নিশির অন্তিম প্রহরে পর্ব -৩৩+৩৪

#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ৩৩
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

প্রায় রাত এগারোটা বাজতে চললো। কায়ান এখন যেখানে আছে সেখানে এখন একটা প্রাণীও নেই। অবশ্য না থাকাটাই স্বাভাবিক কারণ মা’র্ডা’র হওয়া স্থানে কি কেউ জেনে শুনে আসবে? তবে কায়ান এসেছে, কিছু সূত্র খুঁজে পাওয়ার আসায় সে এসেছে যেখানে সুজিকে পাওয়া গিয়ে।

কায়ান সূক্ষ্মদৃষ্টিতে চারিপাশে দেখছে। যদিও পুলিশ সবকিছু সংরক্ষণ করে নিয়ে গিয়েছে তাও কায়ান কিছু খুঁজে পাওয়ার আশায় খুঁজে চলেছে। আচমকা তার দৃষ্টি আটকে যায় ডাস্টবিনের পেছনে। কায়ান দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে জিনিসটি তুলে নিলো। একটা ছোট বেগুনি রঙের ক্লিপ। ক্লিপটাকে কায়ান ভালো করে চেনে, বলতে গেলে বেশ ভালো করেই চেনে। অবশ্য চিনবে নাই বা কেন এটা যে সে নিজ হাতে তার পছন্দের একজন মানুষকে পড়িয়ে দিয়েছিলো।

” এনাক্ষী।” বিরবির করে বললো কায়ান। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে তার, হাত কাঁপছে। সে নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারছেনা।
.
.

” কোথায় যাচ্ছো কায়ান?”

এনাক্ষীর কথা শুনে দাঁড়িয়ে গেলো কায়ান।

” স্টেশনে যাচ্ছি। ইনস্পেক্টর হানের সাথে কথা বলার ছিলো।” থমথমে গলায় বললো কায়ান।

” আমিও যাবো?”

” না থাক দরকার নেই। তুমি বাড়িতে থাকো।”

দ্রুত নেমে গেলো কায়ান। এনাক্ষীর মন কিছুটা খারাপ হয়ে গেলো কারণ কায়ান গত দু’তিন দিন থেকে তার সাথে কিছুটা অন্যরকম ব্যবহার করছে। তবে এনাক্ষী নিজেকে এটা বলে বোঝালো হয়তো সুজির হঠাৎ চলে যাওয়াতে কায়ান এরকম ব্যবহার করছে।

” আরে কায়ান তুমি এসেছো। বসো। কেমন আছো?”

” যেমন থাকার কথা।”

” আচ্ছা তাহলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথা না বলে সোজা কথায় আসি। সুজির ব্যপারে কিছু জানো? সে হঠাৎ কেন আমেরিকা গেলো? আমরা অফিসে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছি সেখান থেকে তো কোন কাজে তাকে পাঠানো হয়নি। সে নিজে থেকে অনেক লম্বা প্রায় মাসখানের জন্য ছুটি নিয়েছে। কিন্তু কেন? এই কেনোর উওর আমরা কোথাও পাচ্ছি না৷ এখন তুমি বলো এই কেনোর উওর?”

কায়ান কিছুক্ষণ চুপ রইলো৷ হানও অপেক্ষা করতে লাগলো।

” আমি জানিনা আপনি বিশ্বাস করবেন কিনা, তাও বলছি।”

” তুমি বলো বাকিটা পড়ে দেখা যাবে।”

” সুজি আমেরিকা গিয়েছে মূলত আমার কারণে।” মাথা নিচু করে বললো কায়ান।

” তোমার কারণে? কিন্তু কেন? কোন কাজে পাঠিয়েছিলে নাকি?”

” আমার একজন বড় বোন ছিলো, কায়াসা তার নাম। আপু আমেরিকা গিয়েছিলো পড়াশোনা করতে, তবে আর ফিরে আসেনি।”

” কেন? কি হয়েছে তোমার আপুর সাথে?”

” আমরা জানিনা আপু আমেরিকাতে কিরকম থেকেছিলো তবে আপু একবার বলেছিলো তার একজনের সাথে সম্পর্ক ছিলো। সবঠিক যাচ্ছিলো আচমকা একদিন আপুর নম্বর থেকে ফোন এলো তবে সেটা আপু ছিলোনা।”

” তাহলে কে ছিলো? আর তুমি বারবার “ছিলো” বলছো কেন?”

