নাম_না_জানা_এক_পাখি পর্ব ২০+২১+২২

#নাম_না_জানা_এক_পাখি
লেখা: সাহিয়া সুলতানা
পর্ব: ২০

৩৩.
সুব্রতের নিজের বুকের মাঝে গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকা তপসীকে দেখে মনে হলো একটা আদুরে বিড়াল। নরম মোলায়েম যার দেহখানা। দেখলেই শুধু আদর করতে ইচ্ছে করে!

সকাল নয়টা বাজে। আজ এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়েছে সুব্রত! বাড়িতে আসলেই তার নিয়ন শৃঙ্খলা সব উড়ে যায়৷

সুব্রতের বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছে হলো না। অন্তত যতক্ষণ তপসী তার বুকে শুয়ে আছে ততোক্ষণ তো একদমই না। সুব্রতের ইচ্ছে করলো, মেয়েটাকে এবারই নিজের কাছে নিয়ে যেতে। কিন্তু মন দ্বিমত দোটানায় আছে৷ সারাদিন একা ফ্লাটে মেয়েটা করবেই বা কি! সুব্রত তো থাকবে সেই রাতের সময়টা শুধু৷

সুব্রতের ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটলো। তপসী একটু নড়ে সুব্রতকে আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরলো৷ সুব্রতের ইচ্ছে করলো তপসীকে কোলে তুলে ছাদে নিয়ে যেতে। ইচ্ছে টা যদি রাতে মনে জাগতো তাহলে সুব্রত সত্যিই তপসীকে নিয়ে ছাদে চলে যেতো। কিন্তু এখন যাওয়া যাবে না। কারো চোখে পড়লে সে লজ্জা না পেলেও, তার বউটা নিশ্চয়ই লাজে রাঙা হয়ে যাবে।

সুব্রত তপসীর চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। সিঁথির সিঁদুর কেমন কপালের উপরের অংশের আশপাশটায় লেপ্টে আছে। তপসীকে দেখতে আরো বেশি আদুরে লাগছে!

তপসী নড়েচড়ে উঠলো। চোখ মেলে তাকালো। চোখ পিটপিট করতে করতে সুব্রতের গালে হাত দিলো। ঘুম জড়ানো গলায় জিজ্ঞেস করলো,

—— আপনি উঠে গেছেন? কয়টা বাজে? এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?

সুব্রত তপসীর আহ্লাদী স্বরে বিমোহিত হয়ে গেল। চুলে আঙুল চালাতে চালাতে বললো,

—— তোমার কি মনে হয় আমি উঠে গেছি? আমি তো এখনো ঘুম থেকে উঠি নি৷

তপসী সুব্রতের বুকে হালকা করে ঘুষি দিলো। বললো,

—— সবসময় মজা! দেখি ছাড়ুন তো, দেখিতে দিন ক’টা বাজে!

—— বাজে না। আজ সময় ভুলে যাও তো।

—— সময় কিভাবে ভুলে?

—— চুপ। একদম চুপ। চুপ করে শুয়ে থাকো। তোমায় এতো কথা কে বলতে বলেছে?

তপসী বিছানার পাশ থেকে হাতরে মোবাইল হাতে নিলো। সাড়ে নয়টা বাজে৷ অনেক দেরি হয়ে গেছে। সাড়ে ছয়টার বদলে সাড়ে নয়টায় নিচে নামলে সবাই কি ভাববে?

তপশী সুব্রতের হাত ছাড়িয়ে নিতে নিতে বললো,

—— এতো দেরি হয়ে গেছে উঠালেন না কেন আমায়?

—— আজব! উঠাবো কেন?

