নাম_না_জানা_এক_পাখি পর্ব ২৯+৩০+৩১

#নাম_না_জানা_এক_পাখি
লেখা: সাহিয়া সুলতানা
পর্ব: ২৯

৪৭.
তপসীর বাবা তার পরিবার নিয়ে চলে গেল বিকেলে। তপসী তুষার কে রেখে দিতে চেয়েছিল কয়েকদিনের জন্য কিন্তু নিতা কিছুতেই রাজি হয় নি। শেষে তপসীই আর কথা বাড়ায় নি। এই মহিলার কাছে কিছু অনুরোধ করতেও এখন তার বিরক্ত লাগে।

সবাই চলে গেলে তপসী তুলি কে নিয়ে ছাদে চলে গেল। ফুল গাছ গুলোতে জল দিবে। মাঝে মাঝেই সে এসে জল দিতে যায়। তার বেশ ভালোই লাগে। বাকি সময় কাজের এক মাসি দেয়।

তপসী হাটু মুড়ে বসে দোপাটি ফুলের বীজ দেখছিলো। তুলি হুট করেই দৌড়ে এসে তপসীর খোপায় গোলাপ ফুল গুজে দিলো। তপসীকে বললো,

—— বৌদিদি, এটা আমার গাছের পনেরো নম্বর ফুল। নাও, এটা যেন রাত পর্যন্ত তোমার মাথায় থাকে।

তপসী খোপার ফুল আলতো করে ছুঁয়ে বললো,

—— এই পাগল, এখন আমি খোপায় ফুল গুজে ঘুরবো মাকি?

তুলি ঠোঁট উলটে জিজ্ঞেস করলো,

—— ঘুরবে তো কি হয়েছে? দাদাবাবু তোমার খোপার ফুলের ঘ্রাণে পাগল হয়ে যাবে।

তপসীর ভ্রু কুঁচকে গেল সুব্রতের কথা শুনে। আজ সে ভীষণ বিশ্রী একটা কাজ করেছে। নিতাকে এ বাসায় এনেছে, এরপর তার কাছে তপসীকে ক্ষমাও চাইয়েছে।

তপসীর বিরক্তিতে মুখ তেতো হয়ে এলো। বললো,

—— পাকামো না করে বই পড় যা। লেখাপড়া নেই সারাদিন টৈ টৈ৷

তুলি তপসীর গলা জড়িয়ে ধরলো পিছন থেকে। হেলে দুলে জিজ্ঞেস করলো,

—— তোমার কি মন খারাপ বৌদিদি? তামার লবাড়ির লোক চলে গেছে বলে?

—— আমার বাড়ি কোনটা তুলি?

তুলি থতমত খেয়ে গেল। বললো,

—— এই বাড়িও, ওই বাড়িও।

—— উহু, শুধু এই বাড়ি। আমার বাড়ির লোক তোরা।

—— আহা, আমি এসব সম্পর্কের ফিরেস্তা বুঝি না। তুমি বলো মন কেন খারাপ?

—— আমি বলেছি আমার মন খারাপ? এতো বেশি বেশি বুঝার দ্বায়িত্ব কে দিয়েছে তোকে?

তুলি তপসীর গলা ছেডে দিলো। তপসী যে ভয়ানক ভাবে কোনো ব্যাপার নিয়ে আপসেট সেটা ভালোভাবেই বুঝতে পারছে সে। তুলি ছাদ থেকে নেমে গেল। তপসী আটকালো না তাকে। এখন সে একা থাকতে চায়। সামনে কেউ থাকলেই তার সাথে বাজে ব্যবহার করে ফেলবে সে।

৪৮.
সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে সূর্যের রক্তিম আভা। তপসী ছাদের কার্নিশেই পিঠ ঠেকিয়ে বসে রইলো। তুলি নিশ্চয়ই রাগ করেছে! নইতো আবার ফিরে আসতো।

