না চাইলেও তুই আমার বোনাস এবং ৭ পর্ব

#না চাইলেও তুই আমার (Villan Love’s)
#বৃষ্টি আক্তার ( Dr’s Queen)
#বোনাস পার্ট

এইভাবে প্রায় কিছুক্ষণ ওনাকে তাড়া করে গেলাম।একপর্যায়ে অনেক হাঁপিয়ে যাই। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খুব জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছি।তখন উনি এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে –

– আমার নিধু রানী হাঁপিয়ে গিয়েছে বুঝি!
– কে নিধু রানী হুম! আমি কারো নিধু রানী না।আমি তো চিকনি, ষাঁড়ের মতো চেঁচাই😒
– ওইটা তো মজা করে বলেছি।আচ্ছা সরি।
– সরি বললে হবে না।আমার অন্য কিছু লাগবে😁
– কি লাগবে তোমার🙄
– এত্তগুলা কিটক্যাট চকোলেট😋
– আল্লাহ গো শেষ পর্যন্ত একটা বাচ্চাকে আমি বিয়ে করলাম😩
– আমি মোটেও বাচ্চা না 😒।আমার কিটক্যাট চকোলেট খেতে খুব ভালো লাগে তাই বলেছি।আর চকোলেট কি শুধু বাচ্চারা খায় নাকি!
– হুম বাচ্চারাই তো খায়।
– কই চকোলেটের প্যাকেটে তো কখনো লেখা দেখিনি চকোলেট শুধু বাচ্চাদের জন্য🤔
– 🙄🙄🙄
– এইভাবে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই।এনে দিবেন কিনা সেটা বলেন।
– আচ্ছা দিবো।এখন ফ্রেশ হয়ে খেতে চলো।দুপুরেও খাওনি।
– খাইনি নাকি খেতে দেন নি 😒
– আচ্ছা সরি।এখন চলো।
– হুম চলুন।

ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলাম।নিচে নেমে দেখি উনি আমার জন্য অপেক্ষা করছেন।আমাকে নামতে দেখে বলে উঠলেন –

– তোমাদের মেয়েদের সমস্যা কি বলতো! সব জায়গায় দেরি করো। ফ্রেশ হতে বুঝি এতক্ষণ লাগে।ওয়াশরুমে কি করো এতক্ষণ বুঝিনা বাবা।
– একটু দেরিই তো হয়েছে তার জন্য এতো কথা শোনানোর কি আছে আজীব।
– তুমি একটু দেরি বলছো!!! প্রায় ৪৫ মিনিট তুমি ওয়াশরুমে কাটাইছো।
– আচ্ছা যাই হোক।এর জন্য এতো কথা শুনাতে হয় বুঝি😒
– ওকে ওকে আর কথা শুনবো না।এবার খেয়ে নেন মেম।
– হুম খাচ্ছি।আপনিও খেয়ে নেন।
– খাবো কিন্তু পরে। আগে তুমি খেয়ে নেও। ওয়েট আমি খাইয়ে দিচ্ছি হা করো।
– খাইয়ে দিতে হবে না আমি নিজের হাতে খেতে পারবো।
– আমাকে রাগিও না।যেটা বলছি সেটা করো।
– হুম।

লোকটা এমন কেন।পুরো শরীরে রাগ ছাড়া আর কিছুই নেই।হনুমান একটা।জীবনেও ভালো বউ পাবি না দেখে নিস।আমার মতো সহজ সরল মেয়েকে এইভাবে বকছিস।তোর কপালে দুঃখ আছে দেখে নিস হুম ।আমার নামও নিধি হাসান😤

– গালাগালি, বকাবকি দেওয়া শেষ হলে একটু শান্ত হয়ে বসে খাবার টা খান।

ওনার কথা শুনে আমার কাশি উঠে গেলো।এই লোক মনোবিজ্ঞানী নাকি।মনের কথা গুলো কিভাবে বুঝে ফেলে।

– সেটা তোমার না ভাবলেও চলবে।আচ্ছা নিধু তুমি কবে থেকে এতো বেশি খাওয়া শুরু করছো?

