#নষ্ট_গলি
পর্ব-২
লেখা-মিম
গাড়িতে বসে অাছে সোহান। তার পাশে মায়া। হসপিটাল যাচ্ছে ওরা দুজন। জাহিদকে বসিয়ে এসেছে জোনাকির ওখানে। অফিসের একজন কর্মচারী টাকা নিয়ে অাসবে সেখানে। জোনাকিকে টাকা বুঝিয়ে দিয়ে এরপর সেখান থেকে আসবে। এখন পর্যন্ত কোনো কথা হয়নি তাদের মধ্যে। মায়াকে খুব অস্থির দেখাচ্ছে। একবার হেলান দিয়ে বসছে অারেকবার সোজা বসছে। ব্যাপারটা লক্ষ্য করলো সোহান।
-” তোমার কি বেশি খারাপ লাগছে?”
-” বমি করবো।”
-” ওয়েট ওয়েট। গাড়িতে করো না প্লিজ।”
কোনোমতে গাড়িটা একদিকে পার্ক করলো সোহান। গাড়ি থেকে বেরিয়েই গড়গড় করে বমি করতে শুরু করলো মায়া। সামনের দোকান থেকে দৌঁড়ে একবোতল পানি কিনে অানলো সে। মায়ার দিকে পানির বোতলটা এগিয়ে দিলো। কুলি করে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিলো মায়া।
– ” গাড়িতে বসবে এখন? নাকি অারও কিছুক্ষন এখানে দাঁড়াবে?”
-” না, এখন ঠিক আছি। গাড়িতে বসবো।”
গাড়িতে এসে বসলো দুজন। বেশিদূর আর বাকি নেই। খুবজোর পাঁচ থেকে সাত মিনিট সময় লাগবে।
-” তুমি কি গাড়িতে উঠলে বমি করো?”
-” না। জ্বর এসেছে তো। তাই গতকাল থেকে বমি হচ্ছে।”
-” দুদিন হয়ে গেছে এখনও ডক্টর দেখানো হয়নি কেনো?”
-” ডক্টরের কাছে যেতে ভালো লাগে না।”
-” অসুস্থ শরীর নিয়ে পড়ে থাকতে ভালো লাগে?”
-” হুম ভালোই লাগে। কাজ থেকে তিন চারদিন অবসরে থাকা যায়। নিজের মতো করে কয়টা দিন কাটানো যায়। আর নয়তো সারাবছর অন্যের পুতুল হয়ে বসে থাকতে হয়।”
মায়ার কন্ঠে কিছুটা অভিযোগের অাভাস পাচ্ছে সোহান। মায়ার দিকে একবার তাকলো সে।
ডক্টরের চেম্বারে বসে অাছে দুজন। চোখে চশমা লাগিয়ে সামনে বসে আছে ডাক্তার।
-” নাম কি তোমার মামনি?”
-” মায়া।”
-” সুন্দর নাম। বয়স কত?”
-” ১৮ বছর তিন মাস।”
-” এই ভদ্রলোক কি হোন তোমার?”
-” জ্বি উনি…..”
-” ও আমার ওয়াইফ।”
থতমত খেয়ে গেলো মায়া। এটা কি বললো লোকটা? বউ? ডক্টর মাথা তুলে একবার সোহানকে দেখছে আরেকবার মায়াকে দেখছে। লোকটাকে দেখে তো মনে হচ্ছে ভালোই পয়সাওয়ালা, কিন্তু বউটা? সেরকম তো কিছু মনে ক্ষচ্ছে না। ড্রেস আপ দেখে তো মনে হচ্ছে নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের। লোকটা কয়েক সেকেন্ড সেসব ভেবে নিজের মনকে বুঝ দিলো এটা বলে, যার যার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। আমি অত ঘেটে কি করবো?
-” তা কি সমস্যা আম্মু?”
-” জ্বর, মাথাব্যাথা। গতরাত থেকে বমি করেছি চারবার।”
-” মাথাব্যাথা কি সর্বক্ষন থাকে?”
-” না। রাতের দিকে বেশি হয়।”
মায়ার প্রেশার চেক করে ডক্টর বলল
-” প্রেশার তো অনেক লো। শ্বশুড়বাড়িতে কি খাবার দাবার ঠিকমতো দেয় না নাকি?”
-” নতুন বিয়ে তো। খাওয়া দাওয়া টা ঠিকমতো করতে চায় না। লজ্জা পায় বোধহয়।”
-” তুমি কি করো? জোর করে খাওয়াতে পারো না?”