—— এতো দেরি হয়ে গেল। সবাই কি ভাববে? কেউ কি ডাকতেও আসে নি? তুলি কে আজ ভালো করে কান মোলে দিবো।

—— সবাই আর কি ভাববে? ভাববে রাতে আমি তোমায় ঘুমাতে দেই নি।

—— চুপ চুপ। অসভ্য হয়েছেন। প্লিজ ছাড়ুন। উঠতে হবে৷ সবাই কি ভাববে, আমার তো লজ্জা লাগছে।

সুব্রত বেশ বিরক্ত হলো। এতো রিয়েক্ট করার কি আছে? সবাই কি ভাববে কি ভাববে বলছে! এখানে ভাবার কি আছে?

সুব্রত বিরক্ত হয়ে তপসীকে ছেড়ে দিলো। কোনো কথা বললো না৷ উঠে ওয়াসরুমে চলে গেল সুব্রত৷ তপসী অবাক হলো না৷ সুব্রত বিয়ের প্রথম দিকেও এমন করেছে৷ এ নতুন না৷ রাগ করলেও তপসী রাগ ভাঙানোর উপায় ও জানে৷

তপসী বিছানা থেকে নেমে শাড়ি ঠিক করে নিলো। ওয়াসরুমের দরজায় নক করে বললো,

—— মি. এংরি ম্যান, যলদি বাহিরে আসলে আমার সুবিধা হতো৷

সুব্রত উত্তর দিলো না৷ তপসী ওয়ারড্রব থেকে শাড়ি ব্লাউজ নিয়ে তুলির রুমে চলে গেল। ওখান থেকেই স্নান সেড়ে আসা যাবে।

,
সুব্রত স্নান শেষে বের হয়ে ঘর খালি পেল। তপসী কোথায় গেল? অভিমানের বদলে উলটো অভিমান দেখাচ্ছে নাকি!

সুব্রত টি-শার্ট আর ট্রাউজার পড়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো। মুভি দেখবে একটা৷ প্রায় আধা ঘন্টা পর তপসী ঘরে এলো। সুব্রত একবার তাকিয়ে দেখলো। চুল ভেজা, এর মানে স্নান করাও শেষ।

সুব্রত চোখ ল্যাপটপের দিকে দিলো। তপসী হাতে চায়ের কাপ নিয়ে এসেছে। সুব্রতের সামনে টেবিলে রাখলো। এরপর চলে গেল ড্রেসিং টেবিলে। খুব যত্ন সহকারে সিঁথি তে সিঁদুর মাখালো। কপালে লাল টিপ পড়লো। আঙুলের ডগায় একটু সিঁদুর নিয়ে হাতের শাখা পলায় লাগালো।

তপসী উঠে দাঁড়ালো। ভেজা চুল থেকে টপটপ করে জল পড়ছে। সুব্রতের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো চায়ের কাঁপে এখনো হাত দেয় নি। এতো রাগ করার মানে আছে?

তপসী এগিয়ে গেল সুব্রতের দিকে। বললো,

—— চা খাচ্ছেন না কেন?

সুব্রত ফিরেও তাকালো না তপসীর দিকে। তপসী আবার জিজ্ঞেস করলো,

—— শুনতে পান না আমার কথা? চা খাচ্ছেন না কেন?

সুব্রত এবারো উত্তর দিলো না। তপসী রেগে গেল৷ ঠাস করে ল্যাপটপের স্ক্রিন নামিয়ে দিলো। সুব্রত অগ্নিদাহ দৃষ্টিতে তপসীর দিকে তাকালো।

তপসী একটা ফাঁকা ঢোক গিললো। বেশি বেশি করে ফেলেছে নাকি? আমতা আমতা করে বললো,

—— এইভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? আমি ভয় পাই না আপনায়!

—— তা পাবে কেন? আমায় ভয় পেলে এমন তিড়িংতিড়িং করতে পারবে নাকি?

তপসী কি ভাবলো কে জানে, সুব্রতের কোলে চড়ে বসলো৷ দু হাতে গলা জড়িয়ে ধরলো৷
সুব্রত নড়েচড়ে বসলো। মেয়েটা কি কোনো দুষ্টু মতি নিয়ে এসেছে?

সুব্রত জিজ্ঞেস করলো,

—— কি হচ্ছে এটা?

