নিরু পর্ব ১১+১২

#নিরু❤
পর্ব-১১
writer- #shanta_islam

রোদ চোখে পরার সাথে সাথে আমার সাধের ঘুমটাও নস্ট হয়ে গেলো। চোখ মেলে দেখি আমি সোফায় নেই। বিছানায় সুয়ে আছি। ভালো করে চারপাশ দেখার চেস্টা করলাম। ইয়া আল্লাহ এটা তো আবির ভাইয়ের রুম। আমি উনাদের বাসায় আসলাম কিভাবে। এটা আমার সাথে কি হচ্ছে,,আমি কিভাবে এখানে আসলাম। আমাকে কি সত্যি সত্যি জ্বীন ভুত ধরলো নাকি আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ ওপাশ থেকে কে জেনো আমার উপর পা উঠিয়ে দিলো,,আমার পুরো শরীর ভয়ে শিউরে উঠছে। ওপাশ যে তাকাবো সেই শক্তি যোগার করতে পারছি না। নিশ্চিত কোনো ভুত হবে। চিৎকার যে দিবো তারো কোনো উপায় নেই গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না। চোখ দুটো বন্ধ করে মনে মনে আয়াতুল কুসরি পরছি। দিধার মধ্যে আছি ওপাশে কি তাকাবো নাকি না। তাকালে যদি ঘার মটকে দেয়। ঘাড় মটকানো কথাটা ভাবতেই প্রচুর কান্না পাচ্ছে। আমি এতো তাড়াতাড়ি মারা যাবো। আল্লাহ জীবনে অনেক পাপ করেছি মাফ করে দিও। এর মধ্যেই ওপাশ থেকে কিছু শুনতে পেলাম।
– আমার টাকা,,উহ দেওনা,,আমার টাটা,,টাটা,,টাকা
কি ব্যাপার এটা আশার কন্ঠ না। সাথে সাথে ওপাশ হয়ে তাকাতেই দেখি আশা আমার উপর পা দিয়ে ঘুমের মধ্যে টাকা টাকা বলছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। আশাকে দেখে সস্থির একটা নিশ্বাস ছারলাম। আল্লাহ বাচাইসে এটা ভুত না এ যে জলজেন্ত আমাদের আশা পেত্নী। এই প্রথমবার আশাকে দেখে এতো খুশি লাগছে যা বলে ব্যাক্ত করা যাবে না। পরক্ষণেই মনে পরে গেলো ওর জন্যই একটু আগে যেই ভয়টা পেয়েছি মা গো মা। আমার জায়গায় অন্য কেও হলে নির্ঘাত হার্ট অ্যাটাক করতো। কথাটা মনে পরতেই মেজাজটা গরম হয়ে গেলো,, জোরে একটা লাথি মেরে আশাকে খাট থেকে নিচে ফেলে দিলাম।
আশা- ও মা গো,,, গেলো আমার কোমড় গেলো। আশা নিচে বসে সাপের মতো ফসফস করতে করতে বলতে লাগলো,
-কি হয়েছে লাথি মারলি কেনো?
নিরু- তুই এখানে কিভাবে আসলি? আমি এখানে কিভাবে আসলাম? আমার রুম কই? সোফা কই? আমাদের বাসা কই?
আশা- তুই কি পাগল হয়ে গেছিস। কাল রাতেই তো আব্বা বললো রুমে জাগা না হলে নীলা খালাদের বাসায় এসে ঘুমাতে।
নিরু- আমি তো সোফায় ঘুমিয়ে ছিলাম। এখানে আসলাম কিভাবে?
আশা- আমি কিভাবে বলবো! আমি এসে দেখি তুই আগে থেকেই এখানে ঘুমিয়ে আছিস। তাই আমিও তোর পাশে এসে ঘুমিয়ে পরি।
নিরু- তাহলে আমি এখানে কিভাবে আসলাম?
