#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
ক্লাসে হিতোমি, এনাক্ষী এক সারিতে এবং ডো বিন, জি ওয়ান অন্য সারিতে বসলো। তবে ইয়েজি তাদের থেকে আলাদা একা সামনের বেঞ্জে বসলো।
” হিতোমি ইয়েজি কি আমার কারণে আলাদা বসেছে? তোমার সাথে বসার কারণে সে কি রা’গ করেছে?”
” না এনাক্ষী সেরকম কিছু না। ইয়েজি ক্লাসে সবসময় সামনেই বসে থাকে। কিন্তু আমরা তিনজন মাঝের সারিতেই বসি। আজ আমি তোমার সাথে বসলাম আর ডো বিন এবং জি ওয়ান আলাদা বসেছে।”
এনাক্ষী আর কিছু বললোনা, পড়ায় মনোযোগ দিলো।
ক্লাস শেষ হলে ডো বিন এবং জি ওয়ান ইয়েজির পেছনে দৌড়ে গেলো।
” ইয়েজি তুমি এভাবে বেরিয়ে এলে কেন?” জি ওয়ান প্রশ্ন করলো।
” কারণ ওই ফরেনার মেয়েটা। তোমরা এখনো কিভাবে তার সাথে আছো। ওর স্কিন কালার দেখেছো? আমাদের থেকে কতটা ডার্ক। আর তোমরা ওর ব্লাড গ্রুপ জিজ্ঞেস করেছো?”
” ইয়েজি তুমি এবার সত্যিই বেশি করছো। এনাক্ষী মেয়েটা যথেষ্ট ভালো। দেখেই বোঝা যায় কতটা সহজ সরল সে। হিতোমি অনেক আশা নিয়ে তাকে বন্ধু হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। তুমি এরকম ব্যবহার করলে কি এটা ভালো দেখায়? এরকম করলে তো হিতোমি এনাক্ষীর কাছে ছোট হয়ে যাবে। তুমি কি তা চাও?” ডো বিন গম্ভীর কন্ঠে বললো।
” না কিন্তু….. ”
” এখন কোন কিন্তু নয়। চলো রেস্তোরাঁ থেকে বাবল টি নিয়ে আসি। দেরি করলে বাবল টি না খেয়েই আবারো ক্লাসে যেতে হবে।” জি ওয়ান ইয়েজির হাত ধরে রেস্তোরাঁর দিকে টেনে নিয়ে গেলো। ডো বিন মেসেজ করে হিতোমিকে রেস্তোরাঁয় আসার কথা জানিয়ে দিলো।
.
.
পড়া শেষ করে ফোন দেখছিলো এনাক্ষী। ইনস্ট্রাগ্রাম স্ক্র করতে করতে আচমকা সে থেমে গেলো। সাজেশনে একটা আইডির নাম এসেছে ‘চোই হান সক’। কৌতূহলবশত এনাক্ষী হানের করা পোস্টগুলো দেখতে লাগলো। তবে বেশিক্ষণ দেখতে পারলোনা। দ্রুত সে ইনস্ট্রাগ্রাম থেকে বেরিয়ে গেলো।
” আমি তো আরো মনে করেছিলাম ইন্সপেক্টর হান অনেক গম্ভীর ধাঁচের মানুষ কিন্তু এখন তো দেখি উল্টো। এতো ছবি তার ইনস্ট্রাগ্রাম প্রোফাইলে তার মধ্যে গুটি কয়েক ছাড়া বাকিগুলো তো হট টাইপের ছবি। আর কমেন্ট বক্সে তো মেয়েরা এমন কিছু বাকি নেই যা বলেনি। কোথায় ভেবেছিলাম গম্ভীর ধাঁচের মানুষ হবেন তিনি, প্রোফাইল থাকবে পোস্ট শূণ্য কিন্তু এতো দেখি উল্টো। আসলেই মানুষকে আমি বুঝতে পারিনা।”
.
.