তপসী তুলির জন্য কষ্ট পেল। বাচ্চা মেয়েটা ওতোকিছু বুঝে না, সরল মনেই তো জিজ্ঞেস করেছিল কি হয়েছে, তার এভাবে এতো রিয়েক্ট করা উচিৎ হয় নি।

তপসী নির্লিপ্ত ভাবে বসে রইলো। তুলি ফিরে এসেছে। হাতে একটা বাটি৷ তপসীর দিকে এগিয়ে এসে বললো,

—— বৌদিদি, আইসক্রিম খাও তো।

তপসী তুলির দিকে তাকালো। মেয়েটা একদম সরল সহজ। এই যে তপসী মাত্রই তাকে এতো কথা শুনালো সে মনে ধরে রাখে নি কেন!

তঅপসী তুলির গালে হাত রেখে বললো,

—— তুই খা। আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।

—— প্লিজ খাও৷ দাদাবাবু নিয়ে এসেছে। তোমার ফেভারিট বাটার স্কচ ফ্লেভারের।

—— খাবো না বলছি তো তুলি।

তুলি মুখ গোমরা করে ফেললো। কিছু বলার পূর্বের সুব্রত ছাদে উঠে এলো। জিজ্ঞেস করল্য,

—— কেন খাবে না? একটু খেলে সমস্যা কি?

তপসী তাতিয়ে উঠলো। সুব্রতকে দেখা মাত্রই তার সুপ্ত রাগ সারা দেহে ছড়িয়ে পড়লো। বললো,

—— অনেক সমস্যস আছে। কিন্তু একটা সমস্যাও আমি আপনাকে বলা জরুরি মনে করছি না।

তুলি ভয়ে ঢোক গিললো। সুব্রতের মুখের উপর এমন করে কাউকে কথা বলতে সেপ্প আজ প্রথম দেখল্য। একবার ভাবলো এখান থেকে লিয়ে যাবে। কিন্তু সে এখন নড়ার সাহসও পাচ্ছে না।

সুব্রত এক নজর তুলির দিকে তাকালো । তারপর তপসী কে বললো,

—— আসলে তোমার সমস্যা কোথায় তা তো বুঝতে পারছি তপসী। সামান্য ব্যাপারটাকে এতো বড় ইস্যু করে ফেলো না৷

—— যা আপনার কাছে সামান্য তা আমার কাছেও সামান্যই হতে হবে বুঝি? পরিধির মাপটাও এখন আমায় আপনি শিখিয়ে দিবেন।

—— তপসী আস্তে কথা বলো। মাথা গরম থাকলে সব সঠিকও ভুল মনে হয়। নিচে চলো।

—— যাবো না আমি সুব্রত। তুমি একবারো ভাবলে না, তোমার সম্মান বাঁচাতে তুমি আমায় নিতা আন্টির সামনে কতোটা নিচু করলে!

সুব্রত তুলির দিকে তাকালো। সে মাথা নিচু করে পায়ের নোখ দিয়ে ছাদে আঁকিবুঁকি করছে। সুব্রত চায় না, বাচ্চা মেয়েটার সামনে এতো আর্গু করতে। তাই তপসীকে আদেশের স্বরে বললো,

—— ঘরে চলো বলছি তপসী। নিজের ইচ্ছে মতো কাজ করার সুযোগ পাও বলে যে কারো কোনো কথাই শুনবে না, এমনটা তো হতে পারে না।

—— একই কথা টা আমি তোমাকেও বলতে পারি।

সুব্রত তপসীকে বললো

—— যা বলার ঘরে গিয়ে বলবে। সব শুননো, এখন চলো।

তপসী দ্রুত পায়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেল। সুব্রত ফোস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মঝে মাঝে তপসী বাচ্চাদের চেয়েও অবুঝ হয়ে যায়!
#নাম_না_জানা_এক_পাখি
লেখা: সাহিয়া সুলতানা
পর্ব: ৩০

৪৯.
তপসী হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে পুজোর ঘরে চলে গেলো। সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালিয়ে, ধুপ ধুনো দিতে সারা বাড়ি ঘুরে আসলো আবার পুজোর ঘরে। এরপর প্রনাম করে বের হয়ে গেলো।

