না চাইলেও তুই আমার পর্ব ৩৭+৩৮

#না_চাইলেও_তুই_আমার_02
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্বঃ ৩৭
একদিন আগেও ভালোবাসার মানুষ দুটি দুই প্রান্তে ছিলো। আর এখন একেক জন একেক জনের বাহুডোরে আবদ্ধ। মিরা এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না মিহান তার সামনে দাঁড়িয়ে তার বুকে মিরা কে জড়িয়ে ধরে আছে। মিরা আস্তে করে মিহানকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

—” ভীতুরাম তুমি এখানে? তোমার না কাল সিলেট থেকে আসার কথা ছিলো?”

মিহান বাঁকা হেসে মিরা কে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলল,

—” ছিলো তো, কিন্তু আমি আমার জানপাখির জন্য একদিন আগেই চলে এসেছি।”

মিরা অবাক হয়ে মিহানের দিকে তাকিয়ে আছে। মিরা চুপ থাকা দেখে মিহান মিরার মুখের সামনে আসা চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বলল,

—” কনফিউজ হচ্ছো তাই তো? ওকে আমি ক্লিয়ার করে দিচ্ছি। আমি আজ সকালে সিলেট থেকে ঢাকায় এসেছি। সারাদিন বাড়িতেই ছিলাম। রাত আটটার পর এখানে এসেছি, এমন কী তোমাদের বাড়ির কেউ জানে না আমি এখানে এসেছি। তোমাদের বাড়ির পিছনের পাঁচিল টপকে অনেক কষ্টে ছাদে উঠেছি।”

মিরা মিহানের কথা শুনে হতবাক হয়ে যায়। বড় বড় চোখ করে মিহানের দিকে তাকায়। কিঞ্চিৎ কপাল ভাঁজ করে বলল,

—” এখন প্রায় বারোটা বাজতে চলল, তুমি রাত আটটা থেকে এখানে ছাদে দাঁড়িয়ে আছো? আর তুমি যে সকালে ঢাকায় এসেছো আমাকে একবার ফোন করে বললে কী হতো?”

মিহান মিরা কে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,

—” তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম তাই বলেনি কিছু।”

মিরা রেগে উঁচু গলায় বলল,

—” এই তোকে কেউ আমাকে সারপ্রাইজ দিতে বলেছে? বেশী বুঝিস কেনো? সারাদিন আমাকে টেনশন এর মধ্যে রেখে এসেছে সারপ্রাইজ দিতে। তুই যা তো এখন থেকে, আমার সাথে কথা বলতে আসবি না একদম।”

মিহান মিরার রেগে যাওয়া দেখে শুকনো গলায় ডাক দিলে বলল,

—” জানপাখি তুমি রেগে যাচ্ছো কেনো?”

মিরা মিহানের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

—” আমি রেগে যাচ্ছি কেনো তুই জানিস না? ইচ্ছে করছে তোকে এখন খুন করে ফেলি।”

মিহান জিব্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,

—” রাগ করো না। আগে শোনো তো আমার কথাটা তারপরে যা খুশি বলো।”

মিরা নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বলল,

—” ঠিক আছে, বলো কী বলবে?”

মিহান মিরার দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর চোখে কাপড় বেঁধে দেয়। মিরা অবাক কন্ঠে বলল,

—” কী হলো চোখ বাঁধছো কেনো?”

মিহান তাকিয়ে নিচু গলায় বলল,

—” ইশ! একটু সময় চুপ থাকো না। একটু পরে সব বুঝতে পারবে। কতক্ষণ চুপ করে থাকো।”

মিরা কিছু না বলে চুপ হয়ে যায়। তিন চার মিনিটের মাথায় এসে মিহান মিরার চোখের বাধন খুলে দেয়। মিরা চোখ ঘষতে ঘষতে মিহানের দিকে তাকায়। মিহান মিরার সামনে একটা গোলাপ ফুল নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আছে। মিরা হা করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। মিরা কিছু বুঝে উঠার আগে মিহান আবেগি গলায় বলল,

