নতুন ভোরের আগমন পর্ব -১৫

#পর্ব১৫
#নতুন_ভোরের_আগমন
#অর্ষা_আওরাত

সারাদিনের কোলাহল পূর্ন ব্যস্ত শহরটি এখন একটু বিশ্রামে নেমেছে বলা চলে। আগের মতন ভীড় নেই এখন। মানুষ তার নীড়ে ফিরেছে। রাত্রের আকাশটি এখন তারায় তারায় পরিপূর্ণ। মস্ত বড়ে একটা চাঁদ ওঠেছে আকাশ জুড়ে যার সারা কিরন ছড়িয়ে দিচ্ছে ধরনীর বুকে! বিকেল গড়িয়ে রাত হয়ে গেছে এখন! তবুও এখনো স্তম্ভের ন্যায় ছাদে সেই ভাবেই দাঁড়িয়ে রয়েছে ইনশাদ। এরই। মাঝে নিচে গিয়ে চেক করে আসলো মিজাুনর রহমান এর জ্ঞান ফিরেছি কিনা? কিন্তু ফলাফল শূন্য হবার কারনে আবারও ছাঁদে বসে নিস্তব্ধ শহর আর খোলা আকাশের চাঁদ টিকে দেখতে লাগলো ইনশাদ। সময়টা কম হয়নি প্রায় মধ্যেরাত বললেও কোনো ভূল হবে না। চারিদিকে ঝি ঝি পোকার ডাক আর মাঝে মাঝে কয়েকটি কুকুরের ডাক মিলে পরিবেশটি কেমন গা ছমছমে হয়ে গেছে! নিস্তব্ধ রাত্রিকে বিদায় জানিয়ে নিচে গেল আবারো ইনশাদ দেখতে পেলো মিতালী রহমান হেলান দিয়ে বসে আছে হয়তো বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়েছে। ইনসিয়া তার পাশে বসে রয়েছে। আর ঠিক ইনসিয়ার পাশেই রিহান ও বসে রয়েছে। ইনশাদকে দেখতে পেয়ে রিহান তাকে কাছে ডাকলো। ইনশাদ রিহানের কাছে গেলো। কথা বলবে বলে দু’জনে মিলে বাহিরে চলে গেলো। ইনসিয়া ওদের দু’জনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। ইনসিয়া বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে রিহান ইনশাদকে ঠিক কি বলতে নিয়ে যাচ্ছে! ইনসিয়া সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বুজে রইলো! ওদিকে রিহান আর ইনশাদ ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে। রিহান একে একে ইনশাদকে সবকিছু খুলে বললো শুরু থেকে তাদের বিয়ে সবকিছু। এমনকি ডির্ভোসের কথাটুকুও বাদ রাখলো না বলতে। সব শুনে ইনশাদ চরম ভাবে বিস্মিত হয়ে আছে। সে ভেবেছিলো ইনসিয়া হয়তো সুখে আছে তাই তার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে! কিন্তু এখন সবটা পরিষ্কার। ইনসিয়ার সাথে রিহানের বিয়ে হয়েছে দিন তিনেক আগে। আর ওরাে একসাথে থাকবেও না ডির্ভোস হয়ে যাবে। রিহান বলে ওঠলো,

–“ইনশাদ তুইই বল আমি কি ভুল করছি বল? যে সম্পর্কে আমি থাকতে চাই না। সেই সম্পর্ক টেনে নিয়ে যাবার কোনো মানেই নেই।”

–“রিহান চাইলেই তুই কিন্তু আরো একটা সুযোগ দিতে পারিস তোদের সম্পর্কটা কে।”

–“আরে বোঝার চেষ্টা কর ওকে দেখলেই আমার মনে হয় যে ও আমাকে ঠকিয়েছে। আমি ওকে কোনোদিনও ভালোবাসতে পারবো না। আর ভালোবাসা তো দূর ওকে সহ্যই হয় না আমার! এর চেয়ে বরং বাবা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলে সুস্থ হলে আমি ডির্ভোসের কথা জানিয়ে দিবো।”