সুব্রত ঘরে অপেক্ষা করছিলো তপসীর জন্য। কখন সে আসবে কখন তার মান ভাঙবে! পরশুই তো চলে যাবে সুব্রত। বউ এমন অভিমানী হয়ে থাকলে তো কাজে গিয়ে শান্তি পাবে না।

তপসী আসলো ঘরে সন্ধ্যার খানিক বাদে। সুব্রতের কফি নিয়ে এসেছে। সর্বদা হাসিখুশি থাকলেও তপসী এখন মোটেও হাসছে না। সুব্রত তাকিয়ে রইলো তার প্রেয়শীর দিকে। অভিমান করেও নিজের দ্বায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে ঠিকই।

সুব্রত তপসীকে জিজ্ঞেস করলো,

—— তোমার কফি কই বউ?

তপসী উত্তর দিলো না। অন্তত কিছু সময় সে সুব্রতের সাথে কথা বলবে না। তপসী এর মাধ্যমে বুঝাতে চায় সে কষ্ট পেয়েছে। ভীষণ কষ্ট যা সে বিয়ের পূর্বে বহুবার পেয়েছে কিন্তু এখন বিয়ের পরেও পেতে হবে তা ভাবে নি।

সুব্রত জানতো উত্তর পাবে না। আবার বললো,

—— আর কতো রাগ করে থাকবে?

তপসীর মেজাজ এবার তুঙে চড়লো। জিজ্ঞেস করলো,

—— রাগ করে আছি আমি? মনে হচ্ছে আমি রেগে আছি?

সুব্রত ভড়কে গিয়ে বললো,

—— আমি তো এমনিতেই বলছিলাম আরকি। ইয়ার্কি করছিলাম। তুমি তো খুব শান্ত। আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে শান্ত মেয়ে। সবচেয়ে শান্ত বউ।

তপসী চোখ রাঙিয়ে তাকালো সুব্রতের দিকে। সুব্রত যখনই বুঝতে পারলো বেশি বলে ফেলেছে চুপ করে গেল।
তপসী রাগে ফোস ফোস করতে করতে বিছানা ঠিকঠাক করতে লাগলো। সুব্রত লাফিয়ে বিছানায় উঠে বসলো। বললো,

—— বউ গো, আমি মোটেও জানি না কিভাবে মেয়েদের রাগ কমাতে হয়। প্লিজ একটু টিপস দেও।

—— আপনার কি মনে হচ্ছে আমি মশকরা করার মুডে আছি?

—— তোমার মনে হচ্ছে আমি এতোক্ষণ ধরে মশকরা করছি?

—— আপনি কখন কি করেন তা আমি কখন ই বা বুঝতে পারি। বুঝতে পারলে তো আর আমার এই দিন দেখতে হতো না!

—— আ’ম সরি। সেই সময় মনে হয়েছে উনার কাছে সরি বলে ব্যাপারটা রফাদফা করে দিলেই মিটে যাবে৷

—— আপনি কেন এনেছিলেন ওনাকে বাড়িতে? যার সাথে রক্তের সম্পর্ক নেই সে মা হয় না।

—— এটা ভুল বলছো তপসী। রক্তের সম্পর্ক সব সময় ম্যাটার করে না। আমাদের তুমি যেভাবে আপন ভসবতে পারছো, সেই ভাবে শুধুমাত্র বাবার স্ত্রী সম্পর্ক ধরেও মা ভাবা যায়।

—— আপনার সাথে হয় নি তো, হলে অবশ্যই বুঝতে পারতেন।

সুব্রত নির্লিপ্ত হয়ে গেল। অনেক কিছু বলতে চাইলো। কিন্তু বলতে পারলো না। শুধু বললো,

—— চেষ্টায় কমতি রাখতে হয় না৷

—— আপনার মনে হয় আমি চেষ্টা করি নি? সদ্য মা হারা মেয়ে তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীকে যখন মা হিসেবে কাছে টানতে চায় এবং বিনিময়ে শুধু অবজ্ঞা পায়, তাকে কতোটা আপন ভাবা যায়?