—— তিড়িংতিড়িং করছি। আপনিই তো বললেন।

—— এবার লোকে কি ভাববে?

—— কি ভাববে আবার? আমি আমার বরের কোলে বসেছি৷ গলা জড়িয়ে ধরেছি। যা করছি তাই ভাববে।

সুব্রত তপসীর কমড়ে চিমটি দিলো। তপসী ব্যাথায় শব্দ করে উঠলো। বললো,

—— মারছেন কেন?

—— মারবো না? এমন বড় একটা মেয়ে আমার কোলে উঠে বসেছে৷ ছিহ, লজ্জাও নেই নাকি মেয়ে মানুষের?

তপসী নিজের নাক সুব্রতের নাকে ঘসলো। বললো,

—— যার বর অসভ্য, সে নির্লজ্জ না হয়ে পারে?

সুব্রত হেসে দিলো। মেয়েটার সাথে রাগ করে থাকাই যায় না৷ তপসী চায়ের কাপ হাতে নিলো। সুব্রতের মুখের সামনে ধরলো। সুব্রত এক সিপ নিয়ে মুখ কুঁচকে ফেললো। বললো,

—— একদম ঠান্ডা চা বউ।

তপসী বললো,

—— আচ্ছা ছাড়ুন। আমি গরম করে নিয়ে আসছি।

সুব্রত তপসীকে ছাড়লো না। নিজের সাথে আরেকটু চেপে ধরলো। বললো,

—— ঠান্ডা চা-ই তো বেশি মজা। খাইয়ে দেও তো। গরম করতে হবে না।

তপসী সুব্রতের গালে হালকা করে চুমু খেল। সুব্রত তপসীর হাত থেকে চায়ের কাপ নামিয়ে রাখলো। গলায় চুমু দিতে শুরু করলো।

,
রায়ার চিৎকার শুনে তপসী সুব্রতের কোল থেকে লাফিয়ে উঠলো। সুব্রত নিজেও দাঁড়ালো। রায়ার সামনে গিয়ে তার মাথায় গাট্টা মেরে বললো,

—— আসার সময় পাস না তুই ঘরে?

—— দেখ, বৌদি কে কিন্তু সারা সকাল দেখি নি। আমি কি জানতাম তোর,,,,

—— একটা চড় দিবো বেয়াদব।

—— বকিস না বুঝলি। একে তো দরজা লাগায় না, এরপর দোষও আমার দেওয়া হচ্ছে। ইস!

তপসী আড়ষ্টতা নিয়ে এগিয়ে এলো। জিজ্ঞেস করলো,

—— কিছু লাগবে রায়া?

—— তোমরা তো ব্রেকফাস্ট করো নি সকালে। তাই মা বলছিলো ডেকে দিতে।

—— ওহ।

—— তোমরা ফ্রি হলে চলে এসো। একটু যলদিই এসো।

রায়া দৌড়ে চলে গেল। তপসী দ্রুত পায়ে টেবিলের সামনে হেটে গিয়ে চায়ের ট্রে হাতে তুলে নিলো। আবার দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। শুধু তাজ্জব বনে রইলো সুব্রত। তার ভাই বোন দুটোর সমস্যা কি?
#নাম_না_জানা_এক_পাখি
লেখা: সাহিয়া সুলতানা
পর্ব: ২১

৩৫.
খাবার টেবিলে বসে তপসী তুলি কে খুঁজলো। তুলি আশেপাশে নেই। স্কুলে গেল নাকি? তপসী আর সুব্রতের খাওয়ার মাঝখানেই রনিত এসে টেবিলে বসলো।

তপসী হেসে জিজ্ঞেস করলো,

—— তুমিও কি খাবার খাও নি?

—— খেয়েছি বৌদি। আমি তো তোমাদের কোম্পানি দিতে এলাম।

সুব্রত খাবারে প্লেটেই নজর নিবিষ্ট রেখে বললো,

—— কোম্পানি দিতে এসছিস নাকি অন্য মতলব?

