নিশীথচিত্র পর্ব ৬+৭

‘নিশীথচিত্র'(৬)
ইসরাত আয়রা ইচ্ছে

____________

রিনি প্রাণপণ চেষ্টা করলো কিন্তু শাড়ি যে নিজেই চাচ্ছে না সুন্দর হোক। এব্রোতেব্রো শাড়ির কুচি নিয়েই গায়ে শাড়ির আঁচল টানলো।চোখে কাজল, ঠোঁটে হাল্কা লিপ্সটিক, কানে ছোট কানের দুল।

নিজেকে নিজেই বললো
— “বাহ আমাকে কতো সুন্দর লাগছে। দিহান ভাই তো পাগল হয়ে যাবে আজ।ইশশশ কি লজ্জা কি লজ্জা…। ”

রিনি আয়নার সামনে হাত দিয়ে চোখ ঢাকলো।

এবার কথা হলো সামনের দরজা দিয়ে নামা যাবে না।কেউ টের পেলে কেলেংকারী হয়ে যাবে।ধরা পরে গেলে এতো রাতে শাড়ি পরে কই যাচ্ছে এই প্রশ্নের জবাব দাওয়া রিনির কাছে অসম্ভব। একটাই উপায় গাছ বেয়ে নামা।গাছ বেয়ে নামার যথেষ্ট অভ্যাস আছে। কিন্তু এই রাতে গাছে যদি ভূত থাকে?আরও তো শাড়ি। সব ভয় চাপা দিয়ে রিনি গাছ বেয়ে নামতে গেলো। কিন্তু শাড়ির জন্য ব্যাপক ঝামেলা হয়ে গেলো। শাড়ি বিশ্রি ভাবে হাটুর উপর উঠে যাচ্ছে।রিনি মনে মনে বললো “ভাগ্যিস রাত”

— “কি ঝামেলা রে বাবা এ বুঝলে আমি শাড়ি হাতে নিয়ে নামতাম।তারপর নিচে নেমে পড়তাম।কতো কষ্ট করে পরলাম কোনো মতে তাও। গেলো সব গেলো রে সব গেলো।” রিনি হাল্কা আওয়াজে হায়হুতাশ করে কথা গুলো বলছে।

নিচে নেমে শাড়ি টেনে টুনে একটা অবস্থায় আনলো।দিহানের রুমে আলো জ্বলছে। দিহান ঘুমায় নি রিনি ভালোই জানতো।মোবাইলে দেখলো ১২ টা বাজতে দুই মিনিট বাকি।এখনই ঢুকতে হবে ভেবে রিনি দরজায় কড়া নাড়লো।

দিহান তখন এক কাপ চা নিয়ে বসে বসে সিগারেট টানছিলো।জীবনে ২য় বারের মতো সিগারেট খাওয়া।নিজের জন্মদিন কিন্তু আপন বলতে কেউ পাশে নেই সেই কষ্টেই আনুষ্ঠানিক ভাবে সিগারেট ধরাইছিলো আজ।এতো রাতে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে দিহান ভেবে নিলো মুনির আংকেল এসেছে।বেশি রাত তো না আসাটা অসাভাবিক কিছু না।সিগারেট নিভিয়ে সেটা লুকিয়ে ফেললো।দিহান দরজা খুলেই ভূত দেখার মতো চমকে গেলো। রিনি তারাতারি ভিতরে ঢুকে দরজা আটকে দিলো।তারপর দিহানের সামনে শান্ত হয়ে দাড়ালো দুইবার কেশে গলা ঠিক করে বললো ” শুভ জন্মদিন দিহান ভাই”

দিহানের ঘোর কাটছে না। যা হচ্ছে যা দেখছে সবই সত্যি?মনের কথা এতো তাড়াতাড়ি পূরণ হয় তা জানা ছিলো না দিহানের।নিজের অজান্তেই হাত দিয়ে রিনির কপালের অবাধ্য চুলগুলো সরিয়ে দিলো। তৎক্ষনাৎ হাত সরিয়েও নিলো।

রিনি নিজেই দিহানের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। তার ধারণা কি তাহলে সত্যি?রিনির মন টা খুশিতে নেচে উঠে।

এবার আর একটু শব্দ করেই বললো

— “শুভ জন্মদিন দিহান ভাই।দেখলেন তো উইশ করতে এক মিনিট দেরি হয়ে গেলো আপনার জন্য। দরজা খুলতে লেট করলেন কেন দিহান ভাই?”