জানুয়ারি মাসের প্রায় শেষ সময় চলমান। ব্যস্ত দিনগুলোর মধ্যে আজ এনাক্ষী একটু অবসর সময় পেয়েছে। তাই সে মনস্থির করেছিলো কোথাও ঘুরতে যাবে। যাতে ঘুরাঘুরিও হয়, সেইসাথে মনটাও যেন ভালো হয়ে যায়। অনেকটা সময় নিয়ে ভাবার পর এনাক্ষী ঠিক করলো “Hwacheon Sancheoneo Ice Festival” এ যাবে। দক্ষিণ কোরিয়ায় বরফে মাছ ধরা একটি জনপ্রিয় শীতকালীন উৎসব। এই সময় অনেক ফেস্টিভ্যাল এর মধ্যে এটিই সবচেয়ে জনপ্রিয়। কিন্তু এনাক্ষীর মতে এখানে একা গিয়ে খুব বেশি আনন্দ অনুভব করা যাবেনা। কেউ সঙ্গী হিসেবে থাকলে একটা আলাদাই মজা অনুভব করা যায়। অনেক ভেবেচিন্তে এনাক্ষীর মাথায় সর্বপ্রথম নাম এলো “কায়ান”।
” সঙ্গী হিসেবে কায়ান হলে মন্দ হয়না। আর তাছাড়াও আমার এই শহরে আর কেই বা আছে? হিতোমির সাথেও ওতোটা ক্লোজ হয়ে উঠা হয়নি। কিন্তু কায়ান কি যেতে রাজি হবে?”
যেহেতু এটি একটি জনপ্রিয় ফেস্টিভ্যাল তাই মানুষের ভীড়ও অনেক। এনাক্ষী হারিয়ে যাওয়ার ভ’য়ে কায়ানের জ্যাকেটের এককোণা মুঠো করে ধরে রেখেছে। কায়ানকে অনেক কিছু উল্টোপাল্টা বুঝিয়ে এনাক্ষী রাজি করাতে পেরেছে। কায়ানের মতে এই শীতে বরফের মাঝে গেলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। কিন্তু এনাক্ষীর বাহানার কাছে হার মেনে সে আসার জন্য রাজি হয়ে গেলো।
কায়ান দু’টো ব্যাগ এবং ছিপি নিয়ে এলো মাছ ধরার জন্য। এনাক্ষী তাড়াতাড়ি নিজের ছিপিটা ঠিক করে একটা গর্তের ভিতর ফেললো এবং অপেক্ষা করতে লাগলো মাছ কবে আটকাবে। অনেকটা সময় অপেক্ষা করলো সে তবে দুঃখের বিষয় একটা মাছও তার ছিপে এসে আটকালো। এতে এনাক্ষীর ভিষণ মন খা’রা’প হয়ে গেলো। মন খা’রা’প করে এনাক্ষী উঠে দাঁড়ালো।
” আরে এনা মন খারাপ করোনা, চলো অন্য গর্তে যাই। দেখি আমার ছিপে মাছ আটকাই কিনা।”
তারা দু’জন পাশের আরেকটা গর্তের কাছে এসে দাঁড়ালো। কায়ান নিজের ছিপিটা ঠিক করে গর্তে ফেললো এবং আশ্চর্যজনকভাবে কিছু সেকেন্ডের মধ্যে একটা মাঝারি সাইজের মাছ ছিপিতে আটকে গেলো। কায়ান তাড়াতাড়ি মাছটিকে ব্যাগে ভরে ফেলো।
” এটা কি হলো! আমি এতোটা সময় ধরে অপেক্ষা করলাম কিন্তু আমার গর্তে একটাও আটকালো না, অন্যদিকে তুমি ছিপি ফেলার সাথে সাথে মাছ আটকে গেলো যেন অপেক্ষা করছিলো তুমি কবে ছিপি ফেলবে আর সে এসে আটকে যাবে।” অবাক হয়ে বললো এনাক্ষী।
” হয়তো তাই। আমার সুন্দর চেহারাটা দেখে মাছ রাণী মনে হয় ক্রাশ খেয়েছে। তাই নিজেই ধরা দিয়েছে। ইশ…. আমি কত সুন্দর যে মাছও আমার প্রেমে পড়ে গেলো।”
” হুম…. আমি কত সুন্দর৷ মোটেও না, ক’চু গাছের মতো দেখতে তুমি। আর এই মাছ তোরা এতো পা’জি কেন? একজনও আমার ছিপে আটকালি না আর কায়ানের ছিপে কি সুন্দর আটকে গেলি। কি দেখে এই কচু গাছের ছিপিতে আঁটকে গিয়েছিস? আমাকে কি তোদের চোখে পড়েনি?”