ওনার কথা শুনে আমি হকচকিয়ে গেলাম।প্লেটের দিকে তাকিয়ে দেখি আমি প্লেটের সবটা খাবার আজকে ফিনিস করেছি।আগে আমি অর্ধেক খাবার খেতে অনেক কষ্ট হয়ে যেতো কিন্তু আজ পুরো এক প্লেট খাবার শেষ করলাম কিভাবে বুঝতেই পারছি না।

– বুঝতে পেরেছি আজ থেকে আমারই তোমাকে খাইয়ে দিতে হবে।নাহলে তো সারাজীবন চিকনিই থেকে যাবে।

আমি রাগী চোখে তার দিকে তাকালাম।উনি এখনো মিটিমিটি হাসছে আমার চাহনি দেখে।

– যাও রুমে গিয়ে রেস্ট নেও।
– আপনি খাবেন না!
– হুম খাবো।তুমি যাও।
– না আমি কেনো যাবো! আপনি আমার সামনেই খাবেন।
– নিধু এক কথা আমার দুইবার বলতে ভালো লাগে না।যেটা বলছি সেটা করো।
– না আমি যাবো না।
– যেতে বললাম না তোমায়।এক কথা কেনো বারবার বলতে হয় তোমাকে ( জোরে ধমক দিয়ে)

ওনার ধমকে আমি কান্না করে দিলাম।

– এই চুপ ।একদম কান্না করবা না।কান্না ছাড়া কি আর কিছুই পারোনা নাকি( আরো জোরে ধমক দিয়ে)

এবার আমি খুব শব্দ করেই কেদে ফেলি।উনি এবার আমাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলেন

– নিধু কেনো রাগিয়ে দেও আমায়।তুমি তো জানোই আমার কথা না শুনলে আমার খুব রাগ হয় আর তখন আমি কি করি নিজেও জানিনা প্লিজ কেদো না।

কাদতে কাদতে হিচকি তুলতে তুলতে বললাম

– আমাকে আপনি একটুও ভালোবাসেন না।খালি ধমক দেন ,বোকা দেন ( কাদতে কাদতে)
– আচ্ছা সরি আর কখনো বোকা দিবো না।এবার তুমি রুমে যাও কেমন।
– না আমি যাবো না।আমি আপনার খাওয়া দেখবো ।
– নিধু আবার ( ধমকের সুরে)
– দেখলেন আপনি আমাকে আবার ধমক দিলেন ( কেদে দিয়ে)
– আচ্ছা ঠিক আছে তোমার কোথাও যেতে হবে না ।তুমি এখানেই বসে থাকবে।কিন্তু কোনো কথা বলতে পারবে না ওকে ।
– আচ্ছা।

কথা শেষ করে উনি ওনার খাবার প্লেট টা নিলেন।ওনার খাবার টা লাল দেখা যাচ্ছে।মনে হচ্ছে কেউ এত্তোগুলো মরিচ এনে ওনার খাবারে ঢেলে দিয়েছেন।আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই উনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলতে লাগলেন –

– কোনো কথা বলতে নিষেধ করেছি কিন্তু।

আমি আর কিছুই বলতে পারলাম না।উনি মরিচ মেশানো খাবার টা খেতে শুরু করলেন।ঝালে ওনার পুরো মুখটা লাল হয়ে গেছে।চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।তবুও উনি খাবার টা খেয়েই যাচ্ছেন।এবার আর আমি চুপ করে বসে থাকতে পারলাম না।।।

#না চাইলেও তুই আমার (Villan Love’s)
#বৃষ্টি আক্তার(Dr’s Queen)
#পার্ট:৭

– আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন! কি করছেন এগুলো!
– তো তো তোমাকে চু চুপ করে ব বসে থাকতে বলছি না।
– আপনি ঝালের জন্য কথা বলতে পারছেন না তাও এই ঝাল খাবার টা খেয়েই যাচ্ছেন !!!! (রাগী গলায়)

