নাম_না_জানা_এক_পাখি পর্ব ১৪+১৫+১৬

#নাম_না_জানা_এক_পাখি
লেখা: সাহিয়া সুলতানা
পর্ব: ১৪

২২.
তপসী সুব্রতের নম্বরে ডায়াল করলো। রিং হতেই সুব্রত রিসিভ করলো। তপসী জিজ্ঞেস করলো,

—— আপনি কি ঘুমিয়ে পড়বেন?

সুব্রত বললো,

—— না। কেন বলো তো!

—— না, এমনিই।

—— আচ্ছা বাদ দাও৷ কলেজে গিয়েছিলে না আজ?

—— হুম। আজ মনে হয়েছে আবার নতুন করে কলেজে ভর্তি হয়েছি।

সুব্রত হেসে উঠলো, ক্লান্তি জড়ানো হাসি। সুব্রতের ঘুম পাচ্ছে৷ ঘুমের সময় হয়ে এসেছে। তপসী বুঝতে পেরে বললো,

—— আচ্ছা আপনি ঘুমিয়ে থাকুন না৷ আমার ঘুম পাচ্ছে।

—— এতো যলদি তোমার ঘুম পাচ্ছে?

—— পাচ্ছে তো কি করবো,?

—— আচ্ছা কাল কথা হবে। সাবধানে থেকো।

তপসী ঘুমিয়ে পড়লো। সুব্রত ঘুমোনোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো৷ হঠাৎ দরজায় কড়া নড়ার আওয়াজ হলো। সুব্রতের কপাল কুঁচকে গেল।

বিছানা থেকে নেমে গিয়ে দরজা খুলে দিল। মিস. সুহানা! সুব্রতের ইচ্ছে করলাও দরজা খোলার অপরাধে নিজের গালে নিজেরই চড় দিতে।

সুব্রত জোর করে মুখে হাসি টানলো। সুহানা কে জিজ্ঞেস করলো,

—— কোনো দরকার কি? আমি একচুয়ালি ঘুমাতান।

সুহানা খুব অবাক হওয়ার মতোন করে বললো,

—— ঘুমাবেন? আমি ডিস্টার্ব করলাম মেজর সুব্রত ধর?

—— ঠিক ডিস্টার্ব না। বাট ইটস নট গুড না, আপনি এই রাতের সময় আমার রুমে চলে এসেছেন!

—— আমি যাস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে কথা বলতে এসেছিলাম। দ্যাটস ইট।

—— লাঞ্চ টাইমে দেখা করি কাল?

সুহানা হয়তো একটু বিরক্ত হলো। সুব্রত ঠিক বুঝলো না। সুহানা মুখে মেকি হাসি ফুটিয়ে বললো,

—— ওকে মেজর। বাট আপনি কি সত্যিই এবার ছুটি কাটিয়ে বিবাহিত হয়ে এসেছেন?

—— এটা গুজব হওয়ার মতো কথা তো না। সত্যিই আমি এখন বিবাহিত।

সুহানা দরজার হাতল ছেড়ে দাঁড়ালো।

—— ওকে সি ইউ টুমোরো।

সুহানা চলে গেল। সুব্রত হাফ ছেড়ে বাঁচলো। মেয়ে মানুষ যে রাত বিরাতে কোনো পুরুষের ঘরে ঢোকার মতো ছ্যাচড়ামিও করতে চাইতে পারে রা সুহানা কে দেখে সে চাক্ষুস প্রমাণ পেয়েছে।

সুব্রত বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। ঘুমে চোখের পাতা ভারী হয়ে এসেছে। আজ খুব মধুর স্বপ্ন দেখার চেষ্টা করবে সে। তপসীকে নিয়ে।

২৩.
তপসীর পরীক্ষা দেওয়া শেষ। রেজাল্টের অপেক্ষা না করেই মেডিকেলের কোচিং-এ ভর্তি হতে হলো তাকে। সুব্রতের আদেশেই অবশ্য ভর্তি হয়েছে।

বিয়ের পর নাকি মানুষ মোটা হয়? তপসী শুকিয়েছে স্বামীর শোকে। সেই যে গেলো আর ফিরে আসলো না। কবে আসবে কে জানে।

মেডিকেলের কোচিং-এর পড়া তপসীর বিরক্ত লাগে। সে এক প্রকার বাধ্য হয়েই পড়ছে। সুব্রতকে বার বার মানা করার পরও সুব্রত মানে নি। এখানে সুব্রতের রাজি না হওয়ার কি আছে তা তপসী কিছুতেই বুঝতে পারে না!

