নাম_না_জানা_এক_পাখি পর্ব ৩২+৩৩+৩৪

#নাম_না_জানা_এক_পাখি
লেখা: সাহিয়া সুলতান
পর্ব: ৩২

৫১.
তপসীর মনের অবস্থা ঠিক করতে সুব্রত তপসীকে বেশি সময় দেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু তপসীর এমন অতিরিক্ত কেয়ার ভাব ভালো লাগছে না৷ সে যে মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে গেছে, সুব্রতের এমন যত্ন দেখলে তা তার বার বার মনে পড়ে।

তপসী সুব্রতের ফোন কল রিসিভ করা কমিয়ে দিলো। কথার মাঝে হুট করেই চুপ হয়ে থাকে যেন সুব্রত বুঝতে পারে সে ঘুমিয়ে গেছে। রাতের বাকিটা সময় সে এপাশ ওপাশ করতে করতেই কাটিয়ে।

একাকী থাকতে বেশ লাগে তপসীর। ইচ্ছে মত হাসা যায় কান্না করা যায়, যা ইচ্ছে আব করা যায়।
ইদানীং খাবারের প্রতি বেশ অনীহা দেখা দিয়েছে তার। সুব্রতের মা সারাদিন চেষ্টায় থাকে মেয়েটার মন ভালো করতে, কিন্তু কিছুতেই পারেন না।।

সুব্রতের মা বুঝতে পারেন তপসীর এখন সুব্রত কে কাছে দরকার। শুধু কানে ফোন লাগিয়ে ‘আমি পাশে আছি’ বলাটাই যথেষ্ট না। তপসীর জন্য এখন প্রয়োজন হাতে হাত রেখে পাশে থাকা। যেটা সুব্রত চাইলেও করতে পারছে না।

সুব্রত তপসীর শারীরিক ও মানসিক অবনতির ব্যাপারে বেশ চিন্তিত হয়ে গেল। বাড়ি যাওয়ার জন্য ছটফিট করতে শুরু করলো। কিন্তু সে নিরুপায়। কিছুদিন আগেই এতো ছুটি কাটিয়েছে যে এখন চাইলেই আর ছুটি নেওয়া সম্ভব না।

,
,
রাতের খাবার খেতে বসেছিল সুব্র‍ত। তপসীর সাথে আজ কথা হয় নি। মূলত তপসী ফোন পিক করে নি। সুব্রত বার পাঁচেক ট্রাই করেছিল কিন্তু তপসী রিসিভ করে নি। হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে ভেবেই সুব্রত খাবার খেতে বসেছিল।

সুব্রতের বাবার নাম্বার থেকে কল আসলো। সুব্রত আতকে উঠলো বাবা সাধারণত নিজ থেকে ফোন করে না। আজ ফোন করেছেন নিশ্চয়ই কোনো বিশেষ দরকারে! তপসীও ফোন পিক করেনি, কোনো দুঃসংবাদ নয়তো!

হাজারো চিন্তা মাথায় নিয়ে সুব্রত ফোন কানে লাগিয়ে বললো,

—— হ্যালো বাবা!

—— সুব্রত!

কর্কশ গলায় ছেলের নাম নিলেন সুব্রতের বাবা। বাবার এমন গম্ভীর আওয়াজে সুব্রতের মন উথাল পাথাল করতে লাগলো।

সুব্রত জিজ্ঞেস করলো,

—— কেমন আছো, বা…..বা।

—— কুশল বিনিময় পরে হবে সুব্রত। বউমা ভীষণ অসুস্থ। আমরা এখন হাসপাতাল আছি।

সুব্রতের সারা দুনিয়া কেঁপে উঠলো। তার বউটার কি হয়েছে! কি এমন চিন্তা ভাবনা করেছে যে শরীরের এই হাল বানয়েছে?

সুব্রত কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো,

—— কি হয়েছে বাবা, তপসীর?

—— সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলো। এখন ডাক্তার চেক আপ করছে। কি হয়েছে এখনো জানি না৷

—— সেন্সলেস কেন হবে বাবা?

সুব্রত উন্মাদের মতো বলে উঠলো। হাসপাতে ভর্তি তপসী? সেন্সলেস হয়ে গেলো! এতোটা অনিয়ম করেছে সে।

সুব্রত আবার বললো,

—— তুমি আমায় যলদি ইনফর্ম করো বাবা৷ আমি দেখছি ছুটি নেওয়া যায় কিনা!

—— এখনই ছুটি নিতে হবে না৷ তুমি তোমার খেয়াল রেখো। তপসীর জন্য এখানে আমরা আছি৷ তোমার খেয়াল কে রাখবে বাবা?

—— বাবা আমার ভালো লাগছে না। চিন্তা হচ্ছে খুব!

—— আমি পরে কথা বলছি। তুমি লাইন রাখো।

,
ডাক্তার এসে জানালেন অপুষ্টির কারণে এমন হয়েছে। দীর্ঘদিন পরিপূর্ণ খাবার দাবারের অভাবে এমন হয়েছে।

সুব্রতের মা জিজ্ঞেস করলো,

—— আমরা ওকে কবে নিয়ে যেতে পারবো?

ডাক্তার স্মিত হেসে বললো,

—— আজকে রাত টা থাকুক, কাল নিয়ে যেতে পারবেন। খাবারের দিকে একটু খেয়াল রাখবেন। আর দেখবেন যেন মেন্টাল স্ট্রেস থেকে মুক্ত থাকে৷

—— ঠিকাছে ডাক্তার। আমরা খেয়াল রাখবো।

৫৩.
সুব্রত রাত বারোটার দিকে ফোন করলো আবার। সুব্রতের মা এবার কল পিক করে কানে তুলে নিলো৷ সুব্রত জিজ্ঞেস করলো,

—— কেমন আছে ও?

—— মোটা মুটি সুস্থই। কাল সকালেই বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবো৷

—— কি হয়েছিল ওর?.

—— তেমন কিছু না৷ ডাক্তার বললো, অপুষ্টি জনিত কারন। অপুষ্টির জন্যই সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে।।

—— ওহ! খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করিয়ো মা৷
আমি আসতে পারবো না এখন।

—— হ্যাঁ হ্যাঁ আমি খেয়াল রাখবো, তুই চিন্তা করিস না, বাবা।

—— চিন্তা তোমায় নিয়ে না, তপসীকে নিয়ে। এই মেয়ে ইদানীং কোনো কথাই শুনতে চায় না।

—— স্বামী পাশে না থাকলে এখনকার বউ রা তো নাওয়া খাওয়া ভুলে শুধু স্বামীর সাথে কথা বলে। সে ক্ষেত্রে তপসী ভালো আছে। সব দ্বায়িত্ব বলার আগে তপসী তা নিজেই পালন করে দেয়।

—— সব ক্ষেত্রে তো এক না৷ খাবার এর দিকে খেয়াল রেখো৷ রাখো এখন৷
#নাম_না_জানা_এক_পাখি
লেখা: সাহিয়া সুলতানা
পর্ব: ৩৩

৫৩.
অনেকটা যত্নে তপসী সুস্থ হয়ে উঠছিলো। তবে কথা বলার সময় আগের মতো চঞ্জলতা আর খুঁজে পায় না সুব্রত। এতো কেন বদলে গেলো মেয়েটা?

