নিরু পর্ব ১৭+১৮+শেষ

#নিরু❤
পর্ব-১৭
writer- #shanta_islam

বাসার সবাইকে অনেক বুঝানোর চেস্টা করেছি। সবার কাছে অনেক আকুতি মিনতিও করেছি। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। দাদির পা পর্যন্ত ধরে কান্না কাটি করেছি। দাদি বললো,,,তোর মতো জ্বীনে ধরা মেয়েকে যে ওই ছেলে বিয়ে করতে রাজী হয়েছে এটাই বেশি। মাকেও অনেক বার বুঝানোর চেস্টা করেছি,,মা বললো,,সব মেয়েকেই এক দিন না একদিন বিয়ে করে তার স্বামীর বাড়ি যেতে হয়। এতে একটু খারাপ লাগবেই মা। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। মা গো তোমাকে আমি কি করে বলি,,আমি যে অন্য কাওকে ভালোবেসে ফেলেছি। তাকে ছাড়া এজীবনে অন্য কাওকে মেনে নিবো কীভাবে। কেওই আমার কথা শুনলো না। আমি এমন একটা পর্যায়ে চলে গিয়েছিলাম যেখানে হয়তো মানুষ তখনি যায় যখন মানুষ সবার সাথে লড়াই করে এমনি নিজের সাথে লড়াই করেও হেরে যায়। এখন বুঝতে পারছি একজন মানুষ কোন পর্যায়ে গেলে আত্নহত্যার পথ বেচে নেয়। আমিও হয়তো চলেই যেতাম,,যদিনা আত্নহত্যা মহাপাপ হতো। অনেক বার চেস্টা করেছি নিজেকে শেষ করে দেওয়ার জন্য। পরক্ষণেই ভাবলাম,,আচ্ছা আত্নহত্যাই কি সব কিছুর সমাধান। না আত্নহত্যা সব কিছুর সমাধান হতে পারে না। ছোট বেলা থেকে শুনে এসেছি বিপদে কখনো হার মানতে নেই কারণ তুমি যা পেয়েছো হয়তো সৃষ্টিকর্তা তোমার জন্য তার থেকেও ভালো কিছু রেখেছে। আল্লাহ আমার ভাগ্য যা লিখেছেন তাই আমি মেনে নিবো। নিশ্চই মহান আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করেন। আমার সৃষ্টিকর্তা আমাকে এই জীবন দিয়েছেন তার দেওয়া এই জীবনের উপর আমার কোনো অধিকার নেই,,শেষ করে দেওয়ার। তাই আমি আমার ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি। কাল আমার বিয়ে,,,তাড়াহুড়ো করে বিয়েটা ঠিক হওয়ায় সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলো বিয়েটা পারিবারিক ভাবে হবে বেশি ধুমধাম করা হবে না। দিপা আপু আর দুলাভাইও এসেছে,, দাদি, চাচি, মা, ভাবি, আশা, দিপা আপু আমাকে হলুদ লাগাচ্ছে। আমি চুপচাপ পুতুলের মতো বসে আছি।
দাদি- কিরে ডেমনি হাসিস নে কেন? তোর জায়গায় আমি হলে তো খুশিতে মরেই যেতাম। যখন আমার গায়ে হলুদ হয়েছিলো,, আশা দাদির কথা আটকে দিয়ে বলতে লাগলো,,,
আশা- অহ হো দাদি তোমার গায়ে হলুদ,তোমার বিয়ে, তোমার বাসর রাত,, ছোট বেলা থেকে এসবের গল্প শুনতে শুনতে কান পচে গেছে। নতুন কিছু বলো?নতুন কিছু!
দাদি- নতুন কি বলবো?
দিপা আপু- আচ্ছা দাদি তুমি কি প্রেম করো নি?
দিপা আপু আমাকে হলুদ লাগাতে লাগাতে কথাগুলো বললো।
দাদি- আরে তা কি আর বলা লাগে,,কতো প্রেম করেছি? তোর দাদার আগে টায়টানিক ছবির নয়কের সাথেও প্রেম করেছি। নাম জানি কি ছিলো? জ,,জ,,জোক,,
আশা- অহ দাদি জোক না জেক,,নায়কের নাম জেক ছিলো।
দাদি- হ্যাঁ হ্যাঁ ওইটাই জোক নাকি জেক। একটা হলেই হলো।
দিপা আপু- কি সাংঘাতিক।
আশা- এ দাদি আমার সাথে চাপা মারবানা। তুমি তো কম চাপা ছাড়ো না,,তাই তো বলি আমার বাপ চাচা চাপাবাজি আর ফাফরবাজি শিখলো কোথা থেকে। আগাতেই তো সমস্যা তার গোড়া আর কি হবে!(ভেংচি কেটে)
দাদি- এই পটরপটর কম কর,,নাহলে লাঠি দিয়ে লাগামু কয়েকটা। নে এখন মোবাইলটা বের করে।।
আশা- মোবাইল দিয়ে কি করবে?
