#নষ্ট_গলি
পর্ব-১
লেখা-মিম
-” স্যার, সব ধরনের মাইয়্যার কালেকশন আছে আমার কাছে। কেমন পিস চান বলেন। সামনে এক্ষুনি হাজির করমু।”
-” বয়স বেশি হওয়া যাবে না। ১৭-১৮ হলে বেস্ট। হাইট, ফিগার একদম পারফেক্ট হতে হবে। চেহারা নরমাল হতে হবে। আপনাদের মতো হলে হবে না।”
-” আমাগো মতো মানে?”
-” আপনাদের চেহারায় স্পষ্ট ভেসে উঠে আপনারা প্রস্টিটিউট।”
কথাটা শোনা মাত্রই এতক্ষনের হাসিমাখা মুখটাতে কালো ছায়া পড়ে গেলো জোনাকি আক্তারের। কথাটা তার মোটেইপছন্দ হয়নি। মনে মনে গালি দিচ্ছে সে সোহানকে। শালা হারামি একটা। বেশ্যার শরীর মজা লাগে আর চেহারা মজা লাগে না। ভ্রু কুঁচকে তার চামচা ফখরুলকে বললো,
-” ঐ, চুমকি আর মায়ারে ধইরা আন। ”
-” চুমকি তো সার্ভিসে আছে।”
-” মায়া কই?
-” ওর আইজ শরীর ভালানা
সোহানের দিকে ঘুরে জোনাকি বললো,
-” চুমকিরে দেখতে হইলে বসা লাগবো আর মায়ার জন্য আরেকদিন আসতে হইবো।
-” চুমকিকে না হয় অল্প সময়ের জন্য ডেকে দাও।
-” না স্যার আমগো ধান্দা বেইমানির হইলেও তা আমরা ঈমান দিয়া করি। রুটিরুজি আমগো। বেইমানি কেমনে করি কন? তবে আপনে এত শর্ত দিসেন কেন তা জানা যাইবো?
-” এত জেনে তুমি কি করবা? মায়াকে কি একটু দেখার ব্যবস্থা করা যায়?
-” স্যার সবাই মনে করে আমগো খালি শরীর আছে মন নাই। কিন্তুু আমগো ও মন আছ। ওরা আমার দায়িত্বে এখানে থাকে। তাই ওগো ভালোমন্দ দেখার দায় ও আমার। ”
-” অার কেউ নেই?”
-” না অাপনে যেমন মাল চাইতাছেন এইরকম মাল অার নাই।”
-” দেখো অন্যান্য কাস্টমারের চেয়ে আমি বেশি টাকা দিবো।”
-” না স্যার, পারমু না।
মেজাজ খারাপ হচ্ছে সোহানের। এটা কেমন ফাজলামি। এত ব্যস্ত মানুষ সে। কাজ ফেলে এখানে এসেছে অথচ ওকে এভাবে তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে? খুবই অপমানজনক ব্যাপার। এই মহল্লায় ওর অাসাই ঠিক হয়নি। দেশে এত জায়গা থাকতে এখানে কেনো এসেছিলো মরতে?
-” শোনো মহিলা, এই যে এত ভাব নিচ্ছো না? এতটা ভাব নেয়ার কিছু নেই। তুমি যাস্ট একটা প্রস্টিটিউট। রাজ্যের কাজ ফেলে এসেছি এখানে। অার তুমি এভাবে ইনসাল্ট করছো আমাকে? তোমরা একটা কাস্টমারের কাছে কত পাও? উর্ধে ১৫০০। এর বেশি তো কখনোই পাও না।অামি তোমাকে পার মান্থ ফিফটি থাউজেন্ড পে করতাম। ফিফটি থাউজেন্ড বুঝো? পঞ্চাশ হাজার টাকা প্রতি মাসে। আর তোমার মেয়ের খরচ সব অামি আলাদা বহন করতাম।”
-” দেখেন স্যার, আপনের এইখানে ভাল্লাগলে আবার আইসেন আর যদি আমাগোর চেহারা আর এই মহল্লা পছন্দ না হয় তাইলে আর আইসেন না।”
রাগে ফুঁসছে সোহান। মেজাজ আসমানের চূড়ায় উঠছে। বেশ্যাটা এমন ভাব নিচ্ছে মনে হচ্ছে যেনো প্রতি কাস্টমারের কাছ থেকে ও প্রতিমাসে পঞ্চাশ ষাট হাজার টাকা পায়। যত্তসব বেশ্যার দল।
সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সে। ফোনে কাউকে বলতে বলতে রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে,
-” কোথায় পাঠিয়েছো আমাকে? একটা মেয়েকেও দেখায় নি এরা। তুমি জানো সময় ব্যাপারটা আমার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ন। এত কাজ ফেলে আসছি আমি। আজাইরা টাইম ওেস্ট করলাম এখানে। অন্য কোথাও খোঁজ নাও। আজই মেয়ে চাই আমার।
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে শেষ করলো সোহান। বেশ চেঁচাচ্ছিলো সে। ওপাশ থেকে তার বিজনেস ম্যানেজার কি বলছে সেগুলো পাত্তা না দিয়েই একনাগারে বলে শেষ করলো কথাগুলো। সোহানের চেঁচামেচিতে আশপাশের রুমগুলো থেকে উঁকি দিচ্ছে কিছু পতিতা। খুব দ্রুতগতিতে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে সোহান।
পিছন পিছন যাচ্ছে তার পি,এস, জাহিদ। সে একজন নির্বাক দর্শক। প্রয়োজন ছাড়া একটা কথাও সে বলে না। সোহান যত চেঁচামেচি করুক,রাগ করুক তার মাঝে কখনোই কোনো বিশেষ প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। সোহানের রাগ উঠলে বেশিরভাগ তুফান জাহিদের উপর দিয়েই যায়। কিন্তু সে একদম স্বাভাবিকথাকে। তার চেহারা দেখলে মনে হয় কোথাও কিছু হয়নি। পরিস্থিতি অত্যন্ত স্বাভাবিক এবং শান্ত আছে। নিচে নেমেই সোহানের চোখ গেলো সরু গলির উল্টো দিকের জরাজীর্ন দোতলা বিল্ডিংটা তে। জানালার পাশে একটা মুখ দেখা যাচ্ছে গ্রিলের ফাঁক দিয়ে। চোখ আটকে গেছে সেখানে। মনে হচ্ছে আশপাশের সবকিছু থমকে গেছে। সে নিজেও থমকে আছে। মেয়েটা এতক্ষন ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলো। সোহানের ঘোর কাটলো জানালার পাশ থেকে মেয়েটার সরে যাওয়ার পরপরই। ভীষন ভাবে মনে ধরেছে মেয়েটাকে। এমন একটা মুখই সে খুঁজছিলো। সোহানের সিক্সথ সেন্স বলছে এটাই মায়া। নামটার সাথে এই মুখটাই মানায়।
-” জাহিদ।”
-” জ্বি স্যার?”
