ধোয়ার নেশা পর্ব ১৫

#ধোয়ার-নেশা

#রোকসানা-রাহমান

পর্ব (১৫)

পালক ফ্রেশ হয়ে জামাকাপড় চেন্জ করে বারান্দার দিকে পা বাড়িয়েছে। অন্ত্রীশা পাশে এসে দাড়িয়েছে সে!

নিজের পাশে পালকের উপস্থিত পেয়ে অন্ত্রীশা রুমের দিকে পা বাড়াতেই ওর হাত আকড়ে ধরেছে পালক,

“” আর কিছুক্ষন থাকোনা,অন্ত্রীশা। তোমার সাথে গল্প করতে ইচ্ছে করছে। শুনবেনা আমার গল্প????

অন্ত্রীশা এই মুহুর্তে পালকের কোন কাজটাই সে রিয়েক্ট করবে বুঝতে পারছেনা। পালকের হাতে নিজের হাত বদ্ধ হওয়াতে,
ওর কথাতে নাকি ওর ওই আবদারীর চাহনিতে??? চোখের সামনে একের অধিক অপশন থাকলে মানুষ সবসময় ছোট্ট একটা ভাবনায় ডুব দিতে চাই। আর এই ছোট্ট ভাবনাটা একসময় বিশাল আকৃতির রুপে পরিনত হয়,আর তখনি সে কোন অপশন গ্রহন করবে সেটা গুলিয়ে ফেলে। এক পর্যায়ে তার সবগুলো অপশনই গ্রহন করতে ইচ্ছে করে। এখন অন্ত্রীশার ক্ষেত্রেও তাই ঘটছে। ইচ্ছে করছে সে পালকের সবকিছুকেই তার একদৃষ্টিতে দেখে নিক।

এই প্রথম পালকের ছোয়াতে অন্ত্রীশা ভালোবাসার কিছুটা উপস্থিত পাচ্ছে। তবে সেটা স্বামী হিসেবে বউকে দেওয়া ভালোবাসা নয়,অন্যকিছু।

“” এভাবে থমকে গেলে যে? শুনবেনা?””

পালকের কথায় অন্ত্রীশার হুশ ফিরে এসেছে। আবার আগের জায়গায় এসে দাড়িয়ে পড়েছে সে। তবে আগে সে একা দাড়িয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে জোসনা আলো নিজের মধ্যে মাখতে চেয়েছিলো কিন্তু এখন জোসনার আলো ভাগ হয়ে যাচ্ছে। কিছুটা আলো পালককেও ছুয়ে দিচ্ছে।

অন্ত্রীশাকে নিজের পাশটাতে এসে দাড়াতে দেখে পালক নিজের হাতটা সরিয়ে নিয়েছে। দুজনেই হাজার তারার মাঝে উকি দেওয়া চাঁদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এমন একটা ভাব যেন কেউ কারো মুখ দেখলে দুজনের নামে মামলা হয়ে যাবে।

“” আতিশ বাদে এই প্রথম আমি কাউকে আমার ভেতরে গুপ্ত হয়ে থাকা কথাগুলো প্রকাশ করছি। কেন করছি জানিনা! শুধু জানি মন চাইছে আজ তোমাকে গল্প শুনাতে।

আমি খুব চাপা স্বভাবের মানুষ,হৈহুল্লোড়,আড্ডা,ঘুরাঘুরি কোনো কিছুতেই মন বসাতে পারতামনা। সবকিছুতেই বিরক্ত লাগতো। মনে হতো জীবনের এতো অল্প সময়টাকে এগুলোর মধ্যে ব্যয় করে কি লাভ?? কিন্তু এতো কিছুর মধ্যেও আমার আতিশের সাথে বন্ধুত্ব হয়। শুধু বন্ধুত্ব বললে ভুল হবে,বলতে পারো ওকে আমি খুব পছন্দ করি,ভালোওবাসি। মাঝে মাজেতো মজা করে ওকে বলিও ও মেয়ে হলে আমি ওকে বিয়ে করতাম।