দাদি- আমার ফেসবুকে আইডিতে ডুকে লেখ
-আজ সিংগেল বলে অন্যের গায়ে হলুদ দেখা এই আমি,,পিছনে হেসটেগ লাগাইস।
আশা- এহ দেখো না বুড়ির ঢং কতো!
দিপা আপু- সেকি দাদি তোমাকে ফেসবুক খুলে দিলো কে?
ভাবি- কে আবার আশা দিয়েছে?
দিপা আপু- কিরে আশা সত্যি নাকি কই দেখি?
আশা- ওটাই তো জীবনে একটা বড় ভুল করে ফেলেছি!
দিপা আপু আশার হাত থেকে ফোন কেরে নিয়ে দেখে এনঞ্জেল পিংকি নামে আইডি খোলা,, একটা মডেল মেয়ের পিকও দেওয়া বটে। বিওএ দেওয়া আজ সিংগেল বলে কেও আই লাভ ইউ বলে না। দাদির এক একটা পোস্টে দুইশতর উপরে লাভ রিয়েক্ট দেওয়া। সেখানে আবার দুলাভাইও লাভ রিয়েক্ট দিয়েছে এটা দেখার পর দিপা আপু রাগে কটকট করতে করতে দুলাভাইকে খুজতে থাকে। আহ হা রে বেচারা আজ উনার খবর আছে।
আশা- নিরু আপু হাস না তোর একটা পিক তুলবো,,,
বুকের ভিতর এতো গুলো কস্ট জমে আছে। চারপাশে এতো চিৎকার চেচামিচি হচ্ছে তবুও জেনো কিছু আমার কান পর্যন্ত পৌছাচ্ছে না।
রাত এগারোটা বাজে ডাইনিং রুমে বসে সবাই আলোচনা করছে কাল কি কি করতে হবে, কে কি করবে ইত্যাদি। আমি বারান্দার এক কোনায় রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছি। এর মধ্যে কখন যে আশা রুমে ডুকলো টেরই পেলাম না।
আশা- নিরু আপু এখানে কি করছিস?
আশার কন্ঠ শুনে বাস্তবে ফিরলাম। লুকিয়ে চোখের পানি দুটো মুছে নিলাম। কিন্তু তা আশার কাছে লুকালো না,,,,
আশা- আপু তুই কান্না করছিস?
নিরু- কই,,কই,, নাতো,,
আশা- মিথ্যা বলবি না আমি সব দেখে ফেলেছি,,
নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলাম না। আশাকে ধরে হাওমাও করে কান্না করে দিলাম। আশার হাত ধরে বললাম।
-বোন আমার তুই কিছু একটা কর। আমি এই বিয়ে করবো না। যেভাবেই হোক এই বিয়েটা তুই আটকা। তুই যা চাবি আমি তাই দিবো। প্লিজ আশা প্লিজ। আমি জানি তুই কিছু একটা করতে পারবি। প্লিজ আশা।
আশা- আরে বোকা মেয়ে কান্না করছিস কেনো? বিয়ে করে দূরে কোথাও তো আর যাচ্ছিস না,,এখান থেকে এখানে,,মানে পলাশ ভাইদের বাড়ি তো বেশি দূরে না এখানেই।
নিরু- আশা প্লিজ।
আশা আমার হাত ছেরে দিয়ে বাইরে চলে গেলো। আমি সেখানে বসে চিৎকার করে কান্না করছি। হঠাৎ কেনো জানি মনে হচ্ছে এখন আমার ছাদে যাওয়া উচিত। মনটা শুধু ছাদে টানছে। হঠাৎ ফোনে একটা মেসেজ আসলো। মেসেজে লিখা ছিলো একটু ছাদে আয়। আমি আর এক মুহূর্তও দেরি না করে দৌড়ে ছাদে চলে গেলাম। ছাদের গেটা খোলার সাথে সাথে দেখলাম কে জেনো আকাশের দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে৷ আমার বুঝতে বাকি রইলো না মানুষটা কে। দৌড়ে সামনে যেয়ে নিজের দিকে মুখ করে গালে ঠাস ঠাস করে লাগিয়ে দিলাম কয়েকটা চর।
