নিবিদ্রিতা কাহন পর্ব -১১

#নিবিদ্রিতা_কাহন—১১
®মেহরুমা নূর

★মাইনকার চিপায় পড়ার মতো অবস্থা আদ্রিতার। আর তার এই পরিণতির পেছনে হাত-পা সহ পুরো বডি দিয়ে অবদান রেখেছে তার নিজেরই পরিবার৷ তার প্রতি করা নিজের পরিবারের এমন বর্বরতায় আহত,শোকাহত আদ্রিতা। মাছুম বাচ্চাটার উপর এমন নির্মম অত্যাচার কীভাবে চালাতে পারলো তারা! উপস্থিত সদস্য সহ দূর দেশে অবস্থানরত আদ্রিতার মা-বাবাও তাকে নিক(উকুনের ডিম) পরিমাণও দাম দিলোনা! এই দুঃখে আদ্রিতার নাক ভরে আসছে। আজ সকালটা তার জন্য এমন ভয়াবহ হতে যাবে জানলে সে আজ নিজের সকাল হতে দিতোনা। না সকাল হতো, আর না তার সাথে এমন কিছু হতো। এইতো সকালে সে কি সুন্দর আরামে হেলেদুলে নাস্তার টেবিলে গেল। সোনা মায়ের হাতের বানানো আলুর পরোটা যখন মজা করে খেতেই নিয়েছিলো। অঘটন টা ঠিক তখনই ঘটলো। নূরান কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে তড়িঘড়ি করে বের হতে নিলেই তানি ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল,
“নীড়, নাস্তা না করেই কোথায় যাচ্ছ?”
তানির কথায় নূরান চলতি কদম থামিয়ে বলল,
“সোনা মা,আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে ক্লাসের জন্য। আমি কলেজের ক্যানটিনে কিছু খেয়ে নিবো।”

বলেই বেড়িয়ে গেল নূরান। তবে তার এই বিষয় টা আদ্রিতার জন্য হলো হানিকরক। নূরান বেড়িয়ে যেতেই আদ্রিতার পাশে কাটা চামচের আগায় স্যালাড তুলে মুখে চিবোতে চিবোতে নিবিড় আরমান সাহেবের উদ্দেশ্যে বলল,
“বড় দাদু, নীড়ের কলেজ আছে, ও চলে গেল। তা তোমার নাতনী নামক বদলিটাও তো একই বয়সের, একই ক্লাসে ছিলো। তা ওর কি স্কুল কলেজ নেই নাকি! নাকি বলদিটা বংশের মান উঁচু করে পরিক্ষার খাতায় বিশাল বিশাল রসগোল্লা এনে দিয়ে মিষ্টির দোকান গড়ে দিয়েছে তোমাদের?”

গলায় পরোটা আঁটকে গেল আদ্রিতার। এই সেরেছে! এই ভাইয়াটা বুঝি যেতে যেতে আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে গেল। অনাগত অবস্থান টের পেয়ে আদ্রিতা নিজের সাফাইয়ে মিনমিনিয়ে বলল,
“আ..আমি মাত্র কলেজে ভার্তি হয়েছি। এই সময় তেমন ক্লাস হয়না। তাই যাইনা।”

নিবিড় তিরস্কার স্বরুপ বলল,
“হ্যাঁ হ্যাঁ, আপনিতো মিস ভিক্টোরিয়া। আপনার জন্য স্পেশাল অর্ডারে ক্লাস হবে। তবেই না আপনি পদধূলি দিবেন! আপনি যে কতো মেধাবী তার খবর আছে আমার। বড় মা,আপনার তারিফের পুল বানিয়ে বলেছে আমাকে। ফাঁকিবাজি,ধুরন্ধরগিরি আর বলদিগিরিতে আপনি একেবারে টপার। আপনার ধারেকাছেও কেউ যেতে পারবেনা। দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই মহান গুনের অধিকারী হয়েছেন। পড়ালেখা আর কি! সেটাতে জিরো হলেও চলবে। তবে ফাঁকিবাজিতে নো কম্প্রোমাইজ। ধুরন্ধরগিরিতে আপনার ফিউচার ব্রাইট। বংশের নাম উজ্জ্বল করবেন আপনি।”