—— দুইটাই ভাই৷ তুই মাঝখানে ইন্টারফেয়ার করবি না৷ আমি বৌদিকে বলছি না!

—— যা বললাম না। যা করার কর।

রনিত সুব্রত কে কিছু বললো না। তপসী কে বললো,

—— বৌদি এই নাও সুহানার ছবি। মা’কে আর জ্যাঠি কে দেখিয়ে আসো তো৷

নাম শুনে সুব্রতের ভ্রু কুঁচকে গেল। এরপর আবার ভাবলো এক নামের অনেক মানুষ হতেই পারে!

তপসী ফোনের স্ক্রিনে তাকালো। ইউনিফর্ম পরিধান করা এক যুবতী মেয়ে। তার চেয়ে বয়সে বড় হবে, দেখতেই বুঝা যাচ্ছে৷ ভারী সুন্দরী!

তপসী হাসি দিতে বললো,

—— নাহ, আমার দেবরের তো পছন্দ অনেক সুন্দর আছে বলতে হবে!

রনিত তপসীর নাক চেপে দিয়ে বললো,

—— আমার ভাইয়ের ও। এখন যলদি খাও আর যেয়ে দেখাও। আর জিজ্ঞেস করো কবে ওদের বাসায় যাবে। আমি সুহানা কে বলে দিবো। সুহানা এখন ছুটি তে আছে তো।

সুব্রত কপাল কুঁচকে বললো,

—— তপসী এদিকে দাও তো একটু দেখি।।

রনিত বাগড়া দিয়ে বললো,

—— তুই দেখে কি করবি? তোর বউ বলেছে বলেই কি সুহানা বেশি সুন্দর হয়ে গেল নাকি?

—— আজব, আমি এমন কিছু বলেছি? আমি আমার ভাইয়ের পছন্দের মেয়েকে দেখতে পারি না?

তপসী হাসি মুখে মোবাইল এগিয়ে দিলো। সুব্রত দ্রুত হাতে নিয়ে তাকালো ছবির দিকে। সেই সুহানা। কিন্তু কিভাবে কি হলো?

সুব্রত নিজেকে শান্ত করলো। জিজ্ঞেস করলো,

—— তুই কি একাই পাগল? নাকি মেয়েও বিয়ে করতে রাজি আছে,?

রনিত শার্টের কলার নাড়িয়ে বললো,

—— এই রনিতকে তোর কি মনে হয়?

রনিত সুব্রতের দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে বললো,

—— তোর ভাইকে সুহানাই পটিয়েছে। সুহানাও রনিত বলতেই অজ্ঞান। বুঝা গেল?

সুব্রতের যেন দম আটকে আসার উপক্রম হলো। সুহানা কি প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছে? নয়তো কয়েক মাস আগে তারই পিছনে ঘুরঘুর করা মেয়ে কিভাবে তার ভাইয়ের সাথে কোনো সম্পর্কে জড়াতে পারে?

রনিত সুব্রতের হাত থেকে মোবাইল নিয়ে নিলো। তপসীর খাওয়া ইতিমধ্যেই শেষ। তপসী সুভ্রতের পানসে হয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে থমকে গেল। হঠাৎ কি হলো সুব্রতের!

রনিত তপসীকে বললো,

—— প্লিজ দেখাও!

—— এতো বড় ছেলে হয়ে কি তুমি লজ্জা পাও নাকি রনিত দা?

—— লজ্জা না পেলেও লজ্জা খানিক দেখাতে হয়। এখন যাও না!

তপসী উঠে দাড়ালো। কিচেনের দিকে পা বাড়ালো৷ সুব্রতের চিন্তিত মুখটা এখনো তার চোখ ভাসছে। আচ্ছা, সুব্রতের ফ্লাটে যে মেয়েটা আস্তে চাইতো সে কি মিস. সুহানা ছিল না?

