#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ২৯
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
গম্ভীরভাবে একটা কাগজের দিকে তাকিয়ে আছে হান। সানা এসে সামনে থাকা চেয়ারটাতে বসলো।
” স্যার আপনি কি দেখছেন? কিছু জানতে পেরেছেন?”
হান কিছু না বলে কাগজটা ইনস্পেক্টর সানার দিকে বাড়িয়ে দিলো। কাগজ দেখে সানার চোখ আপনাআপনি বড় হয়ে গেলো। কাগজটাতে লাল রঙের কালি গিয়ে ইংরেজিতে বড় বড় করে “সিন হারি” লেখা আছে। সানা আবারো লেখাটা পড়লো এবং একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে কাগজটা রেখে দিলো।
” তার মানে হারিকে খু’নি আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলো।”
” হুম কিন্তু বেচারি মেয়েটা বুঝতে পারেনি।”
” কিন্তু স্যার এখানের প্রতিটা মানুষ জানে লাল রঙের কালি দিয়ে নাম লেখা কতটা খা’রা’প মানা হয়ে থাকে। লাল রঙের কালি দিয়ে নাম লেখাকে অনেকে মৃ’ত্যুর ইঙ্গিত হিসেবেও ধরে নেয়। তাহলে সিন হারি একজন কোরিয়ান নাগরিক হয়েও কিভাবে বুঝতে পারলোনা তার বি’প’দ আসছে?”
” হয়তো সে খামটা খুলে দেখেনি।”
” আপনি কিভাবে পেলেন স্যার? আমরা তো ঘর সার্চ করার সময় এরকম কিছু পাইনি।”
” হারির ছোট ভাই এটা আমাকে দিয়েছে।”
” সে কি খুলে দেখিনি? বুঝতে পারেনি এখানে কি লেখা আছে?”
” ছোট মানুষ, ইংরেজি বোঝেনা। সেইসাথে তার মাথায় এতো কিছু আসেনি। সানা আমাদের যতদ্রুত সম্ভব এসব কিছুর সমাধান করতে হবে। এই কয়েকমাসে তিনজন খু’ন হয়ে গিয়েছে আর আমরা কিছুই করতে পারলাম না।”
” স্যার মনে হচ্ছে খু’নি খুব সময় নিয়ে ভেবেচিন্তে সব পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করছে। অনেক অভিজ্ঞতা আছে তার।”
.
.
” এতোদিন পর কোথা থেকে উদয় হলেন মহাশয়?”
আচমকা ফিলিক্সের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো হিতোমি৷
” তোমার এইসব লাফালাফি কবে বন্ধ করবে? সুন্দর মতো চলাফেরা করতে পারোনা?”
” না পারিনা। তোমার সমস্যা?”
” অবশ্যই সমস্যা যখন তুমি আমার সামনে লাফালাফি করো।”
” সমস্যা হলেও কিছু করার নেই। এবার বলো এতোদিন কোথায় ছিলে? ইউনিভার্সিটিতে এলে না যে?”
” ব্যস্ত ছিলাম কিন্তু তুমি কি করে জানলে আমি এতোদিন আসিনি? ফলো করো নাকি?”
” জাদু দিয়ে জেনেছি। এবার আমি যাই, আমার ক্লাস আছে। সাবধানে থেকো।”
ফিলিক্সকে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো। ফিলিক্স অদ্ভুত দৃষ্টিতে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
.
.
অনেকগুলো কাগজ, ছবি, পেপার সামনে ছড়িয়ে রাখা আছে। সবগুলো নেড়েচেড়ে দেখছে কায়ান। অনেক মনোযোগ দিয়ে সে কিছু দেখছে বলতে গেলে কিছু খুঁজছে।
” আজো তুমি এসব নিয়ে বসেছো?”
আচমকা কারো কন্ঠ শুনে কায়ান ঘাবড়ে গেলো। ভীত হয়ে পেছনে তাকালো সে তবে সুজিকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো।
” ও সুজি তুমি। আমি তো ভ’য় পেয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি ভেতরে কবে এলে? বেলের শব্দ শুনতে পাইনি যে?”