পড়ালেখা কি জোর করে হওয়ার জিনিস? তপসী জানে সে কখনই ডাক্তার হতেই পারবে না৷ এ তার পক্ষে সম্ভব না। সবাইকে দিয়ে তো আর সব কাজ হয় না।

কি হবে যদি এ জীবনে সে ডাক্তার নাই বা হলো। যদি সে শুধুই সুব্রতের বউ হয়ে জীবন অতিবাহিত করতে পারতো, কি এমন ক্ষতি হতো? ডাক্তার হওয়ারই কি কোনো গ্যারান্টি আছে?

,
সময় এগিয়ে যেতে লাগলো। তপসীর রেজাল্ট পাবলিশ হওয়ার কয়েক দিন আগ থেকেই তপসীর শরীর অসুস্থ হয়ে গেল। অতিরিক্ত চিন্তায় তার এই অবস্থা। শ্বশুর বাড়ির লোক ভালো রেজাল্টের আশা করছে, তবে তপসী নিজেই জানে তার জিপিএ -৪ এর উপর জীবনেও আসবে না৷

রেজাল্টের দিন সকালে কিভাবে যেন সুব্রত ফোন করল। তপসী ফোন রিসিভ করে কান্নাই করে দিলো। কান্না মাখা গলায় বললো,

—— শুনুন আপনারা আমায় রেজাল্ট নিয়ে কোনো কথা বলতে পারবেন না। আমিই আগেই ক্লিয়ার করেছি আমি টেনেটুনে পাশ করা স্টুডেন্ট।

সুব্রত বউকে স্বান্তনা দেওয়ার স্বরে বললো,

—— রেজাল্ট নিয়ে এতো কান্না করতে হবে? যা হওয়ার হবে। তুমি শান্ত হও। খাবার খেয়েছো?

তপসী উত্তর দিলো,

—— না। খাই নি। খাবো না।

—— তপসী বাচ্চামো করো না। খাবার খেয়ে নাও। এমনিই দিন কে দিন শরীরের হাল বেহাল বানাচ্ছো তুমি।

তপসী চুপ করেই রইলো। সুব্রতের কাছে সময় বেশি নেই। তাই আবার বললো,

—— যাও খেয়ে নাও। রাতে কল করবো। রেজাল্ট যাই হোক আমি তোমার থেকে হাসি মাখা গলায় তা শুনতে চাই। ওকে? যাও খাও।

তপসী ফোনের এপাশে মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো। এরপর লাইন কেটে দিল। সুব্রত উত্তর না পাওয়ায় খানিকটা অবাকই হলো।
#নাম_না_জানা_এক_পাখি
লেখা: সাহিয়া সুলতানা
পর্ব: ১৫

২৪.
তপসীর হাত পা কাঁপছে। হাতের মুষ্টিবদ্ধ মুঠোফোনে দেখা যাচ্ছে তার রেজাল্ট৷ সে জানতো এমনটাই হবে। তপসীর শ্বাশুড়ি দ্রুত পায়ে হেঁটে রুমে আসলো।

—— তপসী, বারোটা তো বাজে তো, রেজাল্ট পেয়েছো?

তপসী কোনোমত হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালো। শ্বাশুড়ি জিজ্ঞেস করলো,

—— রেজাল্ট কি?

তপসীর এবার দম আঁটকে আসার উপক্রম। তারা যে এতো এক্সাইটেড হয়ে আছে, এতো এক্সাইটেড হওয়ার মতো রেজাল্ট আসে নি। আসবে না তা সে আগেই জানতো।

পড়ালেখায় আগে থেকেই অনেক বেশি ভালো না সে। বিয়ের পর আরো পড়া হয় নি। তপসী শান্ত গলায় বললো,

—— মা, ফোর পয়েন্ট ফাইভ সিক্স।

তপসীর শ্বাশুড়ি তপসীর কাছে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। বললো,

—— এমন পানসে মুখ করে আছো কেন শুনি?