নিরু- কি মনে করেন কি নিজেকে। কোথায় ছিলেন এতো দিন। কেনো আমার সাথে এমনটা করলেন। কি দোষ করেছিলাম আমি। যেনে নিশ্চয়ই খুশি হবেন আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আরেকটা খুশির সংবাদ দিচ্ছি বিয়েটা আর কারো সাথে না পলাশ ভাইয়ের সাথে ঠিক হয়েছে। কি এভাবে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেনো কিছু একটা বলুন? কেনো আপনি আমার এতোটা কাছে আসলেন। কেনো আমাকে ভালোবাসা শিখালেন। কেনো আমার মনে ফিলিংস তৈরি করলেন। কি হলো উত্তর দিচ্ছেন না কেনো। বলেন কেনো করেছেন আমার সাথে এমনটা। বলেন কেনো? এখন আমি কি করবো৷ আমি যে আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি আবির ভাই। আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
নিরু কান্না করতে করতে মাটিতে বসে পড়ে,,আবির মূর্তির মতো গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
নিরু- কিছু বলছেন না কেনো আবির ভাই। কিছু বলেন। আমি যে শেষ হয়ে যাচ্ছি। একটু বলেন না নিরু আমি তোকে ভালোবাসি। একটু বলেন প্লিজ। আবির চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে৷ নিরু আবিরের স্তব্ধতা দেখে বুঝে যায় এটা এক তরফা ভালোবাসা। নিরু আবিরকে ভালোবাসলেও আবির নিরুকে ভালোবাসে না। যদি নিরুকে ভালোবাসতো তাহলে অন্তত আজ নিরুকে কিছু বলতো কিন্তু না। মানুষটা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার এই নিরবতা প্রমান করে দিচ্ছে যে আবির নিরুকে ভালোবাসে না। নিরু উঠে দাঁড়িয়ে আবিরের শার্টের কলার চেপে ধরে।
নিরু- আপনি কি কিছু বলবেন না। কেনো কিছু বলছেন না। যেই পলাশকে আমার আশেপাশে দেখলে পাগল হয়ে যেতেন কাল সেই পলাশের সাথেই আমার বিয়ে হচ্ছে। আপনি কিছু বলবেন না আবির ভাই। আচ্ছা আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন না। আপনি কিছু বলছেন না কেনো কিছু তো একটা বলুন। অহ এখন মনে হয় আপনার কাছে বলার মতো কিছু নেই তাই না। আপনি মনে হয় আমাকে ভালোবাসেন না। আবির সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। আমারি ভুল আমি হয়তো আপনাকে নিয়ে একটু বেশিই ভেবে ফেলেছি। আই এম সরি আবির ভাই,,,আই এম সরি,,ভালো থাকবেন৷ কথাটা বলে নিরু আবিরের কলার ছেরে দিয়ে ছাদ থেকে নেমে পড়ে।
নিরুর সামনে বিয়ের শাড়ী গহনা পড়ে আছে। নিরু সেগুলোর কিছুই পরেনি। একটা থ্রী পিস পড়ে বিছানায় বসে আছে। কাল সারা রাত কান্না করায় চোখ দুটো প্রচন্ড ব্যাথা করছে। চোখের নিচে হালকা কালো দাগো পড়ে গেছে। মা, চাচি, আশা, ভাবি রুমে ডুকে তাদের সাথে আরো একজন রুমে ডুকে। তিনি হলেন কাজী সাহেব।
মা- ইয়া আল্লাহ এ কি নিরু,,নিজের কি হাল করেছিস। এখনো শাড়ী পরিস নি কেনো?