দিহান খুক খুক করে কেশে রিনির প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করলো,

— “তুমি এতো রাতে এখানে কি করছো? আর এই শাড়ি? আন্টি তোমাকে ঘর থেকে বের হতে দিলো?”

— “আমি গাছ বেয়ে নেমেছি দিহান ভাই।”

দিহানের বিস্ময় যেনো উপচে পরছে।
— “কিইইই???এই রাতে? রিনি আমার জন্মদিন তো তুমি এতো কষ্ট কেন করছো।আরো তো শাড়ি… এই এই মেয়ে তুমি শাড়ি কেন পরেছো?যদি গাছ দিয়ে পরে যেতা?”

— “একটা একটা প্রশ্ন করেন দিহান ভাই।যদিও আপনি কোনো উত্তর পাবেন না। কারণ আমার উত্তর জানা নেই আর জানা থাকলেও… রিনি কি বলবে বুঝতে পারছে না।শেষমেস একটা কথা মাথায় এলো “জানি না কিচ্ছু জানি না।”

— “আচ্ছা।হুহ। ওকে ফাইন।রিনি আজ আমার জন্মদিন তা কিভাবে জেনেছো?”

রিনু ভাবালু সরে বলে
— “জেনেছি জেনেছি। জানার উপায় এর অভাব আছে দিহান ভাই?”

— “তা ঠিক।হাতে ওগুলো কি? আর গাছ দিয়ে যদি পরে যাইতা?এসব নিয়ে নামছো? আল্লাহ আমি ভাবতে পারছি না রিনি।”

— “পরি তো নাই এটাই অনেক। আসেন কেক কাটবো।”

দিহান আর এক চোট অবাক হয়।
— “কেক??? সিরিয়াসলি? এই পাগলামোগুলো উদ্ধার করলে কই থেকে?”

রিনির রাগ লাগলো।ঝাঝালো কণ্ঠে বললো
–” উহ দিহান ভাই আসেন না।খালি কথা বাড়ায়।”

রিনি হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে চাইলো।কিন্তু হঠাৎ লজ্জার উদয় হতে হাতটা আবার আস্তে করে ছেড়ে দিলো।

রিনি বিছানায় বসলো। দিহান তখনও দাড়িয়ে

— “আসেন না দিহান ভাই প্লিজজ।”

দিহান বিছানায় বসলো। আস্তে করে বললো
— এত কিছু কেন রিনি?মানলাম এতোকিছু কিন্তু এতো রাতে কেন?কাল সকালে পড়তে এসেও করা যেত।”

রিনি কেকের প্যাকেট থেকে কেক বের করতে করতে বললো

— “কিন্তু আমি যে ১২ টায়ই উইশ করতে চেয়েছি।”

— “এতো গুরুত্ব মানুষ কাকে দেয় আমি বুঝি রিনি।কিন্তু তুমি বোঝো না নিজেকে আড়াল থেকে সব সময় বের করতে নেই।ফলাফল ভালো হয় না।”

রিনির মাথায় আপাতত কিছু ঢুকছে না।দিহানের বলা কথাটার একবার ব্যাখ্যাও করলো না।

রিনি দিহানের দিকে ছুড়ি এগিয়ে দিয়ে বললো
— “দিহান ভাই কাটেন।”

দিহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছুরি হাতে নিলো।

— “এই দাড়ান দাড়ান।কয়টা ছবি তুলি আপনার।”

দিহান রিনির পাগলামোতে মনে মনে খুশি হলেও বাস্তবতা ভেবে মুখ গম্ভীর করে তাকিয়ে রইলো।

তবুও রিনি ছবি তুলে দুই তিনবার “মাশাল্লাহ মাশাল্লাহ ” করলো “অনেক সুন্দর লাগছে দিহান ভাই নজর না লাগে”। দিহান ভাবছে মেয়েটার পাগলামি আবার শুরু হয়ে যাবে না তো?

দিহান কেক কাটছে আর রিনি হাতে তালি দিচ্ছে।দিহান কাটা কেক পিস টা নিজের মুখেই চালান দিলো।এদিকে রিনি বেশ আশায় ছিলো দিহান তাকে খাওয়াই দিবে।

— “এই রিনি কেক কাটা হইছে খাওয়া হইছে অনেক রাতও হইছে যাও বাসায় যাও।”

রিনির মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। কতোশত প্লান করে এসেছে আর মানুষটা কিনা তাড়িয়ে দিচ্ছে?
রিনি গোমড়া মুখ করে বললো

–” আমাকে খাওয়াই দিবেন না?আমি খাওয়াই দিবো না? গিফট দিবো না?”