আমার জীবনে সবথেকে বেশি ইম্পর্ট্যান্ট ছিলো পড়ালেখা,মেধা ভালো হওয়ায় ধীরে ধীরে অনেকটাই এগিয়ে যাচ্ছিলাম। পড়ালেখা করতে করতে যখনি বোর হয়ে যেতাম তখনি আতিশের কাছে চলে যেতাম। ওর সাথে গল্প করতে আমার খুব ভালোলাগতো। যদিও বা গল্প করার মতো আমি তেমন কথা পেতাম না তবুও এক কথা দুবার তিনবার বলেও ওর সাথে আড্ডা জমাতে চাইতাম। এতে আতিশ কখনোই বিরক্ত হতোনা। ও আরো বেশি উৎসাহী হয়ে আমার কথা শুনতো। কিন্তু হঠাৎ করে একজন নতুন কেউ আগমন ঘটে আমার জীবনে। এমন একজন, যার কাছে এক কথা দুবার তিনবার নয় হাজার হাজার বার বলেও আমি শান্তি পেতাম না,তৃপ্তি পেতাম না। ইচ্ছে করতো পৃথিবার সবার কথা আমি ওকে শুনাবো। ও হবে আমার কথা শুনার কথাপাখি! আজ আমি তোমাকে আমার এই কথা পাখির গল্পই শুনাবো ,অন্ত্রীশা। আমার পত্রীকন্যার গল্প!””

পত্রীকন্যা নামটা শুনেই অজান্তেই পালকের দিকে চোখ পড়েছে অন্ত্রীশার।

পালক হাসি হাসি মুখে বললো,

“” তুমি পাঁচ মিনিট ওয়েট করো,আমি তোমার জন্য কফি বানিয়ে আনছি।”””

পালক তাড়াহুড়ো করে পা বাড়াতেই অন্ত্রীশা পেছন থেকে বললো,

“” আপনি কফি বানাতে পারেন?””

জবাবে পালক মুচকি হেসে বললো,

“” হুম,তোমাকে আজ একটা স্পেশাল কফি খাওয়াবো। একটু ওয়েট!””

পাপড়ি বেড়িয়ে যেতেই আতিশ দরজার সিটকিনি লাগিয়ে নিজের বিছানায় শুয়ে পড়েছিলো। নিশ্বাসের গতি অনেকটাই কমে গিয়ে বুকে ব্যথা সৃষ্টি হচ্ছিলো। ফ্যানের পাওয়ারটা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই দরজায় নক হওয়ার শব্দ পায়। পাপড়ি এসেছে ভেবে বেশ রাগ নিয়েই দরজা খুলে সে। মনে মনে এটাও ভেবেছিলো এবার একটা না দুটো না তিনটে চড় মারবে সে। কিন্তু দরজায় একজন মাঝ বয়সী লোককে দেখে সে খুব চমকে গিয়েছিলো।

আতিশ হাতে নিজের চাকরীর জয়েনিং লেটারটা নিয়ে বসে আছে। তার চাকরী হয়েছে এটা ভেবেই তার খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ এতো খুশি সে জীবনে আর কখনো হয়নি। আতিশের মনে হচ্ছে এই চাকরীর পুরো ক্রেডিটটাই তার পাপড়িকে দেওয়া উচিত। ঘরে লক্ষীর পা পড়তে না পড়তেই সুখবর এসে দরজায় হাজির,ভাবা যায়? এই খবর পাপড়িকে দেওয়ার জন্য সে কতবার ফোন হাতে নিয়েছে হিসেব নেই। কিন্তু ঐদিনের ঘটনার পর ও কি আদৌ তার কল রিসিভ করবে? ভাবতেই বুকটা ছেদ করে উঠছে। যদি না ধরে এই টেনশনেই তার রাতের ঘুম উধাও। সাথে অসুস্থতাও!