—— তপসী, দেখো আমি বুঝতে পারছি। এন্ড আ’ম সরি। আমি চাই নি কোনো ঝমেলা হোক।

—— আমিও চাই নি। আমি চাই নি আমার বাড়িতে আমার আন্টি, আমার বাবার স্ত্রী আমারই কারনে অপমানিত হোক। এটা কোনো বাড়ির বউ চায় না। শুরুটা উনি করেছিলেন আমি শুধু জবাব দিয়েছি। আর আপনিই তো আমার বলেছেন, সব অযৌক্তিক কথার যোগ্য জবাব দিতে। তাহলে তখন কেন নিজের কথা ঘুরিয়ে নিলেন?

—— সব সময় অবুঝ হলে তো চলে না। চলবে না। যিনি মা তিনি অবশ্যই সম্মানের যোগ্য। হোক সে যেমনি।

—— বুঝতে পেরেছি। আমি মানছি আমার ভুল হয়েছে কিন্তু মন মানছে না, প্লিজ একটু একা থাকতে দিন।

—— তপ,,,,,

তপসী বারান্দায় চলে গেল। সুব্রতের রাগ হচ্ছে। একজন মানুষ এতো অবুঝ হলেও চলে না। একটা ব্যাপার নিয়ে এতো কেন ভাবতে হবে। যা ঘটে গেছে তা গেছে৷ সেটা নিয়ে ভাবলেই পরিস্থিতি বদলে যাবে না৷ সুব্রত কফির মগে চুমুক দিল। একদম ঠান্ডা হয়ে গেছে। বিরক্তির পর্যায় এবার বেড়ে গেলো। ধপ করে কফির মগ টেবিলের উপর রাখলো।

বিছানায় হাত পা মেলে শুয়ে পড়লো। এবার সে তপসী কে আর কিছুই বলবে না। সে যা ইচ্ছে করুক। সুব্রত তার যথা সম্ভব চেষ্টা করেছে।

,
তপসী মিনিট দশেক পর ঘরে এলো। চোখ জোড়া লাল তার। নিশ্চুপে কান্না করে এসেছে সুব্রত তা বুঝতে পারলো। সুব্রত উঠে বসলো। মনের রাগ গলে পানি হয়ে গেলো।

আদুরে গলায় বউকে বললো,

—— নাকে কি টমেটো চাষ করছো নাকি আজকাল?

তপসী হেসে ফেললো। তপসী মন অনেকটা বদলেই সুব্রতের সামনে হাজির হয়েছে। যতোটা রাগ দেখানোর ছিল দেখিয়েছে৷ এখন নিজেরই রাগ করে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। সুব্রতের সামনে গিয়ে বসলো।

সুব্রত মৃদ্যু হেসে তপসীর নাক চেপে ধরলো। তপসী ছিটকে একটু দূরে চলে গেল। সুব্রত নাক কুচকে বললো,

—— অ্যাহ, সর্দি লাগিয়ে দিয়েছো হাতে।

তপসী শাড়ির আঁচল এগিয়ে দিলো। তপসী বললো,

—— নাও, হাত মুছো। এই জন্যই দূরে চলে আসলাম তো। তুমি নাকে হাত দিবে কে জানতো?

—— আর কোথায় হাত দিবো?

—— অসভ্য!

