নাম_না_জানা_এক_পাখি পর্ব ১৭+১৮+১৯

#নাম_না_জানা_এক_পাখি
লেখা: সাহিয়া সুলতানা
পর্ব: ১৭

২৮.
সকাল থেকেই তোরজোর আয়োজন চলছে ৷ রনিত আসছে। রায়ার বর এয়ারপোর্টে চলে গিয়েছে রিসিভ করতে। আজ বাবা, কাকা সবাই বাড়িতে। বাড়িতে যেন একটা অনুষ্ঠানের আমেজ লেগে গেছে।

তুলি এতোদিন ছিল তার গ্রামের বাড়ি। গতকাল ও ফিরে এসেছে। বাড়ির এমন উৎসব মুখরতা ভালো লাগছে তপসীর। সেই সাথে চিন্তাও হচ্ছে, রনিত কে সে শুধু ছবিতে দেখছে। কথা হয় নি কখনো। সে কেমন হবে? এই কয় দিন তার মন জুগিয়ে চলতে পারবে কি না তা নিয়ে ভীষণ চিন্তিত সে।

দুপুর বেলা দরজায় কলিং বেল বাজলো। তপসীই গিয়ে দরজা খুলে দিলো। সে জানে রনিতরাই এসেছে। তপসী দরজা খুলে দিতেই অতি সুদর্শন এক ছেলেকে দেখতে পেলো। রনিত, ছবি দেখেছে তবে বাস্তবে আরো সুন্দর।

তপসী মৃদ্যু হাসলো৷ বললো,

—— তোমরা ভিতরে আসো। আমি সবাইকে ডেকে দিচ্ছি।

তপসী মায়ের রুমের দিকে পা বাঁড়িয়ে আবার থেমে গেল। পিছন ঘুরে বললো,

—— এই রনিত দা, ভিতরে ঢুকো না। বরণ ডালা নিয়ে আসছি।

তপসী দ্রুত পায়ে ভিতরের ঘরে চলে গেল। তুলি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
সে চোখ ছোট করে পর্যবেক্ষণ করছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টার দিকে। রনিত কে সেও শুধু ছবিতে দেখেছে। সামনাসামনি দেখলেও মনে নেই।

তুলিকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রনিত অপ্রস্তুত হলো। হাত নেড়ে বললো,

—— হাই ফুলি।

তুলি চোখ পিটপিট করে বললো,

—— আমার নাম তুলি, ফুলি না।

—— উপ্স সরি। তা মিস তুলি, আপনি কি আমার নাম জানেন?

তুলি মাথা দুলালো। বললো,

—— হ্যাঁ। আপনি রনিত দাদাবাবু।

রনিত হাসলো। বাড়িটা এ কয় বছরে একটুও বদলায় নি৷ মানুষ গুলো কি বদলে গেছে? হ্যাঁ অনেকটাই। রায়ার বিয়ে হয়েছে, সুব্রতের বিয়ে হয়েছে। ঘরে নতুন সদস্য বেড়েছে৷

সুব্রতের মা বরণ ডালা হাতে নিয়ে এগিয়ে আসলো। রনিত কে বরন করলো। বললো,

—— বাবা রে, এতোদিন পর মনে পড়লো তোর এই বাড়ির কথা?

রনিত দুষ্টুমি করে বললো,

—— কে বলেছে বাড়ির কথা মনে পড়েছে? আমার তো জ্যাঠীর কথা মনে পড়েছে।

সুব্র‍তের মা রনিতের নাক টিপে দিলো। রায়ার বরকেও বরন করলো। এরপর ড্রয়িংরুমে নিয়ে আসলো রনিতকে। রনিত মাথা উচু করে এদিক ওদিক বাকি সবাইকে খুঁজতে শুরু করলো। মা’কে কোথাও দেখা যাচ্ছে না কেন!।

রনিত জিজ্ঞেস করলো,

—— মা কই জ্যাঠী?