এভাবে আর কতক্ষন সে ফোন হাতে নিয়ে বসে থাকবে? মাথাটা পেছনে কাত করে উপরের দিকে তাকিয়ে,বিসমিল্লাহ বলেই পাপড়ির নাম্বারে ডায়াল করেছে আতিশ। কিন্তু ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে ব্যস্তার অজুহাত দেখিয়ে কেটে দেওয়াতে আতিশ পুনরায় ডায়াল করে পাপড়ির নাম্বার বন্ধ পেল। আতিশ চোখ দুটো বড় বড় করে,নিজের ফোনের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললো,, আরে,এতো দেখছি আমার নাম্বার ব্লাকলিস্টে রেখে দিয়েছে!

আতিশ বিছানার চাদর উল্টিয়ে পাল্টিয়ে একটা সিম খুজে পেয়েছে। ওটা ফোনে ডুকিয়ে কল দিতেই ওপাশ থেকে রিসিভ করলো পাপড়ি। পাপড়ি হ্যালো বলার আগেই আতিশ চিল্লিয়ে উঠেছে,

“” তুই যে এতো অসভ্য,বেয়াদবী মেয়ে আমি তো আগে জানতাম না। পালকের মতো ভালো ছেলের বোন তুই কি করে হলি এটাই তো ভেবে পাচ্ছিনা,পাপড়ি!””
“” আপনাকে ভাবতে বলেছে কে?””
“” কেন আমার ভাবার জন্য কি এখন তোর কাছে পারমিশন নিতে হবে? তুই কি ভাবনারানী হয়ে গেছিস? তোর কাছে এপ্লিকেশন পাঠিয়ে অনুমোতি নিয়ে তারপর আমাকে ভাবতে হবে?””
“” কেন কল করেছেন,আতিশ ভাইয়া?””
“” কেন কল করেছি মানে? তোর মতো অসভ্য বেয়াদবী মেয়েকে আমি কেন কল দিবো? ফোন হাতে নিয়ে দেখি তোর মিসড কল উঠে রয়েছে। কল ব্যাক করে দেখি নাম্বার ব্লাকলিস্টে। নিজেই মিস কল দিবি আবার নিজেই ব্লাকলিস্টে রাখবি?””
“” আমি আপনাকে কল দেইনি। মিথ্যে বলছেন কেন?””
“” এখন তুই আমাকে মিথ্যেবাদীও বানাতে চাস? আর কি কি বানাতে চাস বল,দেখি তোর ভাবনা কতদুরে গিয়ে
জিরোয়!””
“” আমার ঘুম পাচ্ছে,আতিশ ভাইয়া। আপনার কি জরুরী কিছু বলার আছে?””
“” আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে এখন নিজের ঘুম দেখানো হচ্ছে? তুই এতো বেড়ে গেছিস,পাপড়ি?”‘
“” আমি কখন আপনার ঘুমের ডিস্টার্ব করলাম?””
“” ঐযে ঘন্টায় ঘন্টায় হাজার হাজার কল দিয়ে ডিস্টার্ভ করিস। খাইতে গেলেও কল,পড়তে বসলেও কল,ঘুমুতে ঘেলেও কল,গোসল করতে গেলেও কল,আমার তো মনে হয় তুই আমার বাসর রাতেও কল দিয়ে আমাকে ডিস্টার্ব করবি। তুই কি ভেবেছিস তোর ছককাটা প্লেন আমি বুঝিনা? আমিও প্লেন করবো তোর থেকে বেশি বেশি ঘর কেটে ছক কাটবো। বউকে রুমে ঢুকিয়েই মোবাইল,টেলিফোন,টেলিগ্রাম,দরজা,জানালা,ফ্যান,পাখা,লাইট সব বন্ধ করে দিবো!””
“” ফ্যানও বন্ধ করে দিবেন?””
“” হুম!””
“” আপনার বউ তো গরমে মরে যাবে।””
“” আমার বউ মরবে কেন? ফ্যান অফ করলেই মরে যেতে হবে? আমি আছি কি করতে? আমি ফু দিয়ে দিয়ে বাঁচিয়ে তুলবো।””
“” ফু দিয়ে?””
“” দরকার হলে আরো অনেককিছুই করবো। যেমন ধর,আমি ওর ঠোটে নিজের ঠোট লাগিয়ে আমার নিশ্বাস ওকে দিয়ে দিবো।””