উনি ঝালের জন্য কোনো কথাই বলতে পারছেন না।ওনার এই অবস্থা দেখে আমার এখন কি করা উচিত কিছুই বুঝতে পারছি না।দৌড়ে গিয়ে পানি এনে ওনাকে পানি খাওয়ালাম এতেও যেনো ওনার ঝাল কমছেই না।কি করবো বুঝতে পারছি না।তখনই হুট করে উনি ওনার ঠোঁট আমার ঠোঁটের উপর চেপে ধরলেন।ওনার এহেম আচরণে আমি যেনো জমে গেলাম।প্রায় অনেক্ষন পর উনি আমাকে ছাড়লেন।আমি জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছি সাথে উনিও।ওনাকে দেখে মনে হচ্ছে ঝাল কমেছে ওনার।

– নিধু তোমার ঠোঁটের স্বাদ নেওয়ার জন্য হলেও আমি প্রতিদিন ঝাল খেতে রাজি আছি😉
– অসভ্য লোক কোথাকার😠
সুযোগ পেলেই আমার ঠোঁটের উপর টর্চার করা শুরু করে।
– এটাকে টর্চার বলে নাতো।এটাকে আদর বলে নিধু রানী 😁
– কচু বলে।কে বলেছিল আপনাকে এই ঝাল খাবার টা খাওয়ার জন্য হুম😠
– কেউ না🙄
– তাহলে খেলেন কেনো😤
– আমি আজকে আমার নিধু রানী কে অনেক ঝাল খাইয়েছি তাই তার কষ্টের ভাগ টা নেওয়ার জন্য আমিও ঝাল খেলাম☺️
– তাই বলে এতো ঝাল খাবেন!
– তোমাকে কষ্ট দেওয়ার পর সেই কষ্ট আমি কেনো পাবো না বলো!তোমার সুখ – দুঃখ তো আমাকেই ভাগ করে নিতে হবে তাইনা।তাই তোমাকে কষ্ট দেওয়ার পর সেই কষ্ট আমি নিজেকেও দেই।

ওনার কথা শুনে খুব অবাক হলাম।আমাকে কষ্ট দেওয়ার পর উনি নিজেকেও কষ্ট দিতো !

– আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে হবে না।আজকে অনেক ধকল গেছে তোমার উপর দিয়ে।চলো এখন ঘুমাবে।
– ধকল টা তো আপনিই দেন।আমার উপর কি আর এমনি এমনি ধকল যায় নাকি!
– ,,,,,,,,,,,,
– চলুন ।

উনি আমাকে উনার রুমে নিয়ে গেলেন ।

– একি আমি কি আপনার রুমে ঘুমাবো নাকি?
– হুম।তাহলে কার রুমে ঘুমাবে?
– আমি আমার রুমে ঘুমাবো।আমি আপনার সাথে একই রুমে ঘুমাতে পারবোনা।
– কেনো নিধু! তুমি তো এখন জেনেই গেছো আমাদের যে বিয়ে হয়েছে তাহলে এক রুমে থাকতে প্রবলেম কি?

– আমি কারো সাথে রুম+ বেড শেয়ার করতে পারি না।আর যদি সেই ব্যাক্তিটি কোনো ছেলে হয় তাহলেতো আমি আরো আগেই শেয়ার করতে পারবো না।😌

– কিন্তু আমি তো তোমার স্বামী তাইনা।
– স্বামী বলে কি আপনি ছেলে না নাকি🤔
– উফ নিধু।
– জি বলুন🙃
– ওকে তোমাকে আমার রুমে ঘুমাতে হবে না। যাও নিজের রুমে গিয়ে ঘুমাও।
– আচ্ছা😌
– আচ্ছা কি! আমি বললাম আর তাই তুমিও আচ্ছা বলে চলে যাবা নাকি😠
– আপনি তো এক কথা দুইবার বলা পছন্দ করেন না তাই আমি আপনার পছন্দ মতোই চলতে চাচ্ছি।
– আল্লাহ।এই মেয়েরে কেও থামাও।
– 😌😌😌
– যাও তোমার রুমে আমি ঘুমাবো ।
– টাটা,,, শুভ রাত্রি 😁
-😒😒😒

