#না_চাইলেও_তুই_আমার_02
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্বঃ ১৯
সকাল বেলা জ্যামের মধ্যে আটকে থাকতে কার ভালো লাগে? মিরা আর নীলা অনেকক্ষণ ধরে জ্যামের মধ্যে আটকে আছে। যান্ত্রিক শব্দ, কোলাহল সবমিলিয়ে অপ্রতাশিত পরিবেশ। মিরা সারা রাস্তা ওর ফোনে ইংলিশ গান শুনতে শুনতে গাড়ি ড্রাইভ করে এসেছে। জ্যামে আটকে থাকার কারণে নীলা গাড়ির কাঁচ নামিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। মিরা কপালে ভাঁজ করে গম্ভীর মুখে বলে,
—” আর কতক্ষণ এইভাবে আটকে থাকবো?”
নীলা মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,
—” একটু সময়ের মধ্যে ছেড়ে যাবে।”
নীলা এইটুকু বলে মিরার ফোন হাতে নিয়ে গানটা বন্ধ করে দিয়ে FM ছাড়ে। কোনো এক যুবক মিষ্টি কন্ঠে গুছিয়ে কিছু কথা বলতে শুরু করে,
—” আপনি এমন কাউকে খুঁজুন এবং তাকেই বেছে নিন, যে কী না আপনাকে পেয়ে গর্ব বোধ করে। আপনাকে হারানোর ভয়ে ভীত থাকে। আপনার ইচ্ছা গুলোকে পূরণ করার প্রচেষ্টায় থাকে। আপনাকে সম্মান করে আপনার যথেষ্ট কেয়ার বা যত্ন করে। আপনি কিছু বলার আগেই সে অনেক কিছুই সে বুঝে ফেলে। ছোট ছোট কারনে রাগ অভিমান আর ঝগড়া করে। আপনার গুণ, ভালো, মন্দ লক্ষ্য করে ভালো কে ভালো এবং খারাপ কে খারাপ নির্দ্বিধায় বলে ফেলে।কারন সত্যিকার অর্থেই সে আপনাকে ভালোবাসে এবং আপনাকে সে সুখী দেখতে চায়। আপনাকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে চায়।”
যুবকের কথার ধরন বলে দেয়। যুকব এই বিষয়ে অনেক পটু। মিরা কিছুক্ষণ যুবকের কথা শুনে ফট FM টা বন্ধ করে দেয়। দাঁত কিরমির করে নীলার দিকে তাকিয়ে বলে,
—” প্রেমে পড়েছো জানি সেটা। এখন FM শুনিয়ে নতুন করে প্রমান করা লাগবে না।”
নীলা ভেংচি কেটে বলে,
—” আমি প্রমানও করছি না। তোর ঐ ইংলিশ গান শোনার থেকে FM শোনো অনেক ভালো। আর তুই যখন প্রেমে পড়বি তখন তোরও এইসব শুনতে ভালো লাগবে।”
মিরা ধীর গলায় বলে,
—” ভালো হলেই ভালো। যাইহোক জ্যাম ছেড়েছে চলো যাওয়া যাক।”
—” চল।”
মিরা আর নীলা ভার্সিটিতে পৌঁছে গেট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে খেয়াল করে কিছু ওভার স্মার্ট টাইপের ছেলেমেয়ে বাইকে বসে সিগারেটের ধোঁয়া উড়ছে আর ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। নীলা বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবার হাঁটা শুরু করে। মিরা এক নজর তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নীলাকে ধীর গলায় বলে,
—” আপু ঐ ছেলেমেয়েগুলো কে? এভাবে ভার্সিটিতে বসে স্মোকিং করছে কেনো?”
নীলা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
—” এটা নতুন কিছু নয়। ঐ যে দেখছিস বাইকে বসে এদিকে তাকিয়ে আছে ব্ল্যাক শার্ট পড়া ছেলেটা ও নাম হলো রিসাব। রিসাব হলো ঐ টিমের লিডার। আর ওখানে যারা আছে সবাই আমার ক্লাসে পড়ে। মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করা, বিরক্ত করা ওর নিত্যদিনের কাজ। বড়লোক বাবার একমাত্র ছেলে বলে বাবা মা কিছু বলে না উল্টো কেউ কিছু তাদের অবস্থা খারাপ করে দেয়। কিন্তু MM গ্ৰুপকে ওরা বাঘের মত ভয় পায়। শুধু ওরা না যারা মেয়েদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে তারাও।”
মিরা নীলার দিকে তাকিয়ে বলে,
—” MM গ্ৰুপটা কাদের?”