এতোগুলা অপমান একসাথে নিতে বেগ পেতে হচ্ছে আদ্রিতাকে।মুখের খাবার চিবোবে, নাকি অপমান গিলবে বুঝে উঠতে সময় লাগছে। শেষমেশ তার নিজের মা-ই পর হয়ে গেল! এই দৈত্য দানবের সামনে আমার মান ইজ্জতের মুড়ি ঘন্ট করে দিলো! কলিযুগ! ঘোর কলিযুগ! শোকে কাতর আদ্রিতা। আশার প্রদীপ খুঁজতে দুঃখী মুখ করে আরমান সাহেবের দিকে তাকালো আদ্রিতা। ভাবলো দাদু হয়তো তার ডুবে যাওয়া ইজ্জতকে জাল দিয়ে ছেঁকে তুলবে। কিন্তু না, আদ্রিতার ডুবতি ইজ্জতকে আরও গহ্বরে দিয়ে আরমান সাহেব বলে উঠলো,
“হ্যারে দাদুভাই, এই বিষয়ে তো আমিও সহমত না হয়ে পারছিনা। গিন্নিটা পড়ালেখায় খুবই ফাঁকিবাজী করে। পড়তেই বসতে চায়না। এসএসসি পরীক্ষাটা কেমন করে দেওয়ানো হয়েছে তা কেবল আমরাই জানি। পুরো বাড়ির ওপর যেন সাইক্লোন বয়ে গিয়েছিল।”

নাতনীর কর্মকাণ্ড শুনিয়ে খুব মজা নিয়ে হাসলো আরমান সাহেব। আহত হলো আদ্রিতা। অতি শোকে পাথর, অতি দুঃখে ছেড়া চাদর হয়ে গেল সে। তার কষ্টের ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়ে নিবিড় বলে উঠলো,
“এসব তোমাদের অতি আদরের কারণে হয়েছে। হাত,পা বেঁধে সারারাত বটগাছের সাথে উল্টো ঝুলিয়ে রাখলে সব বুদ্ধি জায়গামতো চলে আসতো।”

কলিজা, ফোপরা আতঙ্কে চিৎকার দিচ্ছে আদ্রিতার ভেতর। কি সাংঘাতিক কথাবার্তা! এতো দেখছি সত্যিকারের দৈত্য দানব।অসহায়,অভাগীনি আদ্রিতা এবার তার সোনা মাকে হাতিয়ার করতে বলল,
“সোনা মা,দেখোনা তোমার ছেলে কি বলছে! আমি কি এতো ফাঁকিবাজ নাকি!”

তানি বলে উঠলো,
“না, তুই ফাঁকিবাজ না।”
খুশি হলো আদ্রিতা। পর মুহূর্তেই তার খুশিকে পদদলিত করে তানি বলে উঠলো,
“তুই মহা ফাঁকিবাজ। এই বিষয়টাতে আমিও তোকে সাপোর্ট করতে পারবোনা।”

অতল দরিয়ায় ডুবে গেল আদ্রিতা।চারিদিকে শুধু ধোঁকা আর ধোঁকা। ধোঁকা স্কয়ার হয়ে গেল আদ্রিতার। তার পরিবার হঠাৎ করেই পাতাল পুরির রাক্ষসের মতো কেন হয়ে গেল! এই ছিলো সবার মনে! অথৈ সাগরে ভাসতে থাকা আদ্রিতার এক টুকরো সম্বল হয়ে এলো আবির। আবির আদ্রিতার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“আরে আরে সবাই আমার অরি মামুনির পেছনে পড়লে কেন! আমার অরি মামুনি যে নাম্বার নিয়ে আসুক তাতেই আমরা খুশি। জিরোও তো একটা নাম্বার। বরং সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট সংখ্যা হলো জিরো। তো ডোন্ট আন্ডারেস্টিমেট দ্য পাওয়ার অফ “জিরো”।”