আশা- দূর বাল এক কথা বার বার বলবি না তো! আমি কিভাবে জানবো তুই এখানে কিভাবে আসলি ! তবে আজ যেই লাথিটা মারলি না। এটা আমি মনে রাখলাম। কাজটা তুই ভালো করলি না নিরু। কথাগুলো বলেই সাপের মতো ফসফস করতে করতে আশা রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
কিছুই বুঝতে পারছি না,,আমি ছিলাম সোফায়। হঠাৎ এখানে আসলাম কিভাবে। গায়েবি শক্তি নাকি। আমার মধ্যে মনে হয় গায়েবি শক্তি এসে পরেছে। ব্যাপারটা কিন্তু মন্দ না ভয়ানক হলেও মজার। সত্যিই যদি আমার মধ্যে কোনো গায়েবি শক্তি এসে থাকে তাহলে প্রথমে আমি আশাকে গায়েব করবো তারপর দাদিকে। হঠাৎ মনে পরলো কাল রাতে ক্ষনিকের জন্য যখন ঘুম ভেঙেছিলো তখন মনে হয় আমি আবির ভাইকে দেখেছিলাম। সত্যিই কি আবির ভাইকে দেখেছিলাম।নাকি স্বপ্ন ছিলো। সঠিকভাবে মনে করতে পারছি না। এখানে এভাবে এসব চিন্তা না করে আগে বাসায় যেতে হবে। এটা আবির ভাইয়ের রুম বলতে গেলে আমার কাছে বাঘের গুহার মতো। বাঘ আসার আগেই এই গুহা থেকে আমাকে পালাতে হবে।তাই তারাতাড়ি করে রুম থেকে বের হতে যাবো সাথে সাথে মনে হলো কারো সাথে ধাক্কা খেলাম। উপর হয়ে তাকিয়ে দেখি আবির ভাই। কথাটা আবার প্রুফ হয়ে গেলো যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। আবির ভাইকে হঠাৎ এভাবে দেখে আতংকে আমার হৃদপিন্ড, কলিজা, ফেফসা, নাড়িভুড়ি সবগুলো একসাথে কেপে উঠলো। উনি এখন কেনো এলো আমি বের হয়ে যাওয়ার পর ও তো আসতে পারতো। উনাকে দেখে ভয়ে ভয়ে এক পা দুপা করে পিছু হতে লাগলাম আর উনিও আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। ভারি বজ্জাত লোক তো। দেখছে যে উনাকে দেখে ভয়ে পিছুপা হচ্ছি উনি আরো আমার দিকে এগিয়ে আসছে। না উনাকে আর ভয় পেলে চলবে না। কালকের কথা এখনো মনে আছে ভুলিনি। থাপ্পড়ের চিহ্নটা এখনো গালে লেগে আছে। যত ভয় পাবো ততো দূর্বল হয়ে পরবো আর উনাকে দেখে ভয় পাওয়ার কি আছে। উনি বাঘ নাকি ভালুক যে উনাকে ভয় পাবো। আমি আর পিছু হলাম না। আমিও উনার সামনে থেকে উনাকে না দেখার মতো করে সাইড কাটিয়ে চলে আসার চেস্টা করলাম। উনাকে ওভারটেক করে দরজার দিকে একটু এগিয়ে আসতেই পেছন থেকে ওরনায় টান পরে। পিছু তাকিয়ে দেখি আবির ভাই আমার ওরনা ধরে রয়েছে।
কোনো মতে কাপাকাপা কন্ঠে বলে উঠলাম,,,
– আমার ওরনাটা ছারুন!
আবির- কিসের ওরনা।
উনার কথা শুনে অবাক হচ্ছি,, কিসের ওরনা মানে কি?
উনি তো আমার ওরনাটা ধরে রেখেছে।
নিরু- দেখেন ভালো হবে না বলছি। ওড়নাটা ছারুন। আমি যাবো!