— “এমা এতো কিছু?কিন্তু এতো কিছু পরে একদিন কেমন? আজ আর না”

রিনু জেদ ধরলো।
–” আজই দিহান ভাই।”

রিনি কথাটা বলে আর দেরি করলো না কেক কেটে দিহানের মুখে ঢুকিয়ে দিলো।আর এক পিচ কেটে দিহানের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো” খাওয়াই দেন আমাকে”।

অগত্যা দিহানের খাওয়াতে হলো। রিনির মুখে তখন পূর্ণতার হাসি।

— “এবার তো যাও।”

–” গিফটের পালা তো শেষ হয় নি । আপনার জন্য আমার এতো ভালো রেজাল্ট আমি আপনার একমাত্র ছাত্রী। কিভাবে ভাবলেন আমি গিফট দিবো না?”

দিহান আবারও দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।যার মানে এই মেয়েকে বুঝানোর ক্ষমতা এখন তার নেই।আর ক্ষমতা থাকবেই বা কিভাবে?শাড়ি পরে যে তার অর্ধের ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে।

— “আমার আরও একটা ছাত্রী আছে রিনি।”

— “ওটা ছাত্রী না।ওটা যাত্রী। এসেছে চলেও যাবে।কিন্তু এই ছাত্রী জীবনেও তার স্যারকে ওরফে দিহান ভাইকে ভুলবে না।”

রিনি বেশ কিছুক্ষণ মিটিমিটি হাসলো আর প্যাকেট থেকে একটা শার্ট বের করলো।

— “সাইজ নিয়ে একদম চিন্তা করবেন না দিহান ভাই সব ঠিক আছে।আপনি কি একটু পরবেন এখন।”

দিহান কথা না বাড়িয়ে শার্টটা পরে এলো । কারণ কথা বাড়ানো মানেই সময় বাড়ানো। রিনি ড্যাবড্যাব চোখ করে তাকিয়ে বললো

–” আপনাকে নায়ক নায়ক লাগছে দিহান ভাই।”

দিহান ভ্রু কুচকে তাকায়

— “এই মেয়ে হইছে কি তোমার? কেমন কেমন কথা বলছো।”

— “কি হবে কিছু হয় নি তো।”

এবার রিনি একটা বক্স এগিয়ে দিয়ে বললো ” একদম রাগ দেখাবেন না দিহান ভাই।গিফটের জিনিস নিতে হয়”

— কতো গুলো গিফট আনতে হয় হ্যা?

দিহান বক্স খুলে দেখলো একটা অ্যানড্রোয়েন ফোন ।

দিহান বিস্ময়ে ফেটে পরে যেন
— “এসবের মানে কি রিনি? কি? তুমি এতো টাকা কই পাইছো?”

— “মেয়েদের লুকানক ক্যাশপাতি থাকে মিস্টার।”

— “এটা আমি নিতে পারবো না।নাও ধরো।”

এবার রিনি দিহানের পায়ের কাছে ঝাপিয়ে পরলো।

— “আমি আপনার পায়ে পরছি প্লিজ রাখেন।”

— “কি করছ টা কি রিনি। ওঠো ওঠো। ”

রিনু আরও জিদ নিয়ে বলে
— “আপনি না নিলে উঠবো না।”

— “আচ্ছা নিচ্ছি ওঠো।”

এক গাল হাসি নিয়ে রিনি উঠে দাড়ায়।দিহান রিনির অনেকটা কাছে এগিয়ে বলে

— “তুমি পাগল হয়ে যাচ্ছো রিনি। তুমি কি তা বুঝতে পারছো রিনি ?”

রিনি কথার জবাব না দিয়ে বললো।

— “আপনার ফোন থেকে কি আমার একটা ছবি তুলবেন দিহান ভাই?”

তোমার শাড়ি ঠিক নেই বলতে গিয়েও দিহান বললো
–” মানে কুচি নড়বড়ে হয়ে গেছে।ছবি তুললে ভালো লাগবে না।”

— “ভালো লাগার জন্য কে তুলতে বলছে?আপনি তুলুন।”

দিহান আর বলতে পারলো না” রিনি তোমার ফরসা কোমড়ের অনেকটাই আমার চোখ বড্ড পুড়ছে।আর এমন ছবি ফ্রেমে আটকে গেলে আমি পাগল হয়ে যাবো।

দিহান চোখ বুঝে বেশ কিছু ছবি তুললো। কেমন হলো তার দেখার বিষয় না।রিনিকে পাঠানোই মূল উদ্দেশ্য।

এবার রিনি দিহানের কাছে এসে বললো।
“আমি কি আপনার সাথে একটা ছবি তুলতে পারি।আমার ফোন দিয়ে?”