—— তোর মা তো সামনেই আসতে চাইছে না। এমনিতেই নোনা জলে নদী বানিয়ে ফেলেছে, সামনে আসলে নাকি সমুদ্র বানিয়ে ফেলবে।

রনিত মুখ গোমড়া করে জিজ্ঞেস করলো,

—— কোন রুমে মা?

—— তোর মায়ের রুমেই৷

—— কোন দিকে জ্যাঠী?

—— বিদেশ থাকতে থাকতে বাড়ির নকশাও ভুলে গেছিস? বিদেশে কি ইঞ্জিনিয়ারিং করিস তুই?

—— জ্যাঠী তুমিও না। মায়ের কাছে নিয়ে চলো না৷

—— চল।

তপসী রনিতের মা কে ধরে নিয়ে এসেছে। কান্নার দমকে সে ঠিকঠাক নিশ্বাসও নিতে পারছে না। রনিত দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে দঁড়লো। মায়ের শরীর থেকে এখনো মা মা ঘ্রাণ আসে। ইস কি মধুর।

রনিত নিজেও কান্না করলে দিলো। এতো বছর কেনো দেশে আসে নি সে? কতোটা কষ্ট পেয়েছে একা একা!

২৯.
রনিত ফ্রেশ হয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। তপসীর সাথে তার কোনো কথাই হয় নি। তপসী বিকেলে ছাদে উঠলো। চন্দ্রমল্লিকা ফুল ফুটেছে ছাদে৷ দেখতে কি ভীষণ সুন্দর। তপসী ফুলের গাছের কাছে বসে কাছ থেকে ফুল দেখতে লাগলো।

রনিত ছাদে উঠে এসেছে। ছাদ থেকে পাশের অনেকটা এলাকা দেখা যায়। ছাদে এসে তপসীকে দেখকে থেমে গেল। এই বাচ্চা মেয়েটাকে কেন তার ভাই বিয়ে করলো?

রনিত তপসীর পিছন এসে দাঁড়ালো। তপসী ফুল গুলো ছুয়ে দেখছিলো। রনিত ডাকলো,

—— বৌদি!

তপসী চমকে উঠলো। পুরুষালী কণ্ঠটা সে আজই প্রথম শুনেছে। রনিত ডাকছে। এমন করে?

তপসী উঠে দাড়ালো। রনিতের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলো,

—— কি লাগবে তোমার রনিত দা?

—— তুমি তো বৌদি লাগো আমার, আমায় কেন দাদা ডাকছো?

—— বয়সে বড়দের ডাকতে তো সমস্যা নেই।

—— আলবত সমস্যা আছে। আমি সম্পর্কে তোমার ছোট৷

তপসী ভ্রু কুঁচকে ফেললো। এ কেমন ধারার কথা? রায়াকে ও সে দিদি বলে ডাকে। কই কখনো তো কেউ মানা করে নি। তাহলে আজ তাকে দাদা বললে কি সমস্যা? বুড়ো ডেমরা ছেলের ঢং জেগেছে।

তপসী মুখে বললো,

—— আচ্ছা তোমার কিছু লাগবে?

—— নাহ। কিছুই লাগবে না। আমি তো ছাদ ঘুরতে এসেছিলাম বৌদি। এসে তোমায় দেখতে পেলাম। ভাবলাম একটু কথা বলি। আমাদের তো কোনো আলাপই হয় নি।

—— ওহ হ্যাঁ।

—— আচ্ছা সুব্রত কবে আসবে?

—— আর দুইদিন পর।

—— ওয়াও। সুব্রতের বয়স তো অনেক, তোমাদের এজ ডিফারেন্স নিয়ে প্রবলেম হয় না?

তপসী বিরক্ত হলো। তাদের কোনো সমস্যা হয় না। হলেই বা কেন বলবে তাকে?

তপসী মুখে হাসি বজিয়ে রেখে বললো,

—— একচুয়ালি না। যেখানে মনের টান অনেক সেখানে বয়সের গ্যাপ কিছুই না।

রনিত হাসলো। জিজ্ঞেস করলো,

—— আর্মি বর হলে কি অনেক কষ্ট বৌদি?