” না পড়েনি। তোমার মুখ তো লাউ পাতার মতো দেখতে, তাই কেউ আমার কাছে আসেনি।”
” মিথ্যা কথা বলবেনা একদম। আমি জানি আমি সুন্দর। মনে নেই শপিং মলে একটা ছেলে কি বলেছিলো?” কোমরে হাত দিয়ে এনাক্ষী বললো।
” তোমারও হয়তো মনে নেই আমি সেইদিন কি বলেছিলাম।” কথাটা বলেই কায়ার সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলো।
” এই কায়ান দাঁড়াও৷ আমাকে রেখে কোথাই যাচ্ছো? আমি হারিয়ে যাবো তো।”
একটা ছাউনির মতো জায়গায় কায়ানের আসার অপেক্ষা করছে এনাক্ষী। এখানে তার মতোই আরো অনেকে অপেক্ষা করছে আবার কেউ কেউ নিজেদের ধরে আনা মাছগুলো কুক করে খাচ্ছে। কিছু সময় পর কায়ান ধরে আনা মাছটা কুক করে নিয়ে এসেছে। সে মাছটা টেবিলে রেখে অতি মনোযোগ সহকারে কিছু একটা ভেবে চলেছে।
” কি ভাবছো?”
” ভাবছি এই মাছের ভাগ আমি কাউকে দেবোনা। পুরোটাই আমি খাবো।”
কায়ানের কথা শুনে এনাক্ষী চ’টে গেলো।
” হু…. লাগবেনা কারো মাছের ভাগ। আমি এতোটাও পেটুক নই যে অন্যের মাছে ভাগ বসাবো।”
” সত্যি তো? মাছটা দেখে মনে হচ্ছে খেতে বেশ ভালোই হবে। পরে কিন্তু আর ভাগ দেবোনা।”
” বলেছিতো দিতে হবেনা। তুমি খাও তোমার মাছ, আমি দেখবোও না। এই আমি অন্যদিকে ফিরে রইলাম৷ তুমি খাও, শেষ হলে তারপর ডেকো।”
কায়ান বুঝতে পারলো এনাক্ষী খুবই রে’গে গিয়েছে। এটা ভেবেই মনে মনে হাসলো সে।
” আচ্ছা আর রাগ করতে হবেনা। আমি আবার একা একা খেতে পারিনা।”
” না আমি খাবোনা, তুমিই খাও। এটাতো তোমার মাছ, তুমি ধরেছো। তাই এটাতে আমার কোন ভাগ নেই।”
” বাহ্ পিচ্চি মেয়ের দেখছি অনেক রা’গ৷ এতো রা’গ ভালোনা মেয়ে। আর আমরা বন্ধু না? তো বন্ধুদের মাঝে তোমার আমার বলতে কিছু থাকে নাকি? নাকি তুমি আমাকে বন্ধু হিসেবেই মানোনা?”
” কে বলেছে মানিনা? তোমাকে বন্ধু মনে না করলে কি আমার সাথে তোমাকে আনতাম?”