আতিশের বউকে নিয়ে গল্প পাপড়ি আর শুনতে পারছেনা। গলাটা বসে যাচ্ছে,

“” আমি রাখছি।””
“” রাখছি মানে? তোকে তো আসল কথাই বলা হলোনা,এতো তাড়া কিসের তোর?””
“” কি কথা?””
“” আমি আর তোকে পড়াতে পারবোনা। আমার চাকরী হয়ে গেছে। তুই অন্য মাস্টার খুজে নিস,বুঝলি? তোর মাথার যে অবস্থা আমি সহ্য করেছি বলে তো অন্যরাও সহ্য করবেনা। তাই বলি কি একটা শক্তশাক্ত মাস্টার খুজে…””
“” ওকে!””

আতিশের কথার মাঝখানেই পাপড়ি কলটা কেটে দিয়েছে।

“” দেখো তো কফিটা কেমন হয়েছে!””

অন্ত্রীশার সামনে কফিটা এগিয়ে ধরে আছে পালক। অন্ত্রীশা হাসি দেওয়ার চেষ্টায় কফিটা নিজের আয়ত্বে নিয়ে নিলো।

“” খেয়ে দেখবেনা কেমন হয়েছে?””

অন্ত্রীশা কফিটা ঠোটে ছুতেই চোখ চকচক করে উঠেছে। পালকের দিকে ফিরে বললো,

“” ধনেপাতা ফ্লেবার??””
“” হুম,এটা আমাকে পত্রীকন্যা শিখিয়েছে। খাওয়ার যোগ্য হয়েছে তো?এই প্রথম বানিয়েছি!””

অন্ত্রীশা আরেকটা চুমুক দিয়ে বললো,

“” দারুন! আপনারটা কোথায়?””
“” আমি কফি খাইনা।””
“” তাহলে কফি বানানো শিখলেন কেন?””
“” তাকে বানিয়ে খাওয়াবো বলে।””