আবির- তো যা। তোকে কে আটকে রেখেছে!
আল্লাহ গো আল্লাহ কতো বড় ঢাহা মিথ্যা কথা বলে মানুষটা। আমাকে আটকে রেখে বলে কে আটকে রেখেছে।
নিরু- ওড়না ছারুন নাহলে কিন্তু আমি চিৎকার করবো।
কথাটা বলে এক হাত ধরে ওড়না নিয়ে টানাটানি করছি,,আবির ভাই ওড়না ধরে আমাকে একটা হেচকা টান দিয়ে তার বুকের সাথে জাপটে ধরে। মানুষটার শক্তি আছে বলতে হবে। আমি এতোবার টেনেও একটা ওড়না ছাড়াতে পারলাম না আর উনি একটানে ওড়না শুদ্ধো মানুষ টেনে নিয়ে আসে।
নিরু- আমি কিন্তু সত্যি সত্যি চিৎকার দিবো! ছারুন,,
আবির ভাই আমার কোমড় ধরে তার আরো কাছে নিয়ে যেয়ে বললো,,
-আরে আজব তো আমি তোকে ধরলাম কখন।
উনি আমার এতোটা কাছে এসে কথা বলছে আমার ভিতরটা পুরো তোলপার হয়ে যাচ্ছে। মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। অনেক কথা বলার চেস্টা করছি কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে না। প্রতিবার কেনো আমার সাথে ঠিক একি রকম হয়। উনি আমার এতো কাছে আসলে কেনো কিছু বলতে পারি না।
আবির- কিরে যাচ্ছিস না কেনো যা।
উনার দিকে অবাক দৃষ্টিতে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি। ছোটার চেস্টাও করছি অনেক কিন্তু তা বৃথা।
নিরু- ছ,,ছ,,ছা,,ছা,,ছ,,ছারু,,
আবির- আবার চ ছ আরাম্ভ করেছিস। কথাটা বলেই আবির ভাই আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো,,তোর এই চ ছ এর ওষুধ আমার কাছে আছে।
আল্লাহ রে এভাবে কেও কথা বলে,, কানের কাছে উনার ঠোঁটের স্পর্শ পাচ্ছিলাম। গলা দিয়ে তো এমনিতেও কোনো কথা বের হচ্ছে না একটা ঢোক যে গিলবো তাও পারছি না। অনেক কস্টে একটা ঢোক গিলে কিছু বলতে যাবো তার আগেই আবির ভাইয়ের ঠোঁট আমার কান থেকে গলা স্পর্শ করে। মাতালের মতো আমার গলায় ঘাড়ে এলোমেলো চুমু শুরু করে। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছি না। না এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। কোনো মতে উনাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরানোর চেস্টা করলাম। উনি আরো আমার কোমড় শক্ত করে ধরে কানের কাছে ঠোঁট রেখে বলতে লাগলো,,
– তোর পিঠের তিলটা আবার দেখতে ইচ্ছে করছে।
আস্তাগফিরুলা আমার পিঠে তিল আছে এটা উনি জানলো কিভাবে। আজ আমি শেষ,,,আবির ভাই উনার ঠোঁট দিয়ে আমার ঠোঁট চেপে ধরে। চোখের চারদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। রীতিমতো আবির ভাইয়ের কথা শুনে একটা সখ খেলাম,,আমার পিঠে তিল আছে এটা উনি কিভাবে জানলো। তারমানে উনি কিছু দেখেছেন,,,আবির ভাইকে কিছুতেই ছাড়াতে পারছি না। উনি আরো জোরে কিস করতে থাকে,,আমার মান ইজ্জত সব শেষ,, ভাবতেই মাথাটা গুড়িয়ে পরছে। নিরু বেহুশ হয়ে আবিরের বুকে ঢলে পড়ে।
আবির- নিরু এই নিরু,,,নিরু,,,এই মেয়েটা রোমান্সের সময়ই বার বার ফিট হয়ে পড়ে যায়।
কথাটা বলে আবির একটা সস্থির নিশ্বাস ছারলো।
চোখে পানির ছিটা আর কানে নীলা খালার ডাক শুনে হুরমুরিয়ে উঠলাম।
নীলা খালা- কি হয়েছে মা। শরীর খারাপ লাগছে তোর।
নিরু- খালা আমি এইদিকে,,
খালা- আবির এসে দেখলো তুই নাকি বেহুস হয়ে পড়ে ছিলি! তোর কি হয়েছিলো মা।
এখন আমি কিভাবে বলি কি হয়েছিলো। উনার ছেলে যে কেলেংকারী কারবার শুরু করেছিলো সেটা বললে তো কেও বিশ্বাস করবে না উল্টো মান ইজ্জত যা আছে সব ডুববে।
চারপাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম আবির ভাই নেই। আশা আর ভাবি আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
ভাবি- খালা আমি কি আম্মাকে ডাক দিবো?