—” জানপাখি জানিস তুই যখন ক্লাস সিক্সে পড়িস তখন থেকে আমি তোকে ভালোবাসি। মনে পড়ে তোর সাথে সেই প্রথম দেখা? তুই যখন তাড়াহুড়ো করে ড্রয়িং ক্লাস থেকে বের হচ্ছি, তখন তোর সাথে আমার হঠাৎ করে ধাক্কা লাগার কারণে তোর হাতে সমস্ত রং আমার সাদা শার্টে লেগে যায়। আমি তখন আমার শার্টের অবস্থা দেখে কেঁদে দিয়েছিলাম। তুই আমাকে সরিও বলিস কিন্তু আমার কান্না থামছিল না। তখন তুই রেগে আমাকে থাপ্পড় লাগিয়ে দিস। আমি গালে হাত দিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলাম। মনে আছে তোর? তুই আমার শার্টটা খুলে নিয়ে বলিস, শার্ট টা পরিষ্কার করে দিবি বলে। আমি সেদিন তোর জন্য স্কুল থেকে গেঞ্জি পড়ে বাড়ি ফিরছি। পরেরদিন তুই এলি আমার কাছে একটা নতুন শার্ট নিয়ে, নতুন সেটটা আমার হাতে দিয়ে বলেছিলি, রং শার্টে শুকিয়ে যাওয়ায় শার্ট থেকে রং তুলতে পারিস নি। সেই থেকে আমাদের কথা বলা শুরু। আমার খুব বেশি বন্ধু ছিলো না কখনো, তাদের সাথেও এতোটা কথা বলতাম না যতটা তোর সাথে বলতাম। একটু একটু করে তোকে কখন যে ভালোবেসে ফেলেছি তা আমি নিজেই জানি না। তোর আমাকে রাগ দেখানো, শাসন করা সবকিছুকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। মুখ ফুটে প্রকাশ করার আগেই একদিন তুই এসে বললি, তোর পাপার বিজনেসের জন্য তোরা বিদেশে চলে যাবি। খুব কষ্ট হয়েছিলো সে দিন। কিন্তু মুখ ফুটে তা প্রকাশ করিনি। তুই চলে গেলি আমাকে একা ফেলে কিন্তু যাওয়ার আগে বলে গেলি, তুই ফিরে আসবি আমার কাছে। এসেছিলি তুই আমার কাছে ফিরে, সেদিন আমার খুশির সীমা ছিলো না। তোকে হারানোর ভয়ে পাপা মমকে নিয়ে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসি। কিন্তু তুই আমাকে বিয়ে করতে রাজি না বলে দিস, তোর পাপার কথায় তুই আমাকে তিন মাস সময় দিয়েছিস। আমি চেয়েছিলাম তিন মাস পর আমার মনে কথা বলতে কিন্তু পারলাম না তার আগেই বলে দিলাম। কারন #না_চাইলেও_তুই_আমার তাই। আমি জানি না তুই আমাকে ভালোবাসিস কী না জানপাখি! কিন্তু আমার মন বলে তুইও আমাকে ভালোবাসি। ‘হৃদয় খুলে সপে দিলাম তোর ই চরণে। ইচ্ছা হলে আগলে রাখিস হৃদয় গহীনে।’ ভালোবাসি জানপাখি! খুব বেশি ভালোবাসি। একবার ভালোবাসবি আমায়? কথা দিলাম কখনো কষ্ট পেতে দিবো না তোকে। বল না ভালোবাসবি আমায়?”

মিরা হতবাক হয়ে গেছে মিহানের কাজে। মিরা ভাবনায় মাঝে ছিলো না মিহানের এমন কাজ। চোখ দুটো ছল ছল করছে। ঠোঁট চেপে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে মিরা। কিন্তু সে চেষ্টায় ব্যর্থ। চোখ থেকে নোনা পানি গড়িয়ে পড়ে। কিছু বলতে গিয়েও গলা কেঁপে উঠছে বারংবার মিরার। মিরা কাঁপা কাঁপা হাতে মিহানের হাতে থাকা ফুলটা ধরে ভাঙ্গা গলায় বলল,

—” ভা….ভা….ভালোবাসি!”

মিরার ‘ভালোবাসি’ কথাটা বলতে দেরি কিন্তু মিহান নিজের বাহুডোরে মিরাকে বন্দী করতে দেরি হলো না। মিরা অশ্রু ভেজা চোখে মিহান কে জড়িয়ে ধরে, মিহানের পিঠের শার্ট খামচে ধরে। বেশ কিছুক্ষণ এই ভাবে কাটিয়ে দিয়ে মিহান আবারো হাঁটু গেড়ে বসে একটা আংটি বাড়িয়ে দেয় মিরার দিকে। মিরা হালকা হেসে নিজের হাতটা এগিয়ে দেয় মিহানের দিকে। মিহান একবার মিরার হাতের দিকে তাকাচ্ছে আর একবার মিরার তাকাচ্ছে। মিরার অনামিকা আঙ্গুলে মিহানের মমের পরিয়ে দেওয়া আংটি টা আছে। মিহান এখন কী করবে নিজেই বুঝতে পারছে না। মিরা মিহানের অবস্থা বুঝতে পেরে ফিক করে হেসে দিয়ে ঐ আংটি টার সাথে মিহানের দেওয়া আংটি টাও পরে নেয়। মিহান হেসে মিরার হাতে চুমু দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। মিরা এতক্ষণ আশপাশটা ভালো করে খেয়াল করেনি। ছাদটা বেলুন আর ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো। এতক্ষণ ছাদটা অন্ধকার থাকায় এসব কিছু বোঝা যায়নি। মিরার চোখ যায় মিহানের দিকে। কেমন মাতাল চোখে তাকিয়ে আছে মিরার দিকে। মিহান ধীর পায়ে হেটে এসে মিরা কে জড়িয়ে ধরে। মিরা মিহানের বুকে মাথা রেখে বলল,

—” এসব সাজালে কখন?”

মিহান নিচু গলায় বলল,

—” রাত আটটার পর এখানে এসে এসব করেছি। সাথে আমার বন্ধুরাও ছিলো। তুমি ছাদে আসার আগেই ওরা চলে গেছে।”

মিরা মাথা উঁচু করে মিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,

—” এতক্ষন তুই করে বললে এখন আবার তুমি?”

