নাম_না_জানা_এক_পাখি পর্ব ২৩+২৪+২৫

#নাম_না_জানা_এক_পাখি
লেখা: সাহিয়া সুলতানা
পর্ব: ২৩

৩৮.
তপসী ফ্রেশ হওয়ার পর নিজেদের ঘরে চলে গেল। সুব্রত ফ্রেশ হয়ে এসে সোফায় বসে আছে। উন্মুক্ত শরীর সোফায় হেলিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে৷

তপসী সুব্রতের পাশে গিয়ে বসলো একটু ইতস্তত করে। সুব্রত কি কোনো ব্যাপারে আপসেট? সুহানার ব্যাপারটা নিয়ে? তপসী সুব্রতের মাথায় হাত বুলিয়ে
দিউয়ে জিজ্ঞেস করলো,

—— শরীর ভালো লাগছে না? টায়ার্ড ফিল হচ্ছে?

সুব্রত চোখ বন্ধ রেখেই বললো,

—— আমি এতো অল্পতে টায়ার্ড হই না বউ।

তপসী চিন্তিত মুখে বললো,

—— তাহলে? কি হয়েছে আপনার?

—— কিছুই না।

তপসী চুপ করে রইলো। সুব্রত তপসীর কোলের উপর মাথা রেখে সোফাতেই পা গুটিয়ে শুয়ে পড়লো। তপসী চুলে বিলি কেটে দিতে থাকলো।

তপসীর কোমড় আচমকাই জড়িয়ে ধরলো সুব্রত। পেটে মুখ গুঁজে বললো,

—— আমি যদি রনিতকে মানা করি এই বিয়ে করতে সে কি আমার কথা মেনে নিবে?

তপসী চুপ রইলো। সে নিজেই বা কতোটুকু চিনে রনিতকে? আট দিনের পরিচয় মাত্র। এতেই কি মানুষের স্বরূপ বুঝা যায়!

সুব্রত আবার জিজ্ঞেস করলো,

—— প্লিজ বলো তপসী।

—— আমি জানি না। আপনি তার বড়ো ভাই, সে আপনার কথা মানতেও পারে।

—— আর যদি না মানে? যদি ভুল বুঝে? আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই সুহানার বিপক্ষে!

তপসী একটু চুপ থেকে বললো,

—— আচ্ছা এমন কি হতে পারে না সুহানা দি ভালো হয়ে গেছে? এখন তো আপনার কাছেও আসে না।

সুব্রত তপসীকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। বললো,

—— সে কেনো সবার সামনে তাহলে এইভাবে কথা বললো?

—— কারন সুহানা দি হয়তো চায় না সত্য টা সামনে আসুক। অবশ্যই সত্য টা সামনে আসলে বিয়ে টা হবে না।

—— মেয়েটা ভালো না তপসী।

—— মানুষ বদলায়। হয়তো সেও বদলে গেছে। রনিত দা বুদ্ধিমান ছেলে, সে এমনি এমনি তো আর কারো প্রেমে পড়ে যাবে না। গেলেও, বিয়ে পর্যন্ত আগাবে না।

—— তুমি বলছো ও ভালো হয়ে গেছে? আমি ওর চোখে আমাদের জন্য স্পষ্ট ঈর্ষা দেখতে পেয়েছি।

—— আপনি হয়তো ভুল ভাবছেন। আপনার সুহানা দি’র সাথে একবার কথা বলে নেওয়া উচিত।

—— আমি কোনো কথা বা আর্গুমেন্টে যাবো না। কথা কিছু বলার হলে তা রনিতকেই বলবো।

তপসী বললো,

—— আমার মনে হচ্ছে রনিত দা আপনার কথা মানবে না। শুধু শুধু মনমালিন্য করার দরকার কী?

সুব্রত তপসীকে জিজ্ঞেস করলো,

—— তোমার সত্যিই মনে হয় সুহানা বদলে গেছে?