চাচি- এসব বাদ দেও,,নিরু কাজী সাহেব এসেছে উঠে বস।
দিপা আপু- কিন্তু মা নিরু যে এখনো সাজগুজ কিছুই করেনি। চোখের নিচে পুরো কালো দাগ পড়ে গেছে।
আশা- আরে সে নিয়ে ভেবো না। এখন বিয়েটা হয়ে যাক একটু পর সবাই খেতে বসলে সেই ফাকে ওকে আমি আর ভাবি পাল্লারে নিয়ে যাবো।
মা- হ্যাঁ সেটাই বরং ভালো হবে।
কাজী সাহেব আমার পাশে বসে। এর পর কিছু লিখালিখি শেষ করে আমাকে কবুল বলতে বললো,,,
আমি পাথরের মতো চুপ করে বসে আছি।
আশা- আপু কবুলটা বলে দে না।
মা- নিরু কবুল বল।
দিপা আপু- এই নিরু কবুল বল।
সবাই আমাকে কবুল বলার জন্য ফোর্স করছে। আর আমার মাথায় শুধু একজন মানুষ ঘুরপাক খাচ্ছে। আবির ভাই। আচ্ছা মানুষটা কি সত্যি সত্যি আমাকে ভালোবাসতো না। যদি ভালোই না বাসতো তাহলে আমার সাথে এমন করতো কেনো? বুকের মধ্যে অনেক প্রশ্ন জমা হয়ে আছে। আর উত্তর একটাই নিরু ভাগ্য যা আছে তাই হবে। হয়তো আমার ভাগ্য এটাই ছিলো। তাই আমিও আমার ভাগ্যকে গ্রহন করলাম। কাজী সাহেবকে কবুল বলে দিলাম। দিপা আপু, আম্মা, চাচি, আশা, ভাবি সবাই খুশিতে মিষ্টি মুখ করছে।
বিকেলে আমাকে পাল্লারে নিয়ে যাওয়া হলো। সাজ গুজ শেষ করতে করতে রাত প্রায় আটটা বেজে যায়। আজ আমি কাওকে কোনো বাধা দেইনি যে যার মতো করে আমাকে সাজিয়েছে। ইয়া বড় একটা ঘোমটা টেনে দেওয়া হয় আমার মুখে। গাড়ি থেকে নামছি। মনে হয় পলাশ ভাইদের বাড়ির সামনে গাড়ি থামানো হয়েছে। ঠিক ভালো করে বলতে পারছি না। এতো বড় ঘোমটার কারনে কিছুই দেখতে পারছি না। আমাকে ধরে একটা রুমে বসানো হলো। চোখের অশ্রু বাধ মানছে না ঝরেই চলেছে। এ জীবনে যাকে এ মনের মধ্যে ঠাই দিয়েছিলাম সেই আমাকে ভালোবাসলো না। হয়তো ভালোবাসাটা ছিলো এক তরফা।
আগের দিনগুলোতে ডুব লাগাতেই চোখটা একটু ঝাপসা হয়ে আসে। সেই দিনগুলো ভুলার মতো নয়। নামাজ শেষে হাতে এক কাপ চা নিয়ে ছাদে উঠেছি। সূর্য উদয় দেখতে দেখতেই আগের দিনগুলির কথা মনে পড়ে গেলো। মনে হয় চোখ দিয়ে এখন দুফোঁটা অশ্রু গরিয়ে পরবে তাই ঝাপসা চোখটা মুছে ফেললাম।
হঠাৎ দুটো হাত আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
– কি হলো কখন উঠলে?
– উঠে মসজিদ থেকে নামাজও পড়ে এসেছি ম্যাডাম।
– অহ,,,
– এখানে কি করছো? ঘরে চলো,,
– সূর্য উদয় দেখছিলাম। দেখতে দেখতে আগের দিনের কথা মনে পড়ে গেলো।
– অহ বুঝেছি,,জনগনকে রিপ্লে শুনানো হচ্ছে।
নিরু হালকা মুচকি হেসে বললো,,
– জি স্যার,,
– তাহলে জনগনকে এটাও বলে দিন। বিয়ের পর আবির ভাই, আবির ভাই, করে যে আমার মাথাটা পাগল করে দিয়েছিলেন।
নিরু একটা মলিন হাসি দিলো,,,
#নিরু❤
পর্ব-১৮ এবং অন্তিম পর্ব
writer- #shanta_islam

চোখ দুটো ঝাপসা ছিলো। চিৎকারহীন অশ্রু গড়াছিলাম,,নিজের উপর কোনো কন্ট্রোল ছিলো না। বার বার চেস্টা করছি অশ্রু আটকানোর। কিন্তু কি আর করার বেহায়া চোখ দুটোও যে আমার কথা শুনতে চায় না কারন আমি যে অভাগা #নিরু। মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করছে। চোখ দুটোও ভার হয়ে এলো বলে রক্তে মাংসে গড়া মানুষ তো তাই,,যন্ত্র হলে হয়তো এতোটা কস্ট হতো না। হঠাৎ দরজার কড়া নড়ে উঠে। মনে হয় পলাশ ভাই রুমে ডুকলো। কান্নার বেগটা আরো বেরে যাচ্ছে। যাকে ভালোবাসি তাকে তো আর পেলাম না। এখন অন্য কাওকে কীভাবে এ ভাঙা হৃদয়ে জায়গা দেই।