অন্ত্রীশাকে ছোট্ট হাসি উপহার দিয়ে পালক গল্প শুরু করে দিয়েছে।

“” তখন আমি থার্ডইয়ারের স্টুডেন্ট। কিছুদিনের মধ্যেই ইনকোর্স পরীক্ষা। তুমি নিশ্চয় জানো ইনকোর্সের মার্কসটা কতটা ইম্পর্ট্যান্ট? হ্যা,ভালো ছাত্র হওয়ায় হয়তো ডিপার্টমেন্ট থেকে আমাকে ফুল নাম্বারটাই দিয়ে দিতো। কিন্তু এমনি এমনি দেওয়া আমার পছন্দ না। তার উপর আমার মনে হতো নিজের মেধাকে অপমান করা হচ্ছে। তাই আমি খুব মনোযোগী হয়েই স্টাডি নিয়ে বিজি। ঠিক তখনি এক অজানা মেয়ের একটা চিঠি পৌছুলো আমার কাছে। পড়াশোনার ব্যাপারে আমি এতোই সিরিয়াস ছিলাম যে মেয়েদের সাথে আমার কন্টাক্ট হয়ে উঠেনি। বলতে পারো আমি চাইনি এসবে জড়াতে। কিন্তু ঐ একটা চিঠি আমাকে পুরো নাড়িয়ে দিয়েছিলো। তুমি হয়তো বিশ্বাস করবেনা আমি ঐ চিঠিটা কম করে হলেও ১০০ বার পড়েছিলাম। তখনো কিন্তু আমি চিঠির মালিককে জানতাম না। নিজের পড়ালেখা,পরীক্ষা সব ভুলে গিয়ে চিঠির মালিককে খুজে বেড়াচ্ছিলাম। ঠিক তখনি তার দ্বিতীয় চিঠি। আর আমার প্রেমে পড়ার দ্বিতীয় ধাপ!””
“” চিঠীতে কি এমন ছিলো যে আপনি প্রেমে পড়ে গেলেন?””
“” আই ডোন্ট নো। ইনফেক্ট সেখানে প্রেম নিয়ে কোনো বক্তব্যও ছিলো না। কোনো প্রেম নিবেদনও ছিলোনা। তবুও আমি প্রেমে পড়ে ছিলাম। কেন পড়েছিলাম আমি জানিনা। তবে এতো দিনে এটা বুঝেছি,সত্যিকারের প্রেমে পড়ার মধ্যে কোনো কারন থাকেনা। যে প্রেমে পড়াই কারন থাকে সে প্রেম কখনোই সত্যি হতে পারেনা। এক কথায় ওটা প্রেম নয়,প্রেমের মুখোশ পড়া অভিনয়!””
“” তারপর?””
“” তারপর আমিও ওকে চিঠি লিখলাম। আমি ওর প্রতি এতোই দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম যে আমি থার্ড ইয়ারে দু সাবজেক্টে ফেল! তুমি ভাবতে পারছো? যে ছেলে পুরো ভার্সিটির মধ্যে টপ ওয়ানে ছিলো সেই ছেলে দু সাবজেক্টে ফেল!””
“” সিরিয়াসলি?””

অন্ত্রীশার প্রশ্নে পালক শব্দ করে হেসে উঠলো,

“” হুম,তোমার মতো সবাই এমন অবাক হয়েছিলো। আমার প্রিনসিপাল অফিসরুমে,আমাকে পুরো দুঘন্টা দাড় করিয়ে নিজে পায়চারী করেছেন আর বলেছেন,এটা কি করে হতে পারে পালক? ওহ! মাইগড। উনাকে দেখে আমার অনেক মায়া হয়েছিলো কিন্তু আমি কি করবো বলো,আমি তো তখন পত্রীকন্যার রোগে ভুগছিলাম,যে রোগের ওষুধ একমাত্র আমার পত্রীকন্যাই দিতে পারে। আর সে তার নেক্সট চিঠিতে ওষুধ বানিয়েও ফেলেছিলো। ও জানিয়েছিলো যদি আমি এই ব্যর্থতা কাটিয়ে ফাইনাল ইয়ারে সব থেকে ভালো রেজাল্ট করতে পারি তবেই ও আমাকে দেখা দিবে।

