নিরু পর্ব ৯+১০

#নিরু❤
পর্ব-০৯
writer- #shanta_islam

নিরু- আশা তুই যা আমি আসছি।
আশা- জলদি আয়। এমনিতেই গা টা জ্বলে যাচ্ছে। কেমন বাটপারের বাটপার। ওদের একটা শিক্ষা দিতে হবে। ওরা জানে না এই আশা কি জিনিস।
কটকট করে কথাগুলো বলে আশা চলে গেলো। আমি একটা গাউন পড়ে বের হই। আশাপাশে আবির ভাইকে দেখতে পাচ্ছি না। দেখলেও কি উনার সাথে আর জীবনো কথা বলবো না। উনি আজ যা করলো,,এ জন্মে আর উনার মুখোমুখি হওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। সব মরে গেছে,,উনার জন্য যতটুকু ফিলিংস তৈরি হয়েছিলো সব কিছু শেষ। আমি আর কিছু মনে রাখতে চাই না।
ভাবি- ওই নিরু এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? দিপার কাছে চলো একটু পর তো কাজী আসবে।
নিরু- কাজী আসবে মানে? বিয়ে এখনো হয়নি?
ভাবি- না এখনো বিয়ে হয়নি। কাজী আসতে লেট করেছে। তাই বরযাত্রীদের আগে খাওয়াতে বসানো হয়েছিলো।
নিরু- অহ আমি বরযাত্রীদের খেতে দেখে মনে করলাম বিয়ে হয়ে গেছে।
আশা- অহ তোমরা এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো,, চলো দিপা আপুর কাছে চলো। আপুকে সব শিক্ষিয়ে দিতে হবে।
নিরু- কি শিক্ষিয়ে দিবি?
আশা- তুই চুপ থাক। তুই তো আবালের রানী। তোর মাথায় বুদ্ধি থাকলে তুই এখন এই কথা বলতি না।
আশার উপর প্রচুর রাগ হচ্ছে এতোটুকু মেয়ে এই বয়সেই কি বড় বড় কথা বলে। কিন্তু মনের অবস্থা একদমি ঠিক নেই। তাই আশাকে আর কিছু বললাম না। ভাবি আমি আর আশা দিপা আপুর কাছে গেলাম। যেয়ে দেখি অলরেডি আমার কাজিনরা ওর সাথে আছে। আশা ওদের ঠেলে যেয়ে বলতে লাগলো,,,
আশা- এই সর সর,,দিপা আপু আমি যা বলছি তা ভালো করে শুন। একটু পর কাজী আসবে। কাজী তোকে কবুল বলতে বললে তুই সাথে সাথে কবুল বলবি না।
দিপা- কবুল বলবো না কেনো? কবুল না বললে তো আমার বিয়ে হবে না।
আশা- এহ এই মেয়ের বিয়ে করার কতো তাড়া! আমি আগে থেকেই জানতাম কাজী কবুল বলতে বললে তুমি এক সেকেন্ডও দেরি করবে না। আমার সব বোনগুলো হয়েছে এক একটা ডেমনি। মাথায় একটুও বুদ্ধি নেই।
আশা হয়েছে অবিকল দাদির মতো,,,দাদির সাথে ওর কোনো অমিল খুজে পাওয়া যাবে না। অবশ্য দাদির মতো হবে নাই বা কেনো। সারাদিন তো ওই বুড়ির পিছু পিছুই থাকে। দাদি চলে গেলে আশা এই চিরিয়াখানার প্রধান মন্ত্রীর স্থান গ্রহন করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মনে মনে দাদির কথা ভাবতে না ভাবতেই সে এসে হাজির। বুড়ির হায়াত আছে বলতে হবে। এতো তাড়াতাড়ি মরবে না। দাদি এসেই পান চাবাতে চাবাতে বলতে লাগলো,,,
-আশা দিপাকে সব বুঝিয়ে দিয়েছিস তো?