—— হু। অ্যান্ড আই থিংক এভ্রিওয়ান ডিজার্ভ আ চান্স টু চেঞ্জ দেম!

—— আমার ভাইয়ের জীবন নষ্ট হতে পারে!

—— সুব্রত!

সুব্রত তপসীর মুখের দিকে তাকালো। ভ্রু কুঁচকে বললো,

—— একদম নাম ধরে ডেকে টপিক চেঞ্জ করতে চাইবে না।

তপসী অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। বললো,

—— ওহ আই গট ইট। আপনি নিজেকে নিয়েই বেশি ইনসিকিউরড, তাই না?

—— মানে?

—— মানে ওই আরকি। সুহানা দি কে দেখে দিল ম্যে লাড্ডু ফুটে, তাই তো?

সুব্রত সোফা থেকে উঠে লাফিয়ে দাঁড়ালো। তপসী তাজ্জব বনে গেল। রেগে গেল নাকি! তপসী চোখ বন্ধ করে রইলো। তার উপর শীঘ্রই ঝড় আসতে চলেছে।

সুব্রত তপ্পসীকে কিছু না বলে পাজোকোলে তুলে নিলো। তপসী আরেক দফা চমকে উঠে সুব্রতের গলা জড়িয়ে ধরলো। দ্রুত বলে উঠলো,

—— প্লিজ নিচে ফেলবেন না।

সুব্রত হেসে দিলো। তপসী তা দেখে খানিক চুপ করে গেল। ওহ আচ্ছা, সুব্রত তাকে নিচে ফেলে দেওয়ার জন্য তুলেনি তাহলে।

সুব্রত তপসীকে বিছানায় শুইয়ে দিলো। তপসী এক চোখ বন্ধ করে আরেক চোখ খুলে সুব্রত কে দেখতে লাগলো। সুব্রত তার পাশে এসে বসেছে।

সুব্রত জিজ্ঞেস করলো,

—— আর ইউ জেলাস?

তপসী হেসে বললো,

—— একদম না। ইস, আপনি সুহামা দি’র ভাসুর হবেন সম্পর্কে। বেচারি আপনার সামনে আসলেই বারো হাত ঘোমটা দিতে দৌড়ে লজ্জা পেয়ে পালাবে।

তপসী হেসে বিছানায় গড়াগড়ি খেতে লাগলো। সুব্রত তপসীর পাশে শুয়ে পড়লো। ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

—— আপনি কি জানেন মিসেস তপসী, একজনকে লজ্জা পেলে খুব দারুণ দেখতে লাগে?

তপসী হাসতে হাসতেই বললো,

—— সুহানা দি কে?

সুব্রত তপসীর গালে হাতের তালু লাগালো। তপসী খানিক কেঁপে উঠলো। অন্য দিকে ঘুরে শুয়ে পড়লো। সুব্রত তপসীকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো। তপসীর সরু অধর পল্লবে হাতের বৃদ্ধা আঙুল লাগিয়ে বললো,

—— বুঝলাম সে অতি সুন্দরী, তাই বলে কি তার রূপ আমাকে দেখানো বারণ?

তপসী কথা বলতে পারছে না। ভালো লাগায় তার দম আটকে যাওয়ার উপক্রম হলো। সুব্রত তপসীর কপালে চুমু দিলো। তপসী সুব্রতের গলা জড়িয়ে ধরলো।

সুব্রত তপসীর নাকে নাক ঘষে বললো,

—— তুমি অনবদ্য সুন্দরী আমার কাছে। তোমার থেকে অনেক মায়াবতী রূপবতী পৃথিবীতে আছে। কিন্তু কি জানো? তুমি আমার চোখে সর্বোচ্চ সুন্দর। কেন জানো? কারণ তুমি একান্তই আমার, আমি তোমার। অন্যকেউ একান্তই আমার নয়। তারা যতই রূপবতী হোক, আমি মোহিত হবো না। কারণ আমার অর্ধাঙ্গিনী আছে, যিনি সর্বদা আমার মনের মধ্যে রাজত্ব করছেন। তিনি অন্য কোনো রানিকে আমার মনের রাজ্যে প্রবেশই করতে দিচ্ছেন না।

তপসী বললো,
—— একদম, কোনো রানি প্রবেশ করতে চাক দেখি! খবর আছে না একদম!