মিহান হেসে বলল,

—” কেনো….

মিহান কথাটা সম্পূর্ণ করার আগেই পিছন থেকে হাসির শব্দ আসে। মিরা মিহানকে ছাড়িয়ে পিছন তাকিয়ে দেখে, ওর প্রান প্রিয় ভাই ও বোনেরা ওখানে উপস্থিত সাথে আবার অনুও আছে। ওদের দেখে মিরা মিহানের থেকে একটু দূরে সরে যায়। তা দেখে মিশু কিটকিটে হেসে বলল,

—” বাহ! বাহ! কী ভালোবাসা। দূরে গেলে কেনো আপু জিজুর কাছে যাও।”

মিরা চোখ বড় বড় করে ওদের দিকে তাকায়। মিহান অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,

—” তুই এখানে কী করছিস?”

অনু ভাব নিয়ে বলল,

—” তুই যে আজ ভাবীকে প্রপোজ করবি তা আমি জানতাম। ভাবলাম এই ঐতিহাসিক দিনটার কোনো ভাবে সাক্ষী থাকা যায় কী না? তাই চলে এলাম এখানে।”

মিহান‌ অবাক কন্ঠে বলল,

—” তুই একথা জানলি কী করে?”

অনু নিজের চুল ঠিক করতে করতে বলল,

—” তুই যখন তোর বন্ধুদের বলছিলি ফুল আর বেলুন কিনে রাখার জন্য তখন আমি তো রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে সব শুনেছি। ব্যাস আমিও দুয়ে দুয়ে চার করে ফেলি।”

শুভ বলল,

—” তবে যাই বলো ভাইয়া তোমার প্রপোজ টা কিন্তু দারুন হয়েছে।”

মিহান মিরার হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলল,

—” তাই নাকি শালাবাবু?”

মাঝে প্রিয়া মিরা কে খোঁচা দিয়ে বলল,

—” তা নয়তো কী? দেখছেন না আমাদের মিরার গাল লজ্জায় কেমন লাল হয়ে গেছে।”

মিরা ওদের কথার উত্তর না দিয়ে লজ্জায় মিহানের বুকে মুখ লুকায়। মিরার অবস্থা দেখে সবাই খিলখিলিয়ে হেসে দেয়।

_____________________

সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে সবার খাবার মাঝে মিরার ফুপা মিরার পাপার দিকে তাকিয়ে বলল,

—” ভাইয়া নীলার হবু শ্বশুর বাড়ির লোকজন তো পনের দিনের মধ্যে বিয়েটা সেরে ফেলতে চাচ্ছে। এই পনের দিনের মধ্যে যদি বিয়ে না তাহলে নাকি দুই মাস পর হবে বিয়েটা।”

মিরা পাপা মিরার ফুপার দিকে তাকিয়ে বলল,

—” হ্যা, কাল তো তাই বলল সবাই। অভ্রর বাবা মানে ভাইয়া নাকি অফিসের কাজ বিদেশ যেতে হবে এক মাসের জন্য। তাই ভাইয়া দেশে থাকতে থাকতে ওদের বিয়েটা দিতে চাচ্ছে।”

মিরা দাদা ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,

—” আমার মনের পনের দিনের মধ্যে বিয়েটা দিয়ে দেওয়াই ভালো হবে। কারণ শুভ কাজে দেরি করতে নেই।”

মিরা ফুপা মিরার দাদার দিকে তাকিয়ে বলল,

—” বাবা আপনি যা ভালো বুঝবেন তাই করুন। আমার আপনজন বলতে শুধু আপনার এই আছে এই পৃথিবীতে। তাই আপনার যে সিদ্ধান্ত নিবেন তাই হবে।”

মিরার পাপা মিরার দাদার দিকে তাকিয়ে বলল,

—” বাবা তাহলে পনের দিন পরে বিয়ে সেই অনুযায়ী অ্যারেঞ্জমেন্ট শুরু করে দেই?”

মিরা দাদা সবার দিকে তাকিয়ে বলল,

—” তাই ভালো হবে তোমরা সবাই কেনাকাটা শুরু করে দাও।”

নিঝুম নীলার হাতে একটা চিমটি কেটে বলল,

—” আর মাত্র পনের দিন তারপর আপনি মিসেস অভ্র।”

নিঝুমের কথা শুনে নীলার লজ্জায় লাল হয়ে যায়।

_____________________

দুপুর বারোটায় টার বেশি বাজে। মিরা অনেকক্ষণ ধরে মিহান আর মিরানকে খুঁজে চলেছে। বাড়ির মধ্যে তাদের না পেয়ে চলে আসে বাগান দিকে। একটু এগিয়ে দেখে সুইমিংপুল সাইডে দুজনে ফুটবল নিয়ে খেলছে। মিরা মিষ্টি হেসে ওদের দিকে এগিয়ে যায়। মিরা কে দেখতে পেয়ে মিরান দৌড়ে মিরার দিকে আছে। মিরা হাঁটু গেড়ে বসে মিরানের সামনে, দৌড়াদৌড়ি করে একদম ঘেমে গেছে মিরান। মিরা মিরানকে চোখ রাঙিয়ে বলল,

—” দৌড়াদৌড়ি করেছো কেনো? দেখেছো কেমন ঘেমে গেছো।”

মিরান হাসি মুখে বলল,

—” পাপার থাথে খেলথিলাম তো মাম্মা!”