– কি নির্লজ্জ মেয়ে রে বাবা,,এখনো হেংলার মতো খাটে বসে আছে। স্বামী ঘরে প্রবেশ করলে স্বামীর পা ধরে সালাম করতে হয় সেটা জানিস না।
সেই চির চেনা কন্ঠটা কানে ভেসে উঠলো,, জলদি করে ঘুমটাটা সরালাম,,,
সামনের মানুষটাকে দেখে আমি পাথরের মতো স্তব্ধ হয়ে গেছি। কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার সামনে যে আবির ভাই দাঁড়িয়ে। উনি এখানে কি করছে? আমি যে উনাকে প্রশ্ন করবো সেটুকু শক্তিও পাচ্ছি না। অবাক হয়ে গেছি,,অবাক হয়েছি বইকি অবাক হচ্ছি। আমি কোনো স্বপ্ন দেখছি না তো।
আবির -কিরে সালাম করছিস না কেনো। দশটা না পাচটা না একটা মাত্র বিয়ে করলাম। সুবহানাল্লাহ বউ একটা জুটেছে কপালে। বাসর ঘরে স্বামীকে সালাম না দিয়ে হাবলার মতো ঢ্যাবঢ্যাব করে তাকিয়ে আছে। বলিকি ম্যাডাম আমাকে দেখার জন্য সারারাত পরে আছে। এখন এদিকে এসে একটু সালাম করে আমাকে উদ্ধার করেন।
কিছুই বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে আমার সাথে। উনাকে দেখে খুশি হবো নাকি রাগ করবো নাকি কান্না করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। নিজেকে সংযম রেখে অনেক কস্টে গলা দিয়ে কথা বের করলাম। উনাকে জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলাম। আপনি এখানে কেনো এসেছেন? এখন কেনো এসেছেন,,এখন যে আমি অন্য কারো। এখান থেকে চলে যান। আমি আর আপনার মুখ দেখতে চাই না। কিন্তু কথায় আছে না মানুষ সর্ট খেয়ে কি থেকে কি করে তা সে নিজেও জানে না। আমার ক্ষেত্রেও তাই হলো,,বলতে চেয়েছিলাম এক আর বলে ফেললাম আরেক,,, কাপা কাপা কন্ঠে বলে উঠলাম,,
– আ,,,আ,,,
আবির- কিরে আবার সেই অ,,আ,,চ,,ছ লাগিয়েছিস!
হঠাৎ খাটের নিচ থেকে কিছু শব্দ পেলাম। শব্দটা আমি আর আবির ভাই দুজনেই শুনতে পেলাম। আবির ভাই খাটের সামনে এসে নিচু হয়ে ঝুকে দেখে আশা খাটের নিচে লুকিয়ে আছে। আবির ভাই কান ধরে আশাকে খাটের নিচ থেকে বের করলো।
আশা- আআআ দুলাভাই,,কানটা ছাড়ো,,,
আবির- কান ছাড়বো তাই না। খাটের নিচে কি করছিলি?
আশা ভেটকি একটা হাসি দিয়ে বললো,,
-আসলে দুলাভাই আমার পেমেন্টটা নিতে আসলাম আর কি?
আবির- দারা দিচ্ছি তোর পেমেন্ট,,কথাটা বলেই আবির ভাই কোথা থেকে একটা লাঠি খুজে বের করলো। আশা লাঠি দেখার সাথে সাথে এক দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আবির ভাই দরজা লক করে এসে আমার কলে মাথা রাখলো,,
আবির- মাথাটা একটু টিপে দে তো,,
হায় আল্লাহ এক দিনে আমি পাগল হয়ে যাবো। আমার সাথে এসব কি হচ্ছে। আশা খাটের নিচে ছিলো কেনো? ও আবির ভাইকে দুলাভাই ডাকলো কেনো? আবির ভাই এখানে কি করছে? আমি মনে হয় পাগল হয়ে যাবো।
আবির- কিরে মাথাটা টিপে দিতে বললাম তো!