আদ্রিতার অনুভূতি এবার টোটাল কনফিউজ।চাচ্চু তার প্রশংসা করলো নাকি আরও ডোবালো তা বুঝতে পারলোনা সে। আবিরের মহান জ্ঞান শুনে তার বাবা আহনাফ সাহেব বলে উঠলেন,
“তুমিতো বলবেই। দুজনই যে এক নৌকারই মাঝি। পড়াশোনায় ফাঁকিবাজির মহান গুনটা তোমার কাছ থেকেই তো পেয়েছে অরি।”

আহনাফের কথায় মুখ টিপে হাসলো সবাই। বেচারা আবির ছেলে মেয়ের সামনে এভাবে লজ্জায় পড়বে তা ভাবেনি। তার বাবাটাও না,ছেলে মেয়ের সামনেই তার গুনগান শুরু করে দেয়। তানি বলে উঠলো,
“অরি মামুনি,এবার একটু মনোযোগী হ। প্রথম থেকে পড়াশোনায় মনোযোগ না দিলে কিন্তু এবার পাশ করা নিয়ে টানাটানি হয়ে যাবে তোর।নূরকে কি জবাব দিবো আমি! এতো এতো টিউশন ঠিক করে দেই কিন্তু একটাও টিকে না।তুই কি করিস তাদের সাথে কে জানে! একদিন এসেই আর এমুখো হয়না।”

জুহি হঠাৎ বলে উঠলো,
“নিবিড়, তুমিই অরিকে পড়াও না! তোমার সাথে ও সয়তানি করতে পারবেনা। তুমিতো স্কুল কলেজে সবসময় টপার ছিলে। তোমার কাছে পড়লে ওর যদি একটু উন্নতি হয়।”

“পাগল হয়ে গেছ ভাবি! এই বলদিকে পড়াতে গিয়ে আমার নিজের মগজও খালি হয়ে যাবে। তাছাড়া আমি এখন অফিস জয়েন করেছি। সময় কই এতো!”

“আরে অফিস থেকে এসে রাতে একটু করে পড়িয়ে দিও। তাহলেই তো হয়।”

জুহির কথায় বাড়ির বাকিরাও সহমত পোষণ করলো। নিবিড় একবার আরচোখে তার মায়ের দিকে তাকালো। তানি মুখে না বললেও তার চুপি প্রমাণ করে দিচ্ছে যে এই বিষয়ে সেও সহমত। নিবিড় খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“ঠিক আছে,রাতে বই নিয়ে আমার রুমে চলে আসবি। সার্প ৭টায়। এক সেকেন্ড কমবেশি হলে খবর আছে তোর।”
বলেই উঠে অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেল নিবিড়। বাকিরাও খাওয়া শেষ করে উঠে গেল। বসে রইল শুধু আদ্রিতা। স্ট্যাচু হয়ে বসে আছে। তার সব ইন্দ্রিয় কার্যহীন হয়ে পড়েছে। সবাই মিলে তাকে কিনা জল্লাদের হাতে তুলে দিলো!
__

এখন বর্তমানে সে বইয়ের গাট্টি হাতে সেই জল্লাদের রুমে অবস্থান করছে।পরিবারের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আজ তাকে এই নির্মম অত্যাচারের শিকার হতেই হলো। নিবিড় একটু আগেই এসেছে অফিস থেকে। ফ্রেশ হতে গেছে। আদ্রিতা অপেক্ষা করছে। বসবে কি বসবে না তা নিয়ে দ্বিধায় আছে। অগত্যা দাঁড়িয়েই রইলো। কিছুক্ষণ পর বেড়িয়ে এলো নিবিড়। তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে আদ্রিতার উদ্দেশ্যে বলল,
“স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন। টেবিলের সামনে বয়।”