সুব্রত হাসলো। হাত এর চিন্তা বাদ দিয়ে তপসীকে জড়িয়ে ধরলো। চোখ বন্ধ করে ঘাড়ে চুমু খেল। ঘাড়ে ঠোঁট লাগিয়েই বললো,

—— সরি, সরি, সরি। আই এম সরি।

তপসী নিজের ঠোঁট কামড়ে দুষ্টুমি করে বললো,

—— আই এম তপসী, মি.সরি৷

সুব্রত শব্দ করে হেসে দিলো। এবার তার ভাল লাগছে। মন হালকা লাগছে, আর হৃদয় ভালোবাসছে।
#নাম_না_জানা_এক_পাখি
লেখা: সাহিয়া সুলতানা
পর্ব: ৩১

৫০.
সুব্র‍ত ক্যান্টনমেন্ট এ ফিরে গেছে সপ্তাহ দুয়েক হবে৷ রনিতও আবার পাড়ি জমিয়েছে আমেরিকা। পুনরায় সেই একাকী জীবন পাড় করতে শুরু করলো তপসী।

নোটিশ পাওয়া গেল তপসীর রেজাল্টের। রেজাল্ট পাবলিশড হবে। সবাই এক্সাইটেড থাকলেও তপসীর মধ্যে বিশেষ কোনো ভাবান্তর লক্ষ্য করা গেল না। এমনকি সুব্রত কে সে প্রথমে জানায় ও নি নোটিশের কথা। সুব্রত নিজেই জানতে পেরেছে৷

,
রেজাল্টের দিন সকাল থেকেই সবার উৎকণ্ঠা চরম পর্যায়ে। সবাই অনেক আশা করে বসে আছে, যে তপসী চান্স পাবে। শুধু একমাত্র তপসীর মনেই কোনো আশা ভরসা নেই।

তপসীর ভীষণ খারাপ লাগছে। সবাই কেমন চিন্তিত মুখে বসে আছে। কর্মদিবসেও সুব্রত দুই বার ফোন করে খবর নিয়েছে কেমন সব বিষয় আষয়।

তপসীর বাবাও একবার কল করেছিলো। ফোনের অপরপাশ থেকে তপসী নিতার তীক্ষ্ণ আওয়াজ শুনতে পেল।

—— এই মেয়ের জীবনেও হবে না।

তপসী কিছুই বলে নি। এবার প্রথম তপসীর নিজের পক্ষে বলার কিছু খুজে পেল। সত্যিই হবে না হয়তো।তপসী রেজাল্ট জেনে আসলো।

স্বভাবতই তপসী জানতো সে চান্স পাবে না, সে পায় ও নি। তবে ভীষণ কষ্টে পা টলমল করছিলো। বহু কষ্টে সে ঘর পর্যন্ত হেটে এসেছে। তপসীর শ্বাশুড়ি ঠাকুর ঘর থেকে দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করলো,

—— কিরে মা, রেজাল্ট কি?

তপসো ম্লান মুখে বললো,

—— হয় নি। আগেই বলেছিলাম আমার দ্বারা হবে না। তোমরা শুধু শুধু আমায় নিয়ে চেষ্টা করে গেলে। আমি এর বিনিময়ে শুধু তোমাদের নিরাশই করলাম। এতোগুলা টাকা বিফলে ফেললাম।

তপসীর শ্বাশুড়ির মন ব্যাথিত হলো প্রচুর। তবুও মুখে স্বাভাবিক ভাব বজায় রেখে তপসীকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরলো।

পরম মমতা জড়ানো কণ্ঠে বললো,

—— নিরাশ হওয়ার কিছু হয় নি। ভগবান তোমার ভাগ্যে রাখে নি তাই হয় নি। হয়তো অন্যকিছু আছে তোমার ভাগ্যে।

—— আমি আর আমার ভাগ্য পরখ করতে চাই না।

সুব্রতের মা কিছু বললো না। মেয়েটাকে সময় দেওয়া দরকার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। কোনো এক ব্যার্থতায় জীবন থেমে থাকে না। তপসীর জীবনও নিশ্চয়ই থেমে থাকবে না।