সুব্রত হেসে ফেললো। বুকের মঝে ঝাপটে ধরলো তপসীকে। আপাতত সে সুহানাকে নিতে ভাবতে চায় না। তপসীর কথা মতো একটা সুযোগ তাকে দেওয়ায় যায়।
#নাম_না_জানা_এক_পাখি
লেখা: সাহিয়া সুলতানা
পর্ব: ২৪

৩৯.
রাত এগারোটা বাজে। রনিত বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ঘরের দরজা খোলাই ছিল। সেই সুবাদে সুব্রত বিনা নকেই ঘরে প্রবেশ করলো।

রনিতের সারাটা মুখ জুড়ে মায়া মায়া ভাব। মনের দিক থেকে ভীষণ সরল আর মিশুক। খুব সহজেই মানুষ কে আপন ভেবে ফেলে। সুহানা নিশ্চয়ই সেই সুযোগেরই সৎ ব্যবহার করেছে।

সুব্রতের দুই বছরের ছোট রনিত। ছোট থেকে এক সাথেই বড় হয়েছে। সুব্রতের খুব করূণ সময়েও রনিত পাশে ছিল তার। তার ভাইটার জীবনে আজ খুব সংকট ময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সুহানা সঠিক কিনা ভুল সুব্রত নিজেই তা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না।

সুব্রত রনিতের মাথায় হাত বুলালো। রনিত তড়াক করে উঠে বসলো। সুব্রতকে খেয়াল করা মাত্রই জিজ্ঞেস করলো,

—— কিরে ভাই, এতো রাতে কি চাই?

সুব্রত চোখ সরু করে তাকালো রনিতের দিকে। বললো,

—— কিছুই চাই না। তোর কাছে আবার কি চাইবো?

রনিত চোখ কচলাতে শুরু করলো। খানিক বাদে জিজ্ঞেস করলো,

—— ওহ, তপসীর সাথে ঝগড়া করে এসেছিস নাকি?

সুব্রত কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকালো। বললো,

—— ওর সাথে কেন ঝগড়া করবো?

—— ওমা, তোদের স্বামী স্ত্রীর ব্যাপার আমি কিভাবে জানবো?

—— কোনো ঝগড়া টগড়া হয় নি!

—— তাহলে এখানে কি করছিস? এমনিই তো বাড়িতে আসিস বছরে দুই কি তিনবার। এরপরও এমন বউ রেখে এদিক ওদিক ঘুরতে ইচ্ছা হয়?

—— বউ কি সারাক্ষণ কোলে করে নিয়ে ঘুরার মানুষ নাকি?

রনিত হাসলো। হাসি থামিয়ে মুখ গম্ভীর করে জিজ্ঞেস করলো,

—— যলদি বল কি দরকারে এসেছিস! তুই শুধু শুধু আমার ঘরে এই রাতে আসার মানুষ তো না। আমার ঘুম নষ্ট করছিস ভাই।

—— কেমন এক রেখা হয়েছিস রে তুই! তোর বড় ভাই তোর সাথে টাইম স্পেন্ড করতে চায়, তুই তাকে তাড়িয়ে দিচ্ছিস!