তড়িৎ গতিতে মাথা দুলিয়ে টেবিলের উপর বইয়ের স্তুপ রেখে চেয়ার টেনে বসলো আদ্রিতা।এই রুমে আসলে তার কেমন যেন আলট্রা আতঙ্ক কাজ করে। যে কাচের মতো স্বচ্ছ নীট এন্ড ক্লিন রুম! যদি একটুও এদিক সেদিক হয় নিবিড় ভাইয়া নির্ঘাত আমাকে নূন ছাড়াই কচকচ করে কাঁচা খেয়ে ফেলবে। নিবিড় আদ্রিতার সামনে চেয়ার টেনে বসতেই সেই বিমোহিত ঘ্রাণ এসে প্রবেশ করলো আদ্রিতার নিঃশ্বাসে। তবে আজ সে মোহিত না হওয়ার কঠোর পণ করে আছে। এমনিতেই সেদিন তার অমন রুঢ় আচরণে খুব অভিমান হয়েছিল আদ্রিতার। রাগ জমেছিল প্রচুর। যদিও তার পরদিন তার রুমে সেই নামহীন গিফট বক্স আবার এসেছিল। তা দেখে বরাবরের মতোই রাগ কর্পূরের মতো উড়ে গিয়েছিল আদ্রিতার। তার কাছে আসা বক্সগুলো যে নিবিড় ভাইয়াই পাঠায় তা বুঝতে পারা কঠিন কিছু না। কিন্তু আজকের সকালের কথায় তার আবারও রাগ হয়েছে। তাইতো নিজেকে বিমোহিত হতে আঁটকে রাখার চেষ্টা করছে সে। তবে মনে হয় না আদ্রিতার কাজে সফলতা পাচ্ছে সে। বরাবরের মতোই ওই ঘ্রাণে নিজের নিঃশ্বাস বেহায়া হয়ে যাচ্ছে। বেহায়া নিঃশ্বাস কে শাসানোর পদ্ধতি জানা নেই আদ্রিতার। তাকে আঁটকে রাখতে গেলে যে নিজেরই প্রাণ যাবে।নিবিড় আদ্রিতার বইগুলো হাতে নিয়ে নাড়তে চাড়তে বলল,
“কোন সাবজেক্টে বেশি উইক তুই?”

থম মেরে গেল আদ্রিতা। চোখ পিটপিট করে কিংকর্তব্যবিমুঢ় চাহুনি। এটা আবার কেমন প্রশ্ন! কোন সাবজেক্টে উইক! আরে সাবজেক্ট কোনো প্রেমিক নাকি যে তার প্রতি আমি উইক থাকবো! পুরো পড়াশোনাই যেখানে আমার জাতশত্রু সেখানে উইক থাকার প্রশ্ন কোথায়! আদ্রিতা ভেবে পাইনা এতো সুন্দর পৃথিবীতে এই পড়াশোনা নামক ভয়ংকর বস্তুটাকে কে আবিষ্কার করেছে। আদ্রিতা তাকে খুঁজে পেলে বুড়িগঙ্গা নদীতে নিয়ে চুবিয়ে মেরে ফেলতো। না থাকবে বাঁশ, না বাজবে বাঁশুরি।

নিবিড় আদ্রিতার ম্যাথ বুক বের করে কিছু অংক বুঝিয়ে দিলো। তারপর কয়েকটা দাগিয়ে দিয়ে বলল,
“এগুলো সলভ করে দেখা। পাঁচ মিনিট সময় আছে। এর বেশি এক সেকেন্ডও দেরি হলে মার একটাও নিচে পড়বে না।”

আদ্রিতার নিজেকে জনমদুখিনী অসহায় প্রাণী মনে হচ্ছে। এতো নির্মমতা হয়তো টিভি সিরিয়ালের নায়িকাদের সাথেও হয়না। হাত পা ছড়িয়ে কাঁদলেও এ দুঃখ মোচন হবেনা।এতোগুলো অংক কীভাবে করবে সে! নিবিড় ভাইয়া যা বুঝিয়ে দিলো সবতো ওর মাথার উপর দিয়ে বাউন্সার গেছে। তাহলে কি আজ এই ধরায় আমার শেষ দিন! এই দৈত্য দানব নিশ্চয় ওর জান কবজ করেই খ্যান্ত হবে আজ। বিদায় পৃথিবী, দুয়াওমে ইয়াদ রাখনা।