আশা- চাচিকে ডেকে লাভ নেই। দাদিকে ডাকো,,ওরে মনে হয় আবার আছোর করেছে। দেখো না কিভাবে চারদিকে তাকিয়ে কাকে জেনো খুজছে।
আল্লাহ রে দাদিকে ডাকলে আমি শেষ। যদি দাদি জানতে পারে আমি বেহুস হয়ে পরে গেছি তাহলে আবার সেই ঝাটা আর শুকনো মরিচ বের করবে।
নিরু- না বোইন তোর পায়ে পরি। তুই দাদিকে কিছু বলিস না।
আশা- লাথির কথা এখনো মনে আছে ভুলে যাইনি।
#নিরু❤
পর্ব-১২
writer- #shanta_islam

আশা- লাথির কথা এখনো মনে আছে ভুলে যায়নি।
নিরু- খালা ওকে বলো না যেনো দাদিকে কিছু না বলে।
খালা- আশা তোকে কিছু বলতে হবে না। আজ বৌভাতের অনুষ্ঠানে যেতে হবে। এসব শুনলে তোদের বাসার সবাই টেনশন করবে।
আশা- লাথির বদলা না নিয়ে ছারছি না।(মনে মনে।)
আশা ভেংচি কেটে চলে যায়।
নিরু- খালা আমি গেলাম,,
খালা- কোথায় যাচ্ছিস,,নাস্তা খেয়ে সাহানা আর তুই একসাথে যাস। সারাদিন তো একাই থাকি,,একটু বসলে ভালো লাগতো।
আমি সোজাসাপ্টা না বলে দিলাম। এই বাসায় আর এক মূহুর্তও থাকা পসেবল না। উনার ছেলে যেই মিচকা সয়তানের সয়তান আল্লাহ তালাই জানে কখন এসে আবার আমার উপর হামলা করে বসে। না বলাতে খালা আরো রেগে গেলো।
আমি ভাবির দিকে তাকালাম,,,ভাবি ইশারা দিয়ে থাকার কথা বললো। কি আর করার এভাবে চলে গেলে খালার মনটা খারাপ হয়ে যেতো আর এমনিতেও এখন তো আর ওই সয়তানটাকেও দেখছি না। তাই আমি আর ভাবি কিছুক্ষণের জন্য থেকে গেলাম। খালা রুটি বানাছিলো আমি দৌড়ে খালার কাছ থেকে বেলুনটা কেরে নিলাম।
– খালা আমি থাকতে তুমি কাজ করবে কেনো? তুমি যাও,,আমি নাস্তা বানিয়ে আনছি। আমি রুটি বেলছি আর ভাবি বাজি করছে। হঠাৎ ভাবি বলে উঠলো এই নিরু তোমার ঠোঁট কাটলো কিভাবে। ভাবির কথায় ঠোঁটে হাত দিয়ে দেখি ঠোঁটে হালকা রক্ত লেগে আছে এতোক্ষণ খেয়াল ছিলো না কিন্তু এখন একটু ঠোঁটে ব্যাথা অনুভব করছি। সাথে সাথে মনে পরলো আবির ভাইয়ের কথা। ইস কতো জোরে ঠোঁট দুটো চেপে ধরেছিলো। ছাড়ানোর চেস্টা করলে আরো পাগলের মতো ঠোঁট চেপে ধরতো। এই ঠোঁটে যে তার পরশ লেগে রয়েছে। ভাবি ধাক্কা দিয়ে মিটমিট করে হাসতে হাসতে বললো,,হুম বুঝি বুঝি সবই বুঝি,,