—— মা তোমাদের মন মতো রেজাল্ট করতে পারি নি।

—— কে বলেছে?

—— আমার মনে হলো।

—— আরে পাগল মেয়ে আমার।

তপসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। শ্বাশুড়িকে সে শুধু মা বলে ডাকে যে তা না, তাকে মা মানেও। আর মানুষ টা মায়ের মতোই। মমতাময়ী। মমতা দিয়ে গড়া। কিছুদিনেই কেমন আপন করে নিয়েছে তাকে।

তপসীর শ্বাশুড়ি জিজ্ঞেস করলো,

—— সুব্রতকে জানিয়েছো?

—— না। আমার ভয় করে। তুমি বলে দাও না।

—— তোমার মুখে শুনলে খুশি হবে।

—— আচ্ছা এখন তো বোধহয় পাওয়া যাবে না। রাতে ফোন করলে জানিয়ে দিবো।

তপসীর শ্বাশুড়ি সায় জানালো। চলে গেল ঘর থেকে। মিষ্টি আনাতে হবে। সবাইকে জানাতে হবে।

২৫.
রাতে সুব্র‍ত রেজাল্ট শুনে খুশিই হলো। তপসীর সবার এমন নরমাল রিয়েকশন তার মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। মানুষ গুলো অতিমাত্রায় ভালো কেন যে!

সুব্রত তপসী কে জিজ্ঞেস করলো,

—— মা বললো তুমি নাকি দুপুরে কান্না করছিলে? কেন করছিলে?

—— কই নাতো।

তপসী চুপসে গেল৷ সুব্রত আবার বললো,

—— মিথ্যা বলো না তপসী। সব কিছুকে এতো কেন ভয় পাও?

তপসী চুপ করে রইলো।

সুব্রতের পাশ থেকে কলিং বেল এর আওয়াজ আসছে। তপসী এবার জিজ্ঞস করলো,

—— কলিং বেল বাজছে আপনার ওখানে?

সুব্রত বললো,

—— হ্যাঁ। একটু থাকো, আমি দেখে আসি।

—— আচ্ছা৷

সুন্রত ফোন হাতে নিয়েই দরজা খুলল। সুব্রতের মুখ চোখ আবার কুঁচকে গেল।

সুহানা হাত নাড়িয়ে বললো,

—— হেই মেজর, আপনি কি ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন?

—— নাহ মিস সুহানা।

—— আমি আসতে পারি?

—— কোনো দরকার কি?

—— ঘুম আসছে না, সো আই থট কি আপনার সাথে একটু টাম স্পেন্ড করি।

—— আই এম নট এনি অফ ইউর দ্যাট কাইন্ড অফ ফ্রেন্ড যার সাথে আপনি রাত জেগে গল্প গুজব করতে আসবেন।

—— উই আর কলিগস। সো আমরা একটু এক সাথে টাইম স্পেন্ড করতেই পারি।

—— জি না পারেন না। একটা মেয়ে হিসেবে আপনার এটা জানা এবং বোঝা উচিত।

—— আমি সেল্ফ প্রোটেক্ট করতে জানি। আমি ডিফেন্সের লোক আফটার অল।

—— সেইম তো আমিও। এন্ড আপনার উপরের লেভেল এর। আমি যে এতোদিনেও ভদ্রতা দেখিয়ে আপনার নামে কম্পলেইন করি নি এটা আপনার গুড লাক।

—— আমি আপনায় পছন্দ করি এটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারেন আপনি। আর এইজন্যই এতো টা ইগনোর করেন তাই তো?

—— মিস সুহানা, আমাই ওয়াইফ ফোন কলে আছে। আপনার কথা গুলা নিশ্চয়ই ওর ভাল লাগছে না শুনতে। এট লিস্ট কোনো মেয়েই তার স্বামীর সাথে অন্য কোনো মেয়ের ক্লোজ হওয়া পছন্দ করে না।

সুহানা চমকালো। জিজ্ঞেস করলো,

—— আপনি ম্যারিড?