সুব্রত ছুটি নেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। বাসায় গিয়ে তপসীকে ভাল একটা মনোচিকিৎসক দেখাতে হবে। মেয়েটা হয়তো ডিপ্রেশড।

,
তপসীর এখন দিনের বেশির ভাগ সময় কাটে বারান্দায় বসে। একলা মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগে। কতো রকমের পাখি উড়ে যায়। কতোকগুলোর নাম জানা, কতোকগুলো নাম না জানা৷

একদিন দুপুরে তপসী বসে ছিল ব্যালকনিতে। আনমনে তাকিয়ে ছিল আকাশপানে। চোখের পলক কি ফেলছিলো, নাকি স্তব্ধই ছিল চোখের চাহনী, তার ইয়াত্তা নেই।

ফোনের রিংটোন শুনে তপসী ঘরের দিকে তাকালো। চলে গেল ঘরে। বিছানার উপর থেকে ফোনটা নিয়ে নিলো হাতে।
আনসেভড আমেরিকান নম্বর। তপসী অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো,

—— রনিত দা!

তপসী কল রিসিভ করে কানে লাগালো। রনিত খুব উৎফুল্ল মেজাজে। হাসি খুশি ভাবে বললো,

—— হেই সুইট বৌদি, গুড মর্নিং।

তপসী হাসলো না। গাম্ভীর্যতা নিয়ে বললো,

—— ইট’স গুড নুন, রনিত দা।

রনিত জোরে হাসলো। বললো,

—— তোমার টা তুমি বললে আমার টা আমি।

—— একই হলো।

রনিত একটু খুক খুক আওয়াজ করলো। দুষ্টুমি ভরা গলায় বললো,

—— শুনলাম আমার শোকে নাকি কাঙালি হয়ে গেছো তুমি? ইস রে, সুব্রত দা জানলে কি কষ্ট টাই না পাবে।

তপসী হাসলো। বললো,

—— হ্যাঁ গো। আমিও এতো দিনে বুঝলাম তোমার শোকেই আমার কিছু ভালো লাগছে না। এখন তো শুধু তোমার দেশে আসার অপেক্ষা, এরপরই কাঙালি ভোজের রমরমা ব্যবস্থা করবো৷

—— কি যে বললে, বুঝলামই না৷

—— বুঝতে হবে কেন? পুরুষরা সবসময়ই বুঝতে চেষ্টা করে, কিন্তু দরকারের চেয়ে অদরকারী বেশি৷

—— তুমি কি হুট করেই ভাবুক প্রকৃতির হয়ে গেলে নাকি?

—— নাহ। মনে হয় না। তোমার কি আজ অফ ডে?

—— উম, উটস সানডে৷

—— সানিডে মিনস ফানডে, রাইট!

—— বিদেশ বিভূঁইয়ে অনেকটা।

—— তারপর বলুন মি. রনিত দেশে আসার পরিকল্পনা করলেন কবে?

—— আপাতত আসছি না বৌদি৷

—— আমি তো উৎসব পালনের জন্য মুখিয়ে আছি। কবে তোমার বিয়ে লাগবে, কবে আমি আবার সবাইকে একসাথে দেখতে পারবো। আর তুমি বলছো আপাতত আসছো না?

রনিত যেন দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তপসী যেন শুনতে পেল ফোনের এপাশ থেকেই। তপসী আবার জিজ্ঞেস করলো,

—— তুমি কি কোনো ব্যাপারে আপসেট রনিত দা?

—— ঠিক আপসেট না৷ তবে তোমায় অনেক কথাই নির্দ্বিধায় বলতে পারি৷ এখনও চেয়েছিলাম বলতে, কিন্তু তুমি তো এখন অসুস্থ, পরে একদিন বলবো নাহয়।

—— পরে একদিন কেন? এখনই বলো। আর আমি মোটেও অসুস্থ না, শুধু কথা বলতে ওতো ভালো লাগে না এখন।

—— তুমি কি বিয়ে করে সুখী আছো তপসী?