ভাবির কথা শুনে অনেকটা অবাক হলাম। এভাবে কথা বলার কারন কি,,ভাবিকে প্রশ্ন করলাম,,কি বলছো ভাবি। পরক্ষনের মধ্যেই ভাবি কথাগুরিয়ে রান্নায় ব্যস্ত হয়ে পরে। হয়তো সয়তানি করে বলেছে তাই আর প্রশ্ন করলাম না কিন্তু হঠাৎ একটা প্রশ্ন মাথার মধ্যে এসে পড়লো,,,
নিরু- আচ্ছা ভাবি কাল আমি সোফায় ঘুমিয়ে ছিলাম তাহলে এখানে আসলাম কিভাবে।
ভাবি- আরে আবির ভাইই তো,,,ভাবি কথাটা বলেও আটকে গেলো।
নিরু- আবির ভাই কি?
ভাবি- দূর তোমার জন্য বাজি পুরে গেলো? নিরু কথা একটু কম বলতে পারো না।
নিরু- ভাবি বলো কাল কি হয়েছিলো? আমি এখানে আসলাম কি করে?
ভাবি- বারে তুমি নিজেই তো এখানে আসলে!
নিরু- কিহ আমি নিজে এখানে এসেছি,, কিন্তু আমার মনে পড়ছে না কেনো?
ভাবি- নিরু দেরি হয়ে যাচ্ছে। জলদি নাস্তা নিয়ে এসো।
ভাবি চলে গেলো,,আমি ভাবির পিছু পিছু নাস্তা হাতে নিয়ে ডাইনিং রুমে ডুকতেই দেখি আবির ভাই বসে বসে ফোন টিপছে। আবির ভাইকে দেখা মাত্রই নাস্তা নিয়ে উল্টো পা হাটা শুরু করলাম।
খালা- কিরে ওদিকে কোথায় যাচ্ছিস এখানে আয়।
আল্লাহ গো সয়তানের নাম না নিতেই সয়তান এসে হাজির এখন কি করি কি করি। এক দৌড় দিয়ে যে এখান থেকে বের হয়ে যাবো তারও কোনো উপায় নেই নাস্তার প্লেট যে হাতে। নাস্তার প্লেট হাতে নিয়ে ভয়ে ভয়ে ডাইনিং এর দিকে এগোচ্ছি এর মধ্যেই আবির ভাই টেবিল থেকে উঠে তার রুমে চলে গেলো। যাক বাবা বাচা গেছে সয়তান চলে গেছে।
আবির- মা আমার নাস্তাটা রুমে পাঠিয়ে দেও। আবির ভাই রুম থেকে বলে উঠলো।
ভাবি- নিরু যাও তো আবিরের নাস্তাটা উনার রুমে দিয়ে আসো,,
ইনাইল্লাহ ভাবি এইটা কি বলে উঠলো।
নিরু- আ,,আ,,আমি,,
ভাবি- হ্যাঁ তুমি,,আমরা তো নাস্তা করা শুরু করে দিয়েছি,,তুমি যেয়ে একটু নাস্তাটা দিয়ে আসো।
খালা আবির ভাইয়ের জন্য দুইটা পরোটা আর বাজি বেরে আমার হাতে প্লেট ধরিয়ে দিলো।
খালা- যা দিয়ে আয়।
নিরু- খালা আমার না অনেক পা ব্যাথা করছে। যেতে পারবো না। এর মধ্যেই আশা বাসায় ডুকে,,
আশা- কি গো তোমরা একা একা নাস্তা করছো তাও আবার আমাকে ছেরে,,পাপ হবে পাপ। আল্লাহ সইবে না।
আশাকে দেখে সাথে সাথে আশার হাতে নাস্তার প্লেট ধরিয়ে দিলাম।
নিরু- আশা যা তো আবির ভাইকে নাস্তাটা দিয়ে আয়।
ভাবি- সে কি নিরু নাস্তাটা তো তুমিও যেয়ে দিয়ে আসতে পারো!