কায়ান চপস্টিক দিয়ে এনাক্ষীর গালে হালকা করে খোঁ’চা দিয়ে বললো, ” তাহলে এই মুখ ফোলাটা কমাও আর মাছ খাওয়া শুরু করো। এখানে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেবেনা।”
এনাক্ষীও আর কথা বাড়ালোনা। চপস্টিক খুলে মাছটা খাওয়া শুরু করে দিলো। তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে তারা এবার পরবর্তীতে কি করা যায় সেটার খোঁজে বেরিয়ে পড়লো।
চলবে……#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ১৪
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
একসাইডে দাঁড়িয়ে হাসছে কায়ান এবং সাথে ভিডিও করছে। স্নো স্লাইড করে নিচে নামার পর এনাক্ষীর দেহে যেন প্রা’ণটা ফিরে এলো। বড় বড় নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সে। এদিকে এনাক্ষীর অবস্থা দেখে কায়ান নিজের হাসির থামানোর বদলে আরো জোড়ে জোড়ে হাসতে শুরু করলো। তা দেখে এনাক্ষী রে’গে নিচে থেকে একমুঠো বরফ তুলে নিয়ে কায়ানের গায়ে ছুঁ’ড়ে মারলো।
” আ… এনাক্ষী স্নো স্লাইড করার সময় কি মাথার স্ক্রু খু’লে পড়ে গিয়েছে নাকি? এই শীতে বরফ মারছো কেন?”
” তো কি করবো? তুমি এভাবে হাসছো কেন?”
” তো না হেসে কি করবো? তোমার অবস্থা দেখে না হেসে উপায় আছে। কিভাবে চিৎকার করছিলে তুমি? এই তোমার গলা নিজের জায়গায় আছে তো? যেভাবে চিৎকার করলে মনে হয় তোমার গলা আত্ন’হ’ত্যা করেছে।”
” চিৎকার না করে কি করবো। কত দ্রুত ওটা নিচে নামছিলো, মনে হচ্ছিলো এই বুঝি কোমড় ভে’ঙে গেলো।”
” আহারে এনাক্ষী, তুমি তো দেখছি বুড়ি হয়ে যাচ্ছো।”
” কায়ান….দাঁড়াও। আজকে তোমাকে আমি বরফে চু’বিয়ে রাখবো। পা’জি ছেলে সবসময় আমার পিছনে লেগে থাকো।”
দু’হাতে বরফ তুলে নিয়ে কায়ানের দিকে ছুঁড়ে মা’রবে তার আগেই কায়ান দৌঁড়ানো শুরু করে দিলো। এনাক্ষীও ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নয়। সেও ছুটতে লাগলো কায়ানের পেছনে।
বরফ দিয়ে স্নো ম্যান বানাচ্ছে এনাক্ষী। কায়ান একপাশে দাঁড়িয়ে স্নো ম্যান বানানো দেখছে। স্নো ম্যান বানানো শেষ হলে এনাক্ষী কায়ানের হাতে নিজের ফোনটা ধরিয়ে দিলো ছবি তোলার জন্য। স্নো ম্যানের পাশে দাঁড়িয়ে ভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করতে লাগলো এনাক্ষী, কায়ান চুপচাপ তার ছবি তুলে যাচ্ছে। এনাক্ষী কিউট পোজ দেখে কায়ান হালকা হেসে বিরবির করে বললো,
” কিউপতা।” (কিউট)
.
.
হিতোমি এবং তার ফ্রেন্ড গ্যাং এসেছে বাস্কেটবল গ্রাউন্ডে। আজ নাকি খেলা আছে। এনাক্ষী অনেক আগ্রহী ছিলো বিধায় তাদের সাথে সেও এসেছে। তারা সবাই মিলে একটা সারিতে বসলো। ইয়েজি সবার হাতে কার্ড বোর্ড ধরিয়ে দিলো চিয়ার আপের জন্য। সে এনাক্ষীকেও একটা দিলো। এনাক্ষী বোর্ডটা নিয়ে দেখলো তাতে কোরিয়ান ভাষা লেখা টিম এন। এক এক করে দুই টিমের সকল মেম্বাররা গ্রাউন্ডে আসতে লাগলো। তবে মেম্বারদের মধ্যে একজনকে দেখে এনাক্ষী খানিকটা অবাক হলো।