—— মানে?

—— এইযে দুরত্ব এতোটা!

—— ও কিছু না। অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়। এতো অপেক্ষার পর আমি নিশ্চয়ই অনেক মিষ্টি উপহার পাবো৷

—— আমি সিরিয়াসলি জিজ্ঞেস করছি। খুব কষ্ট?

তপসী বিরক্ত বোধ করলো। তবুও বললো,

—— জি। অপেক্ষা কখনই কারো ভালো লাগে না। ইন দ্যাট ওয়ে, একটু কষ্ট আছেই।

রনিত কপাল চাপড়ে বললো,

—— সিরিয়াসলি? যা ও দেশে থেকে যাবো ভেবেছিলাম এবার আর হচ্ছে না৷ তোমায় একটা সিক্রেট বলি বৌদি?

—— কি সিক্রেট?

—— কাউকে আগেই বলো না। বাট আই এম ইন লাভ উইথ আ আর্মি গার্ল। এন্ড আমরা বিয়ে করবো। এইজন্যই দেশে এসেছি। কি মিষ্টি দেখতে মেয়েটা৷ কি সুন্দর কথা বলে৷ কিন্তু তোমার মতো আমার কপাল ও খারাপ। তোমার স্বামী বাড়ি থাকে না, আর আমার বউ থাকবে না।

তপসী বিস্ফোরিত নজরে তাকালো। এই ছেলে তাহলে সূদুর আমেরিকা থেকে এখানে বিয়ে করতে এসেছে? নিজে তো প্রবাসী, বউ বাড়িতে থাকলেই কি বা না থাকলেই কি?

রনিত ভ্রু নাচিয়ে বললো,

—— এইযে আমার বুড়ো ভাইয়ের বাচ্চা বউ, প্রমিস মি, কাউকে বলবে না। আমি সময় করে জানাবো সবাইকে।

তপসী রনিতের হাতের উপর হাত রাখলো। বললো,

—— প্রমিস।

তপসী এখনো ভেবে পাচ্ছে না, যে ছেলে পরিবারের টানে দেশে ফিরে না, সে এক মেয়ের টানে চলে এসেছে! মেয়ে কি যাদু জানে নাকি!
#নাম_না_জানা_এক_পাখি
লেখা: সাহিয়া সুলতানা
পর্ব: ১৮

৩০.
তপসী বিছানায় শুয়ে উপন্যাসের বই পড়ছিলো। বিকেলের হালকা আভায় চোখে ঘুম নেমে আসছে। হঠাৎ দরজায় বিকট শব্দ হলো। তপসী দরফড়িয়ে উঠে বসলো।

দরজার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো তুলি দরজা ধরে হাপাচ্ছে। তপসী ভ্রু উচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

—— এমন করে দৌড়াদৌড়ি করছিস কেন তুলি? ব্যাথা পাবি তো৷

তুলি বললো,

—— দৌড়াদৌড়ির কারণ শুনলে তুমিও দৌড়াবে বৌদিদি।

—— মানে?

—— আরেহ, দাদাবাবু এসেছে?

তপসীর হৃদস্পন্দন যেন বন্ধ হয়ে গেল মূহুর্তেই। জিজ্ঞেস করলো,

—— কোন দাদাবাবু?

—— সুব্রত দাদাবাবু।

তুলির মুখে নাম শুনতেই তপসী বিছানা থেকে নেমে দাড়ালো। সুব্রত এসেছে? একদিন আগেই চলে এসেছে? এটা কি সত্য? ছুটে গেল দরজার দিকে। দৌড়ে সিড়ি দিয়ে নামার সময় পা আঁটকে গেল শাড়িতে।

তপসী পা মচকে সিড়ির উপর পড়ে গেল। পিছলে গিয়ে পড়লো তিন সিড়ি নিচে। ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠলো তপসী। পা মুহূর্তের মধ্যেই ফুলে কলাগাছ হয়ে গেল।