এই এক বছরে আমি ওকে দেখার জন্য আকুল হয়ে পড়েছিলাম,আমার ওকে খুব ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করতো,চোখের সামনে বসিয়ে দেখতে ইচ্ছে করতো,ও যখন চিঠি লিখে তখন ওকে কেমন দেখায়? যখন কথা বলে তখন কেমন দেখায়,যখন হাসে তখন কেমন দেখায়,উফ! সবকিছুতেই একটা ছটফটানিতে ভুগতাম। আর যখন ও বললো,ও আমার সামনে আসবে তখন মনে হয়েছিলো আমি আর পৃথিবীতে নাই,অন্য কোথাও চলে এসেছি যেখানে সুখ আর সুখ। আর এই সুখকে অর্জন করতেই আমি আবার দিনরাত এক করে পড়া শুরু করে দিলাম!
“” চিঠীতেই এ অবস্থা!””
“” হুম, ধুমচে পড়ার মাঝে মাঝেও আমি পত্রীকন্যার পত্রে হারিয়ে যেতাম। তখন ও সপ্তাহে ১ টা করে চিঠি লিখতো। আর এই একটা চিঠিই আমি সাতদিনে নাহলেও ৭০০ বার পড়তাম। প্রিপারেশন বেশ চাংগা করেই হলে বসি। একে পরীক্ষা এগুচ্ছে তো পত্রীকন্যাকে দেখার জন্য আমার হার্টবিটগুলোও গতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। এভাবেই পরীক্ষা চলাকালীন আমি বেকে বসি। পরীক্ষা শেষ হওয়ার কম করে হলেও তিনমাস পর রেজাল্ট দিবে। আর এতদিন ওয়েট করার মতো অবস্থায় আমি ছিলাম না। তাই পত্রীকন্যাকে আমি চিঠি লিখলাম আমার লাস্ট এক্সাম,ভেলেন্টাইনস ডে তে আমার ওকে চাই। কিন্তু!””
“” কিন্তু?””
“” কিন্তু আমার চিঠির কোনো উত্তর আসেনি। আমি আবার ভেংগে পড়ছিলাম। আমি ভাবছিলাম হয়তো ও রেগে গিয়েছে,অভিমান করেছে তাই আর চিঠি লিখেনি। এদিকে আমার লাস্ট এক্সামও চলে আসছিলো। তার উপর ওর রাগ,চিঠি না পাওয়া সবকিছু নিয়ে আমি ডিপ্রেশনে ভুগছিলাম। তখনি মনে হলো ও যদি আমার কাছে আসতে না চাই আমি ওর কাছে যাবো। আমার হৃদয়ের সবটা ভালোবাসা দিয়ে ওর রাগ ভাংগাবো।

আতিশ আর কাদিরকে নিয়ে লেগে পড়ি পত্রীকন্যার খোজে। ও আমাকে এতো চিঠি লিখেছে কিন্তু কোথাও এমন কিছু লিখেনি যে ওকে খুজে পাওয়া যায়। আমরা সবাই যখন হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম তখনি আতিশের মাথায় টুও করে একটা বুদ্ধী চলে আসলো। সেই বুদ্ধীর জোরেই জানতে পারলাম আমার পত্রীকন্যা আমার ক্লাসমেট। আরেকটু জোরালোভাবে বুঝার জন্য ভালো করে ঘাটতেই দেখলাম ওর ও মিস্টিকালার খুব পছন্দ যেটা আমার পত্রীকন্যারও ছিলো। ব্যস,ভেলেন্টসইনস ডে তে ওকে প্রপোস করে সারপ্রাইজ করে দিলাম। ও এতো বেশিই সারপ্রািজড হয়েছিলো যে আমার উপর যে রাগ করেছিলো ওটাও ভুলে গিয়েছিলো।””

পালক কথার ছলে অন্ত্রীশার দিকে তাকাতেই দেখলো ও পলকহীনভাবে পালকের দিকে তাকিয়ে আছে,

“” তুমি কি আমার কথা শুনছো অন্ত্রীশা?””
“” হুম! তারপর কি হলো? আপনার পত্রীকন্যার রোগ ভালো হয়েছিলো?””

পালকের মুখটা মেঘে ঢেকে গিয়েছে। অন্ত্রীশা আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখতে পাচ্ছে,আকাশেও মেঘ জমে গেছে।