” আপুর এপার্টমেন্টের মালিক ছিলেন। তিনি আমাদের জানালেন আপুকে কেউ খুব বা’জেভাবে মে’রে ফেলেছে৷ আপুর মাথার সব চু’ল উঠিয়ে ফেলা হয়েছিলো। এছাড়াও আরো অনেকভাবে তাকে ট’র্চা’র করা হয়েছিলো। আমি এবং আমার বাবা এসব শুনে অনেক ভেঙে পড়েছিলাম। আপুর লা’শ অনেক কষ্ট করে দেশে আনা হয়েছিলো। আপুকে দেখে বাবা অ’সু’স্থ হয়ে পড়েছেন।” এতটুকু বলে থেমে গেলো কায়ান। এতোটা সময় ধরে সে অনেক কষ্ট করে কথা বলে গিয়েছে।

” তারপর? আঙ্কেল কেমন আছেন? তোমার আপুর ব্যপারে কি হলো?”

” আমি এবং বাবা তার কিছুমাস পর আমেরিকা গিয়েছিলাম কিন্তু আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কোন কিছু হাতে আসেনি। পরে আমরা জানতে পেরেছিলাম আপুর মৃত্যুর কিছুমাস আগে আরো একটা মেয়ে মা’রা গিয়েছিলো। আমরা কিছু জানতে না পেরে দেশে ফিরে আসি। বর্তমানে বাবা আমার পিসিমণির সাথে দেশে থাকেন আর আমি এখানে।”

” তোমার আপুর সাথে যা হয়েছে সেটা শুনে খা’রা’প লাগছে তবে তুমি এসব এখন কেন বলছো? এর সাথে সুজির মৃ’ত্যুর কি সম্পর্ক?”

” এখানে আসার পর সবঠিকই ছিলো। কিন্তু কয়েকমাস ধরে যা ঘটে চলে তা একদম অস্বাভাবিক। এসবের সাথে কেন যেন আমার মনে হলো আমার আপুর সাথে কোন যোগসূত্র আছে। আমার সন্দেহ হয়েছিলো এখানে যে ব্যক্তি বা গ্যাং এসব করছে, আমেরিকাতেও তারাই করেছে।”

” এতোটা সিউর হয়ে কি করে বলছো তুমি?”

” আমি সিউর হয়ে বলছিনা, তবে আমার অনেকখানি সন্দেহ আছে। তাই সুজি আমেরিকা গিয়েছিলো খোঁজ নিতে কিন্তু….. ”

” তোমার আপু মা’রা গিয়ে তো দু-তিন বছর হচ্ছে?”

” হুম দুবছর।”

” তুমি যে বললে তোমার আপুর সাথে কারো সম্পর্ক ছিলো। তো তার সম্পর্কে কিছু জানতে পেরেছো?”

” না। তাকে আমরা কেউ চিনিনা, তবে আপুর মুখে একবার শুনেছিলাম তার নাম ড্যানিয়াল। তবে আমরা যখন আমেরিকা গিয়েছিলাম তখন কেউ কিছু বলতে পারেনি এই ড্যানিয়াল সম্পর্কে।”

” তার কোন ছবি নেই?”

” না। আচ্ছা সুজির আশেপাশে থেকে কি আপনারা কিছু পেয়েছেন? মানে কোন সূত্র, কাগজ বা অন্যকিছু?”

” না শুধু লাগেজ ছিলো, যেখানে শুধু তার কাপড় ছিলো। আমরা তো কোন কাগজ বা তুমি যা বলছো সেই রিলেডেট কিছু পাইনি।”

” তাহলে কি সুজি কোন খবরই পাইনি?” চিন্তিত স্বরে বললো কায়ান।

আচমকা হান প্রশ্ন করে বসলো, ” সুজি কি তোমাকে বলেনি সে দেশে আসছে?”

হানের প্রশ্ন শুনে থতমত খেয়ে গেলো কায়ান।

” না, তার সাথে আমার যোগাযোগ নেই অনেকদিন।”

” তাহলে তোমার ভাষ্যমতে তোমার বোনের খু’নি এবং এইখানে ঘটে যাওয়ার মা’র্ডা’রের খু’নি একই ব্যক্তি। তাহলে সেই হিসেবে সেই ব্যক্তিই সুজির খু’ন করেছে। কিন্তু তুমি বা সুজির পরিবার কেউই জানেনা সুজি দেশে আসছে তাহলে সেই খু’নি জানলো কি করে?”