আশা- দেখেছেন খালা দেখেছেন কতো বড় সাহস আমাকে ওর্ডার করে। এক নাম্বার কাম চোরনী। জামাই বাড়ি গেলে তিন বেলা ঝাটার বাড়ি খাবে। কথাটা বলেই আশা টেবিলে বসে খাওয়া শুরু করে দিলো। আমি আশার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি সুযোগ পাচ্ছি না নাহলে এখনি পিঠে চার পাচটা ঘা বসিয়ে দিতাম।
আশা- এভাবে চোখ পাকিয়ে আছিস কেনো?তোকে আমি ভয় পাই না। যা নাস্তা দিয়ে আয়।
আশার কথা শুনে অনেক রাগ হচ্ছে,,রাগে হনহন করতে করতে আবির ভাইয়ের রুমে যেয়ে ধপাস করে উনার সামনে নাস্তা রেখে বের হয়ে যাবো আবির ভাই আমার হাত ধরে ফেলে,,
আবির- কিরে এভাবে সাপের মতো ফসফস করছিস কেনো?
নিরু- হাত ছারুন🤬
আবির- আচ্ছা ছারছি আগে বল কি হয়েছে?
নিরু- কি হয়েছে যানেন না। আপনার দোষ সব আপনার দোষ। আপনার জন্য সব সময় আমাকে কথা শুনতে হয়। আপনার জন্য সব সময় কেনো না কোনো জামেলায় পরতে হয়। আপনার ভালো মানুষির পিছনে এই সয়তানের চেহারাটা আর কতো দিন লুকিয়ে রাখবেন। আপনি একটা সয়তান,বেয়াদব,,লুচ্চা ছেলে,,আপনার নামে মামলা করবো,,পুলিশে ধরিয়ে দিবো।
আবির ভাই নাস্তার প্লেটটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,,,খাইয়ে দে,,,
এই মানুষটাকে যতো দেখি ততো অবাক হই। এতোগুলো কথা বললাম তার মধ্যে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই।
-কিরে খাইয়ে দিবি নাকি মাকে বলবো আমার রুটি সব তুই খেয়ে ফেলেছিস।
নাওযুবিল্লাহ,,কতো বড় মিথুক। আমি কিছু করলাম না আর আমাকেই অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।
– কিরে খাওয়াবি নাকি মাকে ডাকবো।
– এই আপনি এতো লুইচ্চা কেন? সরম করে না,,
কথা শেষ করার আগেই আবির ভাই একটা চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,,মা দেখো নিরু আমার সব রুটি,,
নিরু- এই থামেন থামেন। বলেই আবির ভাইয়ের মুখে রুটি ভরে দিলাম। খালার কাছে এই বিচার দিলে খালা কিছু বলবে না ঠিকি কিন্তু আশা ঠিকি দাদির কানে যেয়ে পিনিক লাগাবে। আহ হা কি জীবন আমার। বসে বসে মহারাজকে খাইয়ে দিচ্ছি আর উনি বসে বসে আরামে গেমস খেলছে। আমার দিকে একবারো তাকাচ্ছে না। কি শান্তির জীবন,,একটার অর্ধেক রুটি খাইয়ে দিচ্ছি হঠাৎ মনে পরে গেলো কালকের কথা কতো জোরে থাপ্পড়টা মেরেছিলো। আর আজ আমি সেই মানুষটাকেই খাইয়ে দিচ্ছি। ধপাস করে প্লেটটা রেখে উঠে যেতে নিলাম আবির ভাই আমার ওরনা ধরে আবার টান মারলো,,পিছে তাকিয়ে দেখি আমার ওরনা দিয়ে