সুজি ব্যাগটা চেয়ারে রেখে বসে বললো, ” শুনবে কেমন করে? তোমার মন তো এখানে ছিলোনা। অনেকবার বেল দিয়েছি কিন্তু তোমার তো খবর নেই তাই পাসওয়ার্ড দিয়ে এলাম। এসব এভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছো কেন?”
” খুঁজছিলাম যদি কিছু পেয়ে যায় এই আশায়।”
” খবর দেখেছো?”
” হুম গত দু’দিন ধরে তো দেখছি। নিউজটা আমাদের চ্যানেলে এবার কে কভার করছে?”
” পার্ক সোবিন। শোন তোমাকে কিছু বলার ছিলো।”
” হুম বলোনা। বলতে বারণ করেছি নাকি?” কাগজগুলো ঠিক করতে করতে বললো কায়ান।
” আমি কালকেই আমেরিকা যাচ্ছি।”
সুজির কথা শুনে থেমে গেলো কায়ান। ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো।
” তুমি ওখানে কেন যাচ্ছো? অফিস থেকে পাঠাচ্ছে নাকি…..?”
” তুমি যা ভাবছো তাই। আমি অনেক চিন্তাভাবনা করেছি এই বিষয়ে। আমি কালকেই পাবো।”
” সুজি আরেকবার ভেবে দেখো। এটা কিন্তু অনেক বিপদজনক। তুমি জানো কত বিপদ, তোমাকে তো আমি পুরো ঘটনাটা বলেছি। না না সুজি তুমি যাবেনা। ভুল আমারই, আমার উচিত হয়নি তোমাকে এসবে জড়ানোর।”
” কায়ান রিলেক্স, কিছু হবেনা আমার। এতোদিন আমি তোমার পাশে ছিলাম তাহলে এই অধ্যায় শেষ না করে কি করে থাকি বলো? তুমি এখানেই থাকো, আমি বাকিটা দেখছি। ভরসা করো তো আমাকে?”
” হুম নিজের থেকেও বেশি।”
” তাহলে ভরসাটা ধরে রাখো। চিন্তা করোনা, আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরি আসবো।”
কায়ান সুজির হাত দু’টো শক্ত করে চেপে ধরলো।
” কিন্তু আমার যে মন মানছেনা। ভিতর থেকে খা’রা’প চিন্তা আসছে।”
” কিছু হবেনা, ট্রাস্ট মি।”
প্রায় অনেকটা সময় কায়ানের সাথে থাকার পর সুজি যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। গেটের কাছে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলো সুজি, পেছন ফিরে তাকাতেই সে চমকে গেলো। একটা ছেলে বিরক্তি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
” গেট থেকে সরে দাঁড়ালে ভালো হতো।”
সুজি ছেলেটার কথা শুনে কিছুটা অস্বস্তিবোধ করে। সে তাড়াতাড়ি সে দাঁড়ালো। বিল্ডিং এর গেটের সামনে একটা মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফিলিক্স কিছুটা বিরক্ত হলো। সুজি সরে দাঁড়াতেই সে গটগট করে ভেতরে চলে গেলো।
.
.
” কেমন আছো এনাক্ষী?”
মাত্রই সিভি স্টোর থেকে বেরিয়ে সাইকেল খুলছিলো এনাক্ষী। তখনই সেখানে হান এসে উপস্থিত হলো।
” আরে ইনস্পেক্টর হান আপনি এখানে? কিছু কিনতে এসেছেন বুঝি?”
” না তেমন কিছু নয়। এদিকে এসেছিলাম, তাই ভাবলাম তোমার সাথে দেখা করে গেলে মন্দ হয়না। বাসায় যাচ্ছো বুঝি?”
” হ্যাঁ। হিতোমি কোথায়?”
” বাড়িতে। পড়াশোনা করছে। চলো হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি।”
সাইকেলটা আস্তে আস্তে চালিয়ে হাঁটছে এনাক্ষী। তার পাশে পকেটে একহাত গুঁজে হাঁটছে হান।
” পড়াশোনা কেমন চলছে তোমার?”