আদ্রিতার এই জগৎদুখিনী লুক দেখে দাঁতে দাঁত চেপে নিবিড় বলল,
“এই সামান্য অংকই পারছিস না? এতক্ষণ বুঝালাম তখন মনোযোগ কোথায় ছিলো? মানে কেউ এতটাও ডাম কীভাবে হতে পারে? এই তুই কি বাজারে হোল সেলে তোর মগজ বেঁচে দিয়ে এসেছিস? আমিও কাকে কি বলছি! তোর ওই অকেজো মগজ নিয়ে মানুষ করবেটাই বা কি! তোর মগজ খুলে দেখ,আম সিওর সেখানে একটা বিশালকার জিরো ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যাবে না৷ আমারতো সন্দেহ হয় তুই আদৌও বড় বাবারই মেয়ে কিনা! তাদের মতো ব্রিলিয়ান্ট মা বাবার এমন গর্দভ সন্তান কীভাবে হতে পারে!”

অপমানে মন রাগ দুঃখে ভরে উঠলো আদ্রিতার। কান্না ঠেলে আসতে চাইলেও তাকে ভেতরেই চেপে রেখে প্রখর মনোবল করলো মনে মনে। এই দৈত্য দানবের উচিত জবাব দেবে সে। এখনতো সে এই অংক গুলো করেই দেখাবে যে করেই হোক। বইয়ের দিকে চোখ রেখে দৃঢ় কন্ঠে বলল,
“আরেক বার কষ্ট করে বুঝিয়ে দিন। তারপর করছি আমি।”

সরু চোখে তাকালো নিবিড়। আগের অংকগুলো আরও একবার বুঝিয়ে দিলো। এবার খুব মনোযোগ সহকারে বুঝে নিলো আদ্রিতা। তারপর দাগিয়ে দেওয়া অংক গুলো করা আরম্ভ করলো। একটানা লিখে গেল। একবারও মাথা তুলে তাকালোনা নিবিড়ের দিকে। তাকালে হয়তো দেখতে পেত মায়াভরা এক জোরা চোখ। ফোন বাজলো নিবিড়ের। অপরাহ্নের কল।নিবিড় উঠে ব্যালকনিতে গিয়ে রিসিভ করে বলল,
“হুম, বল কি অবস্থা?”

“কি অবস্থা! হালায় আবার জিগায় কি অবস্থা! অবস্থা যা করেছিস তুই! ভাগ্য ভালো এই ডাক্তার বন্ধু আছে তোর। নাহলে আইজ তো চৌদ্দ শিকি কনফার্ম ছিলো। সাইকো সালা,এতো রাগ কোথাথেকে আসে তোর! এমনে কেউ হাত ভাঙে! তোর মেন্টালিটি আমি বুঝি না। নিজেই হাত ভাঙলি আবার নিজেই টাকা দিয়ে চিকিৎসা করালি। আসলে চাস কি তুই? তোকে বোঝা আমার পক্ষে সম্ভব না।”

“তো বুঝতে যাস ক্যান? আমি কি তোর প্রিয়তমার মন নাকি যে আমাকে বুঝতে হবে! সালমানের ওই ডায়লগ শুনিস নি! “মে দিল মে আতাহু সামাজ মে নেহি।”

“ঠিক আছে তাহলে আমি বরং তোর এই মহান কৃতকর্মের খবরটা চাচিকে বলি। তিনি নিশ্চয় গর্বে গদগদ হয়ে যাবেন। কি বলিস।”

“আরে আবার কুটনী বান্ধবীদের মতো করছিস কেন? আমাদের মাঝে আবার মা কোথাথেকে এলো? ”

অপরাহ্নের হাসির শব্দ শোনা গেল। হেসে বলল,
“ভয়ংকর তুই কিনা মায়ের সামনে ভীতু। চাচীকে খুব ভয় পাস তাইনা?”