মুখ মুছছে। সয়তান ছেলে একটা আমাকে মারে আবার আমাকেই খাইয়ে দিতে বলে আর আমার ওরনা দিয়েই মুখ মুছে। আমার জায়গায় অন্য মেয়ে হলে কি করতো তা আমার জানা নেই। আমি আবির ভাইকে কিছু বলতে পারি না তার একমাত্র কারন উনার প্রতি আমার একটা দূর্বলতা কাজ করে। ওরনাটা টান দিয়ে সোজা ডাইনিং এ এসে খেতে বসে পড়লাম। এসে দেখি আশা অলরেডি তিনটা রুটি মেরে দিয়েছে চার নাম্বার চলছে। খালা আশাকে আর আমাকে দুটো সপিং বেগ ধরিয়ে দিলো আর বললো আজ তোরা দুজন বৌভাতে এগুলো পরিস। আশা খুশিতে কুটি কুটি হয়ে বলে উঠলো,, অবশেষে উপকারের উপহার পেলাম।
ভাবি- এটা কিন্তু ঠিক না আশা একা উপহার পেলো আর আমিও যে উপকার করলাম তার উপহার কই,,আবির ভাই আবির ভাই চিল্লিয়ে ভাবি আবির ভাইয়ের রুমে গেলো। ব্যাপারটা বুঝলাম না খালা উপহার দিলো,, এখানে আবির ভাই আসলে কোথা থেকে। আর ভাবির কথার কোনো আগা গোরাই তো খুজে পাচ্ছি না।
নিরু- আশা কিসের উপকার রে,,,
আশা- তুই এতো শুনে কি করবি। যা দাদি তোকে ডাকছে,,জলদি যা।
নাহ এখানে আর থাকা যাবে না। এক একজনের এমন রহস্যজন কথাবার্তায় মাথা ধরে যাচ্ছে। বাসায় যেয়ে দেখি সবাই ঝাক বেধে আছে।
অনুষ্ঠানের জন্য চাচি সবাইকে রেডি হতে বলে গেলো। আশার সপিং বেগ থেকে একটা ফ্রোক বের করলো আর আমার সপিং বেগে একটা থ্রী পিস পেলাম। দূর ছাই মনে করেছিলাম শাড়ী হবে। থ্রী পিসের সাথে একটা হিজাবও ছিলো আর সাথে একটা চিরকুট,,
চিরকুটে লিখা ছিলো,,আজ যেনো কোনো সাজুগুজু করতে না দেখি। হিজাব পরবি মুখ যেনো ডাকা থাকে।
নির্ঘাত এটা খালার কাজ না,,,এটা যে আবির ভাইয়ে কাজ তা ভালো করেই জানা আছে,,, জামাটা ছুরে রেখে একটা লাল শাড়ী পরলাম সাথে ঠোঁটে গাড়ো করে লাল লিপস্টিক আর কাজল লাগালাম,,চুল গুলো ছেরে দিয়ে কানে বড় বড় এক জোড়া ঝুমকা পরলাম। চিরকুটে যা লিখাছিলো তার বিপরীত করলাম,,মোটামুটি সাজ দিয়েছি।
আশা এসে বলে গেলো সবাই গাড়িতে অপেক্ষা করছে তাড়াতাড়ি জেনো বের হই,,
যেয়ে দেখি অলরেডি সবাই জাগা বুকিং করে রেখেছে আমি ভাবির পাশে যেয়ে বসে পড়লাম। এর মধ্যে আবির ভাই এসে হাজির। উনি তো সব সময় বাইকে যায় তাহলে আজ গাড়িতে আসলো কেনো? আবির ভাইকে দেখে ভাবি আমার পাশ থেকে উঠে আশা আর দাদির কাছে বসে। আর ধপাস করে আবির ভাই আমার পাশে বসে পরে। চোখে রাগ রাগ ভাব। আল্লাহ রে বার বার যার পিছু ছারানোর চেস্টা করি সেই কেনো বার বার কপালের সামনে এসে জুটে।
নিরু- ভাবি তুমি ওখানে বসলে কেনো? এখানে আসো?
