#নষ্ট_গলি
পর্ব-২৬
লেখা-মিম
বাসাতেই ফোনটা রেখে গেছে মায়া। মিটিং সেড়েই মায়ার ফোনে কল দিচ্ছে সোহান। দুইবার কল করার পর তিনবারের মাথায় কলটা রিসিভ করলো রতন৷
– ভাই…..
– মায়া কোথায়?
– ভাবী তো গেছে গিয়া।
– মানে?
– যেইখানতে আপনে তারে নিয়া আইছিলেন সেইখানে গেছে গিয়া। আপনের আব্বায় আইছিলো। ভাবীরে বহুতক্ষন বহুকিছু বুঝাইলো৷ ভাবী বড় সাহেবের বুঝ মাইন্না গেছে গিয়া।
– বাবা কি বলেছে ওকে?
– কইছে আপনের লগে ভাবী থাকলে নাকি আপনের বদনাম হইবো। আপনেরে অপমান দেখতে হইবো। আরো বহু কিছু কইসে। এরপর ভাবী আমার হাতে একখান চিঠি দিয়া ব্যাগ গুছায়া গেছে গিয়া। জিগাইসিলাম, ভাবী কই যান। আমারে কইলো আমারে যেখানে মানায় সেইখানে যাই।
সোহান দাঁত কিটমিট করছে। এই মিটিং টা চাইলে সালমানকে দিয়েই সামলানো যেতো। ওকে এমন পীড়াপীড়ি করে সিলেট পাঠানোর পিছনে এই কারন ছিলো তাহলে। সারাবছর ছেলের খবর থাকে না, আজ এসেছে ছেলের অপমান-সম্মান নিয়ে ভাবতে। বন্ধু মহলে যখন বাপ মায়ের পরকীয়ার কুকীর্তি নিয়ে আলোচনা হয় তখন বুঝি ছেলের অপমান হয়না? যেমন মেজাজ খারাপ হচ্ছে বাবার উপর তারচেয়ে দ্বিগুন খারাপ হচ্ছে মায়ার উপর। ইচ্ছে হচ্ছে থাপড়িয়ে চোয়ালের দাঁত সব ফেলে দিতে। আদরে আদরে ঠ্যাং বেশি লম্বা হয়ে গেছে৷ তাই ধেইধেই করে ঘরের বাইরে যাওয়ার শখ জেগেছে ওর। তুলে আছাড় মারলেই সব ঠিক হবে। বাবার নম্বরে ডায়াল করলো সোহান। ফোনের সুইচ অফ দেখাচ্ছে। এরপর কল করলো নজরুল সাহেবের পারসোনাল সেক্রেটারি মিজানের কাছে। কল রিসিভ করলেন উনি।
– হ্যালো স্যার….
– আপনার বড় সাহেব কোথায়?
– এইতো এখানেই।
– ফোনটা দিন।
মিজান ফোনটা নজরুল সাহেবের দিকে এগিয়ে বললো,
– সোহান স্যার ফোন করেছেন।
ফোনটা কানে নিলেন নজরুল সাহেব।
– হ্যাঁ সোহান বলো।
– আমাকে নিয়ে এত সমস্যা কেনো তোমার?
– কিসের সমস্যা?
– আমি যদি বাইরের বেশ্যা ঘরে তুলে এনে ভালো থাকি তাহলে সমস্যা কোথায়?
– দেখো ও আমাদের যোগ্য না। তোমার জন্য মেয়ে দেখছি। কয়েকটাদিন অপেক্ষা করো। আমি তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করবো। যদি এখনই বিয়ে না করতে চাও তাহলে সমস্যা নেই। এংগেজমেন্ট করে রাখলাম৷ মেয়ের সাথে ঘুরবে ফিরবে। চাইলে লিভ টুগেদারেও যেতে পারো। সেটা তোমরা বুঝে নিও।
– মায়ার সাথে লিভ টুগেদারে ছিলাম সেটাতে সমস্যা কি?