,

সুব্রত বিছানায় বসে আছে। তপসী সামনে দিয়ে পায়চারি করছে। সুহানাদের বাড়িতে সুব্রতের পরিবারের সবাই যাবে আগামীকাল।

তপসী ঘরে এসে জানতে পারলো তার সন্দেহ সঠিক ছিল। তবে মেয়েটা কি কিছু একটা করতে চায়? নাকি ব্যাপারটা রনিত যেমন দেখছে ঠিক তেমনই।

তপসী সুব্রতের পাশে বসলো৷ হাতের হাত রেখে বললো,

—— কি করবেন এখন?

—— কি করবো তপসী? কিছুই বুঝিতে পারছি না।

—— উনি তো ভালোও হয়ে যেতে পারে। এমনও তো হতে পারে সে মুভ অন করার চেষ্টা করছে।

—— তপসী আমি বাচ্চা না। মেয়েটাকে সামনে ঘুরতে দেখেছি। তার স্বভাব অনেকটাই জানি। মনে আছে ও বলেছিলো, আমাদের সুখী হতে দিবে না? এটা কি ওমন কিছু?

—— দেখুন কিছু করার চিন্তা থাকলেও তো সুহানা দি বাসায় থাকতে পারবে না৷ তার ও আপনার মতোই অল্প ছুটিই৷

—— তাই বলে ভাইয়ের বিয়ে আমি এই মেয়ের সাথে দিবো?

—— আপনার ভাই সাবালক। বিয়ে করতে এক্সায় করবে৷ আপনি এতো চিন্তা করছেন কেন? যা ভাগ্যে আছে তাই হবে। ডোন্ট ওয়ারি৷

—— তাই বলে যে মেয়ে আমার সাথে উইথাউট এনি রিলেশন বেড শেয়ার করতে চায়, সে মেয়ে কিভাবে বদলে যেতে পারে? আমার একটুও বিশ্বাস হচ্ছে না তপসী।

—— প্রমাণ আছে আপনার কাছে? আর সত্যিই যদি বদলে যায়?

সুব্রতের চিন্তা তাও থামলো না। সুহানা কি সত্যিই মুভ অন করছে নাকি?
নাকি দমকা হাওয়ার মতো লন্ডভন্ড করে দিয়ে যাবে তার সংসার ?,
#নাম_না_জানা_এক_পাখি
লেখা: সাহিয়া সুলতানা
পর্ব: ২২

৩৬.
তপসী গাড়িতে উঠে বসতেই সুব্রত মুচকি হাসি বিনিময় করলো। রনিতের জন্য সুহানা কে দেখতে যাচ্ছে সবাই৷ দুইটা গাড়িতে উঠে বসেছে সবাই।

রায়া গেটের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদো কাঁদো চেহারা করে বললো,

—— তোরা দুইটা ভাই একজন ও আমাকে ঠিকমত
তোদের বিয়ে তে রাখলি না।

রনিত জিজ্ঞেস করলো,

—— আমি বললাম না তোকে সাথে চলতে!

—— শুভ্র কে নিয়ে কিভাবে যাবো?

—— শুভ্র কি তোকে ধরে রাখছে?

সুব্রতের মা বললো,

—— এতোটুকু বাচ্চা নিয়ে কিভাবে যাবে? তাও রাস্তা অনেক দূর।

সুব্রত বললো,

—— রনিতের বিয়ে দেরি করে ডেট ঠিক করে দিবো যাহ।

—— আমি কারো বিয়েতেই যাবো না৷ যলদি যা তো। দেখতেই ইচ্ছে করছে না তোদের।

রায়া ভিতরে চলে গেল। সুব্রতের মা মন খারাপ করে ফেললো। মেয়েটার জন্য খারাপ লাগছে। তপসীকে এতোই ভালো লেগেছিল যে তখন সুব্রতের বিয়ে করিয়ে দেওয়া টাই যুক্তিসঙ্গত মনে হয়েছে৷ কিন্তু রনিতেরও বিয়ে হয়ে গেলে মেয়েটা কিভাবে যাবে?

