#পর্ব৭
#নতুন_ভোরের_আগমন
#অর্ষা_আওরাত
সময় স্রোত নিদির্ষ্ট কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সে বয়ে চলে তার মতন। দেখতে দেখতে কোলাহল পূর্ন বিয়ে বাড়িটি এখন অনেকটাই নিস্তব্ধতায় গ্রাস করেছে। প্রায় অর্ধেক অতিথিরা চলে গিয়েছেন। আর বাকি যারা আছেন তারা এখন দুপুরে খেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন। ইনসিয়াও একটু আগে খাওয়া দাওয়া সেড়ে আগের ন্যায় সোফাতেই বসে আছে। তার বাবা মাও মিজানুর রহমান এর সাথে উপরে গিয়েছেন। ইনসিয়া আগের ন্যায় চুপচাপ বসে আছে সোফাতে। অশান্ত মনটিকে চেয়েও শান্ত করতে পারছে না সে! তার মুখশ্রীতে চিন্তার মলিন আভাস ফুটে ওঠেছে! হঠাৎই পেছন থেকে ভাউউউ বলে কেউ ডাক দিয়ে ওঠলো! ইনসিয়া পেছন ফিরে তাকাবে এর আগে সেই অচেনা ব্যাক্তিটির হাত চলে গেলো ইনসিয়ার দু চোখের মাঝে। ইনসিয়া চোখ বন্ধ থাকায় দেখতে পারছে না মানুষটিকে! কিন্তু হঠাৎই অস্ফুট স্বরে বলে ওঠলো, মুন তুই! মুন বলে ওঠলো,
–“রাগ করিস নারে ইসু আসলে আজকে বাসায় একটু কাজ ছিলো তাইতো তোর সাথে দেখা করতে দেরি হয়ে গেলো। এখন বল তুই কেমন আছিস?”
ইনসিয়ার কিছু বলার আগেই মুন ইনসিয়ার মলিন চেহারা দেখেই বুঝতে পারলো যে ইনসিয়া ভালো নেই! মুন হচ্ছে ইনসিয়ার ছোটোবেলার বন্ধু এক কথায় ইনসিয়ার একমাত্র বেস্টফ্রেন্ড মুন।
–“তোর কিছু বলা লাগবে না আর। আমি বেশ বুঝতে পারছি তোর মন ভালো নেই। কি হয়েছে তোর বলবি আমাকে?”
ইনসিয়া প্রতিউওর করলো না আর। সে চুপ করে বসে রইলো। মুখশ্রীতে কোনো চিন্তার আভাস ফুটে ওঠেছে। মুন কি বলবে বুঝতে পারছে না। সে চুপ করে বসে রইলো খানিক্ষন ইনসিয়ার পাশে। আচমকাই ইনসিয়া মুনকে বললো,
–“হয়তো পঙ্গুত্বটাই আমার গোটা জীবনের জন্য কাল হয়ে দাড়াবে বল?”
মুন ইনসিয়ার এরূপ হেয়ালি করা বাক্য বোধগম্য হলো না। সে পাল্টা প্রশ্ন করলো ইনসিয়াকে,
–” বিয়ের দিন তো হাসিখুশিই ছিলিস এখন কি হলো?তোর কি হয়েছে সবটা খুলে বলবি আমাকে পুরো শুরু থেকে শেষে অব্দি কোনো কিছু বাদ রাখবি না।”
এই একজনের কাছেই ইনসিয়া কোনোদিনও কোনোকিছু লুকিয়ে রাখতে পারে নি। মেয়েটা ঠিক ইনসিয়ার সব কিছু ধরে ফেলার অদ্ভুত ক্ষমতা রাখে বলা যায়। ইনসিয়া শুরু থেকে শেষ অব্দি সবটা বললো। কোনো কিছুই বাদ রাখলো না আর। এমনকি ডির্ভোসের কথাও বলেছে। সব শুনে তো মুন স্তব্ধ হয়ে বসে আছে! তার কল্পনাতীত ও ছিলো যে ইনসিয়ার মতন মেয়ের জীবনে এরকম একটা দুর্যোগ আসবে!
–“ইনসিয়া পুরো টাই একটা ভুল বোঝাবুঝির স্বীকার! আর সবটা তোর শশুড় মশাইয়ের জন্য। এতে কারোরই দোষ নেই তাই বলবো রিহান ভাইও যখন চাচ্ছে না আর যতটুকু বুঝলাম তুই হয়তো তার প্রতি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছিস! যদি দুর্বল না হতি তাহলে রিহানের সবকটার উওর তুই দিতি। এখন আমি বলবো এই সম্পর্ক টা থেকে বেরিয়ে আসাই উচিৎ যদি না রিহান ভাই তোর সাথে সবটা মানিয়ে নেয়। উনি যদি মেনে নেয় যেভাবে বললো তোর শাশুড়ি মা তাহলে সেভাবে এগিয়ে দেখ আর তাতেও যদি কোনো কিছু ঠিক না হয় তাহলে ডির্ভোস দিতে এক মুহুর্তও ভাববি না। কারন আর যাই হোক জোর করে তো আর সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায় না।”
আর কিছু বলতে পারলো না মুন। ঠিক তার আগেই ব্যাগে থাকা মুঠোফোনটি বেজে ওঠলো। মুঠোফোনটি রিসিভ করে জানতে পারলো তার মা কাজ করতে গিয়র পা পিছলে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে! সঙ্গে সঙ্গে মুন দৌড় লাগালো বাড়ির উদ্দেশ্য! ইনসিয়া সবটা বুঝতে পেরে মুনকে যেতে দিলো। আর যাই হোক এখন মুন এর বাড়ি যাওয়াটা বেশি দরকার। কিন্তু মুন যা বলেছে সবগুলো কথাই সত্যি। দেখুক না ক’টা দিন। তারপরেই বোঝা যাবে ডির্ভোসের পথে কি সত্যিই হাঁটবে। ইনসিয়ার ভাবনা চিন্তার মাঝে তার বাবা মা এসে উপস্থিত হলেন তার শশুড় শাশুড়ীর সাথে! ইনসিয়ার বাবা মা বলে ওঠলেন,
–“মেয়েকে নিয়ে যখন যেতেই হবে তখন আর দেরি করে লাভ নেই বলুন? আপনি বরং রিহানকে ডেকে দিন একটু কষ্ট করে ওরা দু’দিন থেকে আবার চলে আসবে এ বাড়িতে।”
ইনসিয়ান বাবার কথা শুনে মস্তিষ্কে একটি কথারই উদয় হলো বারংবার রিহান তো যাবে না ইনসিয়ার সাথে যতোটুকু ইনসিয়া বুঝেছে রিহানের কথা বার্তায়। এখন তো রিহানই এটা নিয়ে সিনক্রিয়েট তৈরী করবে! ইনসিয়া চুপচাপ দেখতে লাগলো সকলের কর্মকান্ড!