-” জ্বি খাওয়াবো।”
মায়া মাথা নিচু করে সোহানের মিথ্যা কথাগুলো খুব মন দিয়ে শুনছে। বউ? শব্দটা কেমন যেনো? কথাগুলো মিথ্যা। কিন্তু শুনতে ভালো লাগছে। বিশেষ করে বৌ শব্দটা। একদম হৃদয় গহীনে কাঁপন ধরানোর মতো। প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে ফার্মেসি থেকে মেডিসিন কিনছে সোহান। পা থেকে মাথা পর্যন্ত গাড়িতে বসে তাকে দেখছে মায়া। কখনো কোনো পুরুষকে এতটা খুঁটে খুঁটে দেখা হয়নি তার। আজ কেনো যেনো ইচ্ছে হচ্ছে লোকটাকে দেখতে। হয়তোবা আজ পর্যন্ত কোনো পুরুষ ওর কপালে হাত রেখে জ্বর মাপে নি তাই। হয়তোবা ওকে কেউ আজ পর্যন্ত বউ ডাকেনি তাই। গাড়িতে এসে বসেছে সোহান। সন্ধ্যা হতে চলেছে। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সে বলতে শুরু করলো,
-” কি খাবে বলো? ”
-” কিছু না। খেতে ভালো লাগে না। তিতা লাগে সবকিছু।”
-” সেটা তো একটু লাগবেই। তাই বলে তো আর খাওয়া অফ করলে চলবেনা। জোর করেহলেও খেতে হবে।”
-” আপনার যেখানে ভালো লাগে সেখানেই চলেন।”
-” তুমি কিন্তু এখন পর্যন্ত আমার নামটা জানতে চাও নি”
-” আমরা কাস্টমারের নাম জিজ্ঞেস করি না।”
-” কেনো?”
-” প্রতিদিন কমপক্ষে ছয় সাতটা কাস্টমার আসে। কতজনের নাম মনে রাখবো? তাই আর জিজ্ঞেস করি না।”
-” পুরোনো নিয়ম বাদ।এখন থেকে এত কাস্টমার তোমার কাছে যাবে না।শুধুমাত্র আমি যাবো। জোনাকির সাথে আমার ডিল হয়েছে। তাছাড়া সম্পর্কটা কিন্তু শুধুমাত্র ব্যবসার মধ্যে আবদ্ধ রাখতে চাচ্ছি না। আমি চাচ্ছি সম্পর্কটা গভীরভাবে তৈরীকরতে। সেটা তোমাকে পরে ডিটেইল বুঝিয়ে বলবো। ”
-” ঠিকাছে।”
-” তুমি এখন পর্যন্ত আমার নামটা জানতে চাচ্ছো না।”
মায়া মুচকি হাসলো।
-” কি নাম আপনার?”
-” সোহান। তুমি কিন্তু বেশ শুদ্ধ করে কথা বলো। তোমার ওখানে এত শুদ্ধ করে কেউ কথা বলে না। তুমি কোথ্থেকে শিখলে?”
-” পূর্নিমার কাছ থেকে।”
-” পূর্নিমা কে?”
-” বাংলা ছবির নায়িকা।”
অট্টহাসি হাসছে সোহান। এভাবে অহেতুক হাসার কোনো মানে খুঁজে পাচ্ছে না মায়া। মুখটা কালো হয়ে যাচ্ছে তার। পূর্নিমা তার খুব প্রিয়। প্রিয় লোককে নিয়ে কেউ হাসাহাসি করলে মায়ার কষ্ট হয়। এখনো হচ্ছে। মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফেললো ও।
-” কি ব্যাপার মুড অফ করে ফেললে যে?”
-” এমনি।”
-” তোমার পূর্নিমাকে নিয়ে হেসেছি বলে?”
-” হুম। ও অামার পছন্দের মানুষ। খুব পছন্দের।”
-” ওকে সরি। অার কখনো বলবো না। ঠিকাছে?”
-” হুম।”
রেস্টুরেন্টের বাহিরে গাড়ি থেমেছে। মায়াকে গাড়ি থেকে নামতে বললো সোহান। গাড়ি থেকে নেমে আশপাশে তাকাচ্ছে মায়া। মেয়েগুলো কত্ত স্মার্ট। ওর সাথে এই মেয়েগুলো কোনোদিক দিয়েই যাচ্ছে না। খুব সাদাসিধে জামা পড়ে অাছে ও। একটুও সাজগোজ নেই। বড্ড বেমানান লাগছে ওকে।
-” কি হলো দাঁড়িয়ে অাছো কেনো?”
ও ভেতরে যাবে কিনা বুঝে পাচ্ছে না। সোহান ওর মুখ দেখে বুঝে গেছে ওর ভিতরে কি চলছে।
-” তুমি অনেক বেশি সুন্দর। এখন চলো ভিতরে।”
(চলবে)