– তুমি কি নিজের স্ট্যাটাস ভুলে গেছো? ঐ মেয়েটা প্রফেশনাল প্রস্টিটিউট। তুমি কেনো ওর পিছনে ছুটছো? তুমি আন্দাজ করতে পারবে না সোসাইটিতে এই মেয়েকে নিয়ে তোমার কতটা হেনস্তা হতে হবে। যতটুক সম্মান তোমার আছে পুরোটা তোমাকে হারাতে হবে।
– আমি ছোটবেলা থেকেই হেনস্তা হয়ে আসছি। তোমার আর মায়ের পরকীয়ার ব্যাপারটা এমন কোনো মানুষ বাদ নেই যে জানে না। তুমি যে আমার বয়সী মেয়ের সাথে বিগত সাত বছর যাবৎ ঘুরছো সেটা কি? এর আগে আরো দুই মহিলার সাথে প্রেম করেছো। ইচ্ছামতো টাকা পয়সা লুটিয়েছো। তুমি ভালো? যাদের সাথে ঘুরো তারা ভালো? তারাও প্রস্টিটিউট। পার্থক্য এতটুকুই তোমরা সেক্স করো ফাইভস্টার হোটেলে বা কোনো ডুপ্লেক্স ভিলায়। আর মায়ারা সেক্স করে পুরান ভাঙাচোরা বিল্ডিং বা টিনের ঘরে। তোমরা ঐ মেয়েদের পিছনে লাখ টাকা ঢালো প্রতিমাসে। মায়ারা পায় ২-৩ হাজার করে। আর মা? মায়ের পরকীয়ার কথাও কম বেশি সবাই জানে৷ এগুলো নিয়ে সোসাইটির লোকজন, ফ্রেন্ড সার্কেলে কম কথা শুনিনি। আর আমি কি দুধে ধোঁয়া তুলসী পাতা? মায়ার আগেও তিন চারটার সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন ছিলো আমার। সে হিসাব করতে গেলে মায়া আর আমার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই৷ ও আমার জীবনে আসার পর থেকে মনে হয়েছে হ্যাঁ আমি বেঁচে আছি। আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি। শান্তির ঘুম ঘুমাতে পারছি। প্লিজ এই শান্তিটুকু আমার কাছ থেকে কেড়ে নিও না। যদি তোমার বা মায়ের কোনো সমস্যা থাকে মায়াকে মেনে নিতে বা তোমাদের যদি মনে হয় মায়ার কারনে তোমাদের অপমান হতে হবে। তাহলে ঠিকাছে, আমি আমার মায়াকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাবো। তোমাদের ফ্যামিলিতে আমি কখনো পা দিবো না। ধরে নিও সোহান নামের কেও তোমাদের জীবনে কখনো ছিলোই না।
– দেখো সোহান, তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি তোমাকে ছাড়া অচল। বিজনেসটা তোমাকে ছাড়া আমি মেইনটেইন করতে পারবো না। সালমানের হাতে দায়িত্ব দেয়া মানে ব্যবসাটাকে মাঝ সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয়া। তুমি যত যাই করো না কেনো তোমার সাথে যেভাবে পারি আমি রিলেশন টিকিয়ে রাখবো। তাই হয়তো আজ এভাবে বলার সাহস পাচ্ছো। যাইহোক বড় হয়েছো। যথেষ্ট বুদ্ধিমান ছেলে তুমি। যদি ঐ মেয়েকে নিয়ে তুমি সিরিয়াস হয়ে থাকো তাহলে বিয়ে করে নাও। আমি চট্টগ্রামে রিসিপশন পার্টির এ্যারেঞ্জ করি। ঢাকায় তো সবাইকে বলে বেড়াচ্ছো তুমি বিয়ে করেছো। রিলেটিভরা তোমার বিয়ের খবর শুনলে বলবে পার্টি দেইনি কেনো?