৩৭.
সুন্দর আলিশান বাড়িতে বসে আছে তপসীরা। সুহানার বাবা এলাকার নামকরা বিজনেস ম্যান। সুহানা তার একমাত্র মেয়ে। অনেকটা শখ করেই সুহানা ডিফেন্সে জব করে। দেখতে অতি সুদর্শণা।

সুহানার মা ও ভারী সুন্দরী। আভিজাত্যের মোড়কে মোড়ানো সে। তপসীর কেমন অস্বস্তি অনুভূত হতে লাগলো। সে এখানে ধরাই যায় সবচেয়ে লঘু আয়ের পরিবার থেকে এসেছে।

শ্বশুড় বাড়িতে মানিয়ে চলতে পারে তপসী। আভিজাত্য থাকলেও, শ্বশুর বাড়ির কেউই উপরি আভিজাত্যে বিশ্বাসী না। তাই হয়তো নিজের সাধাসিধা ভাবটা সেখানে বেমানান লাগে না। কিন্তু এখানে এসে অনেকটাই অস্বস্তিতে পড়ে গেছে সে। সে আড়ষ্ট হয়ে বসে রইলো।

দেবরের জন্য মেয়ে দেখতে গেলে সাধারণত বৌদিরা বেশিই খুটিনাটি বিষয় দেখে নেয়। কিন্তু তপসী চুপসে আছে, পাছে সে শ্বশুর বাড়ির মানুষের জন্য লজ্জার কারণ না হয়ে যায়৷

সুব্রত তপসীর পাশেই বসে আছে। তার স্ত্রী অস্বাভাবিক নড়াচড়া করছে এবং চুপসে আছে তা সে প্রথম থেকেই লক্ষ্য করেছে। কানের কাছে মুখ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

—— তোমার কি কোনো সমস্যা হচ্ছে?

তপসী না-বোধক মাথা নাড়লো। তার সমস্যা হচ্ছে, কিন্তু সে বলবে না। বলতে পারছে না। আচ্ছা, সুহানা এখানে আর কতোক্ষণ পরে আসবে? সে কি সুব্রত কে দেখে কোনো সিন ক্রিয়েট করবে? নাকি সে আগে থেকেই জানে সুব্রত রনিতের ভাই?

হাজারো প্রশ্ন নিয়ে চুপচাপ বসে রইলো তপসী। সবাই মৃদ্যু মন্দ আলোচনা করছে। সে-ই বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছে না।

সুহানা কে তার এক বোন ধরে নিয়ে আসলো। সবার সামনেই সোফায় বসালো। ভীষণ রূপবতী মেয়েটাকে শাড়িতে আরো বেশি রূপবতী লাগছে। তপসী কয়েক পল তাকিয়ে দেখলো তাকে। এই ভীষণ সুদর্শণা কে কেন তার স্বামী এতো তাচ্ছিল্য করে তাড়িয়ে দিয়েছিল?

টুকটাক আলোচনা চলছিলো সবার মাঝেই। সুব্রতের মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। রনিত তার পাশেই বসেছে। সে খুবই হাসি খুশি৷ বুঝাই যাচ্ছে, তার ভাই সুহানার প্রেমে আধপাগল হয়ে গিয়েছে।

সুব্রত সুহানার দিকে তাকাতেই দেখতে পেল সুহানা তার দিকে তাকিয়েছে চোখ তুলে৷ যেন খানিক চমকেই গেল সুহানা । সুব্রতের আরো বিরক্ত লাগলো এতে। মেয়েটা কি এখন নাটক করবে যে আগে থেকে সে মোটেও জানতো না সুব্রত রনিতের ভাই!

সুহানাদের পরিবার অনেকটাই আধুনিক মনস্কের। সুহানাও অতি আধুনিক গোছের মেয়ে। সে প্রথম থেকেই টুকটাক কথা বলছিল সবার সাথে। সুব্রত কে এ পর্যায়ে জিজ্ঞেস করলো,

—— দাদা! আপনি কি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের মেজর সুব্রত ধর না?