—— কি মনে হয় আপমার? আপনার সাথে আমি রসিকতা করছি?

—— সুব্রত, আপনি সত্যি করে বলুন প্লিজ।

—— হাউ ডেয়ার ইউ? আমি আপনার সিনিয়র। এন্ড আমার নাম ধরে ডাকার রাইট ও নেই আপনার।

—— আই ফাক ইউর রাইটস এন্ড ল’।

—— মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ। এন্ড গেট লস্ট প্লিজ। আমি আমার ওয়াইফের সাথে কোয়ালিটি টাইম স্প্যান্ড করার সময় আপনার সাথে কথা বলে নষ্ট করতে চাই না।

—— আপনাকে এর ফল হারে হারে ভোগ করতে হবে। এখন যদি আমি চ্যাঁচাই এন্ড সবাইকে বলি আপনি আমার সাথে ইন্টিমেটেড হতে চাচ্ছেন, বুঝতে পারছেন কি হবে?

—— ওহ সিউর। প্লিজ চ্যাঁচান। আপনি রাত বিরাতে আমার রুমের সামনে কি করেন তাও আমি জানতে চাই। প্লিজ গো এহেড।

সুহানা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে গেল। সুব্রতের নিজের ও রাগ লাগছে। এমন বেহায়া কিভাবে হয় মেয়ে মানুষ। তপসী কি ভাবছে হবে? সুব্রতের খুব চিন্তা হতে লাগলো।

সুব্রত কানে ধরলো মোবাইল। তপসী এখনো লাইনেই আছে। অর্থাৎ সে সবটাই শুনেছে। বিরক্ত লাগছে তার। তার প্রথম থেকেই উচিত ছিল সুহানার এসব ব্যবহারের জবাব দেওয়া। এতোটা ছাড় পেয়েই মেয়েটা মাথায় উঠেছে। ডিফেন্স আর্মি হয়েও রুলস এন্ড রেগুলেশনের কোনো বালাই মেই তার মধ্যে।

সুব্রত বললো,

—— তপসী!

তপসী হাই তুলে বললো,

—— চলে গেছে?

—— কি?

—— আপনার মিস সুহানা।

—— তপসী, ডোন্ট গেট মি রঙ৷

—— আরে আমি জিজ্ঞেস করছিলাম চলে গেল নাকি? আমার আর আপনার কোয়ালিটি টাইমে এক বালতি গরম জল ঢেলেছে।

—— আমি ভাবছিলাম তুমি অভিমান করবে অথবা রাগ করবে।

—— দেখুন, আমি জানি হ্যান্ডসাম বর হ্যান্ডেল করা অনেক কঠিন। হুহ, খুব ধৈর্য আছে আমার।

তপসী হেসে দিলো। সুব্রতও হাসছে। তপসী মোটেও ইনসিকিউরড না সুব্রত কে নিয়ে। ভালোবাসায় বিশ্বাস থাকা জরুরি। যা তার আছে। আর যদি কখনো ভাগ্য সুখের বিপরীতে চলেই যায় তাহলে সেটা নাহয় ভাগ্যের দোষ দিয়েই চালিয়ে দেওয়া যাবে৷
#নাম_না_জানা_এক_পাখি
লেখা: সাহিয়া সুলতানা
পর্ব: ১৬

২৬.
তপসীর মেডিকেলে এক্সাম দেওয়া শেষ। এবারও আশানুরূপ পরীক্ষা সে দিতে পারে নি। কিন্তু মুখ ফুটে বলেও নি কাউকে এ কথা।

এখন তপসীর অফুরন্ত সময়। যতদিন না রেজাল্ট বের হয়। এর মধ্যেই একদিন রাতে সুব্রত ফোন করলো। যথারীতি তপসী কল রিসিভ করে কানে ধরলো।

সুব্রত জিজ্ঞেস করলো,

—— কেমন আছো বউ?

—— ভালো আছি। আপনি?