আশা- বুঝাবো কি,,নিরু আর দিপা এরা দুজন যে আবালের রানী এদের যে বুঝাতে যাবে তাকে দশ বার পাবনা থেকে ঘুরে আসতে হবে।
আশার কথা শুনে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না। পাশে থাকা একটা লাঠি নিয়ে মারতে গেলাম।
দাদি- খবরদার নিরু আমার আশার গায়ে হাত দিবি না।
আশা- দেখেছো দাদি দেখেছো ওর সাহস কতো বড়। তুমি ঠিকি বলো দাপা আপুর পর ওরও একটা ব্যবস্থা করতে হবে।
দাদির সামনে আশার গায়ে হাত দেওয়া পসেবল না। তাই সেখানেই থমকে গেলাম। নাহলে এখানে দিপা আপুর বিয়ের বদলে আমার বিয়ে নিয়েই বেশি মাতামাতি হবে।
দাদি- শুন দিপা কাজী কবুল বলতে বললে সাথে সাথে কবুল বলবি না।
দিপা- তো কি করবো সুবহানাল্লাহ বলবো!
আশা- আপু তোর মাথায় আসলো বুদ্ধি নেই,,,সাথে সাথে কবুল বললে মানুষ কি মনে করবে মেয়েটার লজ্জা সরম নেই। নির্লজ্জ মেয়ে।
দিপা- তাহলে কিভাবে কবুল বলবো।
এর মধ্যেই একজন কাজিন দৌড়ে এসে বললো কাজী সাহেব এসে পড়েছে। দিপাপু কে বরের সাথে বসাবে,,আপুকে জলদি নিয়ে যেতে বলেছে।
দাদি- গিয়ে বল দিপাকে নিয়ে আসছে। আশা তুই দিপাকে সব বুঝিয়ে নিয়ে আয়। বলেই দাদি চলে গেলো।
আশা- শুন আপু কাজী সাহেব যদি কবুল বলতে বলে তাহলে কতোক্ষন চুপ করে থাকবে। সাথে সাথে কবুল বলবি না। আমি একটা চিমটি কাটবো,,আমি চিমটি কাটার সাথে সাথে এক কবুল বলবে। কাজী সাহেব যখন আবার কবুল বলতে বলবে তখনও কবুল বলবি না। আমি যখন দুইবার চিমটি কাটবো তখন দ্বিতীয় কবুল বলবি,,আর তিন নাম্বার,,,,,
নিরু- ঠাটিয়ে মারবো এক! পিচ্চি সয়তান। তোকে এতো মাতব্বরি করতে হবেনা। যা যেয়ে পিচ্চিদের সাথে খেল। কথাটা বলেই দিপা আপুকে নিয়ে চলে আসলাম। দিপা আপুকে বরের সামনে বসাতেই চোখ পরলো আবির ভাইয়ের দিকে। আবির ভাইকে দেখা মাত্রই আমার কিছু কাজিনরা দৌড়ে যায় তার কাছে,,
উনার হাত দিয়ে রক্ত পরছে। কেমন অগোছালো একটা মানুষ! হাতে একটু ব্যান্ডেজও তো করে নিতে পারে। প্রথমে উনার জন্য একটু কস্ট হচ্ছিলো কিন্তু পরক্ষনের মধ্যেই উনার প্রতি রাগটা আরো বেরে গেলো,,আমার মেয়ে কাজিনরা তার কাছে যেয়ে নেকামো করে বলতে লাগলো,,,,
– আল্লাহ আবির তুমি ব্যাথা পেলে কিভাবে,,,
– ইস হাত দিয়ে কতো রক্ত পরছে,,
– আমি ব্যান্ডেজ নিয়ে আসছি।
এহ কি দরদ একেকজনের আলগা দরদ দেখে গা জ্বলে যাচ্ছে। বেহায়া মেয়েগুলো পারে না যেনো কোলের উপর যেয়ে পরছে। যার যা ইচ্ছা তাই করুক আমার কি,,আমার কিছু যায় আসে না। আবির ভাই আড়চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে তা আমি ভালো করেই বুঝতে পারছি। আমি উনাকে না দেখার ভান করে দিপা আপুর পাশে যেয়ে দাড়ালাম পাশে আশা ভাবি আরো কয়েকজন মুরব্বি ছিলো।