” এইতো বেশ ভালোই।”
” তুমি কি আমার উপর রা’গ করেছো? না মানে সেইদিন আচমকা তোমাকে স্টেশনে নিয়ে গেলাম, তারপর….।”
” না ইনস্পেকটর হান সেরকম কিছু নয়। এখানে তো আপনারও কোন হাত নেই। আপনার কাজই এটা, আপনি শুধু আপনার কাজটা করেছেন। এখন যদি আমি আপনার উপর রাগ করি এটা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। তবে আপনাকে ধন্যবাদ আমার উপর একটু হলেও বিশ্বাস রাখার জন্য।”
” আসলে যখন থেকে জানতে পেরেছি তুমি জিসুর বাড়িতে গিয়েছো, তাও প্রায় অনেকটা সময় বিল্ডিং এর ভেতরে ছিলে তখন আমি ঠিক বিশ্বাস করতে পারিনি, মানে অবাক হয়েছিলাম। তবে আমি তোমাকে দ্রুত স্টেশনে নিয়ে এসেছিলাম এটার কারণে নয় যে তোমাকে খুনের সাথে জড়িত ভেবেছিলাম বরং তুমি কিছু জানো কিনা কিংবা আমাদের কেসে গুরুত্বপূর্ণ কোন তথ্য দিতে পারো কিনা সেই কারণে। কারণ আমরা ভেবেছিলাম তুমি আচমকা ওখানে গিয়েছো যদি খু’নি না চাইতেও ভুলবশত তোমার চোখে পড়ে যায় এই আশায়।”
” আমি সত্যিই জানতাম না ওই ফ্ল্যাটে কারো সাথে এধরণের কিছু হয়েছে। হলে জীবনেও যেতাম না। দেখুন কথা বলতে বলতে কতদূর পথ চলে এসেছি। ইনস্পেকটর হান আপনি বরং এবার বাড়ি ফিরে যান। হিতোমি একা আছে, আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি চলে যেতে পারবো।”
” আচ্ছা সাবধানে যেও আর একটু সর্তক থেকো। বর্তমানে আমার তোমার জন্য ভয় লাগছে।”
” ভয়ের কিছু নেই, ঈশ্বর আছেন। তিনি যা করবেন আমাদের ভালোর জন্যই করবেন।”
.
.
ইউনিভার্সিটির জন্য ব্যাগে বইখাতা রাখছিলো এনাক্ষী সেই সময় তার ফোন বেজে উঠলো। এনাক্ষী দেখলো হিতোমি ফোন করেছে।
” হিতোমি এইতো আমি আসছি। তোম….”
” এনা তুমি প্লিজ তাড়াতাড়ি এই হসপিটালে চলে এসো। ইউনিভার্সিটিতে যাবেনা, দ্রুত হসপিটালে এসো।”
” হসপিটাল? কিন্তু কেন? তুই ঠিক আছো তো?”
” তুমি তাড়াতাড়ি এসো।”
হিতোমি ফোন কেটে দিলো। এনাক্ষী আবারো কল ব্যাক করলেও হিতোমি রিসিভ করলোনা। এনাক্ষীর দ্রুত নিজের ছোট ব্যাগটা নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে এলো। তাড়াহুড়ো করার কারণে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় পড়ে যেতে নিলেও কোনবতে দেয়াল ধরে নিজেকে সামলে নিলো এনাক্ষী।
” আরে আস্তে। এবারো দৌড়াচ্ছে কেন?”
” ফিলিক্স সরো। আমার গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে?”
” কি এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুনি যে এভাবে দৌড়ে যাচ্ছো?”