–“তাহলে আর আমার কিছু বলার নেই রিহান। তুই যদি এতোই বোঝা মনে করিস তাহলে বলবো যে বেরিয়ে আয় ইনসিয়াকে নিজের জীবনে ছেড়ে দে।”

–“আমিও তো তাই বলছি ওর জিবনটা নষ্ট করার কেনো অধিকার তো নেই আমার বল? এর চেয়ে আমরা দু’জনে আলাদা হযে যে যার মতন জীবন কাটাবো।”

আর কিছু বললো না কেউ। চুপচাপ ভাবে হাসপাতালে চলে গেলো! ইনশাদ মনে মনে ভাবছে ইনসিয়া ইনশাদের কাছ থেকে পালানোর যতোই চেষ্টা করুক সেই ইনশাদের কাছেই তাকে বাধা পড়তে হবে। একবার দূরে সরে গেছে বলে কি বারবার যেতে দেওয়া যায়? কখনোই না। ইনসিয়া খুব শ্রীঘই ফিরবে ইনশাদের কাছে।

রাত্রি পেরিয়ে নতুন ভোরের উদয় হলো। সকাল টা শুরু হলো খুব স্নিগ্ধ সতেজ ভাবে। ডাক্তার মিজানুর রহমানকে চেক আপ করে বললো বিকেলে ডিসচার্জ করে দিবে। মিজানুর রহমান এর জ্ঞান ফিরলো। জ্ঞান ফিরতেই প্রথমে সবার আগে ইনশাদকে দেখতে পেলো! ইনশাদকে দেখে তড়িঘড়ি করে ওঠতে গেলে,

–“বড়ো আব্বু আস্তে ধীরে ওঠো এতো ব্যস্ত হবার কিছু নেই বুঝলে?”

–“তোকে দেখতে পেয়েছি এতোবছর পরে ব্যস্ত হবো না বল? জানিস তোকে কতোটা মিস করেছি এই এতোগুলা দিন?”

—“সব জানি বড়ো আব্বু আমিও তো তোমাদের ছাড়া বেশিদিন থাকতে পারিনি তাই তো চলে এলাম।”

–“হ্যাঁ এসেছিস যখন এবার আর তোকে ছাড়বো না। আর যেতে হবে না তোকে বিদেশে। এখানেই একেবারে বিয়ে করে সংসার করে বুড়ো হবি।”

–“তুমি চিন্তা করো না আব্বু। আমি এবার বিয়ে করে সংসার করবো নিশ্চিন্ত মনে।”

শেষের কথাটি ইনসিয়ার দিকে চেয়ে বললো ইনশাদ। সত্যিই এখন আর কোনো বাধা নেই। ইনসিয়াকে এখন নিজের করে পেতে পারবে। হঠাৎ মিজানুর রহমান বলে ওঠলো,

–“বাড়ির সবাইইতো ইনশাদকে চিনে একমাত্র ইনসিয়া ছাড়া। ইনসিয়া ও হলো ইনশাদ এ বাড়ির বড়ো ছেলে বলতে পারো। রিহানের পর আমার একমাত্র সন্তান সে। ছোটোবেলায় ওকে আমি কুড়িয়ে পেয়েছিলাম কিন্তু ও এখন আমার সন্তান। আমার পরিচয়েই ও বড়ো হয়ে ওঠেছে। আমাদের পরিবারে রিহান আর ইনশাদ দু’জনেই সমান।”

ইনসিয়ার কাছে এতোক্ষণে ব্যাপার টি পরিষ্কার হলো কেনো ইনশাদ মিজানুর রহমানকে বড়ো আব্বু বলে সম্মোধন করছিলো। এখন কি হবে? এখনতো ইনশাদ সর্বক্ষন তার চোখের সামনে থাকবে। ইনসিয়ার ভাবনার মাঝেই মিজানুর রহমান আবারো বললেন,

–“তোমরা সবাই একটু যাও আমি রিহান আর ইনসিয়ার সাথে একটু আলাদা করে কথা বলতে চাই। আমাকে নিয়ে টেনশন করো না আমি আপাততো ঠিক আছি। তোমরা যেতে পারো এখন।”