মিজানুর রহমান গেলেন ছেলেকে ডাক দিতে। সব জায়গায় খোঁজার পর রিহানের দেখা মিরলো ছাঁদে! রিহানকে ওখানে দেখে মিজানুর রহমান তার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন,
–“তুমি যে এই সময় ছাঁদে দাঁড়িয়ে রয়েছে এখনই তো তোমাকে তোমার শশুরবাড়িতে যেতে হবে সে কথাটি মনে নেই তোমার?”
–“মনে থাকতো অবশ্যই বাবা, কিন্তু যে প্রতারনা করেছো তুমি আমার সাথে তারপরেও ভাবছো আমি ওই বাড়িতে যাবো ওই মেয়েটির সাথে। এটা বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে না এবার?”
মিজানুর রহমান জানেন তার ছেলে অনায়াসে সবটা মেনে নিবে না। কিন্তু তাঁকেও যে তার ছেলেকে রাজি করাতেই হবে।
–“ওই মেয়েটিই এখন তোমার বউ সে তুমি মানো আর না মানো। কিন্তু বিয়ে যখন হয়েছে তখন তুমি বাধ্য সবটা মেনে নিতে। তাই এখন আর কথা না বাড়িয়ে নিচে যাও ওনারা তোমার অপেক্ষায় আছে।”
–“কিন্তু বাবা সবকিছু তো আর**
আর কিছু বলে ওঠতে পারলো না রিহান তার আগেই মীতালি রহমান এর কথাও আওয়াজ শোনা গেলো,
–“রিহান বাড়ি ভর্তি মেহমান আশা করি তুমি এমন কোনো কিছু করবে না যাতে আমাদের সম্মান নষ্ট হয়। ঘরের কথা ঘরেই থাক অপরকে জানানোর তো কোনো দরকার নেই। আর তোমার বাবার শরীর খারাপ তো দেখছোই তার মধ্যে তুমি তোমার অযথা জেদ ধরে মানুষটিকে উওেজিতো করছো কেনো? একটা কথাও বলবে না তুমি সোজা নিচে গিয়ে ইনসিয়ার সাথে ওদের বাড়িতে যাবে।”
রিহান আর কোনো কিছু বললো না নিচে চলে গেলো! সে চায় তার জন্য বাড়ির সকলের সামনে তার বাবা মা অপমানিত হউক। মিজানুর রহমান মিতালি রহমানকে বললেন,
–“মিতালী আমি জানি রিহান যদি ওদের সম্পর্ক টাকে একটু সুযোগ দেয় তাহলে পুরোটাই ঠিক হয়ে যাবে।”
–“তবে ঠিক হবে কিনা জানি না কিন্তু যাই হয় সবটার জন্য তুমিই দায়ী থাকবে।”
আর কিছু না বলে মিতালী ও চলে গেলো নিচে! একলা একলা দাঁড়িয়ে রইলেন মিজানুর রহমান। তার নিজেরও বিবেক নাড়া দিচ্ছে আদৌ কি সঠিক কাজ করলেন তিনি?
নিচে যেতেই ইনসিয়ার সাথে রিহান বিনা বাক্যে চলে গেলো ইনসিয়ার সাথে । গাড়িতে রিহানের মুখশ্রী দেখেই ইনসিয়া বুঝে গেলো রিহান জোর করে তার সাথে যাচ্ছে! রিহানের মুখশ্রীতে স্পষ্ট রাগের আভাস ফুটো ছিলো। মুখটি কেমন রক্তিম বর্ন ধারন করেছে বোঝাই যাচ্ছে সে ইনসিয়ার সাথে যেতে একদমই চায় না! গাড়িতে বসেই ইনসিয়াকে রিহানকে জিগেস করলো,
–“আপনি যেতো না চাইলে না আসতেন। জোর করে আসার কি দরকার ছিলো আপনার?”
–“শোনো এসেছি আমার বাবা মায়ের কথা রাখতে আর অন্য কিছু নয়। আর হ্যাঁ শুনে রাখো তোমাদের বাড়ি থেকে ফিরলেই আমি আমাদের ডির্ভোস নিয়ে আলোচনা করবো।”
ইনসিয়া এবার বুঝে গেলো তার শাশুড়ী মায়ের কথা মতো তাদের সম্পর্ক টা এক পা ও আগাবে না। সেখানে তার চেষ্টা করা তো বৃথা! ইনসিয়া চুপচাপ বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো। গাড়ি চলতে থাকলো তার গন্তব্য।
#চলবে?
বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। একটু অসুস্থ আছি বিধায় গল্প দিতে দেরি হচ্ছে।