ওনার অবস্থা দেখে আমি মিটিমিটি হাসতে হাসতে আমার রুমে চলে আসলাম। আজকে আসলেই অনেক ধকল গেছে ।কান্না করতে করতে খুব ক্লান্ত হয়ে গেছি। কান্না করাতে এখন বেশি ঘুম পাচ্ছে।রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।চোখে অনেক ঘুম। শোয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়েছি।ঘুমের মধ্যে আমার মনে হচ্ছে আমি হাওয়ায় ভাসছি।কিন্তু চোখে অনেক বেশি ঘুম থাকায় চোখ খুলে দেখার মতো শক্তি পাচ্ছি না।
সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি নিজেকে ওনার বুকের উপর আবিষ্কার করলাম।ওনাকে দেখে আমি হকচকিয়ে উঠলাম।

– আরেহ আমি এখানে কি করে আসলাম🤔
আমি তো আমার রুমে ছিলাম।

ওনার দিকে তাকিয়ে খুব ভালো করে ওনাকে পর্যবেক্ষণ করলাম। ওনার ভ্রুয়ের পাশে একটা তিল আছে।আগে কখনো দেখিনি।অবশ্য দেখিনি বললে ভুল হবে।কখনো ওনার দিকে ভালো করে তাকাই নি তো দেখবো কিভাবে।কেন জানিনা ওনার খোচা খোচা দাড়ি গুলো আমার বেশ ভালো লাগে।ইচ্ছে করছে হাত দিয়ে একটু ছুয়ে দেই।
ইচ্ছে যেহেতু করছে তাহলে একটু ছুয়ে দিলে কেমন হয়। যেই ভাবা সেই কাজ। আমি আমার হাত দিয়ে ওনার খোচা খোচা দাড়ি গুলো আলতো করে ছুয়ে দিলাম।ওনাকে দেখে মনে হচ্ছে এই মানুষটা কখনো রাগী হতেই পারে না।কিন্তু উনি পুরোই উল্টো।তার ফেসের সাথে আচরণের কোনো মিল নেই।

– আমাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছো বুঝি।
ওনার কথা শুনে আমি বিষম খেলাম।

– আমাকে আদর করবে ভালো কথা কিন্তু চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছো কেনো। জানিতো আমি অনেক হ্যান্ডসাম তাই বলে একজন ঘুমন্ত মানুষকে এভাবে চোখ দিয়ে গিলে খাবে নাকি।

উনি কথা গুলো চোখ বন্ধ রেখেই বললেন।আমার ওনার কথায় খুব রাগ উঠে যায়।আমি ওনাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছি! কতো বড় কথা বললো আমাকে।

– দেখুন আ..
– কি দেখবো ( চোখ খুলে)
– না মানে শুনুন।আমি মোটেও আপনাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলাম না।আর আপনি কি বুঝে নিজেকে হ্যান্ডসাম ছেলে দাবি করেন 🤔
আপনার মতো খাটাস ছেলে কখনো হ্যান্ডসাম ছেলে হতে পারে না।খাটাস তো খাটাসই হয়।
– কি বললে আমি খাটাস( আমার উপর উঠে)
– আরেহ আরেহ কি করছেন টা কি।
– আমি খাটাস?
– হুম খাটাস।
– আমি খাটাস ( অনেকটা ঝুঁকে)
– ন না মানে
– না মানে কি ? তোতলাচ্ছো কেনো?
– ক কই তোতলাচ্ছি!
– ভয় লাগছে আমাকে?( আরেকটু ঝুঁকে)

ওনার গরম নিশ্বাস আমার মুখের পড়ছে।আমি আর নিতে পারছি না।কেমন জানি অসস্তি লাগছে।ওনাকে খুব জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে আমি উঠেই ভোঁ দৌড় দিলাম।আর উনি জোরে জোরে হাসতে লাগলেন।

নিধিরে এই অসভ্য লোক তোকে একদিন ঠিক মেরেই ফেলবে। আল্লাহ এই লোকরে বুঝে উঠতে পারিনা কেন আমি উফ।

চলবে,,,,

( ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here