তপসী এমন প্রশ্নের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। যদিও সে সুখি, হ্যাঁ দিব্যি সুখি। একজন মেয়ে যেমন স্বামী আশা করতে পারে, সে তার চেয়ে কয়েক গুন বেশি ভালো স্বামী পেয়েছে। শুধু ওই দুরত্বটাই একটা কমতি।

কিন্তু এই ব্রক্ষ্মান্ডে কোনটাই বা পরিপূর্ণ? যেই চাঁদের রূপে মোহিত হয়ে যায় সবাই, সেই চাঁদও তো অপূর্ণ। তারও তো ষোলো কলার এক কলা নেই। সেখানে জীবনে পরিপূর্ণ সুখী হওয়ার স্বপ্ন দেখা টা নিছকই বোকামী৷

তপসী মৃদ্যু হেসে জবাব দিলো,

—— এসব কি বিয়ের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ হচ্ছে?

—— বিয়ে টা কি এতোটাই জরুরি? বিয়ে না করে কি জীবন পাড় করা যায় না?

তপসীর কপাল কুঁচকে গেল। রনিতের কিছু একটা হয়েছে তা আঁচ করতে পারছে। কিন্তু কি হয়েছে? তপসী কিউরিওসিটি থেকেই জিজ্ঞেস করলো,

—— তোমার কি কিছু হয়েছে রনিত দা? ইউর ভয়েস সাউন্ডস লিটল বিট আপসেট।

—— বললাম তো ঠিক আপসেট না। হঠাৎ করে যখন কোনো এক টা বহু পরিচিত সত্যিটা মিথ্যায় রূপান্তরিত হয় তখন মনে কোনো অনুভূতিই থাকে না। থাকে না কোনো চিন্তার লেস মাত্র।

—— তুমি আমায় একটু খুলে বলো তো কি হয়েছ!

রনিত টিপ্পনী কেটে বলল,

—— কি খুলবো হ্যাঁ?

—— আমার তোমার বৌদি লাগি বুঝলে, এমন ফাজলামো আমার সাথে করবে না।

—— তাহলে দেবররা কার সাথে ফাজলামো করবে শুনি?

—— তুমি এসব বলে কথার টপিক চেঞ্জ করতে চাচ্ছো!

—— না তো। আচ্ছা রাখি, আমার ব্রেকফাস্ট রেডি, খেয়ে আসি। পরে কল করবো।

—— জানি আবার কল করতে এতোই দেরি হবে যে আমরা আজকের কনভারসেশন ভুলে যাবো। তবুও ফোন করো। মন্দ লাগলো না কথা বলতে।

—— আচ্ছা বৌদি। রাখছি।

৫৪.
রনিত ফোন রেখে দিতেই তপসীর কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো। রনিতের কিছু একটা হয়েছে, কিন্তু এ ব্যাপারে কাকে জিজ্ঞেস করবে? কার ক্সছে খোঁজ নিবে সে!

রাতে সুব্রত ফোন করলো তপসীকে। সুব্রতের কল দেখেই তপসীর মন ভার হতে উঠতে লাগলো৷ সারাদিন সে চিন্তা করে সুবত কে স্বামী হিসেবে পেয়ে সে ধন্য, সামান্য শারিরীক দুরত্ব কোনো ব্যাপারই না।কিন্তু তার কল আসলেই মনের গহিনে দুরত্বের পরিমাপটা উঁকি দিতে থাকে। তখন শুধুই মনে হয়,
“কেন সে এত দূরে!”

ফোন রিসিভ হতেই সুব্রত জিজ্ঞেস করলো,

—— সারাদিন ঠিকমতো খাবার খেয়েছো? ঔষধ খেয়েছ? ঘুমিয়েছিলে দুপুরে?

তপসী গম্ভীর হয়ে বললো,

—— জোর করে বানানো রোগীর কাছে সবচেয়ে বিরক্তিকর মনে হয় ডাক্তারকে। কারন সে জেরা করে, ঔষধ খেয়েছি কিনা ভ্লা ভ্লা। এখন আপনিও কি চান আমি আপনার নাম ডায়েরিতে টুকে রাখি?

——আমি তো জিজ্ঞেস করবোই। তুমি এবার ডায়েরি তে টুকে রাখলে আমার আরো সুবিধা।

—— কিসের সুবিধা?