সুব্রতের মা তপসীর কপালে চুমু দিয়ে ঘর থেকে চলে গেল। আবার ফিরে এসে বললো,

—— সুব্র‍ত কে জানিয়ে দাও, হয়তো টেনশন করছে।

তপসীর বুক ব্যাথায় কুকড়ে যেতে লাগলো। সে বিয়ের পর সুব্রত কে বিশেষ কোনো সুখ দিতে পেরেছে কিনা সে জানে না, তবে হয়তো কোনো ইচ্ছায় পূরণ করতে পারে নি। এতো দূরে থাকা স্বত্তেও পাশে থাকার মতো সবটা করে গেছে।
কিন্তু ফলাফলে সুব্রতের ঝোলা শূণ্য। তার স্ত্রী তার ইচ্ছা পূরণ করতে ব্যার্থ।

তপসী মোবাইল ফোন হাতে নিলো। সুব্রতকে কল করতে হলো না। সে নিজেই কল করলো। তপসী রিসিভ করে কানে লাগালো।

সুব্রতই বললো,

—— রেজাল্ট চেক করেছো?

তপসী জবাব দিলো,

—— হুম।

—— কি হয়েছে? দ্রুত বলো তপসী।

—— হয় নি, কিছুই হয় নি। আমি বলেছিলাম না, আমি অযোগ্য, আমি সত্যিই অযোগ্য। আজ পর্যন্ত কোনো কাজে সফল হই নি। কাউকে খুশি করতে পারি নি। আপনাকেও বিয়ে করে শুধু কষ্টই দিয়ে গেলাম।

সুব্রত চুপ করে রইলো খানিক সময়। বললো,

—— কে বললো আমি অসুখী?

—— বলতে হয় না, বুঝা যায়। এইযে আপনার কলিগ দের সবার ওয়াইফ হয়তো লাইফে খুব সাকসেসফুল, কিন্তু আমি কি? আমি কিছুই না। একটা ফেইলিউর। যে কোনো কিছুতেই যোগ্যতা অর্জন করতে পারে নাই।

—— তপসী শান্ত হও। এসব ম্যাটার করে না। আমি যাস্ট তোমার এস্টাবলিশমেন্টের জন্য এসব করেছি। থাকগে, এটা তে হয় নি অন্য কিছুতে হবে। গ্র‍্যাজুয়েশন কমপ্লিট করো, এরপর বুঝা যাবে।

—— করতে হবে না৷

সুব্রত না বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করলো,

—— কি?

—— গ্র‍্যাজুয়েশন কমপ্লিট। আমার এসব লাগবে না।

—— আমার লাগবে। তুমি অবশ্যই আরো পড়বে।

তপসী খানিক বিষন্ন হলো। হয়তো সুব্রত তার সম্মানের কথা ভেবে পড়াতে চাচ্ছে। আবার নাও হতে পারে।

সুব্র‍ত বললো,

—— আপসেট কেন হচ্ছো?

—— একটা বছর গ্যাপ দেই!

—— আজব, গ্যাপ দেওয়া প্রশ্ন কেন আসছে?

—— আমার কিছুই ভালো লাগছে না। মনে হচ্ছে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমি এটলিস্ট কয়েকদিন রেস্ট নিতে চাই।

—— ভর্তি হতেও সময় লাগে, তুমি সময় পেয়ে যাবে, টেনশন নিচ্ছো কেন?

—— আপনি কেন বুঝচ্ছেন না? আমি পারছি না? আমার আপনাকে দরকার আমার পাশে এই মুহূর্তে, কেন বুঝছেন না? আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। লিটারিলি, আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।

—— তপসী শান্ত হও। এখন আসা পসিবল না। আমি দূরে থেকেও তোমার পাশে আছি সবসময়। তুমি আজকে এখন একটু ঘুমাও। রাতে কল করবো। একদম সব চিন্তা মাথা থেকে ঝেরে ফেলো।

—— আচ্ছা। আপনি খেয়াল রাখবেন আপনার। রাতে কথা হবে।

,
,
তপসী টুকটাক কাজ করতে লাগলো। কেউই রেজাল্ট নিয়ে কোনো কথা বলে নি আর। তপসীর মন যে ভালো নেই সবাই তা বুঝতে পারছে, তাই কেউই কথা বাড়ায় নি।