—” আমাদের ভার্সিটির না অন্য ভার্সিটির তাই ঠিক ভাবে জানি না। শুনছি এই না কী চার বা পাঁচ জন সদস্যের গ্ৰুপ।”
—” তা ঐ গ্ৰুপের মেম্বারদের এই বিষয়ে কেউ কিছু বলেনি?”
—” বলছে অনেকে। এইতো কিছুদিন আগে এসে ওদের থ্রেট দিয়ে গেছে নেক্সট টাইম এমন হলো ওদের কপালে দুঃখ আছে। তাই এখন একটু কম বাড়াবাড়ি করে।”
—” তোমাকে কখনো কিছু বলেনি?”
নীলা হালকা হেসে বলে,
—” আরে না ওর বাবার থেকে আমার বাবা, মামা আর নানার পাওয়ার বেশি তাই কখনো সাহস পায়নি। তুই আবার কখনো ওদের সাথে ঝামেলায় যাস না কেমন!”
মিরা ভাব নিয়ে বলে,
—” আমার সাথে লাগতে না এলেই ভালো। আমি কখনো আগ বাড়িয়ে কারো সাথে লাগাতে যাই না।”
মিরার কথা শুনে নীলা হেসে দিয়ে বলে,
—” বুঝছি পাগলি চল প্রিন্সিপালের রুমে।”
—” হুম চলো।”
মিরা নীলাকে তার ক্লাসে যেতে বলে মিরা সোজা প্রিন্সিপালের রুমে চলে যায়। তিনি মিরার সাথে কিছু কথা বলে মিরাকে নিয়ে ক্লাসে গিয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। প্রথম ক্লাস শেষ হলো মিরা একে একে সবার সাথে পরিচয় হয় তবে ছেলেরা মিরার বেপারে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করেছে তা মিরা বেশ বুঝতে পারছে। তবুও মিরা সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলছে। হঠাৎ করে কেউ একজন এসে মিরার হাত ধরে মিরা চমকে তার দিকে তাকায়। চোখে সানগ্লাস আর মুখ রুমাল দিয়ে ঢেকে রাখা। মিরা ভ্রু কুঁচকে একবার হাতের দিকে তাকাচ্ছে আর একবার লোকটার দিকে তাকাচ্ছে। মিরা কিছু বুঝে ওঠার আগে লোকটা মিরা টেনে নিয়ে যেতে শুরু করে ক্লাসের সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। মিরা রেগে গিয়ে বলে,
—” What the hell is going on? কে আপনি? আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?”
মিরার কথা শুনে লোকটা থমকে দাঁড়ায়, মিরার দিকে ঘুরে চোখ থেকে একটু সানগ্লাস টা নামিয়ে ঘোর লাগা কন্ঠে বলে,
—” জানপাখি আমি তোমার ভীতুরাম।”
মিরা কপাল ভাঁজ করে আসতে করে বলে,
—” ভীতুরাম?”
মিহান চোখের ইশারায় হ্যা বলে। মিরা আর কিছু না বলে মিহানের সাথে হাঁটতে শুরু করলো। মিরা মনে প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে মিহান এমন উটভট সেজে ভার্সিটিতে এলো কেনো? আর এখন ওকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছে?
ভার্সিটির মাঠে যারা আড্ডা দিচ্ছিলো তারা অনেকেই মিরার দিকে তাকিয়ে আছে। মিরার সেদিন খেয়াল নেই চুপচাপ হেটে যাচ্ছে মিহানের সাথে।
___________________________________________
আকাশে মেঘের আড়ালে সূর্য লুকিয়ে আছে। হালকা ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে চারদিকে। সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে আকাশের অবস্থা প্রায়শই এমন হয় এটা নতুন কিছু না। গাছের পাতাগুলো নিজের ছন্দে দুলছে। মিরার অবাধ্য চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। দুজনের মাঝে নিস্তব্ধতা। মিহান এক পলকে তাকিয়ে আছে মিরার দিকে। যেনো কত জন্মের না দেখার সাধ মিটিয়ে নিচ্ছে। মিরা চাচ্ছে মিহানকে কিছু বলতে কিন্তু কোথাও একটা বাধা পাচ্ছে মিরা। কিন্তু কেনো? হয়তো হবু বর বলে! এইভাবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিরা। মিহানের শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা মিরার ভিতরে তোলপাড় শুরু করে দিয়েছে সে কথা কী মিহান জানে? হয়তো জানে! বা হয়তো জানে না। মিরা মিহানের শীতল দৃষ্টি উপেক্ষা করা চেষ্টা করেও পারছেনা বারবার ব্যর্থ হয়েছে এই প্রচেষ্টা। মিরা আর চুপ করে থাকতে না পেরে আড়চোখে মিহানের দিকে তাকিয়ে বলে,
—” এখানে কী কাজ আমাদের?”