সুব্রত এরপর বসে রইলো। সে কিভাবে সুহানার কথা তুলবে ভেবে পাচ্ছে না। রনিত নিজেও কোনো ভাবেই সুহানার কোনো বিষয়ে কথা বলছে না।

রনিত হামি তুললো। বললো,

—— আচ্ছা বল কি বলবি। আই মিন হাউ ইউ ওয়ান্ট টু স্পেন্ড টাইম উইথ মি! তোর গার্ল ফ্রেন্ড তো না আমি যে স্পেশাল টাইম কাটাবি।

সুব্র‍ত রনিতের চুল টেনে ধরলো। রনিত আর্তনাদ করে উঠলো।

—— ভাই, প্লিজ ছাড়। আরেহ, লাগছে তো।

—— আমার সাথে ইতরামি করিস তুই!

—— আচ্ছা সরি, ছাড় এখন।

সুব্রত হাত ছাড়িয়ে নিলো। বললো,

—— আচ্ছা সুহানা কে কোথায় পেলি?

—— মানে?

—— মানে ওকে কিভাবে চিনিস? তুই তো দেশে থাকিস না। সুহানাও মোস্ট ওফ দ্যা টাইম ক্যান্টনমেন্টে কাটায়।

—— আমাদের পরিচয় ইন্সটাগ্রাম এ। আমি আমার ডিজাইনের পিকচারস ক্লিক করে আপলোড করি, তুই তো জানিসই। আবার প্রজেক্টের বিভিন্ন পিকচারস। তো সেখানে ও কোনো এক বৃটেন প্রজেক্টের ছবিতে কমেন্ট করে। সেখান থেকেই ওকে চেনা জানার শুরু।

সুব্রত ঘাড় এদিক ওদিক কাৎ করতে করতে জিজ্ঞেস করলো,

—— মানে ও জাস্ট কমেন্ট করলো আর তুই লাট্টু হয়ে গেলি?

—— শোন, সেখানে কমেন্টে বুঝা গেল সে বিস্তারিত জানতে চায়। সো, আমিই ফার্স্ট টাইম নক করি। কথা বলতে বলতে চেনা জানা হয়। আর্মি তে জব করার পরও ও এতো বিউটিফুল কিভাবে আমি ভেবে পাই না। নিজের যত্ন নেওয়ার সময়ও তো মেইবি পায় না।

—— আচ্ছা তোদের সম্পর্কের মোটামুটি কত দিন?

—— বেশি না। দেড় মাস হবে মেইবি। চেনা জানা এর কিছু আগ থেকে। আমিই ফার্স্ট টাইম ওকে প্রোপোজ করি। ও আমাকে বলে, শী ক্যান ম্যারি মি কিন্তু অন্য কোনো সম্পর্ক তার জন্য পসিবল না।

—— এরপর?

—— এরপর কি? দেশে আসলাম অ্যান্ড বাকি সব তো জানিসই।

—— সুহানার ব্যাপারে সব খবর জানিস?

—— সব বলতে?

—— মানে আমাকে তো জাস্ট জব সাইটের কথা বললি। তুই কতটা জানিস তা জিজ্ঞেস করছি। এই ধর ব্যবহার, রুচি অ্যান্ড এক্সেট্রা।

—— শী ইজ সো কাইন্ড। তুই জানিস, ও বাসায় আসলেই পথ শিশুদের খাবার দেয়। যদিও এটা রিসেন্টলি শুরু করেছে। আর পাস্ট টাইমে কাউকে খুব পছন্দ করতো, এখন করে না।

সুব্রত অবাক হলো। সুহানা তাহলে কি সবই বলেছে? জিজ্ঞেস করলো,

—— কাকে?

—— আই ডোন্ট নো। সে বলতে চায় না ওই ব্যাক্তির সম্পর্কে। বাট মানতে হবে সে ছেলেটা নিশ্চয়ই খুব আনলাকি যে সুহানার মতো মেয়ের ভালোবাসা পায়ে ঠেলে দিয়েছে। অ্যান্ড আমি অনেকটা লাকি।

সুব্র‍ত একটু চুপ করে থাকলো। সুহানা কি তার ব্যাপারে বলেছে? রনিত যে ছেলেটার কথা বলছে তা কি সুব্রত নিজেই? তাহলে কি তপসীর কথা মতো সুহানা চেঞ্জ হয়ে গেছে? সুযোগ দেওয়া উচিৎ!