“বিষয় টা ভয়ের না। বিষয় টা হলো সম্মানের,শ্রদ্ধার আর ভালোবাসার। ছেলের কোনো কাজে মায়ের মন বিচলিত হোক তা আমি চাইনা। তাইতো সবসময় চেষ্টা করি মাকে কোনোরকম কষ্ট না দিতে।”

“যা এবারের মতো বাচিয়ে দিলাম।তুইও কি মনে রাখবি। তোর উপর এটা আমার ঋণ থাকলো। সুযোগ আসলে পরিশোধ করে দিবি।”

“এমনভাবে বলছিস যেন তুই জানিস সেই সুযোগ আসবেই।”

“হয়তো। আচ্ছা রাখছি।বায়।”

কথা শেষ করে রুমে এসে দেখলো আদ্রিতা সবগুলো অংক শেষ করে বসে আছে। নিবিড় চেক করে দেখলো সব অংকই ঠিক আছে। আদ্রিতা আগের মতোই বইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
“পড়া শেষ হলে এবার কি যেতে পারি স্যার! ”

ভ্রু কুঁচকে তাকালো নিবিড়। অভিমানী তার অভিমানের বহিঃপ্রকাশ করছে। বইপত্র গুছিয়ে চলে যেতে উদ্যোত হলো আদ্রিতা ।দরজার দিকে যেতে নিলেই ডাকলো নিবিড়,
“দাড়া পুতুল।”
থেমে গেল আদ্রিতা।তবে পেছনে ঘুরলোনা।নিবিড় এগিয়ে এসে আদ্রিতার দিকে একটা বক্স এগিয়ে দিয়ে বলল,
“এটা তোর জন্য। নিয়ে যা।”

অভিমানে ডুবুডুবু আদ্রিতা সাফ মানা করে দিয়ে বলল,
“নিবোনা আমি। আপনিই রাখুন।”
নিবিড় আদ্রিতার পেছনে এসে দাঁড়াল। ঘাড়ের উপর ঝুঁকে ফিসফিসানি সুরে বলল,
“আর ইউ সিওর? একবার দেখেতো নিতি। পরে না পস্তাতে হয়।”
আদ্রিতা জবাব দেবে কি! নিবিড়ের এতো কাছে আসায় তার নিঃশ্বাসই আটকে যাওয়ার উপক্রম। নিবিড়ের গরম নিঃশ্বাস কাঁধে অনুভব হতেই হৃদপিণ্ড দুরুম দুরুম শুরু করলো তার। শক্ত করে ধরলো বইয়ের বাঁধন। নিবিড় পেছন থেকে দুই দুই হাত আদ্রিতার দুই পাশ দিয়ে সামনে নিয়ে হাতের বক্সটা খুলে দেখালো। গরম গরম মুচমুচে চিকন জিলাপি দেখে আদ্রিতার মুখে সমুদ্র উপচে পড়লো। লোকটা খুব খারাপ। সে চালাকি করে আমার দূর্বল জায়গায় আঘাত করে। এখন এই সুস্বাদু জিলাপি দেখে কীভাবে নিজেকে আটকাবে আদ্রিতা! জিলাপীর ঘ্রাণে জিহ্বা বেড়িয়ে আসতে চাইছে। এখন আমার অভিমানের কি হবে? তাকে কীভাবে জিতাবো! নিবিড় আদ্রিতার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
“এটা তোর পড়া কমপ্লিট করার পুরস্কার। কারণ আমি জানতাম তুই পারবি। তোর মাঝে মেধা আছে। ব্যাস শুধু সেটাকে ঘষে ফায়ার করার দরকার। আর তার প্রমাণ তোর সামনেই। এখন বল এটা নিবি, নাকি বাকিদের মাঝে বিলিয়ে দিবো?”

আদ্রিতার অভিমান উড়ে গেল নিবিড়ের কথায়। ঝট করে বক্সটা ছিনিয়ে নিয়ে বলল,
“না না তার কি দরকার! বাড়িতে বড়দের অনেকের ডায়বেটিস আছে। তারা এটা খেলে অসুস্থ হয়ে পড়বে। তাই না চাইতেও সবার ভালোর জন্য আমিই নাহয় কষ্ট করে এগুলো খেয়ে নিবো।”

বলেই বক্স নিয়ে দৌড়াল আদ্রিতা। পেছন থেকে নীরব হাসির রেখা নিবিড়ের ঠোঁটে ভাসলো। যে হাসি বলছে,
এই মেয়েটা খুশি মানে তার হৃৎস্পন্দনে নিঃশ্বাসের সঞ্চালন আছে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here