-” এক্ষুনি উপরে যাও। জোনাকিকে যেয়ে এই মেয়েটার কথা বলো। অামার ওকে পছন্দ হয়েছে। কত টাকা লাগবে জিজ্ঞেস করো যেয়ে?”
-” ওকে স্যার।”
জাহিদ গেছে জোনাকির সাথে কথা বলার উদ্দেশ্যে।
আর সোহান যাচ্ছে সেই মেয়েটাকে খুঁজে বের করতে। দোতলায় উঠে সেই রুমে যেয়ে দেখে মেয়েটি সেখানে নেই। রুম থেকে বেরিয়ে বাহিরের করিডোরে আশপাশে চোখ বুলাচ্ছে। কোথ্থাও নেই। কতক্ষনের মধ্যে হাওয়া হয়ে গেলো নাকি। লম্বা করিডোর ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সে। একটা রুমের দরজার পর্দা উড়ছিলো। পর্দার ফাঁক দিয়ে মেয়েটাকে দেখা যাচ্ছে। কেউ একজন তার চুল আঁচড়ে দিচ্ছে। রুমে ঢুকে পড়লো সোহান। চমকে উঠলো রুমে থাকা দুজন মানুষ। পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছে মেয়েটাকে সে। এমন মেয়েই সে খুঁজছিলো।
-” আচ্ছা তুমিই কি মায়া?”
কোনো উত্তর দিচ্ছে না সে। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে সোহানের মুখের দিকে। পাশে থাকা মহিলা এগিয়ে এসে বললো,
-” আপনেরে কি জোনাকি বুবু পাঠাইছে? স্যার আমার মাইয়্যাডা অসুস্থ। আজকা সার্ভিস দিতে পারবো না।”
-” যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটার উত্তর দাও। এটাই কি মায়া?”
-” হ স্যার।”
-” কি হয়েছে ওর?”
-” দুইদিন ধইরা তুমুল জ্বর আইছে স্যার।”
কাছে এগিয়ে এসে মায়ার কপালে হাত রাখলো সোহান। টেম্পারেচার সত্যিই অনেক বেশি।
-” ডক্টর দেখিয়েছো ওকে?”
-” না স্যার আজকা যামু সামনের ফার্মেসিতে। ঐখানে একটা ডাক্তার বসে। উনারে দেখামু।”
কিছু না বলেই বেরিয়ে এলো সে। বাহিরে আসা মাত্রই জাহিদের মুখোমুখি হলো সোহান।
-” স্যার উনি আপনাকে উপরে যেতে বলেছেন।”
উপরে জোনাকির রুমে এলো সোহান। মহিলা পায়ের উপর পা তুলে সোফায় বসে আছে। মহিলার সামনাসামনি চেয়ার টেনে বসলো সোহান।
-” কত চাও?”
-” যা কইছেন তাইই থাকবো।”
-” আমার কিছু শর্ত আছে।”
-” কি?”
-” ওকে অন্য কেউ ইউজ করতে পারবে না। শুধুমাত্র অামাকে সার্ভিস দিবে। আমি যখন যেখানে ডাকবো সেখানেই ওকে পাঠাতে হবে। ঢাকার বাহিরে আমি প্রায়ই যাই। দেশের বাহিরেও যাই। আমি যেখানে যাবো সেখানে ওকেও নিয়ে যাবো। ওর যাবতীয় খরচ আমি চালাবো।আর তোমার টাকা আলাদা দিবো। এখন যাও ওকে রেডি হতে বলো। ওকে নিয়ে বাহিরে যাবো।
-” স্যার আজকা মাইয়্যাডারে সার্ভিসে দিমু না। ছেমড়ি অসুস্থ। সুস্থ হইলে যা খুশি কইরেন।”
-” ওকে ডক্টর দেখাতে নিয়ে যাচ্ছি। আর আমি টাকা দিচ্ছি। অতএব মুখ বন্ধ রাখো। আমি যা খুশি তা করবো এখানে তোমার কিছু বলার নেই।”
-” টাকাটা তো এখনও পাই নাই।”
-” জাহিদ ওকে আজকেই টাকা দেয়ার ব্যবস্থা করো। অফিসে কাউকে ফোন দিয়ে বলো টাকা নিয়ে আসতে।আর তুমি মায়ার কাছে খবর পাঠাও। ওকে বলো রেডি হতে।”
(চলবে)