” ফিলিক্স!” নিচুস্বরে বললো এনাক্ষী।
” হিতোমি ফিলিক্সও কি বাস্কেটবল টিমের মেম্বার।”
” হুম সে এন টিমের মেম্বার। দেখো তুমি, তোমার বেশ ভালো লাগবে।”
” বাহ্ ফিলিক্স তো দেখি অনেক কিছুতে পারদর্শী।” মনে মনে বললো এনাক্ষী।
বাস্কেটবল কোর্টে দাঁড়িয়ে টিম মেম্বারদের সাথে কথা বলার সময় ফিলিক্স এনাক্ষীকে লক্ষ্য করলো। সে হেঁসে হাত নাড়িয়ে এনাক্ষীর দৃষ্টি আর্কষণ করলো। এনাক্ষীও হাতের ইশারায় তাকে বেস্ট অফ লাক জানালো।
ম্যাচ শুরু হলো। বল উপরের দিকে ছোঁড়া হলো তবে সেটা নিজেদের করে নিলো টিম ভি এর লিডার। মূহুর্তেই পুরো কোর্ট রুম চিৎকারে ভরে গেলো। অধির আগ্রহে সবাই খেলা দেখছে। দু’টো টিমের প্রত্যেকটি সদস্য খুবই দক্ষতার সাথে বল বাস্কেটে ফেলছে। অবশেষে টিম এন সর্বশেষ পয়েন্ট নিয়ে জিতে গেলো৷ টিম এন জিতে গিয়েছে এতে অনেকেই খুব খুশি। এনাক্ষী খেয়াল করেছে বাকিদের থেকে ইয়েজি বেশি খুশি হয়েছে। টিম মেম্বাররা নিজেদের জায়গায় গিয়ে বসার পর ইয়েজি দৌড়ে সেদিকে চলে গেলো।
” হিতোমি ইয়েজি ওদিকে কেন গিয়েছে? ওরা ব’কবে না?”
” ব’কবে কেন? ইয়েজিকে সবাই চেনে আর এখন তো খেলা শেষ, গেলেও সমস্যা নেই।”
কিছুক্ষণ পর এনাক্ষী দেখলে ইয়েজি টিম এনের লিডার মিন হু তার সাথে বাইরে কোর্ট রুমের বাইরে চলে গিয়েছে। এবার এনাক্ষী বুঝতে পারলো যতবারই মিন হু বাস্কেটে বল ফেলেছিলো ইয়েজি এতোটা খুশি কেন হয়েছিলো। আসল ঘটনা বুঝতে পেরে মনে মনে হাসলো এনাক্ষী।
এনাক্ষী বেরিয়ে যাবে সেই সময় পেছন থেকে কেউ তার ব্যাগ টেনে ধরলো। এনাক্ষী ভাবলো এটা হিতোমি, সে প্রায় সময়ই এরকম ব্যাগ ধরে থাকে।
” হিতো….. ফিলিক্স তুমি? আমি তো আরো ভেবেছিলাম হিতোমি।”
” খেলা দেখেছিলে?”
” হুম দেখলাম তো।”
” কেমন লাগলো?”
” অনেক ভালো। তোমরা সবাই খুব দক্ষ এই খেলায়।”
” হুম তা তো বটেই কিন্তু আমার পারফরম্যান্স কেমন ছিলো?”
” ভালো৷ তুমি যে বাস্কেট বলও খেলতে পারো এটা আমি আশা করিনি। তোমার পারফরম্যান্সও ভালো লেগে আমার কাছে।”
” আর আমাকে কেমন লেগেছে?” এনাক্ষীর দিকে খানিকটা ঝুঁকে বললো ফিলিক্স। শুকনো একটা ঢোক গিলে এনাক্ষী এক কদম পিছিয়ে গেলো। তার চেহারা দেখে নিচের ঠোঁটের একাংশ কামড়ে ধরে হাসলো ফিলিক্স। এরই মধ্যে এনাক্ষীকে না পেয়ে হিতোমি আবারো কোর্ট রুমে ফিরে এসেছিলো। তবে এনাক্ষীর এতো কাছে ফিলিক্সকে দেখে তার পা জোড়া থেমে গেলো। পরমুহূর্তে নিজেকে ধাতস্থ করে খানিকটা কাছে গিয়ে নিচু স্বরে এনাক্ষীকে ডাকলো সে। হিতোমিকে দেখে ফিলিক্স সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দূরে সরে গেলো।
” যাবে না?”
এনাক্ষীকে হিতোমির কথার বিপরীতে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফিলিক্স বললো,
” এনা পেস্ট্রি খেতে যাবে?”