—— হিসেব থাকলো আরকি!

—— বাদ দিন তো।

—— আচ্ছা বাদ দিলাম। তোমার কি আজ মন ভালো?

—— উম, মন আমার সবসময়ই ভালো থাকে ৷

—— আচ্ছা মানলাম। আজ থেকে চুপচাপ থাকা চলবে না বউ।

—— কেন কেন?

—— কারন তোমার গলার স্বর খুবই সুন্দর তো, তাই আকুপাকু করতে থাকি তোমার গলার আওয়াজ পাওয়ার জন্য৷

—— একা থাকলে শরীরও ভালো লাগে না, মনও না।

——আমরাও একা থাকি। আমি, রনিত। আমাদের শরীর মন দিব্যি ভালো।

রনিতের নাম শুনেই তপসীর দুপুরের কথা মনে পড়লো। সুব্রত কে বলল,

—— রনিত দা আজ কল করেছিল। তার কি সুহানার সাথে কিছু হয়েছে? কেমন কেমন কথা বলছিলো।

—— আমি তো এ বিষয়ে কিছু জানি না। তুমি নিজেও আবার জিজ্ঞেস করে নিয়ো। হতেও পারে কিছু ঝামেলা। কারন মেয়েতো অনেক সুবিধার।
#নাম_না_জানা_এক_পাখি
লেখা: সাহিয়া সুলতানা
পর্ব: ৩৪

৫৫.
তপসী ছাদে দাঁড়িয়ে দক্ষিণা হাওয়া উপভোগ করছিলো। রঙ্গন ফুলের গাছটাতে ঝোপা ঝোপা ফুল ধরেছে। তুলির বোনা গাছ এটা!

তুলি তার গ্রামের বাড়ি এক দূরসম্পর্কের আত্নীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়েছে। মেয়েটা বাসায় থাকলেও হয়তো তপসীর এতো একাকী লাগতো না৷ ইদানীং তুষারকেও মনে পরে ভীষণ।

তপসীর ইচ্ছা হলো তার বাপের বাড়ি থেকে কয়েকদিন ঘুরে আসতে। সারাদিন অবসর কাটাতে তার ভালো লাগে না। এইজন্যই বোধহয় আরো বেশি অসামাজিক হয়ে পড়ছে সে। যেটাকে এক প্রকার অসুখ ভেবে নিয়েছে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন।

তপসীর নিজেরই মাঝে মধ্যে লজ্জা লাগে। সারাদিন একা থাকতে থাকতে এখন তার কথাই বলতে ইচ্ছে করে না। হয়তো অভ্যাস হয়ে গেছে। তাই তপসী নিজেকে নিজে বদলাতে চেষ্টা করবে এখন থেকে।

,
সুব্রত ফোন করলো রাতে। তপসীই উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

—— শুনো, আমি কি বাবার বাড়িতে যেতে পারি?

—— তুমি কি আমার কাছে পার্মিশন চাইছো?

—— জানাচ্ছি তোমায়। কারন আমি জানি তুমি কখনো না করবে না, উপরন্তু তুমিই তো কতো করে বলছিলে সামান্য বেড়িয়ে আসতে।

—— আচ্ছা যাবে। কিন্তু ক’দিন থাকবে?

—— বাপের বাড়ি কি আর হাতে গুনে দিন দেখে যায়, আসে? আমার যতদিন মন টিকবে ততদিনই থাকবো।

—— আশা করি বেশিদিন টিকুক।

—— হ্যাঁ, যত বেশি দিন ঝগড়া করে থাকা যায় দেখি।

—— বাপ্রে, তা তোমার নিতা আন্টি জানে তো তুমি এতো ঝগড়াটে?

—— এতো বছর একসাথে থাকার পর যদি এটা না বলতে পারে তাহলে তো হয়েছেই।

—— আচ্ছা শুনো। ভার্সিটি কবে থেকে যেতে শুরু করবে?