অবশেষে কাজী সাহেব দিপা আপুকে কবুল বলতে বললো,,দিপা আপু অসহায়ের মতো একবার দাদির দিকে তাকায় আরেকবার আশার দিকে। আহারে বেচারী বুঝে উঠতে পারছে না কি করবে। আশা দিপা আপুকে ইশারা দিয়ে কবুল বলতে মানা করে। দিপা আপু আশার কথা অনুযায়ী কবুল না বলে মাথা নিচু করে চুপ করে বসে আছে। আশার চিমটির অপেক্ষা করছে।
কাজী- বলো মা কবুল,,
দিপা আপু-,,,,,,,,,,,,,,,,,
কাজী- বলো মা কবুল,,
দিপা আপু-,,,,,,,,,,,,,,,
কাজী- মা বলো কবুল,,,
দিপা আপু আশার কানে এসে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো,,আশা আর কতো এখন কবুল বলে দেই,,
আশা- আহ আপু চুপ করে থাক তো আমার ইশারার অপেক্ষা কর।
এদিকে কাজী বেচারা মা কবুল বলো রিপিট টেলিকাস্ট করতে করতে হাপিয়ে গেছে। আহ হা রে আমার কাজীর জন্য অনেক মায়া হচ্ছে বেচারা উনার বয়সে মনে হয় কখনো এমন বিয়ে পড়ায়নি। মা কবুল বলো বলতে বলতে উনার দাতও ব্যাথা হয়ে গেছে মনে হয়। ওইদিকে আমাদের নতুন দুলাভাইও মুখে রুমাল দিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে। অবশেষে আমাদের আশারানীর দয়া হলো দিপা আপুকে প্রথম চিমটা কাটলো। দিপা আপু প্রথম চিমটি খেয়ে একবারের বদলে এক নিশ্বাসে তিনবার কবুল বলে দিলো। মনে হচ্ছিলো বেচারি কতোবছর ধরে যেনো এই চিমটির অপেক্ষায় ছিলো। ওইদিকে এক নিশ্বাসে দিপা আপুর এমন কবুল শুনে ঘুমন্ত জনসভা জেগে উঠে।
কাজী- আলহামদুলিল্লাহ মাইয়া কবুল বলেছে,,,(বড় একটা হাফ ছেরে।)
কবুল শব্দটা শুনে আমাদের দুলামিয়া মনে হয় সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে। রুমাল মুখে নিয়ে দিপা আপুর দিকে মুচকি মুচকি হাসছে।
আশা রেগে বললো,,,দূর আপু এটা কি করলি। আসলে তোদের নিয়ে পারা যায় না,,একটা চিমটি কাটলে একবার কবুল বলতে বলেছিলাম। তোরা একটা,,,আশা রেগে দাত কটমট করতে করতে কথাগুলো বলে চলে গেলো।
আমার অনেক ক্ষিদে পেয়েছে। তাই খাবার টেবিলে যেয়ে বসলাম,,আমাকে দেখে পলাশ ভাইও খেতে বসলো,,রাফিন পলাশ ভাইকে দেখে বলে উঠলো,,কিরে পলাশ তুই না একবার খেলি,,আবার খেতে বসলি যে।
পলাশ- দূর বেটা চুপ থাক। আমার আবার ক্ষুধা লেগেছে তাই বসেছি।
রাফিন- সালা গিফটের টাকা তুই উসুল করলি।
রাফিন ভাইয়ের কথা শুনে আমি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম পলাশ ভাই আমার জন্যই আবার খেতে বসেছে। এই লোকটাকে এখন আমার অসহ্য লাগতে শুরু করেছে। বেয়াদপ লোক একটা! মানুষের পিছু ঘুর ঘুর করা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। আমাকে দেখে ভাবিও খেতে বসলো ভাবিকে দেখে ভাইয়াও খাবার টেবিলে বসে ভাইয়াকে দেখে চাচু বাবা আর দাদিও খেতে বসে। মানে ব্যাপারটা হলো এই যে এই চিরিয়াখানার মধ্যে আমার শান্তি নেই। আমি আমার মতো খাচ্ছি এর মধ্যে আশা দৌড়ে এসে আমার টেবিলের নিচে এক জোড়া জুতো লুকালো।
– কিরে পায়ের নিচে কার জুতা লুকাচ্ছিস?