দিহান কিছু বলতে পারলো না

ছবি তুলার পরে রিনি বললো

— ” স্মৃতি থাকা ভালো দিহান ভাই।নাক মুখ এতো কুচকাতে নেই” বলেই মিষ্টি হাসলো।

এবার রিনি তার শেষ প্লান পূরণ করবে।কিন্তু অদ্ভুত ভাবে হাত পা কাপতে শুরু করেছে।কাপা কাপা হাতেই একটা নীল কাগজে লেখা চিঠি দিহানের দিকে এগিয়ে দিলো।

— “এটা কি?”

— “পড়লেই বুঝতে পারবেন।”

— “এখনই পড়ি?”

রিনি দ্রুত বেগে বললো
–” না না না আমি গেলে।”

দিহান সরু চোখ করে বলে
— “কেন?”

রিনি বড় একটা দম নিয়ে বললো
— “আচ্ছা পড়েন।”

রিনির চোখের চাওনি গলার আওয়াজ নিমিশেই বদলে গিয়েছে।

দিহান রিনির হাবভাব বুঝার চেষ্টা করছে।চিঠিটা খুলে দুই লাইন পড়েই দিহানের সব বোঝা হয়ে গেছে।তার ধারণাই সত্যি তাহলে।হুহ!!!দিহান চিঠিটা ভাজ করে বললো। বাসায় যাও রিনি আমি ওটা পরে পড়বো।তুমি এখন যাও।

রিনি ঠোঁট উল্টে বললো
–” পড়তে শুরু করে রেখে দিবেন?পুরোটা পড়েন তারপর যাই?”

–” তুমি এখনই যাবে রিনি।এখনই মানে এখনিই।”

রিনি দিহানের দিকে তাকিয়ে হাত মুচরাতে মুচরাতে বললো

— “আমি কি আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরতে পারি?”

দিহান হতভম্ব হয়ে গেলো।
–“ও মাই গড রিনি।তুমি?দিহান মাথায় হাত দিয়ে চুল টেনে বললো ” উহ সিট।তুমি পাগল হয়ে গেছ রিনি?সিরিয়াসলি? এসব একদম চলবে না একদম না।এখান থেকে যাও এখনই যাও।”

রিনির কি হলো নিজেও জানে না। চোখের পলকে দিহানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ।নির্লিপ্ত গলায় বলতে শুরু করলো
‘নিশীথচিত্র'(৭)
ইসরাত আয়রা ইচ্ছে

___________

— “আপনি আমার চিঠিটায় কি বুঝাতে চেয়েছি বুঝে ফেলেছেন তাই না?আমাকে যেতে বলছেন কেন?আপনি কি আমাকে ফিরিয়ে দিবেন? আমি সত্যি আপনাকে…. ভালোবাসি কথাটা শত চেষ্টা করেও রিনি মুখ থেকে বের করতে পারলো না।”

রিনি দিহানের বুকে মাথা রেখে থরথর করে কাপছে।খুব শক্ত ভাবে খামছে ধরেছে দিহানের শার্ট। দিহান স্টাচু হয়ে গেছে এতোক্ষনে।কি বলবে ভাষা নেই। পাগলাটে স্বভাবের মেয়েটাকে কিভাবে বুঝাবে?

–” তুমি এখনই যাবে রিনি।”

কথাটা বলতে বলতে রিনিকে ছাড়িয়ে নিলো বেশ জোর করেই।।

— “এরপর এইসব কাজ করলে একটা মাইর নিচে পড়বে না।একটাও না।তোমার বাবা মাকেও বলে দিবো।রাত বিরাতে একটা ছেলের রুমে এসে জড়িয়ে ধরছ।সামান্য কমনসেন্সটুকুও তো নেই।আর হ্যা আমি চিঠিটার কিচ্ছু পড়ি নি আর পড়বো ও না।”

— “প্লিজ দিহান ভা….”

রিনি পুরো কথা শেষ করতে পারে না।দিহান বেশ কড়া আওয়াজেই ধমকালো।

— “আর একটা কথা না যাও এখান থেকে।এক মুহুর্তও আমার সামনে দেখতে চাই না যাও।”

রিনির চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরলো।দিহান রিনিকে পিছু ডাকে। রিনি একবুক আশা নিয়ে তাকায় দিহান ভাই কি মেনে নেয়ার কথা বলবে?