মিরা ওর গালে হাত দিয়ে বলল,

—” তাই বলে এই দুপুরের কড়া রোদের মধ্যে?”

মিহান ওদের কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলল,

—” এই তুমি আমার ছেলেকে একদম বকবে না বলে দিলাম।”

মিরা দাঁড়িয়ে গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বলল,

—” এরকম রোদের মধ্যে খেললে একশো বার বকবো কী করবে তুমি?”

মিহান মিরার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল,

—” কী করব তাই না? ওয়েট!”

মিরা কিছু বুঝে উঠার আগেই মিহান ওকে ধাক্কা দিয়ে সুইমিংপুলে ফেলে দেয়। মিরা সুইমিংপুল দাঁড়িয়ে রেগে চিৎকার করে বলল,

—” ভীতুরাম তোকে আমি ছাড়বো না। আজ তোর এক দিন কী আমার একদিন।”

মিরান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল,

—” পাপা তুমি আমাল মাম্মা কে পানিতে ফেলে দিলে কেনু?”

মিহান সুইমিং পুলের পাশে দাঁড়িয়ে মিরার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল,

—” বেশ করেছি ফেলে দিয়েছি।

মিরান মিহানের কথা শুনে রেগে গিয়ে ছোট ছোট হাতে মিহান কে ধাক্কা দিয়ে সুইমিংপুলে ফেলে দেয়। মিহান হাবুডুবু খেয়ে কোনো মতে সুইমিংপুলে মধ্যে দাঁড়ায়। আর এদিকে মিরা মিরানের এমন কাজে গগন ফাটিয়ে হাসছে। পেটে হাত দিয়ে কোনো মতে হাসি থামিয়ে বলল,

—” এই না হলে আমার মিরান বাবা! আসো মাম্মার কাছে আসো সোনা।”

মিরান ছোট ছোট পায়ে এসে সুইমিং পুলের কোনায় দাঁড়ায়। মিরা মিরানকে কোলে নিয়েসুইমিং পুলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে মিহানের কাছে যায়। মিরা মিহানের মুখে পানি ছুড়ে ঠোঁট চেপে হেসে বলল,

—” কী আর কখনো লাগতে আসবে আমাদের মা ছেলের সাথে?”

মিহান করুণ চোখে মিরানের দিকে তাকায়। সে তার মাম্মার গালা জড়িয়ে ধরে আছে পানির মধ্যে। মিরা মিহানের মুখের এক্সপ্রেশন দেখে আবার জোরে হেসে দেয়।
#না_চাইলেও_তুই_আমার_02
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্বঃ ৩৮
খান বাড়িতে কারো দম ফেলার সময় নেই বাড়ীর বড়মেয়ের বিয়ে বলে কথা। আত্মীয়-স্বজনের ভরে উঠেছে খান বাড়ি কোনায় কোনায়। কাল বাদে পরশু বিয়ে নীলা আর অভ্রর। নীলার বিয়ে উপলক্ষে মিরার পাপা প্রেম আর প্রিয়ার বাবা-মাকে ইনভাইট করেছে। তারা এখানে এসে প্রেমের প্রিয়ার সাথে সমস্ত সমস্যা মিটিয়ে নেয়। প্রিয়ার বাবা সেও তার নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। তার মেয়েকে খুশি দেখে তার মনে আর কোনো দোটানা নেই। মিরার বোনের বিয়ে অথচ মিরাই বাড়িতে থাকে না। সারাদিন মিহান আর মিরানের সাথে ঘুরে বেড়ায়। তিনজনে পুরো ঢাকা শহর চষে বেড়ায়। মিহান মিরাকে স্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছে, নীলার বিয়ের এক মাসের মধ্যে সে মিরা কে বিয়ে করবে। তাতে যদি মিরা রাজি না থাকে তাহলে ওকে জোর করে বিয়ে করবে। সেদিন মিরা মিহানের কথা শুনে খুব হেসেছিলো।

রাত সাড়ে দশটা। মিরারা এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে ঢাকা শহরের অলিগলি। মিহান গাড়ি ড্রাইভ করছে। মিরান মিরার কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে। ছোট ছোট চোখে আর কতক্ষণ তাকিয়ে থাকা সম্ভব। সেই বিকেলে বের হয়েছে বাবা-মার হাত ধরে। মিরা বসে বসে ভাবছে, মিহান ওর জীবনে এসেছে পর থেকে কতটা বদলে গেছে মিরা। আগের মতো কথায় কথায় এখন আর রাগ করে না। মারামারি করে না। নিজের মধ্যে কেমন একটা মা মা সত্তা এসে গেছে। ভাবনার ইতি ঘটে হঠাৎ ফোনের শব্দে। ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে ওর মাম্মা ফোন করেছে। মিহান গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে বলল,

—” কে ফোন করেছে?”