” আমাকে দ্রুত হসপিটালে যেতে হবে, হিতোমি ফোন দিয়েছে। তাকে অনেক চিন্তিত মনে হচ্ছিলো। এখন সরো প্লিজ।”
ফিলিক্সকে একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে চলে গেলো এনাক্ষী৷ হসপিটাল একটু দূরে, তাই তাড়াতাড়ি পৌঁছানোর জন্য সে ট্যাক্সিতে উঠে পড়লো।
চলবে…….#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ৩০
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
র’ক্ত দিয়ে কেবিন থেকে বের হলো এনাক্ষী। ডো বিন এবং জি ওয়ান ইয়েজির বাবা-মায়ের সাথে দৌড়াদৌড়ি করছে। চেয়ারে বসে থাকা হিতোমির দিকে তাকালো এনাক্ষী। এই অল্প সময়েই বেচারির চোখ মুখ শুকিয়ে গিয়েছে, কান্না করার কারণে চোখগুলো ফুলে গিয়েছে। ভীষণ ভেঙে পড়েছে হিতোমি, অবশ্য পড়বে নাই বা কেন প্রিয় বান্ধবীর যে এ’ক্সিডে’ন্ট হয়েছে। এনাক্ষী গিয়ে হিতোমির পাশে বসলো। ইউনিভার্সিটিতে আসার সময় ইয়েজি সিঁড়ি থেকে পড়ে বেশ ভালোই আ’হত হয়েছে। ইমারজেন্সি র’ক্ত প্রয়োজন ছিলো। ভাগ্য সহায় ছিলো এনাক্ষীর সাথে ইয়েজির রক্তের গ্রুপ মিলে গিয়েছে, তাই এনাক্ষীই দিয়েছে।
” কেঁদো না হিতোমি। ইয়েজি সুস্থ হয়ে যাবে।”
হিতোমি এনাক্ষীকে জরিয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। এনাক্ষী আস্তে আস্তে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। বড্ড নরম আর ভালো মনের মেয়ে হিতোমি। আপনজনের কষ্টে সে ভীষণ কষ্ট পায়। প্রায় দুপুর হয়ে হলো, ইয়েজির সাথে এখনো কাউকে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ইয়েজির বাবা-মা তাদের চলে যেতে বললেও হিতোমি গেলোনা। তার একটাই কথা সে ইয়েজির সাথে দেখা করে তবেই যাবে। হিতোমির কারণে এনাক্ষীও আর গেলোনা।
” কেমন আছে ইয়েজি? এতোটা অসাবধান কবে থেকে হলে? তোমাকে তো আমি স্ট্রং মেয়ে ভেবেছিলাম আর তুমিই কিনা এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে।”
” তুমি আমাকে বকছো নাকি তিরস্কার করছো হিতোমি?”
” না আদর করে জিজ্ঞেস করছি।” ইয়েজির গাল গুলো হালকা করে টেনে বললো হিতোমি।
” নিশ্চয়ই তুমি কান্না করেছো?”
” কে বলেছে তোমাকে? আমি মোটেও কান্না করিনি। আমি কার জন্য কান্না করবো? আমার তো কেউ নেই।”
” হুম বুঝেছি তুমি কান্না করোনি। আর বেশি সত্যি কথা বলতে হবেনা৷ আমি কি বাড়িতে যাওনি? তোমার ব্রাদার জানে তুমি এখানে আছো?”
” হুম বিগ ব্রাদার জানে। আসবে তোমার সাথে দেখা করতে। আরে দেখো এনাক্ষীর কথা ভুলেই গিয়েছি। এনা এদিকে এসো, ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?” এনাক্ষীকে টেনে নিজের পাশে দাঁড়া করালো হিতোমি।
” হিতোমি ও এখানে কি করছে? এনাক্ষী এতোটা সময় এখানে না থাকলেও পারতো। শুধু শুধু ওকে কষ্ট দিলে তুমি।”
” কেমন আছো এখন তুমি?”