সুব্রত চকিতে ফিরে তাকালো সুহানার দিকে। মেজাজ ছিটকে গেল তার। কি ভোলাভালা সাজা হচ্ছে। এখনবসে চিনতেই পারছে না? এ মেয়ে নিশ্চয়ই ভড়ং ধরেছে৷ মনে তার নিশ্চয়ই কিছু প্লানিং আছে। আর কি ডাকা হচ্ছে? দাদা!
সুব্রত নিজেকে সামলে নিতে বললো,

—— জ্বি।

সবাই উৎসুক দৃষ্টি মেলে তাকিতে আছে সুহানার দিকে। এরপর সে কি বলবে?

সুহানা স্মিত হাসলো। হাসিতে তার মাধুর্য খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু সুব্রতের আরো বেশি বিরক্ত লাগলো। এখন তার ইচ্ছে করছে তপসীকে ঠাটিয়ে চড় মারতে। তপসীই জোর করে নিয়ে এসেছে তাকে। সুব্রত মনে মনে তপসীকে বললো,

—— নে মেয়ে, এখন শখ করে মেয়ে দেখ!

সুহানা সুব্রত কে উদ্দেশ্য করে বললো,

—— আমি আপনার জুনিয়র, দাদা! আমরা সেইম এপার্টমেন্টেই থাকি কিন্তু। আপনি আমায় খেয়াল করেছেন কখনো?

সুব্রত নিজেকে সংযত রেখে বললো,

—— হু, চিনেছি। আসলে ছবি দেখে ঠিক চিনে উঠতে পারি নি।

রনিত বলে উঠলো,

—— ওয়াও, দ্যাটস গ্রেট, তোমাদের আগে থেকে চেনা জানাও আছে দেখছি৷

সুহানা বললো,

—— রনিত তুমি দাদা’র বিয়ের ছবি দিলে, সেখানেই অনেকটা চেনা মনে হয়েছিল। আসলে আমিও দাদা’র মতোই সঠিক বুঝতে পারি নি।

সুহানা চওড়া হাসি দিয়ে সুব্রতের দিকে তাকালো। সুব্রত তপসীর হাত ধরে বসলো। তপসী খানিক চমকে উঠলো। কারো মধ্যে কোনো ভাবান্তর না দেখতে পেলেও তপসীর ভীষণ লজ্জা লাগতে শুরু হলো সবার সামনে এইভাবে তার হাত ধরায়।

সুব্রতও সুহানাকে চওড়া হাসি ফিরিয়ে দিলো। সুহানা নজর ফিরিয়ে নিলো। তপসীকে সে ছবিতে দেখে যতটা ভেবেছিল তার চেয়ে অনেকটাই বেশি ভালো দেখতে। সুব্রত কি এইজন্যই তাকে কখনই কাছে টানে নি!

৩৮.
রায়া বাসায় একা ছিল তুলির সাথে । তাদের বাসায় কাজ করার মাসি গুলোও ছিল অবশ্য। তুলি শুভ্রকে কোলে নিয়ে খেলা করছিলো। আর রায়া অপেক্ষা করছিলো সোফায় বসে বাকি সবার ফিরার। রায়ার স্বামীও এই মূহুর্তে ব্যবসায়ের কাজে শহরের বাহিরে।

সবাই ফিরে আসতেই রায়া দৌড়ে গিয়ে সদর দরজা খুলে দিলো। তপসীর হাত ধরে বললো,

—— বৌদি, বিয়ের ডেট ঠিক হয়ে গিয়েছে?

সুব্রত রায়াকে ধমক দিলো। বললো,

—— এ্ই মেয়ে, ফ্রেশ হতে দে আগে। আসতে না আসতেই শুরু হয়ে গেছে।

তপসী সুব্রতকে বললো,

—— আপনি এমন কেন করছেন?