তপসী নিজেও বুঝতে পারছে তার কারনে পরিবারে একটা থমথমে অবস্থা। তাই রাতের খাবার সে যলদি খেয়ে উপরে চলে গেল। বিছানায় শুয়ে সুব্রতের কলের অপেক্ষা করতে করতেই ঘুমিয়ে গেল।

সুব্রত কল করলে ঘুম থেকে উঠে তপসী। টুকিটাকি কথা বলতে থাকে। মন তার বিষন্নতার আচ কাটাতে পারছে না। হঠাৎই তপসীর সুহানার কথা মনে হলো। জিজ্ঞেস করলো,

—— আপনি সুহানা দি’র সাথে কথা বলেছেন?

—— আমি কেন কথা বলবো?

—— আহ, আপনাকে বলেছিলাম না কথা বলে ব্যাপারটা ক্লিয়ার করে নিতে।

সুব্রত গম্ভীর গলায় বললো,

—— দেখো তপসী আমি কোনোধরনের কথা বলতে পারবো না। সে নিজ থেকে চাইলে অন্য কথা৷ কিন্তু আমি কোনোভাবেই মানতে পারি না সে ভালো হয়ে গেছে, ইভেন ভালো হতে পারে!

—— তাহলে বিয়ে কেন হতে দিচ্ছেন?

—— রনিত খুবই ক্লিয়ার মাইন্ডের একজন ছেলে। সে যেহেতু সুহানার সাথে বিয়ে পর্যন্ত এগিয়েছে তাহলে সে নিশ্চয়ই সুহানার ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত তাই সেখানে আমি হস্তক্ষেপ করতে চাইছি না। আর তাছাড়াও আমাদের কোনো ক্ষতি করতে চাইলে সে বাড়ির বউ হয়ে বেশ সুবিধা করতে পারবে না।

—— যতোক্ষণ পর্যন্ত সন্দেহ মনে থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত কেন কোনো চান্স নিতে যাবো? রনিতদা’র লাইফের ব্যাপার। সুহানাদি কিছু প্লান করে থাকলে তার জীবন টা নষ্ট হয়ে যাবে৷

—— জীবন নষ্ট হবে না। তুমি বেশি চিন্তা করো না। অসুস্থ হয়ে পরবে৷ তোমার এতোটুকু মাথায় এতো কিছুর প্রেশার কে নিতে বলেছে?

—— আমি এ বাড়ির বড় বউ, আমাকে কাউকে বলে দিতে হবে না আমার দায়িত্ব কর্তব্যের কথা।

—— আচ্ছা বাবা সরি। ঘুমাও। রেস্ট নাও, টেনশন কমাও। অতিরিক্ত টেনশন হচ্ছে হাজারটা রোগের প্রধান উপকরণ।

—— এখন মি.আর্মি ম্যান, আমার মি. ডাক্তার ম্যান হয়ে গেছে৷

—— তুমি সবসময় আমার সাথে এমন করো। শুধু বাচ্চা মেয়ে বলে কিছু বলি না।

—— ওহ তাই? যদি বাচ্চা না হতাম তাহলে কি করতেন?

—— কি করতাম! অনেক কিছু করতাম।

—— বলো বলো কি করতে?

—— এখন বলবো না, নেক্সট টাইম বাসায় এসে বলবো। ওকে বেইব?

—— যলদি চলে আসো তো। আমিও তোমার জন্য স্পেশাল কিছু প্লান বানাচ্ছি।

—— স্পেশাল?

—— অনেক স্পেশাল।

—— ইচ্ছে করছে এক্ষুনি চলে আসি।

—— আমিও তো বলছি, আসো আসো।

চলবে..……….…
চলবে…..

(ফ্যামিলি প্রবলেম চলছে। নেহাৎ ই আমি আর মিস দিতে চাই না, তাই ছোট করে হলেও এতো রাতে যতটুকু পেরেছি লিখে দিয়েছি। আশা করছি আমার অবস্থা টা মাথায় রাখিবেন।)
চলবে…..…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here