” ভালো।”
হিতোমি বুঝতে পারলো এনাক্ষীর এখানে থাকাটা ইয়েজি ঠিক পছন্দ করেনি।
” ইয়েজি তোমাকে তো একটা কথা বলতেই ভুলে গিয়েছি। জানো এনাক্ষী কত সাহসী মেয়ে। সে তোমাকে পুরো এক ব্যাগ র’ক্ত দিয়েছে। ভেবে দেখেছো কত সাহসী এনাক্ষী।”
” এনাক্ষী আমাকে র’ক্ত দিয়েছে!” ইয়েজি ভীষণ অবাক হলো।
” তা নয় তো কি। দৌড়েদৌড়ে এসেছে সে।”
” কিন্তু তাকে কেন তুমি দিতে দিলে? পরে রক্তের ব্যবস্থা অন্য কোথাও থেকে হয়ে যেতো।”
” আরে আমরা তো বলেছিলাম কিন্তু এনাক্ষী বললো আমার কোন সমস্যা নেই। বিপদে যদি বন্ধুর পাশে না থাকি তাহলে কি করে হয়। জানো যখন তাকে ডাক্তার টেস্টের জন্য র’ক্ত নিচ্ছিলো, ইনজেকশন দেখে তো আমি প্রচুর ভয়ে পেয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে তো এনাক্ষী পুরো এক ব্যাগ র’ক্ত তোমাকে দিয়েছে।”
ইয়েজি বুঝতে পারছে হিতোমি থাকে কেন এতো বাড়িয়ে বলছে তবে সে কখনো আশা করেনি এনাক্ষী তাকে র’ক্ত দিতে পারে। হিতোমির ফোন আসার কারণে সে বাইরে চলে গেলো। এনাক্ষী যাবে কি যাবে না তাই চিন্তা করতে লাগলো।
” তোমার র’ক্ত না দিলেও হতো তবে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।”
অন্যমনস্ক থাকায় আচমকা ইয়েজির কন্ঠ শুনে চমকে উঠলো এনাক্ষী।
” এতো ভয় পাচ্ছো কেন? তোমাকে ম’রবো নাকি?”
” তুমি কিছু খাবে? আমি কি কিছু নিয়ে আসবো? বা ডো বিনকে বলবো?”
” না তার দরকার নেই। তুমি বসো আমার পাশে। আমি একটু ঘুমাবো, বড্ড ঘুম পাচ্ছে। তুমি এদিকে বসো।” হাত দিয়ে পাশে বসার ইশারা করলো ইয়েজি। এনাক্ষী গুটি গুটি পায়ে ইয়েজির পাশে বসলো। ইয়েজি এনাক্ষীর একটা হাত আলতো করে ধরে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। ইয়েজির কাজে এনাক্ষী হালকা হাসলো।
হানের সাথে ফোনে কথা বলা শেষ করে ইয়েজির কেবিনের দিকে আসছিলো হিতোমি৷ বাম দিকে যাওয়ার সময় খেয়াল না করার কারণে এক ব্যক্তির সঙ্গে ধাক্কা লেগে গেলো তার।
” জেসংহামনিদা।( দুঃখিত) ”
” গ্যানছানাইও। (ঠিক আছে) ওয়েট হিতোমি তুমি আবার! তাই তো বলি আমি ধা’ক্কা খেলাম কি করে। আমাকে দেখলেই কি তোমার ধাক্কা খাওয়া, পরে যাওয়া, লাফালাফি এসব বেড়ে যাই?”
” শোন ফিলিক্স আমি এখন মোটেও ইচ্ছে করে ধা’ক্কা খাইনি। ভুলবশত লেগে গিয়েছে।”
” এখন ইচ্ছে করে খাওনি। তার মানে আগের গুলো কি ইচ্ছে করে খেয়েছিলে?” ভ্রু-কুচকে বললো ফিলিক্স।
” বড্ড বাজে কথা বলো তুমি। তুমি এখানে কি করছো?”
” কাজে এসেছি। তুমি এখানে কি করছো? আচ্ছা এনাক্ষীও এখানে এসে তাই না? সকালে দেখলাম তাড়াহুড়ো করে নামছিলো। বললো তুমি নাকি ফোন করে হসপিটালে আসার জন্য বলেছিলে। কি হয়েছে?”
” আসলে ইয়েজির এ’ক্সিডেন্টে হয়েছে। টেনশনে ছিলাম তাই সবকিছু তাকে ফোন বলতে পারিনি। এনাক্ষীর সাথে দেখা করবে?”
” না থাক। আমি এখন আসি, আমার কাজ আছে। সাবধানে থেকো, আশেপাশের অবস্থা কিন্তু মোটেও ভালো নয়। বলা যাইনা কখন কি হয়ে যায়।”
.