সুব্রত তপসীর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল। মেয়েটা এমন অঘটন ঘটালো। দ্রুত পায়ে এগিয়ে যেতে লাগলো তপসীর দিকে। তপসীর আর্তনাদে তার বুক চৌঁচির হয়ে যেতে লাগলো।

সুব্রত তপসী পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই তপসীকে কোলে তুলে নিলো রনিত। আকস্মিক এমন ঘটনায় সুব্রত ও তপসী দু’জনই অবাক হয়ে গেল। রনিত তপসীকে নিয়ে সোফায় বসালো।

সুব্রত তপসীর পায়ের কাছে এসে বসলো। তপসী শাড়ির আঁচলে মুখ ঢেকে নিলো। বাড়ির সবার সামনে কিভাবে কান্না করে দিলো!

সুব্রত পা হাত দিলে তপসী দ্রুত পা সড়িয়ে নিলো। বললো,

—— কি করছেন? আমার পায়ে হাত দিচ্ছেন কেন?

সুব্রতের মা আইস ব্যাগ নিয়ে এসেছে। সুব্রত আইস ব্যাগ হাতে নিলো। তপসীর পা নিজের হাটুর উপর রাখলো। আইস কিউব ভর্তি ব্যাগ তপসীর পায়ের উপর রাখলো।

তপসী পা সড়িয়ে নিলো। বললো,

—— আমি নিজে লাগাই?

সুব্রত চোখ রাঙিয়ে তাকালো। ধমক দিয়ে বললো,

—— সমস্যা কি মেয়ে? তখন থেকে নড়াচড়া করছো।

তপসী চুপসে গেল। রনিত সুব্রতকে বললো,

—— ভাই, বৌদি কে ঘরে নিয়ে যা।

—— আমার ব্যাগ গুলো ঘরে পাঠা প্লিজ। আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি।

সুব্রত সময় ব্যয় না করে তপসী কে কোলে তুলে নিলো। তপসী সুব্রতের গলা জড়িয়ে ধরলো। সুব্রতের বুকের সাথে নিজের মাথা চেপে ধরলো। কতোদিন পর! ঠিক কতোদিন পর সুব্রত তার কাছে এলো!

,
রুমে এসে তপসীকে বিছানায় শুইয়ে দিলো সুব্রত। সুব্রতের মাথা ঘোরাচ্ছে। তপসীর গা ঘেষে বসলো। তপসীর ফুঁপিয়ে কান্না করার শব্দ আসছে। সুব্রত তাকাবে না তপসীর দিকে। তার নিজের ও কান্না করতে ইচ্ছা করছে।

তপসী সুব্রতের হাত ধরলো। বললো,

—— এ্যাই, আপনি এদিকে ঘুরুন না!

সুব্রত না ঘুরেই জিজ্ঞেস করলো,

—— কি হয়েছে বউ?

—— আপনি কথা বলছেন না কেন?

—— বলছি তো।

—— আপনি বলেছিলেন কাল আসবেন।

—— সারপ্রাইজ দিবো ভেবেছিলাম। তুমি এমন দুর্ঘটনা ঘটাবে কে জানতো!

—— আপনি অনেক খারাপ, অনেক। আপনি শুধু আমায় কষ্টই দিতে পারেন শুধু।

সুব্র‍ত তপসীর দিকে ঘুরে জড়িয়ে ধরলো। বললো,

—— শুনো, আমি ফ্রেশ হয় নি কিন্তু। এই যে শরীর থেকে বাজে গন্ধ আসছে কিন্তু!

—— আমি কিছু বলেছি? জড়িয়ে ধরে থাকুন। একদম ছাড়বেন না বললাম।

—— ছাড়বো না। ছাড়ার জন্য ধরেছি নাকি?

,
দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ হলো। সুব্রত সড়ার আগেই রনিত ঘরে প্রবেশ করলো। রনিত বলে উঠলো,

—— ডিস্টার্ব করার জন্য আমি একটুও সরি না। তোমরা দরজা লাগাও নি এটা তোমাদের দোষ।

সুব্রত হেসে দিলো। বললো,

—— আমি ভাবলাম, বয়স হয়েছে, ছেলেটা হয়তো বদলে গেছে। একটুও বদলাস নি!