“” কি হলো বলছেননা যে?””
“” না,ভালো হয়নি। আমি আজোও পত্রীকন্যার রোগে ভুগছি। আমার পত্রীকন্যা চিঠিতেই ভালো ছিলো,চিঠির পত্রীকন্যা আমাকে কখনো কষ্ট দেইনি। কিন্তু যখন ও চিঠি থেকে বাইরে চলে এলো তখনি ওর মধ্যে আমি অন্য কারো অপস্থিতি টের পেতাম। চিঠি পড়তে পড়তে আমার মনের চোখে যে পত্রীকন্যাকে একেছিলাম তার সাথে বাস্তবের কোনো মিল ছিলোনা। কিছুদিনের মধ্যেই আমার প্রতি ওর অবহেলা,বেখেয়ালি,অযত্ন তৈরী হতে থাকে। নানাভাবে আমাকে অপমান করতে থাকে। কিন্তু এতোকিছুর পরও ওকে হারানোর কথা আমি ভাবতে পারেনি,ওর মতো হয়ে চলার চেষ্টা করেছি,ওর মতো করে ওকে ভালোবাসার চেষ্টা করছিলাম,তাও আমি ব্যর্থ হয়েছি। খুব ছোট্ট একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে অন্য একজনকে বিয়ে করে ফেলে ও। সেদিন আমি কেঁদেছিলাম,অনেক কেঁদেছি,ইচ্ছে করছিলো পৃথিবীর সবকিছু ঙেংগেচুড়ে ফেলি। কিন্তু আমি কিছু করতে পারেনি,ওর মুখোমুখি হয়ে ছোট্ট একটা প্রশ্নও করতে পারেনি,কেন আমাকে ঠকালো?

কস্ট কখনোই নিজের মধ্যে চেপে রাখতে নেই,তাহলে ছোট্ট কষ্টটাও পাহাড় সমান হয়ে নিজের উপর ভেংগে পড়ে। আর আমি সেটাই করেছিলাম যার ফলে দিনে দিনে আমার অবস্থা খারাপ হতে থাকে। একটা বদ্ধঘরে নিজের জীবনকে আটকে ফেলেছিলাম,এমন অবস্থায় আব্বু আমাকে মাস্টার্স কমপ্লিট করার জন্য বাইরে পাঠিয়ে দিলো। সেখানে গিয়ে আমি নতুনকিছু অনুভব করলাম। আমার মনে হতে কাগলো পত্রীকন্যা চলে গিয়েছে বলে আমার কষ্ট হচ্ছিলোনা। কষ্ট হচ্ছিলো এইটা ভেবে, পত্রীকন্যা আমাকে কেন চিঠি লিখছেনা??

তারকিছুদিন পরই খবর আসে আব্বু রোড এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছেন।

পালকের কন্ঠ চেন্জ হয়ে আসছে ভেবে অন্ত্রীশা প্রসঙ্গ পাল্টাতে বললো,

“” কফিটা অসাধারন ছিলো,রেসিপিটা একটু বলবেন,আমিও শিখেনিতাম,ধনেপাতার কফি!””

পালক অন্ত্রীশার দিকে ঘুরে বললো,

“” শিখাতে পারি,যদি তুমি আমার বন্ধু হও। তোমাকে বউয়ের মর্যাদায় হয়তো রাঙাতে পারিনি কিন্তু বন্ধুত্বের অমর্যাদা আমি করবোনা। বন্ধু হবে আমার?””

অন্ত্রীশা পালকের কথা উপেক্ষা করে চলে যেতে গিয়েও থেমে গিয়েছে। পালকের চোখে চোখ রেখে বললো,

“” আপু আপনার পত্রীকন্যা নয়। আপনার সাথে আপুর যা হয়েছে তার জন্য সে লজ্জীত,অনুতপ্ত। অনুতপ্তের আগুনে আপু নিজেকে জ্বালিয়ে শেষ করে দিচ্ছে। আপুকে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিন!””

অন্ত্রীশার কথাই পালকের সবকিছু থমকে গিয়েছে। না সবকিছু থমকে যায়নি,শুধু সে থমকে গেছে,আর বাকিসব তাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে,যদি অনিকশা তার পত্রীকন্যা না হয় তাহলে তার পত্রীকন্যা কে?

পালক রাগে ফুসতে ফুসতে অনিকশার নাম্বারে কল দিয়েছে,অপাশ থেকে রিসিভ হতেই পালক চিৎকার করে বললো,

“” আমি তোমাকে এই মুহুর্তে আমার চোখের সামনে দেখতে চাই। রাইট নাউ!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here