.
এনাক্ষী খেয়াল করে দেখলো এখন মাঝে মাঝে কায়ান কিছুটা উদাসীন, চুপচাপ থাকে। এনাক্ষীর পরীক্ষা থাকার কারণে সে এসবে বেশি মনোযোগ দিতে পারেনি। কালকে তার পরীক্ষা শেষ হয়েছে, তাই চিন্তা করলো কায়ানের সাথে দেখা করে আসবে।
” কেমন আছো তুমি? দুঃখিত এতোদিন তোমার সাথে ঠিক মতো কথাও বলতে পারিনি। কি করবো বলো পরীক্ষা ছিলো।”
” সমস্যা নেই এনাক্ষী। ভেতরে এসো। কেমন আছো তুমি? শরীরের যত্ন নিচ্ছো তো?”
” হুম আমার শরীর তো ঠিক আছে কিন্তু তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে না তুমি ঠিক আছো। কিছু হয়েছে কি? কিছু সমস্যা হলে তুমি আমাকে বলতো পারো। সাহায্য করতে না পারি অন্তত তোমার মন তো হালকা হবে।”
” না সেরকম কিছু নয়। তুমি টেনশন করোনা।”
” একদম মি’থ্যা কথা বলবে না। এই তুমি আমাকে বন্ধু মনে করো?”
” আরে এখানে বন্ধুত্বকে টেনে আছো কেন? আসলে আমি সুজিকে নিয়ে একটু টেনশনে আছি।”
” সুজি অন্নিকে নিয়ে? কিন্তু কেন? আর অন্নি কোথায়? অনেকদিন হলো অন্নিকে দেখছিনা।”
” সুজি আমেরিকা গিয়েছে অনেকদিন আগে।”
” ও মা তাই নাকি? দেখো তো আমি তো জানতামই না। অন্নিকে নিয়ে এতো টেনশনের কি আছে? অন্নি কি ছোট বাচ্চা নাকি? কাজে গিয়েছে চলে আসবে।
তুমি এতোটা চিন্তা করো না, না হলে অ’সুস্থ হয়ে পড়বে।”
” হুম।” কায়ান হুম বললেও তার চিন্তা গেলো না। সুজি আমেরিকায় যাওয়ার পর তাকে ফোন করেছিলো, সে প্রতিদিন ফোন করতো তবে কিছুদিন ধরে তার কোন খবর নেই। না নিজে ফোন করে আর না কায়ান ফোন করলে রিসিভ করে। কায়ানের মনে মনে ভয় লাগছে। এই ব্যপারটা না সে কাউকে জানতে পারছে আর না নিজে কিছু করতে পারছে।
” এইযে কায়ান আর কত চিন্তার জগতে বিভোর থাকবে? গত এক ঘন্টা যাবৎ চিন্তা করে আসছো এবার ভাবনার দুনিয়া থেকে বেরিয়ে বাস্তব জগতে ফিরে আসো।”
কায়ান ভেবেছিলো এনাক্ষী হয়তো মজা করে বলছে কিন্তু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সে অবাক হয়ে গেলো। না আসলেই একঘন্টা পেরিয়ে গিয়েছে। দীর্ঘশ্বাস নিলো কায়ান।
” এসো খাবার খেয়ে নাও। মনে হতো হয়না ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করো। এভাবে চলতে থাকলে কি হবে? সুজি অন্নি এসে যখন দেখবে তুমি একেবারে শুকনো কাঠি হয়ে গিয়েছো তখন কি মনে করবে? শোন তুমি অসুস্থ হয়ে গেলো কিন্তু আমি বেশি সেবার করতে পারবোনা। এতো শক্তি নেই আমার। তাই খেয়েদেয়ে সুস্থ থাকো আর আমার উপর থেকে চাপ কমাও।”
এনাক্ষীর কথা শুনে হাসলো কায়ান। মেয়েটার মধ্যে আলাদা একটা মায়া আছে। মাঝে মাঝে তাকে দেখলে একদম বাচ্চা মনে হয় আবার মাঝে মাঝে সে বড়দের মতো কাজ করে।
চলবে…..