—— হুহ, দুই তারিখ থেকে।

—— আহ, এর আগে তাহলে একটু ঘুরে ফিরে নাও, মাইন্ড রিফ্রেশ হবে।

৫৬.
তপসী নিজের বাবার বাড়ি চলে গেল দুই দিন পর। এই বাড়ির পরিবেশও ঠান্ডা। তপসীর মনে হলো,
তাকে ছাড়া নিতা আন্টি খুব সুন্দর করে সংসার গুছিয়ে জিয়েছে। শুধু তার নিজের সংসারই সে গোছাতে পারছে না। এতে দোষ অবশ্যই তার।

তপসী একা বসে ছিল বিছানায়। তুষার গেছে পড়তে। নিতা আন্টিকে খুব করে এড়িয়ে চলে তপসী। তপসীর মনে হয়, নিতার সাথে কথা বলতে যাওয়া মানেই পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করা।

রনিত কল করলো আবার। তপসী অবাক হলো না। তার মনে হচ্ছিলো রনিত শীঘ্রই কল করবে। ফোন রিসিভ করতেই তপসী নিজেই আগে বললো,

—— কি দাদা? বিয়ে নিয়ে মত বদলে গেছে তাহলে?

—— বিয়ে নিয়ে নো মতামত।

—— কবে আসছো দেশে?

—— মা’কে বলেছি বিয়ের ডেট ঠিক করতে। এরপরই সুবিধা অনুযায়ী চলে আসবো। সুহানাও ছুটি নিয়ে নিবে ততদিনে।

—— আমি শপিং করতে লেগে যাই।

—— এখন থেকেই?

—— শুধুমাত্র আমার জন্য। যার যার টা সে সে। অবশ্য আমার কেয়ারিং বরের ও একটু কেয়ার করবো, শপিং আমি করে না দিলে দেখা যাবে আলমারি তে যা পাচ্ছে তাই শরীরে গলিয়ে নিচ্ছে।

—— আচ্ছা আচ্ছা করো। তোমার ভার্সিটির কি খবর?

—— এইতো যাবো। ইংলিশ ডিপার্টমেন্ট এ পড়তে মজাই লাগবে মনে হয়। সারাদিন রোমান্টিক নোভেল পড়বো, আর তোমার ভাইকে নস্টালজিক করবো।

—— আগের চেয়ে মুড ভালো হয়েছে তোমার, দেখা যাচ্ছে।

—— একা থাকতে থাকতে দিন কে দিন বিরক্তিকর হয়ে উঠেছিলাম। নিজেকেই নিজের বিরক্ত লাগতো। সবার এতো কেয়ার আদর যত্ন পেয়ে মনে হয় মন আরো বেঁকে বসেছিল। ভাবলো, আরেকটু আদর খাওয়া যাক।

—— মনটা তো তোমার ভীষণ পাজি। আর আমার ভাই ওদিকে টেনশনে টেনশনে পাগল হয়ে গেল।

—— সত্যিই একাকী লাগতেছিলো। এখন আবার মানিয়ে নিতে পারছি কিছুটা।

রনিত কিছু ভাবলো হয়তো। খানিক চুপ থেকে ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করলো,

—— বিয়ে তো সব জেনেই করছিলে, তাহলে এতো কেন সমস্যায় পড়লে বলো তো? ভাই আমার কাছে দুইদিন ফোন করে প্রায় কান্না করে দিয়েছে। সে ভেবেছে হয়তো তার জন্য তুমি এমন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছো। তোমায় সে বিয়ে না করলে অনেকটা সুখী হতে পারতো তোমার জীবন।