—— ভালো থাকলে এক কাজ করো, চট করে বারান্দায় চলে যাও তো৷

—— এই রাতে বারান্দায়? মা বকবে।

—— জানতে পারবে না তো।

তপসী খানিক সময় চুপ করে রইলো। এরপর আমতা আমতা করে বললো,

—— আ,,,আসলে আমার ভয় করে।

সুব্রত খানিক সময় চুপ করে থেকে জোরে হেসে দিলো। তপসীর মনে অভিমান হলো। ভয় পেতেই পারে, এতে হাসার কি আছে?

তপসী বিরক্তি নিয়ে বললো,

—— আপনি চুপ করবেন? আমি কিন্তু কল ডিস্কানেক্ট করে দিবো।

সুব্রত হাসি থামালো। বললো,

—— আরেহ, কল কেন ডিসকানেক্ট করবা?

—— আপনি হাসছেন কেন?

—— এমনিতে তে তো তোমায় বাচ্চা বললে রেগে যাও, কিন্তু এখন আবার ঠিকই বাচ্চাদের মতো ভয় পাও।

—— একটু আধটু ভয় পাওয়াই যায়। আপনি হাসবেন কেন?

—— আচ্ছা সরি। এবার একটু বারান্দায় যাও না প্লিজ।

—— আমার ভয় করে বললাম তো।

—— আমি কথা বলছি তো। ভয় কিসের? বারান্দায় যাও, দেখো আজ সুন্দর পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে।

—— আচ্ছা দাড়ান।

তপসী বারান্দার থাই টেনে বারান্দায় চলে গেল। বারান্দার দোলনায় বসে পড়লো। সুব্রত বললো,

—— আই হ্যাভ আ সারপ্রাইজ ফর ইউ বেবি।

তপসী ফট করে বলে উঠলো,

—— আপনি আসছেন? কবে আসবেন?

সুব্রত মৃদ্যু হাসলো। বললো,

—— এই মেয়ে এতো এক্সাইটেড হচ্ছো কেন?

—— আপনি আসবেন আর আমি এক্সাইটেড হবো না। বাহ।

—— আচ্ছা এটা তো সারপ্রাইজ ছিল, তুমি জানলে কিভাবে?

—— আমি ধরেই নিয়েছি আমার লাইফে সবচেয়ে বেস্ট সারপ্রাইজ এটাই হবে। অথবা আপনি কোনো একদিন হুট করে এসে চমকে দিবেন। আমি হুট করেই গলা জড়িয়ে ধরবো আপনার।

রপসী থামলো। অনেক বেশি বলে ফেলেছে সে৷ এখন লজ্জা করছে। সুব্রত হেসে বললো,

—— আমাদের বিয়ের তো পাঁচ মাস পাড় হয়ে গেছে, এখনো এতো কিসের লজ্জা শুনি?

—— একসাথে কি পাঁচ দিনও ছিলাম?

সুব্রত থমকে গেলো। সে যাই বলুক না কেন, শেষ পর্যন্ত তপসী ওই মুড খারাপই করে ফেলে। সুব্রত কি বলবে ভেবে পেলো না।

তপসী নিজ থেকেই জিজ্ঞেস করলো,

—— আচ্ছা কবে আসবেন?

—— আসবো আরো ছয়দিন পর।

—— এই ছয়দিন আমার জীবনের দীর্ঘ ছয়দিন হতে চলেছে। এতো অপেক্ষা যে মন মানে না।

—— আমার বউটা এমনিতেই ধৈর্য্যশীল।এই ছয়দিন সে চোখের পলকে কাটিয়ে দিতে পারবে।

—— আর আপনি? আপনার কি একটুও মনে পরে না বাড়ির কথা।

—— মনে পড়লেও কিছু করার নেই। ডিউটি ফার্স্ট।

—— আচ্ছা শুনুন, রাতে খেয়েছেন?

—— অবশ্যই৷

সুব্রত আবার বললো,
—— তুমি চাইলে তোমার বাড়ি থেকে একটু ঘুরে আসো৷ আমি আসলে তো যেতে দিবো না।

তপসী হেসে উঠলো। বললো,
—— যেতে কে চায়?

—— তুষার আছে, এরপর বাবা আছে। যাও। ঘুরে আসলে ভালো লাগবে। নিতা আন্টির জন্য কেনো তুমি অন্য সবার থেকে দূরে থাকবে?