মিরা মিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,

—” মাম্মা।”

মিহান আর কিছু না বললে। মিরা ফোন রিসিভ করে। মিরা কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে মিরার ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,

—” রাত কটা বাজে সেদিকে তোর খেয়াল আছে? তোদের কথা বাদ দিলাম ছোট বাচ্চাটার কথাও তোরা ভাববি না?”

মিরা ওর মাম্মার রেগে থাকতে দেখে মৃদু স্বরে বলল,

—” এইতো মাম্মা আমরা আসছি, রাস্তায় আছি এখন। আর মিরান ঠিক আছে। একদম চিন্তা করো না।”

মিরার মাম্মা রাগ দেখিয়ে বলল,

—” তোর বড় বোনের বিয়ে আর অথচ তুই বাড়িতে নেই। সব আত্মীয়-স্বজন এসেছে জিজ্ঞেস করেছে মিরা কোথায়? এসেছি পর থেকে তাকে দেখলাম না? শোন আমি তোকে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছি এই দুটি যদি তুই বাড়ি থেকে বের হয়েছিস তাহলে দেখিস আমি তোর কী করি। মিহান বেচারা সিলেট থেকে এসেছে পর থেকে তোর যন্ত্রণা একটু রেস্ট নিতে পারেনি ঠিক মতো। সারাদিন দৌড়াদৌড়ি ঘুরাঘুরি নিয়েছিস। তাড়াতাড়ি বাড়ি আয়।”

মিরার মাম্মা ফোন কেটে দিলে মিরা হা করে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। মিহান ড্রাইভ করার মাঝে মিরার দিকে তাকিয়ে বলল,

—” কী হলো মুখটা ওমন করে রেখেছো কেনো?”

মিরা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,

—” কেনো আবার তোমার হবু শাশুড়ির জন্য, বলে কী না মিহান বেচারা কে নিয়ে আমি ঘুরে বেড়াচ্ছি। আর সে তো জানে না তার মিহান বেচারা এসব করছে।”

মিরার কথা শুনে মিহান দাঁত কেলিয়ে হেসে দিয়ে বলল,

—” এই না হলে আমার শাশুড়ি!”

মিহানের কথা শুনে মিরা ভেংচি কেটে মিরানকে দুই হাত দিয়ে ভালো করে আঁকড়ে ধরে।

__________________

কিছুক্ষণ পর নীলার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে। নীলকে স্টেজে নিয়ে ফটোশুট চলছে। মিরা নিচে এসে নীলার কাছে না গিয়ে বাড়ির গেটের দিকে যাচ্ছে। মিরা কে ওদিকে যেতে দেখে নিঝুম ডাক দিয়ে বলল,

—” আপু তুমি ওদিকে কোথায় যাচ্ছ? নীলা আপু কখন থেকে তোমাকে খুঁজছে, চলো আপুর কাছে যাবে।”

মিরা নিঝুমের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল,

—” একটু পরে যাচ্ছি। আগের মিহান আর মিরান আসুক তারপর!”

মিরার কথা শুনে ঠোঁটে হাসি এনে বলল,

—” তুমি চিন্তা করে না তারা বাবা ছেলে ঠিক সময়ে এসে যাবে।”

মিরা নিঝুমের কথা শুনে মৃদু হেসে বলল,

—” কী জানি দুপুরে এসে মিরান কে নিয়ে গেলো, বললো আমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।”

নিঝুম গেটের দিকে তাকিয়ে আনমনে বলল,

—” সারপ্রাইজ ই বটে।”

মিরা নিঝুমকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল,

—” কী বলছিস তুই?”

নিঝুম গেট থেকে চোখ সরিয়ে মিরার দিকে তাকিয়ে বলল,

—” গেটের দিকে তাকাও তাহলে বুঝতে পারবে!”

নিঝুমের কথা মতো মিরা গেটের দিকে তাকায়। মুহূর্তেই চোখ বড় বড় হয়ে যায় মিরার। মিহান আর মিরান অবিকল এক পাঞ্জাবি পড়েছে। শুধু পাঞ্জাবি নয়, হেয়ার স্টাইল থেকে শুরু করে জুতো টা পর্যন্ত অবিকল এক পড়েছে। মিরান মিহানের হাত ধরে হেঁটে আসছে, ওদের পিছনে মিহানের মম, পাপা আর অনুও আসছে। কিন্তু মিরার নজর আটকে গেছে বাবা ছেলের উপর। মিহান মিরাকে দেখে মিষ্টি করে হেসে দেয়। মিরা জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে মুচকি হেসে বিড় বিড় করে বলল,

—” অসাধারণ লাগছে দুজনকে। কাকে রেখে কাকে দেখব আমি নিজেই বুঝতে পারছি না। যাকেই দেখি না কেনো মানুষ দুটি তো আমার।”

নিঝুম মিরার কাঁধে হাত রেখে বলল,

—” কী বলছো বিড়বিড় করে।”

মিরা নিঝুম এদিকে একনজর তাকিয়ে বলল,

—” কিছু না তুই থাক, আমি মিরানের কাছে যাই।”

নিঝুম কিটকিটিয়ে হেসে বলল,

—” হ্যা, তা তো যাবেই জিজু এসে গেছে না। আচ্ছা তুমি যাও তোমার প্রাননাথ এর কাছে, আমিও যাই ওদিকে দেখে আসি কে কী করছে।”

নিজের মেয়ের কথা শুনে মিরা মুচকি হেসে এগিয়ে যায় মিহানদের দিকে। মিরা একনজর মিহান কে দেখে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে মিরানের সামনে ওর কপালে চুমু দিয়ে বলল,

—” You look like a prince.”