আশা- আরে নতুন দুলাভাই,,,কথাটা বলতেই আশা লক্ষ্য করলো টেবিলে অয়ন ভাইও বসা। কথাটা বলেও আশা না বলার মতো ঘুরিয়ে ফেললো।
আশা- আরে নতুন দুলাভাইয়ের দেবরের ননদের বোনের একটা পিচ্চি ছেলে আছে,,ওই পিচ্চিটার জুতা ছিরে গেছে,,তাই এখানে এনে রাখলাম।
আমি পুরো কাহিনি আগেই বুঝে গেছি নিচে যে কোনো পিচ্চির জুতো না তা জুতোর সাইজ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। আশা আমাকে চোখ টিপ দিলো। আমি ইচ্ছে করলে এখনি অয়ন ভাইয়াকে বলে আশাকে বকা খাওয়াতে পারি কিন্তু ওর সাথে পাঙ্গা নেওয়ার কোনো ইচ্ছে নাই আমার। সয়তানের খালাতো বোনরাও ওর কাছে হার মানবে,,তার তুলোনায় আমি কিছুই না। অয়ন ভাই খাওয়া শেষ করতে না করতেই একটা জরুরি কাজে ব্যস্ত হয়ে টেবিল থেকে উঠে না। আশা এই সুযোগটা কাজে লাগায়। আব্বা আর চাচার প্লেটে বিরানির থেকে গোস্ত বেশি মনে হচ্ছে দুজন পাল্লা পাল্লি করে খাচ্ছে।
বাবা- ভাইজন কমিয়ে খান,,আজকে আপনের মেয়ের বিয়ে,,মেয়ের বাপকে এতো খেতে নেই। লোকে মন্দ বলবে। সবাইকে একটু দুঃখি দুঃখি ভাব দেখাতে হবে না।
চাচা- তুই চুপ থাক। ভালো করে খেতে দে। আর হ্যাঁ তোর না ডাইবেটিস তুই বরংচ কমিয়ে খা।
আব্বা- ভাই আমার তো ডাইবেটিস কিন্তু আমার থেকে বেশি সমস্যা তো আপনার। এমনি আপনার সামনের দাত গুলো নেই তার মধ্যে এতো গুলা মাংস নিয়েছেন দেখিয়েন যেই দুইটা দাত আছে ওগুলোও যাতে পরে না যায়।
ওদিকে দাদি খাচ্ছে আর বার বার তার ছোট আয়না বের করে দেখছে তার মেকাপ নস্ট হয়ে গেলো নাকি। হায় রে কপাল আমি পরিবার একটা পাইসি মাশাল্লাহ। এক একটা নমুনা অনেক রেয়ার সহজে খুজে পাবেন না। আর তাদের মধ্যে আমার দাদি হলো এন্টিক পিস। আমি আর খেতে পারছি না উঠে যাবো এমন সময় আবির ভাই আমার পাশে এসে বসে।
#নিরু❤
পর্ব-১০
writer- #shanta_islam

যেই জায়গায় আবির ভাই আছে সেই জায়গায় আমার থাকার কোনো ইচ্ছে নেই। টেবিল ছেরে উঠে যেতে নিবো হঠাৎ কেও আমার বাম হাত ধরে ফেলে,,এ যে আবির ভাইয়ের কাজ তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। ডান পাশে ভাবি বসে আছে আর বাম পাশে আবির ভাই,, ভাবি কখনোই এভাবে হাত ধরবে না তা আমার ভালো করেই জানা আছে,,তাই সন্দেহটা সবার আগে আবির ভাইয়ের উপরে যেয়ে পরে। আমার সন্দেহটাই সত্যি হলো টেবিলের নিচে উকি মেরে দেখি আবির ভাই আমার হাত ধরে রেখেছে। সয়তান