—— ধ্যাত, বড় ভাইয়ের মতো কথা বলছিস একদম।

—— আমি তোর কি লাগি? কার মতো কথা বলবো?

রনিত শব্দ করে হেসে উঠলো। পেইন কিলার ওয়েনমেন্ট এগিয়ে দিলো সুব্রতের দিকে। বললো,

—— বৌদির পায়ে মাখিয়ে দে। তোর সারপ্রাইজের লোড নিতে পারে নি বৌদি।

তপসী মুখ নিচু করে বললো,

—— তুমিও জানতে তাই না? সবাই জানতো, শুধু আমাকেই বলা হয় নি।

রনিত বললো,

—— ভাগ্যিস ভাই বলে নি তোমায়, নয়তো তোমার এমন ম্যারাথন এর রেস কিভাবে দেখতাম?

সুব্রত বললো,

—— রনিত ঘর থেকে বের হ তো৷ একটু শান্তিতে জড়িয়েও ধরতে দিলো না।

সুব্রত তপসীর পায়ে ম্যাসাজ দিয়ে দিতে দিতে বললো,

—— কিরে রনিত, গেলি না?

রনিত বিছানায় বসলো। তপসীর হাত ধরে বললো,

—— বৌদি, তোমায় যা বলেছিলাম, ভাইকে একটু বলো না।

তপসী রনিতের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,

—— এখনই?

—— না, একটু রেস্ট নিতে দাও। ভাইয়ের কাজ করতে দাও।

রনিত চোখ টিপে বললো,

—— দেখো না, ভাই আমায় ঘর থেকে তাড়ানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে গেছে।

তপসী রনিতের দিক থেকে ঘুরে সুব্রতের দিকে তাকিয়ে বললো,

—— আপনার ভাই কে বের হতে বলুন তো।

রনিত কপাল চাপড়ে বললো,

—— এই দিলে প্রতিদান? যাচ্ছি যাচ্ছি৷

সুব্রত বললো,

—— দুই দিনেই তো ভালো খাতির হয়েছে তোদের৷ বাহ, আমার বউ তো আমাকেই চিনছে না।

রনিত উঠে দাড়ালো। যেতে যেতে বললো,

—— বুঝলে বৌদি, জেলাস জেলাস! তোমার বর একটা হিংসুটে আলু।

তপসী হেসে দিলো। সুব্রত চোখ ট্যারা করে তপসীর দিকে তাকালো। বললো,

—— তোমার হিসেব তো রাতে দেখছি। এখন ফ্রেশ হয়ে আসি।
#নাম_না_জানা_এক_পাখি
লেখা: সাহিয়া সুলতানা
পর্ব: ১৯

৩১.
সুব্রত রাতের খাবার খেতে বসেছে। সাথে রনিত, সুব্রতের বাবা, রনিতের বাবা, রায়া আর রায়ার বর খেতে বসেছে। তপসী আর তার দুই শ্বাশুড়ি সবার কাছে খাবার এগিয়ে দিচ্ছে।

সুব্রত আর রনিত ই বেশি কথা বলছে। সুব্রতের বাবা হুট করে জিজ্ঞেস করলো,

—— রনিত কি এখানে বিয়ে করবে? নাকি আমেরিকা তেই বিয়ে করে থেকে যাওয়ার প্লান করছো?

রনিতের মা সাধারণত ভাসুরের সামনে কথা বলে না। তবে এবার বলে উঠলো,

—— দাদা, বিদেশি মেয়ে কেন বিয়ে করবে?

—— তোমার ছেলের দেশ কম বিদেশ বেশি পছন্দ, তাহলে বিদেশি মেয়ে বিয়ে করতেই পারে।

রনিত এবার বললো,

—— জ্যাঠু, দেশেই বিয়ে করবো।

রনিতের বাবা বললো,

—— ওহ, ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করছো তাহলে?