—— আমার এমনেই ভালো লাগে না। আপনি ফোর্স করবেন না।

সুব্রত আর এ বিষয়ে কথা বললো না৷ বললো,

—— আচ্ছা তোমার রেজাল্ট জানি কবে দিবে?

—— ঘুরে ফিরে এক কথাতেই আঁটকে যান আপনি।

—— রেজাল্টের পরেও তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে বউ৷

—— কিসের সারপ্রাইজ?

—— এখন কেন বলবো?

—— আচ্ছা ঘুমিয়ে পড়ুন। আর ছয় দিন পরেই আসছেন তাই না?

—— হ্যাঁ গো বউ৷

তপসীর মন প্রফুল্ল হয়ে গেল। ফাইনালি সুব্রত আসছে। সুব্রতকে কাছ থেকে দেখতে পারবে, ইচ্ছে করলেই ছুঁয়ে দিতে পারবে৷ এতো কেন সুখ লাগছে তার?। তার এই চির অসূখীর জীবনে এমন দমকা সুখী হাওয়া কেন লাগলো!

২৭.
তপসী সকাল হতেই রান্নাঘরে গেল। মা আর কাকি রান্না করছে। তপসী হাতে হাতে সব এগিয়ে দিতে লাগলো।
তপসী সুব্রতের কাকি কে জিজ্ঞেস করলো,

—— কাল রাতে রায়া ফোন করেছিল কাকি। শুনলাম রনিত দা নাকি আসছে? সত্যিই?

রনিত সুব্রতের কাকাতো ভাই। আমেরিকান প্রবাসী। দীর্ঘ ছয় বছর পর বাসায় ফিরবে। সুব্রতের সাথে কথা বলে বাসায় আসার ডেট ঠিক করেছে। সুব্রত আসার তিনদিন আগে বাসায় আসবে। পনেরো দিন থাকবে।

সুব্রতের মা বললো,

—— হ্যাঁ আসবে৷ আমি তো বোধ হয় মোবাইলের যুগ না হলে ছেলেটার চেহারাই ভুলে যেতাম।

সুব্রতের কাকি দুঃখী ভাবে বললো,

—— এতোদিন পর কিভাবে দেশের কথা মনে পড়লো কে জানে? আমাদের কথা কেন মনে পড়লো। কতো করে বললাম, সুব্রতের বিয়ে তে আয়, আসলোই না। এতো টা এমন করলে কি হয় বলো?

সুব্রতের কাকি কথা বলতে বলতেই কান্না করে দিলো। তপসীর নিজেরও কান্না পেল। অপেক্ষার প্রহর গোনা সত্যিই কঠিন। বাড়িতে দুইটা ছেলে অথচ কেউ ই বাড়িতে থাকে না৷

তপসী কাকির চোখের জল মুছে দিল। বললো,

—— দেখি দেখি, সুইট হার্ট কান্না করে কেন? এবার আসলে একটা ধরে বেধে বিয়ে দিয়ে দাও। দেখবে আর দেশ ছাড়তেই পারছে না।

সুব্রতের মা এবার আফসোস এর সুরে বললো,

—— সুব্রতই বা কোথায় বিয়ের পরে বাসায় পড়ে থাকে বলো?

সুব্রতের কাকি বলে উঠলো,

—— সবার তো চাওয়ার উপর ডিপেন্ড করে না। ও আসতে পারে না। আর রনিত আসতে চায় না।

তপসী বললো,

—— তোমরা সকাল সকাল সেন্টি খাচ্ছো কেন হ্যাঁ? দুই ছেলেই আসছে তো? একজনকে তো আঁটকানোর উপায় নেই, আরেক জন কে আঁটকানোর ব্যবস্থা করো।

সুব্রতের কাকি হেসে দিল। তপসী মন্দ বলে নি। ছেলের জন্য এখন মেয়ে খুঁজতে হবে। বিয়েটা করিয়ে দিলেই হবে। যদি আঁটকানো যায়!

চলবে……
চলবে…….
চলবে…….

(বিকেল থেকেই প্রচন্ড মাথা ব্যাথা আজ আমার৷ এতোটুকুই অনেক কষ্ট করে লিখেছি। পর্বটাও অগোছালো হয়েছে আমার। ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here