ছেলে কোথাকার। কতোবড় সাহস আমার হাত ধরে রেখেছে,,উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি সামনে তাকিয়ে সবার সাথে স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তা বলছে। আল্লাহ রে এই মানুষটার মধ্যে কি ভয়ভীতি কিছুই নেই। এদিকে আমার কলিটা ফেটে যাচ্ছে, কি কেলেংকারী কারবার। এখন এই অবস্থা কেও যদি আমাদের দেখে ফেলে তাহলে কি কেলেংকারী একটা কান্ড হবে ভাবতেও কলিজাটা কেপে উঠে। মানুষটার মধ্যে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি না। তার দিকে তাকালে বুঝাই যাবে না যে উনি তলে তলে সয়তানের খালাতো ভাইকেও হার মানায়। আমি আমার হাত ছাড়ানোর চেস্টা করছি। কিন্তু কিছুতেই হাত ছাড়াতে পারছি না। এর মধ্যে আবির ভাই পলাশ ভাইকে বলে উঠলো,,
– কিরে পলাশ আর কতো খাবি। এমনিতেও ভুড়ি বের হয়ে গেছে,,আর কতোভুরি বারাবি। আমাদের মতো মাঝে মাঝে জিমও তো করতে পারিস।
আবির ভাইয়ের কথা শুনে রাফিন ভাইও উনার সাথে তাল মেলালো,,
রাফিন- আরে বেটা বলিস না। একটু আগে দেখলাম খেয়ে উঠলো,,আবার দেখি খেতে বসেছে। এর পর থেকে কোনো অনুষ্ঠানে যেতে হলে ওকে সাথে নিয়ে যাওয়া যাবে না। সালা মান ইজ্জত সব মেরে দিবে।
উনাদের কথাশুনে দাদি রেগে ফসফস করতে করতে বললো,,
দাদি- কিরে পলাশ তোকে না দেখলাম এক প্লেটের জায়গায় দুই প্লেট খেয়ে উঠলি,,এখন তুই আবার খেতে বসেছিস। এই ওরে আর কেও খাবার দিবি না। এই আমি বলে রাখলুম। আবার খেতে বসলে আবার উপহারের টাকা দিয়ে খেতে বসবি।
আগে থেকেই বলে রাখি আমার দাদি একটু কিপটে টাইপের। তার মুখে আল্লাহ রস্তে কোনো কথা আটকায় না। মুখে যা আসে তাই পটরপটর করে বলে ফেলে। এতে সামনের মানুষের কি হলো না হলো তা তার দেখার বিষয় না।
সবার এমন কথা শুনে পলাশ ভাই ভীষণ লজ্জা পেয়ে খাবার টেবিল থেকে উঠে পরে। বিশেষ করে দাদির কথায় লজ্জাটা একটু বেশিই পায়। আবির ভাইয়ের ঠোঁটের কোনায় এক বিশ্ব জয়ী হাসি দেখতে পেলাম। বুঝতে বাকী রইলো না উনি কাজটা ইচ্ছে করেই করেছে। উনার উপর আমার এমন রাগ উঠছে মনটা চাচ্ছে উনার মাথার সবগুলো চুল ছিরে ফেলি। উনি আমার হাত ছারছেই না। আর সহ্য করতে পারলাম না বলেই ফেললাম।
– আমার হাতটা ছাড়ুন। কথাটা একটু আস্তেই বললাম। আশেপাশের মানুষ না শুনতে পেলেও উনার শোনার কথা।
আমার কথায় আবির ভাইয়ের কোনো রিয়েকশন দেখছি না। আবারো বললাম,,,হাতটা ছাড়ুন।