সবাই চলে গেলো। কেবিনে এখন রিহান আর ইনসিয়া রয়েছে। মিজানুর রহমান আগে ইনসিয়াকে বললেন,

–“আমি জানি আমি তোর কথাটি সবার কাছ থেকে লুকিয়ে বড্ড ভূল করেছি। এ ভূলের মাশুল তোকে দিতে হচ্ছে। তবে তোরা চাইলেই সম্পর্কটাকে ঠিক করতে পারিস। এ সম্পর্কে তোর মতামত বেশি জরুরি রিহান। তুই কি চাস বল?”

রিহান ভেবে দেখলো এখনো তার বাবা পুরোপুরি সুস্থ হয়নি এখনি তাদের ডির্ভোসের কথাটা বলা ঠিক হবে না। আর ক’দিন পরে না হয় বলবে।

–“বাবা আমি আরো কিছুদিন পরে জানাবো তোমাকে।”

–“বেশ জানিও তাহলে। তবে যাই সিদ্ধান্ত নাও না কেনো সবটা ভেবে চিন্তে তারপর সিদ্ধান্ত নিও। তাহলে ইনসিয়া তোমার কি মতামত বলো?”

–“আমিও রিহান যেদিন বলবে ঠিক সেদিনই বলবো।”

________________________
দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে গেলো। মিজানুর রহমান এখন প্রায় সুস্থ হয়ে গেছে। এখন আগের মতনই স্বাভাবিক আছে। ইনশাদও তাদের পরিবারের ব্যবসায় মন দিয়েছে। সেদিন এর পর থেকে সবটা জানার পরে ইনশাদ ইনসিয়াকে অনেক বার বোঝানোর চেষ্টা করেছে যদি সে চায় জীবন তাদেরকে একসাথে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে। তারা এখন একসাথে বাকিটা জীবন কাটাতে পারবে। কিন্তু প্রতিউত্তের ইনসিয়া বারবার ইনশাদকে না করে দিয়েছে। ইনসিয়া রিহান একসাথেই থাকে এক ঘরে তবে সেটাকে একসাথে থাকা না বললেই চলে। ইনসিয়া সোফাতে ঘুমোয় আর ইনশাদ খাটে। সারাদিন সংসারের কাজে টুকটাক সবাইকে সাহায্য করে আর রাত্রে এসে ঘুম ব্যস এভাবেই চলছে রিহান আর ইনসিয়ার লোক দেখানো সংসার। রাত হয়ে গেছে সবাই ঘুমিয়ে গেছে বললেই চলে। রিহান ও শুয়ে পড়েছে কিন্তু ইনসিয়া বসে বসে কিছু একটা করছে যেনো। রিহান ইনসিয়ার উদ্দেশ্য বলে ওঠল,

–“বাবা তো এখন অনেকটাই সুস্থ হয়ে গেছে আর আমি উকিলের সাথেও কথা বলেছি উকিল বলেছে যে ডির্ভোস কার্যকর হতে আরো তিন মাস সময় লাগবে দিন মাস আমাদের একসাথে থাকার পর আমাদের ডির্ভোসটা একেবারে হয়ে যাবে। আর কোনো বাধা থাকবে না। তুমি তোমার মতন থাকবে আর আমি আমার মতন থাকবো। ভাবছি বাবা’কে বলে দিই এখন? দেরি করে তো লাভ নেই যা হবার সেটাতো হবেই বলো?”

ইনসিয়া আগের মতন বসে তার কাজ করতে লাগলো। কোনো ভাবান্তর হলো না তার মধ্যে ডির্ভোসের কথা শুনে।

–“,হ্যাঁ তাহলে কালকে আপনি আংকেলের সাথে কথা বলুন। য়া হবার সেটা যখন হবেই তখন আগ থেকে সবাইকে জানিয়ে রাখাই ভালো। জোর করে একটা সম্পর্কে থাকার চেয়ে তা থেকে বেরিয়ে যাওয়াই উওম।”

#চলবে?
বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here