মিরার কথায় মিহান বিরক্ত হয় ভিশন বিরক্ত হয়। এখন একথা কোনো মানে হয়? সে তার প্রেয়সী কে নিয়ে ভিশন রকম ব্যস্ত তার উপর এমন উটভট প্রশ্ন! মিহান কপাট রাগ দেখিয়ে বলে,
—” ঘোড়ার ঘাস কাটতে এসেছি। কেনো তুমি ঘাস কাটবে না?”
মিরা হতবাক হয়ে যায় মিহানের কথা শুনে। চোখগুলো ছোট ছোট করে মিহনের দিকে তাকায়, মিহানের এখনো সেই বিরক্তিকর চাউনি। এখানে ঘোড়ার ঘাস কাটতে এসেছে। মিহান কী পাগল হয়েছ না কী? কীসব বলছে মিরা কিছু বুঝতে পারছে না। মিরা অবাক কন্ঠে বলে,
—” পার্কিং সাইটে নিয়ে এসেছিস আমাকে ঘোড়ার ঘাস কাটার জন্য?”
মিরার কথা শুনে মিহান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকায় মিহান তো ওটা কথার কথা বলছে আর মিরা সত্যি মনে করছে। ভাবতেই মিহানের খুব হাসতে ইচ্ছে করছে তাও মুখে গম্ভীর ভাব ফুটিয়ে তুলে বলে,
—” তা নয়তো কী?”
মিরা বেশ বুঝতে পারছে মিহান ওর সাথে মজা করছে। মিরা আশেপাশে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে,
—” সবে মাত্র একটা ক্লাস করেছি এরমধ্যেই তুই আমাকে পার্কিং সাইটে নিয়ে এলি। কিছু বলবি? তা হলে বল না হলে আমি ক্লাসে যাই।”
মিহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,
—” কিছু না বললে বুঝি তোমার কাছে আসা যাবে না?”
একটু বলে মিহান থামে। মিরা আড়চোখে মিহানের দিকে তাকায়। মিহান ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে তুলে বলে,
—” যাইহোক, আমি এসেছি তোমাকে নিয়ে যেতে। তোমাকে নিয়ে ঘুরবো আজ।”
মিরা ভ্রু কুঁচকে বলে,
—” কিন্তু আজ তো আমি প্রেমদের ওখানে যাবো।”
মিরার মুখে প্রেমের নাম শুনে উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
—” প্রেম কে? আর ওর সাথে দেখা করতে যাবেই বা কেনো? কে হয় ও তোমার?”
মিরা মিহানের অবস্থা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বলে,
—” প্রেম আর প্রিয়া আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। প্রিয়ার বর প্রেম। আশাকরি সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছিস?”
মিহান মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে,
—” হুম।”
মিরা একবার মিহানের দিকে তাকিয়ে বলে,
—” আচ্ছা তুই এইভাবে মুখ ঢেকে ভার্সিটিতে এসেছিস কেনো?”
মিরার কথা শুনে মিহান চমকে উঠে আমতা আমতা করে বলে,
—” আ…আসলে ধু…ধুলো জন্য।”
—” ছাড় সে সব কথা তুই যাবি আমাদের সাথে প্রেমদের ওখানে?”