মিহান মিরানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মিরার দিকে তাকিয়ে বলল,

—” You’re wrong Janpakhi. He doesn’t look like a prince. He is a prince. Prince of our kingdom.”

মিরা মিহানের কথা শুনে হেসে দেয়। মিরান মিরার গালে দুহাত দিয়ে বলল,

—” মাম্মা তুমাকে খুব থুন্দর নাগছে। একদম ডলের মত।”

মিরা মিরানের হাতের উপর হাত রেখে একটা হাতে চুমু দিয়ে বলল,

—” তাই সোনা।”

মিরান হেসে বলল,

—” অহহহ মাম্মা।”

মিরানের কথা বলার ভঙ্গিমা দেখে সবাই হেসে দেয়।

__________________

দেখতে দেখতে নীলার বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যায়। নীলার বিয়ের অনুষ্ঠানের দুই সপ্তাহ পর প্রেম আর প্রিয়া ওদের বাবা-মার সাথে লন্ডন চলে যায়। প্রিয়া যাবার আগে মিরা জন্য অনেক কান্না করেছিলো, পরে প্রেম আর মিরা মিলে ওকে শান্ত করে। মিরা আজ ভার্সিটিতে যাবে সাথে মিরানকে নিয়ে যাবে। দুজনে রেডি হয়ে নিচে আসে ব্রেকফাস্ট করার জন্য। মিরানকে দেখে মিরার মাম্মা বলল,

—” দাদুভাই এরকম হিরোদের মত সেজেগুজে কোথায় যাচ্ছ? মেয়েরা দেখলে তো কিডন্যাপ করে নিয়ে যাবে তখন কি হবে একবার ভেবে দেখেছো?”

মিরান ছোট ছোট হাতের সানগ্লাস খুলে বলল,

—” কিথু হবে দাদু আমাল মাম্মা পাপা আথে না।”

মিরানের কথা শুনে মিরার মাম্মা হেসে বলল,

—” তা কোথায় যাওয়া হচ্ছে রকম হিরো সেজে?”

মিরান মিরার মাম্মার দিকে তাকিয়ে বলল,

—” মাম্মা বাতথিতিতে।”

মিরা মিরানের কথা শুনে একগাল হেসে বলল,

—” বাবা ওটা বাতথিতি হবে না হবে ভার্সিটি।”

মিরান কিউট ফেইস করে বলল,

—” মাম্মা পালি না তো!”

মিরানের কথা শুনে মিরা আর ওর মাম্মা হেসে দেয়। মিরা ওর গালে চুমু দিয়ে বলল,

—” থাক পারা লাগবেনা।”

মিরা আর মিরান একসাথে ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পরে ভার্সিটিতে উদ্দেশ্যে।

মিরা আর মিরান ভার্সিটি গেট দিয়ে ঢোকার সময় কেউ পিছন থেকে ডাক দেয়। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে নীলা আর অভ্র। মিরা হাসিমুখে ওদের দিকে এগিয়ে যায়। মিরা ওদের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,

—” Newly married couple. কেমন আছো তোমরা?”

অভ্র মিরানকে কোলে নিয়ে বলল,

—” এইতো বোন ভালো আছি তুই কেমন আছিস? আর এই যে আমার মিরান বাবা তুমি কেমন আছো?

মিরান একগাল হেসে বলল,

—” আমি ভালো আথি মামা। তুমি কেমুন আথো?”

অভ্র হেসে বলল,

—” আমিও ভালো আছি।”

মিরা মৃদু স্বরে বলল,

—” আমরা সবাই ভালো আছি। নীলা আপু বিয়ে হতে না হতেই ভার্সিটিতে চলে এসেছো। কোথায় দুজন একটু ঘুরবে তা না।”

মিরার কথা শুনে নীলা মুখ বাঁকিয়ে বলল,

—” আমার এত ঘোরার শখ নেই। ইম্পর্টেন্ট একটা ক্লাস আছে তাই এসেছি ভার্সিটিতে নাহলে আসতাম না।”

অভ্র মিরানকে নীলার কোলে দিয়ে বলল,

—” তোমরা ঝগড়া করো আমি যাই আমার অফিসের দেরি হয়ে গেছে।”

নীলা অভ্রর দিকে তাকিয়ে বলল,

—” সাবধানে যাবে। আর পৌঁছে আমাকে ফোন করবে।”

অভ্র মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে মিষ্টি করে হেসে চলে যায়। মিরা আর নীলা নিজেদের ক্লাসের দিকে যেতে যেতে নীলা বলল,

—” তুই একা ভার্সিটিতে আসলে যে, মিহান ভাইয়া কোথায়?”