সুব্রত মুচকি হাসলো। রনিত ভ্রু উচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

—— কিরে, তোর কি হলো?

—— তুই খুশী ভাই?

—— খুশি না হয়ে পাড়া যায়?

—— অনেক ভালোবাসিস?

—— ইয়েস, অনেক।

সউব্রত নিজের মন বদলালো। সে রনিতকে কিছু বলবে না। বাকি যদি কিছু জানতেই হয় তাহলে না হয় সুহানার সাথেই কথা বলে নেওয়া যাবে। কিন্তু সুহানা কি সত্যিই জানতো না সুব্রত রনিতের ভাই!

৪০.
সুব্রত ঘরে ফিরে এসেছে। রাত বারোটা বেজে কিছু সময় অতিবাহিত হয়েছে। ঘরে তপসী নেই। ব্যালকনি থেকে গুন গুনানোর শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।

সুব্রত স্মিত হাসলো। তার বউটা বাচ্চাই রয়ে গেছে। এই রাত বিরাতে ব্যালকনিতে গিয়ে গান গাইতে হবে! সুব্রত পরণের টি-শার্ট খুলে সোফায় রাখলো। ব্যালকনির দিকে পা বাড়ালো।

ব্যালকনির কাছে যেতেই তপসীর কন্ঠস্বর স্পষ্ট শুনতে পেলো সে। গান গাইছে মেয়েটা। মৃদ্যু আওয়াজ ভেসে আসছে,

I love it when you call me señorita
I wish I could pretend I didn’t need ya
But every touch is ooh la la la
It’s true, la la la
Ooh, I should be running
Ooh, you keep me coming for ya

সুব্র‍ত থাইয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তপসীর গান শেষ হতেই বলে উঠলো,

—— হাই সেনোরিটা।

তপসী দোলনায় বসে ছিল। লজ্জা পেয়ে ঘুরে দাঁড়ালো। ঘুম আসছিলো না বলে ব্যালকনিতে এসে দোলনায় বসেছিল। মৃদ্যু বাতাসে মনের অজান্তেই গান গাইতে শুরু করে। ইস সুব্রত তা শুনেও নিলো!

সুব্রত তপসীর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আবার বললো,

—— হাই সেনোরিটা!

তপসী সুব্রতের বুকে হাত ঠেকালো।

—— চুপ করুন না আপনি! কখন এখানে এসেছেন টের পাই নি।

—— তাতে কি হয়েছে?

তপসী, সুব্রতের দিকে তাকিয়ে বললো,

—— টি-শার্ট কই? সর্দি লেগে যাবে তো।

—— মেডিকেলের রেজাল্ট তো এখনো আউট হয় নি, এখন থেকেই বউ ডাক্তারি শুরু করে দিয়েছে দেখছি।

তপসীর হুট করেই মেডিকেল কলেজের রেজাল্টের কথা মনে পড়লো। সে আরেকবার চূড়ান্ত লজ্জিত হতে যাচ্ছে। কারন তপসী জানে, মোটেও সে চান্স পাবে না!

তপসী বললো,

—— ডাক্তারি করছি না। এইটুকু বিষয় সবাই জানে।

সুব্রত তপসীর কোমড়ে ধরে উচু করলো। তপসী ভয় পেয়ে সুব্রতের গলা জড়িয়ে ধরলো। সুব্রত হেসে বললো,

—— এইযে আমার সেনোরিটা, ঘুমাবেন না?