দিহান গম্ভীর গলায় বললো

— “তোমার ফোনটা নিয়ে যাও।”

____________

রিনির ছোট্ট বুক টায় আজ খুবই কষ্ট ঠেকছে এই কষ্টের সাথে তার এই নতুন পরিচয়।খুবই অচেনা কষ্টে ভিতরটা কেমন ছেয়ে যাচ্ছে। রিনি তৎক্ষনাৎ মনে হলো দিহান পুরো চিঠি টা পড়ে নি তাহলে এত ভয় কান্না কাটির কি আছে?তারপর নিজেকে নিজেই বললো
— “এই রিনি এতো ধৈর্যহীন হলে চলে না।আর দিহান ভাই যদি একান্ত না করে দেয় তাহলে খুব জ্বালাবি খুব।দেখবো রাজি না হয়ে যায় কই,,,এই রিনির সাথে চালাকি চলবে না একদম না।

রিনি যাওয়ার পরে দিহান প্রথমের নাক মুখে বেশ কিছুক্ষণ পানির ঝাপটা দিলো।রিনির দেয়া জামা পাল্টে সেন্ডো গেঞ্জি গায় দিয়ে সটান হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো৷ আজ আর তার পড়া হবে না।টেবিলে হুদাই বসে থাকতে মন টানছে না। শক্ত মনটা এতো নড়বড়ে কেন হয়ে গেলো ভেবে পায় না দিহান। চিঠি টা খোলার সাহস পাচ্ছে না। খুললেই পরিবর্তি অভিনয় যে দিগুন বাড়িয়ে দিতে হবে।আর দিহানের যে অভিনয় করে বাচাঁএকদম পছন্দ না।কিন্তু রিনি তো ঠিকই ভাববে চিঠি টা আমি পড়েছি শুধু শুধু না পড়ারও মানে হয় না কারন রিনি কে হাজার বার বল্লেও বিশ্বাস করবে না।দিহান আর ইচ্ছা দমিয়ে রাখতে পারলো না।কতো পারা যায়?সব ইচ্ছাই তো চাঁপা দিচ্ছে দিন দিন।

দিহান চিঠি টা পড়তে শুরু করে,

জনাব,

হাউ আর ইউ?আই হোপ ইউ আর অল ওয়েল বাই দা গ্রেস অফ অলমাইটি আল্লাহ।এইবার বাংলায় বলি কারণ ইংলিশে অধিক পাকা নই আমি।আমার মতে প্রেম পত্রে ভুল হওয়া সব থেকে লজ্জাজনক ব্যাপার।যেটা আমি চাই না।এক্সামের হলে ভুল হলেও সেটা মানিয়ে নেয়া যায় কিন্তু এই বেলায় না।ইজ্জতের চরচরি করতে চাই না আমি আর নিজের শিক্ষকের কাছে তো একদমই না।।তাই ইংরেজিতে লিখে ভাব নিতে চাই না । সাদামাটা মানুষের জন্য সাদামাটা প্রেমের প্রস্তাব দিতে চাই।ভালোবাসবেন আমায়?প্রেম করবেন আমার সাথে?আমি যে আপনাকে পাগলের মতো চাই।খুব চাই।বুঝেন আপনি? মাঝে মাঝে মনে হয় বুঝে গেছেন মাঝে মাঝে মনে হয় কিচ্ছু বুঝেন না বুঝতে চানও না।আমার না দিন দিন নিজেকে পাগল পাগল লাগছে।খুব পাগল পাগল।মুভি সিনেমার মতো আমিও আপনাকে সব জায়গায় দেখতে পাই।লিখতে গেলে, খেতে গেলে, ঘুমাতে গেলে ইভেন বাথরুমেও,,,জানেন তখন কিন্তু আমার বড্ড লজ্জা লাগে ।আপনার চোখের মতো দুষ্টু চোখ আমি কখনও দেখি নি।কিন্তু বাস্তবের আপনিটা আমার দিকে তাকান না পর্যন্ত, দুষ্টু চোখে তো দূরের কথা ।তাহলে আমার কেন মনে হয় আপনার একজোড়া দুষ্টু চোখ আছে?উত্তর খুজে পাই না আমি।আপনি কি জানেন?দিবেন আমায় উত্তর?