মিরা হাঁটতে হাঁটতে ছোট করে বলল,

—” হসপিটালে আছে, কালকে রাতে এমার্জেন্সি পড়ে গেলিলো তাই।”

নীলা গম্ভীর মুখ করে বলল,

—” এই ডক্টরদের কখন যে এমার্জেন্সি পড়ে যায় তা শুধু আল্লাহ জানে।”

মিরা হাঁটা থামিয়ে বলল,

—” হুম, এখন মিরানকে দেও আমার কাছে। তোমার তো এখন ক্লাস আছে তাই না?”

নীলা মিরার দিকে তাকিয়ে বলল,

—” তুই ক্লাসে যা। মিরান বরং আমার কাছে থাক।”

মিরা কপাল ভাঁজ করে বলল,

—” পারবে তো সামলাতে ওকে।”

নীলা ভাব নিয়ে বলল,

—” আমি তোর বড় বোন। আমি তোর থেকেও আরো ভালো পারবো ওকে সামলাতে।”

মিরা নীলার কথায় হেসে বলল,

—” ঠিক আছে যাও তাহলে। আমিও আমার ক্লাসে যাই।”

নীলাও হেসে মিরানকে কোলে নিয়ে হাটা শুরু করে ক্লাস রুমের দিকে।

মিরা ক্লাস শেষ করে বন্ধুদের সাথে গাছের নিচে বসে আড্ডা দিচ্ছে। মিরা অবশ্য অপেক্ষা করছে নীলা আর মিরানের জন্য। ওদের কথার মাঝে কিছু মেয়ে এসে বলল,

—” আপু তুমি কী মিরা আপু?”

মিরা আবাক হয়ে ওদের কথায়। তবুও মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় ওই মিরা। মেয়েগুলো মিষ্টি হেসে মিরার সামনে এসে দাড়িয়ে বলল,

—” আপু তুমি একটু মিরানকে বলো না, আমাদের কাছে আসতে।”

মিরা কপালে চিন্তার ভাঁজ ফুটিয়ে বলল,

—” কেনো কী হয়েছে?”

পাশে থাকা অন্য মেয়েটা বলল,

—” কী হয়নি তাই বলো আপু! পুরো ভার্সিটি মিরানের ফ্যান হয়ে গেছে। আমি মিরানকে দেখে ক্রাশ খাইছি। আমি কেনো ইভেন সবাই।”

মিরা কপালের ভাঁজ সরিয়ে বলল,

—” কী বলছো তোমরা? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।”

অপর পাশের মেয়েটা বলল,

—” আমি বলছি আপু, মিরান এত কিউট যে কেউ ওকে আদর না করে থাকতে পারবে না। নীলা আপুর ক্লাসের সবাই ওকে কোলে নিয়ে আদর করতে চেয়েছে ইভেন তিন চার জন ম্যাডামরাও। কিন্তু মিরানের এক কথা ওরা মাম্মা Stranger কাছে যেতে বারণ করেছে। তাই তুমি একটু ওকে বলে দাও আমাদের কাছে যেতে।”

মিরা এতক্ষণে সব বুঝতে পেরে হাসিমুখে বলল,

—” আচ্ছা ঠিক আছে মিরান আমার কাছে এলে আমি বলে দেবো।”

মেয়েগুলোর হাসিমুখে বলল,

—” থ্যাংক ইউ আপু। থ্যাংক ইউ সো মাচ।”

মিরা হেসে আবার ওদের আড্ডার জায়গায় এসে বসে। মিরার সামনাসামনি বসে থাকা মেয়েটা বলল,

—” কখন আসবে মিরান? মিহান ভাইয়ার আইডিতে নীলা আপুর বিয়ের ছবিতে দেখছিলাম ওকে।”

মিরা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল,

—” এসে যাবে চিন্তা করিস না মুন। নীলা আপুর বিয়েতে আমি তোদের কাউকে ইনভাইট করতে পারিনি। তোদের কারো কন্ট্রাক্ট নাম্বার আমার কাছে ছিলো না তাই। সরি রে।”

মুন হেসে বলল,

—” ঠিক আছে আমরাও কিছু মনে করিনি। আমরাও মনে করেছি তোর কাছে আমাদের কন্ট্রাক্ট নাম্বার নেই। আর তুই একদম চিন্তা করিস না তোর বিয়েতে আমরা সব উসুল করে নিবো।”

মুনের কথা শুনে সবাই হেসে দেয়। এরমধ্যে মিহান ধীর পায়ে এগিয়ে আসে মিরাদের দিকে। মিহানকে দেখে সবাই উঠে চলে যেতে চাইলে মিহান ওদের থামিয়ে বলল,

—” আরে তোমরা যাচ্ছো কেনো বসো।”

মুন আমতা আমতা করে বলল,

—” না ভাইয়া ঠিক আছে আপনার কথা বলুন আমরা বরং আসি।”

মিহান ওদের দেখে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল,

—” আরে‌ বসো তো তোমরা।”

মিহানের কথা মতো যে যায় জায়গায় বসে পড়ে। মিরা মিহানের দিকে এতক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। মিহান‌ মিরার দিকে ফিরলে মিরা বলল,

—” এই গরমের মধ্যে জ্যাকেট পরেছো কেনো?”