—” আচ্ছা যাবো।”
—” তুই এখানে থাক আমি নীলা আপুকে নিয়ে আসি।”
মিরা ওখান থেকে চলে গেলে মিহান আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
—” ওহ গড! আজ খুব জোর বেঁচে গেছি।
কিছুক্ষণের মধ্যে মিরা নীলাকে নিয়ে আসে। মিহান মিরার গাড়ি ওদের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করে ওদের নিজের গাড়িতে নিয়ে রওনা হয়। মিরার আজ কেনো যেনো মিহানকে অন্য রকম লাগছে নিজের কাছে। কেমন যেনো রোমিও রোমিও ভাব। তবে মিরার বেশ লাগছে মিহানের এই ব্যপার টা। মিহান গাড়ি ড্রাইভ করার মাঝে একবার মিরার দিকে তাকিয়ে দেখে মিরা পলকহীন ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে মিহান মুচকি হেসে দেয়।
চলবে….❤️
#না_চাইলেও_তুই_আমার_02
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্বঃ ২০
মিরা চায়ের দোকানে বসে বর্ষার জলরাশি উপভোগ করছে। মিহান দুই কাপ চা নিয়ে মিরার পাশে বসে, এক কাপ এগিয়ে মিরার দিকে। মিরা মিষ্টি হেসে চায়ের কাপ নেয়। মিহান এক চুমুক চা খেয়ে বিরক্তিকর কন্ঠে বলে,
—” ধুর! বৃষ্টি টা আসার সময় পেলো না।”
মিরা এক নজর মিহানের দিকে তাকিয়ে আবার সামনের দিকে তাকিয়ে বর্ষার জলরাশি উপভোগ করতে করতে ভাবে, মিহানের রাগ করার যথেষ্ট কারণ আছে। প্রেমদের ওখানে গিয়ে এক ঘন্টার মতো ওরা। মিহানকে ওদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় মিরা। অল্প সময়ের মধ্যে ওদের সাথে মিহানের খুব ভাব হয়ে গেছে বলা যায়। প্রেম মিহানকে ভাইয়া বলেও প্রিয়া জিজু বলে ডাকেছে। পরে প্রেম আর প্রিয়া কে নীলার সাথে খান বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে মিহানের সাথে বের হয় মিরা। মিরা অনেক করে বলেছিলো যে কাল ঘুরতে যাবে কিন্তু মিহান সে মানবে না কিছুতেই পরে মিরাও রাজি হয়। বেরিয়ে পরে মিরার নিয়ে উদ্দেশ্য মিরাকে সাথে নিয়ে নৌকায় করে ঘুরবে। মিরাকে নিয়ে ঢাকার পাশেই একটা গ্ৰামে চলে আসে মিহান। সবকিছু ঠিকঠাক ই ছিলো মাঝখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় প্রকৃতি হঠাৎ করে আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয় সাথে দমকা হাওয়া। নদীর থেকে একটু দূরে চায়ের দোকানে আশ্রয় নেয় বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য। ওরা ছাড়া আরো কিছু কর্পাল আছে। মিহানের কথা শুনে নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে মিরা। মিহান মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,
—” তোমার দেখি এখনো চা শেষ হয়নি। আমি আর এক কাপ চা খাবো। তুমি আর কিছু খাবে।”
মিরা মাথা নাড়িয়ে আসতে করে বলে,
—” না।”
—” আচ্ছা তুমি বসো আমি আর এক কাপ চা নিয়ে আসি কেমন?”
মিরা প্রতি উত্তরে কিছু না বলে আবার সামনের দিকে তাকিয়ে নিজ ভাবনায় বিভোর হয়।
ঋতু চক্র হিসেবে করতে গেলে এখন শরৎকাল। তবে বর্ষার শেষ ধাক্কার রেশ এখনো কাটেনি। প্রকৃতি এখনো শরৎ এর প্রেমে হাবুডুবু খায়নি। প্রকৃতির এক অপরুপ সৌন্দর্য যেন ফুটে ওঠে বর্ষায়। বর্ষণ মুখর প্রকৃতি যেমন আমাদের হৃদয়ে শিহরণ যোগায় তেমনি প্রেমিক মন ও জেগে ওঠে। তরুণ-তরুণিদের হৃদয়ে ও বর্ষা যেন নতুন মাত্রা যোগ করে। তাইতো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানে ও প্রেম বন্ধনা শোনা যায়,
“আজি ঝরো ঝরো মুখর ও বাদলো দিনে জানিনে, জানিনে কিছুতে কেন যে মন লাগে না।”