রনিত তপসীর দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো বলার জন্য। কিন্তু তপসী সাহস জুগিয়ে উঠতে পারলো না সবার সামনে বলে উঠতে।

সুব্রত রনিতকে বার বার তপসীকে ইশারা করতে দেখে জিজ্ঞেস করলো,

—— এসেছি পর থেকে তোদের দেবর বৌদির ব্যাপার বুঝতে পারছি না৷ কি খিচুড়ি পাঁকানো হচ্ছে, হ্যাঁ?

রনিত বললো,

—— বৌদি কিছু একটা বলতে চায় তোমাদের। বলতে পারছে না। আমি তো সাহস জুগাচ্ছিলাম।

রনিত দাত বের করে হাঁসলো। তপসী থতমত খেয়ে গেল। রনিত এভাবে কেন ফাঁসালো তাকে! সুব্রতের বাবা জিজ্ঞেস করলো,

—— তাই নাকি বউ মা? কি বলতে চাও? বলে ফেলো। ভয় পাও কেন?

তপসী রনিতের দিকে তাকিয়েই বললো,

—— না বাবা, আমি ভয় পাচ্ছি না। ভয় তো রনিত দা পাচ্ছে। সে একটা মেয়েকে পছন্দ করে, বিয়ে করতে দেশে এসেছে কিন্তু মুখ ফুটে বলতেই পারছে না।

রনিত মাথা নিচু করে ভাতের প্লেটে আঁকিবুঁকি করতে লাগলো। সবাই কি রিয়েকশন দেয় সেটা দেখার অপেক্ষা করছে।

সুব্রত ভ্রু কুঁচকে বললো,

—— এহ এই ব্যাপার! তাই তো বলি, এতো করে বলাতেও বিয়েতে না আসা ছেলে কিভাবে এখন হুট করে দেশে আসলো। তা কে সে মেয়ে?

—— তোর মতোই আর্মড পারসন। আই এম ব্যাডলি ইন লাভ উইথ হার!

রনিতের মা বললো,

—— বিয়ে করবি ভালো কথা। মেয়েকে দেখা। যতই পছন্দ করিস আমরা না দেখলে কি বিয়ে করতে পারবি নাকি?

—— দেখাবো বলেই তো এসেছি। আমার যলদিই ইউএস ব্যাক করতে হবে। তোমরা দ্রুত দেখাদেখি শেষ করো।

৩২.
তপসী বিছানায় বসে আছে। সুব্রত রাতের খাবার খেয়ে একটু ঘুরতে বেড়িয়েছিল। এখনো ফিরে নি। মানুষ টা বাড়িতে আসে এ ক’দিনের জন্যও। এরপর আসলেও খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

তপসী অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেল। পেটে সুড়সুড়ি পেয়ে ধরফরিয়ে উঠে বসলো। হয়তো সাপ এসে পড়েছে!

সুব্র‍ত তপসী কাঁধে চেপে ধরে আবার শুয়িয়ে দিলো। তপসী চমকে উঠে বললো,

—— উফ, আপনি?

—— তো কাকে এক্সপেক্ট করছিলে?

—— আমি ওইটা বলি নি। আমি ভাবলাম সাপ এসে পড়েছে।

সুব্রত হাসতে হাসতে তপসীর পাশে শুয়ে পড়লো। বললো,

—— বাচ্চাটা তো এখনো বড় হয় নি দেখছি।

তপসী অন্যদিকে ঘুরে গেল। সব সময় খালি মজা! এতো হাসার কি আছে?

সুব্রত তপসীর পেটে হাত রাখলো। তপসী সড়ালো না। যতই রাগ হোক, রাগ সে দেখাতে পারে না মানুষটার সাথে।

সুব্রত কানের এসে গিয়ে বললো,

—— আমায় রেখে ঘুমিয়ে গেলে কেন?

তপসীও উত্তর দিলো,

—— আমায় রেখে ঘুরতে গেলেন কেন?