মিহান গায়ে থাকা জ্যাকেট টা খুলে মিরার হাতে দিয়ে বলল,

—” কাল রাতে একটু শীত শীত পড়েছিলো তাই জ্যাকেট টা পড়ে গেছিলাম হসপিটালে। মিরান কোথায়?”

মিরা ছোট করে বলল,

—” নীলা আপুর সাথে আছে। এসে যাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই।”

মিহান মিরার গা ঘেষে বসে বলল,

—” হাই গাইস। তোমরা সবাই কেমন আছো?”

সবাই একসাথে বলল,

—” আমরা সবাই ভালো আছি ভাইয়া। আপনি কেমন আছেন?”

মিহান মিরার কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে বলল,

—” আমিও ভালো আছি। তোমরা সবাই কথা বলো ততক্ষণে আমি একটু রেস্ট নিয়ে নেই।”

মিরা মিহানকে আগলে ধরে ওদের সাথে কথা বলতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পর যখন সূর্যের আলো মিহানের মুখের উপর পড়ে তখন মিরা মিহানের জ্যাকেটটা দিয়ে মিহানকে ঢেকে রেখে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। তা দেখে মিরার সবকটা বন্ধু কিটকিটিয়ে হেসে ফেলে। বেশ কিছুক্ষণ পর রিসাব আর ওর দলবল নিয়ে মিরাদের সামনে এসে হাজির হয়। রিসাব মিরার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

—” মিরা তুমি কেনো বুঝতে পারছো না আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি। আমি তোমার জন্য সব কিছু করতে পারি। তুমি কী মিহান কে ভয় পাচ্ছো? ওকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তুমি শুধু একবার আমার হয়ে যাও, তখন ওর মত গুন্ডা তোমার ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারবেনা।”

রিসাবের কথা শুনে মিরার বন্ধুরা সবাই মুখ টিপে হাসতে শুরু করে। মিরা ঠোঁটে কামড়ে হেসে বলল,

—” মিহান যে গুন্ডা তা তোমাকে কে বললো?”

রিসাব ভাব নিয়ে বলল,

—” কে না জানে মিহান গুন্ডা। MM গ্ৰুপের লিডার ও। সবাই ওকে ভয় পেতে পারে। কিন্তু আমি ভয় পাই না। তুমি একদম চিন্তা করো না। আমি থাকতে ঐ গুন্ডা টা তোমার কিছু করতে পারবে না।”

মিরা রিসাবের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে মিহানের মুখের উপর থেকে জ্যাকেট টা সরিয়ে নেয়। রিসাব আর রিসাবের দলবল চোখ বড় বড় করে মিরা আর মিহানের দিকে তাকিয়ে আছে। মিহান মিরার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে আর এক হাত দিয়ে মিরার কোমর জড়িয়ে ধরে আছে। মিরা ওদের দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,

—” এখন কী তোমরা এখন থেকে ভালোয় ভালোয় যাবে নাকি ওকে ঘুম থেকে তুলবো আমি।”

মিরা রাগী চোখ দেখে সবাই মানে মানে কেটে পড়ে। রিসাবদের অবস্থা দেখে মিরার বন্ধুরা সবাই জোরে হেসে দেয়। ওদের হাসির শব্দে মিহানের ঘুম ভেঙে যায়। মিহান মিরার কাঁধ থেকে মাথা সরিয়ে বলল,

—” কী হলো এতো হাসাহাসি করছো কেনো তোমরা?”

মিরা মিহানকে বুঝতে না দিয়ে বলল,

—” কিছু না তুমি ঘুমাও।”

মিহান সোজা হয়ে বসে বলল,

—” না এখন আর ঘুমাবো না। আরে ঐ তো আমার মিরান বাবা এসে গেছে।”

মিহান এগিয়ে গিয়ে নীলার কোল থেকে মিরানকে কোলে নেয়। আরো কিছুক্ষণ সবাই একসাথে আড্ডা দিয়ে পরে সবাই বাড়ি যাবার পথ ধরে। মিহান মিরা আর মিরানকে খান বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে বলল,

—” জানপাখি আজ বিকালে তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”

মিরা চোখ ছোট ছোট করে বলল,

—” সারপ্রাইজ? কী সারপ্রাইজ?”

মিহান একগাল হেসে বলল,

—” সারপ্রাইজ যদি বলেই দিই তাহলে সারপ্রাইজ কিসের?”

মিরা মুখ ভার করে বলল,

—” লাগবেনা আমার সারপ্রাইজ।”

মিহান বাঁকা হেসে বলল,

—” রেডি থেকো সারপ্রাইজটা সামলানোর জন্য।”

মিরা ভেংচি কেটে বলল,

—” খারুস কোথাকার। আমিও দেখবো কী সারপ্রাইজ দেন উনি।”

এই বলে মিরা হনহনিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে যায়। মিহান মিরার যাবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দেয়।

#চলবে….
#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here