নিরু- আ,,আ,,আবির ভাই,,,,,,
আবির- ঠাটিয়ে মারবো এক। আমি তোর কোন জন্মের ভাই হই। স্বামীকে কীভাবে আদর করে ডাকতে হয় সেটা জানিস না।
নিরু- স্বামী মানে? আপনি এখানে কেনো?
আবির- বারে আমার বাসা,,আমার ঘর,,আমার বাসর রাত,,আমার বউ,,এখানে আমি থাকবো না তো কে থাকবে!
আবির ভাইয়ের কথা শুনে চারপাশটা ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম। একি এটা যে আবির ভাইয়ের রুম। আমার সাথে কি হচ্ছে টা কি? আমি কি পাগল হয়ে গেছি। আবির ভাই কোলে মাথা রাখায় হার্ট বিটটা দ্বিগুন গতিতে বেরে গেলো।
নিরু আবিরকে ধাক্কা দিয়ে কোল থেকে ফেলে দেয়,,
আবির- কিরে কি হলো ফেলে দিলি কেনো?
নিরু- আপনি এখানে কি করছেন? আমি এখানে কেনো আছি? আশা আপনাকে দুলাভাই ডাকলো কেনো? আপনি আমাকে বউ ডাকছেন কেনো? পলাশ ভাই কোথায়?
পলাশের কথা শুনে আবির রেগে যায়। আবির নিরুকে বিছানার সাথে জাপটে ধরে।
আবির- আবার যদি ওই পলাশের নাম তোর মুখে শুনেছি তো আমার থেকে খারাপ কেও হবে না।
নিরু ধাক্কা দিয়ে আবিরকে ওর উপর থেকে সরিয়ে দিলো। কান্না করতে করতে জর্জরিত কন্ঠে বললো,,,
নিরু- আপনি একটা প্রতারক বেইমান,, আপনার কোনো অধিকার নেই আমাকে ছোয়ার। কথাটা বলেই নিরু বিছানা থেকে উঠে যেতে নিলে আবির নিরুর হাত ধরে টান মেরে নিরুকে নিজের কোলে বসিয়ে নেয়। নিরু নিজেকে ছাড়ানোর চেস্টা করলে আবির নিরুর কোমড় শক্ত করে আকড়ে ধরে। নিরু আবিরের হাতের স্পর্শ পেয়ে কেপে উঠে।
আবির- আলবাদ আমার অধিকার আছে,, তুই আমার বিয়ে করা বউ। তোর উপর সব থেকে আমার অধিকার বেশি।
নিরু অবাক হয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
নিরু- মানে কি?
আবির- কালই তোকে বলতে চেয়েছিলাম আমাদের বিয়ের কথা। কিন্তু আমার আবালের রানী যে হিটলার রানীতে পরিনত হবে কে জানতো। তোর চর খেয়ে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। যেই বোকা মেয়েটা টু শব্দ করতে ভয় পেতো সেই মেয়েটা আমাকে এতোটা ভালোবেসে কঠোর হয়েছে তা দেখে আমি অনেক অবাক হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তোকে কালই সব বলবো কিন্তু পরক্ষণেই মাথার মধ্যে একটা সয়তানি বুদ্ধি চাপলো। বাসর ঘরেই সারপ্রাইজটা দিবো ভেবে তাই আর কিছু বলিনি।
নিরু- কিন্তু আশা আর ভাবি যে বললো পলাশ ভাইয়ের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে।
আবির একটা অট্রোহাসি দিয়ে বললো,,,
– আরে ওরা তো আমার খুফিয়া এজেন্ট ছিলো!
-মানে?