তপসী দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বললো,

—— আমি বিয়ের আগে বুঝতেই পারি নি এমন হবে। আর আমি একপ্রকার তখন বিয়ে করার জন্য ডেস্পারেট ছিলাম। তাই আরো বেশি বুঝতে পারি নি যে এতোটা কষ্ট হবে। ছোট থেকেই তো মা নেই, তাই ভেবেছিলাম নতুন করে কারো বিরহে কাতর হবো না। কিন্তু তোমার ভাই ম্যাজিক জানে। একসাথে আমরা একমাসও কাটাই নি, কিন্তু আমার জীবনের কল কাঠি হয়ে গেছে সে। তাকে ছাড়া থাকতে যে ভীষণ কষ্ট হয়।

—— তবুও তুমি একটু বেশিই প্যাচিয়ে ফেলেছিলে ব্যাপারটা। আমি আর সুব্রতও তো একা একা থাকি। আর তাছাড়া ফিজিকাল নিড তো সুব্রতের ও আছে। ও কিন্তু এতো ডেস্পারেট হয়ে যায় নি।

তপসী শব্দ করে হেসে ফেললো। রসিকতা করে বললো,

—— স্বামী বিয়োগে কেউ বিরহ পালন করলে এই চিন্তা টা সবার মাথায় আসা কি কম্পলসারি ব্যাপার? ফিজিকাল নিড এর কথা কেন উঠে এখানে? আমি তোমার ভাইকে ভালোবাসি। তার হাত ধরলেই মন প্রশান্ত হয়ে যায় অন্য কিছু পরের ব্যাপার। কিন্তু সবাই একই ধারায় এই এক কথা বলতে থাকে! ফিজিকাল রিলেশন ইজ নট এভ্রিথিং, ডেম ইট!

—— বৌদি তুমি উত্তজিত হয়ে পড়ছো। আমি কিন্তু মোটেও তোমার ফল্ট বুঝাতে চাই নি। আমি শুধু প্রেক্ষাপট টা বলছিলাম।

—— শুনো রনিত দা, মা ও কিন্তু সেইম ভাবেই কষ্ট পায়। তখন সেটা শুধু ভালোবাসা পর্যন্ত থাকলে, বউয়ের ভালোবাসায় কেন চাহিদা কে টেনে আনা হয়?

—— আ’ম সরি, সরি বৌদি। আমি সেইভাবে বলি নি।

—— যেইভাবেই বলো, এখন বাদ দেও। আমি নিজেকে সামলে নিচ্ছি। চিন্তা করে দেখলাম, তোমার হাত ভর্তি কাজ আছে বলেই বিরহ কম টের পাও, তাই আমিও পড়াশোনায় ফোকাসড হবো। এমনিতেও তোমার ভাই স্বপ্ন দেখছে, আমার কলেজের প্রফেসর বানাবে। দেখা যাক, কতো দূর যেতে পারি।

—— এটা তো গ্রেট নিউজ।

—— জ্বি। তাই তো তোমার সাথে শেয়ার করলাম।

—— আচ্ছা রাখি আজ তাহলে?

—— রাখো, আর যলদি দেশে ফিরে এসে বিয়ে করো। এরপর আমিও বুঝার চেষ্টা করবো, তোমার মন ছটফট করার কারন তখন কি হবে! চাহিদা নাকি ভালোবাসা!

রনিত হেসে বললো,

—— আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে।

—— গুড বাই।

চলবে……..

(পরবর্তী পর্ব থেকে কিছুটা টুইস্ট শুরু হবে । অনেকেই লাস্ট কয়েকদিন যাবত কমেন্ট করে বলেছেন, পর্বে কোনো আর্কষণ খুঁজে পান না। আমি নিজেও জানি এই কয়েকদিন খুব বেশি টুইস্ট ছিল না, কিন্তু এই অংশগুলো বাদ দেওয়াও সম্ভব ছিল না। সুতরাং লিখেছি। এবং উপন্যাসের শেষ পর্যন্ত আমার পাশে থাকলে বুঝতে পারবেন, কোনো কিছুই অহেতুক লিখি নি৷)
চলবে…….
চলবে ……………,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here