—— আপনি ঘরে ছিলেন না তো, ঘুম আসছিলো না।

সুব্রত দুষ্টুমি ভর্তি হাসি দিল। তপসীকে নিচে নামিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,

—— এতোক্ষণ ঘুম আসছিলো না, এখন তো আমি ঘুমাতে দিবো না।

সুব্রতের ধীরে ধীরে বলা কথা তপসীর বুক মুহূর্তেই ভারী করে তুললো। সুব্রতের হীম শীতল কণ্ঠস্বর এর স্পর্শ পেয়ে তপসী যেন জমে গেল। সুব্রত আচমকা তপসীর কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের অধরে বেষ্টিত করলো তপসীর অধর পল্লব যুগল। তপসী আবেশে চোখ বন্ধ করে স্থির হয়ে রইলো। এবার তার শরীর সত্যিই হীম শীতল বরফের ন্যায় জমে যাচ্ছে। #নাম_না_জানা_এক_পাখি
লেখা: সাহিয়া সুলতানা
পর্ব: ২৫

৪১.
সুব্রতের বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে আছে তপসী। সুব্রতের যাওয়ার দিন ঘনিয়ে আসছে৷ যতই দিন ঘনিয়ে আসে তপসীর মন বিচলিত হয়ে উঠে। এতো আকুল ভাবে সুব্রতকে কাছে পেয়ে ইচ্ছে করে যা তপসীর নিজেরই ভাবনাতীত।

সুব্রত ঘুমিয়ে আছে এখনো। ভোরে সূর্য পূর্ব দিগন্তে মাত্র উঠতে শুরু করেছে৷ লালাভ আভা ছড়িয়ে পড়ছে প্রকৃতি জুড়ে। কিছুটা লালভ বর্ণ তপসীর মুখেও এসে পড়েছে৷ সিঁদুরে পুরো কপাল লেপ্টে আছে।

,
আজ সুহানার আশীর্বাদ। তপসীরা সবাই সুহানাদের বাসায় যাবে। সকাল থেকেই কর্মব্যস্ত তপসী। সুব্রতের এক মাসতুতো দাদা ও বৌদি এসেছে। তপসী বিয়েতে এদের দেখেছে বলে মনে পড়ছে না। তবে কোথাও যেন দেখেছে।

সুব্রতের মা তপসীকে রান্নাঘরে ডাকলেন। তপসী দ্রুত পায়ে গেল। তপসী নিজেই জিজ্ঞেস করলো,

—— মা বৌদি টাকে কি কোথাও দেখেছি আমি আগে? বিয়েতে এসেছে বলে তো মনে পড়ে না৷

সুব্রতের মা বেসিনে হাত ধুতে ধুতে বললেন,

—— আরেহ পাগল মেয়ে ভুলে গেলে? তোমাদের বাসায় আমরা যেদিন প্রথম বার গিয়েছিলাম সেদিন গিয়েছিল তো রেহা।

—— রেহা বৌদি?

—— হুম।

—— আমার ওতো খেয়াল ছিল না।

—— আচ্ছা কোনো ব্যাপার না। জুসের গ্লাস দুইটা রেহা আর সুমন কে দিয়ে আসো।

তপসী জুসের গ্লাস নিয়ে গেল ট্রেতে করে। রেহা যেন কেমন করে তাকাচ্ছে বার বার তপসীর দিকে। তপসীর একটু ইতস্তত অনুভব হলো।

রেহা জিজ্ঞেস করলো,

—— সুব্রত বাড়িতে?

তপসী স্মিত হেসে বললো,

—— জি, উনি বাড়িতেই।

—— যাবে নাকি সুহানাদের বাসায়?

—— জি বাসায় যখন আছে, যাবেই তো।

রেহা জুস খেলো। আয়েশ করে বসে বললো,

—— এই বউ সুন্দর তো? আমাদের বংশের তো আগে নাম ছিল, কোনো বউ ই অসুন্দর ছিল না। এখন তো আর সেই নাম টা রইলো না। যেখান থেকে পারে একেকটা ধরে নিয়ে এসে পড়ে।

তপসী রেহার কথার ইঙ্গিত বুঝলো না! বললো,

—— বৌদি কি বললে, বুঝলাম না।

রেহা গ্লাসের জুস পুরোটা শেষ করে ট্রেতে রাখলো। টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললো,

—— ওমা, এখন তো দেখছি তোমার রূপের সাথে বুদ্ধির ও ঘাটা আছে৷

তপসী একটু অবাক বনেই জিজ্ঞেস করলো,

—— মানে?

