছে সে!
নিজের পাশে পালকের উপস্থিত পেয়ে অন্ত্রীশা রুমের দিকে পা বাড়াতেই ওর হাত আকড়ে ধরেছে পালক,
“” আর কিছুক্ষন থাকোনা,অন্ত্রীশা। তোমার সাথে গল্প করতে ইচ্ছে করছে। শুনবেনা আমার গল্প????
চলবে