ভাবি- ওখানে আমার একটু আনইজি ফিল হচ্ছে তাই এখানে আসলাম। ভাবি মুচকি মুচকি হেসে কথা বলছে। আমি যে অন্য জায়গায় যেয়ে বসবো তারও কোনো উপায় নেই। সবাই সবার জায়গা বুকিং করে রেখেছে। দূর ছাই এই গাড়িতেই আর বসবো না বলেই উঠে যেতে নিলাম,,আবির ভাই আমার হাত টেনে ধরে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো,,চুপচাপ বসে থাক। এক পা নড়লে এখানেই লেংরি মেরে ফেলে দিবো। এই মানুষটা দেখি হেব্বি একটা ডেঞ্জারাস পারসোন। বলা যায় না কখন কি করে বসে তাই চুপচাপ বসে পরলাম।
গাড়ি স্টার্ট হয়,আশা আয়না বের করে লিপস্টিক দিচ্ছে,,,এর মধ্যে দাদি বলে উঠলো কিরে একা একা লিপস্টিক দিচ্ছিস কেনো? আমাকেও একটুও দে,,আমিও একটু লাগাই।
আশা- আরে দাদি এই লিপস্টিকে তোমাকে মানাবে না। এটা ব্রেন্ডেড জিনিস। সবার ঠোঁটে মানায় না।
দাদি আশার হাত থেকে আয়না আর লিপস্টিক কেরে নিয়ে বললো,,
– তুই আমার থেকে বেশি বুঝোস। সত্তর বছরের অভিজ্ঞতা আছে আমার। আমার মতো সুন্দরী একটা মেয়ের মুখেই এটা মানাবে।
দাদি গাড়ো করে লিপস্টিক লাগায়। তিন থেকে চার বার এক জায়গায় বার বার লিপস্টিক দিচ্ছে। আল্লাহ আল্লাহ বেচে থেকে আর কতো কি যে দেখতে হবে।
গাড়ি অনুষ্ঠানের জায়গায় এসে থামে। শাড়ীটা পড়া ভুল হয়ে গেছে। সামলাতে হিমসিম খাচ্ছি। আশা আমাকে আর ভাবিকে টেনে নিয়ে দুলাভাইয়ের কাছে নিয়ে যায়। দুলাভাই আর দিপাপু হাত ধরা ধরি করে স্টেজে ছবি তুলছে।
ভাবি- আহা দেখো না কি প্রেম!
ভাবির কথা শুনে দুলাভাই দিপা আপুর হাত ছেরে দেয়।
আশা- যে প্রেম সর্গ থেকে নেমে এসেছে,,
সে প্রেম আমাকে দিও,,
যেনে নিও,,
দুলাভাই তুমি আমার প্রানের চেয়েও প্রিয়,,ও দুলাভাই
তুমি আমার প্রানের চেয়েও প্রিয়।
দুলাভাইও দেখি আশার সাথে তাল মিলায়।
দুলাভাই- নিশ্বাস আমার তুমি জানে ও শালিকা,,
শালিকা আমার
চলবে,,,,

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here