বৃষ্টিতে ভিজে সকলে যেন একটু হলেও তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে। কেউবা বৃষ্টির পানিতে নিজেকে ভিজিয়ে নিয়ে উপভোগ করছে আবার কেউ হয়ে যাচ্ছে কর্মহীন। অতিবৃষ্টিতে ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছে। এ যেন বর্ষায়- মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। বর্ষায় নদী থাকে উত্তাল সব মিলিয়ে যেন বর্ষা এক ভিন্নমাত্রা যোগ করে ধরনীর মাঝে। একবার বৃষ্টি শুরু হলে যেন থামতেই চায় না। অনেকের আবার এ বৃষ্টিতে মনে পড়ে তার প্রিয়জনকে। যদিও কিছুদিন আগেই শেষ হলো বর্ষাকাল, তবু যেন এর রেশ এখনো রয়ে গেছে প্রকৃতির মাঝে। শ্রাবণের বর্ষণ অবিরত। থেমে থেমে বৃষ্টির খেলা, আকাশে মেঘের আনাগোনা। সব মিলিয়ে প্রকৃতির ভিন্নরূপ। তবে আবার শ্রাবণের মেঘকে কেন্দ্র করে প্রেমিক হৃদয় যে শিহরণ জাগায়।এবার মন হারাক আর না ই বা হারাক প্রেমিক মন ঠিকই শ্রাবণ এলেই প্রেম জেগে উঠার ভান করে। শ্রাবণের শেষ দিকে তাইতো প্রকৃতি যেন আবারো জানান দিচ্ছে,
“চলে যাচ্ছি বন্ধু দেখা হবে আরেকটি বছর পর। ভাল থেকো তোমরা সবে, বৃষ্টিতে ভিজো সব।”
মিরা এসব ভেবে চায়ের কাপ শেষ চুমুক দিয়ে দোকানের অন্য পাশে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ের কাঁধে একটা ছেলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে আর মেয়েটা পরম যত্নে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মিরা মন ভরে সে দৃশ্য দেখছে। মাথা ঘুরিয়ে মিহান কোথায় আছে তা খোঁজার চেষ্টা করছে মিরা, মিহান দোকানদারের সাথে হাঁসি মুখে কিছু একটা নিয়ে কথা বলছে। মিরা মিহানকে বিরক্ত না করে আবার নিজো ভাবনায় ডুবে যায়।
———————————
স্বপ্নগুলো সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো। সমুদ্রের ঢেউগুলো কিনারে আসতে আসতেই যেমন বিলীন হয়ে যায়, তেমনি বাস্তবতার সম্মুখীন হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তেই স্বপ্নগুলো তার অস্তিত্ব হারায়! ঠিক তেমনি মিহানের একটা স্বপ্ন একটু আগে বিলীন হয়ে গেছে। খুব ইচ্ছে ছিলো মিরাকে সাথে নিয়ে নৌকায় করে ঘুরবে। কিন্তু হলো টা কী? বৃষ্টি থেমে গেলে দমকা হাওয়া থামেনি। ওখানকার কিছু মাঝি আর এলাকার লোকজন বলছে এখন নৌকা নিয়ে ঘুরা বিপদজনক। যে কোন সময় বিপদ পড়তে পারে। তাদের কথা শুনে যারা যারা নৌকা করে ঘুরতে গেছিলো সবাই ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অগত্যা মিহানও মিরাকে নিয়ে ফিরে যাচ্ছে। মিহান খারাপ মন নিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করছে। মিরা হয়তো বুঝতে পারছে মিহানের মন খারাপ।
মিরা আড়চোখে মিহানের দিকে তাকিয়ে বলে,
—” ভীতুরাম আমার না এখন আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে।”
মিহান গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে অবাক কন্ঠে বলে,
—” এই বৃষ্টির মধ্যে আইসক্রিম? কখনো না।”
মিরা বাচ্চাদের মত মুখ করে বলে,
—” প্লিজ ভীতুরাম।”
মিহান মিরার দিকে একবার তাকিয়ে ওর ওমন বাচ্চাদের মত মুখ করে হেসে দিয়ে বলে,
—” ঠিক আছে। দেখি সামনে কোনো দোকান পাওয়া যায় কী না!”
মিরা নিজের ফোন টাইম দেখে অবাক হয়ে যায়। সবে বিকেল চারটা বাজে কিন্তু চারপাশের প্রকৃতির অবস্থা দেখে মনে হয় কিছুক্ষণের মধ্যেই সন্ধ্যা হবে। মিরা গাড়ির গ্লাস নামিয়ে বাইরে তাকায়। হঠাৎ মিহানের রাগ দেখানো কিছু কথা এসে কানে লাগে।
—” গ্লাস নামিয়েছো কেনো? ভিজে যাবে তো! গ্লাস উপরে উঠাও।”
মিরা মাথা ঘুরিয়ে মিহানের দিকে তাকায়, মিহান ড্রাইভ করার মাঝে এক দুই বার মিরার দিকে তাকাচ্ছে। মিরা ঠোঁটে ফুলিয়ে বলে,
—” কিছু হবে না। এখন তো গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। আর তুই এত কথা না বলে গাড়ি ড্রাইভ কর।”
মিহান গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে বিড়বিড় করে বলে,
—” নিজে যেনো সব কিছু জেনে বসে আছে। গুন্ডি কোথাকার!”