সুব্রত তপসীকে আরো কাছে টেনে আনলো। বললো,

—— একটা সারপ্রাইজ ছিল তোমার জন্য। ভেবেছিলাম পরে বলবো, কিন্তু এখনই বলছি।

তপসী সুব্রতের দিকে ঘুরলো। বললো,

—— কি?

—— আমি তো ক্যান্টনমেন্টে নিজের ফ্লাটে এলা থাকি।

তঅপসী চোখ বড় করে বললো,

—— আপনি আমায় নিয়ে যাবেন?

—— সারপ্রাইজের মজা নষ্ট করার জন্য মেয়েটা সব সময় রেডি থাকে। নিয়ে যেতে চাই। প্রথমেই নিয়ে যাই নি একটা কারণে। কারণ প্রথমেই নিয়ে গেলে আমার পরিবারের সাথে তোমার বন্ডিং স্ট্রং হতো না। কয়েক মাস পর নিয়ে যাবো।

—— ওখানে আপনি সারাদিন থাকেন?

—— না তো। সারাদিন তো ডিউটি তেই থাকি।

তপসী চুপ হয়ে গেল। পরের কথা পরে ভাবা যাবে। এখন সব একান্ত সময় কাটানোর সময়৷ তপসী সুব্রতের গলা জড়িয়ে ধরলো।

তপসী সুব্রত কে বললো,

—— আপনি কি আরো সুন্দর হয়ে গেছেন?

সুব্রত ভ্রু কুঁচকালো। বললো,

—— না হয় নি। হঠাৎ এ কথা কেন জিজ্ঞেস করলে?

—— আমার কছে সুন্দর লাগছে। ওহ আই সি, এই জন্যই মিস সুহানা আপনার জন্য এতো উতলা!

সুব্রত সাংঘাতিক এক কাজ করলো তপসীর এই কথায়। তপসী অবাক হয়ে ঘাড়ে হাত দিলো। এটা কেমন ধারার কাজ। ঘাড়ে কি দাগ বসে গেছে?

তপসী কাঁদো কাঁদো চেহারা নিয়ে বললো,

—— কামড়ালেন কেন? আমি বাচ্চা হয়ে কামড়াই না, আপনি কেন এই কাজ করলেন?

—— বেশ করেছি। তুমি এই মেয়ের কথা আমাদের স্পেশাল মোমেন্টে কেন বললে?

—— আমি তো আপনাকে টিজ করতে বলেছিলাম।

সুব্রত হালকা করে তপসীর অধর যুগলে ঠোঁট ছোঁয়ালো। বললো,

—— শোনো, আমি কিন্তু ভালোবেসে লাভ বাইট দিয়েছিলাম। তুমি কান্না করবে কে জানতো?

—— কান্না করি নি। আপনি এতোদিন পর এসেছেন কিন্তু একটু আদর করছেন না আমায়। আপনি সত্যিই পচা লোক৷

সুব্রত হেসে ফেললো। এই বাচ্চাটাকে নিয়ে সে কোথায় যাবে? সুব্রত নাক ডুবালো তপসীর ঘাড়ে৷ আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো তপসীকে। তপসী ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো।

সুব্রত মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। যখনই সে কাছে যায়, এমন হৃদয় উতলা করা কান্না কেন করে মেয়েটা। সে কি একটুও বুঝে না সুব্রতের বুকে ব্যাথার ঝড় বয়ে যায় তার কান্নায়! সুব্রত তপসীর কপালে চুমু দিলো।

তপসী সুব্রতকে বললো,

—— আমার বেবি চাই, সুব্রত। আমার একা দম বন্ধ হয়ে আসে। আমি আপনার অংশ চাই। প্লিজ।

সুব্রত তপসী আরো কাছে টেনে নিলো। মেয়েটা কি এই প্রথম নিজের মুখে তার নাম বললো? তপসীর চাওয়াটা সে এখন কিছুতেই পূরণ করতে পারবে না। তবে কথাটায় কি যেন একটা জাদু ছিল। সুব্রতের কানে বার বার প্রতিধ্বনিত হতে থাকলো।

চলবে……
চলবে……
চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here