” আমি জানিনা।”

” আমার মনে হয়না তোমার বোনের সাথে এখানের কোন সম্পর্ক আছে তাও কোন কিছু চোখের আড়াল করা ঠিক হবেনা। আমরা দুটো কেসেই সমাধান করার চেষ্টা করবো। আমি সন্দেহজনক কিছু দেখলে আমাকে জানাবে।”

” হুম।”

কায়ান স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসতে গিয়েও থেমে গেলো। হান ইনস্পেক্টর সানাকে কায়ানের বলা কথাগুলো বলছে এবং তার সন্দেহগুলোও বলছে। তাদের কথা শুনে কায়ান হালকা হেসে বেরিয়ে এলো।

হান কায়ানের বলা প্রত্যেকটা কথা খুব মনোযোগ দিয়ে ভাবতে লাগলো।

” আসলেই কি এ দু’টোর মধ্যে কোন সম্পর্ক আছে? কোথায় আমেরিকা আর কোথায় কোরিয়া। তারউপর এই ড্যানিয়াল সম্পর্কে জানবো কিভাবে? অদ্ভুত কেউই তাকে চেনেনা। না কোন ছবি, না সম্পূর্ণ নাম কিংবা অন্যকিছু। ও গড এখন কি করবো? যদি কায়ানের কথা মতো চিন্তা করি তাহলে এটা দাঁড়ায় দুটোর জায়গার খুনি একজনই। সুজি আমেরিকা গিয়েছিলো এই বিষয়ে খোঁজ নিতে। তাহলে হতে পারে সে কোন কিছু খুঁজে পেয়েছিলো আর তা সেই খুনি জানতে পেরে যায় এবং সুজি দেশে আসার পরই তাকে মে’রে ফেলে যেন সে কাউকে কিছু বলতে না পারে। তাহলে সেই হিসেবে সুজির কাছে নিশ্চয়ই কোন প্রমাণ ছিলো কিন্তু আমরা তো কিছুই পাইনি৷ আর জায়গা দেখে মোটেও মনে হয়নি লাগেজ থেকে কিছু নেওয়া হয়েছে। সবকিছুর মধ্যে কেন যেন একটা কিন্তু থেকেই যায়। কায়ান কি আসলেই সত্যি বলছে? নাকি কোন কারণে আমাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে?”
.
.

বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। এতো বেশি বৃষ্টি থাকার কারণে এনাক্ষী আর বাইরে যাইনি। দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরেই বসে আছে। বেলের শব্দে এনাক্ষী টিভি বন্ধ করে দরজা খুলে দিলো।

” কায়ান এসো ভেতরে।”

কায়ান এসে সোফায় বসলো। এনাক্ষী ফ্ল্যাস্ক থেকে কফি এনে কায়ানের সামনে রাখলো।

” কিছু জানতে পেরেছো?”

” না তবে চিন্তা করোনা। সবঠিক হয়ে যাবে।”

এনাক্ষী বুঝতে পারলোনা পরবর্তীতে কি বলা উচিত তাই চুপ করে রইলো।

” এনাক্ষী তোমাকে যে একটা ক্লিপ কিনে দিয়েছিলাম, চেরি ব্লসমের সময় সেটা কোথায়?”

” ঘরেই আছে। কেন? নিয়ে আসবো?”

” না থাক দরকার নেই। আমাকে একটু চিনি দাও তো।”

” তুমি বসো আমি এখুনি নিয়ে আসছি।”

এনাক্ষী রান্নাঘরে গেলে কায়ান দ্রুত এনাক্ষীর ঘরে এসে পকেট থেকে ক্লিপটা বের করে ড্রেসিং টেবিলে রেখে দিলো।

” এনাক্ষীর ক্লিপ ওখানে কিভাবে পৌঁছালো? কোনভাবে এনাক্ষীই……? না না এটা কিভাবে সম্ভব? এনাক্ষী একজন মেয়ে হয়ে কিভাবে এতোগুলা খু’ন করতে পারে? কিন্তু এটাও তো হতে পারে তার একটা গ্যাং আছে? আবার এটা হয়নি তো যে এনাক্ষী আমার উপর নজর রাখার জন্য এখানে…? না না কায়ান এসব কি ভাবছো তুমি। এরকমটা কি সম্ভব নাকি?”