এনাক্ষী বারণ করবে কিন্তু হিতোমি বললো,
” আচ্ছা তাহলে তুমি ওর সাথেই যাও। সময় পেলে আমাদের কাছে এসো।”
” তাহলে তুমিও আমাদের সাথে চলো হিতোমি।”
” না এনাক্ষী। তুমিই যাও, বাকিরা আমার জন্য অপেক্ষা করছে। সাবধানে থেকো, বাই।”
” এনাক্ষী চলো। দেরি হলে সব পেস্ট্রি শেষ হয়ে যাবে, তাড়াতাড়ি চলো।”
এনাক্ষীর হাত ধরে ফিলিক্স তাকে কোর্ট রুমের বাইরে নিয়ে গেলো। হিতোমি পলকহীনভাবে তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
” হিতোমি।”
ইয়েজির কন্ঠে হিতোমি নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো।
” তুমি যাওনি কেন? তুমি চাইলেই কিন্তু তাদের সাথে যেতে পারতে।”
” সে তো আমাকে আমন্ত্রণ জানাইনি। যেদিন জানাবে সেদিন নাহয় যাবো।”
” হিতোমি তুমি ফরেনার মেয়েটাকে বলে দাও, না হলে পরে প’স্তাবে।”
” আরে ছাড়ো এসব। মিন হু কোথায়? তুমি ওকে ছেড়ে আবার এখানে এলে যে?”
” সে তার টিম মেম্বারদের সাথে আছে। চলো ডো বিন এবং জি ওয়ান মাঠে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।”
ইউনিভার্সিটির পাশে অবস্থিত পেস্ট্রি শপে এনাক্ষীকে নিয়ে এসেছে ফিলিক্স। শপে মৃদুস্বরে গান বেজে চলেছে। এই জিনিসটা এনাক্ষীর কাছে বেশ ভালো লাগে। এখানের প্রায় প্রতিটা শপেই ভিন্ন ধরনের গান বেজে থাকে।
ফিলিক্স একটা রেড ভ্যালভেট পেস্ট্রি এনাক্ষীর সামনে রাখলো এবং নিজে ম্যাঙ্গগো ফ্লেভার পেস্ট্রি নিলো। একটু টুকরো পেস্ট্রি মুখে নিয়ে ফিলিক্স বললো,
” তুমি ওই মেয়েটাকে কেন বন্ধু বানিয়েছো?”
” কার কথা বলছো তুমি ফিলিক্স? হিতোমি?”
” জ্বি তার কথাই বলছি। তুমি কি পুরো ইউনিভার্সিটিতে আর কাউকে পাওনি?” বিরক্তিমিশ্রিত কন্ঠে বললো ফিলিক্স।
” হিতোমিই আমাকে বন্ধু হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলো আর সে অনেক ভালো। সেই সাথে তার বাকি বন্ধুরাও। কিন্তু তুমি এভাবে বলছো কেন?”
” যাইহোক শোন মেয়েটি যদি তোমাকে আমার ব্যপারে কিছু জিজ্ঞেস করে তাহলে কিছু বলবেনা। জানা থাকলেও বলবে জানিনা। আমার ব্যপারে কিছু জিজ্ঞেস করলেই মুখে আ’ঠা লাগিয়ে বসে থাকবে। দরকার হলে আমি তোমাকে বড় একটা আ’ঠার ড্রামার কিনে দেবো কিন্তু তুমি তাকে কিছু বলবে না।”
” তুমি এভাবে বলছো কেন ফিলিক্স? বললে সমস্যা কোথায়? হিতোমিকে তুমি চেনো নাকি?”
” তুমি পিচ্চি বাচ্চা এতো কিছু বুঝতে পারবেনা। শুধু যা বলেছি তাই করো। এবার সব চিন্তা বাদ দিয়ে পেস্ট্রি খাও।”
ফিলিক্সের কথা বলার আগ্রহ না দেখে এনাক্ষীও কথা বাড়ালোনা। তবে তার কৌতূহলী মনে অনেক কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে কেন ফিলিক্স এই কথাগুলো বললো তা জানার জন্য।
চলবে…….