– মানে ওরা দুজন আমার গুপ্তচর ছিলো। ভাবি আর আশা আগে থেকেই আমাদের ব্যাপারটা জানতো।
তোর মনের কথা বের করার জন্য পলাশের নাটকটা সাজিয়েছিলাম।
আমি উনার কথা শুনে রীতিমতো হার্ট অ্যাটাক করবো মনে হচ্ছে।
– তোর বোন আর ভাবিকে কতো ঘুস যে দিতে হয়েছে এর জন্য,,,
নিরু আবিরের কোল থেকে উঠে রুমে থেকে বের হয়ে যেতে নিলে আবির নিরুর হাত ধরে ফেলে।
আবির- কি হলো কোথায় যাচ্ছিস।
নিরু- চলে যাচ্ছি আমি। থাকবো না আপনার মতো মানুষের সাথে। আপনি একটা বেইমান, চিটার, বাটপার। এতো বড় নাটকটা কীভাবে করলেন আমার সাথে। জানেন আমি কতোটা কস্ট পেয়েছি। আপনার মতো মানুষের সাথে আমি থাকবোই না।
কথাটা বলে নিরু আবিরের হাত ছাড়ানোর চেস্টা করে। আবির নিরুকে টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে আগলে ধরে।
আবির- তা তো আর হচ্ছে না ম্যাডাম। এখন থেকে যে আপনাকে এই চিটার বাটপারটার সাথেই সারাটা জীবন কাটাতে হবে।
নিরু কান্না করতে করতে আবিরের বুকে অনেক গুলো কিল ঘুসি দিতে থাকে,,,
নিরু- ছাড়ুন ছাড়ুন আমাকে। আই হেট ইউ,,আই জেস্ট হেট ইউ,,,
আবির- আচ্ছা এই ব্যাপার ম্যাডামের অভীমান এখনো ভাঙেনি তাহলে। আচ্ছা সরি,,এই দেখ কান ধরে সরি বলছি। আর যেই হেটের কথা বলছেন আপনি,, তাহলে কাল কে যেনো কেদে কেদে আমাকে ভালোবাসি বলেছিলো।
নিরু- না আমি কাওকেই ভালোবাসি না। আপনাকে তো কখনোই না। যে নিজে কখনো ভালোবাসার কথা বলতে পারে না। তাকে কখনো ভালোবাসা যায় না।
আবির- বারে সব সময় ছেলেরাই ভালোবাসর কথা কেনো বলবে। তাই আগে তোর মুখ থেকে ভালোবাসার কথাটা বের করে নিয়েছি।
নিরু- আপনি আমাকে অনেক কাদিয়েছেন। অনেক কস্ট দিয়েছেন। আই হেট ইউ ছাড়ুন আমাকে,,আমি এখানে থাকবো না।
নিরু আবিরের কাছ থেকে ছুটার চেস্টা করলে আবির নিরুকে কোলে তুলে নেয়।
নিরু- কি করছেন ছাড়ুন,,,
আবির- ছাড়ার জন্য ধরিনি ম্যাডাম,,
আবির নিরুকে কোলে করে বিছানায় সুয়ে দেয়।
নিরু- আবির ভাই প্লিজ,,
আবির- আরেক বার আবির ভাই ডেকেছিস তো এখনি খাট থেকে লাথি মেরে নিচে ফেলে দিবো।
উনি যেই রাগীর রাগী আল্লাহই জানে কখন আবার সত্যি সত্যি লাথি মেরে ফেলে দেয়।
আবির ভাই আমার ঘাড়ে নাক ডুবায়। উনার প্রতিটা স্পর্শ আমার কাছে কারেন্টের শর্ট থেকে কম ছিলো না,
ঘারে গলায় গালে ভালোবাসার পরশ একে দিচ্ছিলো বারং বার। আমি জেনো বরফের মতো জমে গেছি। মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। অনেক কস্টে শুধু বললাম,,
– লাইটটা তো অফ,,
– হুসসস,,লাইট অফ করলে তোর কোথায় কোথায় আর কয়টা তিল আছে গুনবো কি করে। সেদিন তো মাত্র তিনটা তিল দেখেছিলাম,,,বাকীগুলো আজ দেখবো,,আর খবরদার আজ যদি ফিট হয়েছিস তো খবর আছে। যতবার একটু রোমান্সের মুড নিয়ে কাছে গিয়েছি ততোবার ফিট খেয়ে পড়ে গেছিস। আজ জানি এমন না হয়।
নাওযুবিল্লাহ উনি কি বলছে এসব। তার মানে আগের ঘটনাগুলো কোনো স্বপ্ন বা জ্বীনের কারবার ছিলো না সব ইনার কারসুজি।
নিরু- তারমানে সেদিন ওটা স্বপ্ন ছিলো না। আমি সত্যি সত্যি আপনার বুকে ঘুমিয়ে ছিলাম।
আবির- হ্যাঁ এর জন্য ভাবি আর আশাকে বিরাট অংকের টাকা দিতে হয়েছিলো,,
নিরু- কিন্তু,,
আবির- চুপ আর কোনো কিন্তু না। তুই যেগুলোকে স্বপ্ন বা কল্পনা মনে করেছিলি সেগুলো সব বাস্তব ছিলো,, এখন আর কোনো প্রশ্ন করবি না। এখন আমি তিল খুজবো,,,
হায় কপাল ইনিই পৃথিবীতে একমাত্র ব্যক্তি যিনি বাসর রাতে বউয়ের তিল খুজার জন্য ব্যস্ত হয়ে পরেছেন।
,
,
,
চোখ কচলাতে কচলাতে ছোট ছোট পায়ে আমার মেয়েটা ছাদে এসেই তার বাবার কোলে উঠে পরে।
আবির- একি আম্মু এতো তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পরলে কেনো?