– মায়ার কথা তোমাকে কে বলেছে?
– এক ক্লাইন্ট বললো। কোন পার্টিতে নাকি মায়াকে দেখেছে। বললো তুমি নাকি বউ নিয়ে গেছো। তখনই খটকা লেগেছিলো বিয়ে করলে তো আমাদের অবশ্যই জানাতে। খবর নিলাম ম্যানেজারের কাছ থেকে। ম্যানেজার সব বললো মায়া কে, কি করে। অফিসের কোন এক এমপ্লয়ি নাকি বাকি এমপ্লয়িদের বলে বেড়াচ্ছে মায়া কি করতো। সেখান থেকে ম্যানেজার জানতে পেরেছে। দেখো তুমি যদি ওকে নিয়ে বাকি লাইফ কাটাতে চাও তাহলে মায়ার অতীত ধামাচাপা দেয়ার ব্যবস্থা করো। কোনোভাবেই এসব কথা তোমার মা, রিলেটিভ কাওকে জানতে দেয়া যাবে না।
– হ্যাঁ সেটা আমি দেখছি।
– তোমার বোধ হয় আমাদের উপর অনেক ক্ষোভ তাই না?
– ক্ষোভ রেখে লাভ কি? তোমরা কি আমার জন্য যার যার পরকীয়া ছেড়ে দিবে? সালমান আর আমি ছোট থেকে অবহেলা পেয়েই বড় হয়েছি। মানুষ হয়েছি বাড়ির কাজের লোকদের হাতে৷ থাক বাবা। সেসব আমি আর বলতে চাই না। আমি জাস্ট শান্তি চাই। আর তুমি আজকের কাজটা খুব বেশিই জঘন্য করেছো। মেয়েটা চলে গেছে। প্লিজ ফের কখনো এ ধরনের কথা মায়াকে বলবে না। ওকে নিয়ে সমস্যা থাকলে আমাকে বলো। ওকে নিয়ে আমি দূরে চলে যাবো। রাখি।
কলটা কেটে দিলো সোহান। সামনেই বসা ছিলো জাহিদ। সে জানে এখনই সোহান ওকে প্লেনের টিকেট বুক করতে বলবে। জাহিদ ফোনে কথা চলাকালীন অবস্থাতেই টিকেট বুক করে ফেলেছে।
– জাহিদ…
– জ্বি স্যার?
– খোঁজ নিয়ে দেখোতো টিকিট আছে কিনা ঘন্টা দুয়েক পরের?
– আছে স্যার। বুক করে ফেলেছি।
– তামাম দুনিয়াতে তুমিই একজন মানুষ যে কিনা আমি কিছু বলার আগেই আমার মনের কথা বুঝে ফেলো। মায়ার সাহসটা চিন্তা করো একবার। ও ঐ জায়গায় আবার চলে গেছে। ছোটলোকের বাচ্চা। বেশি আদর করেছি তো তাই আদরের মর্ম দিলো না। আচ্ছা টিকিট পেলে কেমন করে?
– ভাগ্য ভালো ছিলো স্যার। তিনটা সিট খালি ছিলো। দুটো সিট বুক করে নিয়েছি।
– চলো তাহলে। এয়ারপোর্টে যাই।
– জ্বি স্যার।
এয়ারপোর্টে যাওয়ার পথে সালমানকে কল করলো সোহান। ফোন করে শুধু এতটুকু বললো,
– দুই ঘন্টার মধ্যে ঢাকা এয়ারপোর্টে থাক। আমি আসছি।
– শোনো জাহিদ, আমি মায়াকে আজই বিয়ে করবো। তুমি ওদের এলাকার মসজিদের মুয়াজ্জিন বা ইমাম যাকে পাও নিয়ে আসবে। আর আমি গাড়ি নিয়ে সরাসরি মায়ার গলিতে যাবো।
– জ্বি স্যার।
(চলবে)
.