” কায়ান কোথায় তুমি?”

” আসছি।”

চলবে…….#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ৩৪
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

” কেমন আছো এনাক্ষী? শরীর ভালো আছে? কায়ান কেমন আছে?”

” সব প্রশ্নের উওর ভালো। তোমার কি অবস্থা ফিলিক্স?”

” বেশ ভালো। কায়ানের বান্ধবীর কথা ভেবে খুবই খারাপ লাগছে। ইশ…. এত কম বয়সে মেয়েটা মা’রা গেলো৷ তার কথা ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।”

এনাক্ষী কিছু বলছেনা, চুপচাপ ফিলিক্সের দিকে তাকিয়ে আছে।

” কি দেখছো?”

” কিছু না।”

” তো সুজির মৃ’ত্যু সম্পর্কে কোন ক্লু পেয়েছে?”

” জানিনা। ইনস্পেক্টর হান বা কায়ান আমাকে কিছু জানায়নি।”

” কেন? তাদের সাথে তো তোমার খুব ভালো সম্পর্ক তাহলে কেন জানালো না?”

” জানিনা৷ আচ্ছা তুমি যাও তোমার কাজে আমিও যায়।” এনাক্ষী ফিলিক্সকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেও তার কথা শুনে দাঁড়িয়ে পড়লো।

” কায়ানকে পছন্দ করো তুমি? নাকি ইনস্পেক্টর হানকে?”

” এসব তুমি কি বলছো ফিলিক্স? ইনস্পেক্টর হানকে আমি একজন শুভাকাঙ্ক্ষী, বেশি হলে ফ্রেন্ড এর বড় ভাইয়ের নজরে দেখি আর সেখানে তুমি এসব কি বলছো?”

” আমি কিন্তু প্রথমে কায়ানের কথা বলেছি তবে তুমি কিন্তু তার ব্যপারে কিছুই বলোনি। তার মানে কি আমি ধরে নেবো আমি যা ভাবছি তাই সঠিক?” পকেট হাত গুঁজে বললো ফিলিক্স। এনাক্ষী কিছু বললোনা, চুপচাপ ফিলিক্সের চশমা পড়া চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো।

” আমি যা ভাবছি যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে কিন্তু সুজি নামের মেয়েটা মা’রা যাওয়াতে তোমার এক প্রকার সুবিধাই হলো। মেয়েটার সাথে যদি কায়ানের কোন সম্পর্ক থেকে থাকে তাহলে তো সে কোনদিনও তোমাকে মেনে নিতো না। কিন্তু এখন সেই সুযোগটা আছে। আচ্ছা এনাক্ষী আবার এমনটা নয়তো যে কায়ানকে পাওয়ার জন্য তুমিই সুজিকে মে’রে দিয়েছো। আর শহরে খু’ন হওয়ার সুযোগটাই নিচ্ছো, যেন কেউ কোন ধরনের সন্দেহ না করে।” এনাক্ষীর দিকে খানিকটা ঝুঁকে কথাগুলো বললো ফিলিক্স। ফিলিক্সের কথা শুনে এনাক্ষী ঘাবড়ে গেলো৷ সে কয়েক কদম পিছিয়ে এসে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো,

” একদম বাজে কথা বলবে না। কিসব আজেবাজে কথা বলছো তুমি? আমি মা’রবো সুজি অন্নিকে! তোমার মাথা ঠিক আছে? আমি কিভাবে কাউকে মা’রতে পারি? তোমার সাথে এইজন্য আমার কথা বলতে ইচ্ছে করেনা। সবসময় বা’জে কথা বলো। আর আমার সামনে আসবেনা পা’জি ছেলে। আবার এলে মে’রে মা’থা ফাটিয়ে দেবো।” রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো এনাক্ষী৷ পেছন থেকে ফিলিক্স চিৎকার করে বললো,

” আরে এনা আমি তো মজা করছিলাম। যেও না, আমার কথা তো শুনে যাও।” ফিলিক্সের কথাগুলো এনাক্ষী শুনলো, তবে সে থামলোনা।
.
.