মেয়েটা ওর বাবার কাধে মাথা রেখে আবার ঘুমের রাজ্যপারি দেয়। আমার মেয়ে হলো এক নাম্বার বাবা পাগল,,,সারাদিন বাবা বাবা বাবা,,বাবা ছাড়া কিছুই বুঝে না। অহ ক্লিয়ার করে দেই বিয়ের পর উনাকে আমি আবির ভাই বলে ডাকতাম বলে উনি সেই খেপে যেতেন। তাই কাল শেষের লাইনে আপনাদের বলেছিলো আবির ভাই আবির ভাই বলে পাগল করে দিয়েছিলাম। আসলে সত্যি বলতে বিয়ের পরও উনাকে আবির ভাই বলে ডাকতাম বলে পুরো এলাকার মানুষ বিষয়টা জেনে যায়। তাই পাড়ার নেন্টা বাচ্চা থেকে শুরু করে চায়ের দোকানের রহিম চাচাও ঠাট্টা করে উনাকে আবির ভাই বলে ডাকতো। আহা রে দুইটা মাস বেচারা যে কি লজ্জায় পরেছিলো। তারপর থেকে উনাকে আর আবির ভাই বলে ডাকি না। দিপা আপুর একটা ছেলে হয়েছে আর অয়ন ভাইয়ের এক ছেলে এক মেয়ে হয়েছে। আমার মেয়েটা পুরোপুরি তার খালার মতো হয়েছে,,,মাশাল্লাহ আশার এক কোনাও ছাড়েনি।
অহ বলতেই ভুলে গেছি আশারও বিয়ে হয়েছে। বিয়েটা আর কারো সাথে না যেই বেয়াই মশাই দিপা আপুর বৌভাতে আশাকে চোখ টিপ মেরেছিলো তার সাথেই আশার বিয়ে হয়। বিয়ের পর গোপন সূত্রে জানা যায় ওদের নাকি প্রেম ছিলো। মানে বৌভাতের পর থেকেই ওদের প্রেম কাহিনি শুরু হয়। দাদি মারা গেছে পাচ বছর হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো উনার সত্তর বছরের অভিজ্ঞতার চর্চা চলে।
আমার মেয়েটা পরম আবেশে তার বাবার কলে ঘুমাচ্ছে। উনি একটু হেটে হেটে মেয়েটাকে ঘুম পারানোর চেস্টা করছে।
নিরু- তুমি ওকে আমার কলে দেও। ঘুমিয়ে গেছে,,,
আমার উনি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,,,
আবির- থাক না আরেকটু,,,
আমি আকাশের পানে তাকিয়ে চায়ের কাপে চুমুক লাগাচ্ছি। অবশেষে আমার জীবনে সুখ এলো। আমি আপনাদের অনেক মিস করবো। প্রতিদিন আপনারা আমার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেন কখন নিরু আসবে। এখন আর কাওকে অপেক্ষা করতে হবে না। আপনাদের নিরু আপনাদের কাছ থেকে আজ দূরে চলে যাচ্ছে। আমাদের লেখিকা আমাকে আর বড় করলো না হয়তো আপনাদের আরো অনেক গল্প শুনানোর বাকী ছিলো কিন্তু কি আর করার সময়ের জন্য তা আর হলো না। আজকের পর থেকে হয়তো কারো সাথে আর দেখা হবে না। হয়তো অনেকেই বার বার আর লেখিকার প্রফাইল চেকও করবে না। এতোদিন আপনাদের সাথে থাকতে থাকতে আপনাদের নিরু আপনাদের অনেক ভালোবেসে ফেলেছে। কোনো ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করে দিবেন আর সব সময় ভালো থাকবেন। আমি আপনাদের অনেক মিস করবো।
আবির- কি গো এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কি দিনটা কাটানোর প্ল্যান আছে নাকি আমি অফিসে যাবো না।
নিরু- হ্যাঁ উঠছি। তুমি চারুকে বিছানায় সুইয়ে দেও। আমি তোমার জন্য চা করে নিয়ে আসছি।

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,সমাপ্ত,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here