এরপর রায়ার হাত ধরে রায়ার ঘরে যেতে যেতে তপসী বললো,

—— চলো দি, তোমার রুমে গিয়েই ফ্রেশ হয়ে নেই। আমাদের রুমের ওয়াসরুম তো তোমার দাদাই ইউজ করবে। আর তুলিকে বলে দাও বারান্দা থেকে আমার কাপড় এনে দিতে।

—— রুমে ঢুকেই আগে কাহিনি বলবে আমায়। চলো চলো। তোমার বরের মেজাজ কেন চটে আছে?

—— বলতে পারি না। ও বাড়ি থেকে বের হয়েই এমন ফুলে রয়েছে।

—— কেন? রনিত দা’র বউ কি পছন্দ হলো না?

—— হয়তো বেশিই পছন্দ হয়ে গিয়েছে। তাই বোধহয় আফসোসে রাগ হচ্ছে।

তপসী হাসতে লাগলো। রায়া বিরক্ত হলো। এ কোন ধারার কথা বাবা! কথার প্রসঙ্গ বদলাতে জিজ্ঞেস করলো,

—— বিয়ের ডেট কি ঠিক হলো?

—— আরে না। রনিত দা তো আর কয়েকদিন পর চলেই যাবে৷ তাই এখন শুধু আশীর্বাদ করে রাখবে। যেহেতু আগে থেকেই চেনা জানা হয়ে গেছে তাই কোনো পক্ষই আর বিলম্ব করতে চায় না।

—— আশীর্বাদ কবে?

—— আগামী সপ্তাহে। আগের দিন রনিত দা’র পরের দিন সুহানা দি’র। আর তুমিও এবার ওই বাড়িতে যাবে। শুভ্রের খেয়াল রাখার দ্বায়িত্ব আমার।

—— কেন? তুমি যাবে না?

—— শুভ্রকে সাথে নিয়েই যাবো। এক মামা’র বিয়ে মিস গেছে বেচারার, আরেক মামা’র বিয়ে কিছুতেই বাদ যাবে না।

রায়া হাসলো। মেয়েটা বয়সে তার চেয়ে ছোট। অথচ সব দিক ঠিক সামলে নিতে জানে। কি একটা অদ্ভুত মায়া আছে তার মাঝে। এইতো, এই মায়াতেই তো কাবু হয়ে গেছে তার ভীষণ রাগী আর গম্ভীর ভাই টা।

,
তপ্পসী ফ্রেশ হয়ে বের হতেই রায়া ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

—— বৌদি, তুমি কি তখন রনিতদা’র বউকে দিদি বলে ডেকেছো?

—— হ্যাঁ। কেন?

রায়া কপাল কুঁচকে বললো,

—— আমাকে দি ডাকো, এর জন্যই মায়ের কাছে এতো বকা খাও৷ আবার ছোট জা কেও দিদি বলে ডাকবে নাকি? বড় বউ তুমি এই বাড়ির, সেই সম্মান ধরে রাখতে চেষ্টা করো। নাম ধরে ডাকবে৷ এবার রনিতদা বুড়ি দীদা কে বিয়ে করেই আনুক না কেন!

তপসী ঠোঁট উলটে রইলো। বয়সে বড় মেয়েটাকে নাম ধরে ডাকবে কেন? তাও আবার মেয়েটা সুহানা! সুহানাকে তো সে কিছুতেই চাইলেও বাকি সবার মতো আপন ভাবতে পারবে না। এতে সে হিংসুটে প্রমাণ হলেও তার কোনো সমস্যা নেই! সে কিছুতেই এতোটা মিশবে না সুহানার সাথে! আচ্ছা বিয়ের পর কি সুহানা এ বাড়িতে থাকবে? নাকি আগের মতোই তার স্বামীর সাথে এক এপার্টমেন্টে থাকবে!

চলবে……
চলবে………

(ছোট হওয়ায় দুঃখিত৷ কিন্তু মাথার যন্ত্রণায় এর চেয়ে বড় লিখতে পারলাম না৷ আশা করি আমার অবস্থা টা বুঝবেন৷)
চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here