সিভি স্টোর থেকে বাড়ি ফিরছিলো এনাক্ষী। মন মে’জা’জ তার আজ ভালো নেই। অকারণে মালিক থেকে আজ ব’কা শুনতে হলো। তার উপর সাইকেলের চাকা ন’ষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিরক্ত মস্তিষ্ক নিয়ে বাড়ি ফিরছে সে, আচমকা শোরগোলের শব্দে সে থেমে গেলো। তবে আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলোনা। কি মনে করে যেন সে একটু পিছিয়ে গিয়ে চিপা ছোট গলিটার দিকে তাকালো। দেখতে পেলো কয়েকটা হাই স্কুল স্টুডেন্ট অন্য একটা স্টুডেন্টকে বুলি করছে। বুলি হওয়া মেয়েটা কিছু বলতে না পেরে চুপচাপ কান্না করছে। এনাক্ষী সাইকেলটা একপাশে রেখে এগিয়ে গেলো।

” কি হচ্ছে এখানে? তোমরা ওকে বুলি করছো কেন?”

অপরিচিত ব্যক্তির কন্ঠ শুনে সবাই এনাক্ষীর দিকে ঘুরে তাকালো। এনাক্ষী বুলি হওয়া মেয়েটাকে চোখের ইশারায় নিজের কাছে আসতে বললো। মেয়েটি ভীত চোখে বাকি স্টুডেন্টগুলোর দিকে তাকিয়ে মাথানিচু করে ফেললো। এটা দেখে এনাক্ষী হতাশার নিশ্বাস নিলো।

” এই ফরেনার এখানে কি? যাও এখান থেকে। তোমার এখানে কোন কাজ নেই। কি হলো যাও?” ভাব নিয়ে বললো একটি মেয়ে।

” দেখো বুলি করা মোটেও ঠিক, এটা বা’জে কাজ। মেয়েটাকে ছেড়ে দাও৷ তোমাদের দেখে তো ভালো ফ্যামিলির স্টুডেন্ট মনে হচ্ছে, তোমাদের এসব কি মানায়?”

” এই ফরেনার বেশি বকবক করোনা, যাও তো। বেশি দয়ালুভাব দেখাতে গেলে আর এই দেশে শান্তি মতো থাকতে পারবেনা। নিজের ভালো, শান্তি চাইলে যাও। এই তুই হা করে কি দেখছিস? জুতো পরিষ্কার কর।” মেয়েটিকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিলো অন্য আরেকটি মেয়ে। এমনিতেই এনাক্ষীর মেজাজ খারাপ, তার উপর এসব। এনাক্ষী দিক বেদিক চিন্তা না করেই মেয়েটির গালে চ’ড় বসিয়ে দিলো। আচমকা কাজে মেয়েটি ছিটকে দূরে সরে গেলো।

” সি’বা’ল। তোর সাহস তো কম না আমার গায়ে হাত তুলেছিস। আজকে তো তুই শেষ। এই কি দেখছিস, শুরু কর।”
.
.

স্টেশনে বসে আছে এনাক্ষী এবং সেই হাই স্কুলের স্টুডেন্ট গুলো। বুলি করা স্টুডেন্টগুলো কিছুটা ভ’য় পেয়েছে তবে এনাক্ষী এখনো রা’গে ফুসছে। হান এখনো অবাক নয়নে এনাক্ষীর দিকে তাকিয়ে আছে। তার কেন যেন বিশ্বাস হচ্ছেনা এই ভীতু মেয়েটা হাই স্কুলের স্টুডেন্টদের সাথে মারামারি করেছে।

” ইনস্পেক্টর হান এভাবে আর কতটা সময় তাকিয়ে থাকবেন? এবার কিছু বলুন।”

” তুমি এদের মেরেছো?”

” হ্যাঁ মেরেছি। তারা একজন স্টুডেন্টকে বুলি করছিলো এবং আমাকেও মা’রা’র চেষ্টা করেছে। তাই নিজের আত্নরক্ষার জন্য আমি তাদের মে’রেছি। এবার আমাকে কি আপনি এরেস্ট করবেন?” সাহসীভাবে বললো এনাক্ষী৷ হান আজ অবাকের উপর অবাক হচ্ছে কারণ এনাক্ষীর এরূপটার সাথে সে পরিচত নয়। এ যেন অন্য এক এনাক্ষী।

” না, তুমি যাও। আমি এদের অভিভাবকদের ডেকে ব্যপারটা দেখছি। আর হুটহাট এরকম মা’রামা’রি করোনা, আজ নাহয় বড় কিছু হয়নি। হুটহাট মা’রামা’রি করলে পরে বিপদে পড়তে পারবো।”

” ধন্যবাদ। দেখবেন এরা যেন পরবর্তীতে আর এধরনের কাজ করার সাহস না পাই।”

এনাক্ষী ব্যাগটা নিয়ে একটা স্টুডেন্টগুলোর দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে গেলো।
.
.