সামনে দোকান দেখে গাড়ি থামিয়ে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যে দৌড়ে গিয়ে মিরার জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসে মিহান।
———————————
মিরা বাড়ি ফিরেছে অনেকক্ষণ। ছয়টা বাজার আগেই মিহান মিরাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যায়। মিরা একটু রেস্ট নিয়ে নিচে নেমে দেখে বাড়ির ছোটরা হল রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে সাথে প্রিয়াও আছে কিন্তু প্রেমকে কোথাও দেখছে না। হয়তো কোনো কাজে গেছে। মিরা সোফায় বসতে বসতে জিজ্ঞাসা করে,
—” প্রেম কোথায়? ওকে তো দেখছি না।”
প্রিয়া বলে,
—” বললো তো আশপাশ টা ঘুরে দেখতে গেছে।”
নীলা কৌতুহলী হয়ে বলে,
—” মিহান ভাইয়া তোকে কোথায় নিয়ে গেছিলো রে?”
মিরা চোখ ছোট ছোট করে নীলার দিকে তাকিয়ে বলে,
—” তা দিয়ে তুমি কী করবে?”
—” না জানতে চাইলাম আর কী!”
প্রিয়া মিরার পাশ ঘেঁষে বসে বলে,
—” বল না কোথায় গেছিলি জিজুর সাথে?”
মিরা কপাল ভাঁজ করে বলে,
—” এটা গ্ৰামে গেছিলাম।”
নীলা অবাক কন্ঠে বলে,
—” সে কী গ্ৰামে কেনো গেছিলি?”
নিঝুম বিরক্ত হয়ে বলে,
—” উফ! আপু তুই থামতো, আপুকে বলতে দে।”
নিঝুমের কথা শুনে নীলা ওর দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটে। ওদের কান্ড দেখে মিরা হালকা হেসে বলে,
—” নৌকায় করে ঘুরবে বলে গেছিলো গ্ৰামে।”
প্রিয়া উত্তেজিত হয়ে বলে,
—” কোথায় কোথায় নৌকা নিয়ে? বল না।”
মিরা মন খারাপ করে বলে,
—” না রে ঘোরা হয়নি হঠাৎ করে বৃষ্টি আর দমকা হাওয়া শুরু তাই ফিরে আসতে হয়েছে।”
—” থাক মন খারাপ করিস না। পরে নৌকা নিয়ে ঘুরা যাবে। শোন না, আমি আর প্রেম তোর সাথে ঐ ভার্সিটিতে পড়বো। প্রেম সব ব্যবস্থ করে ফেলেছে। কাল থেকে তিন জন একসাথে ভার্সিটিতে যাবো। ইম্পর্টেন্ট ক্লাস না থাকলে প্রেম অফিসে যাবে। তাছাড়া বাড়িতে বসে অফিসে কাজ করবে।”
মিরা খুশি হয়ে বলে,
—” সত্যি?”
প্রিয়া হেসে বলে,
—” হ্যা রে বাবা সত্যি।”
নয়টায় প্রিয়া আর প্রেম চলে যাবে চলে সবাই ওদের সাথে খেতে বসে। নানা কথার মাঝে খাবার পর্ব শেষ করে। প্রেম আর প্রিয়া কিছু আগে চলে গেছে। মিরা আর নিচে না থেকে নিজের রুমে চলে যায়।
শুয়ে শুয়ে আজকে দিনের কথা ভাবছে মিরা। মিহানকে অতটাও খারাপ লাগেনি মিরার। মিরা আজ মিহানকে ভালো করে খুতিয়ে খুতিয়ে দেখেছে। মিহানের চেহারার মধ্যে একটা মায়া কাজ করে, অল্প কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে সে মায়ার মধ্যে পড়ে যাবে। এইসব ভেবে আনমনে হেসে ফেলে মিরা।
চলবে….❤️