—— ও আর তোমার বুঝতে হবে না। যেয়ে দেখো আমার উনি কই গেল। এসেই ফুরুৎ হয়ে গেছে৷

তপসী উপরে চলে গেল দৌড়ে৷ এতো অপদস্ত হতে তো তার ভালো লাগে না। ঘরের আয়নার সামনে গিয়ে নিজের মুখের সকল খুত বের করার চেষ্টা করতে লাগলো। সুব্রত তখনই ঘরে ঢুকলো।

সুব্রত তপসীর পিছনে এসে দাড়ালো। বললো,

—— সত্যিই দেখছি বুদ্ধিতে ঘাটা আছে তোমার। অন্যের কথা শুনে ঘরে এসে নিজের মুখের খুৎ বের করার চেয়ে উত্তম তার কথার জবাবে তার মুখ বন্ধ করে দেওয়া। তুমি কিছু না বলে এমনি এমনি চলে আসলে?

তপসী অশ্রুসিক্ত চোখ নিয়ে বললো,

—— আপনাকে এসব কে বলেছে?

—— আমার তো নিনের কান আছে, চোখ আছে, নাকি?

—— আপনি দেখেছেন?

—— হু, দেখেছি এবং আশাহত হয়েছি৷ আমি এক্সপেক্ট করছিলাম তুমি রেহা কে কিছু একটা কড়া জবাব দিবে।

—— সে আমার বড়ো।

—— ধ্যাত, রাখো তোমার ছোট বড়ো, যার মন ছোট সে আবার বড়ো হয় কিভাবে?

—— আচ্ছা এখন এসব বাদ দিন৷

—— বাদ দিবো মানে? আসো আমার সাথে।।

সুব্রত তপসীর কথার অপেক্ষা না করেই তপসীর হাত ধরে টেনে ড্রয়িংরুমে রেহার সামনে গিয়ে দাড়ালো। রনিত উপর থেকে এই দৃশ্য দেখতে পেয়ে সেও নিচে নেম্র এসেছে!

রেহা সুব্রতকে দেখে বললো,

—— কি ব্যাপার? তোমার বউ কে মিট করাতে এনেছো? কিন্তু আমি তো আগে থেকেই চিনি।

সুব্রত বাকা হাসলো। হেসে বললো,

—— চিনো তো, তবে অন্য তপসীকে, এখন নতুন একজনক্স চিনতে পারবে৷

রেহা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

—— হোয়াট?

তপ্পসী বলে উঠলো,

—— আপনি এই বংশের নাকি রেহা বৌদি? এই সুব্রত, তোমার মাসতুতো ভাইয়ের বউ না সে? বংশের হয় বুঝি?, ওহ, আই সি, আপনি আমাদের বংশের বউ না বলেই বংশের নাম ডাক আছে। নয়তো এমন মাকাল ফলের প্রসংশা কে করে ভাই!

সুব্রত বললো,

—— গুড জব বউ।

রনিত পিছন থেকদ মৃদ্যু স্বরে জিজ্ঞেস করলো,

—— কি হয়েছে রে?

সুব্রত হাতের ইশারায় রনিতকে চুপ করতে বললো। রেহা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো,

—— সুব্রত তোমার মনে হয় না বেশি বেশি করো? বাড়ির মেহমান কে অপমান করা হচ্ছস!

—— মেহমান, মেহমানের মতো থাকতে শিখো৷ অন্যের ঘরের ব্যাপরে এন্টারফেয়ার করা বন্ধ করো তো।

চলবে…..

(মাথা ব্যাথায় চোখ খুলে তাকাতেই কষ্ট হচ্ছে। আর লিখতে পারছি না।)

চলবে………
চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here