এনাক্ষীকে না জানিয়ে তার বাসায় চলে এসেছে হিতোমি। তবে না জানিয়ে এসে সে এখন আফসোস করছে কারণ এনাক্ষী বাড়িতে নেই। হিতোমি ভাবতে লাগলো চলে যাবে নাকি অপেক্ষা করবে। পরক্ষণেই তার মাথায় অন্য এক চিন্তা এলো। সে দৌড়ে উপরে চলে গেলো।

ফিলিক্স মাত্রই স্নান করে বেরিয়েছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সে বুকের কাছে কিছু একটা করছিলো। আচমকা বেলের শব্দে সে পেছন ফিরে তাকালো। অসময়ে বেলের শব্দ শুনে তার কপালে ভাজ পড়ে গেলো। গায়ে টিশার্ট চড়িয়ে সে দরজা খুলে দিলো।

ভেজা চুলে কালো রঙের টিশার্টে চশমা পরিহিত ফিলিক্সকে দেখে হিতোমি থ হয়ে গেলো। সে মুগ্ধ নয়নে ফিলিক্সকে দেখতে চলেছে।

” তুমি এখানে? তুমি এখানে কি করছো?”

” এনাক্ষীর বাসায় এসেছিলাম কিন্তু সে নেই।”

” তাহলে এখানে কি?”

” এতদূর এলাম, এনাক্ষীর সাথে দেখা না করে চলে যাবে? তাই তোমার সাথে দেখা করতে চলে এলাম। এখন কি অতিথিকে দরজা থেকেই তাড়িয়ে দেবে?”

ফিলিক্স হতাশাভরা নিশ্বাস নিয়ে সরে দাঁড়ালো। হিতোমিও তার ইশারা বুজে এসে ভেতরে ঢুকে পড়লো।

” বসো, আমি দেখছি কি আছে। এদিক ওদিক যাবেনা, চুপ এক জায়গায় বসে থাকো।”

ফিলিক্স তো তার কথা বলে চলে গেলো কিন্তু হিতোমি কি আর এক জায়গায় বসে থাকার মেয়ে। সে উঠে পুরো বাড়িটা ঘুরতে লাগলো। হিতোমি দেখলো ফিলিক্সের বাড়িতে বেশি কিছু নেই তবে একটা জায়গায় মাঝারি সাইজের একটা বক্স রাখা আছে। একটা রুমের সামনে দাঁড়িয়ে উঁকি দিয়ে ভিতরে দেখলো। একটা খাট, কার্বাড এবং একটা ড্রেসিং টেবিল। টেবিলের উপর অনেকগুলো ছেলেদের মেকাপের জিনিস, পারফিউম, লেন্স সহ আরো অনেক কিছু। এতো এতো সাজের জিনিস দেখে এনাক্ষীর কপাল কুঁচকে গেলো।

” বাহ্ এ দেখি সাজতেও পারে।”

” তোমাকে না বলেছি এক জায়গায় বসে থাকতে। তুমি তাও হাঁটছো কেন?”

আচমকা ফিলিক্সের কথা শুনে হিতোমি চমকে গেলো।

” এভাবে হুট করে কথা বললে কেন? আগে ডাকবে না।”

” চলুন অতিথি সাহেবা। এই গরিবের ঘরে সামান্য খাবার মুখে দেবেন।”

” চলো দেখি কত গরিব তুমি।”

কফির মধ্যে বিস্কিট ডুবিয়ে খাচ্ছে হিতোমি। ফিলিক্স চুপচাপ কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে বললো,

” হিতোমি।”

” হুম।” মুখে বিস্কিট নিয়ে বললো হিতোমি।

” তোমার হাতের আঙ্গুলগুলো সুন্দর।”

ফিলিক্সের কথা শুনে হিতোমি বিষম খেলো। ফিলিক্স থাকে জল এগিয়ে দিলো। হিতোমি জল খেতে খেতে চিন্তা করতে লাগলো,

” পা’গ’ল নাকি? চোখ, গাল, ঠোঁট এতকিছু থাকতে কিনা বলছে আমার হাত সুন্দর! কি আশ্চর্যজনক ব্যাপার।”

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here