আরে বাপরে বাপ মানুষ দেখেছি কিন্তু এমন মানুষ দেখিনি। যেভাবে বলেছি আমি সিওর একজন বয়রার কানের সামনে যেয়েও যদি এভাবে বলা হয় তাহলে সেও নিশ্চিত শুনতে পাবে।
এভাবে কাজ হবে না যে যেই ভাষা যানে তাকে সেই ভাষাতেই বুঝাতে হবে। হিল দিয়ে আবির ভাইয়ের পায়ে সজোড়ে দিলাম এক গুতা,,মাশাল্লাহ গুতাটা কাজে লেগেছে। হিলের গুতা খেয়ে আবির ভাই আমার হাত ছেরে দিয়ে কই মাছের মতো লাফাতে থাকে।
আবির- আআআ,,,আল্লাহ গো,,,আআআ,,,
দাদি- কি হয়েছে আমার ওমরস্তানির কি হয়েছে।
আমার দিকে রাগী লুক দিয়ে দাত করমর করতে করতে আবির ভাই বললো,,
আবির- কিছু হয়নি মৌসুমি,,একটা তেলাপোকা কামড় দিয়েছিলো।
অহ বলতেই ভুলে গেছি দাদি আবির ভাইকে ওমরস্তানি বলে ডাকে আর আবির ভাই দাদিকে মৌসুমি বলে ডাকে। ইহা এক গভীর প্রেম কাহিনী। যাহা বিশ্লেষণ করিলে রাত পার হইয়া যাইবে কিন্তু ইহা শেষ হইবে না। শুধু এতোটুকুই বলতে পারি দাদা মারা যাওয়ার পর থেকে তাদের এই লাইলি মজনুর প্রেম কাহিনী আরাম্ভ হয়। থুকু লাইলি মজনু না ওমরস্তানি মৌসুমির প্রেম কাহিনী।
তাদের এই ঢংগের প্রেম কাহিনী দেখলে মনটা বলে ইট দিয়ে নিজের মাথায় নিজে বারি মেরে ফাটিয়ে ফেলি।
দাদি তার আয়না ছেরে আবির ভাইয়ের পাশে বসে।
দাদি- কই দেখিতো আমার ওমরস্তানিকে তেলাপোকা কোথায় কামড় মারলো। তেলাপোকার সাহস তো কম না আমার ওমরস্তানিকে কামড় মারে। সাহানা দে তো আমার লাঠিটা দে,, আজ ওই তেলাপোকার এক দিন কি আমার এক দিন।
আবির ভাই- চিন্তা করোনা মৌসুমি এই তেলাপোকাকে কিভাবে শিক্ষা দিতে হয় তা আমার জানা আছে। আবির ভাই আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে কথাগুলো বললো। যা ইচ্ছা তাই বলুক আমার কি। আমি উনাকে ভয় পাই না। আজকের পর থেকে তো কখনোই না।
ভাবি উনাদের দুজনের প্রেম কাহিনী দেখে মিটমিট করে হাসছে।
দাদি- তুই আবার দাত বের করে ভেটকি মারছিস কেনো? যা মলম নিয়ে আয়। ওমরস্তানির তুমি কোথায় ব্যাথা পেয়েছো আমাকে বলো,,
ওই যে শুরু হয়েছে তাদের নাটক। এই প্রেম পিরিতির নাটক দেখে আমার লাভ নেই তাই আমি সেখান থেকে চলে আসলাম।