দিহান ভাই,আপনাকে আমি প্রথম গ্রামেই দেখেছি গাড়ি করে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলাম আর আপনি হাতে বাজার নিয়ে নিজ বাড়ি ফিরছিলেন হয়তো ।গ্রামের ছেলে কিন্তু আপনাকে আমার কাছে খুবই গোছানো একটা ছেলে মনে হয়েছিলো।প্রথম দেখাই সেবারই কোনো পুরুষ আমার মনে ধরেছে। শহরেরর অতি রং চং দেখে ভুলেও মনে হয় নি ভালো লাগছে।অবশ্য তখন আমার ভালো লাগার মতো পরিপক্ক বয়সও না তবুও কেন জানি না খুব ভালো লেগেছিলো। সেদিন বাবার সাথে সালাম বিনিময় করেছিলেন আর বাবার কাছেই জানতে পারি আপনার পরিচয়।আপনি রোদের কারণে চোখ কুচকে একবার আমার দিকে তাকালেন আর তাকান নি।তাই ভদ্র মনে হয়েছিলো আপনাকে।মেয়েরা একটু বড় হলেই পুরুষের চোখের নজরটা ভালো ভাবেই পড়তে পারে।আমিও তার ব্যতিক্রম নই।কোন চোখ কিভাবে তাকায় আমিও বুঝি।ঢাকায় এসে মনে হয়েছিল আপনার এফবি আইডি থাকতে পারে তাই বাবার ফোন দিয়েই লুকিয়ে নিজের আইডি অন করলাম সার্চ দিলাম পেয়েও গেলাম কিন্তু ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট একছেপ্ট হয় নি।হাই হ্যালো মেসেজ দিয়েছি রিপ্লাই আসে নি।ব্যাপারগুলো আমি ভালোলাগা থেকেই করতাম ভালোবেসে মোটেই না।জাস্ট মাথা বলতো আর মন শায় দিতো এই।তবে এখন কিন্তু আমার মন পাল্টেছে।তখন কার মন টা মস্তিষ্কের ফাজলামি বুদ্ধির সাথে রিলেটেড বেশি ছিলো। কিন্তু এখন আমার মন নিজেই বুঝে গেছে চাওয়া পাওয়া তাই মাথার থেকে মনের কথা বেশি চলে। আমাকে ছোট মেয়ে এই অযুহাতে একদম ফিরিয়ে দিতে পারবেন না।আমার দুইটা বান্ধবীর বিয়ে হয়েছে আর সব কয়টা প্রেম করছে। গভীর প্রেম বুঝেন তো? আমার তো মনে হয় আপনি বুঝেন না।তবে আপনি অতি সেয়ানা মানুষ তা এতো দিনে আমি বুঝে গেছি।দিহান ভাই তার একবছর পর যেদিন শুনলাম আপনি আমাদের বাসায় থাকবেন আমি অদ্ভুত রকম খুশি হয়েছিলাম। তবে নিজের বাচ্চামো,ঘাড়ত্যাড়া স্বভাবের জন্য আপনার সাথে অমন ব্যবহার করতাম।বেয়াদবি ছিলো না সেগুলো তবে ফাজলামো ছিলো। ভালোবাসার প্রথম ধাপ ভালোলাগা ছিলো। আপনার আচার আচরণে আমি বুঝে গেছিলাম আপনি কেমন হতে পারেন।কি জানি থাপ্পড় খেয়েই হয়তো ভালোবাসা উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম কিনা জানি না। তবে থাপ্পড় খেয়ে রাগে দুইদিন আপনার মুখ দেখবো না শপথ করা আমি টাও বার বার জানালা দিয়ে উঁকি দিচ্ছিলাম।নিজেকে দমানো অসম্ভব হয়ে পরছিলো।নিজেকে নিজেই বকছিলাম কিন্তু থামাতে পারি নাই। তাই দুইদিন পর পড়তে এসেছিলাম অন্য কেউ হলে কোনো দিন তার সাথে কথা বলা দূর ফিরেও তাকাতাম না।কি জানি পড়ানোর সময় আপনার ঠোঁট নাড়ানো সব কিছুই আমায় নেশায় ফেলতো।আপনার খাতা রোল করে দেয়া মাইরগুলো আমার মনে ভালো লাগার সৃষ্টি করতো। হৃদয় দোল দিয়ে যেত।দেন আই রিয়ালাইজ আই ফল ইন লাভ উইথ ইউ।আমি আপনাকে ভালোবাসি দিহান ভাই। আপনি কি আমার কথা বুঝতে পেরেছেন?

আমাকে কি তুমি বলার অধিকার টা দিবেন?

ইতি,
আমি

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here