বিয়েটা ভালোয় ভালোয় সম্পূর্ণ হলো। বরযাত্রীরা দাবীকৃত বিশ হাজার টাকা না দিয়ে দশ হাজার টাকা দেয়। আমাদের আশা মহারনী সেই অনুসারে দুলাভাইয়ের দুইটা জুতা ফিরত না দিয়ে একটা জুতা ফিরত দেয়। নতুন দুলাভাই আর কোনো উপায় না পেয়ে সেই একটা জুতাই পায়ে দিয়ে বউ নিয়ে যায়। আহ হা রে বেচারা কেনো যে আমার পরিবারের মধ্যেই বিয়ে করতে এলো। অবশ্য তারো কোনো দোষ নেই,,সেই বেচারা কিভাবে জানবে আমাদের চিরিয়াখানার প্রানীরা কতো ডেঞ্জারাস।
বরযাত্রী যাওয়ার পর সবাই মিলে ঘর গুছানোর কাজে লেগে পরলাম। সকাল থেকে কাজ করতে করতে এখন আমার দেহে অবশিষ্ট শক্তি আছে বলে মনে হয় না। ফেসবুকে একটা মেয়ের ফান ভিডিও দেখেছিলাম,,সেখানে মেয়ে বলেছিলো,,বিয়া যে কতো মজা গো খালি খাওন আর খাওন। আমার ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনি মনে হয় কিন্তু আমার ভাবনার জগৎ দিয়ে ভাষাটা একটু ভিন্ন,,বিয়া যে কতো মজা গো খালি কাম আর কাম😞। মেয়ে কাজিনরা সকলে আমার রুমে ঘুমাবে ভাইয়া আদেশ দিয়েছে। আমার রুমে ডুকে দেখি একটা জঙ্গলিখানায় ডুকে পরেছি। আস্তাগফিরুলা এটা আমার রুম বিশ্বাস করতে পারছি না। পা রাখার মতো একটুও জাগা নেই। কোনো মতে আমার বালিশটা নিয়ে ডাইনিং রুমের পাশের সোফায় যেয়ে সুয়ে পরলাম। আহ এখানে একটু শান্তি লাগছে কোনো চিৎকার চেচামেচি নেই। শান্তিপূর্ণ একটা জাগা। ক্লান্ত শরীর নিয়ে সোফায় গা এলাতেই রাজ্যর ঘুম চোখে নেমে আসে।
হঠাৎ মুখের উপর গরম নিশ্বাস পেয়ে ঘুম ভেঙে যায়। চোখ মেলে দেখি আমি কারো বুকের উপর সুয়ে আছি। শরীরে একদমি শক্তি নেই। সারাদিন যা ধকল গেছে মনে হয় না উঠে বসতে পারবো। চোখটাই তো পুরোপুরি মেলতে পারছি না। অনেক কস্টে আধো আধো চোখে দেখার চেস্টা করলাম আমি কার বুকের উপর ঘুমিয়ে আছি। মাথাটা একটু উপর করে তাকাতেই দেখি আমি আবির ভাইয়ের বুকের উপর সুয়ে আছি। আবির ভাই আমাকে জরিয়ে ধরে আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে এক নজরে তাকিয়ে আছে। দূর এটা কিভাবে সম্ভব। আমি তো সোফায় ঘুমিয়ে ছিলাম তাহলে আবির ভাইয়ের বুকে আসলাম কিভাবে। স্বপ্ন দেখছি হয়তো। সারাদিন আবির ভাইয়ের কথা ভাবতে ভাবতে স্বপ্নের মধ্যেও উনাকে দেখছি। স্বপ্ন হয়েছে তো কি হয়েছে ভালোই তো লাগছে উনার বুকের উষ্ণতার মাঝে থাকতে। এখান থেকে আর উঠতে মন চাইছে না। আমি একটু আবির ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আবার কখন চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলাম তার ঠিক নেই।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here